
টেকসই নগরী হিসেবে রাজধানী ঢাকার বাস যোগ্যতা নিয়ে একজন নগরবাসীকে প্রশ্ন করলে, কতশত কষ্ট আর ভোগান্তির কথা যে শুনতে হবে সেটাতে আর নিস্তার নেই। অন্যদিকে বৈশ্বিক সূচকেও রাজধানীর বাস যোগ্যতার প্রশ্নে যে উত্তর মিলে সেটা নগরবাসীর জন্য শুধু দুশ্চিন্তার নয় বরং বেশ উদ্বেগেরও বটে। কারণ গত ২২ জুন, ২০২৩ লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) এর একটি জরিপের রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকা অনেক পিছিয়ে এবং এর অবস্থা খুবই খারাপ। ১৭৩টি নগরীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৬৬-তে, তার মানে সবচেয়ে নিচের অবস্থান থেকে পর্যায়ক্রমে ৭ নম্বরে যা নগরবাসীর জন্য এক ধরনের দু:সংবাদ বলা চলে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘উড়োজাহাজে চড়ে শহরগুলো দেখলে মনে হয় যেন তা পৃথিবীর চর্মরোগ।’ একসময়ের তিলোত্তমা ঢাকা এখন যন্ত্রণার আরেক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব নাগরিক চায় তার রাজধানী শহর হবে আধুনিক সবুজ বেষ্টিত এক স্মার্ট শহর। কিন্তু এ ‘শহরটাকে’ কেউ কখনো আপন ভাবতে পারেননি! প্রাণের শহর রাজধানী ঢাকা দিনকে দিন নগরবাসীর কাছে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। বায়ুদূষণ, পানি, শব্দ ও আলোদূষণের পাশাপাশি যানজটে স্থবির জনজীবন। তার ওপর ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি মানুষের চাপে পিষ্ট ‘জাদুর শহর’। কীভাবে এ নগরী আবারও প্রাণ জুড়ানো শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার উপযোগী এবং স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলা যায়— সেই চিন্তাই করছেন বিশেষজ্ঞরা।
একটি টেকসই, বাসযোগ্য ও স্মার্ট সিটির লক্ষ্য হলো প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার নাগরিকদের জীবনমান উন্নত করা, অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং আরও টেকসই এবং দক্ষ শহুরে পরিবেশ নিশ্চিত করা। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এমন একটি শহর গড়ে তোলা যা প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখবে। প্রকৃতির সমস্ত রূপ গ্রহণ করে এমন একটা সবুজ অবকাঠামো তৈরি করা যাতে শহরের বাসিন্দারা তা উপভোগ করতে পারে। স্মার্ট সিটিতে যা থাকা প্রয়োজন, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক। প্রথমেই প্রয়োজন স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা যা যানজট কমাতে সাহায্য করবে। তারপর প্রয়োজন, স্মার্ট এনার্জি সিস্টেম যা শক্তির অপচয় এবং কার্বন নির্গমন কমাতে সাহায্য করবে রিয়েল-টাইম ডেটা ব্যবহার করে। অন্যদিকে স্মার্ট ঢাকা গড়তে স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের গুরুত্ব অপরিসীম, যেখানে নগরীর বর্জ্য সংগ্রহকে অপটিমাইজ করতে এবং আবর্জনা কমাতে সেন্সর ব্যবহার করতে হবে। নগরীতে প্রয়োজন স্মার্ট পাবলিক সেফটি সিস্টেম যা অপরাধের হার কমাতে সাহায্য করবে ডেটা এবং বিশ্লেষণ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। সর্ব পরি, একটি স্মার্ট নগরীতে প্রয়োজন স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যা পানির ব্যবহার নিরীক্ষণ ও পরিচালনা এবং বর্জ্য কমাতে সহায়তা করবে। তাই সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশে বিনির্মাণের ঘোষণার পর থেকেই জনমনে একটি প্রশ্ন, আদৌ কি সম্ভব ঢাকাকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তর করা?
তাই নানা বাধা-বিপত্তি আর চ্যালেঞ্জ জয় করেই ঢাকাসহ সারা দেশের টেকসই উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। লক্ষ্য, ২০৪১ সালের মধ্যে ডিজিটাল থেকে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমেই গড়তে হবে স্মার্ট ঢাকা। কারণ ব্যবসা-বাণিজ্য, পড়াশোনা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি বেশির ভাগ কার্যক্রম আবর্তিত হয় এই ঢাকাকে কেন্দ্র করেই। তাই ঢাকা যত দ্রুত স্মার্ট হবে, তত দ্রুতই স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্মার্ট সিটির মূল স্তম্ভগুলো নিয়ে কার্যকরভাবে ঢাকা শহরের জন্য অতি দ্রুত কাজ করতে হবে। স্মার্ট গভর্ন্যান্স, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট মোবিলিটি, স্মার্ট এনভায়রনমেন্ট, স্মার্ট পিপল এবং স্মার্ট লিভিং— এগুলোই স্মার্ট সিটির মূল স্তম্ভ। আর নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবনী বিষয় আনতে হবে যাতে মানুষের জীবনযাত্রা আরও সহজ হয়।
গত ৬০-৭০ বছরে তিলোত্তমা নগরী রাজধানী ঢাকার জন্য যেসব পরিকল্পনা, মহাপরিকল্পনা, উদ্যোগ, আয়োজন করা হয়েছে সেগুলোও একেবারে কম নয়। কিন্তু তাতে ঢাকা কি বাসযোগ্য নগরী হয়ে উঠেছে?রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রণীত ঢাকার ‘বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)’ ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, একটি পরিকল্পিত শহরের ৬০ ভাগ জায়গায় সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়। আর ৪০ ভাগ জায়গায় আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ নগরবাসীর প্রয়োজনের আলোকে অবকাঠামো গড়ে ওঠে। ৪০০ বছরের পুরোনো শহর ঢাকায় সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান রয়েছে প্রায় ২৪ ভাগ। আর অবকাঠামো তৈরি হয়েছে ৭৬ ভাগ জায়গায়। একটি পরিকল্পিত শহরে প্রতি একরে সর্বোচ্চ ১০০-১২০ জন বসবাস করে। ঢাকায় বর্তমানে একর প্রতি বসবাস করছে ৪০০-৫০০ জন। উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটিতে বিভক্ত ঢাকা মহানগরের আয়তন ৩০৫ দশমিক ৪৭ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী শহরে জনসংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮২। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হয়। রাজউকের ড্যাপের তথ্যমতে, ঢাকায় সড়ক রয়েছে ৮ দশমিক ৪৫ ভাগ, জলাশয় রয়েছে ১৩ দশমিক ৯২ ভাগ এবং উন্মুক্ত স্থান রয়েছে ১ দশমিক ৩৫ ভাগ। জনঘনত্ব হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় একরপ্রতি জনঘনত্ব ৩৯৩ জন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বসবাসকৃত এলাকার জনঘনত্ব ৫০০ জন।
ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে ১৯১৭ সালে নগর পরিকল্পনাবিদ স্যার প্যাট্রিক গেডিসকে দিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান করে ব্রিটিশরা। এটাকে মাস্টারপ্ল্যানের ধারণাপত্র বলা হয়। এর নাম ছিল ‘ঢাকা টাউন প্ল্যান’। ঢাকা সমতল আর বৃষ্টি প্রবণ শহর। এ দুটো বাস্তবতা ধরে বিশদ পরিকল্পনার সুপারিশ করেন ওই নগর পরিকল্পনাবিদ। কিন্তু ওই সুপারিশের আর বাস্তব রূপ পায়নি। সে সময় ঢাকার চারদিকে চারটি নদীর পাশাপাশি শহরে অনেক খালও ছিল। একসময় শহরে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৫০টি প্রাকৃতিক খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে নদীতে পড়ত। ফলে জলাবদ্ধতা হতো না। সে সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ৮-১০ লাখ। এরপর পাকিস্তান আমলে ১৯৫৯ সালে ঢাকার জন্য আরেকটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। এ মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বেশ কিছু অবকাঠামো, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা তৈরি করা হয়। তবে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ১৯৫৯ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ১৫ লাখ। বাংলাদেশে পরিকল্পনাবিদদের সমন্বয়ে ঢাকার জন্য প্রথম মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হয় ২০১০ সালে। সে সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় দেড় কোটি ধরা হতো। রাজউকের নেতৃত্বে প্রণয়ন করা এ মাস্টারপ্ল্যানের নাম ড্যাপ। মাস্টারপ্ল্যানটি পরিকল্পিত ও বাসযোগ্য নগর গঠনের সূচকের বিবেচনায় ৭০ ভাগ সঠিক ছিল। তবে ৩০ ভাগ নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল। ২০১৫ সালে ড্যাপের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ২০১৬ থেকে ২০৩৫ সালের জন্য ড্যাপ সংশোধন করা হয়। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সংশোধিত ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এবারের ড্যাপে ঢাকার জনঘনত্ব কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
মোদ্দাকথা হলো, রাজধানী ঢাকাকে নাগরিক বান্ধব ও বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে একটি ভালো পরিকল্পনার প্রয়োজন। তবে সময়মতো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা না গেলে আমাদের সমস্যার আবর্তেই ঘুরপাক খেতে হবে। যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সামাজিক সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার, আর্থসামাজিক অবস্থা, পরিবেশ, আর্থিক সামর্থ্য ইত্যাদি বিবেচনায় এনে সঠিকভাবে শহরের অন্তর্ভুক্তিমূলক জনবান্ধব পরিকল্পনা তৈরি হবে। পাশাপাশি ঢাকাকে বাসযোগ্য নগর ও স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে এখন পর্যন্ত যেসব পরিকল্পনা বা মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে মহাপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন প্রতিটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত সংখ্যক নগর পরিকল্পনাবিদ নিয়োগ প্রদান। তাই অতি দ্রুত রাজধানীর সকল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত সংখ্যক নগর পরিকল্পনাবিদ নিয়োগ প্রদান করে ও মহাপরিকল্পনাগুলো বিশেষত ড্যাপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্মার্ট সিটি ও বাসযোগ্য ঢাকা নগরী গড়তে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
শ্রেণিবিভাজিত রাষ্ট্রে সর্বজনীন শিক্ষা! | আর রাজী
আমরা একটা শ্রেণিবিভাজিত রাষ্ট্র করতে চাচ্ছি। যেখানে কে্বু কেউ ইংরেজি মাধ্যম বা বিদেশি ভালো স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে আমাদের মাথার ওপরে বসবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তারাই মূল ভূমিকা পালন করবে। আমরা শুধু প্রচুর শ্রমিক সরবরাহ করব
জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার যে উদ্দেশ্য, সেটা বাস্তবায়নের যে প্রক্রিয়া, আমরা কিন্তু দেশের সব মানুষকে প্রকৃতভাবেই শিক্ষিত করতে চাই। মানুষ এমনভাবে শিক্ষিত হবে যাতে সেই ব্যক্তি তার মর্যাদাবোধ, আত্মসম্মান রক্ষা করতে পারে এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে। বড় কথা হচ্ছে, প্রকৃতির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় সে যেন থাকতে পারে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, সামাজিক এবং রাষ্ট্রিক জীবনযাপন করতে পারে। এটাই তো প্রকৃত শিক্ষা। আমাদের শিক্ষার মূল ধারণা ছিল, যেটা আমাদের সংবিধানেরও মূল কথা সর্বক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সমতা থাকতে হবে। সর্বোপরি মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্যই আমরা চাইছিলাম, শিক্ষাগ্রহণের শুরুতেই লেখাপড়া এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন কোনো ধরনের বৈষম্য তৈরি না হয়। কিন্তু সেটা আমরা রক্ষা করতে পারিনি। অনেক আগেই শিক্ষায় বৈষম্য তৈরি হয়ে গেছে। শহরে আবার কিন্ডারগার্টেন, ইংরেজি মাধ্যম, সরকারি-বেসরকারি, বিদেশি নিয়ন্ত্রিত স্কুল অসংখ্য।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে শিক্ষাব্যবস্থায় | আবদুল্লাহ আল মোহন
বর্তমান সরকারের শাসনামলে দেশের শিক্ষার বহুমাত্রিক সাফল্য অস্বীকার করা যাবে না। তবে যে কোনো বিষয়ের মতোই, শিক্ষা নিয়েও সমালোচনা থাকতে পারে। এক্ষেত্রে বাস্তব প্রেক্ষাপটকেও বিবেচনায় নিতে হবে
‘শিক্ষাই সব শক্তির মূল’ দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকনের বাণীটি আমাদের প্রায় সবারই জানা। প্রবাদ বাক্যটি চারশো বছর পরেও সমান প্রাসঙ্গিক, একই মূল্য বহন করে। শিক্ষা ছাড়া কোনো ধরনের অগ্রগতি কল্পনাও করা যায় না। ফলে শিক্ষাকে আখ্যায়িত করা হয়, একটি জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে। সরকার শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছে নানা কার্যকরী পদক্ষেপ। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য প্রশংসার দাবি রাখে। শিক্ষার উন্নয়ন কিংবা শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ আলোচনায় নজর দিতে হয়, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন সূচকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে। যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এগিয়েছে। আগের তুলনায় বাংলাদেশের সূচকের মূল্যমান বেড়েছে দশমিক ০০০৬। ইউএনডিপির প্রকাশ করা ‘মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২১-২২’-এ এই চিত্র উঠে এসেছে। সর্বশেষ সূচকে বাংলাদেশ অবস্থান ১২৯।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
মূলত উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং অস্থির বিনিময় হারের কারণেই বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে ঘিরে বিশেষজ্ঞ ও প্রধান প্রধান অংশীজনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলছে। এসবের প্রভাব জনগণের মনেও পড়ছে। তাদের প্রতিদিনের জীবন চলায় চাপ ও তাপ দুই-ই বাড়ছে। তাই নীতিনির্ধারকদের দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যে আরও সংবেদনশীল হতে হবে সে কথা তো সত্যি। তবে এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না। প্রবৃদ্ধির দৌড়ে এখনো বাংলাদেশ এগিয়েই আছে। তা ছাড়া সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়েও খুব বেশি দ্বিমত নেই। কিন্তু গোল বেঁধেছে সমকালীন সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে। সামনে বিপুল নীল সমুদ্র। তাকে পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতা আগামী দিনের বাংলাদেশের নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু বিরাট যেসব ঢেউ এই মুহূর্তে তীরে এসে ধাক্কা মারছে তাতেই শঙ্কা বাড়ছে। অথচ বাংলাদেশের অর্জন তো মোটেও হেলাফেলার নয়। কিন্তু তবু কেন এই শঙ্কা? এই দুর্ভাবনা কি খুবই সাময়িক? নাকি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার মতো কোনো বাস্তব কারণ রয়েছে? আমাদের অর্থনীতির কাঠামোগত সংস্কারের দিকে কী আমরা যথেষ্ট নজর দিইনি? নাকি বিশ্ব অর্থনৈতিক চাপের মুখে আমরা খানিকটা অগোছালো পদক্ষেপ নিয়েছি? বাজারের মুড বুঝে কি আমরা যথেষ্ট বিচক্ষণ নীতি-সক্রিয়তা দেখাতে দ্বিধান্বিত?
এ কথা ঠিক, শুধু বাইরের অর্থনৈতিক সংকটকে দায়ী করে আমরা আমাদের এগিয়ে চলার পথ কণ্টকমুক্ত রাখতে পারব না। আমাদেরও যে দায় আছে সে কথাটি মানতে হবে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘কালান্তর’ পর্বের লেখা ‘বাতায়নিকের পত্র’-এ ঠিকই অনুভব করেছিলেন যে ‘জাহাজের খোলের ভেতরটায় যখন জল বোঝাই হয়েছে তখনই জাহাজের বাইরেকার জলের মার সাংঘাতিক হয়ে ওঠে। ভেতরকার জলটা তেমন দৃশ্যমান নয়, তার চালচলন তেমন প্রচণ্ড নয়, সে মারে ভারের দ্বারা, আঘাতের দ্বারা নয়, এই জন্য বাইরের ঢেউয়ের চড়-চাপড়ের ওপরেই দোষারোপ করে তৃপ্তি লাভ করা যেতে পারে; কিন্তু হয় মরতে হবে, নয় একদিন এই সুবুদ্ধি মাথায় আসবে যে আসল মরণ ওই ভেতরকার জলের মধ্যে, ওটাকে যত শিগগিরই পারা যায় সেচে ফেলতে হবে। ...মনে রাখা চাই যে সমুদ্র সেচে ফেলা সহজ নয়, তার চেয়ে সহজ, খোলের জল সেচে ফেলা।’ নিঃসন্দেহে আমাদের অভ্যন্তরীণ শক্তির উৎস যদি কোনো ঘাটতি দেখা দিয়ে থাকে সেদিকে আগে নজর দিতে হবে।
আমাদের অর্থনীতিতে এখনো নিশ্চয়ই বাইরের বাধা প্রচুর রয়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। ডলার বাজারে আগুন। আমদানি করা পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। তাই বলে কি হাত গুটিয়ে বসে থাকব? আমাদের মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে বাগে আনার পরিচিত কামান কি আসলেই আমরা সজোরে দাগিয়েছি? সমন্বিত মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির তীর কি সময়মতো তূণ থেকে বের করেছি? মুদ্রার একাধিক বিনিময় হারকে কি সমন্বিত করেছি? শ্রীলঙ্কা এবং হালের তুরস্ক যদি নীতি সুদের হার এতটা বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর পথে হাঁটার সাহস দেখাতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারছি না? এসব প্রশ্নের সোজা উত্তর দেওয়া মুশকিল। এর সঙ্গে অনেক কাঠামোগত প্রশ্ন নিশ্চয়ই জড়িয়ে আছে। এ কথাও মানি, নির্বাচনের এই বছরে অনেক ভেবেচিন্তেই পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। তবু মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকটের মতো প্রধান সমস্যাগুলোর সামনাসামনি দাঁড়াতেই হবে আমাদের।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই মুহূর্তে বিদেশি মুদ্রার বাজারটিই আমাদের বেশি ভোগাচ্ছে। আবার এর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক আছে মুদ্রানীতির ভঙ্গিটির সঙ্গে। অন্য কথায় সুদের হারের নমনীয়তার মাত্রার ওপর। কভিড সংকট ও ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে আমাদের আমদানি মূল্য বিপুলভাবে বেড়ে গিয়েছিল। এই মূল্য শুধুই রপ্তানি ও প্রবাস আয় দিয়ে পুরোপুরি শোধ করা সম্ভব হয়নি বলেই বাণিজ্য ঘাটতির হাত ধরে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার কমতে থাকে। তাই টাকার মান অবমূল্যায়ন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের বিপরীতে টাকার প্রায় ৩০ শতাংশ অবমূল্যায়নের ফলে আমদানি করা পণ্যের দামও বেড়ে গেছে। প্রায় একই হারে আমদানি শুল্কও বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই শুল্কের হার কিছুটা কমালেও সার্বিকভাবে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়ন্তই রয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার বেশ কিছু প্রশাসনিক উদ্যোগ নিয়েছে। আমদানির ওপর নিশ্চয়ই এসবের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আমাদের আমদানি করা নিত্যব্যবহার্য পণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও বিলাসপণ্যের সরবরাহ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। তাই হালে বাণিজ্য ঘাটতি অনেকটাই কমেছে। এর প্রভাবে আমাদের চলতি হিসাবেরও উন্নতি হয়েছে। যদিও এই উন্নতির পেছনে অনেক ছোটখাটো আমদানি আনুষ্ঠানিক চলতি হিসাবের বাইরে চলে যাওয়ার কারণেও হতে পারে। কেননা ছায়া বাজারে লেনদেনের চাহিদা এখনো বেশ চাঙা বলেই মনে হচ্ছে। এই মুহূর্তে হুন্ডির বাজার কম করে হলেও ১৫ বিলিয়ন ডলারের কম বলে মনে হচ্ছে না। এ কারণে আনুষ্ঠানিক প্রবাস আয় কমছে। একই সঙ্গে নিট এফডিআই ও বিদেশি সহযোগিতার ছাড়সহ আমদানি ঋণ ও রপ্তানি বিল ডিসকাউন্টিং কমে যাওয়ার কারণে আমাদের আর্থিক লেনদেন ভারসাম্য নেতিবাচক হয়ে গেছে। এর প্রভাব সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যের ওপরও পড়েছে। এটিও এখন নেতিবাচক। এসবের চাপ রিজার্ভের ওপর পড়ছে। তা দ্রুত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। যদিও আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার এখনো মন্দ নয়। তবু অর্থনীতির বাড়ন্ত আকারের কথা মনে রাখলে এই ক্ষয়ের ধারা নিয়ে তো শঙ্কা হতেই পারে।
এই প্রেক্ষাপটে আমাদের রপ্তানিকারকদের নানা সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও কেন তাদের রপ্তানি আয় আগের চেয়ে কম নগদায়ন হচ্ছে, তা বোঝার প্রয়োজন রয়েছে। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বিনিময় হারের এতটা ফারাকই কি এর জন্য দায়ী? এর ফলে কি এমন ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যাচ্ছে যে ডলারের দাম আগামী দিনে আরও বাড়বে? তাই পুরোটা দেশে না আনলেই তাদের জন্য ভালো, নাকি বাকিতে পণ্য রপ্তানি আয় আগাম নগদায়নে বিদেশি ব্যাংক আগ্রহী হচ্ছে না? টাকার অবচিতির ধারা হালের প্রবাস আয় কমে যাওয়ার পেছনেও খাটে? নাকি প্রবাসীদের অনেকেরই আনুষ্ঠানিক কাজের যথাযথ কাগজপত্র নেই? নাকি রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান অনেক সূক্ষ্মভাবে সব আমদানি এলসি দেখতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে না? তাই তারা ছায়া বাজারে গিয়ে ডলারের চাহিদা বাড়াচ্ছে। তাহলে এই চাহিদা কমানোর উপায় কী? মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতিকে আরও সংকোচনমূলক করাই কি এই সংকটের অন্যতম একটি উত্তর হতে পারে? এসব প্রশ্ন না এড়িয়ে বরং এসবের ভালো ও মন্দ দুই দিক নিয়েই অংশীজনদের সঙ্গে আলাপের কোনো বিকল্প নেই বলে আমার কাছে মনে হয়।
আমদানিনির্ভর শিল্পায়নের সুফল আমরা অনেক দিন ধরেই পেয়ে আসছি। কাঁচামাল, মধ্য পণ্য ও যন্ত্রপাতি আমদানি না করা গেলে আমদানি বিকল্প কিংবা রপ্তানি শিল্পই বা সচল রাখা যাবে কী করে? ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পগুলোকে ওবিইউ বা অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে আমদানি মূল্য সেটেলমেন্ট করার বিশেষ সুযোগ বাংলাদেশ ব্যাংকই চালু করেছিল। কিন্তু কী কারণে বিদেশি ব্যাংকগুলোর এ ধারায় স্বল্পকালীন আমদানি ঋণ দিতে অনীহা তা জানা দরকার। অবিলম্বে বিদেশি ব্যাংকগুলো ও তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে নিবিড় আলাপের প্রয়োজন রয়েছে।
আর বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক করার পাশাপাশি (এরই মধ্যে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে) চলতি হিসাবে বাণিজ্যিক লেনদেন, বিজ্ঞাপনী ব্যয়, চিকিৎসা ব্যয়, কার্ড পেমেন্টস কী করে সহজ ও ‘সিমলেস’ করা যায়, তা এক্ষুনি ভাবতে হবে। তাহলেই এসব লেনদেনের জন্য তারা ছায়া বাজারে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করবে না। একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রপ্তানিকারকদের তাদের রপ্তানি পণ্যের আয় দেশে আনতে হয়। বিভিন্ন পয়েন্টে (ব্যাংক, কাস্টমস, ইপিবি ইত্যাদি) তাদের রিপোর্ট করতে হয়। একই কথা সার্ভিস রপ্তানির বেলায় খাটে না। তাদের সে জন্য কর সুবিধা ও অন্যান্য প্রণোদনা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে এই আয়ও ছায়া বাজারে চলে যেতে পারে।
বিদেশি মুদ্রায় পরিবহন খরচের একটি বড় অংশ আমরা নিজেদের জাহাজ চালু করে বাঁচাতে পারতাম। এ বিষয়টির পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজন সমানতালে সক্রিয় হলে এ ক্ষেত্রে বড় মাপের বিদেশি মুদ্রার সাশ্রয় করা নিশ্চয়ই সম্ভব। বর্তমানের এই টানাপোড়েনের মধ্যেই দিল্লিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ টাকা-রুপি কার্ড ও বিনিময়ের যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে তার বাস্তবায়ন দ্রুত করা হলে ডলার খরচের ওপর চাপ বেশ খানিকটা কমানো সম্ভব। এর পাশাপাশি যেসব দেশ থেকে বেশি পরিমাণে আমদানি করা হয় তাদের সঙ্গে ‘সোয়াপ’ লাইন চালু করা যেতে পারে। একইভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে (যেমন—আইডিবির আইটিএফসি) জ্বালানি তেল আমদানির জন্য বিশেষ সমর্থন লাইন চাওয়া যেতে পারে। এই ব্যবস্থা এখনো চালু আছে, তবে সমকালীন বাস্তবতায় তা আরও জোরদার করার সুযোগ রয়েছে।
এই আলোচনার আলোকে আমরা নিচের প্রস্তাবগুলো করতে পারি :
১. আমদানিসহ চলতি হিসাবের সাধারণ লেনদেন সিমলেস করা। ২. প্রবাস আয়কে আরও নীতি সমর্থন দেওয়া এবং তার লেনদেনে যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে তা দূর করা। ৩. যেসব ব্যাংক বিদেশি ব্যাংকের দেওয়া স্বল্পকালীন ঋণে আমদানি মূল্য সময়মতো মেটায়নি তাদের চিহ্নিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। একই সঙ্গে ওই সব বিদেশি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে সব বাধা দূর করার ইতিবাচক বার্তা দেওয়া। বিনিময় হার ও আমদানি ঋণপত্র মনিটরিংয়ের চেয়ে আমাদের ব্যাংকগুলোর বিদেশি লেনদেন পরিশোধ ব্যবস্থার ধরন মনিটরিং আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ৪. আমদানি পণ্যের দাম মনিটরিংয়ের নামে ব্যাংকগুলোকে আতঙ্কিত না করে বরং গাইড করা এবং সাহায্য করা দরকার। যাদের সাধ্য কম তারা কম ইউপাস ব্যবস্থায় যুক্ত হবে—সে বার্তাটি দিতে হবে। ৫. সেবা খাতের আয়কে কর ছাড় ও অন্যান্য প্রণোদনা দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে আনার সুযোগ করে দেওয়া। ৬. সার্ক ফিন্যান্সের আওতায় ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সম্পাদিত ডলার-রুপির ‘সোয়াপ’ ব্যবস্থা কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। ৭. আইডিবির মতো বহুজাতীয় সংস্থার সঙ্গে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য অন্তত দুই বিলিয়ন ডলারের বিশেষ ঋণের লাইন খোলা। এ জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে আলাপ করা যেতে পারে। ৮. যেসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ব্যাপক, তাদের আমদানি ঋণসহ সব ধরনের বড় ঋণ কার্যক্রম আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হোক। বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনটি করেছে। এই ব্যবস্থা সব দুর্বল ব্যাংকের জন্য প্রযোজ্য করা উচিত। ৯. প্রতিটি টাকা খরচের সঙ্গে খানিকটা বিদেশি মুদ্রার খরচও যুক্ত থাকে। তাই যেসব প্রকল্প শিগগিরই সমাপ্ত হতে যাচ্ছে সেগুলো বাদে আপাতত অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ স্থগিত কিংবা ধীরলয়ে করা উচিত। ১০. ব্যাংকগুলো আগাম আমদানি খরচের কথা বলে বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে বলে বলা হচ্ছে। প্রশাসনিক দৃষ্টিতে না দেখে এই বিষয়টি চাহিদা ও সরবরাহের বাজারভিত্তিক ভারসাম্যহীনতার আলোকে দেখা এবং পরবর্তী সময়ে সহায়ক নীতি সমর্থন দেওয়া উচিত। ১১. সংকটকালে অংশীজনদের সঙ্গে আলাপের কোনোই বিকল্প নেই। যাঁরা এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল, যাঁরা এই সমস্যা মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁদের এবং অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিরন্তর আলাপ চালিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আমি মাত্র কয়েকটি পরামর্শ দিলাম। এমন সময়ে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, প্রতিনিধি, বিদেশি ব্যাংকের প্রতিনিধিসহ উপযুক্ত অংশীজনদের সঙ্গে বসে নিবিড় আলাপ-আলোচনা করে চলমান আর্থিক অনিশ্চয়তা কাটানোর পথ নিশ্চয়ই বের করা সম্ভব। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির ধারাবাহিকতার জোরে চলমান বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত রয়েছে। এই সময়ে যে মেগা অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং যেগুলো প্রায় সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোর কারণে আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলশালী করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কানেকটিভিটিরও প্রশংসনীয় উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। আমাদের সামনে তৈরি হয়েছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সাফল্যের অমিত সম্ভাবনা। কিন্তু তার আগে এই মুহূর্তে যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলোও কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা চাই। সম্পদ পাচার, সুশাসনের অভাব, খেলাপি ঋণের দৌরাত্ম্যের মতো সমস্যাগুলো যে রয়েছে তা স্বীকার করতে হবে এবং সবাই মিলে আলাপ-আলোচনা করে এসব সমস্যার সমাধান বের করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে ২০০৮ সালে মাত্র ছয় বিলিয়ন ডলার রিজার্ভকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল মুদ্রানীতি ও বাজেটের যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে। সে সময়ে অল্প কয়েক বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘর থেকে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনাও সম্ভব হয়েছিল। কী করে তা সম্ভব হয়েছিল সে নীতির ফুটপ্রিন্টগুলো তো রয়ে গেছে। তাহলে এখন তা পারব না কেন? সে জন্য সব অংশীজনকে বিদ্যমান বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মানসিকতা নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
আমাদের বন্ধু কবি শামসেত তাবরেজীর একটি কবিতা ছিল,শিরোনামটা এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না, কিন্তু তার শুরুটা ছিল এরকম–
“যারা খেলাধুলা করে তাদের শরীর ও মন খুব ভালো থাকে,
আর শরীর ও মন এমন এক প্রকার ঘটনা
যেন পাহাড় এবং তার চারপাশে গজলের মতো হাওয়া।”
তিরিশ-পঁয়ত্রিশ বছর আগের পাঠের স্মৃতি থেকে বললাম। ভুল হলে মার্জনা করবেন। তবে কথাটা এ রকমই ছিল।
আমি আলস্য দোষে খেলাধুলায় কখনোই আকর্ষণ বোধ করিনি। কিন্তু খেলোয়াড়দের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়েছি ঠিকই, হোক সে ফুটবল কিংবা ক্রিকেট। নিজে না খেললেও তাবরেজীর ওই কবিতায় খেলার মহিমা স্বীকারে কোনো কার্পণ্য নেই আমার ভেতরে। আমরা খেলোয়াড়দের খেলার সঙ্গে যতটা পরিচিত, তাদের মনোজগতের সঙ্গে অতটা পরিচিত নই। সেই হদিস জানা যাবে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে তাদের বক্তব্যে, সামাজিক মাধ্যমে তাদের দেয়া পোস্টগুলো পড়লে।
সন্দেহ নেই যে বাংলাদেশ ক্রিকেটে অগ্রগামী একটি দেশ। যাদের কারণে এই অগ্রগতি তারা অসামান্য দক্ষতায় তা সম্ভব করেছেন। এই দেশে এদের জনপ্রিয়তাও চোখ ধাঁধিয়ে দেয়ার মতো।
সংস্কৃতির এমন কতগুলো শাখা আছে যেগুলোতে সাফল্যের কারণে দ্রুতই জনপ্রিয় হওয়া যায়, যেমন অভিনয়, খেলাধুলা, গান। এগুলোর দর্শককে খুব বেশি বুদ্ধিমান, বিদগ্ধ, পড়ুয়া কিংবা সর্বজ্ঞ হতে হয় না। আর তা হতে হয় না বলেই এর আবেদন বেশির ভাগ লোককেই স্পর্শ করে, যেহেতু তা “সহজের পেশা, আরামের নেশা,…”
সংস্কৃতির এই শাখাগুলোয় যারা জনপ্রিয়তার শীর্ষে গিয়ে পৌঁছান স্বাভাবিকভাবেই তাদের প্রতি জনগণের মনোযোগ থাকে। তারা যা-কিছুই করেন বা বলেন তার একটা অভিঘাত জনপরিসরে পড়বেই। মনে পড়ছে করোনার সময় আমাদের এক অভিনেতা করোনা শব্দটির খুব সিরিয়াস একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন: ‘ক’-এ করোনা, ‘রো’-এ রোজা, আর ‘না’-এ নামাজ। করোনার ব্যাখ্যা শুনে আমি অবাক হয়েছিলাম। তাদের জ্ঞানের কথা আর কী বলব! এই যে অনন্ত জলিল, পরীমনি, অপু বিশ্বাস, বর্ষা—এদের বাংলা ভাষা শুনলে মনে হবে মাতৃভাষাটিও ঠিকমতো শেখেনি, না উচ্চারণ, না বাক্যগঠন, কোনোটাতেই তাদের সামান্যতম সামর্থ্য নেই। কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, উচ্চারণ ও বাক্যগঠন শুদ্ধ হওয়াটা জরুরি কিনা। নিশ্চয়ই জরুরি। সিনেমায় চরিত্রের প্রয়োজনে অশুদ্ধ উচ্চারণ ও ভুল বাক্যগঠন প্রয়োজনীয় হতে পারে। কিন্তু তারা যখন চলচ্চিত্রের বাইরে গণমাধ্যমে কথা বলছেন তখন তাদের শুদ্ধ উচ্চারণ ও শুদ্ধ বাক্যগঠন অবশ্যই জরুরি। যেহেতু তারা আইকনিক ব্যক্তিত্ব, সেই কারণেই তারা সাধারণ মানুষের কাছে আদর্শ হয়ে ওঠেন। তাদের অনুসরণযোগ্য মনে করেন। এ ছাড়া, সিনেমায় সঠিক ও শুদ্ধ বাংলা জানাটা এই শিল্পের প্রাথমিক এবং প্রধান এক শর্ত। বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি যুগে এমন একজন অভিনেতার নাম করা যাবে না যিনি এই ত্রুটি বা অযোগ্যতা দোষে দুষ্ট। কিন্তু আজকের আলোচনায় এই ত্রুটিও আমাদের কাছে গৌণ হয়ে পড়েছে এই যুগের অভিনেতা/অভিনেত্রীদের মূর্খতার অন্য এক বিস্তার দেখে। তারা এখন সামাজিক ও ধর্মীয় এমন সব বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছে যা দেবার মতো সামান্যতম জ্ঞান তাদের নেই। নানান বিষয়ে তাদের গ্রাম্যতা ছেড়েই দিলাম। ধর্ম নিয়ে তাদের কারওর কারওর অভিমত ও পরামর্শ শুনলে মনে হবে সিনেমা তাদের কাছে পাপকর্ম হওয়া উচিত। মৌসুমী তার এক বক্তব্যে সেরকম ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে রোজার মাসে যাতে সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ থাকে। তিনি যখন সিনেমার জগতে তুঙ্গ মুহূর্তে ছিলেন তখন কিন্তু তার এমনটা মনে হয়নি। মনে হলো এমন এক সময়ে যখন সিনেমায় তার কোনো চাহিদা নেই।
কিন্তু আজকাল এই সবঅভিনেত্রীদের পেছনে ফেলে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব আর মহিমা প্রমাণের জন্য সবচেয়ে বেশি মুখর ও অগ্রবর্তী ক্রিকেটাররা, আমরা যাদের আদর করে বাঘ বলে অভিহিত করি। যদিও শুনেছি “মুশফিক নাকি আমাদের ক্রিকেটের লোগো (বাঘের ছবি সংবলিত) জার্সিতে ঢেকে খেলতে নামে!” এর পেছনে মূল কারণ তার ধর্মীয় বিশ্বাস।
আরেক ক্রিকেটার, তানজিম হাসান সাকিব তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না। স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না। স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়। স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়। স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়। স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়।’
অন্য আরেক ফেসবুক পোস্ট-এ তিনি বলেছেন: “ভার্সিটির ফ্রি মিক্সিং আড্ডায় অভ্যস্ত মেয়েকে বিয়ে করলে আর যাই হোক, নিজের সন্তানের জন্য একজন লজ্জাশীলা মা দিতে পারবেন না!!”
ওপরের এই নারীবিদ্বেষী পোস্টেই তিনি থেমে থাকেননি, তিনি সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় বিদ্বেষের ছক্কা মারতেও ওস্তাদ। তিনি একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন যেখানে বলা হয়েছে:
“উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) বলেছেন, তোমরা কাফির-মুশরিকদের উপাসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করো না। কারণ সেই সময় তাদের ওপর আল্লাহর গজব নাজিল হতে থাকে। (আবদুর রাযযাক, আলমুসান্নাফ: ১৬০৯)”
এই একই সাকিব, ছোট্ট সাকিব, এর চেয়েও ভয়াবহ এক পোস্ট দিয়েছে বিধর্মীদের মূর্তি ভাঙাকে জায়েজ বলে। তার প্রতিক্রিয়ায় Shah Mahbub Razi লিখেছেন : “আগামী ২১ তারিখ দুপুর দুইটায় বাংলাদেশের পরের ম্যাচে তানজিম সাকিব লিটন কুমার দাসের অধিনায়কত্বে খেলতে নামতে পারে। সেই একই ম্যাচে ওপেনিং করতে পারেন সৌম্য সরকার। লিটন ও সৌম্যের ধর্মীয়ভাবে সনাতনী ধর্মাবলম্বী। তারা কি জানেন জাতীয় দলে তাদের সতীর্থ হিসেবে একসঙ্গে খেলতে নামা তানজিম সাকিব সুযোগ পেলে তাদের ধর্মীয় উপাস্যদের প্রতিমা ভেঙে দেবার মানসিকতা ধারণ করেন? এতটাই গভীরভাবে যে রীতিমতো সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত বক্তব্য শেয়ার করেই ক্ষান্ত হননি সাকিব, সবাইকে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিতে বলেছেন!
লিটন-সৌম্য কি জানেন? আগামী ম্যাচের অধিনায়ক হিসেবে লিটন কি বিসিবির কাছে তানজিম সাকিবের এ ধরনের মানসিকতার ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেবার দাবি জানাবেন?”
এই ছোট্ট সাকিবেরই ২০১৪ সালের ৫ ডিসেম্বর যে-পোস্টটি আমাকে হতভম্ব করেছে সেটার কথা না বললেই নয়। তিনি লিখেছেন:
“১৬ই ডিসেম্বর পালন!... ফেসবুকে খেয়াল করলাম অনেকে নিজেদের প্রোফাইলে জাতীয় পতাকা দিয়ে ১৬ই ডিসেম্বর সম্মান করছে। আবার অনেকে বলছে ১৬ই ডিসেম্বর এর দিন নাকি সবাই পতাকা দিয়ে রাখবে! এতে করে বাংলাদেশের কী উপকার হবে জানি না! আসলে কারও বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কিছু বললেই রেগেমেগে আগুন হয়ে যায়! আমি কাউকে আঘাত দিয়ে কিছু বলতে চাই না। শুধু কিছু কথা।
বিভিন্ন দিবস পালন করা ইসলামে নিষেধ।…”
আমরা দেখতে পাচ্ছি সাকিবের পোস্টগুলোয় একদিকে রয়েছে নারীর প্রতি অবমাননা, অন্যদিকে, সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি এবং সর্বোপরি যে-দেশটির জাতীয় দলে তিনি খেলোয়াড়, সেই দেশের স্বাধীনতা দিবসে পতাকা উত্তোলনে তার আপত্তি। আর আজকেই এই ভিডিও ক্লিপে লক্ষ্য করলাম, খেলার শুরুর আগে যখন আমাদের জাতীয় সংগীত বাজছে, তখন অন্যান্য খেলোয়াড়রা গাইলেও তিনি মুখে একদম কুলুপ এঁটে দাঁড়িয়ে আছেন।
সাকিব কোরআন ও হাদিসের অপব্যাখ্যাকারীদের তফসির ও শানে নুজুল দ্বারা প্রভাবিত বলে ইসলামের উদার ও সহিষ্ণু রূপটির সঙ্গে পরিচিত নন। ইসলামের ইতিহাসও তার ভালোভাবে পড়া আছে কিনা সন্দেহ। হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজে প্রথম স্ত্রী খাদিজার কর্মচারী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। তার অন্য এক স্ত্রী যুদ্ধের ময়দানে পুরুষদের সহযোদ্ধা হিসেবে লড়াই করেছেন। প্রশ্ন হলো বিবি খাদিজার ব্যবসা করা বা অর্থোপার্জন কি অনৈসলামিক কাজ ছিল? তাতে করে কি সংসার সমাজ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল? বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে শুরু করে প্রশাসনে ও মন্ত্রিত্বের পদমর্যাদায় বহু নারী সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি বোধ হয় এসব সমর্থন করেন না। তাতে করে তাদের কমনীয়তা,পরিবার ও সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলতে চান? সাকিব-এর এই দৃষ্টিভঙ্গি তালেবান জঙ্গিদের আদর্শের সবচেয়ে নিকটবর্তী। তিনি যদি নিজের আদর্শ সততার সঙ্গে বজায় রাখতে চান তাহলে কেন নারী দ্বারা পরিচালিত একটি রাষ্ট্রের জাতীয় দলে খেলছেন? “ভার্সিটির ফ্রি মিক্সিং আড্ডায় অভ্যস্ত মেয়ে”গুলো সম্পর্কেও তার বক্তব্য অত্যন্ত আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ। আর ইবনুল খাত্তাব থেকে উদ্ধৃত বক্তব্যে তার সমর্থন প্রমাণ করে তিনি শুধু নারীর প্রতি অবমাননাই নয়,ভিন্ন ধর্মের মানুষের আচার অনুষ্ঠানের প্রতিও অসহিষ্ণু,হিংসাত্মক ও বিদ্বেষপূর্ণ। আর সর্বশেষ ১৬ই ডিসেম্বর অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি তার অশ্রদ্ধাকে পুরোপুরি স্পষ্ট করে তুলেছেন। তার সব বক্তব্য যদি পর্যবেক্ষণ ও সূক্ষ্মভাবে ব্যাখ্যা করা যায় তাহলে দেখা যাবে তার মনের গড়নটি স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানপন্থী জামায়াতিদেরই প্রতিরূপ। আফগানিস্তানের তালেবানদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রতিধ্বনি তিনি। মনের এই গড়নের পাশেই রয়েছে হয় ইসলাম সম্পর্কে তার অজ্ঞতা নয় তো মুনাফেকি। সেই দিকটাও একটু খতিয়ে দেখা যাক। সাকিবরা যে খেলাধুলা করছে, সেটা কি ইসলামসম্মত? সেই বিষয়ে তারা নীরব। তবে নীরব নয় ইসলামের অন্যান্য আলেমরা।
শায়খ আহমাদুল্লাহ জানাচ্ছেন যে খেলাধুলা করে উপার্জন করা হারাম। তার ভাষ্যমতে, খেলাধুলাকে শরীরের ব্যায়াম বা বিনোদন হিসেবে নিলে খেলা জায়েজ। কিন্তু খেলাকে পেশা হিসেবে নিয়ে তা থেকে উপার্জন করা হলে তখন সেটা হারাম হয়ে যাবে। শাকিব, মৃত্যুঞ্জয়, রহমত—আপনারা হারাম অর্জন করে কোন মুখে ওয়াজ নসিহত করছেন?
প্রশ্ন হচ্ছে এই যে খেলোয়াড়রা এত এত ওয়াজ নসিহত করছেন, তাদের নিজেদের গায়েই তো কাপড় নেই। তাহলে অন্যদের কীভাবে হেদায়েত করতে আসে? তাও যদি ইসলামের সঠিক ও সহি তরিকায় থেকে কথা বলত, মেনে নেয়া যেত। এরা ইসলামের সবচেয়ে বিকৃত ভাষ্যটিকে সহি বলে ধরে নিয়েছে। এবং এই ধরে নেয়ার কারণ এদের বিদ্যার দৌড় অতি সামান্য। বাংলা ভাষাতেই ইসলাম সম্পর্কে অনেক ভালো ভালো আলেমের বই আছে, তারা সম্ভবত সেই সব আলেমের কথা জানেও না। ইসলামের নামে অনুদার, অন্ধ, মৌলবাদী, বিদ্বেষী ও সাম্প্রদায়িক ধারাটিকেই অনুসরণ করছেন তারা।
সাহিত্যে যেমন কাসেম বিন আবু বকর আছে, আছে সিডনি সেলডন, তেমনি কোরআনের তফসির ও হাদিসের জগতেও আছে ওই বদ্ধ মনের ভাষ্যকার ইবনুল খাত্তাব। মূর্খ এই খেলোয়াড়দের কাছে মওলানা আকরম খাঁ, কিংবা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সময়কার পরিচালক আবুল হাশিম, কিংবা কোরআনের অনুবাদক আবদুল ওদুদ কিংবা ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ অথবা মওলানা আবুল কালাম আজাদ পুরোপুরিই অজ্ঞাত। ইসলাম ও হাদিসের জগতে এই আলেমদের যদি সমুদ্র বলে কল্পনা করা যায়, তাহলে আমাদের এই সব কথিত খেলোয়াড় ও অভিনেতাদের দ্বারা অনুসৃত অর্ধশিক্ষিত, সাম্প্রদায়িক, নারীবিদ্বেষী ভাষ্যকার ব্যক্তিগুলো হচ্ছে স্রেফ চিন্তার নর্দমা। আমাদের খেলোয়াড়গুলো ওই নর্দমার পানিকেই অমৃত ভেবে নিজেরা যেমন পান করছেন, তেমনি তা অন্যদেরও পান করতে দাওয়াত দিচ্ছেন। তারা এতই অজ্ঞ ও মূর্খ যে ওই ধারাটির বাইরে যে ইসলামের সর্বজনীন একটি রূপ ও আদর্শ থাকতে পারে সেটা তারা জানেন না।
উপরিউক্ত এই যে চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি, এর জন্য কেবল এই খেলোয়াড়দেরই দায়ী করলে হবে না। এর জন্য আমাদের রাজনীতি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক পেশার সঙ্গে জড়িত সব শ্রেণিই দায়ী। আমরা এই দেশটিকে স্বাধীন করেছিলাম ধর্মনিরপেক্ষ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে। কিন্তু আমরা ধরে নিয়েছিলাম ওইটুকুই ছিল আমাদের দায়। ধর্মনিরপেক্ষতার যে সাংস্কৃতিক চর্চা হওয়া দরকার ছিল, রাজনীতিতে ধর্মকে প্রশ্রয় দেয়া থেকে বিরত থাকা দরকার ছিল, আমরা সেটা করিনি। করেছি ঠিক উল্টোটা। ধর্মকে রাজনীতিতে তো এনেছিই, এমনকি এই দেশের সংস্কৃতির প্রতিটি স্তরে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি সব রকম আয়োজন আমরা নিষ্পন্ন করেছি সফলভাবে। বাংলাদেশ এখন সত্যিকার অর্থেই মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা আর বদ্ধ মনের চাষাবাদের এক উর্বর ভূমি হয়ে উঠেছে। এই দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ডাকাত, মূর্খ, সন্ত্রাসী, ঠগ, ধর্ষক ও ধর্মানুভূতির অবাধ চারণভূমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক ও দলীয় বিবেচনায় যে-সব অযোগ্যদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তারা দেশ ও জাতির স্বার্থ নিয়ে মোটেই ভাবিত নয়। এই শিক্ষকদের হাতে সাকিবদের মতো ধর্মান্ধ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, স্বাধীনতাবিরোধীদের উত্থানই তো ঘটবে। এবং রাষ্ট্র এদেরই পৃষ্ঠপোষকতা করবে, স্বাধীনতাবিরোধী মনোভাবাপন্ন হলেও। কারণ মৌলবাদের বিস্তার এতটাই ঘটেছে যে এখন ক্ষমতাসীন দলের পক্ষেও আর এর বিরুদ্ধে যাওয়া সম্ভব নয় এই কারণে যে তাতে রয়েছে ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা। আর এই সুযোগে জাতীয় দলের হয়ে খেলা খেলোয়াড়দের কেউ কেউ এই দেশের অসাম্প্রদায়িক, নারীবান্ধব কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয় বরং তার বিপরীত চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে। এটা আমাদের আমাদের দেশের জন্য, জাতির জন্য কেবল লজ্জারই নয়, অবমাননাকর। খেলা যত ভালো খেলুক না কেন, সবার আগে এই দেশের সার্বভৌমত্বের মর্যাদা, নারীর প্রতি সম্মান আর অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরক্ষা দরকার।
রাজু আলাউদ্দিন: কবি ও অনুবাদক।
পথে-ঘাটে চলতে ফিরতে আবর্জনার স্তূপ পাড়ি দেওয়া আমাদের অভ্যাস। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার এই অভ্যাস লালন করে চলেছি। প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও আমাদের এই চর্চায় অবদান রয়েছে। অর্থাৎ রাজধানীর কথাই যদি ধরি, এখানে সিটি করপোরেশন যথেষ্ট সফলতার সঙ্গে আমাদের এই ময়লা-আবর্জনার সঙ্গে বসবাস ও জীবনযাপনের অভ্যাসকে ধরে রাখার পেছনে যথেষ্ট অবদান রেখে চলেছে। এই যে ঢাকাবাসীর ময়লা-আবর্জনাপ্রীতি, সেখানে কিছুদিন আগে বাগড়া দিয়ে গেলেন সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ! তার আগ্রাসন থেকে রেহাই পেল না ঢাকাবাসীর প্রিয় ভাগাড় ধানমন্ডি লেকের ময়লা-আবর্জনাও।
ঢাকাবাসী, বিশেষ করে ধানমন্ডি লেকের বিভিন্ন অংশে জমে থাকে ময়লা-আবর্জনা। লেকের পাড়ে ও পানিতে ভেসে থাকে খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল, কাপ ও পলিথিনের ব্যাগসহ বিভিন্ন বর্জ্য। লেকের বিভিন্ন অংশের রেস্তোরাঁয় নির্ধারিত জায়গার বাইরে পেতে রাখা হয় চেয়ার-টেবিল। ময়লা-আবর্জনা আর যত্রতত্র চেয়ার-টেবিলের কারণে থাকে না হাঁটার পরিবেশ। ধানমন্ডি লেকে হাঁটতে বা বেড়াতে গেলে সাধারণত এমন সব দৃশ্যই চোখে পড়ত। আর এর মধ্যেই চলত নগরবাসীর নিত্য চলাচল।
কিন্তু এই অভ্যাসে বাদ সাধেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। এত এত সরকারি ভবন, স্থাপনা বাদ দিয়ে তিনি কিনা বায়না করলেন ধানমন্ডি লেকে ঘুরতে যাওয়ার। আচ্ছা সেটাও না হয় মানা গেল, কারণ তিনি নাকি ঢাকার সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে আসতে চান এবং এখানকার প্রতিবেশ-পরিবেশ, সমাজ সম্পর্কে ধারণা নিতে চান। সে তো ভালো কথা, তবে সেখানে তার যাওয়া হয়নি। কিন্তু তিনি যদি যেতেন, তাহলে আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশ সম্পর্কে ভুল ধারণা পেতেন। কীভাবে? তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ধানমন্ডি লেক দেখে আমাদের ময়লা-আবর্জনাপ্রীতি এবং লেক পাড়ের বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে হাঁটাচলা সম্পর্কে কোনো ধারণাই পেতেন না। এর দায় কে নেবে? পোস্ট কলোনিয়ালিস্টরা যদি চাকরির ভয় না করেÑ একে উপনিবেশিক মানসিকতার কর্মকর্তাদের পরিবেশের ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করেন?
মাখোঁর ঢাকা সফরে ধানমন্ডি লেকে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছার কথা প্রকাশ পেলে হঠাৎ করেই বদলে যায় রাজধানীর এই লেকের চিত্র। লেকটির ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে লেকটিকে ঘষেমেজে ঝকঝকে করা হয়। যার রেশ কাটিয়ে এখনো ধানমন্ডি লেক তার চিরাচরিত ভাগাড়ের রূপটি ফিরে পায়নি। পুরো লেক এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। অনেকটাই ঝকঝকে-তকতকে অবস্থা। লেকের ভেতর ঘাসে বা মাটিতে, কোথাও পড়ে নেই ময়লা-আবর্জনা, এমনটি গাছের ঝরা পাতাও। যেন অনেকটাই গ্রামের বাড়ির উঠান। লেকের পাড়ে ও পানিতেও নেই কোনো আবর্জনা, পানিও পরিষ্কার। লেকের বিভিন্ন জায়গা থাকা রেস্তোরাঁগুলোও বন্ধ। শুধু লেকটির রবীন্দ্রসরোবর অংশে থাকা কয়েকটি দোকান দেখা গেল। সেখানেও চেয়ার পাতা হয়েছে সীমিত।
অথচ, আমাদের পরিবেশ সচেতনতা এবং ব্যবসাবুদ্ধির সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। ধরা যাক, জলাশয়, উন্মুক্ত পরিসর অথবা সবুজ সমারোহের কারণে কোনো একটি স্থানে সাধারণ মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেল। তো আমরা সেখানে কী করি? জলাশয় দখল করে ভাসমান রেস্তোরাঁ বানাই, জলাশয়ে বোট বা নৌকা নামাই আর সেখানে রেস্তোরাঁর ময়লা, চিপসের প্যাকেট-পানীয়র বোতল ফেলি। উন্মুক্ত পরিসরকে প্রথমে উন্নয়নের নামে চলাচলের পথ বানাই সবুজ নষ্ট করি। পরে সেখানে খাবারের দোকানপাট দিয়ে চেয়ার- টেবিল বসিয়ে এলাহিকাণ্ড বাধিয়ে দেই।
ধানমন্ডি এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য একমাত্র উন্মুক্ত জায়গা এই লেকটিতেও আমরা ঘাস-আচ্ছাদিত জায়গা কমিয়েছি উন্নয়নের নামে। পায়ে চলার যে রাস্তা রাখা হয়েছিল সেগুলোও ছিল জায়গায় জায়গায় ক্ষত-বিক্ষত। খেয়াল করে না হাঁটলে হোঁচট খাওয়ার উদাহরণ কম নয়। বিভিন্ন জায়গা ময়লা-আবর্জনায় ভরা। যত্রতত্র চেয়ার-টেবিল বসানোর কারণে হাঁটার পথ প্রায় বিলুপ্ত। দীর্ঘদিনের এই পরিস্থিতির সঙ্গে ধানমন্ডিবাসীর যে অভ্যাস তৈরি হয়েছিল, সেটা মাখোঁর আসার খবরে বাধাগ্রস্ত হলো। এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ধানমন্ডি লেকে যদি আমাদের চিপসের প্যাকেট বা কোক-পেপসির খালি বোতল ফেলে দিতে দ্বিধা তৈরি হয়? এসব আবর্জনা যত্রতত্র ছুড়ে ফেলতে গিয়ে যদি মন খচখচ করে? ময়লার এই ভাগাড় মাখোঁর আগ্রাসনের শিকার হলো।
মাখোঁর সফরে ধানমন্ডি লেক এলাকা থেকে ৭ ট্রাক ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এমনকি মাখোঁর লেক দর্শনের ইচ্ছার কারণে চার দিন ধানমন্ডি এলাকার বাসাবাড়ির ময়লাও নাকি সংগ্রহ করেনি সিটি করপোরেশন। মানে এই চারদিন ধানমন্ডিবাসী বাসার ময়লা বাসাতেই স্তূপ করে রেখেছে। পার্ক-খোলা ময়দান বা পথে-ঘাটে বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করে আনা ময়লার দুর্গন্ধ আমাদের চিরচেনা। ফলে ধানমন্ডিবাসী এই চারদিন এই চিরচেনা দুর্গন্ধকে চিরআপন করে নিতে পেরেছেন কিনা, তা অবশ্য জানার চেষ্টা করিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির ধানমন্ডি লেকে একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হাঁটবেন, কিছুটা সময় কাটাবেন বলে লেকটিকে পরিচ্ছন্ন করার কাজটি করা হয়েছে। বিদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সামনে যাতে দেশের মানমর্যাদা থাকে, সে জন্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি কিছু সংস্কার কাজও করা হয়েছে। লেকের হাঁটার রাস্তায়ও অনেক জায়গায় সিমেন্ট-বালুর আস্তরণ দেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্রসরোবরের মঞ্চের খুঁটিগুলোতে দেওয়া হয়েছে রঙ। কিছু দূর পরপর হাঁটাপথের দুপাশে থাকা প্লাস্টিকের ময়লা ফেলার বিনগুলোও পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে যেন অন্য এক ধানমন্ডি লেক। কিন্তু ধানমন্ডি লেক পরিচ্ছন্নতার এই কর্মযজ্ঞ কিন্তু সিটি করপোরেশন কোনো সংবাদ সম্মেলন করে, লোকজন ডেকে, মিডিয়াকে জানিয়ে করেনি। বরং মিডিয়া খোঁজ নিয়ে তারপর খবর করেছে। এটা সিটি করপোরেশনের চর্চার মধ্যে পড়ে না। তারা খাল পরিষ্কার, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, বাসাবাড়ির মশা মারার নিয়মিত কাজগুলো করতে মিডিয়াতে যেভাবে উদ্বোধনের কামান দাগান, সেখানে এমন নীরবে কাজ করা কেন? তা ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি শিখতে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরও হয়নি।
এহেন পরিস্থিতিতে মাখোঁদের মতো অতিথিদের বাংলাদেশ সফরে ইচ্ছামতো ঘোরাঘুরির ইচ্ছা যে দেশের বিভিন্ন জনপরিসরে চেপে বসা নানা রকম অচলাবস্থা চোখে ধরিয়ে দেবে না, তার গ্যারান্টি নেই। যেখানে অচলাবস্থাকেই অভ্যাস ও অভ্যস্থতায় রপ্ত করে আমরা বেঁচে থাকি, সেখানে এই রাতারাতি নাগরিকসেবা ও পরিসরের ঝাঁ চকচকে পরিস্থিতি আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে জি২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ এবং তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের কিছু কথা তো বলতে হচ্ছে। সামনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। অন্য সব দেশের মতো দেশের সংবিধান মেনে এই নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারের বিরোধী পক্ষ আর দেশের কিছু বিজ্ঞ সুধীজন তা মানতে চান না।
তাঁদের মতে, নির্বাচন হতে হবে অসাংবিধানিকভাবে। এমন নির্বাচন বিশ্বে শুধু একটি দেশেই হয়, সেই দেশটি হচ্ছে পাকিস্তান। এই পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই করে বাঙালি একাত্তরে দেশ স্বাধীন করেছিল। বদলে যাওয়া বাংলাদেশের গল্প শেখ হাসিনা নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশ শাসন করছেন প্রায় ১৫ বছর।
তাঁর বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশে বেঁচে ছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। ঘাতকরা তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা, আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। অনেক চাড়াই-উতরাই পার হয়ে শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে পিতার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছিলেন।
সেটি একটি অভূতপূর্ব ঐতিহাসিক ঘটনা। তখন থেকেই বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার যাত্রা শুরু। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনার সামনে প্রথমে যে চ্যালেঞ্জটা ছিল তা হচ্ছে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, দেশের প্রথম সেনাশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান। ১৫ আগস্টের পর ৮১ দিনের জন্য ঘাতকদের সহায়তায় ক্ষমতায় ছিলেন বঙ্গবন্ধুরই দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী খন্দকার মোশতাক।
তিনি পঁচাত্তরের ঘাতকদের, খুনিদের তাদের অপরাধের দায়মুক্তি দিয়ে একটি অধ্যাদেশ জারি করেন। জিয়া ক্ষমতা দখল করে ১৯৭৭ সালে একটি তামাশার নির্বাচন করে, এরপর সেই অধ্যাদেশটিকে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করে তা আইনে পরিণত করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচিত সংসদে সেই কুখ্যাত আইনটি বাতিল করে সরকার পঁচাত্তরের খুনিদের উন্মুক্ত আদালতে বিচার শুরু করেন। যাত্রা শুরু হয় দেশে আইনের শাসনের। ইচ্ছা করলে শেখ হাসিনা এই বিচারকাজ একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে করতে পারতেন। তা তিনি করেননি। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া এই বিচারকাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে শেখ হাসিনা ফের ক্ষমতায় এসে এই বিচারকাজ শেষ করেন।
১৯৭৬ সালে উচ্চ শিক্ষার্থে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে যাই। তখন ওই দেশের পত্রিকায় বহির্বিশ্বের তেমন কোনো সংবাদই থাকত না। মাঝে মধ্যে বাংলাদেশের বন্যা, নৌকাডুবি, শীতে মানুষের মৃত্যু এমন সব নেতিবাচক সংবাদ থাকত। ১৯৭৬ সালে শিকাগো শহরের ট্যাক্সিচালককে বাংলাদেশ কোথায় বোঝাতে অনেক চেষ্টা করে বলতে হয়েছে একাত্তরের যুদ্ধের কথা। জবাবে সে বলে ‘ও মুজিব কান্ট্রি’? বলি হ্যাঁ। তার পরের বাক্য ‘তোমরা তোমাদের নেতাকে মেরে ফেলেছ।’ চুপ হয়ে যাই। সেই বাংলাদেশকে মানুষ এখন নানা কারণে চেনে। চেনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি এখন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্ব্বাসাডর।
গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য নানা রঙের বিরোধী দল বেশ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে আছে—বিএনপি, জামায়াত, বিভ্রান্ত বাম দলগুলো, আছে আচমকা রাজনৈতিক নেতা, আছে ওয়ান ম্যান পার্টি। পেছনে আছে সরকারি দলের কিছু হাইব্রিড ধান্দাবাজ আর সুযোগসন্ধানী নেতা। আর আছেন সরকারের কিছু সুবিধভোগী কর্মকর্তা। তাঁদের সবার পেছনে আছে পশ্চিমা বিশ্বের কিছু পরাশক্তি, যারা দেখতে চায় আগামী দিনে তাদের পছন্দের একটি তাঁবেদার সরকার। কেউ ২৪ ঘণ্টা সময় দেন, কেউ তারিখ দিয়ে বলেন অমুখ দিন শেখ হাসিনা ২০টা স্যুটকেস নিয়ে পালিয়ে যাবেন। এ পর্যন্ত তেমনটা কিছু হয়নি।
অন্যদিকে শেখ হাসিনা বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে আরো বেশি সমাদৃত হচ্ছেন। বাংলাদেশ সদস্য না হয়েও আমন্ত্রণ পাচ্ছে ব্রিকস সম্মেলনে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি যাচ্ছেন ‘আসিয়ান’ সভায় যোগ দিতে। আর উন্নত দেশগুলোর জোট জি২০ সম্মেলনে অংশ নিতে শেখ হাসিনাকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সদ্যঃসমাপ্ত এই জোটের দুই দিনব্যাপী সম্মেলন শেষ হলো গত ১০ সেপ্টেম্বর। শেখ হাসিনা ছাড়াও এই সভায় যোগ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ উন্নত ও ধনী দেশগুলোর প্রায় ২৫ জন সরকারপ্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। সবার মাঝে উজ্জ্বল ছিল শেখ হাসিনার উপস্থিতি।
প্রশ্ন হতে পারে কেনই বা বাংলাদেশকে এমন একটা সম্মেলনে আমন্ত্রণ, আর কেনই বা শেখ হাসিনাকে এই সম্মেলনে এত সম্মান? সম্মেলন শুরু হয় সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখ। শেখ হাসিনা আগের দিন দিল্লি পৌঁছেন। সেই দিন অপরাহ্নে তাঁর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর সরকারি বাসভবনে দেড় ঘণ্টার একান্ত বৈঠক করেন। এই বৈঠক শেষ হতেই মোদি বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে। যদিও এই দুই বৈঠকে একান্তে কী আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি, তবে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এই দুই বৈঠককেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। এই সম্পর্ক রক্তের, যা একাত্তরে স্থাপিত হয়েছিল। এমন সম্পর্ক ইতিহাসে বিরল। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের চার হাজার কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ সীমান্ত আছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তার জন্য ভারত অনেকটা বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। উত্তর-পূর্ব ভারতে একাধিক উগ্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ১৯৪৭-পরবর্তী সময় থেকে এই অঞ্চলকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে পৃথক রাষ্ট্র গঠন করতে সহিংস আন্দোলন করে এসেছে। সব সময় এরা সহায়তা পেয়েছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কাছ থেকে। গত ৫০ বছরে দেখা গেছে যখনই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল, ভারতের এই অঞ্চল সবচেয়ে বেশি নিরাপদ ও শান্ত ছিল। অন্যদিকে বাকি সময় এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো শুধু আইএসআই থেকে সহায়তাই পায়নি, বাংলাদেশকে তারা অবৈধ অস্ত্র চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার করেছে।
বিএনপি আমলে এই কর্মযজ্ঞ দেখাশোনা করতেন খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান। ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামে এমন একটি অস্ত্রের চালান (১০ ট্রাক) আটক হলে সব কিছু প্রকাশিত হয়ে পড়ে। এই অপরাধে এরই মধ্যে তারেক রহমানকে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। তারেক রহমান এখন লন্ডনে পলাতক। ভারতের এই সীমান্ত এখন অনেকটা শান্ত, যদিও মণিপুরে অভ্যন্তরীণ কারণে কিছুটা অশান্তি বিরাজ করছে। অন্যদিকে গত ১৫ বছরে এই অঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে নানামুখী যোগাযোগ স্থাপনের কারণে অর্থনৈতিকভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে যে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য ভারত সব সময় বাংলাদেশের কাছে ঋণী হয়ে থাকবে। ভারত তো তার নিজের স্বার্থেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চাইবে। তারা আবার বাংলাদেশকে অস্ত্র চোরাচালানের রুট দেখতে চায় না। এ নিয়ে তো তারা সব সময় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে, তা বিচিত্র কিছু নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সমীকরণ কিছুটা ভিন্ন। একাত্তরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি। ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্র শুধু বাস্তবতাই মেনে নেয়নি, বর্তমানে দেশটি বাংলাদেশের একটি বড় উন্নয়ন সহযোগী। এই দেশে জ্বালানি খাতে তাদের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের রপ্তানির একটি বড় অংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। কভিডের সময় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অনেক সহায়তা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি সব সময় তাদের অর্থনৈতিক ও করপোরেট স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। এই স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে অনেক দেশকে ধ্বংস করেছে, হত্যা করেছে অনেক সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে। এসব অপকর্মের জন্য তারা কখনো গণতন্ত্র, কখনো মানবাধিকারকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে। ইতিহাস তা-ই বলে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রায় সব দেশের সঙ্গেই অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত। মিয়ানমারে, যেখানে বাস্তবে এখন কোনো ক্রিয়াশীল সরকারই নেই, সেখানে বিরাট বিনিয়োগ আছে যুক্তরাষ্ট্রের। ভিয়েতনামে না আছে গণতন্ত্র, না আছে প্রচলিত অর্থে কোনো মানবাধিকার। দিল্লির সম্মেলন শেষে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ছুটে গেলেন সেই ভিয়েতনামে। কারণ অর্থনৈতিক স্বার্থ। বেশ কিছু সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নানা কথাবার্তা আর কর্মকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশের মানুষ ও সরকার স্বাভাবিক কারণেই মনে করেছে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন চায়, হোক তা অসাংবিধানিকভাবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে সংসদে কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ তাদের অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তি বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছেন, তাঁরা বাংলাদেশে কোনো বিশেষ দলকে ক্ষমতায় আনতে চান না। তাঁরা একটি সুস্থ ধারার রাজনীতি চান। তাঁদের এই চাহিদার সঙ্গে বাংলাদেশ কখনো দ্বিমত করেনি। যুক্তরাষ্ট্র সব সময় তাদের স্বার্থে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে মরিয়া।
গত এপ্রিল মাসে এ বিষয়ে বাংলাদেশ তাদের রূপরেখা ঘোষণা করে বলে, এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটিতে কারো একক আধিপত্য থাকা উচিত নয়। এটির ব্যবহার সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দিকে কিছুটা বিভ্রান্তির মধ্যে থাকলেও এখন তাদের কাছে বাংলাদেশ বিষয়টা পরিষ্কার করতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতের সঙ্গে আরেকটি ভুল-বোঝাবুঝির বিষয় ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক। তাদের ধারণা ছিল, বাংলাদেশ চীনের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে। বাংলাদেশ পরিষ্কার ভাষায় বলেছে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্রেফ অর্থনৈতিক। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এখনো বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ দ্বারা পরিচালিত হয়। দিল্লিতে শেখ হাসিনা নানা আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে তা উল্লেখ করতে ভোলেননি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এরই মধ্যে বাংলাদেশের অনেক ইস্যুতে ঐকমত্য হলেও দুই দেশের মধ্যে অনেক বিষয়ে অবিশ্বাস রয়েই যাবে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অতীত ইতিহাস খুব ভালো নয়।
বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার ওপর সব উন্নত দেশের দৃষ্টির অন্য আরেকটি কারণ হচ্ছে, দেশটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমানে এই অঞ্চলের একটি অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠছে। বিশ্বে যার বর্তমান অবস্থা ৩২তম। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশটি বিশ্বের নবম, কারো কারো মতে তৃতীয় ভোক্তা পণ্যের বাজার হয়ে উঠবে। জার্মানি বা যুক্তরাজ্যও পেছনে থাকবে। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশের বিরাট জনসংখ্যা, যার একটি বড় অংশ অর্থনৈতিকভাবে মধ্যবিত্ত। তারাই হবে এই ভোক্তা পণ্যের ক্রেতা। যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা ভারত কিংবা অন্য যেসব দেশ ভোক্তা পণ্য উৎপাদন করে তাদের তো বাংলাদেশের ওপর নজর থাকাটা স্বাভাবিক।
বর্তমানের এই অবস্থা ধরে রাখতে হলে এই দেশে চাই একটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, চাই সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ, যার নিশ্চয়তা এরই মধ্যে শেখ হাসিনা দিয়েছেন। কয়েক দিন পর তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন। সেখানেও তিনি দেশের কথা বলবেন, বিশ্বে শান্তির কথা বলবেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহবান জানাবেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণগুলো উল্লেখ করে তার জন্য যারা দায়ী তাদের সচেতন করবেন। তিনি পিতার কণ্ঠেই কথা বলবেন।
এখন আর বাংলাদেশকে অন্য কোনো দেশে চেনাতে হয় না। শেখ হাসিনার ছবি দেখে মানুষ বলতে পারে তিনি কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ কোনো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য না হলেও সেখানে এই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ডাক পড়ে। তিনিই এখন বাংলাদেশ। তবে তাঁর সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। যত না বিরোধী শিবির থেকে, তার চেয়ে বেশি দলের অনেক সুযোগসন্ধানী নেতা থেকে, যাঁরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন।
২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার জন্মদিন। তা তিনি সাধারণত পরিবারের সঙ্গে পালন করেন। তাঁকে জন্মদিনের আগাম শুভেচ্ছা। আপনিই তো বদলে দিয়েছেন ৩০ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশকে।
লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক
অভিষেকে ২৬ মিনিট খেলে দুই অ্যাসিস্টের অবদান রাখতে পেরেছিলেন নেইমার। আল হিলাল জিতেছিল। কিন্তু পর পর দুম্যাচ খেললেন পুরো সময়। তেমন কিছুই করতে পারলেন না। ড্র করেছে আল হিলাল আবার।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে শেষ দিকের গোলে ১-১ ড্র করে পরাজয় বাঁচিয়েছিল আল হিলাল। আজ সৌদি প্রো লিগে দামাক এফসির বিপক্ষে ম্যালকমের গোলে ৯ মিনিটে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।
সাত ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তবুও শীর্ষেই রইলো আল হিলাল।
বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হবে। এ উপলক্ষে ২১টি বেসরকারি সংস্থা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’।
দিবসটি উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ২১টি আয়োজক সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে ধানমন্ডি-২৭-এর মোড় থেকে আবাহনী খেলার মাঠ পর্যন্ত ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’ শীর্ষক র্যালি আয়োজন করা হয়েছে।
২০০৬ সাল থেকে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এটি পালন শুরু হয়, যেখানে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্র্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) মুখ্য সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে এসেছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম যানজটপ্রবণ ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকারিভাবে এ দিবসটি পালনের উদ্যোগ এই বছর নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে দিবসটি পালনের প্রায় দেড় যুগ পার হতে চললেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ও ফলপ্রসূ পরিকল্পনা ও নীতির বাস্তবায়ন এখনো দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, যানজটের বড় কারণ হলো এই ব্যক্তিগত গাড়ি। দেশে মেগা প্রকল্পগুলো ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য না দিয়ে গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে করা উচিত। এখন গণপরিবহনের দিকে জোর না দেওয়ায় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি, যা সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিআরটিএ একটি সূত্র থেকে জানা যায়, দিন দিন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত মোট যানবাহন নিবন্ধন আছে ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮টি মতো। এর মধ্যে গণপরিবহনের সংখ্যা মাত্র ২ শতাংশের কম। আর বেশিরভাগই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা গাড়ি।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বায়ুদূষণে বিশ্বে দুই বিলিয়ন শিশু প্রতিদিন বিষাক্ত বাতাসের সংস্পর্শে আসছে। এদের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি প্রতিবছর মারা যাচ্ছে। তবুও দেশে গণপরিবহনকে প্রাধান্য না দিয়ে বড় বড় অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। যার জন্য দেশে দিনের পর দিন ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে সড়কে নানারকম বিশৃঙ্খলার শঙ্কা থেকেই যাবে।
এদিকে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানান, প্রতি মাসের প্রথম রবিবার সব ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। নীতিনির্ধারকরা গণপরিবহন ব্যবহার করলেই সাধারণ মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ উপলব্ধি করতে পারবেন, ফলে গণপরিবহনের মান বাড়তে পারে। টেকসই পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস সারা বিশ্বে বেগবান হলেও বাংলাদেশে এ প্রয়াস সীমিত। তাছাড়া ঢাকা শহরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দিয়ে চলছে বিআরটিএ। নগর পরিকল্পনা ও পরিবহন পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় নেই, কর্র্তৃপক্ষগুলোর মধ্যেও নেই কার্যক্রমের সমন্বয়। ফলে নগরে গাড়ির চাপ বাড়ছে, মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েছে যানজট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কখন যাবি জনগণ এখন আর এই কথা বলে না। বলে, এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা এখন যাবি। আর যাবেনইবা কোথায়? এখন সেটাই দেখার বিষয়। সর্বশেষ গতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাফ বলে দিয়েছে, তারা শেখ হাসিনার অধীনে হওয়া নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না। কারণ তাদের যে প্রতিনিধিরা দেশে এসেছিলেন, তারা গিয়ে বলেছেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপি আয়োজিত ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-সিলেট অভিমুখী ‘রোডমার্চ’ কর্মসূচির শুরুতে ভৈরবের বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সকালে অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবি আদায়ে এই রোডমার্চ শুরু হয়। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রোডমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন গয়েশ^র চন্দ্র রায়।
এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়ারেস আলী মামুন, নির্বাহী কমিটির সদস্য লায়লা বেগম ও মজিবুর রহমান ইকবাল।
ওই জনসভায় গয়েশ্বর চন্দ্র আরও বলেন, ‘বিএনপির দাবি দেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন, যা হতে হবে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। যার যার ভোট সে সে দেবে। সকালের ভোট রাতে হবে না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসার পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের লোকেরা ধ্বংস করছে। ফলে এতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশের মানুষ আজ অসহায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে। চালের দাম, তেলের দাম, আলুর দাম, বিদ্যুতের দাম হু হু করে বেড়েছে। আজকে ব্যাংকগুলোতে টাকা চুরি করে আওয়ামী লীগের লোকেরা পাচার করছে বিদেশে। রিজার্ভ কমে গেছে। সরকারদলীয় লোকের দুর্নীতির কারণে আজ রিজার্ভ কমছে, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হচ্ছে।’
দুপুরে সিলেট অভিমুখে তারুণ্যের রোডমার্চে যাত্রাপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে পথসভা হয়। এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে গয়েশ্বর বলেন, ‘তারুণ্যের যে রোডমার্চ শুরু হয়েছে, তা সরকার পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে তরুণ সমাজ আজ জেগে উঠেছে। শেখ হাসিনা সরকারকে আর কোনো অশুভ শক্তিই রক্ষা করতে পারবে না।’ এ আন্দোলন ডু আর ডাই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রোডমার্চটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমানায় পৌঁছলে দলের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম খোকন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মোহাম্মদ শামীম ও যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা এসএন তরুণ দেসহ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নেতৃত্বে রোডমার্চকে স্বাগত জানিয়ে শোডাউন করা হয়।
পরে দুপুরে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এলাকায় পথসভা করা হয়। পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সেই মালিকানা আমরা ফেরত দিতে চাই। ক্ষমতায় আসার জন্য আমরা আন্দোলন করছি না। জনগণের অধিকার আর মানুষের ভোটাধিকার ফেরাতে আমরা রাজপথে নেমেছি।’
রোডমার্চটি বিকেল ৪টায় সিলেটে এসে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই রোডমার্চ সিলেটে পৌঁছে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। এরপর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতারা।
এদিকে বৃষ্টি হওয়ায় সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নেতাকর্মীরা সেভাবে অবস্থান নিতে পারেননি। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে অনেকে সমাবেশস্থলে এলেও বৃষ্টির কারণে তারা আশপাশের বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেন। অবশ্য বেশ কিছু নেতাকর্মী ছাতা, ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদি মাথায় দিয়ে মাঠেই অবস্থান করছিলেন। বৃষ্টিতে ভিজে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী সরকারবিরোধী স্লোগান দেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন জানান, রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর থেকেই সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মী মিছিল সহকারে এসে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। তবে বৃষ্টির কারণে মাঠে অবস্থান কষ্টকর হয়ে পড়ে। এরপরও বৃষ্টিতে ভিজে শত শত নেতাকর্মী সেখানে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ সফল করেছেন। সভা শেষে রোডমার্চ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
* প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
রাজধানীর পল্টনে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই পুলিশসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জানা গেছে, আবদুল্লাহ আল মামুন নামে একজন ব্যবসায়ীর কর্মচারী আইএফআইসি ব্যাংকের পল্টন শাখায় ২০ লাখ টাকা জমা দিতে আসেন। তিনি এসে টাকা জমা দেওয়ার লাইনে দাঁড়ান। এ সময় পুলিশের ইউনিফর্ম পরা দুই ব্যক্তি তাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যান। পরে তার কাছে থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পরে সিটিটিভি ফুটেজ দেখে দুজন হকারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ধারাবাহিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয় অন্যদের। এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের (ডিএমপি) উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের সঙ্গে দুজন পুলিশ কনস্টেবল জড়িত ছিল। তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিভিলে থাকা তিন ব্যক্তি টাকার বিষয়ে ওই দুই পুলিশকে তথ্য দেয়। এরপর ইউনিফর্ম পরা দুই পুলিশ কনস্টেবল ব্যাংকে ঢুকে ওই ব্যক্তিকে বাইরে নিয়ে আসে। তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। দুই পুলিশ কনস্টেবল বরখাস্ত ছিল।
জানা গেছে, পল্টন থানা-পুলিশ ও ডিবির মতিঝিল জোনাল টিম সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ব্যাংকের সামনের ফুটপাতের হকার হৃদয় ও তার সহযোগী মঞ্জুকে আটক করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের দেওয়া তথ্যে ডেমরা পুলিশ লাইনসে ক্লোজড হয়ে থাকা পুলিশের দুই সদস্য কনস্টেবল মাহাবুব ও কনস্টেবল আসিফকে ১০ লাখ টাকাসহ আটক করা হয়। এরপর বাসাবো থেকে ছিনতাইয়ের আরও ১০ লাখ টাকা ও মোটরসাইকেলসহ সোহেলকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনার ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল মামুন করপোরেট আইডিয়াসের মালিক। তিনি বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই মার্কেটিং অফিসারের মাধ্যমে টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়। টাকা নিয়ে ব্যাংকের ওই শাখায় যাওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে। এরপর দ্রুত পুলিশকে জানাই।
এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, পুলিশের পোশাক পরিহিত দুই লোক এসে আমাদের কর্মীকে ভয় দেখিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে এটি শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম। এখন জানলাম এ ছিনতাইকাণ্ডে শাহজাহানসহ আরও তিনজন রয়েছে। শাহজাহান আমার দীর্ঘদিনের কর্মী। আমাদের প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারিতে জড়িত।
পুলিশ বলছে, পুরানা পল্টনে করপোরেট আইডিয়াসের অফিস থেকে টাকা জমা দেওয়া জন্য ব্যাংকের উদ্দেশ্যে যাত্রার পরপরই শাহজাহান, হৃদয় ও রাসেল পুলিশের দুই সদস্যকে খবর দেন। তারা পল্টনের আইএফআইসি ব্যাংকে গিয়ে টাকার ব্যাগসহ আজিমকে তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে দুই পুলিশ সদস্য পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিনতাইয়ে অংশ নেন। এ সময় বাকি তিনজন আশপাশে পাহারায় ছিলেন।
পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর পুলিশের দুই সদস্যকে শনাক্তের পর অন্য তিনজনের বিষয়েও তথ্য বেরিয়ে আসে।
জানা গেছে, ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা একটি হিসাব নম্বরে জমা দেওয়ার পরই ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে আসা হয়। তারা আজিমের টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ব্যাগে থাকা টাকা হুন্ডির অর্থ বলে দাবি করেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আজিমকে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে যান। রাস্তায় এনে তাকে মোটরসাইকেলে তুলে দ্রুত মুগদা এলাকায় নেন। সেখানে টাকার ব্যাগ রেখে ছেড়ে দেওয়া হয় আজিমকে। এরপর ঘটনা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে জানানোর পর পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার-২০২৩। মেলার প্রথম দিনে পর্যটকদের ব্যাপক সাড়া মিলেছে। ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের জন্য যাবতীয় বিষয় নিয়ে মেলায় বসেছে অর্ধশতাধিক স্টল। মেলায় আসা দর্শনার্থীরাও হাতের লাগালেই ভ্রমণসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য এবং ভ্রমণের ওপর অফার পাওয়ায় বেশ খুশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে আগত দর্শনার্থী ও স্টলগুলোতে থাকা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই মিলেছে।
মেলায় স্টল বসিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও। স্টলটিতে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি চালু হওয়া জাপানের নারিতা রুটে যাতায়াত করতে চাইলে মেলায় আসারা পাবেন ২০ শতাংশ ছাড়। এ ছাড়া কাঠমান্ডু, কলকাতা, দিল্লি, আবুধাবি, শারজা, দুবাই, দোহা, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংকক রুটে মিলবে ১৫ শতাংশ ছাড়। এ ক্ষেত্রে বিমানের কল সেন্টারেও (০১৯৯০৯৯৭৯৯৭) সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন আগ্রহীরা।
এদিকে মেলা উপলক্ষে র্যাফেল ড্রর টিকিটও দিচ্ছে এয়ারলাইনসটি। প্রবেশপথে টিকিট কাটলে প্রথম দিনে থাকছে ঢাকা-দিল্লি-ঢাকা কাপল রিটার্ন টিকিট, দ্বিতীয় দিনে থাকছে ঢাকা-গুয়াংজু-ঢাকা রুটে কাপল রিটার্ন টিকিট এবং তৃতীয় দিনে ঢাকা-নারিতা-ঢাকা কাপল রিটার্ন টিকিট পাবেন র্যাফেল ড্রতে বিজয়ীরা।
মেলায় আসা দর্শনার্থীদের ভাষ্য, এরকম মেলার আয়োজন প্রতি তিন মাস পরপর করা প্রয়োজন। তাহলে মানুষের ভ্রমণের ওপর ভীতি কাটবে। তথ্য জানবে খোলামনে। আর এতে দেশের পর্যটন স্পটগুলোতেও তারা সহজে ঘুরতে যেতে চাইবে।
রংপুরের ‘আলী বাবা থিম পার্কে’র আকর্ষণীয় নানা বিষয় ভ্রমণপিপাসুদের জানাতে মেলায় স্টল দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা অফার দিচ্ছি না, তবে আমাদের পার্কে মানুষ কেন যাবে, কী কী দেখার মতো জিনিস দিয়ে আমরা পার্ক সাজিয়েছিÑ সেটা জানাতেই মেলায় আসা।’
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।