
কবি, ভাষাসংগ্রামী ও ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতার রচয়িতা মাহবুব উল আলম চৌধুরীর জন্ম চট্টগ্রামের রাউজানে ৭ নভেম্বর ১৯২৭ সালে। তার বাবার নাম আহমাদুর রহমান চৌধুরী এবং মা রওশন আরা চৌধুরী। ১৯৪৭ সালে গহিরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি ডিসটিংশনসহ এন্ট্রান্স পাস করেন। চট্টগ্রাম কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালে রাজনৈতিক কারণে তিনি কলেজ ত্যাগ করেন।
১৯৪৫ সালে বিভাগ-পূর্ব ভারতে 'ছাত্র ফেডারেশন' নামে ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যোগ দেন এবং এ বছরই 'দ্য বেঙ্গল রিজিওনাল স্টুডেন্ট কনফারেন্স' অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতার প্রতিনিধি হিসেবে এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, গোপাল হালদার, ভবানী সেন ও সুকান্ত ভট্টাচার্য। এতে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আন্দোলনকারী ভাষাসংগ্রামীদের ওপর পুলিশের গুলি এবং ছাত্র নিহত হওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদস্বরূপ তিনি 'একুশে' শিরোনামে রচনা করেন তার বিখ্যাত কবিতা 'কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি', যা ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা হিসেবে স্বীকৃত।
১৯৫০ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পাকিস্তানের সংবিধানভুক্ত না করার প্রতিবাদে তিনি পাকিস্তান সরকারের রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদসভার আয়োজন করেন। চট্টগ্রামে পূর্ব পাকিস্তানের বিশ্বশান্তি পরিষদের কমিটি গঠন করা হলে তিনি এ পরিষদের সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত যুক্তফ্রন্টের চট্টগ্রাম শাখা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করেছেন। একুশে পদকসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। ২০০৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন এই ভাষাসংগ্রামী।
কাউকে ধাক্কা দেবেন আর সে কিছু বলবে না এমনটা কখনো ভেবেছেন? এই ধাক্কাধাক্কি এক ধরনের পেশা। অথচ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অন্যকে ধাক্কা দিয়েই মানুষ উপার্জন করছে।
ধাক্কা দেওয়া বা পুশিং হলো এক অদ্ভুত পেশা। জাপান ও নিউ ইয়র্ক সিটিতে রেলস্টেশনে ভিড়ের সময় প্রফেশনাল পুশাররা ধাক্কা দিয়ে ট্রেনের ভেতর লোক ঢোকাতে সাহায্য করে। আগে এটি স্টুডেন্টদের জন্য পার্টটাইম চাকরি ছিল। এখন এটি ফুলটাইম চাকরি হিসেবে বেছে নিচ্ছে অনেকেই। এই চাকরিতে বেতনও বেশ ভালো। আর চাকরির যোগ্যতা হিসেবে আপনাকে বেশ সুঠাম দেহের অধিকারী হতে হবে।
দেশে এই প্রথম বারের মতো শুরু হতে যাচ্ছে, অনলাইন পাঠক ফোরাম রূপান্তরের বারান্দা। এটি মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষীদের প্ল্যাটফর্ম। যেখানে তারা একান্তভাবে নিজের ভাব প্রকাশ করবেন। থাকতে পারে সেখানে তাদের স্বপ্ন, যন্ত্রণা, দুঃখ, হতাশা, ভালোবাসা, সমস্যা, কৈশোর বেলা এমনকি প্রবাস জীবনের বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা।
যে কেউ লেখার পাশাপাশি দিতে পারেন ঢাউস সাইজের ছবি, যেকোনো ঘটনার ভিডিও; সেখানে অবশ্যই তার নাম এবং দেশ উল্লেখ করতে হবে। এরই মধ্যে আজকের দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, শিগগিরই পরিপূর্ণভাবে আত্মপ্রকাশ করবে রূপান্তরের বারান্দা। সঙ্গে থাকুন, এগিয়ে থাকুন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের (ববি) জন্মদিন আজ। ১৯৮০ সালের ২১ মে যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
জন্মদিনে শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন তরুণদের ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করা রাদওয়ান মুজিব।
তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় রাদওয়ান। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে স্নাতক এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। তার ছোট বোন টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য।
রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক সিআরআইয়ের ট্রাস্টি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি দেখভাল করেন। এ ছাড়া এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান 'ইয়ং বাংলা'র মাধ্যমে তিনি তরুণদের ক্ষমতায়ন ও উদ্বুদ্ধকরণের কাজ করছেন। সিআরআইয়ের মাধ্যমে অনলাইনভিত্তিক প্রচারেও ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন ববি। সমাজমাধ্যমে সরকারবরোধী যেকোনো অপপ্রচারের তথ্যভিত্তিক জবাব দেন তিনি।
বাবুই দৃষ্টিনন্দন পাখি। এ পাখিকে শৈল্পিক কারিগর বলা চলে। নিজের ঘর সাজাতে তাদের কোনো জুড়ি নেই। বাসা বানানোর জন্য বাবুই খুবই পরিশ্রম করে। তাদের শৈল্পিক চিন্তা এতই প্রবল ঝড় কিংবা তুফানেও তাদের বাসার ক্ষতি হয় না। শৈল্পিক কারিগর এই বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা এখন আর দেখাই যায় না।
কবি রজনীকান্ত সেনের ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতায় বাবুই আর চড়ুই পাখির বাসা নিয়ে তর্কাতর্কি হয়েছে। ‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই/ কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই/ আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে/ তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে...’
আজ দেশ রূপান্তরে প্রথম পাতায় প্রকাশিত এই ছবিটি গতকাল চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মাদার্শা ইউনিয়ন থেকে তুলেছেন আকমাল হোসেন।
মায়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর ও অবিচ্ছেদ্য। অধিকাংশ মানুষেরই মায়ের সঙ্গে প্রথম বিচ্ছেদ সঙ্গে শিশুশ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর। এই প্রথম আমরা মায়ের কাছ থেকে দীর্ঘসময় দূরে থাকি। পরে শিক্ষাজীবনের তাগিদেই মায়ের কাছ থেকে দূরে, পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়। একাকি দিন কাটতে থাকে হোস্টেল, মেস বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্র হল বা ছাত্রী হলে। ব্যস্ততায় জীবন চলতে থাকে জীবনের মতো, মাকে ছাড়া থাকার বাস্তবতা মেনে নিয়েই। বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তাদের মাকে মনে পড়ার অনুভূতি।
আমরা তাদের চারটি প্রশ্ন করেছিলাম-* মায়ের সঙ্গে প্রথম বিচ্ছিন্ন হওয়ার স্মৃতি কোনটি?* মায়ের সঙ্গে সবচেয়ে আনন্দদায়ক স্মৃতি কোনটি?* কোন পরিস্থিতিতে এখনো মাকে মনে পড়ে? এবং* মাকে কি কখনো বলেছেন ‘ভালোবাসি’?
দেশ রূপান্তরের পক্ষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন অহিদুল ইসলাম অন্তর, সিফাত রাব্বানী ও আহমেদ মানিক
আমি অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হই ঢাকার সেন্ট্রাল গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেই প্রথম মা থেকে দূরে থাকা। যখন দেখতাম সহপাঠীরা মাকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে আসতো তখন কান্না পেত। মায়ের সঙ্গে আমার সবচেয়ে খুশির স্মৃতি এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পাওয়ার স্মৃতি। সেদিন আমি সবচেয়ে আনন্দময় দিন কাটিয়েছি। মা আমার আইডল। এখনো যেকোনো নতুন কাজ করতে গেলে মায়ের কথা মনে পড়ে। কখনো সরাসরি বলা হয়নি। তবে, ফোনে প্রায়ই বলি, আই লাভ ইউ মা। অনেক ভালোবাসি তোমাকে।
-পিংকি আক্তারআন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ
ক্লাস সেভেনে গ্রাম থেকে শেরপুর শহরের আইডিয়াল প্রিপারেটরি অ্যান্ড হাই স্কুলে ভর্তি হই। এই প্রথম মায়ের থেকে দূরে থাকি। অনেক মিস করতাম। প্রায়ই ফোনে কথা বলতাম। মার সঙ্গে আনন্দময় স্মৃতির অভাব নেই। না বলে হঠাৎ করেই বাসায় চলে গিয়ে মাকে সারপ্রাইজ দেই। সবচেয়ে স্মরণীয় মুহুর্ত হলো যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। মা অনেক খুশি হয়েছিল। অবসর সময়ে মাকে খুব মনে পড়ে। সরাসরি দেখা করার সুযোগ না থাকায় ফোনে কথা বলি। অনেক ভালোবাসি মাকে কিন্তু বলা হয়নি।
-শরিফুল ইসলাম সোহানপরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা
মায়ের কাছ থেকে প্রথম বিচ্ছিন্ন হয়েছিলাম যখন এইচএসসি পরীক্ষা দিতে প্রথম লালমনিরহাটে ছাত্রাবাসে উঠি। বাড়ি থেকে বিদায়ের আগে মা আমার সব কিছু গুছিয়ে দিয়েছিলেন। মাঝেমধ্যে পাশের রুমে গিয়ে কান্না করতো। আমাকে হাসিমুখে বিদায় দিলেও মার দুচোখ অশ্রুতে টলটল করছিল। মার সঙ্গে আমার সবচেয়ে আনন্দময় স্মৃতি হলো এসএসসি পরীক্ষার ফল পাওয়ার দিন। আমি যখন রেজাল্ট বলি, বাবা মারা যাওয়ার পর সেই প্রথম আমি মায়ের মুখে হাসি দেখি। সেটাই আমার জীবনে সবচেয়ে আনন্দঘন মুহুর্ত। যখন দেখি অন্য কারও মা তার সন্তানকে আদর করছে, ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে, বিশেষ করে কাউকে যদি তার মায়ের হাতে খেতে দেখি, তখনি মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। মা আমাকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন। মাকে মুখ ফুটে কখনো বলা হয়নি, ভালোবাসি।
-পলাশ চন্দ্র রায়ফার্মেসী বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা
মা যখন রাজশাহী যান মিডওয়াইফারি কোর্স করতে, সেই প্রথম মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকা। তখন বয়স আমার ১৪। উঠতি বয়স, হঠাৎ মা ছাড়া থাকাটা আমার জন্য অন্য রকম অভিজ্ঞতা। মা আমাদের পরিবারের জন্য ভীষণ পরিশ্রম করেছেন। মায়ের সঙ্গে সব স্মৃতিই আনন্দময়। মাকে যখন সাফল্যের কথা জানাতাম মায়ের মুখটা খুশিতে ভরে উঠতো। খাওয়ার সময় মাকে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে। মায়ের হাতের রান্না সবসময় অতুলনীয়।মাকে ভালবাসি কথাটি বলা হয়ে ওঠেনি। বলতে খুব ইচ্ছে হয় কিন্তু কেন জানি বলা হয়ে ওঠে না।
-খালেদ ফেরদৌস মুন বীজ প্রযুক্তি বিভাগ, শের-ই বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
প্রথম পড়াশোনার জন্য ঢাকাতে আসাই মায়ের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রথম স্মৃতি। জন্মের পর থেকে বিশ বছর পর্যন্ত মায়ের ভালবাসা, আদর, শাসনে, তার কাছেই বড় হয়েছি। মায়ের সঙ্গে আনন্দময় স্মৃতির অভাব নেই। বর্তমানে ঈদের ছুটিতে বাসায় মায়ের সঙ্গে কাটানো সময়গুলোই সবচেয়ে আনন্দময় স্মৃতি। মাকে সবসময়ই মনে পড়ে। পড়ার কথাও। আমি প্রচণ্ড অগোছালো। বাসায় সব কাজ মা করে দিতেন। আর অগোছালো স্বভাবের জন্য বকাও দিতেন। ঢাকায় এটাই মিস করি। আমার মায়ের হাতের রান্না অতুলনীয়। মায়ের রান্নাও মিস করি। মাকে ভালোবাসি কিন্তু কখনও বলা হয়নি ‘মা, তোমাকে ভালোবাসি’। আর কখনও বলা হবে কিনা জানি না। তবে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মা জানুক তাদের সন্তান তাদেরকে ভালবাসে।
-এস এম তৌফিকুল ইসলামইংরেজী বিভাগ, তেঁজগাও কলেজ, ঢাকা
আমি যখন পড়াশোনা জন্য আমার জন্মশহরের বাইরে থাকতে শুরু করি তখন প্রথম মায়ের থেকে আলাদা থাকতে হয়েছে। জানতাম মায়ের কথা অনেক মনে পড়বে, খারাপ লাগবে তবু মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয়েছে। পরিবারের সকলে মিলে যখন আমরা গল্প করি সে সময়ে মাকে অনেক খুশি দেখি। মায়ের সঙ্গে সেটাই আমার সবচেয়ে আনন্দের স্মৃতি। আমি যখন পড়াশোনার জন্যে শহরের বাইরে একা থাকি তখন মনে পড়ে, যখনই একা রান্না করি, মায়ের হাতে রান্না করা খাবারের কথা অনেক মনে পড়ে। না, মাকে কখনো বলা হয়নি তাকে কতটা ভালোবাসি।
-সাবিকুন্নাহার মিমসাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগ, বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটি রাজশাহী
আমি যখন উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হলাম তখন আমি মায়ের থেকে আলাদা থাকতে শুরু করি। জন্মের পর থেকে এত বছরের নির্ভরশীলতার ব্যতয় ঘটে।মায়ের সঙ্গে কাটানো সবগুলো মূহূর্তই আমার কাছে সেরা। কিন্তু সেরাদের সেরা মূহূর্ত আমি বলব, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্টের দিন। মাকে মনে পড়ে সব সময়। তবে হলে অসুস্থ হয়ে পড়লে এবং ডাইনিং নামক পাঁচ তারকা রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে ভীষণভাবে মনে পড়ে। আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি আমার মাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য এখনো বলা হয়নি ‘মা তোমাকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি’।
-মোশারফ হোসেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আমার আম্মার সঙ্গে প্রথম বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা ঘটে যখন আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। আমি আমার দাদির সঙ্গে আমার আব্বার মামার বাড়িতে গিয়েছিলাম এবং সেখানে বেশ কদিন থাকার কথা ছিল। তবে যেদিন যাই সে রাতেই আমি বাড়ি ছাড়া, মাকে ছাড়া থাকতে পারছিলাম না। একদিন পরই আমি বাড়িতে চলে যাই। আম্মার সঙ্গে সবচেয়ে মজা লাগে যখন তাকে খেপানো হয়, রান্নার সময় দুষ্টামি করতে পারা যায়, এটা-ওটা রান্না করে খাওয়ানোর জন্য বায়না করা হয় সেই মুহূর্তগুলো অনেক স্মৃতিকাতর করে ফেলে মাঝে মাঝে। ব্যস্ততা-অবসর দুইসময়েই মাকে মনে পড়ে। বিশেষ করে যখন কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান হয় বা পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠান হয় এবং পড়াশুনার কারণে আমাকে ঢাকায় থাকতে হয় তখন মাকে বেশি মনে পড়ে। ‘ভালোবাসি’ এটা শুধু একবারই বলা হয়েছে। গত বছর ভালোবাসা দিবসে ফোনে মেসেজিং করে কিছু মনের ভাব জুড়ে দিয়ে বলেছিলাম ‘ভালোবাসি’। তাছাড়া বলা হয়নি কখনো। আর না বললেও বা কি? বাবা-মা'র প্রতি সন্তানদের ভালোবাসা আর সন্তানদের প্রতি বাবা-মার ভালোবাসা কখনও ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়, অনুভব করা যায় মাত্র।
-রাহাতইংরেজি বিভাগ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে প্রথম মা থেকে আলাদা হওয়া। আমাদের ছেলেবেলায় মা গরমকাল এলেই নানান পদের আমের আচার বানাতেন। তখন আমাদের ভাইবোনদের মাঝে উৎসব উৎসব রোল পড়ে যেতো। এখন মায়ের আগের সেই বয়স না থাকায় এগুলো আর হয়ে ওঠে না, আমরাও যে যার মতো ব্যস্ত। ছেলেবেলার এই আনন্দঘন স্মৃতিটি মনে পড়ে। এখনো বাসায় গেলে মা আমাদের তিন ভাইবোনকে একসাথে খাবার খাইয়ে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকাকালীন এই ব্যাপারটি বেশি মনে পড়ে। তবে এতো কাছাকাছি থেকেও কেন যেন মাকে কোনদিন ভালোবাসি কথাটা মুখে বলা হয়ে ওঠেনি! মুখে বলার তুলনায় লেখাটা বোধহয় অনেক সহজ। লিখে দিলাম, ‘মা তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি’।
-আফিয়া সিদ্দিকা রাইসাপুরকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
২০১২ সালে যখন আম্মু ইংল্যান্ডে চলে যায় দুই বছরের জন্য, তখনই আম্মুর সাথে প্রথম বিচ্ছিন্ন হই। কতটা মন খারাপ হয়েছিলো বলে বোঝানো মুশকিল। এখন বড় হয়েছি। ছোটবেলায় সন্ধ্যা হলে আম্মুর সাথে পড়তে বসার সময়টাই বেশি মনে পড়ে। এখন মেসে খাবার খাওয়ার সময় আম্মুর কথা বেশি মনে পড়ে, আম্মুর হাতের খাবার যদি হতো তাহলে বুঝি খাওয়া যেত আরো আয়েশ করে। আম্মুকে ভালোবাসি তবুও আম্মুকে এখনো ভালোবাসি বলতে পারিনি।
-নেহাল ইসলামব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
আমি স্নাতকে ভর্তি হলাম দু বছর হলো, তখনই মায়ের থেকে দূরে চলে আসা। মায়ের সাথে গল্প করার সময়গুলো ভীষণ মনে পড়ে। একসাথে খেতে বসে অনেক গল্প করা হতো, এখন যা হচ্ছে না। মায়ের রান্নাই আমার সবচেয়ে পছন্দের। তাই মায়ের থেকে দূরে গিয়ে থালা হাতে খেতে বসলেই মাকে ভীষণ মনে পড়ে! মায়ের রান্না খুব মিস করি। মাকে ভীষণ ভালোবাসি। ঠিক কতটা ভালোবাসি সেটা কোনো পরিমাপ করা যাবে না। আয়োজন করে কখনো বলা হয়নি ‘ভালোবাসি তোমায় মা’। মাকে শুধু মা দিবসে না, সবসময় ঠিক একইরকম ভালোবাসি।
-সামিয়া ইসলামইতিহাস বিভাগ, সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল
উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে এসে প্রথম বারের মতো মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয়। মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এক অন্য রকম অব্যক্ত কষ্টের। মায়ের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তই আনন্দের। ছোটবেলায় যখন জ্বর আসতো ভীষণ ভয় পেতাম। কারন ঘুমোলেই শুধু ভয়ের স্বপ্ন দেখতাম। এমনকি জেগে থাকলেও মনে হতো কি যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমার চারপাশে ঘোরাফেরা করছে। তখন আমার মা সবসময় আমার সাথে থাকতো সব কাজ ফেলে দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে যখন খাবার খেতে যায় প্রায় সময়ই মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। মা এমন একজন মানুষ যার হাতের সমস্ত রান্না অমৃতের মতো লাগে। কেন যেন মাকে ভালোবাসি কথাটা মুখ ফুটে বলা হয়ে উঠেনি এখনো। আমার মনে হয় মাকে ভালোবাসি বলাটা যতটা না জরুরি তার থেকে জরুরি হচ্ছে তাদের মনে কষ্ট না দেয়া।
-হাসান মোহাম্মদ সাকিব ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বরাবরই মায়ের সঙ্গে একসঙ্গে থাকা হতো, কিন্তু ভার্সিটিতে পড়বো বলে যেদিন বাড়ি ছাড়ি সেদিনই প্রথম মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা শুরু। মায়ের সাথে আমার সবচেয়ে আনন্দের মূহূর্ত হলো প্রতিদিন সন্ধ্যায় যখন মায়ের মাথায় তেল দিতে দিতে দুজন মিলে খোশগল্প জুড়ে বসতাম, সেগুলো। এই স্মৃতি আমার প্রায়ই মনে পড়ে। চারপাশের মানুষের আচরণ ব্যবহার দেখে যখন ব্যাথিত হই, অসুস্থ লাগে তখন মনে হয় কতই না ভালো ছিলাম মায়ের আদর যত্নে। আমি প্রতি ঈদেই বিশুদ্ধ মনে মায়ের কপালে চুমু এঁকে মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করি।
-সানজিদা ইসলামপুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
এসএসসি পাস করার পরে যখন আমি কলেজে পড়তে এলাম তখনই প্রথম আমি আম্মুর থেকে আলাদা থাকি। বন্ধুবান্ধব, ক্লাস, নিজের কাজ যখন করতে শুরু করলাম তখন ধীরে ধীরে আমি আলাদা থাকার কষ্টটা মেনে নিতে শুরু করলাম। আমার আম্মু অনেক ভালো নকশীকাঁথা সেলাই করেন এবং তার নকশাও নিজেই করেন। আমি নিজেও নকশা আঁকতে পারি, বাড়িতে থাকাকালীন অনেক কাঁথার নকশা আমি নিজেই করেছি উঠোনে কাপড় পেতে, খেঁজুর কাটা দিয়ে আটকিয়ে, সাইন পেন আর সুতায় নীল মাখিয়ে। বাড়িতে গেলেই আলমারি থেকে নকশীকাঁথা গুলো ধরে দেখি আর ওই দিনগুলোর কথা মনে করি। আমাকে সবসময় মনে পড়ে। কিন্তু অসুস্থ হলে আর খাওয়ার সময় আম্মুর কথা মনে পড়ে। আম্মুর হাতের রান্না মিস করি। আম্মুকে কখনো বলা হয়নি ‘ভালোবাসি’, কিন্তু এবার বাড়ি থেকে আসার সময় বলেছি যে তাদের (আম্মু-আব্বু) জন্য আমি ভাবি। আম্মাকে অনেক বুঝায় কিন্তু বলা হয়নি ‘ভালোবাসি’, আব্বু যখন অসুস্থ হইছিলেন তখন আমি আব্বুকে বলছিলাম কিন্তু আম্মুকে বলা হয়নি।
-সিফাত রাব্বানীরাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
পড়াশোনার কাজে যখন ঢাকায় আসি তখন আমি মায়ের সঙ্গে আলাদা হয়ে যাই। ঢাকায় এসে যখন পড়াশোনা, নিজের কাজ ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি তখন আসলে ধাতস্ত হই নতুন এই অবস্থার সঙ্গে। আমি আমার পার্টটাইম জবের স্যালারি দিয়ে যখন মা, বাবা, ভাইবোনদের জন্য উপহার কিনে বাড়ি গিয়েছিলাম সেদিন আম্মার মুখে যে হাসি দেখেছিলাম সেটিই মায়ের সঙ্গে আমার সবচেয়ে আনন্দময় স্মৃতি। আমি যখন ভীষণ অসুস্থ হয়ে যায় বা আমার যখন খুব মন খারাপ হয় তখন আমাকে খুব মনে পড়ে। মনে হয় মা কাছে থাকলে খুব ভালো হতো। মাকে কখন বলা হয়নি ‘ভালোবাসি’ কিন্তু মনে হয় আমার প্রায়ই, মাকে বলবো ‘ভালোবাসি’।
-আহমেদ মানিকজার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি
উত্তরা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় থেকে যখন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভর্তি হই তখন আমার হোস্টেল জীবন শুরু হয় তখন আমি মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হই। খুব কষ্ট হতো। তখন বেশি বেশি ফোনে কথা বলতাম। কিন্তু মাকে কখনো বলতাম না কষ্টের কথা। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। মায়ের সঙ্গে আনন্দময় স্মৃতি হলো পরিবারের সবাই মিলে পুরোনো বাংলা নাটক যখন দেখতাম সেটা। মাকে মনে পড়ে যখন সবচেয়ে কষ্টে থাকি। মনে হয় কষ্টের কথা জানালে একটু কষ্টটা কমতো। মাকে কখনো বলা হয়নি ভালোবাসি। কিন্তু বলবো একদিন অনেক ভালো কিছু যদি হতে পারি সেদিন বলবো।
-অহিদুল ইসলাম অন্তরইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।