
‘শিক্ষা সফরের গাড়ি দুর্ঘটনা’ এই লেখাটা গুগলে লিখে সার্চ করুন তাহলে দেখবেন কতটা ভয়াবহ এখনকার শিক্ষা সফরের যাতায়াত পথ। হয়ত আজও কোথাও শিক্ষা সফরের বাস দুর্ঘটনা ঘটেছে তা দেখতে পাওয়া যাবে। একবার ভেবে দেখেছেন কি কেন শিক্ষা সফরের বাস বেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে?
শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে শিক্ষা সফর সংযুক্ত থাকে। শুধুমাত্র সিলেবাসের পড়াশোনার ব্যস্ত থাকলে হয় না, বরং শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিনোদন ইত্যাদি জ্ঞান বিকাশের অন্যতম মাধ্যম। আর এসব আয়ত্ত করতে হলে শিক্ষা সফরের বিকল্প নেই। তাইতো প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ শীত মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এক হয়ে শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্যে দূর-দূরান্তে ভ্রমণ করে থাকে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বন্ধন যেমন দৃঢ় হয় তেমনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয় ভালো বোঝাপড়া। দীর্ঘ পড়াশোনার চাপ কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লান্তি কেটে নতুন করে শুরু করার একটি মাধ্যম হিসেবে শিক্ষা সফর ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু এই শিক্ষা সফর যখন বিষাদে রূপ নেয় তখন যেন সব কিছুই বৃথা হয়ে যায়। এখন টিভিতে নিউজ চ্যানেল, সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই এসব দুর্ঘটনার খবর শুনতে পাই। দুর্ঘটনা মানেই কারো পরিবারের স্বপ্ন ভঙ্গ, পরিবারে নেমে আসে শোকের মাতম। প্রতিবছর এমন দুর্ঘটনায় শত শত নিহতের পাশাপাশি হাজার হাজার আহত হয়। এসব দুর্ঘটনার জন্য শুধু কি চালকেরাই দায়ী? না বরং এসব দুর্ঘটনার জন্য চালকের চেয়ে বেশি দায়ী যাত্রীরাই।
আজ আমরা শিক্ষা সফর মানেই বুঝি বাসের মধ্যে গান-বাজনা-নৃত্য পরিবেশন করা। গত দুয়েকদিন আগে একটা দোকানে চা খেতে বসে পাশের এক শিক্ষার্থীকে বলতে শুনতেছিলাম ‘এবারের শিক্ষা সফরে তো আমার যাওয়ার ইচ্ছাই ছিলো না শুধুমাত্র বাসের জন্যই গিয়েছি, বাসের নাচানাচির মজাটা সবচেয়ে বেশি’। এই কথা শুনেই মনে হলো এই অসচেতনতা নিয়ে কিছু লেখা উচিৎ।
হ্যাঁ এটাই বাস্তব যে বর্তমানে প্রতিটি সফরের বাসের পরিস্থিতি দেখলে বুঝা যাবে না এটা বাস নাকি কোনো কনসার্ট স্টেজ। আপনি হয়ত বলতে পারেন গান বাজনার সঙ্গে দুর্ঘটনার সম্পর্ক কী? হ্যাঁ আসল সম্পর্ক সেখানেই। সাইন্স বলে মানুষ একসঙ্গে দুই দিকে কিংবা দুই কাজে মনোসংযোগ ঘটাতে পারে না। একটি বিরতি দিয়ে অন্যটিতে মনোযোগ দিতে হয়। এই বিরতি অনু সময়ের জন্য হতে পারে কিংবা অধিক সময়ের জন্যও হতে পারে। গাড়িতে যখন উচ্চস্বরে গান বাজনা হয় তখন চালক আবেগ বশবর্তী হয়ে যদি সেই গান উপভোগে মনোযোগী হয়ে যায় তাহলে গাড়ি চালনোয় অমনোযোগী হয়ে যেতে পারে। আবার গাড়িতে উচ্চস্বরে গান বাদ্য ও চেঁচামেচি হলে চলক রাস্তায় অন্য গাড়ির হর্ণের আওয়াজ শুনতে বিঘ্ন ঘটতে পারে, এতে করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, ধরুন আপনি যদি একটি সাইকেল কিংবা বাইকের পিছনে বসে একটু নড়াচড়া করেন তাহলে যে বাইক চালায় তার পক্ষে বাইক নিয়ন্ত্রণ করা কষ্ট হয়। তেমনি একটি বাসে একসাথে ৫০/৬০ জন মানুষ যদি গানের তালে পুরো শক্তি নিয়ে নাচানাচি করে তাহলে সেক্ষেত্রে চালকের সেই গাড়ি নিয়ন্ত্রণে বাধাগ্রস্ত হওয়ারই কথা। এসব অসাবধানতার কারণে অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় শিক্ষা সফরের গাড়ি বেশি হারে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং হতাহতের পরিমাণও বেশি হয়।
শিক্ষা সফরের প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে শিক্ষা সফর নিছক কোনো বিনোদন বা আনন্দ সফরের উদ্দেশ্যে হওয়া উচিৎ নয়। শিক্ষা সফরে আমরা শিক্ষার্থীদের কী শিখাতে পারলাম সেটা লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। আজকাল আমরা শিক্ষা সফরের স্পষ্ট ঠিক করতেই ব্যর্থ। শিক্ষা সফরের জন্য এখন ঐতিহাসিক স্থান নির্ধারণ করা হয় না, যেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বইয়ে পড়া ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে আসতে পারবে। এখন শিক্ষা সফরের জন্য ঠিক করা হয় পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেনের মত অশ্লীলতম স্থান। শিশু শিক্ষার্থীরা কি শিখছে এসব জায়গায় গিয়ে তা আমার বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমাদের শিক্ষকদের দায়িত্ব শিক্ষা সফরে যাওয়ার আগে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরের নিয়মাবলী শিখানো। বাসে গানবাদ্য বাজিয়ে শব্দ দূষণ করে শিক্ষা সফরের কালচার দূর করার শিক্ষা আগে প্রয়োজন। অন্যথায় খাল কেটে কুমির আনার পরিণতি শোকাবহ ও বেদনাদায়ক হবে। এ বিষয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সচেতনতার পাশাপাশি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমাদের আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ হাই কোর্টে প্রধান বিচারপতি বাদে ১০ জন বিচারপতি, একজন অ্যাটর্নি জেনারেল, একজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, দুজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও চারজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। আমার মনে হয় এর পাশাপাশি ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও আইন অফিসারের সংখ্যা উল্লেখ করলে আমাদের সার্বিক উন্নতি আমরা বুঝতে পারব। ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বাদে আপিল বিভাগে সাতজন বিচারপতি এবং হাই কোর্ট বিভাগে ৯৫ জন বিচারপতি আছেন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল পদে একজন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদে তিনজন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ৬২ জন এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ১৪৮ জন তাদের কর্তব্য পালন করে যাচ্ছেন।
১৯৭২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মোট ২০ হাজার ৫৬৭টি মামলা হাই কোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ছিল। ওই সময়ে হাই কোর্টে ১০ জন বিচারপতি কর্মরত ছিলেন। সে বিবেচনায় একজন বিচারপতির বিপরীতে ২ হাজার ৫৬টি মামলা বিচারাধীন ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে ৩১ ডিসেম্বর হাই কোর্ট বিভাগে মোট ৫ লাখ ১২ হাজার ৫৭৬টি মামলা বিচারাধীন ছিল। ২০২১ সালে হাই কোর্ট বিভাগে ৯২ জন বিচারপতি কর্মরত ছিলেন। সে বিবেচনায় ২০২১ সালে একজন বিচারপতির বিপরীতে ৫ হাজার ৫৭১টি মামলা বিচারাধীন ছিল। যে কোনো বিবেচনায় এটি অনেক বেশি।একজন বিচারপ্রার্থী দ্রুততম সময়ে উচ্চ আদালত থেকে তার মামলার সিদ্ধান্ত পাবেন, এটি মানুষের সহজাত আকাক্সক্ষা। আমরা গণমানুষের এই আকাক্সক্ষা কতটা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি? আজ যেদিন এ লেখা লিখছি সেদিন অর্থাৎ ১২.০৩.২০২৩ ইং তারিখে হাই কোর্ট বিভাগের কজলিস্ট পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে ১৯৮৮ সালের ফৌজদারি আপিল, ১৯৯১ সালের দেওয়ানি রিভিশন ও ১৯৯৫ সালের দেওয়ানি ফার্স্ট আপিল পেন্ডিং আছে। অর্থাৎ এ মামলাগুলো যথাক্রমে ৩৫, ৩২ ও ২৮ বছর যাবৎ পেন্ডিং আছে এবং এর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।
হাই কোর্টের বিচারপতি এবং আইনজীবীরা কাজ করেন না এমন নয় অথবা বিষয়টি এমন নয় যে বিচারকদের গাফিলতির জন্য বিপুল পরিমাণ মামলা বিচারের অপেক্ষায় পড়ে আছে। কোনো পরিসংখ্যানে ২০২০ ও ২০২১ সাল উল্লেখ করতে চাই না, কারণ ওই দুটি বছর করোনাভাইরাসের জন্য স্বাভাবিকভাবে কোর্টের কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। ২০১৮ সালে হাই কোর্ট বিভাগে মোট ৪৯ হাজার ৩৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ওই বছর ৯৫ জন বিচারপতি হাই কোর্ট বিভাগে কর্মরত থাকায় গড়ে একজন বিচারপতি ৫১৬টি করে মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। পরিসংখ্যানের দিক থেকে এটি কম নয়। কিন্তু এত নিষ্পত্তির পরেও বিপুল পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় জমে আছে।
মূলত বিচারপতির সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম এবং নিষ্পত্তিকৃত মামলার তুলনায় প্রচুর নতুন মামলা হাই কোর্টে দাখিল হওয়ার কারণে অনেক নিষ্পত্তি করেও পেন্ডিং মামলার জট কমানো যাচ্ছে না। ২০১৮ সালে ৮৮ হাজার ৮০১টি মামলা হাই কোর্ট বিভাগে দায়ের হয়েছিল, ওই বছর নিষ্পত্তি হয়েছিল ৪৯ হাজার ৫৩টি মামলা। হাই কোর্টে বেশি বেশি মামলা দায়েরের অনেক কারণ আছে। ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় মানুষ তথা মামলার পক্ষগণ সহজেই ঢাকায় এসে মামলা দায়ের করতে পারছে। সামাজিক অস্থিরতার কারণে মানুষের মধ্যে ধৈর্য ও সহনশীলতা কমে যাওয়ায় নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ পক্ষগণ পরাজয় মেনে নিতে চায় না, তারা হাই কোর্টে মামলা করে ফলাফল অনুকূলে নেওয়ার চেষ্টা করে। আগে এমন একটি সময় ছিল, যখন হাই কোর্টের আইনজীবীরা ঢাকায়ই থাকতেন, তাদের সঙ্গে এলাকার বা লোকাল বারের তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে যারা হাই কোর্টে প্র্যাকটিস করেন তাদের অনেকেই নিয়মিত এলাকায় যান এবং লোকাল বারের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখেন। ফলে মামলার পক্ষগণ সহজেই হাই কোর্টের অ্যাডভোকেটদের নৈকট্য লাভের সুযোগ পাচ্ছেন এবং ফলশ্রুতিতে সহজেই হাই কোর্টে মামলা দায়ের করতে পারছেন। আগে হাই কোর্টে অ্যাডভোকেটের সংখ্যা অনেক কম ছিল, কিন্তু বর্তমানে হাই কোর্টে প্রায় ১৩ হাজার অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্ত আছেন এবং তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। যেহেতু অনেক অ্যাডভোকেট এখানে কাজ করেন তাই মামলার পক্ষগণ অল্প খরচে মামলা করার সুযোগ পাচ্ছে এবং এ কারণে মামলা দায়েরের সংখ্যা বাড়ছে।
১৯৮১ সালে আমি যখন বিচার বিভাগে যোগদান করি তখন বিচার বিভাগে ১৮০ জন বিচারক কর্মরত ছিলেন। যদি সবার জন্য একটি কোর্ট ধরি সেক্ষেত্রে ওই সময় ১৮০টি কোর্ট ছিল। বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিম্ন আদালতে কোর্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি ১৯৮১ সালে মুন্সেফ পদে বরিশালে যোগদান করি। ১৯৮২ সালে ঢাকায় জেলা জজসহ জেলা জজ পদমর্যাদার মোট চারটি কোর্ট ছিল। অপর তিনটি কোর্ট হলো- বিভাগীয় স্পেশাল জজ, শ্রম আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল। উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালে ঢাকা জেলার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ মহাকুমা অন্তর্ভুক্ত ছিল। মহাকুমাতে তখন জেলা জজ ছিল না। শুধু মুন্সেফ কোর্ট ও সাবজজ কোর্ট ছিল। বৃহত্তর জেলার সাবেক মহাকুমাগুলোতে বর্তমানে জেলা জজ পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। ঢাকা জেলায় বর্তমানে ঢাকার জেলা জজসহ জেলা জজ পদমর্যাদার ৪৬ জন জেলা জজ বিভিন্ন কোর্টের দায়িত্বে আছেন। তেমনি বরিশালে ১৯৮২ সালে একজন জেলা জজ ছিলেন। বর্তমানে সেখানে জেলা জজ পদমর্যাদার ১০ জন কর্মকর্তা বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন। একইভাবে সিলেটে জেলা জজসহ জেলা জজ পদমর্যাদার নয়জন কর্মকর্তা বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন।
নিম্ন আদালতে বর্তমানে ১ হাজার ৮১০টি কোর্ট চালু আছে। যার মধ্যে জেলা জজ ও সম পদপর্যাদার কোর্টের সংখ্যা ২৫৯টি এবং অতিরিক্ত জেলা জজের কোর্টের সংখ্যা ১১৯টি। জেলা জজ ও সম পদমর্যাদার কোর্ট এবং অতিরিক্ত জেলা জজগণের কোর্টের রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে মামলা হাই কোর্টে করতে হয়। নিম্ন আদালতে কোর্টের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের নিষ্পত্তিও বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলশ্রুতিতে হাই কোর্টে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরকারি অফিসগুলো থেকে বিভিন্ন সময় যেসব আদেশ প্রদান করা হয়, অনেক সময়ই সেগুলো আইননির্ভর নয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ ওইসব আদেশের বিরুদ্ধে সহজেই রিট মামলা দায়ের করে প্রতিকারের আশায়। সর্বোপরি বর্তমানে বাংলাদেশে জনসংখ্যা ১৭ কোটির চেয়ে একটু বেশি। অথচ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু তাঁর একাধিক ভাষণে জনসংখ্যার কথা বলেছেন সাড়ে ৭ কোটি। বর্তমানে এ বিপুল পরিমাণ জনসংখার জন্য স্বাভাবিকভাবেই মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এসবের চেয়েও সর্বশেষ ও মূল কারণ হিসেবে আমার কাছে মনে হয় সুপ্রিম কোর্টের ওপর মানুষের সহজাত আস্থার জন্য বিচারপ্রার্থী মানুষ সুপ্রিম কোর্টে মামলা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং এভাবে অনেক কারণের জন্য সুপ্রিম কোর্টে মামলার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টে মামলার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এটি বাস্তব সত্য। এ মামলা নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিগণ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে শুধু বিচারপতিগণ ইচ্ছা করলেই অধিক হারে নিষ্পত্তি করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে অ্যাডভোকেটদের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। হাই কোর্ট বিভাগে দুই ধরনের বেঞ্চ থাকে। একটি মোশন বেঞ্চ অপরটি শুনানির বেঞ্চ। মোশন বেঞ্চে মূলত মামলা ফাইলিং করে শুনানি করতে হয়। সব মোশন বেঞ্চই মোশন কেসে আদেশ প্রদান বাদেও তার এখতিয়ারাধীন মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি করতে পারেন। কিন্তু ফৌজদারি ও রিট মোশন বেঞ্চগুলো মোশন শুনানি করার পর হাতে খুব কম সময় পান মূল মামলার শুনানি করার জন্য। তাই ইচ্ছা করলেও সময়ের অভাবে মোশন বেঞ্চগুলো অধিকহারে মূল মামলার শুনানি গ্রহণ করতে পারে না। তবে অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও মোশন বেঞ্চগুলো শুনানির জন্য মামলা ফিক্স করে এবং শুনানি করে থাকে।
কিন্তু যে বেঞ্চগুলো শুনানির জন্য নির্ধারিত সে বেঞ্চগুলোকে আমরা সাধারণত হিয়ারিং বেঞ্চ বলি। সাধারণভাবে হিয়ারিং বেঞ্চগুলো তাদের সময়কে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারে না। হাই কোর্টে যেসব মামলা বিচারাধীন সেগুলোতে ইতোপূর্বে ২/১টি রায় হয়েছে। সুতরাং অ্যাডভোকেটরা শুনানিতে অংশগ্রহণ করলে বিচারকের পক্ষে মামলাটি সহজে নিষ্পত্তি করা সম্ভব। এটি ঠিক যে একটি মামলায় একজন বিচারপতি আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে নথি দেখে নিষ্পত্তি করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে এটি করা কঠিন। কারণ নিম্ন আদালতের প্লিডিংস দেখতে হবে। তারপর রায় ও অন্যান্য সাক্ষ্য যদি থাকে তাও তাকে শুনতে বা দেখতে হবে। আইজীবীদের উপস্থিতি বাদে বিচারকের একার পক্ষে এগুলো দেখা বা পড়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু মজার কথা হলো যাদের উপস্থিতি বাদে শুনানি করা সম্ভব নয় তাদের অর্থাৎ আইনজীবীদের হিয়ারিং বেঞ্চে বিশেষ করে ফৌজদারি মামলার শুনানির সময় পাওয়া যায় না। হাই কোর্ট বিভাগের মোশন বেঞ্চগুলোর ভিতরে অ্যাডভোকেটদের জন্য নির্ধারিত আসন পাওয়া কষ্টকর, অর্থাৎ আপনি বসার একটু জায়গা পাবেন না, এমনকি ভোরবেলা সেখানে ঢুকতেও কষ্ট হয়। কিন্তু হিয়ারিং বেঞ্চে বিশেষ করে দেওয়ানি আপিল ও ফৌজদারি মামলার হিয়ারিং বেঞ্চে কোর্ট শুরুর সময় দু-চারজন আইনজীবী উপস্থিত থাকলেও তারা সময় নিয়ে অন্যত্র চলে যান, এরপরই বেশির ভাগ হিয়ারিং বেঞ্চগুলোতে আইনজীবী পাওয়া যায় না। ফলে হিয়ারিং বেঞ্চগুলো কাক্সিক্ষত পর্যায়ে মামলা শুনানি করতে পারে না।
হিয়ারিং বেঞ্চে বিশেষ করে ফৌজদারি মামলার বেঞ্চগুলোতে মামলা শুনানি করার ব্যাপারে অ্যাডভোকেটদের এই যে আগ্রহের অভাব, এটি কি কেবল তার জন্য? মামলা দায়েরের পর শুনানি করার বিষয়ে পক্ষদের আগ্রহ বিভিন্ন কারণে কমে যায়। হিয়ারিং বেঞ্চে শুনানির সময় আইনজীবীদের অনুপস্থিত থাকার অনেক কারণ আছে। প্রথমত, আইনজীবীরা মামলা দায়েরে এবং মোশন কেসে শুনানিতে বেশি লাভবান হন, তাই ওই মামলাগুলোর ব্যাপারে তারা যতটা সিরিয়াস থাকেন অন্য মামলার ব্যাপারে ততটা সিরিয়াস থাকেন না।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, একজন বিচারপ্রার্থী একটি মামলা একজন আইনজীবীর মাধ্যমে হাই কোর্ট বিভাগে দায়েরের পর শুনানির সময় আগ্রহহীন হলেন কেন? এর অনেক কারণ আছে। তবে মোটা দাগের কারণগুলো নিয়ে সংক্ষেপে দু-একটি কথা বলা যেতে পারে। প্রথমেই দেওয়ানি মামলার বিষয়ে ধরা যাক। সাধারণত পরাজিত পক্ষ যুগ্ম জেলা জজের রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল দায়ের করে। এ ছাড়াও জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজগণ আপিলে যে রায় প্রদান করেন তার বিরুদ্ধে হাই কোর্ট বিভাগে রিভিশন দায়ের করতে হয়। এ ছাড়া নিম্ন আদালতের বেশ কিছু আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন করা যায়। আপিল বা রিভিশন যেটিই দায়ের করা হোক না কেন খেয়াল রাখতে হবে নিম্ন আদালতে যে পক্ষ কাক্সিক্ষত প্রতিকার পেতে ব্যর্থ হয়েছে, সেই পক্ষ হাই কোর্ট বিভাগে এসেছে। সে আপিল বা রিভিশন যাই দায়ের করুক না কেন, দায়ের করে ক্ষেত্রমত স্টে বা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার প্রার্থনা করে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দরখাস্তকারী বা আপিলকারী স্টে বা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ পেয়ে থাকে। অর্থাৎ হাই কোর্টে মামলা দায়েরের পর নিম্ন আদালতে বিজয়ী পক্ষের চেয়ে তার (পরাজিত পক্ষ) অবস্থান ভালো হয়ে যায়। এই ভালো অবস্থানের কারণে আপিলকারী বা রিভিশনকারী সহসা আর দেওয়ানি মামলাগুলো শুনানি করতে চায় না। যেহেতু পক্ষগণের কোনো তাড়া বা গরজ থাকে না, তাই অ্যাডভোকেটরাও মামলা করার কোনো তাগিদ অনুভব করে না। এরকম দেওয়ানি মামলা শুনানি করার তাগিদ অনুভব করার জন্য আমার মনে হয় মামলা দায়েরের পর যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিকার দেওয়া হয় তার সর্বোচ্চ একটি সময়সীমা থাকা প্রয়োজন। হতে পারে সেটি ৫, ৭ বা ১০ বছর। অর্থাৎ ওই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে মূল মামলার শুনানি না করলে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের কার্যকারিতা লোপ পাবে। এরকম একটি বাধ্যবাধকতা থাকলে ওই সময়সীমার মধ্যে মামলা দায়েরকারী শুনানি করতে বাধ্য থাকবে।
উক্তরূপ একটি বাধ্যবাধকতা না থাকলে দেওয়ানি মামলার পক্ষগণকে শুনানিমুখী করা যাবে না। বাস্তবিকতার আলোকে আপনি দেখতে পাবেন যতগুলো রিভিশন ও আপিল হাই কোর্টে শুনানির জন্য ফিক্স হয় তার শতকরা ৮০ ভাগ মামলা প্রতিপক্ষ অর্থাৎ নিম্ন আদালতে যে বিজয়ী হয়েছিল তার পদক্ষেপের জন্য ফিক্স হয়। পরাজিত পক্ষ হাই কোর্ট বিভাগে মামলা দায়ের করার পর আবার নতুন করে আর একটি সিদ্ধান্ত তার বিপক্ষে যাক, সে ওই রকম কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না, তাই মামলার শুনানি যতদূর সম্ভব সে এড়িয়ে চলতে চায়।
লেখক : বিচারপতি
মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। মার্চ হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের মাস। শুরুতেই স্বাধীনতা যুদ্ধের সব শহীদের ও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাচ্ছি।
১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি অনার্সে ভর্তি হয়েছিলাম ভবিষ্যতে একজন আইনজীবী হিসেবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে। তার ধারাবাহিকতায় ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে অ্যাডভোকেট হিসেবে সনদ প্রাপ্তির পর বাংলাদেশের বৃহত্তম ঢাকা আইনজীবী সমিতির ১৮৫৭ নম্বর সদস্য পদ গ্রহণ করে অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে ঢাকা বারের খ্যাতিমান আইনজীবী এ কে এম রেজাউল করিমের জুনিয়র হিসেবে আইন পেশা শুরু করি। উল্লেখ্য, তিনি বিচারপতি শহিদুল করিমের পিতা। আইনজীবী হিসেবে হাতেখড়ি দেওয়ার সময় একজন নবীন আইনজীবীর যে রকম পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা থাকার কথা, অনেকের মতে কাজে আমার আগ্রহ ও নিষ্ঠার জন্য তার চেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু আইনজীবী হিসেবে আমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না।
১৯৮১ সালের শুরুতে BCS Judiciary-তে মুন্সেফ পদে নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে আমার সিনিয়র আমাকে দরখাস্ত দাখিল করতে উৎসাহিত করতে থাকেন এবং এর ধারাবাহিকতায় নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ০১.১২.১৯৮১ তারিখে মুন্সেফ পদে বরিশালে যোগদান করি। বিচারক হিসেবে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পদে ১৫ বছর ১০ মাস ১৪ দিন চাকরি করার পর ২১/১০/১৯৯৭ তারিখে জেলা জজ পদে পদোন্নতি পেয়ে ময়মনসিংহে নারী ও শিশু কোর্টে যোগদান করি।
অতঃপর জেলা জজ হিসেবে নরসিংদী, বিচারক, জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রাম, পুনঃ জেলা জজ পদে পিরোজপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, ঝিনাইদহ, মহানগর দায়রা জজ পদে চট্টগ্রাম ও সর্বশেষে ২০০৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০১০ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ পদে কর্মরত ছিলাম। আমি নিম্ন আদালতে মোট ২৮ বছর ৪ মাস ১৫ দিন কাজ করেছি এর মধ্যে জেলা জজ হিসেবে বিভিন্ন কোর্টে ১২ বছর ৬ মাস কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।
আমাদের দেশের আইনজীবীগণ এবং সচেতন জনগণ বিভিন্ন কোর্টের বিচারক বা জজদের কর্মপরিধি ও এখতিয়ার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। একটি জেলায় জেলা জজ, বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে বিচার ব্যবস্থায় নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। একজন জেলা জজের তার নিজ কর্মস্থলে অনেক ভালো কাজ করার সুযোগ আছে। আমি জেলা জজ থাকাকালীন কোর্ট ম্যানেজমেন্টের আওতায় পুরনো মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা-সহ, শুনানি গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে আদেশ প্রদান, কোনো বিলম্ব ছাড়া কোর্টের আদেশ ও নথি সংশ্লিষ্ট স্থানে প্রেরণসহ দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ বিচারব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছি এবং সে লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
আমি ২০১০ সালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ১৮.০৪.২০১০ তারিখ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে হাই কোর্ট বিভাগে বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করি এবং দেখতে দেখতে এখানে প্রায় ১৩ বছর (অর্থাৎ ১৩ বছর হতে মাত্র ১৮ দিন কম) অতিবাহিত হতে চলল। অধস্তন আদালতের বিচারকদের স্বপ্ন থাকে হাই কোর্টে বিচারক হিসেবে কাজ করার। আল্লাহর অশেষ রহমতে ও বাবা-মায়ের দোয়ায় আমার সেই লালিত স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার কাছে আজও শুকরিয়া আদায় করছি। প্রায় ১৩ বছর বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ৩০ মার্চ, ২০২৩ তারিখে মোট ৪১ বছরের বিচার কাজ শেষে বিদায় নিতে যাচ্ছি।
বাংলাদেশে যে কোনো শ্রেণির মানুষই বিভিন্ন কারণে মামলায় জড়িত হতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে মামলার পক্ষদের মূল সমস্যা হচ্ছে বিলম্বিত বিচার ও অনেক ক্ষেত্রে কোর্টের আদেশ ও নথি দ্রুত সময়ে সংশ্লিষ্ট স্থানে না পৌঁছা। আজ থেকে ৪৮ বছর আগে ১৯৭৫ সালে ২৫ জানুয়ারি সংসদে প্রদত্ত ভাষণে বিচারে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে সবচেয়ে মূল্যবান ও হৃদয়গ্রাহী উক্তি করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু যা বলেছিলেন তা এখানে হুবহু তুলে ধরলাম- “একটা কোর্টে বিচার গেলে একটা যদি সিভিল মামলা হয়; আপনি তো উকিল, স্পিকার সাহেব। আল্লাহর মর্জি যদি একটা মামলা সিভিল কোর্টে হয়, ২০ বছরেও সে মামলা শেষ হয় বলতে পারেন আমার কাছে? বাপ মরে যাওয়ার সময় বাপ দিয়ে যায় ছেলের কাছে। আর উকিল দিয়ে যায় তার জামাইয়ের কাছে সেই মামলা। আর ক্রিমিনাল কেস হলে এই লোয়ার কোর্ট, জজ কোর্ট-বিচার নাই। জাসটিস ডিলেইড জাস্টিস ডিনাইড-উই হ্যাভ টু মেইক এ কমপ্লিট চেইঞ্জ এবং সিস্টেমের মধ্যে পরিবর্তন করতে হবে। মানুষ যাতে সহজে বিচার পায় এবং সঙ্গে সঙ্গে বিচার পায়। ব্যাপক পরিবর্তন দরকার।”
বঙ্গবন্ধুর উপরিউক্ত সুন্দর ও সাবলীল উক্তি থেকে দেখা যায় কীভাবে এ দেশে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা বিচারের অপেক্ষায় বছরের পর বছর পড়ে থাকে। বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের নাড়ির স্পন্দন বুঝতেন, তাইতো তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। বঙ্গবন্ধু একই ভাষণে বলেছিলেন, মানুষকে বিলম্বিত বিচারের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে জুডিশিয়াল সিস্টেমের অনেক পরিবর্তন দরকার। কিন্তু আমরা কি গত ৫০ বছরে বিচার বিভাগে গণমুখী কোনো পরিবর্তন করেছি? এমনকি বিচারে কেন বিলম্ব ঘটে এবং তার প্রতিকারই বা কী সে সম্পর্কে কোনো রিসার্চ করেছি? বঙ্গবন্ধুর ওই উক্তির পরে বিলম্বিত বিচারের স্বপক্ষে আর কোনো প্রমাণ বা দলিলের প্রয়োজন নেই। দেশের সর্ব প্রান্তে ১৫-২০ বছরের শত শত পুরনো দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা বিচারের অপেক্ষায় ঝুলে আছে।
আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে মনে হয়েছে নিম্ন আদালতে দেওয়ানি মামলায় যে পক্ষ মেরিটে অসুবিধাজনক অবস্থায় থাকে, সে বিলম্বিত বিচারের জন্য যা কিছু করা দরকার সবই করে থাকে। এ অন্যায় পদক্ষেপকে বাধাগ্রস্ত করতে বিচারকদের যে দৃঢ় মনোভাব দরকার তার যেমন অভাব আছে, তেমনি বিচারকের সংখ্যা মামলার তুলনায় কম বিধায় প্রয়োজনীয় তদারকি সম্ভব হচ্ছে না। এ সুযোগে, সুযোগ সন্ধানীরা দেওয়ানি মামলার বিচারে বিলম্ব ঘটাতে সক্ষম হচ্ছে।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে দুষ্ট লোকের এ অপতৎপরতা তো কোর্টকেই রুখতে হবে। কোনো সন্দেহ নেই, বিচার প্রক্রিয়ায় যে কোনো অপতৎপরতা রোখার প্রাথমিক দায়িত্ব কোর্টের। কিন্তু বিজ্ঞ আইনজীবীদের এক্ষেত্রে নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর দেওয়ানি ও ফৌজদারি মিলে ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ১টি মামলা বিচারাধীন ছিল। অপরদিকে আজ যখন আমি এ বক্তব্য রাখছি ৩০.০৩.২০২৩ তারিখে তখন নিম্ন আদালতে ২০৫৯ অনুমোদিত কোর্টের বিপরীতে ১ হাজার ৮১০ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ বিচার বিভাগে কাজ করে যাচ্ছেন। সুতরাং, প্রতিটি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার ভাগে গড়ে মাথা পিছু ২ হাজার ২২টি মামলা পড়ে। আমার মনে হয় একজন বিচারকের পক্ষে এতগুলো মামলা সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয় বিধায়, দুষ্ট লোকেরা বিচারকের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে মামলার বিচারে বিলম্বের ফাঁদ পেতে সফল হচ্ছে।
অপরদিকে ফৌজদারি মামলার বিচারে বিলম্ব ঘটার একমাত্র ও মৌলিক কারণ সাক্ষীর অনুপস্থিতি। ফৌজদারি মামলায় কোর্টে সাক্ষী আনার দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশ এ দায়িত্ব পালন করে না এ কথা যেমন বলা যাবে না, আবার তেমনি এটিই বাস্তব সত্য যে, পুলিশ যে হারে সাক্ষী উপস্থিত করছে তা দ্রুত বিচারের জন্য মোটেও পর্যাপ্ত ও সহায়ক নয়। হয়তো পুলিশের তরফে এর জন্য অনেক কারণ থাকতে পারে কিন্তু বাস্তব সত্য হলো সাক্ষীর অনুপস্থিতির জন্য ফৌজদারি মামলার বিচারে বিলম্ব হচ্ছে।
কোর্টের বিচারকেরা দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার মধ্যে ফৌজদারি মামলার বিচার করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কারণ দেওয়ানি মামলার চেয়ে ফৌজদারি মামলার বিচার করা তুলনামূলকভাবে সহজ। বিচারকদের কারণে ফৌজদারি মামলার বিচারে বিলম্ব ঘটেছে এমন নজির বের করা বেশ কষ্টকর। এখন প্রশ্ন হলো, পুলিশ কেন ফৌজদারি মামলায় যথাযথভাবে সাক্ষী উপস্থিত করছে না। এর সহজ উত্তর, যেহেতু সাক্ষী আনার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করলে তার কোনো জবাবদিহিতা নেই, তাই সে এ ব্যাপারে মনোযোগী নয়।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭১(২) ধারায় বলা হয়েছে যে সাক্ষীদের কোর্টে উপস্থিত করার দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু এই দায়িত্ব পালনে পুলিশ উদাসীন হলে বা ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে পুলিশ সাক্ষী উপস্থিত করার ব্যাপারে চিরাচরিতভাবে উদাসীন। কিন্তু এ বিধানের কিছু ব্যতিক্রম দু-একটি আইনে আছে। যেমন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ২৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী উপস্থিত করার দায়িত্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার। কিন্তু পুলিশ সাক্ষীর সমন ও ওয়ারেন্ট কার্যকরী করতে ইচ্ছাকৃত গাফিলতি করলে এটাকে অদক্ষতা হিসেবে চিহ্নিত করে কোর্ট তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিতে পারবেন। এ আইনে এ রকম একটি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা থাকার ফলে পুলিশ ঠিকই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় সাক্ষীদের উপস্থিত করে যাচ্ছে।
আমাদের দেশে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও দায়রা জজ আদালতগুলো ফৌজদারি মামলার বিচার করে থাকে। বেশির ভাগ ফৌজদারি মামলাতে সাক্ষীর অভাবে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। আপনি যদি যে কোনো একটি ফৌজদারি আদালতে মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করেন, দেখবেন অসংখ্য মামলা সাক্ষীর অভাবে বিচার কার্য শেষ হচ্ছে না। ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা একটি মামলায় এরকম বিলম্বিত বিচারের ঘটনা প্রকাশ করেছে। পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে একজন ব্যক্তি রাজশাহী থেকে দোকানের মাল কিনতে ঢাকা এসেছিল, সে ১৯৯৮ সালের ১৮ মার্চ সন্ধ্যার সময় রাজশাহী যাওয়ার জন্য গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে বসা ছিল। গাবতলী বাস টার্মিনালের পুলিশ ওই ব্যক্তির কাছাকাছি স্থানে একটি সিগারেটের প্যাকেটে হেরোইন পায়। পুলিশ ওই হেরোইনের জন্য ওই ব্যক্তিকে দায়ী করে মামলা দায়ের করে। মামলাটি যখন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য ধার্য ছিল তখন ২৪ বছর পর ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি একজন সাক্ষীকে পরীক্ষা করা হয়। মামলাটিতে প্রতি ২-৩ মাস অন্তর তারিখ ধার্য হতো। এ মামলার আসামি দোষী কি নির্দোষ তা বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। কিন্তু রাজশাহী থেকে একজন ব্যক্তির ২-৩ মাস পর ঢাকায় এসে হাজিরা দেওয়া কতটা অমানবিক, কষ্টকর ও অর্থনৈতিক টর্চার করে তা কেবল একজন ভুক্তভোগীর পক্ষেই অনুভব করা সম্ভব।
আমরা যারা বিচারক ও আইনজীবী, বিচারের এই মহান দায়িত্বে আছি তারা মানুষের এ সীমাহীন দুর্ভোগের দায় দায়িত্ব এড়াতে পারি না। আলোচিত মামলাটিতে যদি পুলিশ দায়েরের পর নিয়মিত সাক্ষী উপস্থিত করত নিশ্চয়ই এত দিনে বিচারকাজ শেষ হয়ে যেত। একটি মামলার আসামিকে যদি ২৫ বছর কোর্টে আসতে হয়, একটি প্রাথমিক রায়ের জন্য এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে? যে কোনো মামলার বোঝা একজন ব্যক্তিকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় এবং অন্য কোনো কাজে মনোনিবেশ করতে মানসিকভাবে বাধাগ্রস্ত করে। এটা ঠিক যে, এসব কষ্টের কারণে নাগরিকদের ফৌজদারি অপরাধ সংঘটন থেকে সব সময়ই দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু যদি কোনো কারণে কেউ মামলায় জড়িয়ে যান, সে ক্ষেত্রে বিচারের আগেই তাকে এভাবে অর্থাৎ আর্থিক ও মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার মতো অমানবিকতা আর কিছু হতে পারে না। বিচারে যদি দোষ প্রমাণিত হয় অবশ্যই তাকে সাজা খাটতে হবে সেটা ভিন্ন কথা।
মানুষকে এ হয়রানির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ফৌজদারি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। আমি যখন সিলেটে জেলা জজ এবং চট্টগ্রামে ও ঢাকায় মহানগর দায়রা জজ পদে কর্মরত ছিলাম তখন পুরনো মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। এ উদ্যোগ বা পরিকল্পনার আওতায় সব ধরনের মামলা থেকে সবচেয়ে পুরনো ১০টি মামলা চিহ্নিত করে সেই নথির ওপর ওই মর্মে একটি স্টিকার লাগিয়ে দিতাম। বারের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করেছিলাম এসব পুরনো ও নির্বাচিত মামলায় কোনো মূলতবি দেওয়া হবে না। এ পরিকল্পনার আওতায় অতি পুরনো মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
জেলায় একজন জেলা জজের বদলি হলে তার ধ্যান ধারণারও বদলি হয়ে যায়। আমার বদলির পর ওই পরিকল্পনা মতো আর পুরনো মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। আশার কথা, নিম্ন আদালতের মামলা নিষ্পত্তিসহ সার্বিক কাজকর্ম তদারকি করার জন্য বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী মহোদয় সাতটি বিভাগে সাতজন বিচারপতির নেতৃতে সাতটি মনিটরিং কমিটি গঠন করেছেন এবং এ কমিটি আমার জানা মতে নিম্ন আদালতের কাজকর্ম দেখাশোনা করে যাচ্ছেন। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এ উদ্যোগের সুফল ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। ২০২২ সালে নিম্ন আদালতে ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৯৫৭টি মামলা দায়ের হয়েছে এবং তার বিপরীতে ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৫২২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তির হার ৯৪% অর্থাৎ দাখিলকৃত মামলার শতকরা ৯৪ ভাগ মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। দায়েরের সমপরিমাণ মামলা বা তার চেয়ে বেশি মামলা নিষ্পত্তি করতে পারলে মামলাজট কমে যাবে। আমার বিবেচনায় এ অগ্রগতি মূলত মনিটরিং ব্যবস্থার জন্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। মনিটরিং কমিটির জন্য নিম্ন আদালতের বিচারকেরা যেমন তাদের অভাব অভিযোগগুলো সহজে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নোটিসে আনতে পারবেন, তেমনি তাদেরও একটি জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। যেখানেই জবাবদিহির ব্যবস্থা আছে সেখানেই আপনি কিছু দায়িত্বশীল আচরণ ও কাজ আশা করতে পারেন।
এবার উচ্চ আদালত নিয়ে কিছু কথা বলি, যেখানে আমি বিগত ১৩টি বছর বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছি। উচ্চ আদালতের নাম মূলত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আমাদের সংবিধানের ৯৪ নম্বর আর্টিক্যাল অনুসারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের সংবিধান ০৪.১১.১৯৭২ তারিখে গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়। তাহলে প্রশ্ন জাগে তার আগে কি স্বাধীন বাংলাদেশে উচ্চ আদালত বা সুপ্রিম কোর্ট ছিল না? অবশ্যই ছিল। অস্থায়ী সংবিধান আদেশ ১৯৭২, তারিখ ১১ জানুয়ারি এর ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ওই তারিখেই বাংলাদেশ হাই কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ওইদিনই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে বাংলাদেশ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন এবং ১২ জানুয়ারি শপথ প্রদান করেন। এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য ওই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এটা সর্বজন বিদিত যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে আসেন এবং কী রকম জনসমুদ্র তাকে সংবর্ধিত করেছিল তা আমরা দেখেছি ও জানি। বাংলাদেশে পদার্পণের পর তাঁর কী রকম ব্যস্ততা থাকতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। ওই রকম তুমুল ব্যস্ততার মধ্যেও কোনো বিলম্ব না করে পরদিন ১১ জানুয়ারি তিনি অস্থায়ী সংবিধান আদেশ প্রণয়ন এবং বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ এবং তার এক দিনের মধ্যে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। এসব কিছু তার প্রশাসনিক সক্ষমতা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়কের চরিত্রের সামান্য বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টে স্থগিত মামলাসমূহের বিচারের জন্য ১৬ আগস্ট, ১৯৭২ তারিখে বাংলাদেশ হাই কোর্টে আপিল বিভাগ গঠন করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭২ তারিখে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। বঙ্গবন্ধু উদ্বোধনী ভাষণে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ও বাংলা ভাষায় রায় প্রদানের ওপর জোর দেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজও আমরা অধিকাংশ রায় বাংলা ভাষায় দিতে পারিনি। উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম উপস্থিত ছিলেন। ইদানীং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উদ্বোধনী দিবসকে স্মরণ করার জন্য প্রতি বছর ১৮ ডিসেম্বর অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালন করা হয়। (চলবে)
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট বিভাগের বিচাপতি
সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান-এর বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা, পরে প্রথম আলো সম্পাদক ও একই প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ফের দায়ের করা ওই আইনের ধারায় মামলার বিষয়ে কথা বলেছেন দেশের নামি চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি আজ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রফাইলে এ নিয়ে একটি পোস্ট দেন।
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার পোস্টে লেখেন, যে বা যারা প্রথম আলোর সাংবাদিক এবং সম্পাদকের বিরুদ্ধে জিনিসটা মামলা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন, জেনে রাখবেন এটা আমাদেরকে আরো অন্ধকারের দিকে নিয়ে গেল। আমি ওই খবরটা নিয়ে আলোচনায় আর না যাই। কারণ অনেক কথা ইতিমধ্যেই হইছে। শুধু এইটুকু বলি, সংবাদ নিয়ে যে কেউ সংক্ষুব্ধ হইতে পারেন। সেটা ডিল করার অনেক রাস্তাও আছে। সব বাদ দিয়ে যে রাস্তাটা বেছে নেয়া হইলো, এটা দেশের জন্য ভয়ংকর।
তিনি লেখেন, আর সরকারের পিআর অ্যাংগেল থেকেও যদি বলি, এই রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে 'চাইল-ডাইল-মাংসের স্বাধীনতা চাই'- শ্লোগানটার মধ্যে আরো কয়েক হাজার গুন বেশি শক্তি ইনজেক্ট করা হইল।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপারে তিনি সবার 'শুভ বুদ্ধির উদয় হবে' এবং 'অতি উৎসাহের রাশ টেনে ধরা হবে'- এমন আশা করে বলেন, আবারও বলছি, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করেন! আমি সব সময় এই কথাটা বলি, ভাইয়েরা এবং বোনেরা আমার, আইন করার সময় এই জিনিসটা মাথায় রাখবেন যে আইনটা আপনার বিরুদ্ধে প্রয়োগ হলে আপনার অবস্থাটা কি হবে। মানে আপনি যখন ক্ষমতায় থাকবেন না তখন এই আইন আপনার কাছে কিভাবে ফিরে আসবে, এটা মাথায় রেখে যে আইন করা হয় সেটাই তুলনামূলক উত্তম আইন। কারণ মনে রাখবেন 'চিরদিন কারো নাহি যায় সমান'! পৃথিবীতে আজীবন থাকে এই রকম কোনো সরকার আসে নাই এখনো।
তিনি লেখেন, একটা স্বাস্থ্যকর সমাজে প্রেসের ভুল করার স্বাধীনতা থাকতে হবে যদিও ছবি উলটপালট করা ছাড়া প্রথম আলোর রিপোর্টে ভুলটা কি আমি এখনও বুঝি নাই। রাস্তা ঘাটে মানুষতো বলতেছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে তাদের নাভিশ্বাস উঠছে। এমনকি স্বয়ং মন্ত্রীরাও বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে দাম বেড়ে গেছে। তো এই কথাটা কেনো এতো কড়া রিঅ্যাকশন ইনভাইট করলো আমি বুঝলাম না। কিন্তু যদি প্রেস ভুলও করে তার রিঅ্যাকশন এরকম রিপ্রেসিভ হইতে পারে না। কেন পারে না সেটা জানতে গুগল করলে এ বিষয়ে অনেক ক্লাসিক লেখা পেয়ে যাবেন।
শেষে নির্মাতা লেখেন, যাই হোক শেষ করি একটা কথা দিয়ে। সমাজে প্রশ্ন করার জায়গা থাকতে হবে। দ্বিমত করার জায়গা থাকতে হবে।
দেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে সোশ্যাল মিডিয়ায় সব চাইতে বড় হাসির পাত্র ছিল হিরো আলম। রবীন্দ্রসংগীত, ডিবি অফিস আর রাজনীতিতে মাথা ঢোকানোর পরই দেখি প্রায় ‘জাতীয় বীর’ হয়ে গেছেন আলম লাখো মানুষের কাছে!
মাহফুজুর রহমান এখনও জাতীয় বীর হতে পারেন নাই কারণ তিনি এটিএন বক্স ছেড়ে বেরিয়ে আসেননি, হিরো আলমের মতো মাল্টি সেক্টরে এসে প্রকাশ্যে হুজুগে জনগনের সেন্টিমেন্ট নিয়ে নাড়াচাড়া করেননি।
ব্যবসায়ী হিসেবে/এম্পলয়্যার হিসেবে মাহফুজুর রহমানেরও অনেক সুনাম শুনেছি নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তার স্টাফদের মুখে। তার জনপ্রিয়তা এই ঈদেও দেখবেন আকাশ ছোঁয়া। তার গানের অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ টিআরপি।
আপনি কি মনে করেন তার গানে মুগ্ধ হয়ে কোটি মানুষ টিভির সামনে বসছে? অবশ্যই না! এই দর্শকের ৯৯ পারসেন্টই তাকে নিয়ে মজা করছে। হাসাহাসি করার জন্য তার গান দেখছে। সেই হাসাহাসি/ট্রোলের বন্যা বসাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এখন মাহফুজুর রহমান কায়দা করে একটু টেকনিক চেইঞ্জ করলেই আলমের মতো বোকা বানিয়ে ফেলতে পারবেন প্রচুর মানুষকে। তাকে নিয়ে ফান করার বদলে তার পক্ষে ফাইট করতে আসবে অনেকে আমাদের মতো সমালোচকদের বিপক্ষে।
অভিনয়শিল্প/সিনেমার কথা বাদ দিলাম। অনন্ত জলিল, জায়েদ খানরাও বেঁচে থাকবেন সুপারস্টার, স্টার হিসেবে। অভিনয়ের দুই লাইন না জেনেও।
পরিচিত কে যেন বলছিলেন হিরো আলম, অনন্ত জলিলরাই আমাদের বর্তমান রুচির আসল মাপকাঠি।
চ্যালেঞ্জ করতে পারলাম না তার মতামতকে।
লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক
(লেখাটি লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া)
প্রথমেই অন্তত দুটো কথা বলে নেওয়া ভালো। প্রথম কথা এই, জনরুচি কথাটার মধ্যে একটা ব্যাপক সার্বিকতা আছে, যা মর্মের দিক থেকে কোনো বিশেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযোগী নয়। রাষ্ট্র বা জাতি ধারণা মাথায় রেখে আমরা বিপুল মানুষকে এক পাল্লায় স্থাপন করে কথাবার্তা বলি বটে; কিন্তু এর মধ্য দিয়ে আদতে একটা বিপুল জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোনো কাজের সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় না। মানুষের মধ্যে শ্রেণি ও অবস্থানগত দিক থেকে শুরু করে বহুবিধ ফারাক থাকে। আর রুচি জিনিসটা ওইসব পার্থক্য দিয়ে এতটাই নিয়ন্ত্রিত হয় যে, কোনো সাধারণ মন্তব্য প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় কথাটা হলো, যোগাযোগ-প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য উন্নতির পর থেকে মানুষের বিশ্বজনীন যোগাযোগ আর কল্পনার যে বৈপ্লবিক বদল ঘটেছে, আগের অনেক দশক মিলিয়েও সে ধরনের পরিবর্তন শনাক্ত করা যায় না।
এ দুটো দিক বিবেচনায় রেখে বলা যায়, বাংলাদেশে সত্তর আর আশির দশকে নাগরিক মধ্যবিত্ত সমাজে সুরুচির ধারণাটা পশ্চিমা মেজাজ আর কলকাতায় বিকশিত ‘সংস্কৃতি’র যৌথতায় নির্ধারিত হতো। এর পরিচয় আছে উত্তম-সুচিত্রা ধরনের সিনেমায়, ছায়ানট ধরনের সংগীত-চর্চায়, আর ‘দেশ’ পত্রিকার প্রবল প্রতাপে। তবে এ রুচির চর্চাকারীরা সংখ্যায় খুব বেশি ছিল না; যদিও চর্চার আভিজাত্য সমাজে প্রতিষ্ঠিত ছিল। নাগরিক মধ্যবিত্তের মধ্যে এ ধরনের রুচির বিস্তারের প্রধান সাক্ষ্য বোধহয় পাওয়া যাবে সিনেমার গানে, যার সঙ্গে ষাট-সত্তরের দশকের কলকাতার ‘আধুনিক বাংলা গানে’র প্রবল সাদৃশ্য পাওয়া যাবে, যদিও বাংলাদেশের বাস্তবতায় স্বভাবতই এর নানারকম রূপান্তরও ঘটেছিল। রূপান্তরের বড় কারণ সম্ভবত দুটি। একদিকে মুসলমান-প্রধান জনগোষ্ঠীর কাহিনি ও ভাবের বাহন হওয়ায় কিছু পরিবর্তন জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে করতেই হতো। অন্যদিকে গ্রামীণ জনসমাজের সংখ্যাধিক্যের কারণে চিত্রিত জীবনচিত্রে গ্রামের একটা প্রাধান্যও থাকত। বিপুল গ্রামীণ জনগোষ্ঠী প্রাত্যহিক জীবনযাপন ও বিনোদনের জন্য নগরের ওপর প্রধানভাবে নির্ভরশীল না থাকলেও উন্নত বা কাক্সিক্ষত রুচির সরবরাহকারী হিসেবে ঢাকার একক প্রাধান্য আসলে স্বাধীনতার আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
পশ্চিমা সংস্কৃতি ঢাকার জনরুচিতে নতুন রূপ নিয়ে ওপরে কথিত রুচিধারার মধ্যে যে ধরনের রূপান্তর ঘটাচ্ছিল, তা বোঝার জন্য সবচেয়ে ভালো উপকরণ সম্ভবত ব্যান্ড সংগীত। পশ্চিমা পপ মিউজিক, তার কথা, সুর, উপস্থাপনা ও উপভোগের কেতা ঢাকার ব্যান্ড সংগীতে খুব ভালোভাবে আত্মীকৃত হয়েছে; উত্তম ফসল ফলিয়েছে; আর সম্ভবত বিপুল তরুণ-সমাজের জন্য কাঠামোবদ্ধ রুচির নিগড় থেকে মুক্তির একটা বার্তাও নিয়ে এসেছিল। পোশাক এবং খাবারের দিক থেকে বাংলাদেশের জনরুচি গত পাঁচ দশকে সম্ভবত খুব একটা বৈপ্লবিক বদলের মধ্য দিয়ে যায়নি। ম্যাকডোনাল্ড সংস্কৃতির বিপুল বিস্তার সত্ত্বেও খাদ্যরুচির প্রধান প্রবাহটা আসলে প্রায় সমরূপই আছে। অন্যদিকে পোশাকের রুচিও আসলে বদলেছে ঠিক ততটাই, যতটা আর্থিক সংস্থানের কারণে বদলাতে পারে। বলার মতো যথেষ্ট কারণ আছে, ঢাকাকেন্দ্রিক বাংলাদেশের নাগরিক জনরুচি শনাক্তকরণের জন্য সাহিত্য বা অন্য বিনোদন-উপাদানের তুলনায় খাদ্য-সংস্কৃতি ও পোশাক-সংস্কৃতি অধিকতর বিশ্বস্তভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। সত্তর ও আশির দশকের অন্তত মধ্যবিত্ত জনরুচির গ্রাম-শহর নির্বিশেষে– সবচেয়ে ভালো আদল পাওয়া যাবে হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টিকর্মে।
নব্বইয়ের দশক থেকে নগরায়ণের গতি ও প্রকৃতি দ্রুত বদলাতে থাকে। এর অনিবার্য পরিণতি পশ্চিমায়ন। খুব স্বাভাবিক বাস্তবতার কারণেই বাংলাদেশের অভিজাত রুচির ভূগোলে কলকাতার হিস্যা দ্রুত কমতে থাকে। তার স্থান উচ্চবিত্তের ক্ষেত্রে দখল করতে থাকে ইংরেজিবাহিত খাঁটি আমেরিকান সংস্কৃতি; আর নাগরিক মধ্যবিত্তের ক্ষেত্রে অংশত তার অপভ্রংশ। গ্রামীণ
সাংস্কৃতিক উপাদানের নাগরিক রূপান্তরও এসময় থেকে মধ্যবিত্ত নাগরিক সংস্কৃতিতে বড় জায়গা দখল করতে থাকে। সত্তর-আশির দশকে যোগাযোগহীনতার কারণে গ্রামীণ সংস্কৃতি যতটা স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে পারত, নব্বইয়ের দশক থেকে তার পরিমাণ দ্রুত কমতে থাকে। এতে করে একদিকে গ্রামীণ জনপদে নগর-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটতে থাকে, আর নগরেও পুনরুৎপাদিত হতে থাকে গ্রামীণ সংস্কৃতির নানা মাত্রা। এর এক কারণ, গ্রাম থেকে গরিব মানুষের ব্যাপক হারে নগরে আগমন। নগরে লোকসংগীত বা লোকসংস্কৃতির চর্চা আগেও ছিল। কিন্তু নব্বইয়ের দশক থেকে গ্রামীণ জনপদের নানা উপাদান নগরে যেভাবে পুনরুৎপাদিত হয়েছে, তা একেবারেই আলাদা জিনিস। নাগরিক মধ্যবিত্ত রুচিতেও তার ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেছে। শিল্পী মমতাজ হয়তো এ বাস্তবতারই তুঙ্গ প্রকাশ।
গত এক-দেড় দশকে দুনিয়ার অন্যান্য গরিব দেশের মতো বাংলাদেশেও জনরুচি ও যাপিত সংস্কৃতির বৈপ্লবিক বদল ঘটেছে নতুন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। এর প্রধান নিয়ামক যোগাযোগ-প্রযুক্তি। কিন্তু আমাদের মতো দেশগুলোতে তার আরেক কারণ আছে। বাংলাদেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্তের মধ্যে এমন তরুণ-তরুণীর সংখ্যা হয়তো খুবই কম, যারা নিজেদের সম্ভাব্য ইমিগ্রান্ট হিসেবে কল্পনা করে না। এমতাবস্থায় তাদের ভোগ-উপভোগ এবং কল্পিত রুচির মধ্যে বড় ধরনের বদল ঘটাই স্বাভাবিক। যোগাযোগ-প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি সেই কল্পনাকে অন্তত অংশত বাস্তবে পরিণত করে দেখাচ্ছে। যোগাযোগ-প্রযুক্তির অভিভাবকত্বে জনমানুষের সামষ্টিক রুচি ও বোধের যেসব পরিবর্তন ঘটে চলেছে, তার কোনো কাঠামোগত বিশ্লেষণের সময় এখনো আসেনি। কিন্তু এটুকু বলা যায়, গ্রাম ও নগরের ব্যাবধান এদিক থেকে খুব বেশি নয়। আর নাগরিক উচ্চশ্রেণির সাথে মধ্যশ্রেণির ফারাকও কমেছে।
কিন্তু বিনোদন-সংস্কৃতি রুচির একাংশ মাত্র। বাস্তবে সুবিধাপ্রাপ্ত উচ্চশ্রেণিটিই কেবল এই নতুন রুচিকে নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারছে। মধ্যবিত্তের যাপিত জীবন আর কাক্সিক্ষত রুচি ও বোধের টানাপড়েন নিশ্চয়ই আগের চেয়ে বেড়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা হবে গ্রামীণ জনপদের বিপুল মানুষ। তাদের পূর্বতন বোধ ও বিনোদন প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে; কিন্তু নতুন আয়োজনগুলোতে অংশ নেওয়ার বাস্তবতাও নিজেদের জীবনে তৈরি হয়নি। বাংলাদেশের গ্রাম ও নগরে ওয়াজ-সংস্কৃতির বিপুল বিস্তারের অন্যতম প্রধান কারণ কি এই শূন্যতা?
আগেই বলেছি, শ্রেণি বা অন্যবিধ ফারাকের আলাপ মুলতবি রেখে জনরুচির আলাপ অর্থহীন। তারপরেও যদি এ নাম ধরে আলাপ করতেই হয়, তাহলে হয়তো বলা যাবে, বাংলাদেশে এমন জনরুচি চিহ্নিত করা খুব সহজ কাজ নয়। পোশাকে-খাবারে তার প্রবল ছাপ আছে; আছে ফোক আর ব্যান্ড মিউজিকে; আছে কথায়-উচ্চারণভঙ্গিতে-কোলাহলময়তায়। কিন্তু সাহিত্য, সিনেমা ইত্যাদি অপেক্ষাকৃত নির্ণয়যোগ্য কাঠামোর মধ্যে তার প্রতিফলন খুব জুতমতো ঘটেনি। ফলে জনপ্রিয় সংস্কৃতির ইন্ডাস্ট্রিয়াল উৎপাদন-পুনরুৎপাদনে বাংলাদেশ শোচনীয়ভাবে পিছিয়ে আছে। এর পেছনে কাজ করে থাকতে পারে, এমন দুটি অনুমান এখানে হাজির করছি। এক. উনিশ-বিশ শতকের কলকাতার সংস্কৃতির প্রবল প্রতাপের কারণে বাঙালি মুসলমান রুচি ও সংস্কৃতি উপস্থাপিত হওয়াটা খুব চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছিল। পাকিস্তান আমলে ‘ইসলামি’ সংস্কৃতির রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার কারণে ‘বাঙালি মুসলমান’ সংস্কৃতি তখন এবং পরেও দীর্ঘমেয়াদি অপরায়ণের শিকার হয়েছে। ফলে আমাদের নাগরিক ও অভিজাত রুচি ও সংস্কৃতি জনজীবনের সঙ্গে তুলনামূলক আলগা সম্পর্ক নিয়ে বিকশিত হয়েছে। দুই. বাংলাদেশে নাগরিক সংস্কৃতি জমে ওঠার আগেই বা প্রাক্কালে গ্লোবালাইজেশনের ধাক্কা এসে লাগে। ফলে নাগরিক মধ্যবিত্তের দুই-তিন প্রজন্ম কখনোই ঢাকায় বড় হারে বসতি করে উঠতে পারেনি। প্রধানত এ ধরনের জনগোষ্ঠীই যে কোনো দেশের রুচির নিয়ন্তা হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সে ঘটনা না ঘটায় জনরুচির কোনো কাঠামোগত প্রস্তাব বড় হয়ে সামনে আসতে পারেনি। কলকাতা এবং পশ্চিমই রয়ে গেছে প্রধান রেফারেন্স পয়েন্ট। প্রতিক্রিয়া হিসেবে অপেক্ষাকৃত নন-এলিট জোনে ‘ইসলাম’ও তার শেয়ার দাবি করছে। কিন্তু কোনোটিই জনরুচির ভেতর থেকে যাপিত জীবনের রেফারেন্সে কার্যকর হতে পারছে না। কিংবা হতে পারে, এই নিরাকার আকারই বাংলাদেশের জনরুচি ও সংস্কৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য।
(দেশ রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা প্রান্তর-এ প্রকাশিত)
জনরুচি নিয়ে এ সংখ্যার সব লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে ৩৬০ টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করা আসাদুর রহমান কিরণ এখন গাজীপুর মহানগরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন দল বদলে ক্ষমতার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র মতে, কিরণ এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার এত সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে রয়েছে দখলবাজি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি ও অনিয়ম।
কিরণের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ৩১টি দপ্তরে যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তাতে ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসা এই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
৩১ দপ্তরে অভিযোগ : গত বছর ২০ জুলাই ৩১টি দপ্তরে সচেতন নাগরিক, বাংলাদেশের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মো. নজরুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, দুদক, স্থানীয় সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে গত বছর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করেও সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন কিরণ।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার অভিযোগপত্রে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম চিত্র তুলে ধরেছি।’
কিরণের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র : ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসে কিরণ দুর্নীতি-লুটপাট, কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নজর পড়ে পুবাইলের চিরুলিয়ায় অর্পিত সম্পত্তির ওপর। ২৩ বিঘা জমি নিজের কবজায় নেন কিরণ। এর জন্য ভুয়া জমির মালিক বানান একজনকে। এ জমি নিজের করায়ত্তে নিতে সিটি করপোরেশনের ১৮ লাখ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জানাজানি হয়ে গেলে কিছুদিন আগে কর পরিশোধ করেন। তবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় জমির মালিক হওয়ায় ওই জমির খাজনা এখনো দিতে পারেননি কিরণ।
পোশাকশিল্প কারখানার সবচেয়ে বড় নগরী গাজীপুর। সিটি করপোরেশনের আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম শিল্প ও হোল্ডিং ট্যাক্স। আর সেখানেই অনিয়মের বড় ক্ষেত্র তৈরি করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তিন/পাঁচ কোটি টাকার বকেয়া হোল্ডিং, শিল্প ট্যাক্স অর্ধেকে নামিয়ে এনে করপোরেশনের কোষাগারে মাত্র ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রেহাই দিয়ে দেন করদাতাদের। কিরণের এই কৌশলে বেঁচে যান কর ফাঁকি দেওয়া শিল্প-মালিকরা। কিন্তু রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। নগরের আটটি জোনে করের টাকা আত্মসাৎ করার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিরণ ২০১৬-১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একটি টেন্ডার আহ্বান করেন। টেন্ডার নম্বর : জিসিসি/জেড। ওই টেন্ডারের কাজের অগ্রগতি না থাকায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে ওই টেন্ডারের কোনো বিল পরিশোধ করতে পারেননি কিরণ। ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেন। ওই সময়ের বিভিন্ন ঠিকাদারকে ডেকে তাদের কাছ থেকে কাজের হিসাব করে তার কমিশন আদায় করেন কিরণ। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র সিটি করপোরেশনের চেক রেজিস্ট্রার বই ঘেঁটেও পাওয়া গেছে।
উত্তরায় ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ : উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ১০ নম্বর বাড়ির ছয়তলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি ‘কার্যালয়’ করেছেন কিরণ। উত্তরার এ কার্যালয়ে বসে ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। লেনদেন-দরবার সবই হয় এ বাড়িতে বসেই। পার্সেন্টেজ ছাড়া যেমন ঠিকাদারদের কাজের বিল পরিশোধ করা হয় না, তেমনি পার্সেন্টেজ ছাড়া ঠিকাদারি কাজও পান না কেউই। কোন কাজ কে পাবে, কে পাবে না, কে কত পার্সেন্ট কমিশন দেবে এসব হিসাব ও মধ্যরাতের প্রমোদ-ফুর্তির যে ব্যয় হয় সিটি করপোরেশনের এলআর ফান্ড থেকে নির্বাহ করা হয়। শিল্পাঞ্চল-সমৃদ্ধ গাজীপুর নগরীর অধিকাংশ ব্যবসায়ী-ঠিকাদার ‘১০ পার্সেন্ট’ হিসাবেও কিরণকে চিনে-জানে।
বর্তমানে গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সারা জীবন রাজনীতি করেছি দলের জন্য। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু মূল্যায়ন পাইনি। একটি কাজের জন্য আমি ছয় মাস ঘুরছি। কিন্তু কিরণ আমাকে কাজ দিচ্ছেন না। কারণ আমার কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিতে পারবেন না।’
শুধু কী তা-ই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজনের নামে গত বছর ১৭ মার্চ কোনো আয়োজন না করেই কিরণ সিটি করপোরেশনের খরচের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ জন কাউন্সিলর এবং কিছু কর্মকর্তার সিলেটে পিকনিক আয়োজন করার নামে করপোরেশনের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ বাবদ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে।
কিরণের সম্পদ : টঙ্গীর পাগাড়, ঢাকার আশুলিয়া এবং গাজীপুরে নিজ নামে, স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে ১১২ বিঘা জমির মালিক কিরণ। টঙ্গীর পাগাড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু জমি রয়েছে, যা নয়ছয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন তিনি। নজরুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িটি সাততলা। এটি নির্মাণ করতে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একই এলাকার ৭ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে ৯৫ নম্বর বাড়ি রয়েছে। বারোতলা নির্মাণাধীন ওই ভবনের আনুমানিক মূল্য ৩৫ কোটি টাকা। গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে ফ্ল্যাটের তথ্যও পাওয়া গেছে। ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে সাত কোটি টাকা।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় স্ত্রী ও নিজের নামে অন্তত ২০০ বিঘা জমির ওপর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কারখানা রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকা হতে পারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে টঙ্গীতে তিনটি কারখানা আছে তার। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি কোটি টাকা।
কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত কয়েকশ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক শহরে বাড়ি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। কিরণ দ্বৈত নাগরিক বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
হাইকোর্টের আদেশ : গত বছরের ২০ জুলাই দুদকে জমা পড়া অভিযোগ লাল ফিতায় আটকে গেলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। গত বছর ২১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত কিরণের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। হাইকোর্ট চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
রাজনীতিতে উত্থান : প্রিন্টিং প্রেস কারখানায় বাইন্ডার-ম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আসাদুর রহমান কিরণ। ১৯৮৪-৮৫ সালে এলিট প্রিন্টিং প্রেস নামে ওই কারখানায় চাকরি করা কিরণ ১৯৮৬ সালে রাজনীতিতে আসেন। ওই সময় তিনি জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন যুব সংহতির টঙ্গীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় গাজীপুর নিয়ন্ত্রণ করতেন হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি জাতীয় পার্টি ও পরে বিএনপির রাজনীতিতেও যুক্ত হন। ওই সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর হাসান উদ্দিন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ও তার ঘনিষ্ঠ পরিচিতি লাভ করে শুরু করেন জমি দখল। টঙ্গী, পাগাড় মৌজায় হিন্দু-খ্রিস্টানের মালিকানায় থাকা জমি দখল করে নেন তিনি। পরে প্লট বানিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন। তবে প্রিন্টিং প্রেসের শ্রমিক কিরণ ওই সময় টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিক নেতা হিসেবেও আধিপত্য বিস্তার করেন। হিন্দু-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কেউ জমি দিতে না চাইলে রাজনৈতিক চাপ ও সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করতেন। পাগাড় শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় টার্গেট করে জমি দখল করেন কিরণ। টঙ্গী পৌরসভা হিসেবে প্রথম ভোটে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনারও নির্বাচিত হন। তত দিনে ক্ষমতা-সম্পদ ও অঢেল অর্থের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর গুরু পাল্টে কিরণ হয়ে যান সাবেক পৌর মেয়র গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লার ‘মাইম্যান’। এই সুযোগে ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে কিরণের। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লা মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। কিরণ মূলত দুর্নীতি-অনিয়ম শেখেন তখন থেকেই। বিএনপি নেতা মান্নান মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে আজমত উল্লার সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই কিরণের।
গাজীপুরের মাওনা এলাকার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ার ছুঁয়েই কিরণ স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট, ভূমিদখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। দলীয় লোককে সরিয়ে রেখেছেন, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। কারণ, কিরণ আওয়ামী লীগ নয়, মূলত সুবিধাবাদী।’
ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিরণ অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন সত্যি, তবে তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সেটা তো প্রমাণ হয়নি এখনো। প্রমাণ হলে তখন মন্তব্য করা যাবে।’
অর্থনৈতিক সংকট আর রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে নতুন বছরে নতুন শুরুর আশা ছিল শ্রীলঙ্কার। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সংকটের অভিঘাত এখনো সইতে হচ্ছে দেশটির। বিদেশি সহায়তার পরও হু হু করে বাড়ছে দেশটির মূল্যস্ফীতি। গেল ফেব্রুয়ারি মাসে মুদ্রাস্ফীতির হার ৫০ শতাংশের ওপরে ছিল। অথচ শ্রমিক-চাকরিজীবীদের বেতন বাড়েনি। অনেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ হারানো লোকের সংখ্যাও কম না। এ পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার তরুণদের অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশটির সরকারি সূত্র অনুযায়ী, ২০২২ সালেই ৩ লাখের বেশি মানুষ বাইরের দেশে কাজ খুঁজতে গিয়েছে। আর চলতি বছর প্রথম দিনেই দেশ ছেড়েছে আরও ৭৩ হাজার মানুষ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, দেশটি তার বিভিন্ন শিল্প খাতের প্রয়োজনীয় লোকবলই পাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে চললে উৎপাদন কমে গিয়ে আরেক দফা সংকটে পড়তে পারে দ্বীপরাষ্ট্রটি।
ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে দেশটির ব্যবসায়ীদের বরাতে বলা হয়েছে, তারা কর্মী সংকটে ভুগছেন, যাদের মধ্যে ম্যানেজার পদও রয়েছে। খালি থাকা ম্যানেজার পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য তাদের আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। কোম্পানিগুলো সাধারণত ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদেরই নিয়োগ দিত এবং এ বয়সের তরুণরাই চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরিতে যোগ দিতেন। তবে এখন চল্লিশ এবং পঞ্চাশ বছর বয়সীরাও চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে আইএমএফ-এর ঋণ প্যাকেজের শর্ত হিসেবে বেশ কয়েক দফা কর বাড়িয়েছেন। বর্তমানে দেশটিতে আয়করের হার ৩৬ শতাংশ। এর সঙ্গে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি জনগণকে ফেলেছে ভীষণ চাপে। দ্বিমুখী এই চাপে দেশ ছাড়ছেন নাগরিকরা। দেশটির বিরোধী দল ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার পার্টির ভাষ্য, সরকার অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানোয় দলে দলে দেশ ছাড়ছেন মানুষ।
সাময়িকীটি বলছে, শত শত ডাক্তার ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, যার মধ্যে গত বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসেই গিয়েছেন ৪৭৭ জন। এভাবে এগোতে থাকলে গ্রামীণ অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার সংকট দেখা যাবে।
এদিকে শ্রীলঙ্কান সরকারও এই দেশ ছেড়ে পালানোকে উৎসাহিত করছে। প্রথমত, সরকারি খাতে বেতনের বোঝা কমানোর জন্য এবং দ্বিতীয়ত, বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের আশায়। গত জুন মাসে সরকার মাসে ১০০-৫০০ ডলার রেমিট্যান্স পাঠানোর শর্তে দেশটির ডাক্তারদের পাঁচ বছরের জন্য ছুটি দেওয়ার ঘোষণাও দেয়।
ইকোনমিস্ট বলছে, দেশটির প্রবাসী নিয়োগ মন্ত্রী মনুশা নানায়াক্কার বিভিন্নভাবে শ্রীলঙ্কান কর্মীদের দেশের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরির সুযোগের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। চলো বিদেশে যাই- নামের এক ইউটিউব চ্যানেল থেকে জনগণের কাছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বিদেশে চাকরির সুযোগ প্রচার করা হচ্ছে। তাতে বলা হচ্ছে, নার্সিং, কেয়ার-গিভিংসহ অন্যান্য সেবামূলক কাজেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে শ্রীলঙ্কান সরকার, যাতে করে কাতার, কুয়েত, সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে তারা কাজের ব্যবস্থা করতে পারে। আর এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে আশানুরূপ ফলাফল পাচ্ছে শ্রীলঙ্কান সরকার। গত চার মাসে রেমিট্যান্সের হার বেশ খানিকটা বেড়েছে। তবে এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় মেধাবীরা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন, যাদের দেশ পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজন।
নানায়াক্কার জানিয়েছেন সেবা এবং উৎপাদন খাতে ইতিমধ্যেই কর্মী সংকট দেখা গিয়েছে। এটি প্রতিরোধের জন্য কিছু কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘লয়্যালটি বোনাস’ ঘোষণা করেছে, অর্থাৎ চাকরি না ছাড়লে অতিরিক্ত বেতন দেওয়া হবে।
কুমিল্লার মুরাদনগরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তায় ইটের প্রাচীর তুলে প্রতিবেশী দুই পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী দুই সহোদরের বিরুদ্ধে। আর শুধু তাই নয় মাইনুদ্দিন ও শফিকুল ইসলাম নামে ওই দুই সহোদরের তোলা প্রাচীরের কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে একটি মাদ্রাসাও। ফলে নিরুপায় হয়ে মই দিয়ে ৭ ফুট উঁচু সীমানা প্রাচীর পার হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে মাদ্রাসাটির শতাধিক শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীকে, যা তাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। অন্যদিকে প্রাচীরে আটকে পড়া দুটি পরিবারের শিক্ষার্থীরাও মই দিয়ে প্রাচীর টপকে তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে পরিবার দুটি। এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার রামচন্দ্রপুর উত্তর বাখরাবাদ গ্রামে।
এদিকে প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী বলছে, প্রত্যেকেরই যার যার বাড়ির নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রয়োজন রয়েছে, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রতিবেশীদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে তা কারও কাম্য নয়।
জানা গেছে, উত্তর বাখরাবাদ গ্রামের প্রভাবশালী মাইনুদ্দিনের বাড়ির পাশে কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় রাবেয়া বসরী মাদ্রাসা। তার পাশে বসবাস দুটি পরিবারের। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিবার দুটির সদস্যদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা ছিল মাইনুদ্দিন ও শফিকুলের জমির ওপর দিয়ে। কিন্তু তিনি হঠাৎই তার বাড়ির চারপাশে ইটের সীমানা দেয়াল তুলে দেন। এতে বাধ্য হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিদিন মাদ্রাসায় যেতে হচ্ছে বাঁশের মই বেয়ে প্রতিবেশীদের দেয়াল টপকে। আবার তাদের বাড়ি ফিরতেও হয় দেয়াল বেয়ে। এরই মধ্যে পা ফসকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে অনেকেই।
ভুক্তভোগী রাবেয়া বসরী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বি চাপিতলা গ্রামের মরহুম হাজি আব্দুর রহমান ২০১৮ সালে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য রাস্তাটি মৌখিকভাবে দিয়ে যান। কিন্তু তার মৃত্যুর পর ছেলে মাইনুদ্দিন ও তার ভাই শফিকুল ইসলাম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও প্রতিবেশীদের যাতায়াতের রাস্তাটি বন্ধ করে দেন। সমাধান চেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল সরকারের কাছে বেশ কয়েকবার গেলেও তিনি দুই বছর ধরে আমাকে ঘুরাচ্ছেন। দুই বছর আগে বাড়িসহ জমি কেনার প্রস্তাব দেন তারা। কিনতে রাজি না হওয়ায় সীমানা প্রচীর নির্মাণ করে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেন।’ এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান হাফেজ নজরুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক কবির আহমেদ ভূঁইয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে বসবাস করছি এবং বসবাসের শুরু থেকেই ওই সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে আসছি। হঠাৎ করে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
তবে সীমানা প্রাচীর নির্মাণকারী মাইনুদ্দিন বলেন, ‘প্রাচীর নির্মাণ করে আমি কোনো অপরাধ করিনি। আমার জমিতে আমি প্রাচীর নির্মাণ করেছি। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেশ কয়েকবার আমি চেষ্টা করেছি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার। কিন্তু জমির মালিক মাইনুদ্দিন তার জমির ওপর দিয়ে সড়ক দিতে রাজি হচ্ছেন না।’
সার্বিক বিষয়ে মুরাদনগরের ইউএনও মো. আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনী বলেন, ‘অবরুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি আমি জেনেছি। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য। এর পরও ভুক্তভোগীরা আদালতের সহযোগিতা নিতে পারেন।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।