
দেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে সোশ্যাল মিডিয়ায় সব চাইতে বড় হাসির পাত্র ছিল হিরো আলম। রবীন্দ্রসংগীত, ডিবি অফিস আর রাজনীতিতে মাথা ঢোকানোর পরই দেখি প্রায় ‘জাতীয় বীর’ হয়ে গেছেন আলম লাখো মানুষের কাছে!
মাহফুজুর রহমান এখনও জাতীয় বীর হতে পারেন নাই কারণ তিনি এটিএন বক্স ছেড়ে বেরিয়ে আসেননি, হিরো আলমের মতো মাল্টি সেক্টরে এসে প্রকাশ্যে হুজুগে জনগনের সেন্টিমেন্ট নিয়ে নাড়াচাড়া করেননি।
ব্যবসায়ী হিসেবে/এম্পলয়্যার হিসেবে মাহফুজুর রহমানেরও অনেক সুনাম শুনেছি নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তার স্টাফদের মুখে। তার জনপ্রিয়তা এই ঈদেও দেখবেন আকাশ ছোঁয়া। তার গানের অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ টিআরপি।
আপনি কি মনে করেন তার গানে মুগ্ধ হয়ে কোটি মানুষ টিভির সামনে বসছে? অবশ্যই না! এই দর্শকের ৯৯ পারসেন্টই তাকে নিয়ে মজা করছে। হাসাহাসি করার জন্য তার গান দেখছে। সেই হাসাহাসি/ট্রোলের বন্যা বসাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এখন মাহফুজুর রহমান কায়দা করে একটু টেকনিক চেইঞ্জ করলেই আলমের মতো বোকা বানিয়ে ফেলতে পারবেন প্রচুর মানুষকে। তাকে নিয়ে ফান করার বদলে তার পক্ষে ফাইট করতে আসবে অনেকে আমাদের মতো সমালোচকদের বিপক্ষে।
অভিনয়শিল্প/সিনেমার কথা বাদ দিলাম। অনন্ত জলিল, জায়েদ খানরাও বেঁচে থাকবেন সুপারস্টার, স্টার হিসেবে। অভিনয়ের দুই লাইন না জেনেও।
পরিচিত কে যেন বলছিলেন হিরো আলম, অনন্ত জলিলরাই আমাদের বর্তমান রুচির আসল মাপকাঠি।
চ্যালেঞ্জ করতে পারলাম না তার মতামতকে।
লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক
(লেখাটি লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া)
আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক রীতি-নীতি অনুযায়ী, বয়স্কদের জন্য আলাদা নিবাস অনেকটা 'বনবাসে' যাওয়া বা পাঠানোর মতোই ঘটনা
আধুনিক জমানায় বৃদ্ধাশ্রম একটি জনপ্রিয় কনসেপ্ট। উন্নত দেশে ডে-কেয়ার সেন্টারের পাশাপাশি ওল্ড হোমও জনপ্রিয়। পাশ্চাত্য ধারণায় তাড়িত হয়ে আমাদের দেশেও প্রবীণ নিবাস, ওল্ড হোম বা বৃদ্ধাশ্রম ক্রমেই আলোচিত হয়ে উঠছে।
বিপক্ষে— বৃদ্ধাশ্রম নয়, পরিবারই হোক বয়স্কদের ঠিকানা
আমাদের দেশের যৌথ পরিবারের হই-হুল্লোড়ের মধ্যে আগে যখন শুনতাম বিদেশে নাকি বুড়ো হলে মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসে, তখন ওসম দেশের লোকদের প্রতি ঘৃণা ও করুণা হতো
মনুসংহিতায় চতুরাশ্রমের তৃতীয় আশ্রম ‘বানপ্রস্থ’ কি কেবলই একটা ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক এষণা, নাকি নীরবে ও শান্তিপূর্ণভাবে সামাজিক ক্ষমতা হস্তান্তর। অন্যভাবে বললে সংসারের বোঝা নামিয়ে বা দায়িত্ব শেষ করে নিজেকে সময় দেওয়ার, ফেলে আসা জীবনকে অবসরে উদযাপনের সুযোগ।
পক্ষে— তবুও শান্তি তবু আনন্দ
নানা অপপ্রচার, নেতিবাচক সমালোচনার মধ্যে ভারতের জম্মু কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে জি ২০ সম্মেলনের পর্যটন খাতের বিকাশ নিয়ে কয়েকটি অধিবেশন শুরু হল ২২ মে। গত কয়েক দিন থেকে সম্মেলনে অংশ নিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতিনিধিরা আসতে শুরু করেছেন। চীন বাদে অন্য সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা পর্যটন সম্পর্কিত তৃতীয় ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের জন্য সোমবার শ্রীনগরে পৌঁছেছেন। 'অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের জন্য ফিল্ম টুরিজম' শীর্ষক একটি পার্শ্ব ইভেন্টের মাধ্যমে তিন দিনের বৈঠকের সূচনা হয়। ভারত সভাপতি হিসাবে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বাংলাদেশকে ২০২৩ সালের জি-২০ প্রক্রিয়ায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে।‘ এটা বাংলাদেশকে খাদ্য এবং জ্বালানি নিরাপত্তা কিংবা পরিবেশের জন্য জীবনযাত্রা কিংবা নারীর নেতৃত্বে উন্নয়ন, সব ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ হওয়ার এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জি ২০ এর প্রধান সমন্বয়কারী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
এ প্রসঙ্গে জি ২০ এর প্রধান সমন্বয়কারী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, জি-২০ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ হওয়ার এক অনন্য সুযোগ। তিনি আরও বলেছেন জি-২০-এর সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ শুধু ভারতের জন্যই সুযোগ নয়; বরং সব উন্নয়নশীল দেশের জন্যও এটা একটা বিরাট সুযোগ। বিশেষ করে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য সুযোগ তো বটেই। তিন দিনের শীর্ষ সম্মেলন ঘিরে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তিন দিনের বৈঠকে আগের বৈঠকগুলোর তুলনায় বিদেশি প্রতিনিধিদের সর্বাধিক অংশগ্রহণ দেখা যাবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অশান্ত কাশ্মীরে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই সম্মেলন করছে স্বাগতিক ভারত। বিশ্বকে দেখাতে চাইছে যে সেখানকার জীবনযাত্রা স্বাভাবিক। ধারণা করা হচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীরে জি-২০ সম্মেলন বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতির একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। নতুন নতুন উন্নয়ন পরিকল্পনা এ অঞ্চলের নাগরিকদের জীবনের মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেছেন, কাশ্মীরে পরিবর্তন এসেছে এবং ধর্মঘটের ডাক আর নেওয়ার কেউ নেই। এখানে শহরের কেন্দ্রস্থল সহ কাশ্মীর জুড়ে বাজারগুলি সারা দিন খোলা ছিল এবং বুলেভার্ড রোডে ট্র্যাফিক ডাইভার্সন ব্যতীত লোকজনের চলাচল বা পরিবহনে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না।
ইতিমধ্যে কাশ্মীরের চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে।’ জি২০ ফোরামের বর্তমান সভাপতি হিসেবে ভারত ৫৫টি স্থানে ২১৫টি অধিবেশনের পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে অন্তত চারটি অধিবেশনে পর্যটনের ওপর আলোকপাত করা হবে। পর্যটনের ওপর তৃতীয় জি ২০ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা চলবে আগামী ২৪ মে পর্যন্ত শ্রীনগরে। ভারত বর্তমানে জি-২০-এর সভাপতি। শিল্পোন্নত ১৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে জি -২০ গঠিত। বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) 80 শতাংশ এই দেশগুলোর হাতে।
দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ ড. সমীরা গুপ্তা বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে জি ২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে এই অঞ্চলের অপার সম্ভাবনা বিশ্বের কাছে তুলে ধরার এক অনন্য সুযোগ পেয়েছে ভারত। সম্মেলনে কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরা হচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করছে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে উৎসাহিত করছে। তিনি আরও বলেন, "জি ২০ সম্মেলন কাশ্মীরকে বৈশ্বিক মানচিত্রে স্থান দিয়েছে, এটিকে বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং পর্যটনের জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত করার অনুমতি দিয়েছে৷ এই এক্সপোজার নিঃসন্দেহে অবদান রাখবে উপত্যকার আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য।"
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় উদ্যোগগুলি জম্মু ও কাশ্মীরের অবকাঠামো উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন ভারতের অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ডঃ রাজেশ ভার্মা। তিনি বলেন অত্যাধুনিক বিমানবন্দর, মহাসড়ক এবং আধুনিক শহুরে অবকাঠামো নির্মাণ এই অঞ্চলে সংযোগ বৃদ্ধি করেছে এবং ব্যবসা করার সহজতর করেছে। এই উন্নয়নের ঢেউ শুধুমাত্র স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনকে উন্নত করেনি বরং বিনিয়োগ ও চাকরির সুযোগের দরজাও খুলে দিয়েছে। তার মতে, "জি-২০ উদ্যোগের ফলে পরিকাঠামোর আপগ্রেড গুলি কাশ্মীরের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে, বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে এবং এর নাগরিকদের জীবনযাত্রার সামগ্রিক মান উন্নত করবে।
স্থানীয় জনগণের ক্ষমতায়নের প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে, জম্মু ও কাশ্মীরে জি-২০ উদ্যোগ দক্ষতা উন্নয়ন এবং উদ্যোক্তার ওপর জোর দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সামাজিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ডক্টর আয়েশা খান। তিনি বলেন, বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, বৃত্তিমূলক কোর্স এবং ব্যবসায়িক ইনকিউবেটর গুলির মাধ্যমে, উদ্যোগগুলি উদ্যোক্তার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে এবং একটি দক্ষ কর্মী বাহিনী তৈরি করতে জি ২০ সম্মেলনে বিশদ আলোকপাত হবে। দক্ষতা বিকাশ এবং উদ্যোক্তার ওপর জোর দেওয়া কাশ্মীরের যুবকদের ক্ষমতায়ন করবে, তাদের এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে এবং একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করার অনুমতি দেবে।
জম্মু ও কাশ্মীরের অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এটিকে একটি প্রধান পর্যটন গন্তব্য করে তুলেছে। জি-২০ উদ্যোগগুলি উপত্যকায় পর্যটনের প্রচার, বিশ্ব ভ্রমণকারীদের আকৃষ্ট করার এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙা করার ওপর জোর দিয়েছে। পর্যটন বিশেষজ্ঞ ড. রাঘব মালহোত্রা বলেছেন, জি-২০ উদ্যোগগুলি কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় গতি প্রদান করেছে। দর্শনার্থীদের এই আগমন শুধুমাত্র রাজস্ব তৈরি করবে না বরং সাংস্কৃতিক বিনিময়কেও উৎসাহিত করবে এবং শান্তি ও বোঝাপড়ার প্রচার করবে।
এত কিছুর মধ্যেও নয়াদিল্লি ভারত-শাসিত কাশ্মীরকে তার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে আনার পর থেকে, সরকার বেশ কয়েকটি আইন ও নীতি প্রয়োগ করেছে যা নিয়ে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে উপত্যকার কাশ্মীরিদের মধ্যে। তারা বলেছে তাদের অধিকার ও সংগ্রামকে দুর্বল করার লক্ষ্যে এসব আইন ও নীতি প্রয়োগ করা হয়েছে। এ রকম একটি অবস্থার মধ্যে কাশ্মীরে জি ২০ সম্মেলন আয়োজন করতে ভারতকে বেশ সতর্কতা ও অনেক বহি শত্রুর হুমকি মোকাবিলা করতে হয়েছে। স্থানীয় এক মানবাধিকার কর্মী বলেন, কাশ্মীরের জনগণের নিরাপত্তার অনুভূতি শুধু সম্মেলন দিয়ে নিশ্চিত করা যাবে না। তিনি বলেন এমন বিশাল একটি সম্মেলনের জন্য এ অঞ্চলে আমাদের একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী থাকা উচিত ছিল এবং আমাদের তা নেই। আমি আশা করি বিশ্ব এই বিষয়গুলি লক্ষ্য করবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান আল জাজিরাকে বলেছেন, ভারত, জি২০ ইভেন্টের মাধ্যমে এই অঞ্চলে শান্তি রয়েছে বলে দাবি করতে চায়। তিনি বলেছিলেন। আসলে, নয়া দিল্লির জন্য, শ্রীনগরে এই সভা অনুষ্ঠিত করার অর্থ হল 'সব ঠিক আছে' এবং 'সব স্বাভাবিক'-এর বার্তা বহির্বিশ্বে প্রচার করা।
জি ২০ সম্মেলন নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফার্নান্ড ডি ভারেনেস বলেছেন, কাশ্মীর নয়াদিল্লির প্রত্যক্ষ শাসনের অধীনে আসার পর থেকে "ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের" ঘটনা ঘটেছে এর মধ্যে রয়েছে অত্যাচার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, কাশ্মীরি মুসলমান এবং সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অধিকার অস্বীকার করা, বিতর্কিত অঞ্চলে জি-২০ বৈঠকের মাধ্যমে "কাশ্মীরি মুসলিম ও সংখ্যালঘুদের গণতান্ত্রিক এবং অন্যান্য অধিকারের নৃশংস ও দমনমূলক অস্বীকৃতি" স্বাভাবিক করার জন্য ভারতের এই আয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। যদিও জেনেভায় জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশন "ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক অভিযোগ" বলে তার ওই বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে নয়াদিল্লি-ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক সরল শর্মা মনে করেন এই বৈঠকটি কেবল কাশ্মীরের পর্যটন সম্ভাবনাই নয়, এর অন্তর্নিহিত লক্ষ্য হল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান একটি ধারণাকে ভেঙে দিয়ে নতুন ধারণার জন্ম দেওয়া যে কাশ্মীরে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়েছে। অতএব, এই সভার স্থান হিসাবে শ্রীনগরের নির্বাচন তাৎপর্যপূর্ণ। শর্মা বলেন, যদিও কিছু দেশ, যেমন পাকিস্তান, শ্রীনগরে জি ২০ বৈঠক আয়োজনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভারতের সমালোচনা করার চেষ্টা করে আসছে, এটা মনে রাখা অপরিহার্য যে পাকিস্তান জি ২০ গ্রুপের সদস্য নয়। তাই তাদের আপত্তির কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই।
(প্রকাশিত লেখার আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায় সম্পূর্ণরূপে লেখকের, এর কোনো প্রকার দায়ভার দেশ রূপান্তর নেবে না)
সাম্প্রতিক আবহাওয়ার চরমভাবাপন্নতায় দেশে সাধারণ জণগণের মধ্যেও এক ধরনের পরিবেশ সচেতনতা তৈরি হয়েছে। একে কাজে লাগাতে হবে। বলা হচ্ছে, গত ৫০ বছরের মধ্যে রেকর্ড তাপমাত্রা দেখা দিয়েছে। ফলে, এ পরিস্থিতিতে পরিবেশ রক্ষায়, গাছপালা-প্রকৃতি বাঁচাতে সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষকেও সচেতন হতে হবে। না হলে গাছ রক্ষার এই আপাত নিরীহ ধরনের দাবি বড় হয়ে উঠতে পারে।
শ্বাপদসংকুল, শ্বাপদসমাকীর্ণ বিণ, হিংস্র জন্তুতে পূর্ণ। অভিধানে এমন বলা আছে। অর্থাৎ এমন একটি জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর বা প্রাণসংহারী হতে পারে― সেটি নির্দেশ করতে শব্দটি আমরা ব্যবহার করে আসছি। তো সেই রামও নেই অযোধ্যাও নেই। মানে, সেই জঙ্গল কেটে মানুষ সেই সব কথিত হিংস্র প্রাণীদের কবেই নির্বাসনে পাঠিয়েছে। আর সেখানে জনপদ প্রতিষ্ঠা করে নগরায়ণের নামে, উন্নয়নের নামে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে অবশিষ্ট প্রাণ-প্রকৃতিই হুমকির মুখে। যা এমন এক চরাচর রচনা করেছে যাকে এই প্রাণ-প্রকৃতির নিরাপত্তা ও টিকে থাকার জন্য হুমকিস্বরূপ এক মনুষ্যসংকুল এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করার সময় এসেছে। মনুষ্যসংকুল, জনাকীর্ণ এলাকা, হিংস্র মানুষে পূর্ণ―যা প্রাণ-প্রকৃতি সংহারী।
অবস্থাদৃষ্টে এমনটা ভাবা যেতে পারে। যেখানে পৃথিবীটা হওয়ার কথা ছিল 'পাখি-গাছ-মানুষ সবার' সেখানে বিশ্বটা হয়ে পড়ছে প্রাণ-প্রকৃতি সংহারী মনুষ্যসংকুল। সে ক্ষেত্রে উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বন-জঙ্গল, নদী-নালা-জলাশয় ধ্বংস, গাছপালা, পাহাড় কেটে সাফ করতে সিদ্ধহস্ত নাছোড়বান্দা এক শ্রেণির কর্তৃপক্ষ আমরা পেয়েছি; যাদের কারণে বাংলাদেশকে পৃথিবীর প্রাণিকুল ও প্রকৃতির জন্য ভয়াল মনুষ্যসংকুল এলাকা বলে ঘোষণা দেওয়া যায়। কিছুদিন পর পর উন্নয়নের নামে, সৌন্দর্যবর্ধনের নামে গাছপালা, পাহাড় কাটা থেকে শুরু করে জলাশয় ধ্বংসের বিরুদ্ধে এখানকার মানুষদের দাঁড়াতে হয়। পরিহাস হচ্ছে, কিছু মানুষের এই অপকর্মের বিরুদ্ধে যে কতিপয় মানুষ দাঁড়াচ্ছেন নিয়মিত- তাতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। উন্নয়নের, সৌন্দর্যের দোহাই দিয়ে সারা দেশে নির্বিচারে প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ এবং বৃক্ষনিধন চলছেই। কিছুতেই ওই ক্ষমতাবান কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হচ্ছে না। এই কিছু না হওয়ার ফলে গাছ কাটা চলছে, বন, পাহাড়, জলাশয় ধ্বংস চলছে আর পৃথিবীটা উষ্ণ হচ্ছে- গায়ে লাগছে গরম।
সম্প্রতি রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সাত মসজিদ সড়কের সড়ক-বিভাজকের ওপর একই অজুহাতে, মানে উন্নয়ন ও সৌন্দর্যের নামে গাছ কাটার প্রতিবাদ চলছে। প্রতিবাদকারীরা গাছ রক্ষা করেই কথিত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। এ জন্য তারা ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের সঙ্গে বসতেও চেয়েছেন। মেয়র মহোদয়ের সময় হয়নি বা তাদের সঙ্গে বসেননি। তবে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি সাত মসজিদ সড়কের গাছ রক্ষার আন্দোলনকারীদের গাছের জন্য মর্মাহত ও আবেগি বলে উল্লেখ করে সামান্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বোঝাই যাচ্ছে- এই রেকর্ড তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়া দিনের মধ্যে বসেও গাছপালা, প্রাণ-প্রকৃতির চেয়ে মেয়র মহোদয়ের কাছে উন্নয়ন ও সৌন্দর্য প্রকল্প জরুরি। এখানে গাছ কাটার জন্য টাকা, ফের গাছ কেনার জন্য ও সেগুলো লাগানোর জন্য টাকা।
প্রশ্ন হচ্ছে মেয়রের কথামতো এই গাছকাটার প্রতিবাদ করাটা কেবল কিছু মানুষের মর্মাহত হওয়ার কি না। জানি না এ ধরনের প্রকল্পে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতির বিষয় থাকে কি না। যতদূর বুঝি- বিষয়টা আইনি। মেয়র অবশ্য কথা দিয়েছেন যে একটি গাছের বদলে সেখানে তিনটি করে গাছ লাগানো হবে। এখানে কয়েক স্তরের আবেগের মাত্রা রয়েছে। যা মেয়র কথিত আন্দোলনকারীদের আবেগকে ছাড়িয়ে যাবে। প্রথমত দশ/পনেরো বছরের একটি প্রাপ্তবয়স্ক গাছ কেটে তিনটি চারাগাছ লাগানো হবে। যেকোনো প্রকল্পে গাছ কাটা নিয়ে কথা উঠলেই অবশ্য এমন ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, চারাগাছ আর প্রাপ্তবয়স্ক গাছের উপযোগিতা কী এক? চারাগাছ লাগানোর পর তার রক্ষণাবেক্ষণ ও টিকে থাকার প্রশ্নও রয়েছে। দ্বিতীয়ত, সাত মসজিদ রোডের কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কাঁঠাল ও বটগাছের মতো বৃক্ষ কেটে মেয়র বাগানবিলাস, চামেলি, রঙ্গন ফুলের গাছ লাগাবেন বা লাগাচ্ছেন। এখানে বৃক্ষ ও ফলদ গাছ কেটে ফুলের গাছ লাগানোতে কর্তৃপক্ষের সৌন্দর্যজ্ঞানের বলিহারি প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে কাহিনি হয়তো আরও গভীর, তাই কর্তৃপক্ষের আবেগও বেশি গাছ কেটে ফুলগাছ লাগানোতে। ধরেন, একটা ব্যস্ত সড়কে কৃষ্ণচূড়া বা বটগাছ যে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে পারবে, ছায়া দিতে পারবে নিঃসন্দেহে ফুল গাছের জন্য সেটা সম্ভব না। ফলে এখানে নার্সারিগুলো থেকে বারবার ফুলগাছ কেনা ও তা লাগানোর বিষয় আছে, আছে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ। তৃতীয়ত, জানামতে প্রত্যেক মেয়রের প্রতিবছর গাছ লাগানোর জন্য বেশ মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দ থাকে। সেই টাকা কীভাবে খরচ হয়, আদৌ খরচ হয় কি না তা আমাদের জানা নেই।
উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধন ইত্যাদি করতে হলে যদি সব সময় আমাদের নির্বিচারে গাছই কাটা লাগে, ওই সব গাছে আশ্রয় নেওয়া পাখ-পাখালি, প্রাণীদের আবাস ধ্বংসই করা লাগে, তাহলে বলতে হয় আমাদের কর্তৃপক্ষের সেই অর্থে তার যোগ্যতা নেই। দিনের পর দিন পরিবেশবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ, নাগরিকরা গাছ কাটা, জলাশয় ধ্বংস বন্ধের দাবি, পরামর্শ দিয়ে আসছেন। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশে গাছপালা, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করেই উন্নয়ন হয়, অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার হয়। নগর কর্তৃপক্ষকে কখনোই সে ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না, যাতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না, আবার অবকাঠামো নির্মাণ বা সংস্কারও হবে। সিটি করপোরেশনের এসব উন্নয়ন কাজের টেন্ডারে 'প্রকল্প এলাকার গাছপালা, পরিবেশের ক্ষতি করা যাবে না' এমন কোনো নির্দেশনা থাকে না কেন জানি না। নাকি থাকে, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান তা মানে না! যতদূর জানি, ঢাকার দুই সিটিতেই বাগান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা বিভাগ আছে, যারা সড়ক বিভাজকের গাছপালা ছেটে, পরিষ্কার করে থাকেন। এই বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের কি কোনো প্রশিক্ষণ আছে? কোন গাছ কতটুকু ছাঁটা উচিত, কীভাবে ছাঁটা উচিত―এসব তো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক সময় বেশি বা ভুলভাবে ডালপালা-কাণ্ড ছাঁটার কারণেও অনেক গাছ মারা যেতে পারে।
যেকোনো দাবি নাগরিকরা জানাতে পারেন। কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের দূরে ঠেলে না দিয়ে, বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে না দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা। নাগরিকদের দাবি যৌক্তিক হলে তা মেনে নেওয়া উচিত। এতে কর্তৃপক্ষের হার হয় না, বরং প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষ জনগণের হয়ে ওঠে। আশা করি ইতিমধ্যেই ধানমণ্ডির সাত মসজিদ সড়কের যে ক্ষতি হয়েছে তা আমলে নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্তৃপক্ষ পরিবেশ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসবেন এবং একটি সুন্দর সমাধান হবে। এমনও হতে পারে এই পরিবেশ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসার ফলে কর্তৃপক্ষ এমন একটি সমাধানে পৌঁছাবেন, যা ঢাকা শহরের আগামী উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিবেশের ক্ষতি না করার একটি মডেল তৈরি হবে।
শেষ যে কথা বলতে চাই― সাম্প্রতিক আবহাওয়ার চরমভাবাপন্নতায় দেশে সাধারণ জণগণের মধ্যেও এক ধরনের পরিবেশ সচেতনতা তৈরি হয়েছে। একে কাজে লাগাতে হবে। বলা হচ্ছে, গত ৫০ বছরের মধ্যে রেকর্ড তাপমাত্রা দেখা দিয়েছে। ফলে, এ পরিস্থিতিতে পরিবেশ রক্ষায়, গাছপালা-প্রকৃতি বাঁচাতে সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষকেও সচেতন হতে হবে। না হলে গাছ রক্ষার এই আপাত নিরীহ ধরনের দাবি বড় হয়ে উঠতে পারে।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল বাংলাদেশের একটি অন্যতম নান্দনিক স্থাপনা হতে যাচ্ছে। বিশ্বের সুন্দরতম সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আদলে তৈরি হচ্ছে তৃতীয় টার্মিনাল। যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির জন্য যারপরনাই সচেষ্ট বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ। বর্তমানে ব্যবহৃত প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালের প্রায় চার গুন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চলতি বছর অক্টোবরে উদ্বোধনের অপেক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে তৃতীয় টার্মিনাল। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর বৃহৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল অন্যতম।
প্রায় ১৫ মিলিয়ন প্রবাসী বাংলাদেশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে যাতায়াত করে থাকে। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৮০ লক্ষ যাত্রী ১ম ও ২য় টার্মিনাল ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে গমন করে থাকে। তৃতীয় টার্মিনালের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গরূপে শুরু হলে বছরে প্রায় ২ কোটি যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে।
তৃতীয় টার্মিনালের যাত্রা শুরু হলে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, সেবার আধুনিকতা উপভোগ করার সুযোগ তৈরি হবে যাত্রীদের। সেবার আধুনিকতা বাংলাদেশি এয়ারলাইনসগুলো কতটুকু উপভোগ করতে পারবে কিংবা আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ারের কত অংশই বা থাকবে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোর কাছে। তা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে।
আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ারের বৃহদাংশ বিদেশি এয়ারলাইনগুলোর কাছে। মার্কেটের প্রায় ৭৫ শতাংশ রয়েছে বিদেশি এয়ারলাইনগুলোর কাছে আর বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসসহ অন্যান্য দেশীয় বিমান সংস্থার কাছে অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ। বর্তমানে ৩৪ বিদেশি এয়ারলাইন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে যাত্রী বহন করছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ-আমেরিকায় অবস্থান করছে। যাত্রী পরিসংখ্যানে আকাশ পরিবহনে বাংলাদেশ একটি বৃহৎ মার্কেট। এই মার্কেটকে নিজেদের করে নিতে বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
প্রথমবারের মতো আফ্রিকার অন্যতম এয়ারলাইন্স ইজিপ্ট এয়ার সম্প্রতি ঢাকা থেকে কায়রোতে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে। ইজিপ্ট এয়ারের মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে শক্তিশালী আকাশপথে যোগাযোগ রয়েছে। আফ্রিকার আরেকটি এয়ারলাইনস ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। বাংলাদেশি যাত্রীরা নতুন এয়ারলাইনসের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ার গারুদা ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম কোরিয়ান এয়ার, ইরান এয়ার, ইরাকি এয়ারওয়েজ বাংলাদেশে যাত্রী পরিবহন করার জন্য পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। ভারতের পাঁচটি এয়ারলাইনস বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানা যাচ্ছে আরও দু’টি ভারতীয় এয়ারলাইনস বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করতে আগ্রহী।
নয় বছর পূর্বে স্থগিত হওয়া পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (পিআইএ) পুনরায় ঢাকার সঙ্গে আকাশ পথে সংযোগ স্থাপন করতে চায়। এ ছাড়া ১৫ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিশ্বের অন্যতম এয়ারলাইনস ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এখানে উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি প্রবাসীদের একটা বড় অংশ বসবাস করে থাকে।
মালয়েশিয়া ভিত্তিক বাজেট এয়ারলাইনস এয়ার এশিয়ার কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশি প্রবাসীরা অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জাপানে বসবাস করে থাকে, যেখানে এয়ার এশিয়ার আকাশ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সুদৃঢ়। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে এয়ার এশিয়ার নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। বর্তমানে ঢাকা থেকে প্রতিদিন তিনিটি করে ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা ও প্রতিদিন একটি করে ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা রুটে এয়ার এশিয়া ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আর কুয়ালালামপুর থেকে প্রতিদিন ছয়টি কুয়ালালামপুর থেকে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশি যাত্রীদের কুয়ালালামপুর হয়ে ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) এর এমিরেটস, ফ্লাই দুবাই, ইতিহাদ ও এয়ার অ্যারাবিয়া বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করছে, যা অ্যাভিয়েশনের ‘ফিফথ ফ্রিডম রাইট’ নিয়ে বাংলাদেশের সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছে। নতুন করে ইউএই এর বাজেট এয়ারলাইনস উইজ এয়ার বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে।
আগ্রহী নতুন এয়ারলাইনসগুলো ও ফিফথ ফ্রিডম রাইটের কারণে যদি এয়ারলাইনসগুলো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের পর বাংলাদেশ মার্কেটে প্রবেশ করে, তাহলে বর্তমানে আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ারের দেশীয় এয়ারলাইনসের ২৫% থেকে কমে তা ২০% এর নিচে নেমে আসার সম্ভাবনা থাকবে। বর্তমানে জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ আসে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড টুরিজম খাত থেকে। আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ার যদি কমে যায় তাহলে তা জিডিপিতেও এর প্রভাব পড়বে।
দেশীয় এয়ারলাইনসের কাঠামোগত অবস্থান বিবেচনায় আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সঠিকভাবে নির্ধারিত না হলে জাতীয় বিমান সংস্থাসহ সকল দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে। দেশের অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনে, দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জিডিপিতে অংশীদারিত্ব বাড়ানোর জন্য অ্যাভিয়েশন ও পর্যটন খাতের উন্নয়নে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই জরুরি।
লেখক: মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস
কবি আসাদ মান্নান ‘চাই তাঁর দীর্ঘ আয়ু’ কবিতায় শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে লিখেছেন-‘মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মহান পিতার স্বপ্নবুকে/নিরন্তর যিনি আজ এ জাতির মুক্তির দিশারী/ঘূর্ণিঝড়ে হালভাঙা নৌকাখানি শক্ত হাতে বৈঠা ধরে টেনে/অসীম মমতা দিয়ে পৌঁছুচ্ছেন আমাদের স্বপ্নের মঞ্জিলে, …’
কবির মতে, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী, তিনি মুক্তির দিশারি, মৃত্যুকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছেন নির্ভীকভাবে, আর গভীর মমতা দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট। কবির এই কথাগুলো সত্য হতো না, যদি না ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা নিজ দেশে ফিরে আসতেন। আসলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের ইতিহাস, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এদেশের শাসনকার্যে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় আসীন থেকে মহিমান্বিত রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মহাকালকে স্পর্শ করতে সক্ষম। এর কারণ আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি রবীন্দ্রনাথের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে। তিনি লিখেছেন ‘আমাদের অধিকাংশেরই সুখদুঃখের পরিধি সীমাবদ্ধ; আমাদের জীবনের তরঙ্গক্ষোভ কয়েকজন আত্মীয় বন্ধুবান্ধবের মধ্যেই অবসান হয়।...কিন্তু পৃথিবীতে অল্পসংখ্যক লোকের অভ্যুদয় হয় যাঁহাদের সুখদুঃখ জগতের বৃহৎব্যাপারের সহিত বদ্ধ। রাজ্যের উত্থানপতন, মহাকালের সুদূর কার্যপরম্পরা যে সমুদ্রগর্জনের সহিত উঠিতেছে পড়িতেছে, সেই মহান কলসংগীতের সুরে তাঁহাদের ব্যক্তিগত বিরাগ-অনুরাগ বাজিয়া উঠিতে থাকে। তাঁহাদের কাহিনী যখন গীত হইতে থাকে তখন রুদ্রবীণার একটা তারে মূলরাগিণী বাজে এবং বাদকের অবশিষ্ট চার আঙুল পশ্চাতের সরু মোটা সমস্ত তারগুলিতে অবিশ্রাম একটা বিচিত্র গম্ভীর, একটা সুদূরবিস্তৃত ঝংকার জাগ্রত করিয়া রাখে।’
দেশরত্ন শেখ হাসিনার অবিচল নেতৃত্ব আর মেধার আলোয় বিশ্ব দরবারে আজ অন্য এক আলোকিত বাংলাদেশ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত একটি উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই পথে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত প্রায় ১৪ বছরের বেশি সময়ে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, কৃষিখাত, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অর্থনীতি, নারীর ক্ষমতায়ন ও প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় সীমার মধ্যে থেকেছে। এ জন্য সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে মর্যাদাকর জাতিসংঘ পুরস্কার পেয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বেশ কয়েকজনের ফাঁসির রায় এবং ৭১ ’র যুদ্ধাপরাধীদের বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর করে শেখ হাসিনার সরকার বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছে; এ সরকারের আমলে জেলহত্যা মামলার বিচারও সমাপ্ত হয়েছে। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৬ মার্চ জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদা দিয়েছে। নারী-পুরুষের সমতা (জেন্ডার ইক্যুইটি) প্রতিষ্ঠায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার ওপরে আছে বাংলাদেশ। কোন কোন ক্ষেত্রে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। করোনাকালীন বৈশ্বিক মহামারীতেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সব প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে।
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দূরদর্শী অসাধারণ নেতৃত্ব ও মানবদরদী হৃদয় নিয়ে করোনা সঙ্কটে যেভাবে দেশের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, তা দেশে ও বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্বের জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিনে করোনা মোকাবেলায় সফল নারী নেতৃত্বের তালিকায় (৮ জনের) স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাকালীন দুর্যোগেও অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে আমাদের দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়েছে, এটা বিশ্বাস করা যায়?
কিন্তু আজকের এই বাংলদেশকে আলোকিত অভিযাত্রায় আনতে অনেক লড়াই-সংগ্রাম, চড়াই-উৎরাই, হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। ১৯৮১ সালের ১৭ এপ্রিল সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ও জীবনের মায়া ত্যাগ করে তিনি যদি বাংলাদেশে না ফিরতেন তাহলে মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দু লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিয়ে অর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন বাংলাদেশ আজ পাকিস্তানের আদলে দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম একটি মৌলবাদী, জঙ্গী ও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হতো। তাই শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ৭৫ ’র ১৫ই আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংশভাবে হত্যা করার পর বিপর্যস্ত বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর এক অনন্য অনুপ্রেরণা, তিনিই দেশে ফিরে বিভক্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে সামরিক জান্তাকে উৎখাতে আন্দোলনের ডাক দেন। তাঁর ত্য্যাগ, তিতিক্ষা ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসে, তাঁকে বার বার হত্যা চেষ্টা করা হলেও তিনি গণতন্ত্রের পথ থেকে সরে দাঁড়াননি। শেখ হাসিনার অকুতোভয় সাহসী নেতৃত্ব, সততা, মেধা ও প্রজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ আজ আলোকিত অভিযাত্রায় শামিল হয়েছে, এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে।
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ই মে ফিরে এসেছিলেন বলেই বারবার অন্ধকারে ডুবে যাওয়া বাংলাদেশ আজ আলোর মিছিলে, কল্যাণের পথে, উন্নয়নের জোয়ারে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। মীরজাফর খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে আমাদের সেনাবাহিনীর কতিপয় স্বাধীনতা বিরোধী, পাকিস্তানপন্থি ক্ষমতালোভী অফিসার সেদিন যে নজীরবিহীন বর্বরোচিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছিল তা বাঙালির গৌরবকে ম্লান করেছে এবং বাঙালিকে চিরদিনের জন্য ভাসিয়েছে অশ্রু সাগরে। ঘাতকরা এতটাই পাষাণ ছিল যে, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশু কেউ রক্ষা পায়নি ঘাতকদের হাত থেকে। খুনী চক্র চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বংশের নাম-নিশানা চিরদিনের জন্য মুছে ফেলতে। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেদিন দেশের বাইরে অবস্থান না করলে তাদের জীবনেও নেমে আসতো একই নির্মম পরিণতি। কিন্তু ১৯৮১ সালের ১৭ই মে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার আগের ছয়টা বছর কি ভয়ংকর দুঃসহ যন্ত্রনায় কেটেছে শেখ হাসিনা আর তার ছোট বোন শেখ রেহানার, কল্পনা করতেও ভয় লাগবে আজ আমাদের।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বেলজিয়ামের ব্রাসেলস থেকে শেখ হাসিনা ও ওয়াজেদ পরিবারের প্যারিসে যাওয়ার কথা ছিল। সে সময় ওয়াজেদ পরিবার ও শেখ রেহানা আমন্ত্রিত হয়ে বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসভবনে অবস্থান করছিলেন। ভোর ৬টার দিকে হঠাৎ জার্মানির বনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ফোন করে জানালেন, বাংলাদেশে একটি মিলিটারি ক্যু হয়েছে, কোনভাবেই প্যারিসের দিকে না গিয়ে তাঁরা যেন তখনি জার্মানী চলে আসেন। এই খবরটা পাওয়া মাত্র বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হক ওয়াজেদ পরিবার ও শেখ রেহানাকে যত তাড়াতাড়ি তার বাড়ি থেকে বিদায় দিতে পারেন সেই ব্যবস্থায় করলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা Hasina: A Daughter’s Tale’ চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাতকারে বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার খবর শুনে সানাউল হক হুমায়ুন রশীদ সাহেবকে বললেন, আপনি যে বিপদটা আমার ঘাড়ে দিয়েছেন ওটা আপনি এখন নিয়ে যান। তিনি সাক্ষাৎকারে আরো বলেন, আমাদের ওনার বর্ডার পর্যন্ত পোঁছে দেওয়ার কথা, পৌঁছে দিলেন না, সোজা বলে দিলেন গাড়ি নষ্ট। অথচ ১৪ই আগস্ট রাতে এই রাষ্ট্রদূতই অতিথিদের সম্মানে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের আয়োজন করেছিল। উক্ত চলচ্চিত্রে সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা বলেছেন, কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে মানুষের কী পরিবর্তন, ক্যান্ডেল লাইট ডিনার থেকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া-এই অবস্থা। জননেত্রী শেখ হাসিনার এক বান্ধবীর স্বামী তিনি ব্রাসেলসে বাংলদেশস্থ দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন। পরে তাঁর গাড়িতে শেষ পর্যন্ত তাঁরা বর্ডার পৌঁছাতে পারেন। বর্ডারের ওপাশে জার্মানীর রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী তাঁর সেক্রেটারিকে গাড়িসহ পাঠিয়েছিলেন তাঁদেরকে নেওয়ার জন্য। ফলে শেষ পর্যন্ত বহু কষ্টে তারা জার্মানীতে হুমায়ূন রশীদ সাহেবের কাছে পৌঁছলেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা 'Hasina: A Daughter’s Tale’ চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমাকে রাত্রে হুমায়ুন সাহেব আলাদা করে ডেকে নিলেন, তুমি একটু আসো, উনার ড্রয়িং রুমে উনি এবং উনার স্ত্রী বসা। তখন উনি বললেন, দেখ অনেক চেষ্টা করছি খোঁজ করতে, যতদূর খবর পাচ্ছি, কেউ বেঁচে নাই। শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকারে আরো বলেন, যখন শুনলাম, সত্যি কথা কি, এ কথা শোনার পর বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার শরীরের সমস্ত রক্ত হিমশীতল হয়ে গেছিল, মনে হচ্ছে পড়ে যাব। হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক সান্ত্বনা দিলেন। হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর স্ত্রীও তখন তাঁদের জন্য অনেক করেছিলেন, তিনি তাঁদেরকে জার্মানির Karlsruhe শহরে গাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেন। যাওয়ার সময় ১০০০ জার্মান মুদ্রা তাঁদের হাতে তুলে দিলেন যাতে হাতে কিছু টাকা-পয়সা থাকে। শুধু তাই নয় গরম কাপড় ভরে একটা স্যুটকেসও দিলেন যেন ঠান্ডায় কাজে লাগে।
এসময় জার্মান সরকার তাঁদেরকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে চেয়েছিল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁর রাষ্ট্রদূতকে আমাদের রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করতে বললেন। রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে চেয়ে যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো তাঁর রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে যোগাযোগ করলেন। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন ম্যাসেজ পাঠালেন যে ভারতে যাওয়ার তাঁদের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাঁরা ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২৪ আগস্ট সকাল ৯টায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতীয় দূতাবাসের এক কর্মকর্তা অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে তাঁদেরকে ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দর নিয়ে যান। এরপর, একটি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে করে তাঁরা ২৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টায় দিল্লীর পালাম বিমানবন্দর পৌঁছান। শুরু হয় শেখ হাসিনার নির্বাসিত জীবন। ভারতে আসার পরে বোন আর স্বামী-সন্তানসহ শেখ হাসিনাকে দিল্লীর লাজপাত নগরের ৫৬ রিং রোডে একটি ছোট বাসায় থাকতে দেয়া হয়েছিলো সেফ হোম হিসেবে। ১০ দিন পর্যন্ত শেখ হাসিনার মনে ক্ষীণ আশা ছিলো, হয়তো মা আর রাসেলকে ওরা মারেনি। কিন্তু ৪ঠা সেপ্টেম্বর দিল্লীর সফদরজং রোডে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাসবভনে রাত ৮টার দিকে পৌঁছানোর পর সব হিসেব এলোমেলো হয়ে যায়। সেখানে পৌঁছানোর মিনিট দশেক পরে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এসে হাসিনার পাশে বসেন। তাঁর এক কর্মকর্তাকে জানান, উপস্থিত সকলকে ১৫ই আগস্টের সম্পূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করতে। কর্মকর্তাটি পুরো ঘটনা বলবার মধ্যে বলে উঠলেন যে বেগম ফজিলাতুন্নেসা ও রাসেলও জীবিত নেই। হাসিনা আর সহ্য করতে পারেননি, কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি, শেষ আশাটুকুও নিভে যায় তাঁর। ভগ্ন হৃদয়ে ইন্দিরা গান্ধী তাকে জড়িয়ে ধরেন। এসময় ইন্দিরা গান্ধী ও ভালবাসা সম্পর্কে বলতে গিয়ে Hasina: A Daughter’s Tale চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাৎকারে জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন কথা বলছিলাম, আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি কিছু খেয়েছো? তুমি কি ওমলেট খাবে? টোস্ট খাবে? চা খাবে? তিনি উঠে গিয়ে কাউকে বললেন, সেই ওমলেট, সেই টোস্ট আর নিজে কাপে চা ঢেলে উনি দিলেন। তুমি কিছু খাও, তোমার মুখটা খুব শুকনা, তুমি কিছু খাওনি। শেখ হাসিনা আরো বলেন, আসলে এই স্নেহ ও ভালোবাসাটা এতো খোলাভাবে তিনি ব্যবহার করলেন, এটা ভোলা যায় না, এটা মনে লাগে। তিনি আরো বলেন, সত্যি কথা কি ঐ সময় সব হারাবার পর ওনার সামনে যেয়ে ঐটুকু অনুভূতি মনে হচ্ছিলো যে, না আমাদের জন্য কেউ আছে। শোকে মুহ্যমান দুই বোনের দিনগুলো দিল্লিতে ছোট একটা বাসার দুই রুমের মধ্যে কেটেছে অনেক কষ্ট আর যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে।
এ প্রসঙ্গে Hasina: A Daughter’s Tale’ চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাৎকারে শেখ রেহানা বলেন, আল্লাহর এটা রহমত দুই বোনেকে পাগল বানিয়ে রাস্তায় ফেলেনি। আপা কান্না করে এক পাশে, আমি কান্না করি অন্য পাশের্। তিনি আরো বলেন, আর একটা কখনও বলিনি, এখন ৪০ বছর হয়ে গেছে এখন বলা যায়, আমাদের দিল্লি থাকাকালীন সময় আমাদের নামও পরিবর্তন করতে হয়েছিল, মি. তালুকদার, মিসেস তালুকদার, মিস তালুকদার, আশপাশে যেন কেউ না জানে। এটা কি ব্যাপার, দেশ ছাড়া, ঘর ছাড়া, মা-বাপ ছাড়া, নামও বদলাব, থাকব না এখানে, দরকার নেই। তখন উপায়ও তো নাই। দিল্লিতে জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাক্ষণ এক উদ্বেগের মধ্যে থাকতেন, দেশে কি হচ্ছে, কি হবে।
এ প্রসঙ্গে Hasina: A Daughter’s Tale চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই দেশটাকে স্বাধীন করেছিলেন আমার বাবা, দেশে গণতন্ত্র থাকবে, মানুষের কল্যাণ হবে, কিন্তু সেটা তো হলো না, উল্টো দেশে একটা খুনিদের রাজত্ব কায়েম হয়ে গেল। বিদেশের মাটিতে দুই বোন ক্ষণিকের জন্য ভুলেননি ১৫ই আগস্টের নির্মম ও নৃশংস হত্যার কথা।
এ প্রসঙ্গে Hasina: A Daughter’s Tale চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাৎকারে শেখ রেহানা বলেন, আপা লেখতেন বসে বসে আজকে চিনি কতটুকু, বিস্কুট কতটুকু, সুজি কতটুকু, ওর পার্শ্বে আমার লেখা যে-আল্লাহ তুমি আমাদের কেন বাঁচিয়ে রেখেছ জানি না, কিন্তু ঐ খুনিদের ধরব, বিচার করব ইনশা আল্লাহ, তারিখ দিয়ে লেখা। ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর শেখ রেহানা দিল্লি থেকে লন্ডনে পাড়ি জমান।
'৭৭ এর জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে লন্ডনের কিলবার্নে শেখ রেহানার বিয়ে হয়, পাত্র লন্ডনপ্রবাসী শফিক সিদ্দিকের সঙ্গে। কিন্তু সে বিয়েতে শেখ হাসিনা তাঁর পরিবার নিয়ে অংশ নিতে পারেননি কেবল টিকেটের টাকার অভাবে। ২টি সন্তান নিয়ে টিকেট কেটে লন্ডনে যাওয়ার মতো টাকা তাঁর ছিল না।
এদিকে ১৯৮০ সালে, ভারতে শেখ হাসিনার বাড়িতে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা আসতে লাগলেন। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক কাবুল যাওয়ার সময় এবং সেখান থেকে ফেরার সময় তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন। আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমান, আব্দুস সামাদ আজাদ, তৎকালীন যুবলীগ নেতা আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দিল্লিতে যান। তাদের সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে রাজি করানো। তাঁরা তাঁকে ক্রমাগত বোঝাতে লাগলেন, তাঁর কেন দেশে ফেরা উচিৎ, এ মুহূর্তে এবং দলের ঐক্য বজায় রাখতে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতির পদ গ্রহণের অনুরোধ জানান। শেখ হাসিনা বলতেন, আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় গৌরব। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। ১৯৮১ সালের ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার ঐতিহাসিক ইডেন হোটেলে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সম্মেলনে আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্তটি নেয় যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দিল্লিতে থাকা অবস্থায় তিনি খবর পান, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাঁকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। এর এক সপ্তাহ পরে আওয়ামী লীগের সেই সময়ের শীর্ষ নেতারা দিল্লি যান। আব্দুল মালেক উকিল, ড. কামাল হোসেন, জিল্লুর রহমান, আব্দুল মান্নান, আব্দুস সামাদ আজাদ, এম কোরবান আলী, বেগম জোহরা তাজউদ্দীন, স্বামী গোলাম আকবার চৌধুরীসহ বেগম সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, বেগম আইভি রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ ১৯৮১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে দিল্লি পৌঁছান। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েকটি বৈঠকও করেন তাঁরা। এরপর ড. কামাল হোসেন ও সাজেদা চৌধুরী ছাড়া সবাই ঢাকায় ফিরে যান। কামাল হেসেন ও সাজেদা চৌধুরীর ওপর দায়িত্ব ছিল তাঁরা শেখ হাসিনার ঢাকা ফেরার তারিখ চূড়ান্ত করবেন।
দিল্লিতে থাকাকালীন নাজিমউদ্দিন আউলিয়ার দরবারে যাওয়ার একটি ঘটনাও শেখ হাসিনার মনে দাগ কাটে যা তাঁকে দেশে ফিরতে সাহস যোগায়। এ প্রসঙ্গে Hasina: A Daughter’s Tale চলচ্চিত্রে তথ্য পাওয়া যায়। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দুই বোন নাজিমউদ্দিন আউলিয়ার দরগায় যান, তাঁরা তাঁদের নামসহ কোন পরিচয়ও দেননি, একসময় খাদেম এসে একটা খাতা তাঁদের সামনে ধরলেন সেখানে দুই বোন দেখলেন তাঁদের পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৬ সালের ৯ই এপ্রিল এই দরগায় এসছিলেন, তাঁরা যেদিন গেলেন সেই তারিখটাও ছিল ১৯৮১ সালের ৯ই এপ্রিল। এ পসঙ্গে উক্ত চলচিত্রে এক সাক্ষাৎকারে জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সত্যি কথা বলতে কি একটা সাহস আমার মনে আসলো, আমাকে যেতে হবে, বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে হবে। এই বার্তাটাই মনে হয় পাচ্ছি।
অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ১৭ই মে, ১৯৮১। দিনটি ছিলো রবিবার, ঝড়-বৃষ্টির এক দিন। আওয়ামী লীগের দুই নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ আর কোরবান আলীকে সঙ্গে নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা রওনা দেন ঢাকায়। সেদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকার তেজগাঁওস্থ কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন। সেদিন সকল বাধা ও প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে লাখ লাখ জনতা ঢাকা বিমানবন্দরে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসে। সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনাকে একনজর দেখার জন্য ঢাকায় মানুষের ঢল নেমেছিলো। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয়েছিলো জনসমুদ্রে। ফার্মগেট থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রাফিক বন্ধ ছিল প্রায় ছ’ঘণ্টা। ঢাকা বিমানবন্দরে তিনি বিমান থেকে নামার পর আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা শ্লোগান দেয় ‘হাসিনা তোমার ভয় নাই, আমরা আছি লাখো ভাই’। দেশের মাটিতে নেমে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শেখ হাসিনা। দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘যেদিন আমি বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছিলাম, সেদিন আমার সবাই ছিলো। আমার মা-বাবা, আমার ভাইয়েরা, ছোট্ট রাসেল সবাই বিদায় জানাতে এয়ারপোর্টে এসেছিলো। আজকে আমি যখন ফিরে এসেছি, হাজার হাজার মানুষ আমাকে দেখতে এসেছেন, স্বাগত জানাতে এসেছেন, কিন্তু আমার সেই মানুষগুলো আর নেই। তারা চিরতরে চলে গেছেন।’
তিনি আবেগরুদ্ধ হয়ে বলেন, ‘বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’ বিমানবন্দর থেকে শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাওয়া হয় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে, সেখানে লাখো জনতার উপস্থিতিতে এক সমাবেশে শেখ হাসিনা বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’
এভাবেই ১৯৮১ সালের ১৭ই মে ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন বাংলাদেশের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা।
নেতাজী সুভাষ বসু বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের পথ একেবারে ঋজুপথ নয়। এ পথে নিরবচ্ছিন্ন সাফল্য আসে না, এ পথ বহু বিঘ্নসংকুল, সুদীর্ঘ এবং সর্পিল’।
শেখ হাসিনা নিজেও এ কথা জানতেন। যে কারণে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের জন্য নয়াদিল্লি থেকে ঢাকা রওনা হওয়ার কয়েকদিন আগে মার্কিন সাপ্তাহিক নিউজউইক পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তাঁর স্বদেশে প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা এক হৃদয়গ্রাহী ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ১১ মে নিউজউইক-এ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বক্স-আইটেম হিসেবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, ১৯৭৫ সালে সামরিক চক্র কর্তৃক ক্ষমতা দখলকালে নিহত পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি নিহত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত নন; এমন কী যে সরকারের মোকাবিলা করবেন তার শক্তিকে তিনি বাধা বলে গণ্য করবেন না।
তিনি বলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’
দেশে ফেরার দিন থেকেই শেখ হাসিনা উপলব্ধি করেন কত বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিতে হবে, সামরিক জান্তাদের কত নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হবে। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে শেখ হাসিনা সরাসরি গিয়েছিলেন তাঁদের বাড়ি ৩২ নম্বর ধানমন্ডি যেখানে ১৫ই আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে ৬ বছর আগে বাবা-মাসহ পরিবারের সবগুলো আপনজনকে হারিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কুশীলব ও এই বাংলার মাটিতে রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের পূনর্বাসনকারী প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান তাঁকে সে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেয়। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয় যাতে শেখ হাসিনা সেই বাড়িতে ঢুকতে না পারেন। স্বজনহারা আমাদের এই প্রিয় নেত্রী সেদিন ৩২ নম্বরের সামনের রাস্তাতে বসেই বুকফাটা আর্তনাদে সবার জন্য দোয়া করেছিলেন, আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছিলেন। দেশে ফেরার পর তাঁকে কঠিন এক সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়, পদে পদে হত্যার আশংকা। সামরিক জান্তা এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ৮০ ’র দশকে তাঁকে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার এমনকি গৃহবন্দী হতে হয়, বারবার তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়, হামলা চালানো হয় জনসমাবেশে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সামরিক জান্তা এরশাদের রোষানলে ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি ও নভেম্বর মাসে তাঁকে গৃহবন্দী হতে হয়। ১৯৮৫ সালের মার্চ মাসে তিনি আবারও তিন মাসের মতো গৃহবন্দী ছিলেন। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে মিছিল করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন আটদলীয় জোটের জনসভাস্থল লালদিঘির ময়দানে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনার ট্রাক মিছিলে নির্বিচার গুলি ছুড়েছিলো এরশাদ সরকারের পুলিশ ও সাদা পোষাকধারীরা। তখন পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে ২৪ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৯ জন শেখ হাসিনাকে মানববর্ম তৈরি করে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হন। ৯০ ’র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পরও পরবর্তীতে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বারবার তাঁর উপর হামলা চালানো হয়, এমন কি নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয় জনসমাবেশে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলার কোটি কোটি মানুষের নয়নের মণি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হত্যার জন্য বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ-এ আওয়ামী লীগের জনসভায় চালানো হয় স্মরণাতীত কালের ভয়াবহ নারকীয় গ্রেনেড হামলা। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমান ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী মাহবুবসহ আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে নিহত হয়েছেন। সেদিনও আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী শরীরে আজও স্প্রিন্টার আর বুলেটের গর্ত নিয়েও তৈরি করেছিল মানব দেয়াল, মৃত্যু দিয়ে প্রিয় নেত্রীর নিশ্চিত মৃত্যুকে ফিরিয়েছেন তাঁরা। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর ক্ষমতা নয়, দেশের মানুষের অধিকার আদায়, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেল হত্যার বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদেরবিচার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন শেখ হাসিনা। এসব কঠিন কাজ সম্পন্ন করতে এ পর্যন্ত তিনি শত্রুপক্ষের কমপক্ষে ২০ বার হত্যা চেষ্টার সম্মুখীন হন।
শেখ হাসিনাও তাঁর বাবার মতো দেশের মানুষের প্রতি টান, তাদের প্রতি একপ্রকার দায়বদ্ধতার টান থেকে কখনোই বের হতে পারেননি। আর তাই সেই রক্তের ডাকে সাড়া দিয়ে মত্যুভয় উপেক্ষা করে তিনি ফিরেছিলেন ১৯৮১ সালের ১৭ই মে স্বদেশের মাটিতে।
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনের জন্যে বিশাল গুরুত্ব বহন করে। কারণ শেখ হাসিনা ফিরে এসেছেন বলেই এদেশে সামরিক জান্তার পতন হয়েছে, গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে শক্ত হাতে দলের হাল ও গণতন্ত্রের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে সহস্র বাধা অতিক্রম করে জনগণের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে দেশে ফেরার ১৫ বছরের মাথায় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন। এর ফলে অন্ধকার থেকে বাংলাদেশ আবার ফিরে আসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকিত ধারায়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তিনি সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি কুখ্যাত ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বিচার শুরু করেন এবং তাঁর শাসনামলেই ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের আদালত কর্তৃক ঘোষিত বিচারের রায়ে প্রকাশ্য ফায়ারিং স্কোয়াডে ১৫ জন ঘাতকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বিপুলভোটে জয় লাভ করে ক্ষমতায় আসলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ৭১ ’র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেন। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দীর্ঘ ৩৪ বছরের পথপরিক্রমা এবং ২০১০ সালের ২৮ শে জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত পাঁচ আটককৃত খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়।
পলাতক ৭ দণ্ড প্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে অন্যতম ক্যাপ্টেন (বরখাস্তকৃত) আব্দুল মাজেদকে গত ১২ এপ্রিল ২০২০ দিবাগত রাতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যদ-কার্যকর করা হয়। জননেত্রী শেখহাসিনার শাসনামলেই ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ঐতিহাসিক জেলহত্যা মামলায় রায় প্রদান করেন, এরই মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৩৮ বছর পর জাতি পায় জেলহত্যার বিচার। ২০০৯ সাল থেকে একটানা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, তাঁর শাসনামলেই ৭১-এ সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপাধে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীর বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে এবং ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে ঘোষিত ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।
দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে এই ৪৩ বছরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। তাঁর আলোকিত নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে এক আলোকিত অভিযাত্রায় শামিল হয়েছেন, বিশ্ব নেতৃত্বে আজ তিনি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নিয়েছেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে রাজনীতিবিদ হিসাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আবারো দেশে স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে, তাঁর সাহসী নেতৃত্বে যথার্থই জেগে উঠে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয় শেখ হাসিনার সৃজনশীল ও দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে, তিনি আজ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে আপন আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছেন। ১৭ই মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যেন এক আলোর অভিযাত্রার আখ্যান। জননেত্রী শেখ হাসিনার ৪৩ তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তাঁকে জানাই বাঙালির হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে সশ্রদ্ধ অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য পিপলস টাইম
সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ
সদস্য, কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
পরিচালক, এফবিসিসিআই
চেয়ারপারসন, ভোরের পাতা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।