
এটা কোনো সরকারের সমস্যা নয়। সমস্যাটা শতভাগ জনগণের। যেহেতু জনগণের মধ্য থেকেই উঠে আসে সরকার, সেহেতু এই রাষ্ট্রীয় সমস্যাকে শুধু সরকারের বা বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর দায় চাপালে হবে না
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সরকারি স্থাপনাসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ ও জনসাধারণের নিরাপত্তাসহ সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতেই পুলিশকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়। বলা ভালো, এই ক্ষমতা প্রদান করতে দেশের মানুষই বাধ্য করে। কারণ দেশের সমস্ত নাগরিকের রাজনৈতিক শিক্ষা, বোধ এবং রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা এক নয়। না হওয়ার ফলেই সরকার বাধ্য হয়, উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে আইনি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসে দেশের মানুষকে একটি সভ্য আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কেন বাধ্য হচ্ছে এমন আইন করতে? আসলে এই বিভক্তিই প্রকটভাবে প্রমাণ করে, গণতান্ত্রিক সরকারের পুলিশের ক্ষেত্রে যে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত যৌক্তিক। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে, যেখানে পুলিশ রয়েছে কিন্তু তাদের কোনো কাজ নেই। অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে আদালতে তেমন কোনো মামলা নেই। অপরাধীশূন্য জেলখানা রয়েছে অনেক দেশে। সেই দেশের জনগণকে শাসন বা আন্দোলন করতে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া তো দূরের কথা, আন্দোলনের কোনো প্রয়োজনই পড়ে না। কারণ মানুষের চাহিদা, নাগরিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সেই দেশের সরকার ভয়ংকরভাবে সচেতন। এই অভ্যাস একদিনে গড়ে ওঠেনি। তাদের শিক্ষাব্যবস্থাই এমন ছাঁচে তৈরি করা হয়েছে, সেখানে একজন নাগরিক খুব সহজেই রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বশীল। ফলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো ধরনের আইন করতে হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে প্রয়োজন হচ্ছে, কেন? এই ‘কেন’-এর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে আসল কারণ।
বিস্তারিত— পুলিশের ক্ষমতা যৌক্তিক
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন ছিল উল্লেখ করার মতো ঘটনা। এর সূত্রপাত হয় প্রতিবাদী স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশ থেকে। অনুমতি নিয়ে, কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে যা সম্ভবই হতো না। এক্ষেত্রে 'আরব বসন্তের' কথা স্মরণ করা যেতে পারে
আমাদের যাপিত সময়কে বিশেষ করে রাজনৈতিক বাস্তবতাকে ‘কাফকায়েস্ক’ শব্দটি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। এর আগে, ফ্রানৎস কাফকার নামে প্রচলিত একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যাক। একবার সরকারের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ সভায় কাফকাকে আমন্ত্রণ জানাতে এলো কিছু লোক। কাফকা তাদের কাছে জানতে চাইলেন এই সভার অনুমতি সরকার দিয়েছে কি না। আয়োজকরা জানালেন যে হ্যাঁ তারা অনুমতি পেয়েছেন। কাফকা তখন আয়োজকদের বললেন, সরকারের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ সভার আয়োজনে সরকারই অনুমতি দেয়, সেটা তো আপনারা যে ঘটনার প্রতিবাদ জানাবেন তার চেয়েও বড় অপরাধ। গল্প অনুযায়ী কাফকা সেই আয়োজনে যাননি। এটা কাফকাকে নিয়ে একটি চালু গল্প। তবে, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এই শোনা গল্পটির ‘কাফকায়েস্ক’ বাস্তবতা রয়েছে। কাফকার গল্প-উপন্যাসে যে অসহনীয়, কঠিন বাস্তবতার অমীমাংসিত নিয়তিজাত পরিস্থিতি তাকে বোঝাতে ‘কাফকায়েস্ক’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অনেকটা যেন আমরা বাস করছি কাফকার বাস্তবতায়। ‘কাফকায়েস্ক’ শব্দের অর্থ করা যেতে পারে অর্থহীন, বিভ্রান্তিকর, ভীতিকর জটিলতা অথবা পরাবাস্তব বিকৃতিতে ভরা নৈরাজ্যের বোধ-জাগানো অনুভূতি কিংবা দুঃস্বপ্নপীড়িত রকমের উদ্ভট কিছু। প্রতিটা শব্দই চারপাশের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে আপনি মেলাতে পারবেন।
বিস্তারিত— ‘অনুমতির’ কাফকায়েস্ক
১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। বাংলাদেশে প্রবীণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। চলতি বছর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। যার মধ্যে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ ৯৭ লাখ ২৭ হাজারের কিছু বেশি। আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে প্রবীণদের সংখ্যা হবে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। আর আগামী ২০৫০ সালে এই সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি এবং ২০৬১ সালে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি প্রবীণ জনগোষ্ঠী হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে পরিবার/খানাপ্রতি লোকসংখ্যা প্রায় ৪.০৩ জন, যার মধ্যে প্রায় ০.২৪ জন প্রবীণ মানুষ আছে। আমরা তাদের ভরণপোষণ করতে পারছি না। ২০৫০ ও ২০৬১ সালে খানাপ্রতি হবে যথাক্রমে ১.১১ জন ও ১.৩৫ জন। তখন কী হবে? এখন অনেকেই যে সমস্যাকে পারিবারিক মনে করছেন, তখন তা হবে রাষ্ট্রীয় মহাদুর্যোগ!
বার্ধক্য আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য আজ একটি মারাত্মক চ্যালেঞ্জ। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, প্রবীণ পুরুষের তুলানায় প্রবীণ নারীরা বেশি দিন বাঁচেন। অধিকাংশই আবার বিধবা হয়ে! আমাদের সমাজে তারা বেশি মাত্রায় অবহেলা, দুর্ব্যবহার এবং বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এমনকি নিজের ভাই, স্বামী, সন্তানদের কাছ থেকেই!
বাংলাদেশের সংবিধানে প্রবীণদের সামাজিক নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। আমাদের দেশে প্রবীণদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কার্যক্রম রয়েছে বটে কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। প্রবীণদের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রবীণরা বৃদ্ধ নয়, মানসিক দিক দিয়ে অনেক সক্ষম, দেশ গঠনে তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। দেশের সমাজ পরিবর্তনে এবং উন্নয়নে প্রবীণদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। প্রবীণরা আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র, সমাজের পথপ্রদর্শক। প্রবীণদের সম্মান দেওয়া ও যত্ন নেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কাউকে ফেলে রেখে নয়, বরং সবাকে নিয়ে বিশ্বসমাজের প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির অভিযাত্রা চলমান রাখতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা দলিলের মাহাত্ম্য এখানেই। পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রবীণদের অবদান অপরিসীম। পরিবারের গঠন, উন্নয়ন ও সমাজের কল্যাণে কর্মময় জীবন ব্যয় করে একসময় তারা বার্ধক্যে উপনীত হন। তখন প্রবীণদের সার্বিক কল্যাণ ও সুরক্ষা করা সমাজের আবশ্যিক কর্তব্য। প্রবীণদের সমস্যা সমাধানে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সবার সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। আধুনিক সমাজে অনেক ক্ষেত্রে প্রবীণরা শুধুই অবহেলিত এবং বঞ্চিত। মানবিক ও ধর্মীয় বিবেচনাতেই প্রবীণদের অবস্থান অত্যন্ত সম্মানের।
বিশ্বের অনেক দেশসহ সার্কভুক্ত কোনো কোনো দেশে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। এদিক থেকে আমাদের দেশ এখনো পিছিয়ে আছে। প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩ এবং পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩ প্রণয়ন করা হলেও এ আইন ও নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন তেমনভাবে হচ্ছে না। এক সমীক্ষায় জানা যায়, পারিবারিক সহায়তা, পেনশন ও বয়স্ক-ভাতার আওতার বাইরেও দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রবীণ অবহেলা ও অযত্নের শিকার। এ জনগোষ্ঠী তাদের জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে অক্ষম। ফলে অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তির মতো পেশা গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে ষাটোর্ধ্বদের প্রবীণ বলা হলেও ২০১৯ সালের পর থেকে ৬৫ ঊর্ধ্বদের প্রবীণ বলে ঘোষণা করা হয়। দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী প্রবীণ হলেও তাদের কল্যাণে তেমন কোনো সুব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই প্রবীণ জনগোষ্ঠী ষাটোর্ধ্ব বয়স থেকে কর্মহীনতা, আর্থিক প্রবঞ্চনা, পুষ্টিহীনতা, নিরাপদ পানি ও বর্জ্যব্যবস্থার অভাব, পারিবারিক অবহেলা, নিঃসঙ্গতাসহ নানা জটিল পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে দিনযাপন করেন। শহুরে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মধ্যে এ অবস্থা তেমন একটা পরিলক্ষিত না হলেও নিম্নবিত্ত ও গরিব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বঞ্চনার এই মাত্রা প্রবলভাবেই দৃশ্যমান।
অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নই প্রবীণদের অবস্থার উন্নতির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, হাতে টাকা থাকলেই একজন প্রবীণ সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন। অন্যদিকে, সব ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের জন্য বিশেষজ্ঞরা ১০টি পরামর্শ দিয়েছেন, যা নিজের ভালো থাকার জন্য আবশ্যকীয়। বয়স ৬০ পেরিয়ে গিয়েছে? তাহলে মনে রাখতে হবে আপনার শরীর এবার বদলাচ্ছে। বহু ধরনের হরমোনের তারতম্য হতে পারে এবার। শুধু তা-ই নয়, এবার পেশির ক্ষমতাও কমতে পারে। তাই এবার থেকে আলাদা করে নজর দিতে হবে স্বাস্থ্যের দিকে। এই বয়সে পৌঁছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে। তাই যতদূর সম্ভব সাবধানে থাকুন। যাতে সংক্রামক রোগ থেকে দূরে থাকতে পারেন, এর ব্যবস্থা নিন। ষাটোর্ধ্ব বয়সে এসে খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ সংগ্রহ করার ক্ষমতাও কমে। তাই এ সময় আলাদা করে ভিটামিন বা মিনারেল সাপ্লিমেন্ট খাওয়াও দরকার। তবে সেটি অবশ্যই চিকিৎসকদের জিজ্ঞাসা করে। তাদের পরামর্শমতো মাল্টিভিটামিন খেতে পারেন এ সময়। কাজকর্ম একেবারে বন্ধ করে দেবেন না। কায়িক পরিশ্রম না করলেও নিজের মতো ‘অ্যাক্টিভ’ থাকার চেষ্টা করুন। যতটা সম্ভব চনমনে থাকুন। তাতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে। হালে করোনা তো বটেই আরও নানা ধরনের সংক্রামক রোগের হার বেড়েছে। যাদের বয়স ৬০-এর ওপরে উঠে গিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের বেশি সমস্যা সৃষ্টি করছে। তাই এমন ধরনের রোগ থেকে দূরে থাকুন। কেউ অসুস্থ এ কথা জানতে পারলে, তিনি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তার আশপাশে যাবেন না। ভিড় এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যান। প্রয়োজনীয় যা যা চেকআপ করানোর আছে, সেগুলো করিয়ে ফেলুন। এতে আপনার শরীর কেমন থাকছে, তার স্পষ্ট ছবিটি দেখতে পাবেন। মানসিক চাপ থেকে যত দূরে থাকা যায়, তত দূরে থাকুন। দরকার হলে পছন্দের গান শুনুন, বই পড়ুন। এগুলো মন ভালো রাখতে সাহায্য করবে, মানসিক চাপ কমাবে। এ সময় ডায়েটে নজর দেওয়া খুব দরকারি। প্রয়োজনীয় সব কটি খাদ্যগুণ শরীরে যাচ্ছে কি না, সেটি দেখা যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি হলো যে খাবারগুলো খাচ্ছেন, সেগুলো আপনার শরীরের জন্য ভালো কি না, তা বোঝা। সেই বুঝে বিশেষজ্ঞের থেকে ডায়েট চার্ট বানিয়ে নিন। শেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা। মনে রাখবেন, এ বয়সে বিশ্রাম খুব দরকারি। তাই নিয়ম করে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমান। তাতে শরীর ভালো থাকবে।
লেখক: সহকারী মহাব্যবস্থাপক, ফরিদপুর ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং কলেজ, ফরিদপুর
[দেশ রূপান্তরে পূর্বে প্রকাশিত]
নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নে দিনব্যাপী বিনা মূল্যে ১২শতাধিক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে। একই সাথে বিনা মূল্যে ওষুধ প্রদান করা হয়েছে। নড়াইলের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শরীফ আতিয়ার রহমান স্মৃতি সংসদ ও মানবিক জঙ্গল গ্রামের যৌথ আয়োজনে এ চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
মেডিকেল ক্যাম্পে ২২জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। এছাড়া বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নড়াইল ইউনিটির উদ্যোগে বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা, গ্রুপ নির্ণয় এবং ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে জঙ্গলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী।
শিক্ষাবিদ মরহুম শরীফ আতিয়ার রহমানের বড় ছেলে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডাক্তার শরীফ জাহাঙ্গীর আতীক বলেন, আমার পিতা মরহুম শরীফ আতিয়ার রহমান একজন শিক্ষাবিদ ছিলেন। পিতার আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে আমাদের পরিবারের ৬জন চিকিৎসক প্রতি মাসের শেষ শুক্রবারে সারা দিনব্যাপী বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নড়াইল ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইসমাইল হোসেন লিটন বলেন, বিভিন্ন এলাকায় বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প এবং মরহুম শরীফ আতিয়ার রহমানের বাড়িতে প্রতিমাসের শেষ শুক্রবার বিনামূল্যে রোগী দেখা হয়। এটি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। মেডিকেল ক্যাম্প সুষ্ঠভাবে সম্পন্নের জন্য যুব রেডক্রিসেন্টের সদস্যরা সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন আজ। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৫ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শেখ হাসিনা। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি এই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতি ছিলেন। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান।
পরবর্তীকালে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ৬ বছর ভারতে অবস্থান করেন। ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডে থেকে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই তিনি শাসকগোষ্ঠির রোষানলে পড়েন। তাকে বারবার কারান্তরীণ করা হয়। তাঁকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়।
১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সামরিক সরকার তাকে আটক করে ১৫ দিন অন্তরীণ রাখে। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বর মাসে তাঁকে দু’বার গৃহবন্দী করা হয়। ১৯৮৫ সালের ২রা মার্চ তাকে আটক করে প্রায় ৩ মাস গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি ১৫ দিন গৃহবন্দী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ১১ নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে এক মাস অন্তরীণ রাখা হয়।
১৯৮৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হয়ে গৃহবন্দী হন। ১৯৯০ সালে ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু ভবনে অন্তরীণ করা হয়। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে সংসদ ভবন চত্বরে সাবজেলে পাঠায়। প্রায় ১ বছর পর ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্তিলাভ করেন।
শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে উল্লেখযোগ্য হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তাকে লক্ষ করে পুলিশের গুলি বর্ষণ। এতে যুবলীগ নেতা নূর হোসেন, বাবুল ও ফাত্তাহ নিহত হন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাকেসহ তার গাড়ি ক্রেন দিয়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে শেখ হাসিনাকে লক্ষ করে এরশাদ সরকারের পুলিশ বাহিনী লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী শহীদ হন। লালদিঘি ময়দানে ভাষণ দানকালে তাকে লক্ষ্য করে ২বার গুলি বর্ষণ করা হয়। জনসভা শেষে ফেরার পথে আবারও তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করা হয়।
১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বারবার হামলা করা হয়। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন চলাকালে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়।
১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে তাঁর কামরা লক্ষ্য করে অবিরাম গুলিবর্ষণ করা হয়। ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে এবং শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দু’টি বোমা পুতে রাখা হয়। শেখ হাসিনা পৌঁছার পূর্বেই বোমাগুলো শনাক্ত হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। বিএনপি সরকারের সময় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয় ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট। ঐদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এক জনসভায় বক্তব্য শেষ করার পরপরই তাকে লক্ষ করে এক ডজনেরও বেশি আর্জেস গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। লোমহর্ষক সেই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভি রহমানসহ তার দলের ২২ নেতা-কর্মী নিহত হন এবং প্রায় ৫০০ মানুষ আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও কানে আঘাত পান।
রক্তাক্ত আগস্টের হৃদয়বিদারক ক্ষত বুকে নিয়ে, স্বজন হারানো শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিলে তিলে নিজেকে তৈরী করেছেন বাংলার জনগণের মুক্তির কান্ডারি হিসেবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এতো ত্যাগ, এতো নির্যাতন আর কোন নেতাকে সইতে হয়নি। একজন শেখ হাসিনা ঝুঁকিপূর্ণ জীবন কাঠিয়ে হয়ে উঠেছেন আজ নির্ভরতার প্রতিক।
শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ দেশী বিদেশি ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন দুই দশক। তার নেতৃত্বে একুশ বছর পর বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছিল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসন।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মমর্যাদা আর স্বনির্ভর হওয়ার পথকে থামিয়ে দিতে আবারও ষড়যন্ত্র। আবারও বাংলাদেশ কে পেছনে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্রে ৭১ ও ৭৫ এর ঘাতকরা যখন একাট্টা তখন একজন শেখ হাসিনাকেই বাংলাদেশকে টেনে তুলতে হয়েছে অন্ধকারের গহবর থেকে। বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল সরকার প্রধান হিসেবে আজ তিনি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পেয়েছে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সুস্পষ্ট অঙ্গীকারের কারণে।
দেশের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও ক্ষমতার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে শেখ হাসিনাকেও বিভিন্ন সময় আপোষ করতে হয়েছে। দলের ভেতরে, বাইরে মেনে নিতে হয়েছে অনেক অযৌক্তিক কর্মকাণ্ড। কিন্তু নিজের আরাধ্য পথ থেকে কখনও বিচ্যুত হননি তিনি। দৃপ্ত অঙ্গীকারে ছুটে চলেছেন বাংলাদেশের স্বপ্ন সারথি হিসেবে। নির্মম আর নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে মোকাবিলা করে তার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
জননেত্রী থেকে এখন বিশ্বনেত্রীতে পরিণত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রবক্তা স্বপ্নদর্শী এই নেত্রী ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেন। তিনবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা এবং চারবার সংসদ নেতা, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে নিজের নেতৃত্বকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এখন বিশ্বের বিস্ময়কর নেতৃত্ব। দেশ ছাপিয়ে বৈশ্বিক বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা চেতনা ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। তিনি এক জীবন্ত ইতিহাস।
একবিংশ শতকের অভিযাত্রায় তিনি কীভাবে বাঙালি জাতির কাণ্ডারি হয়েছেন তা এখন ইতিহাসের অনুসন্ধানের বিষয়। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন সেই স্বপ্ন রূপায়নের দায়িত্ব নিয়ে বাঙালি জাতির আলোর দিশারি হওয়ার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন তারই তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করেছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনেও তিনি বিশ্ব নেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। মিয়ামনারে জাতিগত সহিংসতায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে হয়েছেন প্রশংসিত। বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃ প্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র সীমা বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সমুদ্রে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও ছিটমহল বিনিময়, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ।
মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৪ বছর ৪ মাসে উন্নীত, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫.৬০ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফাইভ-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
একজন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। জনকল্যাণমুখী বহুবিধ কার্যক্রমে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকে। তাঁরই অভিপ্রায়ে বাস্তবায়িত পদ্মাসেতুসহ সহ অসংখ্য মেগাপ্রজেক্ট বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। ভয়াবহ করোনা সংক্রমণের অভিঘাত মোকাবিলা করে উন্নত বিশ্বেও হয়েছেন সমাদৃত। বৈশ্বিক সংকট, অর্থনৈতিক মন্দা ও ক্ষমতাধর রাষ্ট্র সমূহের নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আত্মপ্রত্যয়ী শেখ হাসিনা ছুটে চলেছেন নির্ভীক সংশপ্তক হিসেবে।
টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক কল্যাণে শেখ হাসিনার এসব যুগান্তকারী পদক্ষেপ বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
বাঙালির স্বপ্ন সারথি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সমকালীন বিশ্বের আলোচিত নাম। তার দর্শন, রাষ্ট্রচিন্তা আর জীবনবোধ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছে উন্নত রাষ্ট্রের দিকে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গৌরবের। তার অন্তর্গত উজ্জ্বলতা ও স্নেহসিক্ত, মমতাপূর্ণ হৃদয় সকল কর্মীদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, সফল রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। অভিবাদন।
লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী।
সম্মোহনী নেতৃত্বের সমান্তরালে শেখ হাসিনাকে রূপান্তরের নেতৃত্বও বলা যায়; যে দুটো গুণ বঙ্গবন্ধুর মধ্যেও ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সময় পেয়েছিলেন ১,৩১৪ দিন; যে সময়ে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ যে অনেক বদলে গেছে, তার প্রমাণ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচকে প্রতীয়মান। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি যে ভালোবাসা তা অনন্য। দেশের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তার উন্নয়নের যাদুর কাঠির স্পর্শে সজীব হয়নি। এখন এটি ধ্রুব সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা এবং গতিশীল নেতৃত্বে দেশ করোনা মহামারি দক্ষতার সাথে মোকাবেলায় সমর্থ হয়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রেরিত একটি বার্তায় বাংলাদেশকে এশিয়ার মধ্যে একটি নেতৃত্বশীল দেশ হয়ে ওঠায় প্রশংসা করা হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে পররাষ্ট্র নীতিতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কৌশল, পাশাপাশি এশিয়ার দু'টি বৃহৎ রাজনৈতিক পরাশক্তি চীন এবং ভারতকে আস্থায় রেখে নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির কৌশল বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে। এমনকি খোদ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও এ ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট।
দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন নেতৃত্বে থেকে শেখ হাসিনা সত্যিই বদলে দিয়েছে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত একটি বড় অর্জন। বিশ্বের বুকে আজ বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে দাঁড়িয়েছে। গোটাবিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার ম্যাজিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় ও সাহসী নেতৃত্বের কারণেই বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে জনগণের প্রত্যাশাটাও অনেক বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি কঠিন ছিল শেখ হাসিনার এগিয়ে চলার পথ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। বর্তমানে শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ একজন বিচক্ষণ বিশ্বনেতা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী নেতৃত্ব জনগণের কাছে আদর্শ ও অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে আছেন দেশের দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতা শেখ হাসিনা।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে যত রাজনৈতিক বিতর্ক থাকুক না কেন, অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন পরিকল্পনার অটল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার মূল কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। শেখ হাসিনার যুগোপযোগী ও ক্যারিশম্যাটিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব, চারিত্রিক দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা একটি পড়ন্ত-ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক দলকে উজ্জীবিত, গতিশীল ও সক্ষম দলে পরিণত করেছে। দলকে টানা দীর্ঘতম সময় ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাখার একক কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। সেই ১৯৮১ সালে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে তিনি প্রথমে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোকে সুসংহত করেন এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেকে জাতীয় রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্রে পরিণত করেন।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে পিতা-মাতাসহ পরিবারের প্রায় সব সদস্যের মৃত্যুর পর থেকে দেশে বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশ, বিলুপ্তপ্রায় আওয়ামী লীগকে অন্যতম রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করা, একুশ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পর ১৯৯৬ সালে দলকে পুনরায় ক্ষমতায় নিয়ে আসা, নিজের সুযোগ্য নেতৃত্বের স্বাক্ষর রেখে যাওয়া এবং ৭ বছরের মধ্যে সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগকে দেশের একক রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করার ইতিহাস এখনও গল্পের মতো মনে হয়। এর পেছনে রয়েছে পিতার কাছ থেকে পাওয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বের শিক্ষা এবং কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে সময়ের সাথে মানিয়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে সংকট উত্তরণের অনুকরণীয় রাজনৈতিক শিক্ষা ও নিরলস চেষ্টা। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার স্থিতিশীল ধারাক্রম বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মূল্যায়নে গত এক দশকে তৃতীয় বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এ কৃতিত্ব শেখ হাসিনা এবং তার সুযোগ্য নেতৃত্বের। দল, সরকার এবং রাজনীতিতে তিনি ইতোমধ্যে অপরিহার্য একক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিতে দেশের প্রতিটি জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। বর্তমানে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঈর্ষণীয়। স্বপ্নের পদ্মাসেতু দৃশ্যমান , বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, মেট্রোরেল চালু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়ন, উপজেলাভিত্তিক মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ জনপদে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকার প্রধান থাকায়, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সমুদ্রে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের নতুন সংযোজন স্মার্ট বাংলাদেশ, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে বর্তমান সরকার কর্তৃক। 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বলতে স্মার্ট নাগরিক, সমাজ, অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার গড়ে তোলা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর হবে। এ জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং এর উন্নয়নে একটি দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন কার্যক্রম ডিজিটাইজেশন করা হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ একটি 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ে তোলা সরকারের নতুন রূপকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে সারা বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি সেবা সহজীকরণ করতে এটুআই বেশ কিছু ডিজিটাল প্রোগ্রাম উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করার লক্ষ্যে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' এর সফল বাস্তবায়ন সরকারকে 'ভিশন-২০৪১' এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি উদ্ভাবন ও জ্ঞানভিত্তিক 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার নতুন লক্ষ্য গ্রহণ করতে উৎসাহ যুগিয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের প্রত্যেকটা সিটিজেন প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। স্মার্ট সিটিজেন উইথ স্মার্ট ইকোনমি; অর্থাৎ ইকোনমির সমস্ত কার্যক্রম এই প্রযুক্তি ব্যবহারে সম্পন্ন হবে। স্মার্ট গভর্নমেন্ট; ইতোমধ্যে এটি অনেকটা বাস্তবায়ন হয়েছে । মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে আমাদের সমস্ত সমাজটাই হবে স্মার্ট সোসাইটি যা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সুতরাং বলা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সর্পোটেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও প্রতিকূলতার মধ্যেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলছে তার তুলনা নেই। বিশেষত বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক ঋণচুক্তি বাতিলের পরও পদ্মাসেতুর মতো মেগা প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নসহ অবকাঠামোখাতে দেশকে আমূল পাল্টে দেয়ার মতো উন্নয়নের কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। তার ব্যক্তিগত দৃঢ়তা ও সাহসী নেতৃত্বের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। এটি স্বীকার করতে হবে, দেশের এই সত্যিকারের বদলে যাওয়ার প্রধান রূপকারই হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ অপবাদকে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোল মডেল। জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং নানা চড়াই-উতরাই ও অন্ধকারের যুগ পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন-সমৃদ্ধির মহাসোপানে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ গোটাবিশ্বের সামনে এক বিস্ময়ের নাম। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের নতুন সংযোজন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে অনন্য উচ্চতায় আসীন হবে বাংলাদেশ।
লেখক: সাবেক সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
শরতের আকাশে মেঘের ভেলা। আজও জানালায় উঁকি দিয়ে তা দেখেছি। গোধুলি করে ঠিক দিনের অন্তিম ক্ষণে কাশবনের প্রান্ত ঘেষে রঙধনু পরখ করা। অশান্ত মনকে দমন করার ক্ষেত্র, ফলত প্রস্তুত হয় নাই। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের মত করে যেন! উপরন্ত শেখ হাসিনাকে ছাড়া বাংলাদেশ, চিন্তাই করা যায় না। মনের মধ্যে শান্তি নেই। গাছের ছায়াই তো নেই বাংলার রাজ্যের প্রকৃতিতে। আমাদের শ্রেষ্ঠ মানুষটিই যে দেশে নেই। এই মুহূর্তের অবকাশ হল, অহেতুক উপদ্রবের মত করে! কোনো ছুটি নেই, যদিও আগামী তিন দিন বিশ্রাম নেয়ার মতই উপলক্ষ। কিন্তু, একজন শেখ হাসিনাকে ছাড়া দেশটি এতিমের মত। চলা যায় না। প্রিয় জননেত্রী, বাংলাদেশ তোমার অপেক্ষায়! এদিকে আজকের এই বিশেষ দিনে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়, প্রিয় মা তুল্য নেত্রী, আপনাকে দেশের নেতৃত্ব দিয়ে যেতে হবে। অনিশেষ শ্রদ্ধায় বলছি, শুভ জন্মদিন!
এদিকে কোথাও যেন একটা ষড়যন্ত্রের গন্ধ রয়েছে। ওরা নীল আকাশে অন্ধকারের আয়োজনে যেয়ে প্রতীকী রুপ নিয়ে যেন অপেক্ষারত! ঝড় আনতে চায়! রাজনৈতিক অপশক্তি হয়ে প্রিয় অন্তরীক্ষে কালোশক্তির মত করে ওরা মেঘ জমিয়েছে। বিশ্বাস আছে, আমাদের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক সত্তা শেখ হাসিনার বিনীত উদ্যোগে ওদের আস্ফালন বন্ধ হবে। আসবে হেমন্ত, আসন্ন শীতে বিজয় উৎসবে মাতবে বাংলাদেশ। যারা মুক্তিযুদ্ধ করে এই দেশকে স্বাধীন করেছিল, তাদের মুখে হাসি ফিরবেই। বাংলাদেশ কথা বলতে জানে। যা একদিন মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর শ্লেষে দেখেছিল তামাম পৃথিবী। আর এখন দেখাচ্ছেন একজন শেখ হাসিনা।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারদের বার্ষিক সভায় শেখ হাসিনা বললেন, নারীদের জীবনে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে তাদের অবশ্যই নেতৃত্বের অবস্থানে থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা দীপ্ত উচ্চারণে থেকে বলেন, ‘আমাদের কর্মকাণ্ডকে অংশগ্রহণ থেকে নেতৃত্বে উন্নীত করতে হবে এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। এটা দুঃখজনক যে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনও নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সময় এসেছে, আমরা শিগগিরই একজনকে পাবো।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ছদ্মাবরণে সাংস্কৃতিক পরিক্রমার ফলাফল খোঁজার চেষ্টা তাকে মহান করে। সত্যটা বলার যে সাহস তিনি অর্জন করেছেন, তা শুধুই ধারণ করা যায়। একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষটির সত্য বচনের ধার এতটাই, যা চলার পথে উদাহরণ হয়ে যায়। তিনি একবার বলেছিলেন, মুক্তমত প্রকাশের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় অনূভুতিতে কেহ যেন আঘাত করার অপচেষ্টা না করে। আবার তিনিই সব সময় বলে থাকেন, কাউকে হত্যা করে তথা জঙ্গিবাদকে ধারণ করার মধ্য দিয়ে ইসলামের বিজয় সাধিত হয় না। ইসলাম শান্তির ধর্ম।
এই শান্তির খোঁজেই প্রিয় বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো বিশ্ব তা দেখছে। বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে বাংলাদেশ, তা কি কেহ অস্বীকার করতে পারে ?
শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক মিরাকল। তিনি কী করেননি? কী পারেননি? আন্দোলন করে স্বৈরাচারী সরকার বিদায় করেছেন। ২৩ বছর পর স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দেশের শাসনভার পায় তার নেতৃত্বে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন, জাতির জনকের হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। এমন অসাধ্য কাজ সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ২৩ বছর ক্রমাগত নির্যাতন, নিপীড়নের পরেও একটি দল টিকে ছিল এটাই তো এক বড় বিস্ময়। শেখ হাসিনা হাল না ধরলে তা কতটুকু সম্ভব হতো তা ঐতিহাসিক আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে বরাবরই বড় একটি আলোচনার বিষয়।
শেখ হাসিনাকে মিরাকল কেন বলছি? কারণ, তার এমন কিছু রাজনৈতিক গুণের প্রমাণ আমরা দেখেছি যেগুলো বিস্ময়ের উদ্রেক করে। তিনি দলের এমন এক অবস্থানে ছিলেন, যেখান থেকে চাইলেই শুধু নির্দেশ জারি করেও দল চালাতে পারতেন। এতো পরিশ্রম না করলেও পারতেন। কিন্তু এটা যে সাধারণ মানের নেতাদের ভাবনা। শেখ হাসিনার ভাবনা ভিন্ন, তিনি অসাধারণ, তার ভাবনা ও কাজও তাই। দেশের ৬৪টি জেলা, সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নের সাংগঠনিক অবস্থা তার নখদর্পণে। তিনি জানেন কোথায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন, কোথায় তার কোন নেতাকর্মীর ত্যাগ, অবদান কতটুকু, কে বঞ্চিত আর কে আখের গুছিয়েছে। এমন বিচক্ষণ আর পরিশ্রমী না হলে হয়তো তিনি যে অসাধ্য সাধন করেছেন তা হতো না। এমন পরিশ্রমী না হলে হয়ত সাফল্যের চূড়ায় ওঠা যেত না। এজন্যই শেখ হাসিনাকে বাঙালি জাতির জন্য আল্লাহর রহমত বলে থাকি আমি। কেননা, সততা, দেশ প্রেম, এত ত্যাগ, এত পরিশ্রম, এত মেধা সবকিছুর সমান সমন্বয় বঙ্গবন্ধুর পর তার কন্যা শেখ হাসিনার মাঝে রয়েছে। তিনি আমাদের বিস্ময় নেত্রী।
শেখ হাসিনার বহু সিদ্ধান্ত সমকালের বিচারে সমকালীন বোদ্ধাদের বোধের অতীত। তাই সমালোচনাও সইতে হয় তাকে। কিন্তু একটি মহৎ সাহিত্য যেমন কয়েক যুগ না পেরোলে তার প্রকৃত প্রশংসা জোটে না, তেমনই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যত সময় যায় ততো সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়।
শেখ হাসিনার মতো যোগ্য নেতৃত্ব যদি দেশের হাল না ধরতেন, তাহলে দেশ আজ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হতো। স্মরণ করুন ২০০১ সালের পর দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের ভয়াবহ দিনের কথা। অনেক এলাকায় তখন জঙ্গিনেতা লাদেনের ছবি নিয়ে প্রকাশ্যে মিছিল করত উগ্রবাদীরা। বাংলা ভাই, আব্দুর রহমানের মতো পাষণ্ড জঙ্গিরা এদেশকে আফগানিস্তান বানানোর পণ করেছিল। জঙ্গিনেতাদের এসব পরিকল্পনা যেন ঠিক বিএনপি-জামায়াতের আদর্শেরই প্রতিফলন।
কেননা তারা সারাজীবন বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র, আফগানিস্তানের মতো জঙ্গিদের অভয়ারণ্য হিসেবে দেখতে চায়। তাই তৎকালীন সরকার জঙ্গিদের ছিল পৃষ্ঠপোষক। শেখ হাসিনা সরকারে থাকুন বা বিরোধীদলে— তিনি থাকলে উগ্রবাদীদের স্বপ্ন কখনই বাস্তবায়ন হবে না, তা তারা জানত। তাই শেখ হাসিনাকে প্রাণে মারার জন্য হামলা চালায় তারা। জোট সরকারের সহায়তায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা সেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির জনককে হত্যারই ধারাবাহিকতা। সেই একই অপশক্তির একই উদ্দেশ্যে একই অপকর্ম।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর বাংলাদেশের দিশা আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দিকে ঠিক করেন শেখ হাসিনা। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার ও রায় কার্যকর, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর এই দুটি কারণে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এমন এক সুসংহত স্থানে নিয়ে গেছেন, যার সুফল আমাদের পরিবর্তী প্রজন্ম ভোগ করবে। কারণ, তখন আর স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তির এত আস্ফালন থাকবে না। শেখ হাসিনা তাদের নির্মূল করেছেন।
উন্নয়নের এক মহাকাব্য রচনা হয়েছে শেখ হাসিনার হাত ধরে। দেশের অর্থনীতির আকার এত দ্রুত বাড়ছে যে- এখন দাঁড়িয়ে আজ থেকে বারো বছর আগের বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা দেখলে অবিশ্বাস্য মনে হয়। সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানের সাফল্য চোখ ধাঁধানো নয়।
শুধু অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক পর্যায়ে শান্তি নয়, বৈশ্বিক শান্তির জন্যও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত। চলতি বছরের মে মাসে জাতিসংঘ বাংলাদেশের পাঁচ জন শান্তিরক্ষীকে তাদের অসামান্য অবদানের জন্য ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ দিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন যুদ্ধপ্রবণ দেশে শান্তিরক্ষায় নিজেদের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে তারা এই স্বীকৃতি পেয়েছেন। শান্তির জন্য রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দেয়া, ২০০৯ সালের পর থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকারের জিরো টলারেন্স, শান্তিরক্ষীদের অবদান— সব মিলিয়ে শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে এবং তাঁকে একজন উচুস্তরের রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ করায়।
শেখ হাসিনার নিজের আর কি হারানোর আছে? তিনি একটা রাষ্ট্রযন্ত্রের চালক, যা ছুটছে। উন্নয়নের কিংবা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানকরত উদ্যোগগুলোর প্রতি সম্মান জানানোর আবারো তাই সময় আসছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনমানুষের রায় বা ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাকেই এই রাষ্ট্রের চালক হিসাবে দায়িত্ব নিতে হবে।
মেঘ তাই কেটে যাবে। ঝড়-সাইক্লোনে যারা ভাসতে চায়, তাদেরকে বলতে চাই যে, জনস্বার্থ সংরক্ষণ করে মানুষের জন্য রাজনীতি করুন। এতে করে ফল ভাল হবে। বিরাজনীতিকরণের যে স্বপ্ন একটি শ্রেণি দেখতে চাইছে, তাদের কে বলব, আমাদের সরকার প্রধান এখন আর দুর্বল সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন না, তিনি গণমুখী এক অদম্য মানবিক রাজনৈতিক সত্তা, যিনি বৈশ্বিক রাজনীতির যে আভিজাত্যের তাঁবু, সেখানেও উঁচু আসন পেতে অভ্যস্ত। তিনি শক্তিশালী চরিত্র হয়েই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার প্রধান ও অনন্য পর্যায়ের রাষ্ট্রপ্রধানও বটে।
শেখ হাসিনার ৭৭-তম জন্মদিনে মনের মধ্যে উচ্ছ্বাসও আছে। তার মুখাবয়বের দৃষ্টি সেরে আমরা মুজিব সেনা হয়ে রাজপথে লড়তে যাওয়ার সংকল্পে চলে যেতে পারি। এই পৃথিবীর মধ্যে তিনি সেই নেতৃত্ব, যিনি ঘরের মায়ের মত, সমাজ থেকে রাষ্ট্রেরও মা। মায়ের জন্য সন্তানেরা লড়বে। শুধুমাত্র তার দীর্ঘজীবন কামনা করা ছাড়া পরম করুণাময়ের কাছে আর কিছু চাওয়ার নেই। আজ আলাদা করেই আমার আমাদের মায়ের জন্য হাত ধরে মোনাজাতে যেতে চাই। এক অদম্য সত্তার আয়ু হোক শত বছরের! জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখক: ড. কাজী এরতেজা হাসানসম্পাদক ও প্রকাশকদৈনিক ভোরের পাতা ও দি পিপলস টাইমসসহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগপ্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইরান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ সভাপতি, ইন্ডিয়ান ইম্পোর্টারস চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিসাবেক পরিচালক, এফবিসিসিআই
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।