
আত্মহত্যা, আত্মহত্যার চেষ্টা, প্রবণতা বা চিন্তাভাবনা স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। এটি সরাসরি কোনো মানসিক রোগ না হলেও বেশ কিছু মানসিক রোগের শক্তিশালী উপসর্গ। ফলে একজন ব্যক্তি আত্মহত্যার আগে নিজের সম্পর্কে, অন্যের সম্পর্কে বা পৃথিবী সম্পর্কে যেভাবে চিন্তাভাবনা ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে সেটি সবসময় যৌক্তিক বা পূর্ণাঙ্গ চিত্র নাও হতে পারে। কোনো একটি পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক, সেই পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এক বা একাধিক বিকল্প থাকে। কিন্তু মানসিকভাবে বিক্ষিপ্ত ও বিপর্যস্ত অবস্থায় মানুষের মস্তিষ্কের আবেগীয় অঞ্চল যতটা উদ্দীপ্ত থাকে, যৌক্তিক অঞ্চল ততটাই নিষ্ক্রিয় থাকে। ফলে সেই মুহূর্তে মানুষ সমস্যা সমাধানের যৌক্তিক ও সহায়ক রাস্তাগুলো দেখার বা আবিষ্কার করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে এবং মস্তিষ্কের আবেগীয় অঞ্চল দ্বারা তাড়িত হয়ে এলোমেলো কিংবা জীবন বিপন্নকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারে।
অতি সম্প্রতি একজন প্রবীণ নাগরিকের আত্মহত্যার যে দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটেছে সেটি হজম করা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে কঠিন। সেই সঙ্গে এই ঘটনাটি প্রবীণ নাগরিকদের শারীরিক, মানসিক, আবেগীয় ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এসব বিষয়ে আলোকপাত করার আগে একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, মৃত্যুর আগে তার বলা কয়েক মিনিটের কথার ভিত্তিতে তার জীবন, মৃত্যু এবং পরিবার সম্পর্কে গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢালাওভাবে মন্তব্য করাটা বোধ হয় তার এবং তার পরিবারের প্রতি অবিচারই হচ্ছে। তার পরিবারের মানুষগুলো বেঁচে আছে এবং তারা এক ধরনের মানসিক চাপ ও শোকের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারা যদি কোনোভাবে দায়ী বা দোষী হয়েও থাকে এই মুহূর্তে শোক পালন এবং আবেগীয় নিরাপত্তার অধিকার তাদের আছে। প্রতিটি মানুষেরই মানসিক স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ।
আর আমাদের বাকস্বাধীনতার বিষয়ে বলব, শুধু আত্মহত্যা কেন, যে কেউ যেকোনো কিছু নিয়ে কথা বলার অধিকার রাখে। সেই সঙ্গে এও সত্যি, একটি ঘটনাকে বিশেষ করে আত্মহত্যার মতো সংবেদনশীল ঘটনাকে কেন্দ্র করে বলা আমাদের অনুমাননির্ভর কথা কিংবা আবেগীয় প্রতিক্রিয়াগুলো অন্য কাউকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে কি না সে বিষয়ে ভাববার এবং দায়িত্বশীল হওয়ার প্রয়োজন আছে। একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সবার মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, আর নিজের অনুভূতি ও ভাবনা শেয়ার করলে সেই চাপ কিছুটা কমে বলেই হয়তো অনেকেই সেই বিষয়টি সম্পর্কে নিজের অনুভূতি, চিন্তাভাবনা বা উপলব্ধিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে। এতে দোষের কিছু নেই। মুশকিল হলো, আত্মহত্যা নিয়ে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বা তথ্যভিত্তিক কথা বললে সচেতনতা বাড়ে, অন্যদিকে আত্মহত্যাকে মহিমান্বিত কিংবা দোষারোপ করে মনগড়া কথা বললে মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা মানুষের মনের ওপরে ভীষণ রকমের চাপ পড়ে। এতে করে তাদের আত্মহত্যার ঝুঁকিও বাড়ে।
একজন মানুষের আত্মহত্যার কারণ নির্ণয় কিন্তু খুব সরল কোনো বিষয় নয়। মানুষের জীবন অন্বেষণে কাউন্সেলর হিসেবে আমরা বেশ কিছু তত্ত্বের সহযোগিতা নিয়ে থাকি, তার মধ্যে অন্যতম একটি তত্ত্ব হলো এরিক এরিকসন (১৯৬৩) প্রদত্ত মনোসামাজিক বিকাশ তত্ত্ব যেখানে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের মনোসামাজিক বিকাশের ৮টি ধাপের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ একজন প্রবীণ ব্যক্তি তার জীবনের অষ্টম ধাপে রয়েছেন, আর জীবনের এই অষ্টম ধাপটিতে এসে তিনি মানসিকভাবে প্রশান্তিতে থাকবেন নাকি হতাশায় থাকবেন তা শুধু এই অষ্টম ধাপের যোগ বিয়োগের ফলাফল নয়। বরং জীবনের প্রথম ধাপ (জন্ম থেকে) থেকে এই হিসাব-নিকাশের শুরু। ফলে সম্প্রতি যে আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটেছে সেটিকে নিছক ‘সমাজে বয়স্ক লোকের দৈন্যদশা’, ‘অবহেলা’, ‘পরিবারের মানুষের নিষ্ঠুরতা’ ইত্যাদি বলে ন্যায্য মনে করার সুযোগ কম। শারীরিক অসুখের মতো তিনি মানসিক কোনো অসুখেও ভুগছিলেন এবং অবশ্যই তার চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। আর যেকোনো মানসিক রোগের কারণ নির্ণয় জটিল একটি বিষয়। এখানে একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ বড় একটি প্রভাবক। সবার জীবনেই যুদ্ধ থাকে। যুদ্ধ এবং দুঃখ-দুর্দশা মানব জীবনের অংশ। আমি আমার যুদ্ধটাকে কীভাবে দেখছি, তা মোকাবিলায় আমার কাছে কী ধরনের যুদ্ধনীতি, কৌশল বা হাতিয়ার আছে তার ওপর নির্ভর করবে আমি আমার যুদ্ধটিকে কোনদিকে এবং কীভাবে পরিচালিত করব। আর জীবনকে দেখার চোখ এবং জীবনকে চালিয়ে নেওয়ার কৌশল দুটিই আমাদের ব্যক্তিত্ব ও বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত।
এবারে আসি প্রবীণ নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে। আমার একটি বইয়ে (মনের যত্ন) বিশেষ সময়ে মনের যতœ বলে একটি অধ্যায় রয়েছে। সেখানে বিশেষ সময়ের মধ্যে বয়ঃসন্ধি, মাতৃত্বকাল, মেনোপজ এবং বার্ধক্য বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে। সেখানে বার্ধক্য বিষয়ক অধ্যায়টির নাম ‘বার্ধক্য বরণ’। হ্যাঁ, বার্ধক্যকে বরণ করার বা গ্রহণ করার একটি ব্যাপার রয়েছে যা অধিকাংশ প্রবীণ ব্যক্তিদের জন্য কঠিন। ক্রমশই ঢিলে হতে থাকা ত্বক, ক্ষয় হতে থাকা দাঁত, নাজুক হতে থাকা শরীরকে গ্রহণ করে নেওয়া কঠিন; তার থেকেও বেশি কঠিন কর্র্তৃত্ব বা ক্ষমতার চাকাটিকে উল্টো ঘুরতে দেখা।
আমি এ পর্যন্ত যতজন প্রবীণ ব্যক্তিকে একক কাউন্সেলিং বা পারিবারিক কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মানসিক সহায়তা দিয়েছি অধিকাংশ ক্ষেত্রে খেয়াল করেছি, যেসব পরিবারে অভিভাবকরা কর্তাব্যক্তি হিসেবে সন্তানদের মতামতকে অগ্রাহ্য করেছেন, দমিয়ে রেখেছেন, শাস্তি প্রদান করেছেন; সেসব পরিবারের সন্তানরা পরিণত বয়সে এসে বয়স্ক পিতা-মাতাকে যতœ ও আন্তরিক সহযোগিতা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, পিতামাতার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক একদিনের নয়। শুরু থেকেই এই সম্পর্ক আন্তরিক থাকলে হঠাৎ করে পিতা-মাতার বার্ধক্যে এসে এই সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যাওয়ার কথা নয়। এ কারণেই মানসিক স্বাস্থ্যে শিশুবিকাশ এবং প্যারেন্টিং ব্যাপারগুলো এতটা গুরুত্ব পেয়েছে। শৈশব-কৈশোরে যারা শর্তহীন ভালোবাসা পেয়ে বড় হয়, পরিণত বয়সে তারাই আবার শর্তহীন ভালোবাসা প্রদান করে। সেইসঙ্গে সন্তানরা পরিবারে যে ধরনের নেতৃত্ব দেখে বড় হয়, ক্ষমতার যে ধরনের প্রয়োগ দেখে বড় হয়, তারা তা-ই শেখে এবং পরিণত বয়সে এসে পরিবারের নেতৃত্বপ্রদান ও ক্ষমতা প্রয়োগের সময় তারাও একই ধরনের আচরণ করে। উল্লেখ্য, ক্ষমতা ব্যাপারটি নেতিবাচক নয়। কীভাবে আমরা তা প্রয়োগ করছি তার ওপর নির্ভর করে এর ফলাফল। নন-ভায়োলেন্ট কমিউনিকেশনের প্রতিষ্ঠাতা মার্শাল রোজেনবার্গের মতে (২০০৩) ক্ষমতার চর্চা কিংবা বলপ্রয়োগ দুই ধরনের হতে পারে: ১। ক্ষমতার সুরক্ষামূলক চর্চা (Protective use of force), ২। ক্ষমতার শাস্তিমূলক চর্চা (Punitive use of force)। যেমন, পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করার জন্য বা অল্প বয়সে প্রেম করার জন্য, বা বাবা-মায়ের অপছন্দের কারও সঙ্গে প্রেম করার জন্য যখন সন্তানকে মারধর করা, তিরস্কার করা বা বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় সেটিকে ক্ষমতার শাস্তিমূলক চর্চা বলা যেতে পারে। এই ধরনের চর্চা বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের আন্তরিক সংযোগ স্থাপনে বাধা সৃষ্টি করে, ফলে সন্তানরাও পরিণত বয়সে এসে বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করে না, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষমতার পালাবদলের পর সন্তানরা বাবা-মায়ের প্রতি শাস্তিমূলক আচরণও করে বসে।
আরেকটি বিষয় হলো যেসব বাবা-মা সন্তানের মানবিক গুণ বিকাশের বিষয়ে কোনো তোয়াক্কা না করে শুধু পড়ালেখা বা ক্যারিয়ায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করে, সেইসব সন্তানরাই হয়তো পরবর্তী সময়ে ক্যারিয়ার গঠনের দৌড়ে বুঁদ হয়ে থাকতে থাকতে শেকড়ের কাছে ফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অর্থাৎ দেখা যায়, সন্তান বড় করার ক্ষেত্রে বাবা-মা যদি মমতা ও ক্ষমতার যথাযথ প্রয়োগ করেন, খুব সম্ভাবনা থাকে সন্তানও বাবা-মায়ের প্রতি তেমনই আচরণ করবে। বাবা-মা হিসেবে সন্তান পালনে যেমন ভালোবাসা, মায়া, মমতার পাশাপাশি সন্তানের সুরক্ষার জন্য কিছুটা ক্ষমতা চর্চা বা নিয়ন্ত্রণ রাখার প্রয়োজন হয়; সন্তান হিসেবেও তেমনি বয়স্ক বাবা-মায়ের খেয়াল রাখার জন্য ভালোবাসা, মায়া, মমতার পাশাপাশি বাবা-মায়ের সুরক্ষার জন্য কিছুটা ক্ষমতা চর্চার প্রয়োজন হয়। যেমন, বয়স্ক বাবা-মা সুষম খাবার গ্রহণ, শরীরচর্চা, বা শারীরিক ও মানসিক অসুখের চিকিৎসার বিষয়ে অনিচ্ছা পোষণ করলে কিছুটা বলপ্রয়োগ করে হলেও এই ব্যাপারগুলো নিশ্চিত করা দরকার।
বয়স্ক পিতামাতার খেয়াল রাখা সন্তান পালনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বাবা-মা হিসেবে তারা যেমনই হোক, প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে সন্তানের দায়িত্ব রয়েছে বাবা-মায়ের শারীরিক ও মানসিক টানাপড়েনগুলোকে বুঝবার এবং সহযোগিতা প্রদান করবার। প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে চাইলেই আমরা মমতার চর্চা শুরু করতে পারি এবং ক্ষমতার শাস্তিমূলক ব্যবহারের দুষ্ট চক্রটিকে ভেঙে দিতে পারি। অর্থাৎ চাইলেই আমরা বাবা-মায়ের প্রতি রাগ-অভিমানের দেয়াল টপকে তাদের প্রতি মমতাশীল হয়ে উঠতে পারি এবং প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে আমাদের যে ক্ষমতা রয়েছে তা তাদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োগ করতে পারি। এক্ষেত্রে নিজের জন্য মানসিক সহায়তা প্রয়োজন হলে কাউন্সেলরের শরণাপন্ন হতে পারি, বাবা-মায়ের জন্যও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারি, এমনকি পারিবারিক কাউন্সেলিং সেবাও নিতে পারি।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলোজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
দেশ রূপান্তরে পূর্বে প্রকাশিত
বুড়ো বয়সে সন্তানের জনক হয়েছেন, রুপার্ট বুড়ো বয়সে পত্রিকার সংখ্যাও বাড়িয়েছেন, টিভি চ্যানেলের সংখ্যাও। রাঘববোয়াল যেমন ছোট মাছ গিলে খায়, তেমনি গিলছেন। কিন্তু এটা তিনি মানতে রাজি নন। বলেন, ছোটরা বড়দের কাছে আর মার খায় না। শ্লথগতি যাদের তারা দ্রুতগতির কাছে মার খায়, দ্রুতগতির অধীনে চলে যায়
৯১ বছর বয়স তার শরীরের শক্তি যতটুকুই হরণ করুক না কেন, রুপার্ট মারডক স্ত্রী তালাকের ঘোষণা দিয়ে তিনি নিজেও সংবাদ হয়েছেন। অর্থবিত্ত প্রতিপত্তি এমনিতেই শক্তি জোগায়। ৯২ বছর বয়সে রুপার্ট আবার সংবাদ হলেন তরুণী স্ত্রী ঘরে তুলে নয়, মারডক সাম্রাজ্যের চেয়ারম্যানের পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে। এতদিন ধরে রাখা ফক্স এবং মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যানের পদ দ্বিতীয় স্ত্রী আনা মারিয়ার ঘরে জন্ম নেওয়া পুত্র লাচলান মারডককে দিয়েছেন, লাচলান এখন ৫২, এক সময় বাবার মিডিয়া সাম্রাজ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও পরে ফিরে এসেছেন। বাবা ও ফক্স নিউজের কর্তাদের সঙ্গে তার বিরোধে ২০০৫-এ বিদায় নেন, কিন্তু ২০১৪-তে ফিরে আসেন। রুপার্ট নিজেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে নিয়েছেন বলার সুযোগ কম, কারণ তিনি নিজের জন্য চেয়ারম্যান ইমেরিটাস নামের একটি উদ্ভট পদবি বেছে নিয়েছেন। এ ধরনের পদবি নিয়ে মুখ টিপে হাসাহাসি আগেও চলেছে, এখনো চলছে। মারডক নিজেকে তার মিডিয়া সাম্রাজ্যের চেয়ারম্যান ইমেরিটাস নিয়োগ করেছেন। ১৯৮০-এর দশকে তারই মালিকানাধীন সানডে টাইমস সম্পাদক ফ্রাঙ্ক রজার আইলেসকে এডিটর ইমেরিটাস করা হলে মারডককে তার গ্রেজ ইন রোডের অফিসে সান পত্রিকার সাবেক সম্পাদক কেলভিন ম্যাকেঞ্জি জিজ্ঞেস করেছিলেন, এডিটর ইমেরিটাস মানে কী? তিনি এফ-যুক্ত অশ্লীল শব্দ যোগে যা বলেছিলেন, তার মানে— ফ্রাঙ্ক আর সম্পাদক নন।
লাচলানের কাছে চেয়ারম্যানশিপ হস্তান্তর তার ছয় সন্তানের মধ্যে বাবার সাম্রাজ্য অধিগ্রহণের পুরনো দ্বন্দ্বে ঘি ঢালল কিনা এ প্রশ্নও কেউ কেউ করছেন। কিন্তু রুপার্ট সমাধান ছেড়ে দিয়েছেন ডারউইনের ‘সারভাইভ্যাল অব দ্য ফিটেস্ট’ তত্ত্বের ওপর, যে উপযুক্ত সে-ই নেতৃত্ব দেবে, সে-ই অধিকার করবে। তবে তারই ইমেরিটাস তত্ত্ব এটা এখন তার ওপর প্রযুক্ত হবে কিনা সেটাই প্রশ্ন। তিনি কখনোই ‘আলঙ্কারিক চেয়ারম্যান’ ছিলেন না, প্রধান নির্বাহীর মতোই কাজ চালিয়েছেন। তবে এবার তিনি তার কর্মচারীদের যে নোট পাঠিয়েছেন তাতে লিখেছেন, নতুন ভূমিকা পালনের এটাই উপযুক্ত সময়। রুপার্ট গত বছর করোনায় বেশ ভুগেছেন। কফিনবন্দি হয়ে পড়তে পারেন এমন আশঙ্কাও ছিল। তিনি উঠে দাঁড়িয়েছেন, বয়সটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। হাসপাতালে বিছানা সংরক্ষিতই রাখা আছে। ক্যানসার সারভাইভাল হিসেবে ১৯৯৯ সালে ৬৯ বছর বয়সে বলেছিলেন, ‘আমি আমার অমরত্ব সম্পর্কে এখন জোর দিয়ে বলতে পারি। আমার মা ১০৩ বছর বেঁচেছিলেন।’ আর তার মা ১০১ বছর পূর্তির পর ছেলে সম্পর্কে বলেছেন, ‘রুপার্ট কখনো রিটায়ার করবে না।’ গত ১১ মার্চ রুপার্ট মারডক ৯২-তে পড়লেন।
ব্রিটেন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, কারণ রুপার্টের স্মৃতির সঙ্গে ইংল্যান্ড জড়িয়ে, কিন্তু লাচলানের বেলায় তা আমেরিকা। লাচলান কদাচিৎ ব্রিটেনে আসেন। অস্থিরতাও শুরু হয়েছে, বাবার পছন্দের সিইও ও অন্যান্য প্রিয় কর্মচারীদের বহাল রাখলে লাচলান নিজের পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। অবশ্য যারা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন, তারা পদত্যাগপত্র পাঠতে শুরু করেছেন। তবে এ সংখ্যাটা বেশি নয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষ খাপ খাইয়ে নিতে জানে। রুপার্টের বিদায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদদের জন্য স্বস্তির কারণও হতে পারে। কারণ তিনি বড়মাপের রাজনীতিবিদদের নিয়ে ‘খেলতে’ পছন্দ করতেন, তার ভিকটিমদের একজন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিভিন্ন গণমাধ্যমের আগ্রাসি অধিগ্রহণ রুপার্টকে গত শতকেই বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নিউজ ম্যানিপুলেটরে পরিণত করেছিল।
রুপার্টের প্রথম বিয়ে ১৯৫৬ সালে সাবেক দোকানি ও বিমানবালা প্যাট্রিসিয়া বুকারের সঙ্গে। রুপার্ট মাডরকের বয়স তখন ২৫। ১১ বছর টিকেছিল এই সংসার। সেই সংসারে একটি মেয়ে প্রুডেন্স। তারপর স্ত্রী হয়ে এলেন সাংবাদিক আনা মারিয়া টর্ভ, ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৯ সংসারের মেয়াদ, সিডনির ডেইলি টেলিগ্রাফের শিক্ষানবিশ সাংবাদিক স্কটিশ মেয়ে আনা ট্রোভের ঘরে তিন সন্তান এলিজাবেথ (১৯৬৮), ল্যাচলান (১৯৭১) এবং জেমস (১৯৭২)। তারপর বিচ্ছেদ। তালাক নিষ্পত্তিতে আনা ট্রোভ লাভ করেন ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি। ‘দ্য সিম্পসনস’-এর সেই উক্তি ‘আমি রুপার্ট মারডক, দ্য বিলিয়নিয়ার টাইরেন্ট’— স্বেচ্ছাচারী কোটিপতি। প্রথম দুই স্ত্রীর চার সন্তানই তার মিডিয়া ভুবনে বড় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, তবে আধিপত্য ল্যাচলান মারডকই।
জেফ্রি আর্চারের দ্য ফোর্থ স্টেট উপন্যাসে দুজন মিডিয়া টাইকুন কিথ টাউনস্যান্ড ও রিচার্ড আর্মস্টং মূলত রুপার্ট মারডক ও রবার্ট ম্যাক্সওয়েল। রবার্ট ম্যাক্সওয়েল (১৯২৩-১৯৯১) ও রুপার্ট মারডকের বৈরিতা দীর্ঘদিনের। ম্যাক্সওয়েল মিরর পত্রিকা গ্রুপের মালিক ১৯৯১-এর ৫ নভেম্বর প্রশান্ত মহাসাগরে তিনি তার প্রমোদতরি থেকে সমুদ্রে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন। এ মৃত্যুকে কেউ মনে করেন হত্যা। কেউ আত্মহত্যা। ইহুদি ধর্মাবলম্বী ম্যাক্সওয়েলকে সমাহিত করা হয় জেরুজালেমের মাউন্ট অব অলিভে। কিথ ও রিচার্ড দুজন এ উপন্যাসটির প্রাণ। জেমস বন্ড সিরিজের টুমোরো নেভার ডাইস-এর অন্যতম প্রধান চরিত্র এলিয়ট কার্ভার কারও মতে রুপার্ট মারডক, কেউ মনে করেন ম্যাক্সওয়েল। তাকে নিয়ে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছে। আলোচিত জীবনীগ্রন্থ মাইকেল ওল্ফের- দ্য ম্যান হু অওনস দ্য নিউজ : ইনসাইড দ্য সিক্রেট ওয়ার্ল্ড অব রুপার্ট মারডক।
ওয়েন্ডি দেং অধ্যায়
রুপার্ট মারডক তার মালিকানাধীন হংকং স্টার টিভির প্রধান নির্বাহী গ্যারি ডেভিকে ফোনে জানালেন, তিনি সাংহাই যাচ্ছেন। কিন্তু গ্যারিকে যেতে হচ্ছে ভারত। রুপার্টকে দেখভাল করার মতো একজনের কথাই মনে হলো তার— ওয়েন্ডি দেং। কেবলই আমেরিকার ইয়েল স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট থেকে পাস করে স্টার টিভিতে ঢুকেছে। লম্বা, সুন্দর এবং স্মার্ট। এমন উজ্জ্বল প্রাণবন্ত গাইড ও পরিচর্যাকারী একজন নারীকে রুপার্টের পছন্দ না হওয়ার কারণ নেই। রুপার্টের বয়স তখন ৬৮ বছর। ওয়েন্ডি কবছর আগেও রুপার্টের চেয়েও পাঁচ বছরের বড় একজনের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করেছে, তার বাড়িতে থেকেছে এবং তাকে বিয়ে করেছে। ওয়েন্ডিকে রুপার্টের ভালো লেগেই গেল। ব্যাপারটা কাকতালীয়ই। ক্যালিফোর্নিয়ার যে আদালতে তার সাবেক স্ত্রী আনা ট্রোভ ও রুপার্টের তালাকের মামলায় টাকাকড়ির হিসাব দাখিল করা হচ্ছিল, সেই একই আদালতে ওয়েন্ডি ও তার বুড়ো স্বামী জ্যাকেরও তালাকের মামলা চলছিল। ওয়েন্ডি স্বামীর কাছে কোনো সম্পদের ভাগ চায়নি, কেবল তালাক চেয়েছে কিন্তু আনা তার স্বামীর কাছে চেয়েছে ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পত্তির অংশ।
ভালো লাগাটা রুপার্টের বেলায় এতই তীব্র হয়ে উঠল যে, তার চেয়ে ৩৮ বছরের ছোট ওয়েন্ডিকে আনার সঙ্গে তালাকের ১৭তম দিনে বিয়েই করে ফেললেন। রুপার্টের সম্পদের হিসাব বাদ দিলেও ওয়েন্ডির কাছে তার আকর্ষণ কম নয়। আগের স্বামীর চেয়ে তো অনেক তরুণ, বয়স হোক না ৬৮ বছর! তারপর রুপার্টের মর্নিং গ্লোরি নামের প্রমোদতরিতে জম্পেশ এক হানিমুন। এ নৌকাটি পরে সিলভিও বেরলুসকোনি কিনে নেন। ওয়েন্ডি রুপার্টের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান সারা পৃথিবী।
মধ্যবিত্ত পরিবারের এ মেয়েটিকে রুপার্টের স্ত্রী হওয়ার কারণেই দেখা গেল চীনের রাষ্ট্রীয় ডিনারে প্রেসিডেন্টের ঠিক পাশেই বসেছেন ওয়েন্ডি, ডিনার টেবিলের উল্টোদিকে প্রেসিডেন্টের মুখোমুখি রুপার্ট মারডক। পৃথিবীজুড়েই তখন রুপার্ট মারডকের মিডিয়া সাম্রাজ্য, তবে ওয়েন্ডিকে নিয়ে বেশির ভাগ সময়ই লন্ডনে থাকেন। এ সংসারে দুটি সন্তান— গ্রেইস (২০০১) এবং শোলে (২০০৩); দুজনের জন্মই নিউ ইয়র্কে।
ওয়েন্ডিও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠতে থাকেন, পরিণতি রুপার্টের সঙ্গে ডিভোর্স। রুপার্ট বললেন, ওয়েন্ডি হচ্ছেন চায়নিজ গুপ্তচর। ২০১৬-তে ওয়েন্ডির জায়গা চলে গেল জেরি হরের কাছে। কিন্তু গত বছর মাত্র ১১ শব্দের একটি ই-মেইল পাঠিয়ে রুপার্ট তার চতুর্থ স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কেও যবনিকা টানলেন, ‘জেরি, স্যাডলি, আই হ্যাভ ডিসাইডেড টু কল অ্যান অ্যান্ড টু আওয়ার ম্যারেজ’। স্বীকার করেছেন, আমাদের কিছু ভালো সময়ও কেটেছে।
বুড়ো বয়সে সন্তানের জনক হয়েছেন, রুপার্ট বুড়ো বয়সে পত্রিকার সংখ্যাও বাড়িয়েছেন, টিভি চ্যানেলের সংখ্যাও। রাঘববোয়াল যেমন ছোট মাছ গিলে খায়, তেমনি গিলছেন। কিন্তু এটা তিনি মানতে রাজি নন। বলেন, ছোটরা বড়দের কাছে আর মার খায় না। শ্লথগতি যাদের তারা দ্রুতগতির কাছে মার খায়, দ্রুতগতির অধীনে চলে যায়।
অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিক ক্রিস্টোফার কলিন বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করে বেশ জোর দিয়েই বলেছেন, নাইন-ইলেভেন ঘটবে, রুপার্ট জানতেন। বিষয়টি তার জ্ঞাতসারেই ঘটেছে। নাইন ইলেভেনের আগে যারা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের মালিকানা কিনে নেন এবং এ নাশকতার ঘটনাকে পুঁজি করে বিপুল লাভবান হন, তারা তার ঘনিষ্ঠজন। ২০০১ সালের ৪ মার্চ ফক্স টিভি ‘দ্য লোন গানম্যান’ সিরিজে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ হাইজ্যাক করে এ ধরনের নাশকতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এটিকে ইহুদি চক্রান্তকারীদের কাজ উল্লেখ করে বলা হয়েছে। রুপার্টের নানা ইহুদি এবং রুপার্টের মধ্যেও জঙ্গি ইহুদিদের বীজ রয়ে গেছে।
রুপার্ট মারডক নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে ঘৃণা করেন। দুর্জনেরা মনে করেন নিউ ইয়র্ক টাইমসকে ধ্বংস করার নেশা পেয়ে বসেছে রুপার্টকে। নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে পাঠক সরিয়ে নিতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে অনেক নতুন বিভাগ সংযোজন করেছেন। উদ্দেশ্য ওয়াল স্ট্রিটই যেন নিউ ইয়র্কের সব সংবাদ চাহিদা মেটায়। আর নিউ ইয়র্ক টাইমস কেনার সুযোগ এলে রুপার্ট নিশ্চয়ই যে কোনো দামে তা কিনে নিতে চেষ্টা করবেন। অবশ্য এখনো পত্রিকাটি আর্থার শুলজবার্গার পরিবারের হাতেই রয়েছে।
রুপার্ট মারডককে নিয়ে পরবর্তী সংবাদটি কী হবে? পঞ্চম বিয়ে?
লেখক: সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ও কলামিস্ট।
১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। বাংলাদেশে প্রবীণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। চলতি বছর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। যার মধ্যে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ ৯৭ লাখ ২৭ হাজারের কিছু বেশি। আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে প্রবীণদের সংখ্যা হবে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। আর আগামী ২০৫০ সালে এই সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি এবং ২০৬১ সালে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি প্রবীণ জনগোষ্ঠী হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে পরিবার/খানাপ্রতি লোকসংখ্যা প্রায় ৪.০৩ জন, যার মধ্যে প্রায় ০.২৪ জন প্রবীণ মানুষ আছে। আমরা তাদের ভরণপোষণ করতে পারছি না। ২০৫০ ও ২০৬১ সালে খানাপ্রতি হবে যথাক্রমে ১.১১ জন ও ১.৩৫ জন। তখন কী হবে? এখন অনেকেই যে সমস্যাকে পারিবারিক মনে করছেন, তখন তা হবে রাষ্ট্রীয় মহাদুর্যোগ!
বার্ধক্য আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য আজ একটি মারাত্মক চ্যালেঞ্জ। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, প্রবীণ পুরুষের তুলানায় প্রবীণ নারীরা বেশি দিন বাঁচেন। অধিকাংশই আবার বিধবা হয়ে! আমাদের সমাজে তারা বেশি মাত্রায় অবহেলা, দুর্ব্যবহার এবং বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এমনকি নিজের ভাই, স্বামী, সন্তানদের কাছ থেকেই!
বাংলাদেশের সংবিধানে প্রবীণদের সামাজিক নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। আমাদের দেশে প্রবীণদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কার্যক্রম রয়েছে বটে কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। প্রবীণদের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রবীণরা বৃদ্ধ নয়, মানসিক দিক দিয়ে অনেক সক্ষম, দেশ গঠনে তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। দেশের সমাজ পরিবর্তনে এবং উন্নয়নে প্রবীণদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। প্রবীণরা আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র, সমাজের পথপ্রদর্শক। প্রবীণদের সম্মান দেওয়া ও যত্ন নেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কাউকে ফেলে রেখে নয়, বরং সবাকে নিয়ে বিশ্বসমাজের প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির অভিযাত্রা চলমান রাখতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা দলিলের মাহাত্ম্য এখানেই। পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রবীণদের অবদান অপরিসীম। পরিবারের গঠন, উন্নয়ন ও সমাজের কল্যাণে কর্মময় জীবন ব্যয় করে একসময় তারা বার্ধক্যে উপনীত হন। তখন প্রবীণদের সার্বিক কল্যাণ ও সুরক্ষা করা সমাজের আবশ্যিক কর্তব্য। প্রবীণদের সমস্যা সমাধানে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সবার সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। আধুনিক সমাজে অনেক ক্ষেত্রে প্রবীণরা শুধুই অবহেলিত এবং বঞ্চিত। মানবিক ও ধর্মীয় বিবেচনাতেই প্রবীণদের অবস্থান অত্যন্ত সম্মানের।
বিশ্বের অনেক দেশসহ সার্কভুক্ত কোনো কোনো দেশে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। এদিক থেকে আমাদের দেশ এখনো পিছিয়ে আছে। প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩ এবং পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩ প্রণয়ন করা হলেও এ আইন ও নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন তেমনভাবে হচ্ছে না। এক সমীক্ষায় জানা যায়, পারিবারিক সহায়তা, পেনশন ও বয়স্ক-ভাতার আওতার বাইরেও দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রবীণ অবহেলা ও অযত্নের শিকার। এ জনগোষ্ঠী তাদের জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে অক্ষম। ফলে অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তির মতো পেশা গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে ষাটোর্ধ্বদের প্রবীণ বলা হলেও ২০১৯ সালের পর থেকে ৬৫ ঊর্ধ্বদের প্রবীণ বলে ঘোষণা করা হয়। দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী প্রবীণ হলেও তাদের কল্যাণে তেমন কোনো সুব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই প্রবীণ জনগোষ্ঠী ষাটোর্ধ্ব বয়স থেকে কর্মহীনতা, আর্থিক প্রবঞ্চনা, পুষ্টিহীনতা, নিরাপদ পানি ও বর্জ্যব্যবস্থার অভাব, পারিবারিক অবহেলা, নিঃসঙ্গতাসহ নানা জটিল পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে দিনযাপন করেন। শহুরে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মধ্যে এ অবস্থা তেমন একটা পরিলক্ষিত না হলেও নিম্নবিত্ত ও গরিব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বঞ্চনার এই মাত্রা প্রবলভাবেই দৃশ্যমান।
অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নই প্রবীণদের অবস্থার উন্নতির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, হাতে টাকা থাকলেই একজন প্রবীণ সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন। অন্যদিকে, সব ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের জন্য বিশেষজ্ঞরা ১০টি পরামর্শ দিয়েছেন, যা নিজের ভালো থাকার জন্য আবশ্যকীয়। বয়স ৬০ পেরিয়ে গিয়েছে? তাহলে মনে রাখতে হবে আপনার শরীর এবার বদলাচ্ছে। বহু ধরনের হরমোনের তারতম্য হতে পারে এবার। শুধু তা-ই নয়, এবার পেশির ক্ষমতাও কমতে পারে। তাই এবার থেকে আলাদা করে নজর দিতে হবে স্বাস্থ্যের দিকে। এই বয়সে পৌঁছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে। তাই যতদূর সম্ভব সাবধানে থাকুন। যাতে সংক্রামক রোগ থেকে দূরে থাকতে পারেন, এর ব্যবস্থা নিন। ষাটোর্ধ্ব বয়সে এসে খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ সংগ্রহ করার ক্ষমতাও কমে। তাই এ সময় আলাদা করে ভিটামিন বা মিনারেল সাপ্লিমেন্ট খাওয়াও দরকার। তবে সেটি অবশ্যই চিকিৎসকদের জিজ্ঞাসা করে। তাদের পরামর্শমতো মাল্টিভিটামিন খেতে পারেন এ সময়। কাজকর্ম একেবারে বন্ধ করে দেবেন না। কায়িক পরিশ্রম না করলেও নিজের মতো ‘অ্যাক্টিভ’ থাকার চেষ্টা করুন। যতটা সম্ভব চনমনে থাকুন। তাতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে। হালে করোনা তো বটেই আরও নানা ধরনের সংক্রামক রোগের হার বেড়েছে। যাদের বয়স ৬০-এর ওপরে উঠে গিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের বেশি সমস্যা সৃষ্টি করছে। তাই এমন ধরনের রোগ থেকে দূরে থাকুন। কেউ অসুস্থ এ কথা জানতে পারলে, তিনি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তার আশপাশে যাবেন না। ভিড় এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যান। প্রয়োজনীয় যা যা চেকআপ করানোর আছে, সেগুলো করিয়ে ফেলুন। এতে আপনার শরীর কেমন থাকছে, তার স্পষ্ট ছবিটি দেখতে পাবেন। মানসিক চাপ থেকে যত দূরে থাকা যায়, তত দূরে থাকুন। দরকার হলে পছন্দের গান শুনুন, বই পড়ুন। এগুলো মন ভালো রাখতে সাহায্য করবে, মানসিক চাপ কমাবে। এ সময় ডায়েটে নজর দেওয়া খুব দরকারি। প্রয়োজনীয় সব কটি খাদ্যগুণ শরীরে যাচ্ছে কি না, সেটি দেখা যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি হলো যে খাবারগুলো খাচ্ছেন, সেগুলো আপনার শরীরের জন্য ভালো কি না, তা বোঝা। সেই বুঝে বিশেষজ্ঞের থেকে ডায়েট চার্ট বানিয়ে নিন। শেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা। মনে রাখবেন, এ বয়সে বিশ্রাম খুব দরকারি। তাই নিয়ম করে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমান। তাতে শরীর ভালো থাকবে।
লেখক: সহকারী মহাব্যবস্থাপক, ফরিদপুর ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং কলেজ, ফরিদপুর
[দেশ রূপান্তরে পূর্বে প্রকাশিত]
নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নে দিনব্যাপী বিনা মূল্যে ১২শতাধিক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে। একই সাথে বিনা মূল্যে ওষুধ প্রদান করা হয়েছে। নড়াইলের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শরীফ আতিয়ার রহমান স্মৃতি সংসদ ও মানবিক জঙ্গল গ্রামের যৌথ আয়োজনে এ চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
মেডিকেল ক্যাম্পে ২২জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। এছাড়া বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নড়াইল ইউনিটির উদ্যোগে বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা, গ্রুপ নির্ণয় এবং ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে জঙ্গলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী।
শিক্ষাবিদ মরহুম শরীফ আতিয়ার রহমানের বড় ছেলে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডাক্তার শরীফ জাহাঙ্গীর আতীক বলেন, আমার পিতা মরহুম শরীফ আতিয়ার রহমান একজন শিক্ষাবিদ ছিলেন। পিতার আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে আমাদের পরিবারের ৬জন চিকিৎসক প্রতি মাসের শেষ শুক্রবারে সারা দিনব্যাপী বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নড়াইল ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইসমাইল হোসেন লিটন বলেন, বিভিন্ন এলাকায় বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প এবং মরহুম শরীফ আতিয়ার রহমানের বাড়িতে প্রতিমাসের শেষ শুক্রবার বিনামূল্যে রোগী দেখা হয়। এটি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। মেডিকেল ক্যাম্প সুষ্ঠভাবে সম্পন্নের জন্য যুব রেডক্রিসেন্টের সদস্যরা সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন আজ। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৫ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শেখ হাসিনা। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি এই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতি ছিলেন। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান।
পরবর্তীকালে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ৬ বছর ভারতে অবস্থান করেন। ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডে থেকে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই তিনি শাসকগোষ্ঠির রোষানলে পড়েন। তাকে বারবার কারান্তরীণ করা হয়। তাঁকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়।
১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সামরিক সরকার তাকে আটক করে ১৫ দিন অন্তরীণ রাখে। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বর মাসে তাঁকে দু’বার গৃহবন্দী করা হয়। ১৯৮৫ সালের ২রা মার্চ তাকে আটক করে প্রায় ৩ মাস গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি ১৫ দিন গৃহবন্দী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ১১ নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে এক মাস অন্তরীণ রাখা হয়।
১৯৮৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হয়ে গৃহবন্দী হন। ১৯৯০ সালে ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু ভবনে অন্তরীণ করা হয়। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে সংসদ ভবন চত্বরে সাবজেলে পাঠায়। প্রায় ১ বছর পর ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্তিলাভ করেন।
শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে উল্লেখযোগ্য হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তাকে লক্ষ করে পুলিশের গুলি বর্ষণ। এতে যুবলীগ নেতা নূর হোসেন, বাবুল ও ফাত্তাহ নিহত হন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাকেসহ তার গাড়ি ক্রেন দিয়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে শেখ হাসিনাকে লক্ষ করে এরশাদ সরকারের পুলিশ বাহিনী লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী শহীদ হন। লালদিঘি ময়দানে ভাষণ দানকালে তাকে লক্ষ্য করে ২বার গুলি বর্ষণ করা হয়। জনসভা শেষে ফেরার পথে আবারও তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করা হয়।
১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বারবার হামলা করা হয়। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন চলাকালে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়।
১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে তাঁর কামরা লক্ষ্য করে অবিরাম গুলিবর্ষণ করা হয়। ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে এবং শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দু’টি বোমা পুতে রাখা হয়। শেখ হাসিনা পৌঁছার পূর্বেই বোমাগুলো শনাক্ত হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। বিএনপি সরকারের সময় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয় ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট। ঐদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এক জনসভায় বক্তব্য শেষ করার পরপরই তাকে লক্ষ করে এক ডজনেরও বেশি আর্জেস গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। লোমহর্ষক সেই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভি রহমানসহ তার দলের ২২ নেতা-কর্মী নিহত হন এবং প্রায় ৫০০ মানুষ আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও কানে আঘাত পান।
রক্তাক্ত আগস্টের হৃদয়বিদারক ক্ষত বুকে নিয়ে, স্বজন হারানো শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিলে তিলে নিজেকে তৈরী করেছেন বাংলার জনগণের মুক্তির কান্ডারি হিসেবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এতো ত্যাগ, এতো নির্যাতন আর কোন নেতাকে সইতে হয়নি। একজন শেখ হাসিনা ঝুঁকিপূর্ণ জীবন কাঠিয়ে হয়ে উঠেছেন আজ নির্ভরতার প্রতিক।
শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ দেশী বিদেশি ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন দুই দশক। তার নেতৃত্বে একুশ বছর পর বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছিল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসন।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মমর্যাদা আর স্বনির্ভর হওয়ার পথকে থামিয়ে দিতে আবারও ষড়যন্ত্র। আবারও বাংলাদেশ কে পেছনে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্রে ৭১ ও ৭৫ এর ঘাতকরা যখন একাট্টা তখন একজন শেখ হাসিনাকেই বাংলাদেশকে টেনে তুলতে হয়েছে অন্ধকারের গহবর থেকে। বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল সরকার প্রধান হিসেবে আজ তিনি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পেয়েছে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সুস্পষ্ট অঙ্গীকারের কারণে।
দেশের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও ক্ষমতার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে শেখ হাসিনাকেও বিভিন্ন সময় আপোষ করতে হয়েছে। দলের ভেতরে, বাইরে মেনে নিতে হয়েছে অনেক অযৌক্তিক কর্মকাণ্ড। কিন্তু নিজের আরাধ্য পথ থেকে কখনও বিচ্যুত হননি তিনি। দৃপ্ত অঙ্গীকারে ছুটে চলেছেন বাংলাদেশের স্বপ্ন সারথি হিসেবে। নির্মম আর নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে মোকাবিলা করে তার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
জননেত্রী থেকে এখন বিশ্বনেত্রীতে পরিণত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রবক্তা স্বপ্নদর্শী এই নেত্রী ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেন। তিনবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা এবং চারবার সংসদ নেতা, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে নিজের নেতৃত্বকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এখন বিশ্বের বিস্ময়কর নেতৃত্ব। দেশ ছাপিয়ে বৈশ্বিক বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা চেতনা ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। তিনি এক জীবন্ত ইতিহাস।
একবিংশ শতকের অভিযাত্রায় তিনি কীভাবে বাঙালি জাতির কাণ্ডারি হয়েছেন তা এখন ইতিহাসের অনুসন্ধানের বিষয়। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন সেই স্বপ্ন রূপায়নের দায়িত্ব নিয়ে বাঙালি জাতির আলোর দিশারি হওয়ার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন তারই তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করেছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনেও তিনি বিশ্ব নেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। মিয়ামনারে জাতিগত সহিংসতায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে হয়েছেন প্রশংসিত। বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃ প্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র সীমা বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সমুদ্রে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও ছিটমহল বিনিময়, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ।
মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৪ বছর ৪ মাসে উন্নীত, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫.৬০ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফাইভ-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
একজন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। জনকল্যাণমুখী বহুবিধ কার্যক্রমে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকে। তাঁরই অভিপ্রায়ে বাস্তবায়িত পদ্মাসেতুসহ সহ অসংখ্য মেগাপ্রজেক্ট বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। ভয়াবহ করোনা সংক্রমণের অভিঘাত মোকাবিলা করে উন্নত বিশ্বেও হয়েছেন সমাদৃত। বৈশ্বিক সংকট, অর্থনৈতিক মন্দা ও ক্ষমতাধর রাষ্ট্র সমূহের নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আত্মপ্রত্যয়ী শেখ হাসিনা ছুটে চলেছেন নির্ভীক সংশপ্তক হিসেবে।
টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক কল্যাণে শেখ হাসিনার এসব যুগান্তকারী পদক্ষেপ বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
বাঙালির স্বপ্ন সারথি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সমকালীন বিশ্বের আলোচিত নাম। তার দর্শন, রাষ্ট্রচিন্তা আর জীবনবোধ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছে উন্নত রাষ্ট্রের দিকে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গৌরবের। তার অন্তর্গত উজ্জ্বলতা ও স্নেহসিক্ত, মমতাপূর্ণ হৃদয় সকল কর্মীদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, সফল রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। অভিবাদন।
লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী।
সম্মোহনী নেতৃত্বের সমান্তরালে শেখ হাসিনাকে রূপান্তরের নেতৃত্বও বলা যায়; যে দুটো গুণ বঙ্গবন্ধুর মধ্যেও ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সময় পেয়েছিলেন ১,৩১৪ দিন; যে সময়ে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ যে অনেক বদলে গেছে, তার প্রমাণ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচকে প্রতীয়মান। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি যে ভালোবাসা তা অনন্য। দেশের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তার উন্নয়নের যাদুর কাঠির স্পর্শে সজীব হয়নি। এখন এটি ধ্রুব সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা এবং গতিশীল নেতৃত্বে দেশ করোনা মহামারি দক্ষতার সাথে মোকাবেলায় সমর্থ হয়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রেরিত একটি বার্তায় বাংলাদেশকে এশিয়ার মধ্যে একটি নেতৃত্বশীল দেশ হয়ে ওঠায় প্রশংসা করা হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে পররাষ্ট্র নীতিতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কৌশল, পাশাপাশি এশিয়ার দু'টি বৃহৎ রাজনৈতিক পরাশক্তি চীন এবং ভারতকে আস্থায় রেখে নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির কৌশল বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে। এমনকি খোদ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও এ ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট।
দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন নেতৃত্বে থেকে শেখ হাসিনা সত্যিই বদলে দিয়েছে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত একটি বড় অর্জন। বিশ্বের বুকে আজ বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে দাঁড়িয়েছে। গোটাবিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার ম্যাজিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় ও সাহসী নেতৃত্বের কারণেই বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে জনগণের প্রত্যাশাটাও অনেক বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি কঠিন ছিল শেখ হাসিনার এগিয়ে চলার পথ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। বর্তমানে শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ একজন বিচক্ষণ বিশ্বনেতা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী নেতৃত্ব জনগণের কাছে আদর্শ ও অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে আছেন দেশের দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতা শেখ হাসিনা।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে যত রাজনৈতিক বিতর্ক থাকুক না কেন, অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন পরিকল্পনার অটল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার মূল কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। শেখ হাসিনার যুগোপযোগী ও ক্যারিশম্যাটিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব, চারিত্রিক দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা একটি পড়ন্ত-ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক দলকে উজ্জীবিত, গতিশীল ও সক্ষম দলে পরিণত করেছে। দলকে টানা দীর্ঘতম সময় ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাখার একক কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। সেই ১৯৮১ সালে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে তিনি প্রথমে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোকে সুসংহত করেন এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেকে জাতীয় রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্রে পরিণত করেন।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে পিতা-মাতাসহ পরিবারের প্রায় সব সদস্যের মৃত্যুর পর থেকে দেশে বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশ, বিলুপ্তপ্রায় আওয়ামী লীগকে অন্যতম রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করা, একুশ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পর ১৯৯৬ সালে দলকে পুনরায় ক্ষমতায় নিয়ে আসা, নিজের সুযোগ্য নেতৃত্বের স্বাক্ষর রেখে যাওয়া এবং ৭ বছরের মধ্যে সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগকে দেশের একক রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করার ইতিহাস এখনও গল্পের মতো মনে হয়। এর পেছনে রয়েছে পিতার কাছ থেকে পাওয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বের শিক্ষা এবং কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে সময়ের সাথে মানিয়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে সংকট উত্তরণের অনুকরণীয় রাজনৈতিক শিক্ষা ও নিরলস চেষ্টা। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার স্থিতিশীল ধারাক্রম বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মূল্যায়নে গত এক দশকে তৃতীয় বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এ কৃতিত্ব শেখ হাসিনা এবং তার সুযোগ্য নেতৃত্বের। দল, সরকার এবং রাজনীতিতে তিনি ইতোমধ্যে অপরিহার্য একক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিতে দেশের প্রতিটি জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। বর্তমানে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঈর্ষণীয়। স্বপ্নের পদ্মাসেতু দৃশ্যমান , বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, মেট্রোরেল চালু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়ন, উপজেলাভিত্তিক মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ জনপদে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকার প্রধান থাকায়, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সমুদ্রে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের নতুন সংযোজন স্মার্ট বাংলাদেশ, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে বর্তমান সরকার কর্তৃক। 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বলতে স্মার্ট নাগরিক, সমাজ, অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার গড়ে তোলা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর হবে। এ জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং এর উন্নয়নে একটি দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন কার্যক্রম ডিজিটাইজেশন করা হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ একটি 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ে তোলা সরকারের নতুন রূপকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে সারা বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি সেবা সহজীকরণ করতে এটুআই বেশ কিছু ডিজিটাল প্রোগ্রাম উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করার লক্ষ্যে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' এর সফল বাস্তবায়ন সরকারকে 'ভিশন-২০৪১' এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি উদ্ভাবন ও জ্ঞানভিত্তিক 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার নতুন লক্ষ্য গ্রহণ করতে উৎসাহ যুগিয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের প্রত্যেকটা সিটিজেন প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। স্মার্ট সিটিজেন উইথ স্মার্ট ইকোনমি; অর্থাৎ ইকোনমির সমস্ত কার্যক্রম এই প্রযুক্তি ব্যবহারে সম্পন্ন হবে। স্মার্ট গভর্নমেন্ট; ইতোমধ্যে এটি অনেকটা বাস্তবায়ন হয়েছে । মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে আমাদের সমস্ত সমাজটাই হবে স্মার্ট সোসাইটি যা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সুতরাং বলা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সর্পোটেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও প্রতিকূলতার মধ্যেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলছে তার তুলনা নেই। বিশেষত বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক ঋণচুক্তি বাতিলের পরও পদ্মাসেতুর মতো মেগা প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নসহ অবকাঠামোখাতে দেশকে আমূল পাল্টে দেয়ার মতো উন্নয়নের কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। তার ব্যক্তিগত দৃঢ়তা ও সাহসী নেতৃত্বের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। এটি স্বীকার করতে হবে, দেশের এই সত্যিকারের বদলে যাওয়ার প্রধান রূপকারই হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ অপবাদকে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোল মডেল। জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং নানা চড়াই-উতরাই ও অন্ধকারের যুগ পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন-সমৃদ্ধির মহাসোপানে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ গোটাবিশ্বের সামনে এক বিস্ময়ের নাম। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের নতুন সংযোজন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে অনন্য উচ্চতায় আসীন হবে বাংলাদেশ।
লেখক: সাবেক সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
আল হিলালের হয়ে অভিষেকের পর চার ম্যাচ খেলেছিলেন নেইমার। কিন্তু কোনো ম্যাচে তিনি পাননি কোনো গোলের দেখা। অবশেষে আরবের ক্লাবটির হয়ে নিজের পঞ্চম ম্যাচে তিনি পেয়েছেন গোলের দেখা। তাতে দলও পেয়েছে বড় জয়ের দেখা।
এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে ইরানের ক্লাব নাসাজি মাজান্দারানকে হারিয়েছে ৩-০ ব্যবধানে। দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে ডি গ্রুপের দুইয়ে আল হিলাল। ছয় পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে নাভবাহোর।
ম্যাচের ১৮ মিনিটেই এগিয়ে যায় হিলাল। মোহাম্মদ আল বুরায়েকের বাড়ানো বলে জাল খুঁজে নেন অ্যালেক্সান্ডার মিত্রোভিজ। ৩৮ মিনিটে দুই দলই পরিণত হয় দশ জনের দলে। তর্কে জড়িয়ে লাল কার্ড দেখেন দুই দলের দুই ফুটবলার।
৫৮ মিনিটে সেই কাঙ্খিত গোলের দেখা পান নেইমার। নাসের আল দাওয়াসারির পা ঘুরে বল পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই তারকা। আর শেষ দিকে সালেহ আল সাহেরির গোলে বড় নিশ্চিত হয় আল হিলালের।
‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ২০২০ সালে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছিলেন সংসদ সদস্যরা (এমপি)। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় তালিকা অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা তাদের চাহিদার পরিবর্তন আনেন। তারা ইউনিয়ন পর্যায়ে রাস্তা না করে সেতু তৈরির ওপর জোর দেন। কিছু ক্ষেত্রে খাতভিত্তিক ব্যয় না চেয়ে থোক বরাদ্দও চাওয়া হয়েছিল। চাহিদার জটিলতায় ধীরগতিতে চলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন। ঠিক সময়ে প্রকল্পটি শেষ করতে না পারার শঙ্কায় ফের সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
যদিও একই রকম আরেকটি প্রকল্পের কাজ তখনো চলমান ছিল। চলমান একটি প্রকল্প শেষ না হতেই সংসদ সদস্যদের জন্য আরেকটি প্রকল্প নিয়ে তখন বেশ আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছিল।
প্রকল্প-৩-এর মেয়াদ আছে আর এক বছর। অথচ কাজ চলছে ঢিমেতালে। নির্বাচনের আগে তাদের চাহিদার পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৬ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের পর ধীরে ধীরে এগোতে থাকে। এর বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। গত আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
এ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে প্রত্যেক সংসদ সদস্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলেন। সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট নির্মাণে বছরে পাঁচ কোটি টাকা করে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রতি বছর পাঁচ কোটি করে চার বছরে এ অর্থে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা তাদের। সিটি করপোরেশন এলাকার ২০ সংসদ সদস্য এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যরা এ বরাদ্দের বাইরে রয়েছেন।
নিজ এলাকার উন্নয়নে এমন সুযোগ পেলেও সংসদ সদস্যরা কাজে লাগাতে পারেননি। প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় শেষ। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়ন অর্ধেকেরও কম হয়েছে। অধিকাংশ সংসদ সদস্যই তাদের প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেননি। কিন্তু তারা বলছেন, যে চাহিদা তারা দিয়েছিলেন তার অধিকাংশ পেয়েছেন।
জানতে চাইলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার আসনে যেসব চাহিদা দিয়েছিলাম সবগুলোই পেয়েছি। কিন্তু এ মুহূর্তে এসে বাস্তবায়নের অগ্রগতি ৪১ শতাংশ বলা হচ্ছে, এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। পরিকল্পনা কমিশনে কীসের ভিত্তিতে এই সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা জানি না।’
সংসদ সদস্যরা যে চাহিদা পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন সে বিষয়ে ইনু বলেন, ‘কোনো এমপি চাহিদা পরিবর্তন করার কথা নয়। আমার এলাকায় যা চেয়েছি তাই তো পুরোটা তারা দিতে পারেননি। প্রতি বছর পাঁচ কোটির বরাদ্দ, তার বাইরে তো তারা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না।’ পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা (পিইসি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমিন খানের কাছে সংশোধনের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সেখানে তিনি বলেন, এ প্রকল্পে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সড়ক ও সেতু-কালভার্ট নতুনভাবে নির্মাণের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত স্কিমগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। স্কিমগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন।
পিইসি সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, এ বিষয়ে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, যেসব স্কিম অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর যৌক্তিকতাসহ সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে, নতুনভাবে গৃহীত স্কিমগুলো বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকার কম করতে হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তৃতীয় দফার এ প্রকল্পের আওতায় নতুন করে উপজেলা সড়ক নির্মাণ করা হবে ৩০৫ দশমিক ২১ কিলোমিটার। ইউনিয়ন সড়ক নির্মাণ করা হবে ৬৬০ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার। গ্রাম সড়ক উন্নয়ন হবে ৫ হাজার ৭৫ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার। গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ হবে ১ হাজার ৯০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার। গ্রামীণ সড়কে ১০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যরে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে ৭ হাজার ৯৯২ দশমিক ২২ মিটার।
এসব প্রস্তাব সংসদ সদস্যদের চাহিদার ভিত্তিতেই করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়নের সময় ফের বাদ সাধেন তারাই। পরে মূল প্রকল্প প্রস্তাব থেকে প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধনে ১৯৩ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ৮৩ দশমিক ৯১ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক, ৫০৫ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম বাদ দেওয়ার আবদার করেছেন তারা। এর বিপরীতে ৩৯২ দশমিক শূন্য ১ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক ও ২ হাজার ৬৭৪ দশমিক ৫১ মিটার সেতু-কালভার্টের প্রস্তাব এসেছে তাদের কাছ থেকে। সে অনুযায়ী সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি এ রাস্তাটি আজকে করব, কিন্তু দেখা গেল অন্য কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে এ রাস্তাটি হয়ে গেছে। এমপিরা যেভাবে ডিও দেন প্রকল্পটি সেভাবে চলে, আমাদের ফ্রেমওয়ার্কটিই সেভাবে তৈরি করা।’
এ মুহূর্তে প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে পরিবেশের জন্য ড্রেনেজ সুবিধা রাখতে হবে। একটি রাস্তা করতে গিয়ে দেখা গেল, একটি কালভার্ট বা সেতুর প্রয়োজন হয়েছে। এটি এখন প্রথম প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার)। এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন হিসেবে কাজ করছে।’
বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণ হিসেবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘যখন প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছিল তখন করোনা মহামারী ছিল। করোনার কারণে প্রকল্পটির কাজ দেরিতে শুরু হয়েছিল, যার ফলে এ মুহূর্তে বাস্তবায়ন অগ্রগতি এ পর্যায়ে এসেছে।
পিইসি সভায় সংশোধনের কারণ জানতে চাওয়া হলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ১১তম জাতীয় সংসদ সদস্যদের প্রাথমিক চাহিদাপত্র (ডিও) গ্রহণ করে স্কিমের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিশেষ পরিস্থিতি ও অগ্রাধিকার ক্রমপরিবর্তনের ফলে আরডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত স্কিম তালিকা পরিবর্তন করে ডিওর মাধ্যমে সংশোধিত নতুন স্কিম তালিকা করা হয়েছে। পরিবর্তিত স্কিম তালিকা অনুযায়ী গ্রাম সড়ক ও সেতু-কালভার্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উপজেলা-ইউনিয়ন সড়কের পরিমাণ কমেছে।
এ প্রকল্পের তথ্য-বিশ্লেষণে দেখা যায়, এতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৭৫ কিলোমিটারের গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের জন্য। এতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ হাজার ৬০ কোটি টাকা। ৬৬০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫২৮ কোটি টাকা, ৩০৫ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক উন্নয়নের জন্য ২৯০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। তা ছাড়া ১ হাজার ৯০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক সংরক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৮১ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠনের পর প্রত্যেক সংসদ সদস্য নিজ আসনের অবকাঠামো উন্নয়নে ১৫ কোটি টাকা করে পেয়েছিলেন। সে সময় প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮৯২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এটি ২০১০ সালের মার্চ থেকে ২০১৬ সালের জুনে শেষ হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্যদের ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়ন হয়েছে। এ প্রকল্পটি শেষ না করেই তৃতীয় মেয়াদে আবার ২০ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়। এই উদ্যোগের কারণে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রশ্নের মুখে পড়ে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ প্রকল্পের আওতায় সংসদ সদস্যরা সরাসরি টাকা পাবেন না। তারা শুধু তাদের নির্বাচনী আসনে পছন্দ মোতাবেক প্রকল্পের নাম দেবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে শোভন আচরণ এবং বিশৃঙ্খলা-সৃষ্টি করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাদের বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচএম আবু বকর চৌধুরী।
বহিষ্কৃতরা হলেন মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল হেকিম, সদস্য মো. জাকির হোসেন, ওই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আকরাম হোসেন, একই ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফয়সাল ফকির এবং ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাইদুল।
তবে ঘটনার উসকানিদাতা মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা এখনো নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচএম আবু বকর চৌধুরী বলেন, পুরো বিষয়টি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা দেখছেন। এ ব্যাপারটি তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
সারা দেশে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ১ হাজার ৫৭৭টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকায় ঘটেছে ১৫৫টি, যা আগস্ট মাসের চেয়ে ২৭টি বেশি। এ সময় আগুনে ৪ জন নিহত ও ১১ আহত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকায় ১৫৫টি আগুনের ঘটনায় ৭ জন আহত হলেও কেউ মারা যায়নি। রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, তেজগাঁও, বারিধারা, উত্তরা এলাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা বেশি ঘটেছে। এর মধ্যে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বারিধারা এলাকায় গত মাসে ১৬টি করে অগ্নিকান্ড ঘটেছে।
সেপ্টেম্বর মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে ৬০৩, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮৯, রাজশাহী বিভাগে ২২৫, খুলনা বিভাগে ১৩২, সিলেট বিভাগে ৫৭, বরিশাল বিভাগে ৬০ ও রংপুর বিভাগে ২৪৮টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগস্ট মাসের চেয়ে সেপ্টেম্বরে অগ্নিকাণ্ড কমেছে। আগস্টে সারা দেশে ১ হাজার ৬৬৭টি আগুনের ঘটনা ঘটেছিল।
পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সেপ্টেম্বরে সারা দেশে ৭৮৭টি বিভিন্ন দুর্ঘটনায় উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেন। এর মধ্যে আছে ঢাকায় ১৫৯, ময়মনসিংহে ৫৫, চট্টগ্রামে ১০২, রাজশাহীতে ২০১, খুলনায় ৮৮, সিলেটে ২৭, বরিশালে ৪১ ও রংপুর বিভাগে
১১৪টি দুর্ঘটনা।
ফায়ার সার্ভিস আরও জানায়, বিভিন্ন দুর্ঘটনার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা রয়েছে ৫৯০। এ ছাড়া রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডারজনিত দুর্ঘটনা ঘটেছে ১০, গ্যাসলাইনে ত্রুটিজনিত ঘটনা ১৩, লিফট দুর্ঘটনা ১৫, বজ্রপাতের ১৯, নদী ও পানিতে ডুবে যাওয়ার ১১৫ এবং অন্যভাবে আরও ২৫টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১৮৪ জন নিহত ও ৭৭৭ জন আহত হয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসে শুধু ঢাকায় ৪৯টি বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত হয়েছে। রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, পুরান ঢাকা এলাকায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।
ফায়ার সার্ভিসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত মাসে সারা দেশ থেকে ফায়ার সার্ভিস আগুন ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৩৫৪টি কলের মাধ্যমে সেবা দিয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ১৫২টি কলের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৮ জন রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়েছে।
ঢাকায় অগ্নি দুর্ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভোররাতে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। সেখানে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট কাজ করে। আর তখন তাদের সহযোগিতা করেছেন সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। প্রায় ৫ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও মার্কেটের বিভিন্ন দোকানের মালামাল, আসবাবসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী ওই সময় বলেছিলেন, মার্কেটের ভেতরে কোনো ফায়ার সেফটি ও ফায়ার ফাইটিংয়ের ব্যবস্থা ছিল না। এ ছাড়া মার্কেটটি অনেকটা বঙ্গবাজার মার্কেটের মতো। ফুটপাত ও সড়কে দোকান থাকা এবং মানুষের ভিড়ের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়।
এর আগে বঙ্গবাজারের চারটি মার্কেটে অগ্নিকান্ডের পর ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে অভিযান চালায় ফায়ার সার্ভিস। বেশিরভাগ মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছিল অগ্নিনির্বাপণ বাহিনী। এরপরই নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের ঘটনা ঘটে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও লক্ষ্মীপুর-৩ শূন্য আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির তফসিল অনুযায়ী আগামী ৫ নভেম্বর এই দুই আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কমিশন সভা ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ তথ্য জানান।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১১ অক্টোবর (বুধবার) মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার), মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৩ থেকে ১৭ অক্টোবর, আপিল নিষ্পত্তি ১৮ অক্টোবর (বুধবার), প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার), প্রতীক বরাদ্দ ২০ অক্টোবর (শুক্রবার) এবং ভোটগ্রহণ ৫ নভেম্বর।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক। সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা। লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা। সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
এর আগে, গত ১ অক্টোবর সংসদ সচিবালয় এই দুই আসন শূন্য ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত এমপি আবদুস সাত্তার ভূঞা এবং লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত এমপি এ কে এম শাহজাহান কামাল রাজধানীর একটি হাসপাতালে গত ৩০ সেপ্টেম্বর মারা যান। এরপর আসন দুটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।