
‘শিক্ষা সফরের গাড়ি দুর্ঘটনা’ এই লেখাটা গুগলে লিখে সার্চ করুন তাহলে দেখবেন কতটা ভয়াবহ এখনকার শিক্ষা সফরের যাতায়াত পথ। হয়ত আজও কোথাও শিক্ষা সফরের বাস দুর্ঘটনা ঘটেছে তা দেখতে পাওয়া যাবে। একবার ভেবে দেখেছেন কি কেন শিক্ষা সফরের বাস বেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে?
শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে শিক্ষা সফর সংযুক্ত থাকে। শুধুমাত্র সিলেবাসের পড়াশোনার ব্যস্ত থাকলে হয় না, বরং শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিনোদন ইত্যাদি জ্ঞান বিকাশের অন্যতম মাধ্যম। আর এসব আয়ত্ত করতে হলে শিক্ষা সফরের বিকল্প নেই। তাইতো প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ শীত মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এক হয়ে শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্যে দূর-দূরান্তে ভ্রমণ করে থাকে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বন্ধন যেমন দৃঢ় হয় তেমনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয় ভালো বোঝাপড়া। দীর্ঘ পড়াশোনার চাপ কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লান্তি কেটে নতুন করে শুরু করার একটি মাধ্যম হিসেবে শিক্ষা সফর ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু এই শিক্ষা সফর যখন বিষাদে রূপ নেয় তখন যেন সব কিছুই বৃথা হয়ে যায়। এখন টিভিতে নিউজ চ্যানেল, সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই এসব দুর্ঘটনার খবর শুনতে পাই। দুর্ঘটনা মানেই কারো পরিবারের স্বপ্ন ভঙ্গ, পরিবারে নেমে আসে শোকের মাতম। প্রতিবছর এমন দুর্ঘটনায় শত শত নিহতের পাশাপাশি হাজার হাজার আহত হয়। এসব দুর্ঘটনার জন্য শুধু কি চালকেরাই দায়ী? না বরং এসব দুর্ঘটনার জন্য চালকের চেয়ে বেশি দায়ী যাত্রীরাই।
আজ আমরা শিক্ষা সফর মানেই বুঝি বাসের মধ্যে গান-বাজনা-নৃত্য পরিবেশন করা। গত দুয়েকদিন আগে একটা দোকানে চা খেতে বসে পাশের এক শিক্ষার্থীকে বলতে শুনতেছিলাম ‘এবারের শিক্ষা সফরে তো আমার যাওয়ার ইচ্ছাই ছিলো না শুধুমাত্র বাসের জন্যই গিয়েছি, বাসের নাচানাচির মজাটা সবচেয়ে বেশি’। এই কথা শুনেই মনে হলো এই অসচেতনতা নিয়ে কিছু লেখা উচিৎ।
হ্যাঁ এটাই বাস্তব যে বর্তমানে প্রতিটি সফরের বাসের পরিস্থিতি দেখলে বুঝা যাবে না এটা বাস নাকি কোনো কনসার্ট স্টেজ। আপনি হয়ত বলতে পারেন গান বাজনার সঙ্গে দুর্ঘটনার সম্পর্ক কী? হ্যাঁ আসল সম্পর্ক সেখানেই। সাইন্স বলে মানুষ একসঙ্গে দুই দিকে কিংবা দুই কাজে মনোসংযোগ ঘটাতে পারে না। একটি বিরতি দিয়ে অন্যটিতে মনোযোগ দিতে হয়। এই বিরতি অনু সময়ের জন্য হতে পারে কিংবা অধিক সময়ের জন্যও হতে পারে। গাড়িতে যখন উচ্চস্বরে গান বাজনা হয় তখন চালক আবেগ বশবর্তী হয়ে যদি সেই গান উপভোগে মনোযোগী হয়ে যায় তাহলে গাড়ি চালনোয় অমনোযোগী হয়ে যেতে পারে। আবার গাড়িতে উচ্চস্বরে গান বাদ্য ও চেঁচামেচি হলে চলক রাস্তায় অন্য গাড়ির হর্ণের আওয়াজ শুনতে বিঘ্ন ঘটতে পারে, এতে করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, ধরুন আপনি যদি একটি সাইকেল কিংবা বাইকের পিছনে বসে একটু নড়াচড়া করেন তাহলে যে বাইক চালায় তার পক্ষে বাইক নিয়ন্ত্রণ করা কষ্ট হয়। তেমনি একটি বাসে একসাথে ৫০/৬০ জন মানুষ যদি গানের তালে পুরো শক্তি নিয়ে নাচানাচি করে তাহলে সেক্ষেত্রে চালকের সেই গাড়ি নিয়ন্ত্রণে বাধাগ্রস্ত হওয়ারই কথা। এসব অসাবধানতার কারণে অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় শিক্ষা সফরের গাড়ি বেশি হারে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং হতাহতের পরিমাণও বেশি হয়।
শিক্ষা সফরের প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে শিক্ষা সফর নিছক কোনো বিনোদন বা আনন্দ সফরের উদ্দেশ্যে হওয়া উচিৎ নয়। শিক্ষা সফরে আমরা শিক্ষার্থীদের কী শিখাতে পারলাম সেটা লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। আজকাল আমরা শিক্ষা সফরের স্পষ্ট ঠিক করতেই ব্যর্থ। শিক্ষা সফরের জন্য এখন ঐতিহাসিক স্থান নির্ধারণ করা হয় না, যেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বইয়ে পড়া ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে আসতে পারবে। এখন শিক্ষা সফরের জন্য ঠিক করা হয় পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেনের মত অশ্লীলতম স্থান। শিশু শিক্ষার্থীরা কি শিখছে এসব জায়গায় গিয়ে তা আমার বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমাদের শিক্ষকদের দায়িত্ব শিক্ষা সফরে যাওয়ার আগে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরের নিয়মাবলী শিখানো। বাসে গানবাদ্য বাজিয়ে শব্দ দূষণ করে শিক্ষা সফরের কালচার দূর করার শিক্ষা আগে প্রয়োজন। অন্যথায় খাল কেটে কুমির আনার পরিণতি শোকাবহ ও বেদনাদায়ক হবে। এ বিষয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সচেতনতার পাশাপাশি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমাদের আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক রীতি-নীতি অনুযায়ী, বয়স্কদের জন্য আলাদা নিবাস অনেকটা 'বনবাসে' যাওয়া বা পাঠানোর মতোই ঘটনা
আধুনিক জমানায় বৃদ্ধাশ্রম একটি জনপ্রিয় কনসেপ্ট। উন্নত দেশে ডে-কেয়ার সেন্টারের পাশাপাশি ওল্ড হোমও জনপ্রিয়। পাশ্চাত্য ধারণায় তাড়িত হয়ে আমাদের দেশেও প্রবীণ নিবাস, ওল্ড হোম বা বৃদ্ধাশ্রম ক্রমেই আলোচিত হয়ে উঠছে।
বিপক্ষে— বৃদ্ধাশ্রম নয়, পরিবারই হোক বয়স্কদের ঠিকানা
আমাদের দেশের যৌথ পরিবারের হই-হুল্লোড়ের মধ্যে আগে যখন শুনতাম বিদেশে নাকি বুড়ো হলে মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসে, তখন ওসম দেশের লোকদের প্রতি ঘৃণা ও করুণা হতো
মনুসংহিতায় চতুরাশ্রমের তৃতীয় আশ্রম ‘বানপ্রস্থ’ কি কেবলই একটা ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক এষণা, নাকি নীরবে ও শান্তিপূর্ণভাবে সামাজিক ক্ষমতা হস্তান্তর। অন্যভাবে বললে সংসারের বোঝা নামিয়ে বা দায়িত্ব শেষ করে নিজেকে সময় দেওয়ার, ফেলে আসা জীবনকে অবসরে উদযাপনের সুযোগ।
পক্ষে— তবুও শান্তি তবু আনন্দ
নানা অপপ্রচার, নেতিবাচক সমালোচনার মধ্যে ভারতের জম্মু কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে জি ২০ সম্মেলনের পর্যটন খাতের বিকাশ নিয়ে কয়েকটি অধিবেশন শুরু হল ২২ মে। গত কয়েক দিন থেকে সম্মেলনে অংশ নিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতিনিধিরা আসতে শুরু করেছেন। চীন বাদে অন্য সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা পর্যটন সম্পর্কিত তৃতীয় ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের জন্য সোমবার শ্রীনগরে পৌঁছেছেন। 'অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের জন্য ফিল্ম টুরিজম' শীর্ষক একটি পার্শ্ব ইভেন্টের মাধ্যমে তিন দিনের বৈঠকের সূচনা হয়। ভারত সভাপতি হিসাবে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বাংলাদেশকে ২০২৩ সালের জি-২০ প্রক্রিয়ায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে।‘ এটা বাংলাদেশকে খাদ্য এবং জ্বালানি নিরাপত্তা কিংবা পরিবেশের জন্য জীবনযাত্রা কিংবা নারীর নেতৃত্বে উন্নয়ন, সব ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ হওয়ার এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জি ২০ এর প্রধান সমন্বয়কারী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
এ প্রসঙ্গে জি ২০ এর প্রধান সমন্বয়কারী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, জি-২০ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ হওয়ার এক অনন্য সুযোগ। তিনি আরও বলেছেন জি-২০-এর সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ শুধু ভারতের জন্যই সুযোগ নয়; বরং সব উন্নয়নশীল দেশের জন্যও এটা একটা বিরাট সুযোগ। বিশেষ করে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য সুযোগ তো বটেই। তিন দিনের শীর্ষ সম্মেলন ঘিরে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তিন দিনের বৈঠকে আগের বৈঠকগুলোর তুলনায় বিদেশি প্রতিনিধিদের সর্বাধিক অংশগ্রহণ দেখা যাবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অশান্ত কাশ্মীরে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই সম্মেলন করছে স্বাগতিক ভারত। বিশ্বকে দেখাতে চাইছে যে সেখানকার জীবনযাত্রা স্বাভাবিক। ধারণা করা হচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীরে জি-২০ সম্মেলন বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতির একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। নতুন নতুন উন্নয়ন পরিকল্পনা এ অঞ্চলের নাগরিকদের জীবনের মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেছেন, কাশ্মীরে পরিবর্তন এসেছে এবং ধর্মঘটের ডাক আর নেওয়ার কেউ নেই। এখানে শহরের কেন্দ্রস্থল সহ কাশ্মীর জুড়ে বাজারগুলি সারা দিন খোলা ছিল এবং বুলেভার্ড রোডে ট্র্যাফিক ডাইভার্সন ব্যতীত লোকজনের চলাচল বা পরিবহনে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না।
ইতিমধ্যে কাশ্মীরের চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে।’ জি২০ ফোরামের বর্তমান সভাপতি হিসেবে ভারত ৫৫টি স্থানে ২১৫টি অধিবেশনের পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে অন্তত চারটি অধিবেশনে পর্যটনের ওপর আলোকপাত করা হবে। পর্যটনের ওপর তৃতীয় জি ২০ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা চলবে আগামী ২৪ মে পর্যন্ত শ্রীনগরে। ভারত বর্তমানে জি-২০-এর সভাপতি। শিল্পোন্নত ১৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে জি -২০ গঠিত। বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) 80 শতাংশ এই দেশগুলোর হাতে।
দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ ড. সমীরা গুপ্তা বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে জি ২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে এই অঞ্চলের অপার সম্ভাবনা বিশ্বের কাছে তুলে ধরার এক অনন্য সুযোগ পেয়েছে ভারত। সম্মেলনে কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরা হচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করছে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে উৎসাহিত করছে। তিনি আরও বলেন, "জি ২০ সম্মেলন কাশ্মীরকে বৈশ্বিক মানচিত্রে স্থান দিয়েছে, এটিকে বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং পর্যটনের জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত করার অনুমতি দিয়েছে৷ এই এক্সপোজার নিঃসন্দেহে অবদান রাখবে উপত্যকার আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য।"
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় উদ্যোগগুলি জম্মু ও কাশ্মীরের অবকাঠামো উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন ভারতের অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ডঃ রাজেশ ভার্মা। তিনি বলেন অত্যাধুনিক বিমানবন্দর, মহাসড়ক এবং আধুনিক শহুরে অবকাঠামো নির্মাণ এই অঞ্চলে সংযোগ বৃদ্ধি করেছে এবং ব্যবসা করার সহজতর করেছে। এই উন্নয়নের ঢেউ শুধুমাত্র স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনকে উন্নত করেনি বরং বিনিয়োগ ও চাকরির সুযোগের দরজাও খুলে দিয়েছে। তার মতে, "জি-২০ উদ্যোগের ফলে পরিকাঠামোর আপগ্রেড গুলি কাশ্মীরের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে, বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে এবং এর নাগরিকদের জীবনযাত্রার সামগ্রিক মান উন্নত করবে।
স্থানীয় জনগণের ক্ষমতায়নের প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে, জম্মু ও কাশ্মীরে জি-২০ উদ্যোগ দক্ষতা উন্নয়ন এবং উদ্যোক্তার ওপর জোর দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সামাজিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ডক্টর আয়েশা খান। তিনি বলেন, বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, বৃত্তিমূলক কোর্স এবং ব্যবসায়িক ইনকিউবেটর গুলির মাধ্যমে, উদ্যোগগুলি উদ্যোক্তার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে এবং একটি দক্ষ কর্মী বাহিনী তৈরি করতে জি ২০ সম্মেলনে বিশদ আলোকপাত হবে। দক্ষতা বিকাশ এবং উদ্যোক্তার ওপর জোর দেওয়া কাশ্মীরের যুবকদের ক্ষমতায়ন করবে, তাদের এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে এবং একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করার অনুমতি দেবে।
জম্মু ও কাশ্মীরের অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এটিকে একটি প্রধান পর্যটন গন্তব্য করে তুলেছে। জি-২০ উদ্যোগগুলি উপত্যকায় পর্যটনের প্রচার, বিশ্ব ভ্রমণকারীদের আকৃষ্ট করার এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙা করার ওপর জোর দিয়েছে। পর্যটন বিশেষজ্ঞ ড. রাঘব মালহোত্রা বলেছেন, জি-২০ উদ্যোগগুলি কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় গতি প্রদান করেছে। দর্শনার্থীদের এই আগমন শুধুমাত্র রাজস্ব তৈরি করবে না বরং সাংস্কৃতিক বিনিময়কেও উৎসাহিত করবে এবং শান্তি ও বোঝাপড়ার প্রচার করবে।
এত কিছুর মধ্যেও নয়াদিল্লি ভারত-শাসিত কাশ্মীরকে তার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে আনার পর থেকে, সরকার বেশ কয়েকটি আইন ও নীতি প্রয়োগ করেছে যা নিয়ে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে উপত্যকার কাশ্মীরিদের মধ্যে। তারা বলেছে তাদের অধিকার ও সংগ্রামকে দুর্বল করার লক্ষ্যে এসব আইন ও নীতি প্রয়োগ করা হয়েছে। এ রকম একটি অবস্থার মধ্যে কাশ্মীরে জি ২০ সম্মেলন আয়োজন করতে ভারতকে বেশ সতর্কতা ও অনেক বহি শত্রুর হুমকি মোকাবিলা করতে হয়েছে। স্থানীয় এক মানবাধিকার কর্মী বলেন, কাশ্মীরের জনগণের নিরাপত্তার অনুভূতি শুধু সম্মেলন দিয়ে নিশ্চিত করা যাবে না। তিনি বলেন এমন বিশাল একটি সম্মেলনের জন্য এ অঞ্চলে আমাদের একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী থাকা উচিত ছিল এবং আমাদের তা নেই। আমি আশা করি বিশ্ব এই বিষয়গুলি লক্ষ্য করবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান আল জাজিরাকে বলেছেন, ভারত, জি২০ ইভেন্টের মাধ্যমে এই অঞ্চলে শান্তি রয়েছে বলে দাবি করতে চায়। তিনি বলেছিলেন। আসলে, নয়া দিল্লির জন্য, শ্রীনগরে এই সভা অনুষ্ঠিত করার অর্থ হল 'সব ঠিক আছে' এবং 'সব স্বাভাবিক'-এর বার্তা বহির্বিশ্বে প্রচার করা।
জি ২০ সম্মেলন নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফার্নান্ড ডি ভারেনেস বলেছেন, কাশ্মীর নয়াদিল্লির প্রত্যক্ষ শাসনের অধীনে আসার পর থেকে "ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের" ঘটনা ঘটেছে এর মধ্যে রয়েছে অত্যাচার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, কাশ্মীরি মুসলমান এবং সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অধিকার অস্বীকার করা, বিতর্কিত অঞ্চলে জি-২০ বৈঠকের মাধ্যমে "কাশ্মীরি মুসলিম ও সংখ্যালঘুদের গণতান্ত্রিক এবং অন্যান্য অধিকারের নৃশংস ও দমনমূলক অস্বীকৃতি" স্বাভাবিক করার জন্য ভারতের এই আয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। যদিও জেনেভায় জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশন "ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক অভিযোগ" বলে তার ওই বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে নয়াদিল্লি-ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক সরল শর্মা মনে করেন এই বৈঠকটি কেবল কাশ্মীরের পর্যটন সম্ভাবনাই নয়, এর অন্তর্নিহিত লক্ষ্য হল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান একটি ধারণাকে ভেঙে দিয়ে নতুন ধারণার জন্ম দেওয়া যে কাশ্মীরে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়েছে। অতএব, এই সভার স্থান হিসাবে শ্রীনগরের নির্বাচন তাৎপর্যপূর্ণ। শর্মা বলেন, যদিও কিছু দেশ, যেমন পাকিস্তান, শ্রীনগরে জি ২০ বৈঠক আয়োজনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভারতের সমালোচনা করার চেষ্টা করে আসছে, এটা মনে রাখা অপরিহার্য যে পাকিস্তান জি ২০ গ্রুপের সদস্য নয়। তাই তাদের আপত্তির কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই।
(প্রকাশিত লেখার আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায় সম্পূর্ণরূপে লেখকের, এর কোনো প্রকার দায়ভার দেশ রূপান্তর নেবে না)
সাম্প্রতিক আবহাওয়ার চরমভাবাপন্নতায় দেশে সাধারণ জণগণের মধ্যেও এক ধরনের পরিবেশ সচেতনতা তৈরি হয়েছে। একে কাজে লাগাতে হবে। বলা হচ্ছে, গত ৫০ বছরের মধ্যে রেকর্ড তাপমাত্রা দেখা দিয়েছে। ফলে, এ পরিস্থিতিতে পরিবেশ রক্ষায়, গাছপালা-প্রকৃতি বাঁচাতে সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষকেও সচেতন হতে হবে। না হলে গাছ রক্ষার এই আপাত নিরীহ ধরনের দাবি বড় হয়ে উঠতে পারে।
শ্বাপদসংকুল, শ্বাপদসমাকীর্ণ বিণ, হিংস্র জন্তুতে পূর্ণ। অভিধানে এমন বলা আছে। অর্থাৎ এমন একটি জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর বা প্রাণসংহারী হতে পারে― সেটি নির্দেশ করতে শব্দটি আমরা ব্যবহার করে আসছি। তো সেই রামও নেই অযোধ্যাও নেই। মানে, সেই জঙ্গল কেটে মানুষ সেই সব কথিত হিংস্র প্রাণীদের কবেই নির্বাসনে পাঠিয়েছে। আর সেখানে জনপদ প্রতিষ্ঠা করে নগরায়ণের নামে, উন্নয়নের নামে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে অবশিষ্ট প্রাণ-প্রকৃতিই হুমকির মুখে। যা এমন এক চরাচর রচনা করেছে যাকে এই প্রাণ-প্রকৃতির নিরাপত্তা ও টিকে থাকার জন্য হুমকিস্বরূপ এক মনুষ্যসংকুল এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করার সময় এসেছে। মনুষ্যসংকুল, জনাকীর্ণ এলাকা, হিংস্র মানুষে পূর্ণ―যা প্রাণ-প্রকৃতি সংহারী।
অবস্থাদৃষ্টে এমনটা ভাবা যেতে পারে। যেখানে পৃথিবীটা হওয়ার কথা ছিল 'পাখি-গাছ-মানুষ সবার' সেখানে বিশ্বটা হয়ে পড়ছে প্রাণ-প্রকৃতি সংহারী মনুষ্যসংকুল। সে ক্ষেত্রে উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বন-জঙ্গল, নদী-নালা-জলাশয় ধ্বংস, গাছপালা, পাহাড় কেটে সাফ করতে সিদ্ধহস্ত নাছোড়বান্দা এক শ্রেণির কর্তৃপক্ষ আমরা পেয়েছি; যাদের কারণে বাংলাদেশকে পৃথিবীর প্রাণিকুল ও প্রকৃতির জন্য ভয়াল মনুষ্যসংকুল এলাকা বলে ঘোষণা দেওয়া যায়। কিছুদিন পর পর উন্নয়নের নামে, সৌন্দর্যবর্ধনের নামে গাছপালা, পাহাড় কাটা থেকে শুরু করে জলাশয় ধ্বংসের বিরুদ্ধে এখানকার মানুষদের দাঁড়াতে হয়। পরিহাস হচ্ছে, কিছু মানুষের এই অপকর্মের বিরুদ্ধে যে কতিপয় মানুষ দাঁড়াচ্ছেন নিয়মিত- তাতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। উন্নয়নের, সৌন্দর্যের দোহাই দিয়ে সারা দেশে নির্বিচারে প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ এবং বৃক্ষনিধন চলছেই। কিছুতেই ওই ক্ষমতাবান কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হচ্ছে না। এই কিছু না হওয়ার ফলে গাছ কাটা চলছে, বন, পাহাড়, জলাশয় ধ্বংস চলছে আর পৃথিবীটা উষ্ণ হচ্ছে- গায়ে লাগছে গরম।
সম্প্রতি রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সাত মসজিদ সড়কের সড়ক-বিভাজকের ওপর একই অজুহাতে, মানে উন্নয়ন ও সৌন্দর্যের নামে গাছ কাটার প্রতিবাদ চলছে। প্রতিবাদকারীরা গাছ রক্ষা করেই কথিত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। এ জন্য তারা ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের সঙ্গে বসতেও চেয়েছেন। মেয়র মহোদয়ের সময় হয়নি বা তাদের সঙ্গে বসেননি। তবে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি সাত মসজিদ সড়কের গাছ রক্ষার আন্দোলনকারীদের গাছের জন্য মর্মাহত ও আবেগি বলে উল্লেখ করে সামান্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বোঝাই যাচ্ছে- এই রেকর্ড তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়া দিনের মধ্যে বসেও গাছপালা, প্রাণ-প্রকৃতির চেয়ে মেয়র মহোদয়ের কাছে উন্নয়ন ও সৌন্দর্য প্রকল্প জরুরি। এখানে গাছ কাটার জন্য টাকা, ফের গাছ কেনার জন্য ও সেগুলো লাগানোর জন্য টাকা।
প্রশ্ন হচ্ছে মেয়রের কথামতো এই গাছকাটার প্রতিবাদ করাটা কেবল কিছু মানুষের মর্মাহত হওয়ার কি না। জানি না এ ধরনের প্রকল্পে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতির বিষয় থাকে কি না। যতদূর বুঝি- বিষয়টা আইনি। মেয়র অবশ্য কথা দিয়েছেন যে একটি গাছের বদলে সেখানে তিনটি করে গাছ লাগানো হবে। এখানে কয়েক স্তরের আবেগের মাত্রা রয়েছে। যা মেয়র কথিত আন্দোলনকারীদের আবেগকে ছাড়িয়ে যাবে। প্রথমত দশ/পনেরো বছরের একটি প্রাপ্তবয়স্ক গাছ কেটে তিনটি চারাগাছ লাগানো হবে। যেকোনো প্রকল্পে গাছ কাটা নিয়ে কথা উঠলেই অবশ্য এমন ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, চারাগাছ আর প্রাপ্তবয়স্ক গাছের উপযোগিতা কী এক? চারাগাছ লাগানোর পর তার রক্ষণাবেক্ষণ ও টিকে থাকার প্রশ্নও রয়েছে। দ্বিতীয়ত, সাত মসজিদ রোডের কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কাঁঠাল ও বটগাছের মতো বৃক্ষ কেটে মেয়র বাগানবিলাস, চামেলি, রঙ্গন ফুলের গাছ লাগাবেন বা লাগাচ্ছেন। এখানে বৃক্ষ ও ফলদ গাছ কেটে ফুলের গাছ লাগানোতে কর্তৃপক্ষের সৌন্দর্যজ্ঞানের বলিহারি প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে কাহিনি হয়তো আরও গভীর, তাই কর্তৃপক্ষের আবেগও বেশি গাছ কেটে ফুলগাছ লাগানোতে। ধরেন, একটা ব্যস্ত সড়কে কৃষ্ণচূড়া বা বটগাছ যে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে পারবে, ছায়া দিতে পারবে নিঃসন্দেহে ফুল গাছের জন্য সেটা সম্ভব না। ফলে এখানে নার্সারিগুলো থেকে বারবার ফুলগাছ কেনা ও তা লাগানোর বিষয় আছে, আছে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ। তৃতীয়ত, জানামতে প্রত্যেক মেয়রের প্রতিবছর গাছ লাগানোর জন্য বেশ মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দ থাকে। সেই টাকা কীভাবে খরচ হয়, আদৌ খরচ হয় কি না তা আমাদের জানা নেই।
উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধন ইত্যাদি করতে হলে যদি সব সময় আমাদের নির্বিচারে গাছই কাটা লাগে, ওই সব গাছে আশ্রয় নেওয়া পাখ-পাখালি, প্রাণীদের আবাস ধ্বংসই করা লাগে, তাহলে বলতে হয় আমাদের কর্তৃপক্ষের সেই অর্থে তার যোগ্যতা নেই। দিনের পর দিন পরিবেশবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ, নাগরিকরা গাছ কাটা, জলাশয় ধ্বংস বন্ধের দাবি, পরামর্শ দিয়ে আসছেন। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশে গাছপালা, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করেই উন্নয়ন হয়, অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার হয়। নগর কর্তৃপক্ষকে কখনোই সে ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না, যাতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না, আবার অবকাঠামো নির্মাণ বা সংস্কারও হবে। সিটি করপোরেশনের এসব উন্নয়ন কাজের টেন্ডারে 'প্রকল্প এলাকার গাছপালা, পরিবেশের ক্ষতি করা যাবে না' এমন কোনো নির্দেশনা থাকে না কেন জানি না। নাকি থাকে, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান তা মানে না! যতদূর জানি, ঢাকার দুই সিটিতেই বাগান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা বিভাগ আছে, যারা সড়ক বিভাজকের গাছপালা ছেটে, পরিষ্কার করে থাকেন। এই বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের কি কোনো প্রশিক্ষণ আছে? কোন গাছ কতটুকু ছাঁটা উচিত, কীভাবে ছাঁটা উচিত―এসব তো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক সময় বেশি বা ভুলভাবে ডালপালা-কাণ্ড ছাঁটার কারণেও অনেক গাছ মারা যেতে পারে।
যেকোনো দাবি নাগরিকরা জানাতে পারেন। কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের দূরে ঠেলে না দিয়ে, বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে না দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা। নাগরিকদের দাবি যৌক্তিক হলে তা মেনে নেওয়া উচিত। এতে কর্তৃপক্ষের হার হয় না, বরং প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষ জনগণের হয়ে ওঠে। আশা করি ইতিমধ্যেই ধানমণ্ডির সাত মসজিদ সড়কের যে ক্ষতি হয়েছে তা আমলে নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্তৃপক্ষ পরিবেশ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসবেন এবং একটি সুন্দর সমাধান হবে। এমনও হতে পারে এই পরিবেশ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসার ফলে কর্তৃপক্ষ এমন একটি সমাধানে পৌঁছাবেন, যা ঢাকা শহরের আগামী উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিবেশের ক্ষতি না করার একটি মডেল তৈরি হবে।
শেষ যে কথা বলতে চাই― সাম্প্রতিক আবহাওয়ার চরমভাবাপন্নতায় দেশে সাধারণ জণগণের মধ্যেও এক ধরনের পরিবেশ সচেতনতা তৈরি হয়েছে। একে কাজে লাগাতে হবে। বলা হচ্ছে, গত ৫০ বছরের মধ্যে রেকর্ড তাপমাত্রা দেখা দিয়েছে। ফলে, এ পরিস্থিতিতে পরিবেশ রক্ষায়, গাছপালা-প্রকৃতি বাঁচাতে সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষকেও সচেতন হতে হবে। না হলে গাছ রক্ষার এই আপাত নিরীহ ধরনের দাবি বড় হয়ে উঠতে পারে।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল বাংলাদেশের একটি অন্যতম নান্দনিক স্থাপনা হতে যাচ্ছে। বিশ্বের সুন্দরতম সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আদলে তৈরি হচ্ছে তৃতীয় টার্মিনাল। যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির জন্য যারপরনাই সচেষ্ট বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ। বর্তমানে ব্যবহৃত প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালের প্রায় চার গুন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চলতি বছর অক্টোবরে উদ্বোধনের অপেক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে তৃতীয় টার্মিনাল। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর বৃহৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল অন্যতম।
প্রায় ১৫ মিলিয়ন প্রবাসী বাংলাদেশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে যাতায়াত করে থাকে। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৮০ লক্ষ যাত্রী ১ম ও ২য় টার্মিনাল ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে গমন করে থাকে। তৃতীয় টার্মিনালের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গরূপে শুরু হলে বছরে প্রায় ২ কোটি যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে।
তৃতীয় টার্মিনালের যাত্রা শুরু হলে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, সেবার আধুনিকতা উপভোগ করার সুযোগ তৈরি হবে যাত্রীদের। সেবার আধুনিকতা বাংলাদেশি এয়ারলাইনসগুলো কতটুকু উপভোগ করতে পারবে কিংবা আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ারের কত অংশই বা থাকবে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোর কাছে। তা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে।
আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ারের বৃহদাংশ বিদেশি এয়ারলাইনগুলোর কাছে। মার্কেটের প্রায় ৭৫ শতাংশ রয়েছে বিদেশি এয়ারলাইনগুলোর কাছে আর বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসসহ অন্যান্য দেশীয় বিমান সংস্থার কাছে অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ। বর্তমানে ৩৪ বিদেশি এয়ারলাইন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে যাত্রী বহন করছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ-আমেরিকায় অবস্থান করছে। যাত্রী পরিসংখ্যানে আকাশ পরিবহনে বাংলাদেশ একটি বৃহৎ মার্কেট। এই মার্কেটকে নিজেদের করে নিতে বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
প্রথমবারের মতো আফ্রিকার অন্যতম এয়ারলাইন্স ইজিপ্ট এয়ার সম্প্রতি ঢাকা থেকে কায়রোতে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে। ইজিপ্ট এয়ারের মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে শক্তিশালী আকাশপথে যোগাযোগ রয়েছে। আফ্রিকার আরেকটি এয়ারলাইনস ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। বাংলাদেশি যাত্রীরা নতুন এয়ারলাইনসের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ার গারুদা ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম কোরিয়ান এয়ার, ইরান এয়ার, ইরাকি এয়ারওয়েজ বাংলাদেশে যাত্রী পরিবহন করার জন্য পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। ভারতের পাঁচটি এয়ারলাইনস বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানা যাচ্ছে আরও দু’টি ভারতীয় এয়ারলাইনস বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করতে আগ্রহী।
নয় বছর পূর্বে স্থগিত হওয়া পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (পিআইএ) পুনরায় ঢাকার সঙ্গে আকাশ পথে সংযোগ স্থাপন করতে চায়। এ ছাড়া ১৫ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিশ্বের অন্যতম এয়ারলাইনস ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এখানে উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি প্রবাসীদের একটা বড় অংশ বসবাস করে থাকে।
মালয়েশিয়া ভিত্তিক বাজেট এয়ারলাইনস এয়ার এশিয়ার কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশি প্রবাসীরা অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জাপানে বসবাস করে থাকে, যেখানে এয়ার এশিয়ার আকাশ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সুদৃঢ়। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে এয়ার এশিয়ার নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। বর্তমানে ঢাকা থেকে প্রতিদিন তিনিটি করে ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা ও প্রতিদিন একটি করে ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা রুটে এয়ার এশিয়া ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আর কুয়ালালামপুর থেকে প্রতিদিন ছয়টি কুয়ালালামপুর থেকে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশি যাত্রীদের কুয়ালালামপুর হয়ে ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) এর এমিরেটস, ফ্লাই দুবাই, ইতিহাদ ও এয়ার অ্যারাবিয়া বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করছে, যা অ্যাভিয়েশনের ‘ফিফথ ফ্রিডম রাইট’ নিয়ে বাংলাদেশের সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছে। নতুন করে ইউএই এর বাজেট এয়ারলাইনস উইজ এয়ার বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে।
আগ্রহী নতুন এয়ারলাইনসগুলো ও ফিফথ ফ্রিডম রাইটের কারণে যদি এয়ারলাইনসগুলো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের পর বাংলাদেশ মার্কেটে প্রবেশ করে, তাহলে বর্তমানে আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ারের দেশীয় এয়ারলাইনসের ২৫% থেকে কমে তা ২০% এর নিচে নেমে আসার সম্ভাবনা থাকবে। বর্তমানে জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ আসে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড টুরিজম খাত থেকে। আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ার যদি কমে যায় তাহলে তা জিডিপিতেও এর প্রভাব পড়বে।
দেশীয় এয়ারলাইনসের কাঠামোগত অবস্থান বিবেচনায় আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সঠিকভাবে নির্ধারিত না হলে জাতীয় বিমান সংস্থাসহ সকল দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে। দেশের অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনে, দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জিডিপিতে অংশীদারিত্ব বাড়ানোর জন্য অ্যাভিয়েশন ও পর্যটন খাতের উন্নয়নে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই জরুরি।
লেখক: মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস
কবি আসাদ মান্নান ‘চাই তাঁর দীর্ঘ আয়ু’ কবিতায় শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে লিখেছেন-‘মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মহান পিতার স্বপ্নবুকে/নিরন্তর যিনি আজ এ জাতির মুক্তির দিশারী/ঘূর্ণিঝড়ে হালভাঙা নৌকাখানি শক্ত হাতে বৈঠা ধরে টেনে/অসীম মমতা দিয়ে পৌঁছুচ্ছেন আমাদের স্বপ্নের মঞ্জিলে, …’
কবির মতে, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী, তিনি মুক্তির দিশারি, মৃত্যুকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছেন নির্ভীকভাবে, আর গভীর মমতা দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট। কবির এই কথাগুলো সত্য হতো না, যদি না ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা নিজ দেশে ফিরে আসতেন। আসলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের ইতিহাস, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এদেশের শাসনকার্যে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় আসীন থেকে মহিমান্বিত রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মহাকালকে স্পর্শ করতে সক্ষম। এর কারণ আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি রবীন্দ্রনাথের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে। তিনি লিখেছেন ‘আমাদের অধিকাংশেরই সুখদুঃখের পরিধি সীমাবদ্ধ; আমাদের জীবনের তরঙ্গক্ষোভ কয়েকজন আত্মীয় বন্ধুবান্ধবের মধ্যেই অবসান হয়।...কিন্তু পৃথিবীতে অল্পসংখ্যক লোকের অভ্যুদয় হয় যাঁহাদের সুখদুঃখ জগতের বৃহৎব্যাপারের সহিত বদ্ধ। রাজ্যের উত্থানপতন, মহাকালের সুদূর কার্যপরম্পরা যে সমুদ্রগর্জনের সহিত উঠিতেছে পড়িতেছে, সেই মহান কলসংগীতের সুরে তাঁহাদের ব্যক্তিগত বিরাগ-অনুরাগ বাজিয়া উঠিতে থাকে। তাঁহাদের কাহিনী যখন গীত হইতে থাকে তখন রুদ্রবীণার একটা তারে মূলরাগিণী বাজে এবং বাদকের অবশিষ্ট চার আঙুল পশ্চাতের সরু মোটা সমস্ত তারগুলিতে অবিশ্রাম একটা বিচিত্র গম্ভীর, একটা সুদূরবিস্তৃত ঝংকার জাগ্রত করিয়া রাখে।’
দেশরত্ন শেখ হাসিনার অবিচল নেতৃত্ব আর মেধার আলোয় বিশ্ব দরবারে আজ অন্য এক আলোকিত বাংলাদেশ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত একটি উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই পথে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত প্রায় ১৪ বছরের বেশি সময়ে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, কৃষিখাত, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অর্থনীতি, নারীর ক্ষমতায়ন ও প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় সীমার মধ্যে থেকেছে। এ জন্য সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে মর্যাদাকর জাতিসংঘ পুরস্কার পেয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বেশ কয়েকজনের ফাঁসির রায় এবং ৭১ ’র যুদ্ধাপরাধীদের বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর করে শেখ হাসিনার সরকার বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছে; এ সরকারের আমলে জেলহত্যা মামলার বিচারও সমাপ্ত হয়েছে। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৬ মার্চ জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদা দিয়েছে। নারী-পুরুষের সমতা (জেন্ডার ইক্যুইটি) প্রতিষ্ঠায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার ওপরে আছে বাংলাদেশ। কোন কোন ক্ষেত্রে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। করোনাকালীন বৈশ্বিক মহামারীতেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সব প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে।
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দূরদর্শী অসাধারণ নেতৃত্ব ও মানবদরদী হৃদয় নিয়ে করোনা সঙ্কটে যেভাবে দেশের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, তা দেশে ও বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্বের জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিনে করোনা মোকাবেলায় সফল নারী নেতৃত্বের তালিকায় (৮ জনের) স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাকালীন দুর্যোগেও অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে আমাদের দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়েছে, এটা বিশ্বাস করা যায়?
কিন্তু আজকের এই বাংলদেশকে আলোকিত অভিযাত্রায় আনতে অনেক লড়াই-সংগ্রাম, চড়াই-উৎরাই, হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। ১৯৮১ সালের ১৭ এপ্রিল সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ও জীবনের মায়া ত্যাগ করে তিনি যদি বাংলাদেশে না ফিরতেন তাহলে মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দু লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিয়ে অর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন বাংলাদেশ আজ পাকিস্তানের আদলে দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম একটি মৌলবাদী, জঙ্গী ও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হতো। তাই শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ৭৫ ’র ১৫ই আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংশভাবে হত্যা করার পর বিপর্যস্ত বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর এক অনন্য অনুপ্রেরণা, তিনিই দেশে ফিরে বিভক্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে সামরিক জান্তাকে উৎখাতে আন্দোলনের ডাক দেন। তাঁর ত্য্যাগ, তিতিক্ষা ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসে, তাঁকে বার বার হত্যা চেষ্টা করা হলেও তিনি গণতন্ত্রের পথ থেকে সরে দাঁড়াননি। শেখ হাসিনার অকুতোভয় সাহসী নেতৃত্ব, সততা, মেধা ও প্রজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ আজ আলোকিত অভিযাত্রায় শামিল হয়েছে, এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে।
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ই মে ফিরে এসেছিলেন বলেই বারবার অন্ধকারে ডুবে যাওয়া বাংলাদেশ আজ আলোর মিছিলে, কল্যাণের পথে, উন্নয়নের জোয়ারে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। মীরজাফর খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে আমাদের সেনাবাহিনীর কতিপয় স্বাধীনতা বিরোধী, পাকিস্তানপন্থি ক্ষমতালোভী অফিসার সেদিন যে নজীরবিহীন বর্বরোচিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছিল তা বাঙালির গৌরবকে ম্লান করেছে এবং বাঙালিকে চিরদিনের জন্য ভাসিয়েছে অশ্রু সাগরে। ঘাতকরা এতটাই পাষাণ ছিল যে, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশু কেউ রক্ষা পায়নি ঘাতকদের হাত থেকে। খুনী চক্র চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বংশের নাম-নিশানা চিরদিনের জন্য মুছে ফেলতে। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেদিন দেশের বাইরে অবস্থান না করলে তাদের জীবনেও নেমে আসতো একই নির্মম পরিণতি। কিন্তু ১৯৮১ সালের ১৭ই মে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার আগের ছয়টা বছর কি ভয়ংকর দুঃসহ যন্ত্রনায় কেটেছে শেখ হাসিনা আর তার ছোট বোন শেখ রেহানার, কল্পনা করতেও ভয় লাগবে আজ আমাদের।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বেলজিয়ামের ব্রাসেলস থেকে শেখ হাসিনা ও ওয়াজেদ পরিবারের প্যারিসে যাওয়ার কথা ছিল। সে সময় ওয়াজেদ পরিবার ও শেখ রেহানা আমন্ত্রিত হয়ে বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসভবনে অবস্থান করছিলেন। ভোর ৬টার দিকে হঠাৎ জার্মানির বনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ফোন করে জানালেন, বাংলাদেশে একটি মিলিটারি ক্যু হয়েছে, কোনভাবেই প্যারিসের দিকে না গিয়ে তাঁরা যেন তখনি জার্মানী চলে আসেন। এই খবরটা পাওয়া মাত্র বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হক ওয়াজেদ পরিবার ও শেখ রেহানাকে যত তাড়াতাড়ি তার বাড়ি থেকে বিদায় দিতে পারেন সেই ব্যবস্থায় করলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা Hasina: A Daughter’s Tale’ চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাতকারে বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার খবর শুনে সানাউল হক হুমায়ুন রশীদ সাহেবকে বললেন, আপনি যে বিপদটা আমার ঘাড়ে দিয়েছেন ওটা আপনি এখন নিয়ে যান। তিনি সাক্ষাৎকারে আরো বলেন, আমাদের ওনার বর্ডার পর্যন্ত পোঁছে দেওয়ার কথা, পৌঁছে দিলেন না, সোজা বলে দিলেন গাড়ি নষ্ট। অথচ ১৪ই আগস্ট রাতে এই রাষ্ট্রদূতই অতিথিদের সম্মানে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের আয়োজন করেছিল। উক্ত চলচ্চিত্রে সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা বলেছেন, কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে মানুষের কী পরিবর্তন, ক্যান্ডেল লাইট ডিনার থেকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া-এই অবস্থা। জননেত্রী শেখ হাসিনার এক বান্ধবীর স্বামী তিনি ব্রাসেলসে বাংলদেশস্থ দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন। পরে তাঁর গাড়িতে শেষ পর্যন্ত তাঁরা বর্ডার পৌঁছাতে পারেন। বর্ডারের ওপাশে জার্মানীর রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী তাঁর সেক্রেটারিকে গাড়িসহ পাঠিয়েছিলেন তাঁদেরকে নেওয়ার জন্য। ফলে শেষ পর্যন্ত বহু কষ্টে তারা জার্মানীতে হুমায়ূন রশীদ সাহেবের কাছে পৌঁছলেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা 'Hasina: A Daughter’s Tale’ চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমাকে রাত্রে হুমায়ুন সাহেব আলাদা করে ডেকে নিলেন, তুমি একটু আসো, উনার ড্রয়িং রুমে উনি এবং উনার স্ত্রী বসা। তখন উনি বললেন, দেখ অনেক চেষ্টা করছি খোঁজ করতে, যতদূর খবর পাচ্ছি, কেউ বেঁচে নাই। শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকারে আরো বলেন, যখন শুনলাম, সত্যি কথা কি, এ কথা শোনার পর বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার শরীরের সমস্ত রক্ত হিমশীতল হয়ে গেছিল, মনে হচ্ছে পড়ে যাব। হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক সান্ত্বনা দিলেন। হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর স্ত্রীও তখন তাঁদের জন্য অনেক করেছিলেন, তিনি তাঁদেরকে জার্মানির Karlsruhe শহরে গাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেন। যাওয়ার সময় ১০০০ জার্মান মুদ্রা তাঁদের হাতে তুলে দিলেন যাতে হাতে কিছু টাকা-পয়সা থাকে। শুধু তাই নয় গরম কাপড় ভরে একটা স্যুটকেসও দিলেন যেন ঠান্ডায় কাজে লাগে।
এসময় জার্মান সরকার তাঁদেরকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে চেয়েছিল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁর রাষ্ট্রদূতকে আমাদের রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করতে বললেন। রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে চেয়ে যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো তাঁর রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে যোগাযোগ করলেন। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন ম্যাসেজ পাঠালেন যে ভারতে যাওয়ার তাঁদের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাঁরা ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২৪ আগস্ট সকাল ৯টায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতীয় দূতাবাসের এক কর্মকর্তা অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে তাঁদেরকে ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দর নিয়ে যান। এরপর, একটি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে করে তাঁরা ২৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টায় দিল্লীর পালাম বিমানবন্দর পৌঁছান। শুরু হয় শেখ হাসিনার নির্বাসিত জীবন। ভারতে আসার পরে বোন আর স্বামী-সন্তানসহ শেখ হাসিনাকে দিল্লীর লাজপাত নগরের ৫৬ রিং রোডে একটি ছোট বাসায় থাকতে দেয়া হয়েছিলো সেফ হোম হিসেবে। ১০ দিন পর্যন্ত শেখ হাসিনার মনে ক্ষীণ আশা ছিলো, হয়তো মা আর রাসেলকে ওরা মারেনি। কিন্তু ৪ঠা সেপ্টেম্বর দিল্লীর সফদরজং রোডে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাসবভনে রাত ৮টার দিকে পৌঁছানোর পর সব হিসেব এলোমেলো হয়ে যায়। সেখানে পৌঁছানোর মিনিট দশেক পরে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এসে হাসিনার পাশে বসেন। তাঁর এক কর্মকর্তাকে জানান, উপস্থিত সকলকে ১৫ই আগস্টের সম্পূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করতে। কর্মকর্তাটি পুরো ঘটনা বলবার মধ্যে বলে উঠলেন যে বেগম ফজিলাতুন্নেসা ও রাসেলও জীবিত নেই। হাসিনা আর সহ্য করতে পারেননি, কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি, শেষ আশাটুকুও নিভে যায় তাঁর। ভগ্ন হৃদয়ে ইন্দিরা গান্ধী তাকে জড়িয়ে ধরেন। এসময় ইন্দিরা গান্ধী ও ভালবাসা সম্পর্কে বলতে গিয়ে Hasina: A Daughter’s Tale চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাৎকারে জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন কথা বলছিলাম, আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি কিছু খেয়েছো? তুমি কি ওমলেট খাবে? টোস্ট খাবে? চা খাবে? তিনি উঠে গিয়ে কাউকে বললেন, সেই ওমলেট, সেই টোস্ট আর নিজে কাপে চা ঢেলে উনি দিলেন। তুমি কিছু খাও, তোমার মুখটা খুব শুকনা, তুমি কিছু খাওনি। শেখ হাসিনা আরো বলেন, আসলে এই স্নেহ ও ভালোবাসাটা এতো খোলাভাবে তিনি ব্যবহার করলেন, এটা ভোলা যায় না, এটা মনে লাগে। তিনি আরো বলেন, সত্যি কথা কি ঐ সময় সব হারাবার পর ওনার সামনে যেয়ে ঐটুকু অনুভূতি মনে হচ্ছিলো যে, না আমাদের জন্য কেউ আছে। শোকে মুহ্যমান দুই বোনের দিনগুলো দিল্লিতে ছোট একটা বাসার দুই রুমের মধ্যে কেটেছে অনেক কষ্ট আর যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে।
এ প্রসঙ্গে Hasina: A Daughter’s Tale’ চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাৎকারে শেখ রেহানা বলেন, আল্লাহর এটা রহমত দুই বোনেকে পাগল বানিয়ে রাস্তায় ফেলেনি। আপা কান্না করে এক পাশে, আমি কান্না করি অন্য পাশের্। তিনি আরো বলেন, আর একটা কখনও বলিনি, এখন ৪০ বছর হয়ে গেছে এখন বলা যায়, আমাদের দিল্লি থাকাকালীন সময় আমাদের নামও পরিবর্তন করতে হয়েছিল, মি. তালুকদার, মিসেস তালুকদার, মিস তালুকদার, আশপাশে যেন কেউ না জানে। এটা কি ব্যাপার, দেশ ছাড়া, ঘর ছাড়া, মা-বাপ ছাড়া, নামও বদলাব, থাকব না এখানে, দরকার নেই। তখন উপায়ও তো নাই। দিল্লিতে জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাক্ষণ এক উদ্বেগের মধ্যে থাকতেন, দেশে কি হচ্ছে, কি হবে।
এ প্রসঙ্গে Hasina: A Daughter’s Tale চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই দেশটাকে স্বাধীন করেছিলেন আমার বাবা, দেশে গণতন্ত্র থাকবে, মানুষের কল্যাণ হবে, কিন্তু সেটা তো হলো না, উল্টো দেশে একটা খুনিদের রাজত্ব কায়েম হয়ে গেল। বিদেশের মাটিতে দুই বোন ক্ষণিকের জন্য ভুলেননি ১৫ই আগস্টের নির্মম ও নৃশংস হত্যার কথা।
এ প্রসঙ্গে Hasina: A Daughter’s Tale চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাৎকারে শেখ রেহানা বলেন, আপা লেখতেন বসে বসে আজকে চিনি কতটুকু, বিস্কুট কতটুকু, সুজি কতটুকু, ওর পার্শ্বে আমার লেখা যে-আল্লাহ তুমি আমাদের কেন বাঁচিয়ে রেখেছ জানি না, কিন্তু ঐ খুনিদের ধরব, বিচার করব ইনশা আল্লাহ, তারিখ দিয়ে লেখা। ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর শেখ রেহানা দিল্লি থেকে লন্ডনে পাড়ি জমান।
'৭৭ এর জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে লন্ডনের কিলবার্নে শেখ রেহানার বিয়ে হয়, পাত্র লন্ডনপ্রবাসী শফিক সিদ্দিকের সঙ্গে। কিন্তু সে বিয়েতে শেখ হাসিনা তাঁর পরিবার নিয়ে অংশ নিতে পারেননি কেবল টিকেটের টাকার অভাবে। ২টি সন্তান নিয়ে টিকেট কেটে লন্ডনে যাওয়ার মতো টাকা তাঁর ছিল না।
এদিকে ১৯৮০ সালে, ভারতে শেখ হাসিনার বাড়িতে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা আসতে লাগলেন। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক কাবুল যাওয়ার সময় এবং সেখান থেকে ফেরার সময় তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন। আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমান, আব্দুস সামাদ আজাদ, তৎকালীন যুবলীগ নেতা আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দিল্লিতে যান। তাদের সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে রাজি করানো। তাঁরা তাঁকে ক্রমাগত বোঝাতে লাগলেন, তাঁর কেন দেশে ফেরা উচিৎ, এ মুহূর্তে এবং দলের ঐক্য বজায় রাখতে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতির পদ গ্রহণের অনুরোধ জানান। শেখ হাসিনা বলতেন, আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় গৌরব। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। ১৯৮১ সালের ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার ঐতিহাসিক ইডেন হোটেলে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সম্মেলনে আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্তটি নেয় যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দিল্লিতে থাকা অবস্থায় তিনি খবর পান, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাঁকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। এর এক সপ্তাহ পরে আওয়ামী লীগের সেই সময়ের শীর্ষ নেতারা দিল্লি যান। আব্দুল মালেক উকিল, ড. কামাল হোসেন, জিল্লুর রহমান, আব্দুল মান্নান, আব্দুস সামাদ আজাদ, এম কোরবান আলী, বেগম জোহরা তাজউদ্দীন, স্বামী গোলাম আকবার চৌধুরীসহ বেগম সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, বেগম আইভি রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ ১৯৮১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে দিল্লি পৌঁছান। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েকটি বৈঠকও করেন তাঁরা। এরপর ড. কামাল হোসেন ও সাজেদা চৌধুরী ছাড়া সবাই ঢাকায় ফিরে যান। কামাল হেসেন ও সাজেদা চৌধুরীর ওপর দায়িত্ব ছিল তাঁরা শেখ হাসিনার ঢাকা ফেরার তারিখ চূড়ান্ত করবেন।
দিল্লিতে থাকাকালীন নাজিমউদ্দিন আউলিয়ার দরবারে যাওয়ার একটি ঘটনাও শেখ হাসিনার মনে দাগ কাটে যা তাঁকে দেশে ফিরতে সাহস যোগায়। এ প্রসঙ্গে Hasina: A Daughter’s Tale চলচ্চিত্রে তথ্য পাওয়া যায়। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দুই বোন নাজিমউদ্দিন আউলিয়ার দরগায় যান, তাঁরা তাঁদের নামসহ কোন পরিচয়ও দেননি, একসময় খাদেম এসে একটা খাতা তাঁদের সামনে ধরলেন সেখানে দুই বোন দেখলেন তাঁদের পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৬ সালের ৯ই এপ্রিল এই দরগায় এসছিলেন, তাঁরা যেদিন গেলেন সেই তারিখটাও ছিল ১৯৮১ সালের ৯ই এপ্রিল। এ পসঙ্গে উক্ত চলচিত্রে এক সাক্ষাৎকারে জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সত্যি কথা বলতে কি একটা সাহস আমার মনে আসলো, আমাকে যেতে হবে, বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে হবে। এই বার্তাটাই মনে হয় পাচ্ছি।
অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ১৭ই মে, ১৯৮১। দিনটি ছিলো রবিবার, ঝড়-বৃষ্টির এক দিন। আওয়ামী লীগের দুই নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ আর কোরবান আলীকে সঙ্গে নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা রওনা দেন ঢাকায়। সেদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকার তেজগাঁওস্থ কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন। সেদিন সকল বাধা ও প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে লাখ লাখ জনতা ঢাকা বিমানবন্দরে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসে। সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনাকে একনজর দেখার জন্য ঢাকায় মানুষের ঢল নেমেছিলো। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয়েছিলো জনসমুদ্রে। ফার্মগেট থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রাফিক বন্ধ ছিল প্রায় ছ’ঘণ্টা। ঢাকা বিমানবন্দরে তিনি বিমান থেকে নামার পর আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা শ্লোগান দেয় ‘হাসিনা তোমার ভয় নাই, আমরা আছি লাখো ভাই’। দেশের মাটিতে নেমে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শেখ হাসিনা। দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘যেদিন আমি বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছিলাম, সেদিন আমার সবাই ছিলো। আমার মা-বাবা, আমার ভাইয়েরা, ছোট্ট রাসেল সবাই বিদায় জানাতে এয়ারপোর্টে এসেছিলো। আজকে আমি যখন ফিরে এসেছি, হাজার হাজার মানুষ আমাকে দেখতে এসেছেন, স্বাগত জানাতে এসেছেন, কিন্তু আমার সেই মানুষগুলো আর নেই। তারা চিরতরে চলে গেছেন।’
তিনি আবেগরুদ্ধ হয়ে বলেন, ‘বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’ বিমানবন্দর থেকে শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাওয়া হয় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে, সেখানে লাখো জনতার উপস্থিতিতে এক সমাবেশে শেখ হাসিনা বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’
এভাবেই ১৯৮১ সালের ১৭ই মে ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন বাংলাদেশের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা।
নেতাজী সুভাষ বসু বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের পথ একেবারে ঋজুপথ নয়। এ পথে নিরবচ্ছিন্ন সাফল্য আসে না, এ পথ বহু বিঘ্নসংকুল, সুদীর্ঘ এবং সর্পিল’।
শেখ হাসিনা নিজেও এ কথা জানতেন। যে কারণে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের জন্য নয়াদিল্লি থেকে ঢাকা রওনা হওয়ার কয়েকদিন আগে মার্কিন সাপ্তাহিক নিউজউইক পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তাঁর স্বদেশে প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা এক হৃদয়গ্রাহী ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ১১ মে নিউজউইক-এ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বক্স-আইটেম হিসেবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, ১৯৭৫ সালে সামরিক চক্র কর্তৃক ক্ষমতা দখলকালে নিহত পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি নিহত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত নন; এমন কী যে সরকারের মোকাবিলা করবেন তার শক্তিকে তিনি বাধা বলে গণ্য করবেন না।
তিনি বলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’
দেশে ফেরার দিন থেকেই শেখ হাসিনা উপলব্ধি করেন কত বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিতে হবে, সামরিক জান্তাদের কত নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হবে। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে শেখ হাসিনা সরাসরি গিয়েছিলেন তাঁদের বাড়ি ৩২ নম্বর ধানমন্ডি যেখানে ১৫ই আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে ৬ বছর আগে বাবা-মাসহ পরিবারের সবগুলো আপনজনকে হারিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কুশীলব ও এই বাংলার মাটিতে রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের পূনর্বাসনকারী প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান তাঁকে সে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেয়। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয় যাতে শেখ হাসিনা সেই বাড়িতে ঢুকতে না পারেন। স্বজনহারা আমাদের এই প্রিয় নেত্রী সেদিন ৩২ নম্বরের সামনের রাস্তাতে বসেই বুকফাটা আর্তনাদে সবার জন্য দোয়া করেছিলেন, আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছিলেন। দেশে ফেরার পর তাঁকে কঠিন এক সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়, পদে পদে হত্যার আশংকা। সামরিক জান্তা এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ৮০ ’র দশকে তাঁকে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার এমনকি গৃহবন্দী হতে হয়, বারবার তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়, হামলা চালানো হয় জনসমাবেশে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সামরিক জান্তা এরশাদের রোষানলে ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি ও নভেম্বর মাসে তাঁকে গৃহবন্দী হতে হয়। ১৯৮৫ সালের মার্চ মাসে তিনি আবারও তিন মাসের মতো গৃহবন্দী ছিলেন। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে মিছিল করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন আটদলীয় জোটের জনসভাস্থল লালদিঘির ময়দানে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনার ট্রাক মিছিলে নির্বিচার গুলি ছুড়েছিলো এরশাদ সরকারের পুলিশ ও সাদা পোষাকধারীরা। তখন পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে ২৪ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৯ জন শেখ হাসিনাকে মানববর্ম তৈরি করে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হন। ৯০ ’র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পরও পরবর্তীতে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বারবার তাঁর উপর হামলা চালানো হয়, এমন কি নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয় জনসমাবেশে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলার কোটি কোটি মানুষের নয়নের মণি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হত্যার জন্য বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ-এ আওয়ামী লীগের জনসভায় চালানো হয় স্মরণাতীত কালের ভয়াবহ নারকীয় গ্রেনেড হামলা। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমান ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী মাহবুবসহ আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে নিহত হয়েছেন। সেদিনও আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী শরীরে আজও স্প্রিন্টার আর বুলেটের গর্ত নিয়েও তৈরি করেছিল মানব দেয়াল, মৃত্যু দিয়ে প্রিয় নেত্রীর নিশ্চিত মৃত্যুকে ফিরিয়েছেন তাঁরা। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর ক্ষমতা নয়, দেশের মানুষের অধিকার আদায়, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেল হত্যার বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদেরবিচার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন শেখ হাসিনা। এসব কঠিন কাজ সম্পন্ন করতে এ পর্যন্ত তিনি শত্রুপক্ষের কমপক্ষে ২০ বার হত্যা চেষ্টার সম্মুখীন হন।
শেখ হাসিনাও তাঁর বাবার মতো দেশের মানুষের প্রতি টান, তাদের প্রতি একপ্রকার দায়বদ্ধতার টান থেকে কখনোই বের হতে পারেননি। আর তাই সেই রক্তের ডাকে সাড়া দিয়ে মত্যুভয় উপেক্ষা করে তিনি ফিরেছিলেন ১৯৮১ সালের ১৭ই মে স্বদেশের মাটিতে।
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনের জন্যে বিশাল গুরুত্ব বহন করে। কারণ শেখ হাসিনা ফিরে এসেছেন বলেই এদেশে সামরিক জান্তার পতন হয়েছে, গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে শক্ত হাতে দলের হাল ও গণতন্ত্রের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে সহস্র বাধা অতিক্রম করে জনগণের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে দেশে ফেরার ১৫ বছরের মাথায় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন। এর ফলে অন্ধকার থেকে বাংলাদেশ আবার ফিরে আসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকিত ধারায়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তিনি সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি কুখ্যাত ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বিচার শুরু করেন এবং তাঁর শাসনামলেই ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের আদালত কর্তৃক ঘোষিত বিচারের রায়ে প্রকাশ্য ফায়ারিং স্কোয়াডে ১৫ জন ঘাতকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বিপুলভোটে জয় লাভ করে ক্ষমতায় আসলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ৭১ ’র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেন। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দীর্ঘ ৩৪ বছরের পথপরিক্রমা এবং ২০১০ সালের ২৮ শে জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত পাঁচ আটককৃত খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়।
পলাতক ৭ দণ্ড প্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে অন্যতম ক্যাপ্টেন (বরখাস্তকৃত) আব্দুল মাজেদকে গত ১২ এপ্রিল ২০২০ দিবাগত রাতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যদ-কার্যকর করা হয়। জননেত্রী শেখহাসিনার শাসনামলেই ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ঐতিহাসিক জেলহত্যা মামলায় রায় প্রদান করেন, এরই মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৩৮ বছর পর জাতি পায় জেলহত্যার বিচার। ২০০৯ সাল থেকে একটানা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, তাঁর শাসনামলেই ৭১-এ সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপাধে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীর বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে এবং ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে ঘোষিত ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।
দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে এই ৪৩ বছরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। তাঁর আলোকিত নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে এক আলোকিত অভিযাত্রায় শামিল হয়েছেন, বিশ্ব নেতৃত্বে আজ তিনি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নিয়েছেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে রাজনীতিবিদ হিসাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আবারো দেশে স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে, তাঁর সাহসী নেতৃত্বে যথার্থই জেগে উঠে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয় শেখ হাসিনার সৃজনশীল ও দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে, তিনি আজ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে আপন আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছেন। ১৭ই মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যেন এক আলোর অভিযাত্রার আখ্যান। জননেত্রী শেখ হাসিনার ৪৩ তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তাঁকে জানাই বাঙালির হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে সশ্রদ্ধ অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য পিপলস টাইম
সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ
সদস্য, কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
পরিচালক, এফবিসিসিআই
চেয়ারপারসন, ভোরের পাতা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
সফররত চীনের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা, কানেকটিভিটি, ইন্দো-প্যাসিফিক ও বৈশ্বিক উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনলাইন জুয়া এবং মাদক পাচারের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও চীনের পররাষ্ট্র সচিবপর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ওয়েইডংয়ের দুই দদফা বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন চীনা ভাইস মিনিস্টার। তবে বৈঠক শেষে ঢাকা কিংবা চীন কোনো পক্ষই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেনি।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা থেকে পররাষ্ট্র সচিব ও চীনা ভাইস মিনিস্টার প্রতিনিধিদল নিয়ে বের হন। সেখান থেকে ওয়েইডং যান পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে। সেখানে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরের সামনে চীনের একটি প্রতিনিধিদল পদ্মা সেতু নিয়ে ভাইস মিনিস্টারকে চায়নিজ ভাষায় বিস্তারিত ব্রিফ করেন। ব্রিফ শেষে গাড়ি নিয়ে পদ্মা সেতুতে ওঠেন ওয়েইডং এবং তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধিদল। সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনতো।
রোহিঙ্গা ইস্যু : বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব উঠেছে। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে কাজ করে আসছে চীন। ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডংয়ের সফর মূলত গত ১৮ এপ্রিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-চীন বৈঠকের ফলোআপ। একই সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ইতিমধ্যে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সমঝোতা করাতে পেরেছে চীন। এরপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রমাণ করতে পারলে সেটি চীনের জন্য ভালো একটি অর্জন হবে। সেজন্য চীনের বিশেষ আগ্রহ আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া তারা এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা চায়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বৈঠকে ভাইস মিনিস্টার উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য উপকার হবে। পাইলট প্রজেক্টের প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নিজ নিজ প্রতিনিধিদের মিয়ানমারে “যান এবং দেখুন” এবং বাংলাদেশে “আসুন এবং কথা বলুন” সফরের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে চীনা পক্ষ।’
জিডিআই : বৈঠকে চীনের নতুন বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে (জিডিআই) বাংলাদেশকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকা সফরের সময় জিডিআই বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করেন। জিডিআই উদ্যোগে বাংলাদেশ যুক্ত হোক, চীন এটি চায় এবং এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় পক্ষ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগে বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় পক্ষ বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে নিয়মিত স্টাফপর্যায়ের আলোচনা ও বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে।
দুই দেশের মধ্যে সফর করার প্রস্তাব : উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফরে চীনের আগ্রহের বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেছিলেন। এরপর আর কোনো উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফর হয়নি। এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে বেইজিং কর্র্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, সান ওয়েইডংকে গত নভেম্বরে এশিয়াবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর আগে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকায় ভাইস মিনিস্টার হিসেবে এটি তার প্রথম সফর। তবে ১০ বছর আগে তিনি ভিন্ন পদে বাংলাদেশ সফর করেছেন।
আজ রবিবার চীনের ভাইস মিনিস্টার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। গত শুক্রবার রাতে প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকায় পৌঁছান চীনের ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডং। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান এবং ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে চীনা ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং উল্লেখ করেন, তিনি ১০ বছর পর বাংলাদেশ সফর করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অর্জন দেখে খুবই মুগ্ধ। উভয় প্রতিনিধিদল পারস্পরিক স্বার্থ এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। চীনা পক্ষ ‘এক চীননীতি’তে অব্যাহত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক বৈঠক বিনিময় স্মরণ করেছেন, যা সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও গভীর করেছে।
এতে আরও বলা হয়, বৈঠকে কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় চীনের টিকা সহায়তার জন্য বাংলাদেশ আবারও ধন্যবাদ জানিয়েছে। উভয় পক্ষ বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। এ সময় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগের মতো মেগা প্রকল্পের আসন্ন উদ্বোধনকে স্বাগত জানায় চীন।
উভয় পক্ষই বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে কয়েকটি অতিরিক্ত প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে। এ ছাড়া গত বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে চীনে রপ্তানি বাড়ানোর উপায় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনা পক্ষ গ্রীষ্মকালীন ফল আমদানিতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা এবং হিমায়িত খাবার আমদানিতে আগ্রহী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার আওতায় শাকসবজি, ওষুধ, কাঁচা চামড়া, ফুটওয়্যার, পোশাক ইত্যাদির মতো অন্যান্য রপ্তানি আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চীনা ভাইস মিনিস্টার চট্টগ্রামে চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা কোম্পানির বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আশ্বাস দেন। তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-গুয়াংঝু সরাসরি ফ্লাইট আবার চালুর জন্য চীনা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে সময়মতো আলোচনার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে উভয় পক্ষ নিয়মিত কনস্যুলার পরামর্শ চালু করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং বায়োটেকনোলজিতে উদ্ভাবনের বিষয়ে চীনের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এতে আরও বলা হয়, জননিরাপত্তা ইস্যুতে সংলাপ আয়োজনে দুই পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আবহাওয়া স্যাটেলাইটের তথ্য শেয়ার করার জন্য বাংলাদেশ চীনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। চীনা পক্ষ বাংলাদেশ থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।