
'ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি' কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যের কবিতার এ লাইন যেন চিরসত্যের চরম শিখরে এ সময়ে। খাদ্যাভাব নেই, তবে অর্থের অভাব এসে ভর করেছে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। ফলস্বরূপ প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সামনে থাকলেও পকেটের দিকে তাকিয়ে শুধু দেখে তাকিয়ে যেতে হচ্ছে বাজারের সারিবদ্ধ দোকানগুলোর দিকে। আজকের দিনে দেশের বহুমুখী উন্নয়ন হলেও এ দেশের বহুসংখ্যক মানুষই অপর্যাপ্ত আয়ের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। এ সমস্ত মানুষের দুর্দিন ক্রমশই ঘনিয়ে আসছে নিত্যদিনের অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য ভারসাম্যহীনতার কারণে। এসব জিনিসপত্রের অস্থিতিশীলতা সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষের কাছে বাধাহীন মনে হলেও নিম্ন আয়ের মানুষের নিকট একেবারে বিপরীত।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির ফলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে মানুষের। এইতো কয়েকদিন আগে ১০ মার্চ আরেক দফা বাড়ল তেল, পেয়াজ ও চিনির দাম। রমজান মাস আসন্ন। সেই উপলক্ষেই বোধহয় এরূপ দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারে এই যে একটা ভয়াবহ অস্থিতিশীলতা, এটা কি নিম্ন আয়ের মানুষ অর্থাৎ মধ্যবিত্ত আর নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য যৌক্তিক? বাজারে প্রতিদিনের দরকারি জিনিসের দাম বাড়াতে উচ্চবিত্তদের সাথে হয়তো 'ভয়াবহ' শব্দটা খাপ খায় না তবে বর্তমানে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের যে লাগামহীন চড়া মূল্য, তা যেন গেড়ে বসেছে সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কের ওপর। নিত্যপণ্যের লাগামহীন এরূপ চড়া দামের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষের অসহায়ত্ব, আর বাড়ছে মানসিক চাপ।
এ দেশের ৭৮.৬% মানুষই গ্রামে বাস করছে, বাকি ২১.৪% শহুরে জীবনযাপন করছে। দেশের সিংহভাগই নিম্নমানের জীবনযাপন করছে, কেননা গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থা শহরের তুলনায় অতিমাত্রায় অনুন্নত। এখানকার বেশির ভাগ মানুষই কৃষিকাজ, গো-পালন, কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসা করে প্রতিদিনের দুমুঠো ভাত জোগায়। এমতাবস্থায় দ্রব্যমূল্যের যে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত বৃদ্ধি তাতে এসব মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। নিত্যপণ্যের এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে গ্রামীণ জীবনে তিনবেলা ভাত পাওয়াটাও যেন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে যে শুধুমাত্র খাদ্যদ্রব্যের দাম আকাশছোঁয়া এমনটা নয়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়েজনীয় মৌলিক চাহিদার কয়েকটি ক্ষেত্রেই এখন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে। বর্তমানের শিক্ষাক্ষেত্রের কথা বলতে গেলে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুবাদে খাতা এবং বই হলো অবশ্য প্রয়োজনীয় বস্তু কিন্তু পৃষ্ঠার মূল্য বৃদ্ধিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাতার যোগান দিতে অক্ষম নিম্ন আয়ের অভিভাবকেরা। কাজেই শিক্ষার্থীরা অনিশ্চিত মনোবল নিয়ে লেখাপড়ার ধাপে এগোচ্ছে যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি মারাত্মক ক্ষতির পরিচয়। পৃষ্ঠার এমন চড়া দামের খপ্পরে পড়ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে যারা বাইরে অর্থাৎ বাড়ি ছেড়ে দেশের আনাচে কানাচে পড়াশোনায় নিয়োজিত তাদের অবস্থাটা মর্মান্তিক। খাতাপত্রের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্যেমূল্যের যে লাগামহীন বিস্তার এ নিয়ে বেশ বীভৎস রকমের বিপাকে পড়ছে এসব শিক্ষার্থীরা। আগে হাতখরচের জন্য কিছু টাকা জীবিত থাকত মাসশেষে। কিন্তু এখনকার সময়ে যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত তারা বাড়িতে বাড়তি কোনো টাকা চাওয়ার সুযোগও পাচ্ছে না।
নিম্ন আয়ের মানুষের এই নিঃশব্দ হাহাকার কে শুনবে, দেখবে কে তাদের এই রংহীনতা? বেঁচে থাকাটাই যেন দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে সামনের পথে এগোতে গেলেই। যেসব পরিবারে মাত্র একজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বিদ্যমান, সে ব্যক্তির পক্ষে আদৌ কি সম্ভব নিত্যদিনের এই পণ্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা? জীবনের নির্মম অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এসব মানুষকে প্রতিনিয়ত। এই অবস্থা চলমান থাকলে দেশের সাধারণ মানুষ হতাশ আর অসহায়ত্বের কিনারায় ডুবে মরবে। সাধারণ মানুষ মানসিকভাবেও নির্যাতিত হচ্ছে এর ফলে। দেশের এরূপ পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রির মূল্যকে অবশ্যই সর্বস্তরের মানুষের সক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত করাটা আবশ্যক। দ্রব্যমূল্যের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করাটাই বর্তমানের এ সমস্যার সঠিক উপয়ান্তর হবে।
লেখক
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বিপ্নবতীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতি সংস্থার উদ্যোগে বাংলাদেশে নির্মিত 'বীরকন্যা প্রীতিলতা' চলচ্চিত্রটি সম্প্রতি প্রদর্শন করা হয়েছে শহীদ সূর্যসেন ভবনে। সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, চলচ্চিত্র প্রযোজক, শিক্ষক ও বিদ্ধজনেরা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে- মাত্র ২১ বছরের একজন সাধারণ ঘরের মেয়ের বীরত্বের কাহিনি সিনেমার পর্দায় দেখতে।
বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতি সংস্থার কিছু কাজের সূত্রে আলোচনা করতে গিয়ে একজন শিক্ষক বলেছিলেন, দেখুন, মাস্টারদা প্রণম্য মানুষ, আমি শ্রদ্ধা করি। তবে একশ বছর আগে কি ঘটেছে এ নিয়ে আলোচনা করে সময় নষ্ট করতে চাই না।
সম্প্রতি সূর্যসেন ভবনের কাজের সূত্রে এক সরকারি কর্মকর্তার গলায় শুনলাম, সূর্য সেনের নামে পাড়ায় পাড়ায় অনেক ক্লাব আছে, সূর্যসেন কোনোদিন এই জায়গাগুলোতে এসেছেন বা পা রেখেছেন তা মনে হয় না। সূর্যসেন ফাঁসিতে আত্মবলিদান দেন ১২ জানুয়ারি, ১৯৩৪। তাই বলছি- সূর্যসেন, নির্মল সেন, গণেশ ঘোষ, অস্বিকা চক্রবর্তী, অনস্ত সিংহ, কঙ্গনা দত্ত, প্রীতিলতাদের পুনর্জন্ম ঘটিয়েছেন শ্রী প্রদীপ ঘোষ।
কিন্তু মাস্টারদার নেতৃত্বে ১৩ থেকে ২৩ বছরের ৬৪ জন যুবককে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে, সংগ্রামী কর্মসূচিতে উদ্বুদ্ধ করে একই রাতে ব্রিটিশের দুটো অস্ত্রাগার দখল করা, ৩ দিন চট্টগ্রামকে স্বাধীন রেখে ভারতের পতাকা উড্ডান রাখা ও জালালাবাদ পাহাড়ে প্রশিক্ষিত ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে ৮০ জন ব্রিটিশ সৈন্যকে নিধন করার বীরগাথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে স্থান পায়নি। ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি চট্টগ্রাম শাখার সর্বাধিনায়ক মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে জালালাবাদ যুদ্ধের পর, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বৃহৎ যুদ্ধ ছিল প্রীতিলতার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে ইংরেজদের প্রমোদ কেন্দ্র ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ। মাত্র সাতজন বিপ্লবী সাথী নিয়ে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে সফল অভিযানের পর আত্মাহুতি দিয়েছেন গুলিতে আহত প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।
এই ইউরোপিয়ান প্রমোদ কেন্দ্রের গেটে লেখা ছিল 'ডগস অ্যান্ড ইন্ডিয়ান প্রহিবিটেড' (কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ)। কথাটা কোনো কোনো মানুষের মনকে ভয়ঙ্করভাবে বিদ্ধ করেছে অনুমান করা যায়। কিন্তু মাস্টারদার নেতৃত্বে সফল সশন্ত্র বিপ্নবের ফলে যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভিত নড়ে গিয়েছিল, অবশেষে আমরা স্বাধীনতা লাভ করলাম, শৃঙ্খলমুক্ত হলাম- সেই অনুভূতি আমাদের মধ্যে হারিয়ে গেছে।
ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি চট্টগ্রাম শাখার ৯ জনকে ফাঁসিতে শহীদের মৃত্যু বরণ করতে হলো। ৫৯ জনের আত্মত্যাগ ছাড়াও বিপ্লবীদের প্রত্যেককেই অমানুষিক নির্যাতন ভোগসহ অসংখ্য আশ্রয়দাতা ও সাহায্যকারীর অবর্ণনীয় নির্যাতনের কাহিনি আমাদের কাছে প্রনিধানযোগ্য নয়! আমরা শুধু মুক্ত থাকতে চাই। মাস্টারদার এই বীরত্বপূর্ণ মর্মস্পর্শী অভিযানের কাহিনি, বিপ্লবী পরিবারের কিছু লোকজন, দু-একটি বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য এবং হাতেগোনা পণ্ডিতদের বাইরে কেউ কিছু জানেন বলে মনে হয় না। জানবার সুযোগও নেই। নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে স্বাধীনতা আন্দোলনে সশস্ত্র বিপ্লব অন্তর্ভুক্ত থাকলে নতুন প্রজন্মের পক্ষে সঠিক ইতিহাস জানা সহজ হতো।
এই চলচ্চিত্রের পরিচালক প্রদীপ ঘোষকে আন্তরিক অভিনন্দন। একইসঙ্গে প্রীতিলতা চরিত্রের অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা ও কলাকুশলীদের প্রতি, ভারতবাসীর পক্ষ থেকে শুভকামনা।
লেখক : সহ-সাধারণ সম্পাদক, বিপ্লব তীর্থ চট্টগ্রাম, কলকাতা
সব মানুষের স্বপ্ন থাকে সুন্দর একটা বাড়ি করার। সারা দিনের ক্লান্তি শেষে ঘরে ফিরে সবাই চায় একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস। নিজের একটা বাসস্থান মানুষের স্থিতিশীলতা, আত্মমর্যাদা এবং ব্যক্তিত্বকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত সবারই ন্যূনতম চাওয়া একটা সুন্দর ফ্ল্যাট তথা নিজস্ব ঠিকানা। কিন্তু এবার বাজেট প্রস্তাব এর পর অসংখ্য নাগরিকের ফ্ল্যাট এর স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। আমাদের বেসরকারি ডেভেলপারদের একান্ত চেষ্টায় অনেক স্বল্পবিত্ত নাগরিকও ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছে। আবাসন ব্যবসায়ীদের কাছে মনে হচ্ছে ফ্ল্যাট আবার উচ্চ বিত্তের পণ্য হয়ে যাবে। সবার জন্য যে আবাসন এই স্লোগান এখন স্লোগানই থেকে যাবে।
এবার বাজেটে অনেক এলাকায় ২০ লক্ষ টাকা প্রতি কাঠা সরকারি ট্যাক্স ধরা হয়েছে। অথবা চুক্তি মূল্যের ৮ শতাংশ। এটা আগে ৪ শতাংশ ছিল। আবার শর্ত আছে যেটা বেশি হবে সেটা দিতে হবে। তার মানে কমপক্ষে কাঠা প্রতি ২০ লক্ষ টাকা ট্যাক্স। ক্ষেত্র বিশেষ এটা আরও বেশি দিতে হবে। এটা গেল জমির ক্ষেত্রে। ফ্ল্যাট এর ক্ষেত্রে আগে ১০-১২.৫ শতাংশ ট্যাক্স ছিল এটা এবার হবে ১৪-১৬.৫ শতাংশ। আবাসন খাতে কি অবস্থা দাঁড়াবে চিন্তা করা যায়?
আমরা আবাসন ব্যবসায়ীরা রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) থেকে এই ট্যাক্স ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। দীর্ঘ দিন ধরে গণমাধ্যম এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলাম। একটা সময় ১৫ শতাংশ ট্যাক্স ছিল তখন জমি–ফ্ল্যাট বিক্রি অনেক হ্রাস পেয়েছিল। চার বছর আগে কিছুটা হ্রাস করার পর এই ট্যাক্স ছিল ১০-১২.৫% পর্যন্ত। নতুন করে ৪ শতাংশ ট্যাক্স বৃদ্ধিতে এই খাতে স্থবিরতা নেমে আসবে। অধিক ট্যাক্স কালেকশন করতে গিয়ে উল্টো ট্যাক্স কমবে বলে আমাদের শঙ্কা।
ড্যাপ এ ফার হ্রাস, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি সহ নানাবিধ কারণে ব্যবসা সংকটে রয়েছে, এ অবস্থায় স্বস্তির কোনো উদ্যোগ নেই বাজেটে। উল্টো জমি-ফ্ল্যাট নিবন্ধন ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি সিমেন্ট, পাথর, টাইলস, লিফট, সিরামিক, গ্লাস, সুইচ-সকেট, ক্যাবল, কিচেনওয়্যারসহ কম পক্ষে ১২-১৩টি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যে সকল পণ্যের দাম বাড়বে তার ক্রেতা হচ্ছি আমরা যারা ফ্ল্যাট তৈরি করি। আর সব শেষ এই পণ্যের দাম গিয়ে পড়বে ফ্ল্যাট ক্রেতার ওপর। ফ্ল্যাটের দাম আরেক দফা বাড়বে। সব মিলিয়ে সামনের দিনগুলোতে অনেকেই ফ্ল্যাট কেনার সক্ষমতা হারাবেন এবং আবাসন ব্যবসায়ীরা ক্রেতা হারাবেন। নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা আরও কঠিন হয়ে যাবে। মৌলিক চাহিদার অন্যতম আবাসন অনেকেই সঠিকভাবে পাবেন না। এমনিতেই ফ্ল্যাট তৈরি কমে গেছে ফলে আগামীতে ফ্ল্যাটের সংকট তৈরি হবে।যার প্রভাব পড়বে বাড়ি ভাড়ায়। বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। ফলে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে স্বল্প আয়ের কর্মজীবীদের কষ্ট আরও বাড়বে।
রিহ্যাব জাতীয় বাজেট উপলক্ষে আবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন সংস্থায় যোগাযোগ করেছে কয়েক বছর ধরে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তার কোনোটার প্রতিফলন হয়নি।
নীতি সহায়তার অভাবে ক্রমে দেশের আবাসন খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পতিত হয়েছে। অতিরিক্ত কর আরোপ এর কারণে এই আবাসন খাতকে ভয়ংকর সংকটের দিকে ঠেলে দেবে।
এই অবস্থায় আশু পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই সংকট উত্তরণ অসম্ভব। এই মুহূর্তে নতুন করে নানা পণ্যের কর বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমাদের শঙ্কা। আবাসন খাত মানে শুধু আবাসন খাত নয়। এর সঙ্গে ৪ শতাধিক লিংকেজ শিল্প জড়িত। আবাসন খাতে সংকট মানে এই সব উপখাতে সংকট। আবাসন খাতে ৪০ লক্ষ নাগরিকের কর্মস্থান। এই খাতের সংকট অর্থনীতিতে সংকট তৈরি করবে আমাদের শঙ্কা। কাজেই বাজেট পাশের আগে এই দিকে অবশ্যই সুনজর দেওয়ার আহ্বান জানাই।
কামাল মাহমুদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম), রিহ্যাব
আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক রীতি-নীতি অনুযায়ী, বয়স্কদের জন্য আলাদা নিবাস অনেকটা 'বনবাসে' যাওয়া বা পাঠানোর মতোই ঘটনা
আধুনিক জমানায় বৃদ্ধাশ্রম একটি জনপ্রিয় কনসেপ্ট। উন্নত দেশে ডে-কেয়ার সেন্টারের পাশাপাশি ওল্ড হোমও জনপ্রিয়। পাশ্চাত্য ধারণায় তাড়িত হয়ে আমাদের দেশেও প্রবীণ নিবাস, ওল্ড হোম বা বৃদ্ধাশ্রম ক্রমেই আলোচিত হয়ে উঠছে।
বিপক্ষে— বৃদ্ধাশ্রম নয়, পরিবারই হোক বয়স্কদের ঠিকানা
আমাদের দেশের যৌথ পরিবারের হই-হুল্লোড়ের মধ্যে আগে যখন শুনতাম বিদেশে নাকি বুড়ো হলে মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসে, তখন ওসম দেশের লোকদের প্রতি ঘৃণা ও করুণা হতো
মনুসংহিতায় চতুরাশ্রমের তৃতীয় আশ্রম ‘বানপ্রস্থ’ কি কেবলই একটা ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক এষণা, নাকি নীরবে ও শান্তিপূর্ণভাবে সামাজিক ক্ষমতা হস্তান্তর। অন্যভাবে বললে সংসারের বোঝা নামিয়ে বা দায়িত্ব শেষ করে নিজেকে সময় দেওয়ার, ফেলে আসা জীবনকে অবসরে উদযাপনের সুযোগ।
পক্ষে— তবুও শান্তি তবু আনন্দ
নানা অপপ্রচার, নেতিবাচক সমালোচনার মধ্যে ভারতের জম্মু কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে জি ২০ সম্মেলনের পর্যটন খাতের বিকাশ নিয়ে কয়েকটি অধিবেশন শুরু হল ২২ মে। গত কয়েক দিন থেকে সম্মেলনে অংশ নিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতিনিধিরা আসতে শুরু করেছেন। চীন বাদে অন্য সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা পর্যটন সম্পর্কিত তৃতীয় ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের জন্য সোমবার শ্রীনগরে পৌঁছেছেন। 'অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের জন্য ফিল্ম টুরিজম' শীর্ষক একটি পার্শ্ব ইভেন্টের মাধ্যমে তিন দিনের বৈঠকের সূচনা হয়। ভারত সভাপতি হিসাবে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বাংলাদেশকে ২০২৩ সালের জি-২০ প্রক্রিয়ায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে।‘ এটা বাংলাদেশকে খাদ্য এবং জ্বালানি নিরাপত্তা কিংবা পরিবেশের জন্য জীবনযাত্রা কিংবা নারীর নেতৃত্বে উন্নয়ন, সব ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ হওয়ার এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জি ২০ এর প্রধান সমন্বয়কারী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
এ প্রসঙ্গে জি ২০ এর প্রধান সমন্বয়কারী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, জি-২০ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ হওয়ার এক অনন্য সুযোগ। তিনি আরও বলেছেন জি-২০-এর সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ শুধু ভারতের জন্যই সুযোগ নয়; বরং সব উন্নয়নশীল দেশের জন্যও এটা একটা বিরাট সুযোগ। বিশেষ করে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য সুযোগ তো বটেই। তিন দিনের শীর্ষ সম্মেলন ঘিরে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তিন দিনের বৈঠকে আগের বৈঠকগুলোর তুলনায় বিদেশি প্রতিনিধিদের সর্বাধিক অংশগ্রহণ দেখা যাবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অশান্ত কাশ্মীরে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই সম্মেলন করছে স্বাগতিক ভারত। বিশ্বকে দেখাতে চাইছে যে সেখানকার জীবনযাত্রা স্বাভাবিক। ধারণা করা হচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীরে জি-২০ সম্মেলন বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতির একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। নতুন নতুন উন্নয়ন পরিকল্পনা এ অঞ্চলের নাগরিকদের জীবনের মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেছেন, কাশ্মীরে পরিবর্তন এসেছে এবং ধর্মঘটের ডাক আর নেওয়ার কেউ নেই। এখানে শহরের কেন্দ্রস্থল সহ কাশ্মীর জুড়ে বাজারগুলি সারা দিন খোলা ছিল এবং বুলেভার্ড রোডে ট্র্যাফিক ডাইভার্সন ব্যতীত লোকজনের চলাচল বা পরিবহনে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না।
ইতিমধ্যে কাশ্মীরের চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে।’ জি২০ ফোরামের বর্তমান সভাপতি হিসেবে ভারত ৫৫টি স্থানে ২১৫টি অধিবেশনের পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে অন্তত চারটি অধিবেশনে পর্যটনের ওপর আলোকপাত করা হবে। পর্যটনের ওপর তৃতীয় জি ২০ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা চলবে আগামী ২৪ মে পর্যন্ত শ্রীনগরে। ভারত বর্তমানে জি-২০-এর সভাপতি। শিল্পোন্নত ১৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে জি -২০ গঠিত। বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) 80 শতাংশ এই দেশগুলোর হাতে।
দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ ড. সমীরা গুপ্তা বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে জি ২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে এই অঞ্চলের অপার সম্ভাবনা বিশ্বের কাছে তুলে ধরার এক অনন্য সুযোগ পেয়েছে ভারত। সম্মেলনে কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরা হচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করছে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে উৎসাহিত করছে। তিনি আরও বলেন, "জি ২০ সম্মেলন কাশ্মীরকে বৈশ্বিক মানচিত্রে স্থান দিয়েছে, এটিকে বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং পর্যটনের জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত করার অনুমতি দিয়েছে৷ এই এক্সপোজার নিঃসন্দেহে অবদান রাখবে উপত্যকার আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য।"
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় উদ্যোগগুলি জম্মু ও কাশ্মীরের অবকাঠামো উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন ভারতের অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ডঃ রাজেশ ভার্মা। তিনি বলেন অত্যাধুনিক বিমানবন্দর, মহাসড়ক এবং আধুনিক শহুরে অবকাঠামো নির্মাণ এই অঞ্চলে সংযোগ বৃদ্ধি করেছে এবং ব্যবসা করার সহজতর করেছে। এই উন্নয়নের ঢেউ শুধুমাত্র স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনকে উন্নত করেনি বরং বিনিয়োগ ও চাকরির সুযোগের দরজাও খুলে দিয়েছে। তার মতে, "জি-২০ উদ্যোগের ফলে পরিকাঠামোর আপগ্রেড গুলি কাশ্মীরের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে, বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে এবং এর নাগরিকদের জীবনযাত্রার সামগ্রিক মান উন্নত করবে।
স্থানীয় জনগণের ক্ষমতায়নের প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে, জম্মু ও কাশ্মীরে জি-২০ উদ্যোগ দক্ষতা উন্নয়ন এবং উদ্যোক্তার ওপর জোর দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সামাজিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ডক্টর আয়েশা খান। তিনি বলেন, বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, বৃত্তিমূলক কোর্স এবং ব্যবসায়িক ইনকিউবেটর গুলির মাধ্যমে, উদ্যোগগুলি উদ্যোক্তার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে এবং একটি দক্ষ কর্মী বাহিনী তৈরি করতে জি ২০ সম্মেলনে বিশদ আলোকপাত হবে। দক্ষতা বিকাশ এবং উদ্যোক্তার ওপর জোর দেওয়া কাশ্মীরের যুবকদের ক্ষমতায়ন করবে, তাদের এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে এবং একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করার অনুমতি দেবে।
জম্মু ও কাশ্মীরের অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এটিকে একটি প্রধান পর্যটন গন্তব্য করে তুলেছে। জি-২০ উদ্যোগগুলি উপত্যকায় পর্যটনের প্রচার, বিশ্ব ভ্রমণকারীদের আকৃষ্ট করার এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙা করার ওপর জোর দিয়েছে। পর্যটন বিশেষজ্ঞ ড. রাঘব মালহোত্রা বলেছেন, জি-২০ উদ্যোগগুলি কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় গতি প্রদান করেছে। দর্শনার্থীদের এই আগমন শুধুমাত্র রাজস্ব তৈরি করবে না বরং সাংস্কৃতিক বিনিময়কেও উৎসাহিত করবে এবং শান্তি ও বোঝাপড়ার প্রচার করবে।
এত কিছুর মধ্যেও নয়াদিল্লি ভারত-শাসিত কাশ্মীরকে তার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে আনার পর থেকে, সরকার বেশ কয়েকটি আইন ও নীতি প্রয়োগ করেছে যা নিয়ে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে উপত্যকার কাশ্মীরিদের মধ্যে। তারা বলেছে তাদের অধিকার ও সংগ্রামকে দুর্বল করার লক্ষ্যে এসব আইন ও নীতি প্রয়োগ করা হয়েছে। এ রকম একটি অবস্থার মধ্যে কাশ্মীরে জি ২০ সম্মেলন আয়োজন করতে ভারতকে বেশ সতর্কতা ও অনেক বহি শত্রুর হুমকি মোকাবিলা করতে হয়েছে। স্থানীয় এক মানবাধিকার কর্মী বলেন, কাশ্মীরের জনগণের নিরাপত্তার অনুভূতি শুধু সম্মেলন দিয়ে নিশ্চিত করা যাবে না। তিনি বলেন এমন বিশাল একটি সম্মেলনের জন্য এ অঞ্চলে আমাদের একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী থাকা উচিত ছিল এবং আমাদের তা নেই। আমি আশা করি বিশ্ব এই বিষয়গুলি লক্ষ্য করবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান আল জাজিরাকে বলেছেন, ভারত, জি২০ ইভেন্টের মাধ্যমে এই অঞ্চলে শান্তি রয়েছে বলে দাবি করতে চায়। তিনি বলেছিলেন। আসলে, নয়া দিল্লির জন্য, শ্রীনগরে এই সভা অনুষ্ঠিত করার অর্থ হল 'সব ঠিক আছে' এবং 'সব স্বাভাবিক'-এর বার্তা বহির্বিশ্বে প্রচার করা।
জি ২০ সম্মেলন নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফার্নান্ড ডি ভারেনেস বলেছেন, কাশ্মীর নয়াদিল্লির প্রত্যক্ষ শাসনের অধীনে আসার পর থেকে "ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের" ঘটনা ঘটেছে এর মধ্যে রয়েছে অত্যাচার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, কাশ্মীরি মুসলমান এবং সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অধিকার অস্বীকার করা, বিতর্কিত অঞ্চলে জি-২০ বৈঠকের মাধ্যমে "কাশ্মীরি মুসলিম ও সংখ্যালঘুদের গণতান্ত্রিক এবং অন্যান্য অধিকারের নৃশংস ও দমনমূলক অস্বীকৃতি" স্বাভাবিক করার জন্য ভারতের এই আয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। যদিও জেনেভায় জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশন "ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক অভিযোগ" বলে তার ওই বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে নয়াদিল্লি-ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক সরল শর্মা মনে করেন এই বৈঠকটি কেবল কাশ্মীরের পর্যটন সম্ভাবনাই নয়, এর অন্তর্নিহিত লক্ষ্য হল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান একটি ধারণাকে ভেঙে দিয়ে নতুন ধারণার জন্ম দেওয়া যে কাশ্মীরে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়েছে। অতএব, এই সভার স্থান হিসাবে শ্রীনগরের নির্বাচন তাৎপর্যপূর্ণ। শর্মা বলেন, যদিও কিছু দেশ, যেমন পাকিস্তান, শ্রীনগরে জি ২০ বৈঠক আয়োজনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভারতের সমালোচনা করার চেষ্টা করে আসছে, এটা মনে রাখা অপরিহার্য যে পাকিস্তান জি ২০ গ্রুপের সদস্য নয়। তাই তাদের আপত্তির কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই।
(প্রকাশিত লেখার আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায় সম্পূর্ণরূপে লেখকের, এর কোনো প্রকার দায়ভার দেশ রূপান্তর নেবে না)
সাম্প্রতিক আবহাওয়ার চরমভাবাপন্নতায় দেশে সাধারণ জণগণের মধ্যেও এক ধরনের পরিবেশ সচেতনতা তৈরি হয়েছে। একে কাজে লাগাতে হবে। বলা হচ্ছে, গত ৫০ বছরের মধ্যে রেকর্ড তাপমাত্রা দেখা দিয়েছে। ফলে, এ পরিস্থিতিতে পরিবেশ রক্ষায়, গাছপালা-প্রকৃতি বাঁচাতে সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষকেও সচেতন হতে হবে। না হলে গাছ রক্ষার এই আপাত নিরীহ ধরনের দাবি বড় হয়ে উঠতে পারে।
শ্বাপদসংকুল, শ্বাপদসমাকীর্ণ বিণ, হিংস্র জন্তুতে পূর্ণ। অভিধানে এমন বলা আছে। অর্থাৎ এমন একটি জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর বা প্রাণসংহারী হতে পারে― সেটি নির্দেশ করতে শব্দটি আমরা ব্যবহার করে আসছি। তো সেই রামও নেই অযোধ্যাও নেই। মানে, সেই জঙ্গল কেটে মানুষ সেই সব কথিত হিংস্র প্রাণীদের কবেই নির্বাসনে পাঠিয়েছে। আর সেখানে জনপদ প্রতিষ্ঠা করে নগরায়ণের নামে, উন্নয়নের নামে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে অবশিষ্ট প্রাণ-প্রকৃতিই হুমকির মুখে। যা এমন এক চরাচর রচনা করেছে যাকে এই প্রাণ-প্রকৃতির নিরাপত্তা ও টিকে থাকার জন্য হুমকিস্বরূপ এক মনুষ্যসংকুল এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করার সময় এসেছে। মনুষ্যসংকুল, জনাকীর্ণ এলাকা, হিংস্র মানুষে পূর্ণ―যা প্রাণ-প্রকৃতি সংহারী।
অবস্থাদৃষ্টে এমনটা ভাবা যেতে পারে। যেখানে পৃথিবীটা হওয়ার কথা ছিল 'পাখি-গাছ-মানুষ সবার' সেখানে বিশ্বটা হয়ে পড়ছে প্রাণ-প্রকৃতি সংহারী মনুষ্যসংকুল। সে ক্ষেত্রে উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বন-জঙ্গল, নদী-নালা-জলাশয় ধ্বংস, গাছপালা, পাহাড় কেটে সাফ করতে সিদ্ধহস্ত নাছোড়বান্দা এক শ্রেণির কর্তৃপক্ষ আমরা পেয়েছি; যাদের কারণে বাংলাদেশকে পৃথিবীর প্রাণিকুল ও প্রকৃতির জন্য ভয়াল মনুষ্যসংকুল এলাকা বলে ঘোষণা দেওয়া যায়। কিছুদিন পর পর উন্নয়নের নামে, সৌন্দর্যবর্ধনের নামে গাছপালা, পাহাড় কাটা থেকে শুরু করে জলাশয় ধ্বংসের বিরুদ্ধে এখানকার মানুষদের দাঁড়াতে হয়। পরিহাস হচ্ছে, কিছু মানুষের এই অপকর্মের বিরুদ্ধে যে কতিপয় মানুষ দাঁড়াচ্ছেন নিয়মিত- তাতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। উন্নয়নের, সৌন্দর্যের দোহাই দিয়ে সারা দেশে নির্বিচারে প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ এবং বৃক্ষনিধন চলছেই। কিছুতেই ওই ক্ষমতাবান কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হচ্ছে না। এই কিছু না হওয়ার ফলে গাছ কাটা চলছে, বন, পাহাড়, জলাশয় ধ্বংস চলছে আর পৃথিবীটা উষ্ণ হচ্ছে- গায়ে লাগছে গরম।
সম্প্রতি রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সাত মসজিদ সড়কের সড়ক-বিভাজকের ওপর একই অজুহাতে, মানে উন্নয়ন ও সৌন্দর্যের নামে গাছ কাটার প্রতিবাদ চলছে। প্রতিবাদকারীরা গাছ রক্ষা করেই কথিত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। এ জন্য তারা ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের সঙ্গে বসতেও চেয়েছেন। মেয়র মহোদয়ের সময় হয়নি বা তাদের সঙ্গে বসেননি। তবে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি সাত মসজিদ সড়কের গাছ রক্ষার আন্দোলনকারীদের গাছের জন্য মর্মাহত ও আবেগি বলে উল্লেখ করে সামান্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বোঝাই যাচ্ছে- এই রেকর্ড তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়া দিনের মধ্যে বসেও গাছপালা, প্রাণ-প্রকৃতির চেয়ে মেয়র মহোদয়ের কাছে উন্নয়ন ও সৌন্দর্য প্রকল্প জরুরি। এখানে গাছ কাটার জন্য টাকা, ফের গাছ কেনার জন্য ও সেগুলো লাগানোর জন্য টাকা।
প্রশ্ন হচ্ছে মেয়রের কথামতো এই গাছকাটার প্রতিবাদ করাটা কেবল কিছু মানুষের মর্মাহত হওয়ার কি না। জানি না এ ধরনের প্রকল্পে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতির বিষয় থাকে কি না। যতদূর বুঝি- বিষয়টা আইনি। মেয়র অবশ্য কথা দিয়েছেন যে একটি গাছের বদলে সেখানে তিনটি করে গাছ লাগানো হবে। এখানে কয়েক স্তরের আবেগের মাত্রা রয়েছে। যা মেয়র কথিত আন্দোলনকারীদের আবেগকে ছাড়িয়ে যাবে। প্রথমত দশ/পনেরো বছরের একটি প্রাপ্তবয়স্ক গাছ কেটে তিনটি চারাগাছ লাগানো হবে। যেকোনো প্রকল্পে গাছ কাটা নিয়ে কথা উঠলেই অবশ্য এমন ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, চারাগাছ আর প্রাপ্তবয়স্ক গাছের উপযোগিতা কী এক? চারাগাছ লাগানোর পর তার রক্ষণাবেক্ষণ ও টিকে থাকার প্রশ্নও রয়েছে। দ্বিতীয়ত, সাত মসজিদ রোডের কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কাঁঠাল ও বটগাছের মতো বৃক্ষ কেটে মেয়র বাগানবিলাস, চামেলি, রঙ্গন ফুলের গাছ লাগাবেন বা লাগাচ্ছেন। এখানে বৃক্ষ ও ফলদ গাছ কেটে ফুলের গাছ লাগানোতে কর্তৃপক্ষের সৌন্দর্যজ্ঞানের বলিহারি প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে কাহিনি হয়তো আরও গভীর, তাই কর্তৃপক্ষের আবেগও বেশি গাছ কেটে ফুলগাছ লাগানোতে। ধরেন, একটা ব্যস্ত সড়কে কৃষ্ণচূড়া বা বটগাছ যে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে পারবে, ছায়া দিতে পারবে নিঃসন্দেহে ফুল গাছের জন্য সেটা সম্ভব না। ফলে এখানে নার্সারিগুলো থেকে বারবার ফুলগাছ কেনা ও তা লাগানোর বিষয় আছে, আছে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ। তৃতীয়ত, জানামতে প্রত্যেক মেয়রের প্রতিবছর গাছ লাগানোর জন্য বেশ মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দ থাকে। সেই টাকা কীভাবে খরচ হয়, আদৌ খরচ হয় কি না তা আমাদের জানা নেই।
উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধন ইত্যাদি করতে হলে যদি সব সময় আমাদের নির্বিচারে গাছই কাটা লাগে, ওই সব গাছে আশ্রয় নেওয়া পাখ-পাখালি, প্রাণীদের আবাস ধ্বংসই করা লাগে, তাহলে বলতে হয় আমাদের কর্তৃপক্ষের সেই অর্থে তার যোগ্যতা নেই। দিনের পর দিন পরিবেশবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ, নাগরিকরা গাছ কাটা, জলাশয় ধ্বংস বন্ধের দাবি, পরামর্শ দিয়ে আসছেন। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশে গাছপালা, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করেই উন্নয়ন হয়, অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার হয়। নগর কর্তৃপক্ষকে কখনোই সে ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না, যাতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না, আবার অবকাঠামো নির্মাণ বা সংস্কারও হবে। সিটি করপোরেশনের এসব উন্নয়ন কাজের টেন্ডারে 'প্রকল্প এলাকার গাছপালা, পরিবেশের ক্ষতি করা যাবে না' এমন কোনো নির্দেশনা থাকে না কেন জানি না। নাকি থাকে, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান তা মানে না! যতদূর জানি, ঢাকার দুই সিটিতেই বাগান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা বিভাগ আছে, যারা সড়ক বিভাজকের গাছপালা ছেটে, পরিষ্কার করে থাকেন। এই বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের কি কোনো প্রশিক্ষণ আছে? কোন গাছ কতটুকু ছাঁটা উচিত, কীভাবে ছাঁটা উচিত―এসব তো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক সময় বেশি বা ভুলভাবে ডালপালা-কাণ্ড ছাঁটার কারণেও অনেক গাছ মারা যেতে পারে।
যেকোনো দাবি নাগরিকরা জানাতে পারেন। কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের দূরে ঠেলে না দিয়ে, বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে না দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা। নাগরিকদের দাবি যৌক্তিক হলে তা মেনে নেওয়া উচিত। এতে কর্তৃপক্ষের হার হয় না, বরং প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষ জনগণের হয়ে ওঠে। আশা করি ইতিমধ্যেই ধানমণ্ডির সাত মসজিদ সড়কের যে ক্ষতি হয়েছে তা আমলে নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্তৃপক্ষ পরিবেশ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসবেন এবং একটি সুন্দর সমাধান হবে। এমনও হতে পারে এই পরিবেশ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসার ফলে কর্তৃপক্ষ এমন একটি সমাধানে পৌঁছাবেন, যা ঢাকা শহরের আগামী উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিবেশের ক্ষতি না করার একটি মডেল তৈরি হবে।
শেষ যে কথা বলতে চাই― সাম্প্রতিক আবহাওয়ার চরমভাবাপন্নতায় দেশে সাধারণ জণগণের মধ্যেও এক ধরনের পরিবেশ সচেতনতা তৈরি হয়েছে। একে কাজে লাগাতে হবে। বলা হচ্ছে, গত ৫০ বছরের মধ্যে রেকর্ড তাপমাত্রা দেখা দিয়েছে। ফলে, এ পরিস্থিতিতে পরিবেশ রক্ষায়, গাছপালা-প্রকৃতি বাঁচাতে সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষকেও সচেতন হতে হবে। না হলে গাছ রক্ষার এই আপাত নিরীহ ধরনের দাবি বড় হয়ে উঠতে পারে।
মৌলভীবাজারে 'চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিক বান্ধব চা শিল্প' প্রতিপাদ্য নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে তৃতীয়বারের মতো 'জাতীয় চা দিবস' উদযাপন করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার (০৪ জুন) শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে আয়োজিত 'জাতীয় চা দিবস' উদযাপন এবং 'জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩' প্রদান অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
দেশে প্রথমবারের মতো চালুকৃত 'জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩' প্রদান করা হয়। আটটি ক্যাটাগরিতে আট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় পুরস্কার। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
৮ ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন (০১) একর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী চা বাগান- ভাড়াউড়া চা বাগান (০২) সর্বোচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদনকারী বাগান- মধুপুর চা বাগান (০৩) শ্রেষ্ঠ চা রপ্তানিকারক- আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লি. (০৪) শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্রায়তন চা উৎপাদনকারী- মো. আনোয়ার সাদাত সম্রাট (পঞ্চগড়) (০৫) শ্রমিক কল্যাণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা বাগান- জেরিন চা বাগান (০৬) বৈচিত্র্যময় চা পণ্য বাজারজাতকরণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি- কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লি. (০৭) দৃষ্টিনন্দন ও মানসম্পন্ন চা মোড়কের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি- গ্রিন ফিল্ড টি ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (০৮) শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারী (চা শ্রমিক)- উপলক্ষী ত্রিপুরা, নেপচুন চা বাগান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম। এ ছাড়াও চা বোর্ডের কর্মকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন বাগানের মালিক ও চা শ্রমিকরা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ও আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন।
মসজিদ ও মাদ্রাসায় ইমামদের সচেতনতা বার্তা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর মিরপুরে পিএসসি (পুলিশ স্টাফ কলেজ) কনভেনশন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদের ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসি এলাকার এক হাজার ইমাম ও খতিব অংশগ্রহণ করেন।
উপস্থিত ইমামদের উদ্দেশে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা মসজিদে গিয়ে ওয়াক্ত নামাজের সময়, জুমার নামাজের সময় মনোযোগ দিয়ে আপনাদের বয়ান শুনি। আপনারাই পারেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে। আপনারাই পারেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আপনারা মানুষকে জানাবেন বর্ষাকালে এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যায়। এডিস মশার কামড়ে জ্বর হয়, মৃত্যু হয়। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। অতএব কোনোভাবে যেন পানি জমে না থাকে’।
মেয়র আরো বলেন, ‘এডিস মশা যখম কামড় দেবে, মশা কিন্তু চিনবে না কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কে ইমাম আর কে খতিব। এডিস মশা সবার জন্যই হুমকি। অতএব এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একমাত্র সচেতনতা পারে ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সিটি করপোরেশন থেকে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যকরী লার্ভিসাইডিং করছি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। কিন্তু সবার সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’।
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে উপস্থিত ইমামদের সচেতন করেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে লাখো লাখো মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার খতিব রয়েছেন। ইমাম ও খতিবরা মসজিদে মুসুল্লিদের ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সচেতন করলে এই ভয়াবহ মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির ও অন্যান্য সাধারণ মানুষের বক্তৃতা থেকে ইমামদের বক্তৃতা বেশি কার্যকর হবে। মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় বয়ানে, খুতবায় মুসুল্লিরা ইমামগণের কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনাদের বার্তা মানুষের মনে গেথে থাকে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে বিয়ের প্রলোভনে ডেকে নিয়ে মেয়ে (১৭) ও তার মাকে (৪০) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মেয়ের প্রেমিকসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার (০৫ জুন) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুকোমল চন্দ্র দেবনাথ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গতকাল রবিবার (০৪ জুন) ভোরে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করা হয়। পরে সন্ধ্যায় তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। আর গত শনিবার (০৩ মে) রাত ৮টার পর শিবগঞ্জের পৌর এলাকার মাগুরার মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় অভিযুক্ত ও আটককৃতরা হলেন প্রেমিক শিবগঞ্জ পৌর পিঠালিতলা মহল্লার বাসিন্দা সেলিম রেজা (২৫)। তার বন্ধু ও একই গ্রামের বাসিন্দা মো. হাসান (২৪) এবং ভ্যানচালক পিঠালিতলা মহল্লার মো. মেহেরুল (৩০)।
পুলিশ জানায়, শনিবার (০৩ মে) রাত ৮টার পর ওই এলাকার (পৌর মর্দনা গ্রামের পাশে) একটি মাঠের পাশের পাটক্ষেতে মা ও মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর ফেলে যায় অভিযুক্ত মেয়ের প্রেমিক সেলিম এবং তার বন্ধু হাসান। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশের তল্লাশিতে রবিবার (৪ জুন) ভোরে ওই মাঠ থেকে উদ্ধার হয় মা ও মেয়ে। এরপর তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার ভোরে পুলিশের অভিযানে আটক হয় সেলিম ও হাসান।
এদিকে মা ও মেয়েকে রিকশাভ্যানে করে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে আটক হয় মেহেরুল। এ ঘটনায় মেয়ের মা গত রবিবার সকালে আটক তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় আসামিদের গত রবিবার আদালতে হাজির করা হলে ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রেমিক সেলিম ও তার সহযোগী হাসান দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে একই দিন সন্ধ্যায় আদালত সকল আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরিদর্শক সুকোমল চন্দ্র দেবনাথ জানান, রং নাম্বার থেকে মোবাইল ফোনে প্রথম পরিচয় হয় ভুক্তভোগী তরুণী ও সেলিম রেজার। পরে তাদের মধ্যে প্রেম হয়। একপর্যায়ে গত শনিবার রাতে মেয়েকে দেখা ও বিয়ের কথা বলে মা-মেয়েকে শিবগঞ্জে ডেকে নিয়ে আসে সে। পরে ভ্যানচালকের মাধ্যমে মা ও মেয়েকে ওই মাঠের পাশের পাটক্ষেতে নিয়ে যায় সেলিম। সেখানে মা ও মেয়েকে সেলিম ও হাসান ধর্ষণের পর ফেলে রেখে যায়।
তিনি আরও জানান, স্ত্রী ও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে মেয়ের বাবা একই দিন রাতেই ঘটনাটি শিবগঞ্জ থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ রাতেই উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান শুরু করে। পরে ভুক্তভোগী মেয়ের মায়ের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। রবিবার ভোরে ওই মাঠ থেকে মা ও মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। পরে একই দিন ভোরেই অভিযান চালিয়ে সেলিম, হাসান ও মেহেরুলকে আটক করা হয়। রবিবার সকালে মেয়ের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ আসামিদের আদালতে পাঠায়। মা ও মেয়ের ডাক্তারি পরীক্ষা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে সম্পন্ন হয়।
মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার একসঙ্গে তিন মৌসুম খেলেছেন বার্সেলোনায়। ২০১৪ সালে লিভারপুল থেকে সুয়ারেজ বার্সায় আসার পর এবং ২০১৭-তে নেইমার পিএসজিতে পাড়ি জমানো পর্যন্ত ‘এমএসএন’ এর রাজত্ব ছিল বার্সেলোনায়। সে সময়ে এই তিনজন মিলে ৩৬৪ গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ১৭৩টি। এই ত্রয়ী বার্সাকে দুটি লা লিগা খেতাব, তিনটি কোপা দেল রে এবং একটি করে সুপারকোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন।
সুয়ারেজ-নেইমার বার্সা ছেড়ে চলে গেলে মাঠের জুটি ভাঙলেও বন্ধুত্ব অটুট এমএসএনের। সেদিন মেসিকে মাঠে দর্শকরা দুয়ো ধনি দলে তার প্রতিবাদ করেছেন সুয়ারেজ নেইমার। মেসির পিএসজি ছাড়ার পর নেইমার বন্ধুর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন, সুয়ারেজও জানিয়েছেন সাধুবাদ।
নেইমার ইনস্টাগ্রামে একটি বিদায় নোট পোস্ট করেছেন মেসিকে উদ্দেশ্য করে, 'ভাই.. আমরা যেমন ভেবেছিলাম তেমনটা হয়নি কিন্তু আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েছিলাম। তোমার সাথে আরও ২ বছর ভাগ করে নিতে পারাটা আনন্দের ছিল। তোমার পরবর্তী। তোমার নতুন অধ্যায়ের জন্য শুভকামনা এবং সুখী হও। তোমাকে ভালোবাসি।'
উত্তরে মেসি বলেছেন, 'ধন্যবাদ নে! সব কিছুর পরও আমরা একসাথে খেলা উপভোগ করেছি এবং প্রতিদিন ভাগ করে নিয়েছি। তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি কিছু পাগলাটে, কিন্তু মানুষ তুমি দারুন।আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নেইমার।'
আর এই বার্তা পড়ে সুয়ারেজ লিখেছেন,' কি সুন্দর বার্তা মেসি। নেইমারের সাথে আপনাকে আবার একসাথে দেখে খুব ভালো লাগলো। একে অপরের প্রতি এই ভালবাসা, সর্বদা সবকিছুতে একে অপরকে সমর্থন করা আরও সুন্দর! আমি তোমাদের ভালোবাসি বন্ধুরা।'
তিনজনের এই বার্তা পড়ে একটা কথাই বলতে হয়, বন্ধুত্বের জয় হোক।
পিছিয়ে পড়া রিয়াল মাদ্রিদকে বহুবার ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন করিম বেনজেমা। ক্লাবের হয়ে শেষ ম্যাচেও তাই করলেন। তার গোলে ড্র করে মৌসুম শেষ করেছে রিয়াল।
ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে নামে অ্যাথলেটিক ক্লাবের সঙ্গে। ম্যাচের প্রথমার্ধটা গোল শূন্য থেকে যায়। এই সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
তবে বিরতি থেকে ফিরে চার মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যায় অ্যাথলেটিক। ৪৯ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় একাধিক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে লক্ষ্য বরাবর শট নেন ওয়েন সানচেত। তবে তিবু কুর্তোয়া দারুণভাবে সেটা প্রতিহত করেন। কিন্তু তিনি উল্লাসটা খুব দ্রুত করে ফেলেন, বলের দিকে তার নজর ছিল না। আর সেই সুযোগটা নেন সানচেত। আদায় করে নেন গোল।
সেই গোল হজম করে হার দিয়ে মৌসুম শেষের শঙ্কায় পড়েছিল রিয়াল। তবে প্রতিবার যেমন শেষবেলায় ত্রাতা হতেন বেনজেমা, এবারও তাই হলেন। গোল শোধ করতে মরিয়া মাদ্রিদিয়ানরা সেটা আদায় করে ৭২ মিনিটে। তবে সেটা নিজেদের পায়ের জাদুর নৈপুণ্যে নয়। ডি বক্সের ভেতরে মিলিতাওকে ফাউল করেন জুরি বারচিকে। হলুদ কার্ডের সঙ্গে জরিমানা হিসেবে গুনেন পেনালটি। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন বেনজেমা।
গোলের পরে তাকে নিয়ে সতীর্থরা মেতে উঠেন উল্লাসে। কারণ এটাই যে ছিল তার শেষ ম্যাচ। বিদায়ী ম্যাচটা গোল করে রাঙালেন বেনজেমা।
রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ১৪ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছেন ২০২২'র ব্যালন ডি'অর জয়ী করিম বেনজেমা। ক্লাবের তরফ থেকে আজ এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'রিয়াল মাদ্রিদ এবং আমাদের অধিনায়ক করিম বেনজেমা এই ক্লাবের হয়ে তার অসাধারণ ও অবিস্মরণীয় ক্যারিয়ারের ইতি টানার জন্য রাজি হয়েছে।'
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।