
তরুণদের নতুন নতুন সৃজনশীল উদ্ভাবনের হাত ধরে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। তেমনই একজন মারজানা ইসলাম মেধা। যিনি শখের রাধুনি থেকে হয়ে উঠেছেন খাদ্য শিল্পের অনলাইন উদ্যোক্তা। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো নতুনভাবে সারাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে হয়ে উদ্যোগী হয়েছেন এই তরুণ শিক্ষার্থী। তার জন্ম এবং বেড়ে উঠা শহরেই। তবে গ্রামের প্রতি রয়েছে আলাদা টান। সেই টান থেকেই বিদেশি খাবার প্রাধান্য দেওয়ার এই যুগে বাঙালি ঘরানার ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোকে সবার মাঝে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দিতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থী ‘মেধা’। বাঙালির নিজস্ব খাবারগুলোকে আরও নান্দনিকতায় ফুটিয়ে তুলছেন মারজানা ইসলাম মেধা।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের এই তরুণী দেশীয় ঐহিত্যবাহী বিভিন্ন রান্না শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করে ইতোমধ্যে নজর কেড়েছেন ভোজন রশিকদেরও। আর পড়াশোনার পাশাপাশি রান্না থেকেই প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা উপার্জন করছেন অনলাইনের এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। চেষ্টা করছেন দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বাঙালি খাবারগুলোকে উপস্থাপন করার।
দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার , বিশেষ করে রান্নার পদ্ধতি ও ওই এলাকার রান্নার নিজস্বতা তুলে ধরতেও কাজ করছেন প্রতিনিয়ত। নিজের নতুন স্বাদের রন্ধন পদ্ধতির উদ্ভাবনী প্রচেষ্টায়ও সফল হয়েছেন।
দেশীয় রসনায় ফোকাস করলেও ইন্ডিয়ান, চাইনিজ ও থাইফুড রান্নাতেও সিদ্ধহস্ত মেধা। তার রান্নার হাতের জাদুতে ইতিমধ্যেই মজেছেন হাজারো রসনা বিলাসী। রান্না করে জাতীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকটি পুরষ্কারও ঘরে তুলেছেন এই মেধাবী নারী উদ্যোক্তা। অর্জনের ঝুড়িতে রয়েছে বিটিইএ বর্ষসেরা রন্ধনশিল্পী ২০২১, বিটিইএ বর্ষসেরা রন্ধনশিল্পী ২০২২ ও বিসিক উদ্যোক্তা সম্মাননা ২০২২ সহ আরও বেশ কয়েকটি পুরস্কার ও সম্মাননা।
শুধু রান্না করেই থেমে থাকেন না তিনি। এ রান্নাগুলোকে আরও কীভাবে উৎকর্ষের দিকে নিয়ে যাওয়া যায় সে ব্যাপারেও প্রচেষ্টা রয়েছে তার। দেশীয় খাবারগুলোকে আরও বেশি মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়াসহ বৈশ্বিকভাবে কিভাবে জনপ্রিয় করা যায় সে বিষয়েও গবেষণা করছেন তিনি। নিজের মেধা, মনন এবং সৃজনশীল উদ্ভাবনী শক্তির জন্য আলোচিত হয়েছেন রসনার জগতে।
কিভাবে রান্নার জগতে আসা-এমন প্রশ্নের জবাবে মেধা জানান, ‘ছোটবেলা থেকেই আম্মুকে দেখতাম রান্না করতে, আম্মুকে সাহায্য করতে করতে একটা সময় নিজের রান্নার প্রতি ভালোবাসা জন্মে গেল,সবাই আম্মুর খাবার খেয়ে প্রশংসা করতেন তখন মনে হতো, ইশ! আমার রান্না খেয়ে কবে সবাই প্রশংসা করবে? তাই রান্নাকেই উদ্যোগ হিসেবে নিয়ে নিলাম।
দেশীয় রান্নায় মনোযোগী হওয়ার বিষয়ে মেধা বলেন, ‘আমি যেহেতু বাংলাদেশের নাগরিক তাই আমি রান্না শিখতে এবং জানার সময় উপলব্ধি করলাম দেশীয় খাবারগুলো হারিয়ে যাচ্ছে তাই দেশি-বিদেশি রান্না জানলেও দেশিও খাবারের প্রতি টান চলে আসে এবং এখানটায় কাজ করার আগ্রহ জেগে উঠে।
কিভাবে এসব রান্না ভোক্তার কাছে পৌঁছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমার রান্নার মার্কেটিং শুরু হয় অনলাইনের মাধ্যমে, আমি আমার এলাকার বিভিন্ন গ্রুপের সাথে যুক্ত হই এবং সেখানে প্রতিদিন খাবার এবং গুণগত মান নিয়ে পোস্ট করতে করতে আমি আমার কাস্টমার পেয়ে থাকি’।
মেধা জানান, ‘সাধারণত তার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘মেধা’স ফুড কর্নার’র মাধ্যমে বিক্রি হয়, ডেলিভারি ম্যান তাদের কাছে পৌঁছে দেন। প্রয়োজনে মাঝেমাঝে নিজেই ডেলিভারি ম্যান হয়ে যান। মেধা আরও জানান, ‘সাধারণত তার রান্নার ভোক্তা তার এলাকার ও আশেপাশের প্রতিবেশী এবং অনলাইনের ক্রেতারা।
এখান থেকে আয়ের বিষয়ে মেধা জানান, যেহেতু রান্নার বিষয়টি এখনও ফুল টাইম না- পড়ালেখার পাশাপাশি করতে হয়। তাই এখন এখান থেকে আহামরি আয় না থাকলেও প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় থাকে।
তার রান্নার এই উদ্যোগে পরিবারের সমর্থন কেমন? এমন প্রশ্নের উত্তরে মেধা বলেন, ‘পরিবার থেকে ব্যাপক পরিমাণে সাপোর্ট পাই বেশি সাপোর্ট পাই আমার আম্মুর থেকে, তিনি আমার মেন্টর’।
মেধার রান্নার হাত নিয়ে কথা হয় তার কয়েকজন ভোক্তার সঙ্গে। আফরোজা আব্বাস নামের এক ভোক্তা জানান, ‘দীর্ঘদিন মেধার হাতের রান্নার প্রশংসা শুনে আসছিলাম। খেয়ে বলতেই হলো, ‘মেয়েটা অসাধারণ রান্না করে।
মাহবুব হাসান নামের আরেকজন জানান, ‘মেধার রান্নার হাত অনেক ভালো। বিশেষ করে তার হাতের বিফ আইটেমগুলো অনেক ভালো হয়।
সাইফুজ্জামান নামের আরেকজন জানান, ‘মেধার রান্না অনবদ্য’। রান্নাও যে একটা শিল্প-এটা বুঝতে হলে মেধার রান্না খেতে হবে।
মারজানা ইসলাম মেধা ১৯৯৯ সালের ১২ জুলাই ঢাকার প্রাণ কেন্দ্র মোহাম্মদপুরে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে ট্রিনিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মোহাম্মদপুর থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০১৯ সালে ওয়াইড ভিশন কলেজ উত্তরা থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০২১ বিএসসি (ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং) নিয়ে এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করছেন। পাশাপাশি প্রফেশনাল কুকিং একাডেমি থেকে লেভেল ওয়ান এবং টু সম্পন্ন করছেন।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি নানা রকম সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। ছাত্র জীবনে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের জন্য তিনি পেয়েছেন অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার। সমাজসেবামূলক কাজেও তিনি পিছিয়ে নেই। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত তিনি গার্লস গাইড নেতৃত্ব দিয়ে পেয়েছেন সম্মাননা। ২০১০ সাল থেকে নিয়মিত ছায়ানটের শিশুশিল্পী হিসেবে যোগ দিয়ে ২০১৭ সালে জাতীয় নৃত্যশিল্পী পুরস্কার অর্জন করেন।
বাবা রেমিটেন্স যোদ্ধা সাইদুল ইসলাম ও গৃহিণী মা শামিমা ইসলাম। তাদের ভালোবাসা, আদর সোহাগ আর আহ্লাদে শৈশব ও কৈশোর কাটিয়েছেন মারজানা ইসলাম মেধা।
মেধা’র বেশ কয়েকটি রান্না ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এর মধ্যে নারকেলি মুরগি মাংস, নারকেলি গরু মাংস, পোলাও, কাতল মাছের কালিয়া, ইলিশ ভাপা, ছানার জিলাপি, পায়েস লাড়ু। গরুর মাংস, চিংড়ি ভুনা, সিসলিং, মাছ ভুনা, ক্ষীর,পুডিং ও জর্দা।
এছাড়াও রয়েছে লাঞ্চ ও ডিনার বক্স। প্যাকেজ আকারে বিক্রি হয় এই বক্স। প্যাকেজে থাকে ভাত, মাছ, সবজি ডাল অথবা ভাত, মুরগি,সবজি ডাল ভুনা অথবা ভাত, ডিম ভুনা, সবজি ডাল অথবা ভাত, ৪ রকম ভর্তা, সবজি ডাল। আরও রয়েছে খিচুড়ি /পোলাও,গরুর মাংস/ রোস্ট / সবজি। প্রতি প্যাকেজে দাম ধরা হয় ১০০ টাকা।
মেধা জানান, সর্বোচ্চ মানের দিক খেয়াল রেখে খুব অল্প লাভ করার চেষ্টা করি। এর ফলশ্রুতিতে ক্রেতার সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
কাউকে ধাক্কা দেবেন আর সে কিছু বলবে না এমনটা কখনো ভেবেছেন? এই ধাক্কাধাক্কি এক ধরনের পেশা। অথচ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অন্যকে ধাক্কা দিয়েই মানুষ উপার্জন করছে।
ধাক্কা দেওয়া বা পুশিং হলো এক অদ্ভুত পেশা। জাপান ও নিউ ইয়র্ক সিটিতে রেলস্টেশনে ভিড়ের সময় প্রফেশনাল পুশাররা ধাক্কা দিয়ে ট্রেনের ভেতর লোক ঢোকাতে সাহায্য করে। আগে এটি স্টুডেন্টদের জন্য পার্টটাইম চাকরি ছিল। এখন এটি ফুলটাইম চাকরি হিসেবে বেছে নিচ্ছে অনেকেই। এই চাকরিতে বেতনও বেশ ভালো। আর চাকরির যোগ্যতা হিসেবে আপনাকে বেশ সুঠাম দেহের অধিকারী হতে হবে।
দেশে এই প্রথম বারের মতো শুরু হতে যাচ্ছে, অনলাইন পাঠক ফোরাম রূপান্তরের বারান্দা। এটি মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষীদের প্ল্যাটফর্ম। যেখানে তারা একান্তভাবে নিজের ভাব প্রকাশ করবেন। থাকতে পারে সেখানে তাদের স্বপ্ন, যন্ত্রণা, দুঃখ, হতাশা, ভালোবাসা, সমস্যা, কৈশোর বেলা এমনকি প্রবাস জীবনের বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা।
যে কেউ লেখার পাশাপাশি দিতে পারেন ঢাউস সাইজের ছবি, যেকোনো ঘটনার ভিডিও; সেখানে অবশ্যই তার নাম এবং দেশ উল্লেখ করতে হবে। এরই মধ্যে আজকের দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, শিগগিরই পরিপূর্ণভাবে আত্মপ্রকাশ করবে রূপান্তরের বারান্দা। সঙ্গে থাকুন, এগিয়ে থাকুন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের (ববি) জন্মদিন আজ। ১৯৮০ সালের ২১ মে যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
জন্মদিনে শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন তরুণদের ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করা রাদওয়ান মুজিব।
তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় রাদওয়ান। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে স্নাতক এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। তার ছোট বোন টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য।
রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক সিআরআইয়ের ট্রাস্টি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি দেখভাল করেন। এ ছাড়া এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান 'ইয়ং বাংলা'র মাধ্যমে তিনি তরুণদের ক্ষমতায়ন ও উদ্বুদ্ধকরণের কাজ করছেন। সিআরআইয়ের মাধ্যমে অনলাইনভিত্তিক প্রচারেও ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন ববি। সমাজমাধ্যমে সরকারবরোধী যেকোনো অপপ্রচারের তথ্যভিত্তিক জবাব দেন তিনি।
বাবুই দৃষ্টিনন্দন পাখি। এ পাখিকে শৈল্পিক কারিগর বলা চলে। নিজের ঘর সাজাতে তাদের কোনো জুড়ি নেই। বাসা বানানোর জন্য বাবুই খুবই পরিশ্রম করে। তাদের শৈল্পিক চিন্তা এতই প্রবল ঝড় কিংবা তুফানেও তাদের বাসার ক্ষতি হয় না। শৈল্পিক কারিগর এই বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা এখন আর দেখাই যায় না।
কবি রজনীকান্ত সেনের ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতায় বাবুই আর চড়ুই পাখির বাসা নিয়ে তর্কাতর্কি হয়েছে। ‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই/ কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই/ আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে/ তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে...’
আজ দেশ রূপান্তরে প্রথম পাতায় প্রকাশিত এই ছবিটি গতকাল চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মাদার্শা ইউনিয়ন থেকে তুলেছেন আকমাল হোসেন।
মায়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর ও অবিচ্ছেদ্য। অধিকাংশ মানুষেরই মায়ের সঙ্গে প্রথম বিচ্ছেদ সঙ্গে শিশুশ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর। এই প্রথম আমরা মায়ের কাছ থেকে দীর্ঘসময় দূরে থাকি। পরে শিক্ষাজীবনের তাগিদেই মায়ের কাছ থেকে দূরে, পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়। একাকি দিন কাটতে থাকে হোস্টেল, মেস বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্র হল বা ছাত্রী হলে। ব্যস্ততায় জীবন চলতে থাকে জীবনের মতো, মাকে ছাড়া থাকার বাস্তবতা মেনে নিয়েই। বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তাদের মাকে মনে পড়ার অনুভূতি।
আমরা তাদের চারটি প্রশ্ন করেছিলাম-* মায়ের সঙ্গে প্রথম বিচ্ছিন্ন হওয়ার স্মৃতি কোনটি?* মায়ের সঙ্গে সবচেয়ে আনন্দদায়ক স্মৃতি কোনটি?* কোন পরিস্থিতিতে এখনো মাকে মনে পড়ে? এবং* মাকে কি কখনো বলেছেন ‘ভালোবাসি’?
দেশ রূপান্তরের পক্ষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন অহিদুল ইসলাম অন্তর, সিফাত রাব্বানী ও আহমেদ মানিক
আমি অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হই ঢাকার সেন্ট্রাল গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেই প্রথম মা থেকে দূরে থাকা। যখন দেখতাম সহপাঠীরা মাকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে আসতো তখন কান্না পেত। মায়ের সঙ্গে আমার সবচেয়ে খুশির স্মৃতি এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পাওয়ার স্মৃতি। সেদিন আমি সবচেয়ে আনন্দময় দিন কাটিয়েছি। মা আমার আইডল। এখনো যেকোনো নতুন কাজ করতে গেলে মায়ের কথা মনে পড়ে। কখনো সরাসরি বলা হয়নি। তবে, ফোনে প্রায়ই বলি, আই লাভ ইউ মা। অনেক ভালোবাসি তোমাকে।
-পিংকি আক্তারআন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ
ক্লাস সেভেনে গ্রাম থেকে শেরপুর শহরের আইডিয়াল প্রিপারেটরি অ্যান্ড হাই স্কুলে ভর্তি হই। এই প্রথম মায়ের থেকে দূরে থাকি। অনেক মিস করতাম। প্রায়ই ফোনে কথা বলতাম। মার সঙ্গে আনন্দময় স্মৃতির অভাব নেই। না বলে হঠাৎ করেই বাসায় চলে গিয়ে মাকে সারপ্রাইজ দেই। সবচেয়ে স্মরণীয় মুহুর্ত হলো যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। মা অনেক খুশি হয়েছিল। অবসর সময়ে মাকে খুব মনে পড়ে। সরাসরি দেখা করার সুযোগ না থাকায় ফোনে কথা বলি। অনেক ভালোবাসি মাকে কিন্তু বলা হয়নি।
-শরিফুল ইসলাম সোহানপরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা
মায়ের কাছ থেকে প্রথম বিচ্ছিন্ন হয়েছিলাম যখন এইচএসসি পরীক্ষা দিতে প্রথম লালমনিরহাটে ছাত্রাবাসে উঠি। বাড়ি থেকে বিদায়ের আগে মা আমার সব কিছু গুছিয়ে দিয়েছিলেন। মাঝেমধ্যে পাশের রুমে গিয়ে কান্না করতো। আমাকে হাসিমুখে বিদায় দিলেও মার দুচোখ অশ্রুতে টলটল করছিল। মার সঙ্গে আমার সবচেয়ে আনন্দময় স্মৃতি হলো এসএসসি পরীক্ষার ফল পাওয়ার দিন। আমি যখন রেজাল্ট বলি, বাবা মারা যাওয়ার পর সেই প্রথম আমি মায়ের মুখে হাসি দেখি। সেটাই আমার জীবনে সবচেয়ে আনন্দঘন মুহুর্ত। যখন দেখি অন্য কারও মা তার সন্তানকে আদর করছে, ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে, বিশেষ করে কাউকে যদি তার মায়ের হাতে খেতে দেখি, তখনি মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। মা আমাকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন। মাকে মুখ ফুটে কখনো বলা হয়নি, ভালোবাসি।
-পলাশ চন্দ্র রায়ফার্মেসী বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা
মা যখন রাজশাহী যান মিডওয়াইফারি কোর্স করতে, সেই প্রথম মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকা। তখন বয়স আমার ১৪। উঠতি বয়স, হঠাৎ মা ছাড়া থাকাটা আমার জন্য অন্য রকম অভিজ্ঞতা। মা আমাদের পরিবারের জন্য ভীষণ পরিশ্রম করেছেন। মায়ের সঙ্গে সব স্মৃতিই আনন্দময়। মাকে যখন সাফল্যের কথা জানাতাম মায়ের মুখটা খুশিতে ভরে উঠতো। খাওয়ার সময় মাকে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে। মায়ের হাতের রান্না সবসময় অতুলনীয়।মাকে ভালবাসি কথাটি বলা হয়ে ওঠেনি। বলতে খুব ইচ্ছে হয় কিন্তু কেন জানি বলা হয়ে ওঠে না।
-খালেদ ফেরদৌস মুন বীজ প্রযুক্তি বিভাগ, শের-ই বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
প্রথম পড়াশোনার জন্য ঢাকাতে আসাই মায়ের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রথম স্মৃতি। জন্মের পর থেকে বিশ বছর পর্যন্ত মায়ের ভালবাসা, আদর, শাসনে, তার কাছেই বড় হয়েছি। মায়ের সঙ্গে আনন্দময় স্মৃতির অভাব নেই। বর্তমানে ঈদের ছুটিতে বাসায় মায়ের সঙ্গে কাটানো সময়গুলোই সবচেয়ে আনন্দময় স্মৃতি। মাকে সবসময়ই মনে পড়ে। পড়ার কথাও। আমি প্রচণ্ড অগোছালো। বাসায় সব কাজ মা করে দিতেন। আর অগোছালো স্বভাবের জন্য বকাও দিতেন। ঢাকায় এটাই মিস করি। আমার মায়ের হাতের রান্না অতুলনীয়। মায়ের রান্নাও মিস করি। মাকে ভালোবাসি কিন্তু কখনও বলা হয়নি ‘মা, তোমাকে ভালোবাসি’। আর কখনও বলা হবে কিনা জানি না। তবে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মা জানুক তাদের সন্তান তাদেরকে ভালবাসে।
-এস এম তৌফিকুল ইসলামইংরেজী বিভাগ, তেঁজগাও কলেজ, ঢাকা
আমি যখন পড়াশোনা জন্য আমার জন্মশহরের বাইরে থাকতে শুরু করি তখন প্রথম মায়ের থেকে আলাদা থাকতে হয়েছে। জানতাম মায়ের কথা অনেক মনে পড়বে, খারাপ লাগবে তবু মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয়েছে। পরিবারের সকলে মিলে যখন আমরা গল্প করি সে সময়ে মাকে অনেক খুশি দেখি। মায়ের সঙ্গে সেটাই আমার সবচেয়ে আনন্দের স্মৃতি। আমি যখন পড়াশোনার জন্যে শহরের বাইরে একা থাকি তখন মনে পড়ে, যখনই একা রান্না করি, মায়ের হাতে রান্না করা খাবারের কথা অনেক মনে পড়ে। না, মাকে কখনো বলা হয়নি তাকে কতটা ভালোবাসি।
-সাবিকুন্নাহার মিমসাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগ, বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটি রাজশাহী
আমি যখন উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হলাম তখন আমি মায়ের থেকে আলাদা থাকতে শুরু করি। জন্মের পর থেকে এত বছরের নির্ভরশীলতার ব্যতয় ঘটে।মায়ের সঙ্গে কাটানো সবগুলো মূহূর্তই আমার কাছে সেরা। কিন্তু সেরাদের সেরা মূহূর্ত আমি বলব, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্টের দিন। মাকে মনে পড়ে সব সময়। তবে হলে অসুস্থ হয়ে পড়লে এবং ডাইনিং নামক পাঁচ তারকা রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে ভীষণভাবে মনে পড়ে। আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি আমার মাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য এখনো বলা হয়নি ‘মা তোমাকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি’।
-মোশারফ হোসেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আমার আম্মার সঙ্গে প্রথম বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা ঘটে যখন আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। আমি আমার দাদির সঙ্গে আমার আব্বার মামার বাড়িতে গিয়েছিলাম এবং সেখানে বেশ কদিন থাকার কথা ছিল। তবে যেদিন যাই সে রাতেই আমি বাড়ি ছাড়া, মাকে ছাড়া থাকতে পারছিলাম না। একদিন পরই আমি বাড়িতে চলে যাই। আম্মার সঙ্গে সবচেয়ে মজা লাগে যখন তাকে খেপানো হয়, রান্নার সময় দুষ্টামি করতে পারা যায়, এটা-ওটা রান্না করে খাওয়ানোর জন্য বায়না করা হয় সেই মুহূর্তগুলো অনেক স্মৃতিকাতর করে ফেলে মাঝে মাঝে। ব্যস্ততা-অবসর দুইসময়েই মাকে মনে পড়ে। বিশেষ করে যখন কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান হয় বা পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠান হয় এবং পড়াশুনার কারণে আমাকে ঢাকায় থাকতে হয় তখন মাকে বেশি মনে পড়ে। ‘ভালোবাসি’ এটা শুধু একবারই বলা হয়েছে। গত বছর ভালোবাসা দিবসে ফোনে মেসেজিং করে কিছু মনের ভাব জুড়ে দিয়ে বলেছিলাম ‘ভালোবাসি’। তাছাড়া বলা হয়নি কখনো। আর না বললেও বা কি? বাবা-মা'র প্রতি সন্তানদের ভালোবাসা আর সন্তানদের প্রতি বাবা-মার ভালোবাসা কখনও ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়, অনুভব করা যায় মাত্র।
-রাহাতইংরেজি বিভাগ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে প্রথম মা থেকে আলাদা হওয়া। আমাদের ছেলেবেলায় মা গরমকাল এলেই নানান পদের আমের আচার বানাতেন। তখন আমাদের ভাইবোনদের মাঝে উৎসব উৎসব রোল পড়ে যেতো। এখন মায়ের আগের সেই বয়স না থাকায় এগুলো আর হয়ে ওঠে না, আমরাও যে যার মতো ব্যস্ত। ছেলেবেলার এই আনন্দঘন স্মৃতিটি মনে পড়ে। এখনো বাসায় গেলে মা আমাদের তিন ভাইবোনকে একসাথে খাবার খাইয়ে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকাকালীন এই ব্যাপারটি বেশি মনে পড়ে। তবে এতো কাছাকাছি থেকেও কেন যেন মাকে কোনদিন ভালোবাসি কথাটা মুখে বলা হয়ে ওঠেনি! মুখে বলার তুলনায় লেখাটা বোধহয় অনেক সহজ। লিখে দিলাম, ‘মা তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি’।
-আফিয়া সিদ্দিকা রাইসাপুরকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
২০১২ সালে যখন আম্মু ইংল্যান্ডে চলে যায় দুই বছরের জন্য, তখনই আম্মুর সাথে প্রথম বিচ্ছিন্ন হই। কতটা মন খারাপ হয়েছিলো বলে বোঝানো মুশকিল। এখন বড় হয়েছি। ছোটবেলায় সন্ধ্যা হলে আম্মুর সাথে পড়তে বসার সময়টাই বেশি মনে পড়ে। এখন মেসে খাবার খাওয়ার সময় আম্মুর কথা বেশি মনে পড়ে, আম্মুর হাতের খাবার যদি হতো তাহলে বুঝি খাওয়া যেত আরো আয়েশ করে। আম্মুকে ভালোবাসি তবুও আম্মুকে এখনো ভালোবাসি বলতে পারিনি।
-নেহাল ইসলামব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
আমি স্নাতকে ভর্তি হলাম দু বছর হলো, তখনই মায়ের থেকে দূরে চলে আসা। মায়ের সাথে গল্প করার সময়গুলো ভীষণ মনে পড়ে। একসাথে খেতে বসে অনেক গল্প করা হতো, এখন যা হচ্ছে না। মায়ের রান্নাই আমার সবচেয়ে পছন্দের। তাই মায়ের থেকে দূরে গিয়ে থালা হাতে খেতে বসলেই মাকে ভীষণ মনে পড়ে! মায়ের রান্না খুব মিস করি। মাকে ভীষণ ভালোবাসি। ঠিক কতটা ভালোবাসি সেটা কোনো পরিমাপ করা যাবে না। আয়োজন করে কখনো বলা হয়নি ‘ভালোবাসি তোমায় মা’। মাকে শুধু মা দিবসে না, সবসময় ঠিক একইরকম ভালোবাসি।
-সামিয়া ইসলামইতিহাস বিভাগ, সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল
উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে এসে প্রথম বারের মতো মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয়। মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এক অন্য রকম অব্যক্ত কষ্টের। মায়ের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তই আনন্দের। ছোটবেলায় যখন জ্বর আসতো ভীষণ ভয় পেতাম। কারন ঘুমোলেই শুধু ভয়ের স্বপ্ন দেখতাম। এমনকি জেগে থাকলেও মনে হতো কি যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমার চারপাশে ঘোরাফেরা করছে। তখন আমার মা সবসময় আমার সাথে থাকতো সব কাজ ফেলে দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে যখন খাবার খেতে যায় প্রায় সময়ই মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। মা এমন একজন মানুষ যার হাতের সমস্ত রান্না অমৃতের মতো লাগে। কেন যেন মাকে ভালোবাসি কথাটা মুখ ফুটে বলা হয়ে উঠেনি এখনো। আমার মনে হয় মাকে ভালোবাসি বলাটা যতটা না জরুরি তার থেকে জরুরি হচ্ছে তাদের মনে কষ্ট না দেয়া।
-হাসান মোহাম্মদ সাকিব ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বরাবরই মায়ের সঙ্গে একসঙ্গে থাকা হতো, কিন্তু ভার্সিটিতে পড়বো বলে যেদিন বাড়ি ছাড়ি সেদিনই প্রথম মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা শুরু। মায়ের সাথে আমার সবচেয়ে আনন্দের মূহূর্ত হলো প্রতিদিন সন্ধ্যায় যখন মায়ের মাথায় তেল দিতে দিতে দুজন মিলে খোশগল্প জুড়ে বসতাম, সেগুলো। এই স্মৃতি আমার প্রায়ই মনে পড়ে। চারপাশের মানুষের আচরণ ব্যবহার দেখে যখন ব্যাথিত হই, অসুস্থ লাগে তখন মনে হয় কতই না ভালো ছিলাম মায়ের আদর যত্নে। আমি প্রতি ঈদেই বিশুদ্ধ মনে মায়ের কপালে চুমু এঁকে মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করি।
-সানজিদা ইসলামপুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
এসএসসি পাস করার পরে যখন আমি কলেজে পড়তে এলাম তখনই প্রথম আমি আম্মুর থেকে আলাদা থাকি। বন্ধুবান্ধব, ক্লাস, নিজের কাজ যখন করতে শুরু করলাম তখন ধীরে ধীরে আমি আলাদা থাকার কষ্টটা মেনে নিতে শুরু করলাম। আমার আম্মু অনেক ভালো নকশীকাঁথা সেলাই করেন এবং তার নকশাও নিজেই করেন। আমি নিজেও নকশা আঁকতে পারি, বাড়িতে থাকাকালীন অনেক কাঁথার নকশা আমি নিজেই করেছি উঠোনে কাপড় পেতে, খেঁজুর কাটা দিয়ে আটকিয়ে, সাইন পেন আর সুতায় নীল মাখিয়ে। বাড়িতে গেলেই আলমারি থেকে নকশীকাঁথা গুলো ধরে দেখি আর ওই দিনগুলোর কথা মনে করি। আমাকে সবসময় মনে পড়ে। কিন্তু অসুস্থ হলে আর খাওয়ার সময় আম্মুর কথা মনে পড়ে। আম্মুর হাতের রান্না মিস করি। আম্মুকে কখনো বলা হয়নি ‘ভালোবাসি’, কিন্তু এবার বাড়ি থেকে আসার সময় বলেছি যে তাদের (আম্মু-আব্বু) জন্য আমি ভাবি। আম্মাকে অনেক বুঝায় কিন্তু বলা হয়নি ‘ভালোবাসি’, আব্বু যখন অসুস্থ হইছিলেন তখন আমি আব্বুকে বলছিলাম কিন্তু আম্মুকে বলা হয়নি।
-সিফাত রাব্বানীরাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
পড়াশোনার কাজে যখন ঢাকায় আসি তখন আমি মায়ের সঙ্গে আলাদা হয়ে যাই। ঢাকায় এসে যখন পড়াশোনা, নিজের কাজ ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি তখন আসলে ধাতস্ত হই নতুন এই অবস্থার সঙ্গে। আমি আমার পার্টটাইম জবের স্যালারি দিয়ে যখন মা, বাবা, ভাইবোনদের জন্য উপহার কিনে বাড়ি গিয়েছিলাম সেদিন আম্মার মুখে যে হাসি দেখেছিলাম সেটিই মায়ের সঙ্গে আমার সবচেয়ে আনন্দময় স্মৃতি। আমি যখন ভীষণ অসুস্থ হয়ে যায় বা আমার যখন খুব মন খারাপ হয় তখন আমাকে খুব মনে পড়ে। মনে হয় মা কাছে থাকলে খুব ভালো হতো। মাকে কখন বলা হয়নি ‘ভালোবাসি’ কিন্তু মনে হয় আমার প্রায়ই, মাকে বলবো ‘ভালোবাসি’।
-আহমেদ মানিকজার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি
উত্তরা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় থেকে যখন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভর্তি হই তখন আমার হোস্টেল জীবন শুরু হয় তখন আমি মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হই। খুব কষ্ট হতো। তখন বেশি বেশি ফোনে কথা বলতাম। কিন্তু মাকে কখনো বলতাম না কষ্টের কথা। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। মায়ের সঙ্গে আনন্দময় স্মৃতি হলো পরিবারের সবাই মিলে পুরোনো বাংলা নাটক যখন দেখতাম সেটা। মাকে মনে পড়ে যখন সবচেয়ে কষ্টে থাকি। মনে হয় কষ্টের কথা জানালে একটু কষ্টটা কমতো। মাকে কখনো বলা হয়নি ভালোবাসি। কিন্তু বলবো একদিন অনেক ভালো কিছু যদি হতে পারি সেদিন বলবো।
-অহিদুল ইসলাম অন্তরইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন সুলতান মাহমুদ। ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ধানমন্ডি এলাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন এ শিক্ষক। এখনো সেই ফ্ল্যাটের ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ হয়নি। সুলতানের ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দুটি। একটি বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক আর অন্যটি প্রাইম ব্যাংকের।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা জানতে চাইলেন তিনি জানান, ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ, সন্তানদের বেতন আর ফ্যামিলি খরচ পরিশোধ সব মিলিয়ে প্রায় প্রতি মাসের শেষেই আর্থিক সংকট তৈরি হয়। এ সংকট থেকে বাঁচতেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। তবে মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই পরিশোধ করে দিচ্ছেন ক্রেডিট কার্ডের বিল। এতে অতিরিক্ত সুদও গুনতে হচ্ছে না তাকে।
সুলতান মাহমুদ বলেন, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে হয়তো প্রতি মাসেই আমার বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে চলতে হতো। এতে সম্মানহানিরও ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার নিয়ে তা আবার ফেরত দিচ্ছি। এতে কারও কাছে হাত পাততে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, একসময় মানুষ ক্রেডিট কার্ডের প্রতি কম আগ্রহী হলেও বর্তমানে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩৯টি ব্যাংক কার্ড সেবা দিচ্ছে। গত মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৭৮ হাজারটি। ঠিক চার বছর আগে ২০১৯ সালে মার্চ শেষে এ কার্ডের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজারটি। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার বা ৬১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত মার্চে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
শুধু সুলতানই নন, ব্যবসায়ী আমিরুল, সাংবাদিক আক্তার আর চাকরিজীবী তারিকুলও একই কারণে ব্যবহার করছেন দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ক্রেডিট কার্ড। তাদের মতে, ক্রেডিট কার্ডের কারণে সহজ হয়েছে তাদের জীবনযাত্রা। তবে উল্টো চিত্রও আছে। করোনা মহামারীর সময় চাকরি হারানো আজাদুল ইসলাম ক্রেডিট কার্ডে ধার নিয়ে এখন বিপাকে রয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার সময় প্রথম দিকে আমাদের বেতন কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। সে সময় সংসারের খরচ বহন করতে ক্রেডিট কার্ডের সহায়তা নিয়েছেন। যে ঋণ এখন পর্যন্ত টানতে হচ্ছে তাকে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ হবে বলে আশাবাদী এ গ্রাহক।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে এর ‘ধার’ নেওয়ার পদ্ধতির জন্য। পাশাপাশি পণ্যের দামে ডিসকাউন্টের পাশাপাশি কিস্তিতে পরিশোধের পদ্ধতিও এ ব্যাপ্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। যেটি গ্রাহককে এককালীন বেশি দামের পণ্য কিনতে সহায়তা করে। এবার জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধাগুলো।
পণ্য কিনতে কিস্তি সুবিধা : ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে পণ্য কিনতে একসঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করতে হবে না। বিনা সুদে বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদে গ্রাহক কয়েক মাসের সমান কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। যদিও গ্রাহক তার ক্রেডিট লিমিটের চেয়ে বেশি দামি পণ্য কিনতে পারবেন না। আর কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এতে কারও কাছে টাকা ধার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়সীমা পার হয়ে গেলে জরিমানা গুনতে হতে পারে।
ঋণের সুবিধা : কিছু ক্রেডিট কার্ড, বিশেষ করে বিদেশে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। এসব ক্ষেত্রে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়, যা বেশ সুবিধাজনক। আবার কোনো কোনো কার্ডে ঋণে সুদের হার অনেক থাকে। এ ক্ষেত্রেও একটা সুবিধা আছে। বোঝা এড়াতে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা হয়। নিজস্ব ঋণ থাকে না।
পরিবর্তনযোগ্য : এসব ক্ষেত্রে সঠিক কার্ডটি বেছে নিতে পারা জরুরি। একটি ভুল কার্ড দিনের পর দিন ব্যবহার করলে ঋণের বোঝা শুধু বাড়তেই থাকবে। তবে এটা বুঝতে ব্যাংকের পুরো শর্তাবলি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। যদিও কার্ডের ধরন পরিবর্তন করা যায় খুব সহজে। কারণ প্রতিটি ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকারের ক্রেডিট থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড যেমন নিতে পারবেন তেমনি পরবর্তী সময়ে সেটির ধরন পরিবর্তনও করতে পারবেন। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন করলে বাৎসরিক ফি এড়ানো যায়। যেমন অনেক ব্যাংকের কার্ডে অন্তত ১৮ বার কেনাকাটা করলে বাৎসরিক ফি দিতে হয় না। ব্যাংকভেদে এ নিয়মের ভিন্নতা রয়েছে। দেশের বাইরেও ব্যবহার করা যায় : ক্রেডিট কার্ড ইন্টারন্যাশনাল হলে সেটি ব্যবহার করা যাবে বিশ্বের অনেক দেশেই। টাকার পাশাপাশি ডলারও ধার করে ব্যবহার করা যায়। হোটেল বুকিং, বিমানভাড়া, রেস্টুরেন্ট ও কেনাকাটায় মেলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ। বিদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যা খরচ করবেন, মাস শেষে আপনার সেই পরিমাণ বিল হিসেবে ইস্যু করবে ব্যাংক। তারপর সুদ বা জরিমানা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বিল পরিশোধ করতে হবে।
অফারের ছড়াছড়ি
বিভিন্ন সময়ে ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। যেমন ‘ক্যাশ ব্যাক অফার’, ‘স্পেশাল ডিসকাউন্ট’। দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে, হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে অনেক সময়ই মূল্যছাড় দেওয়া হয়। প্লেনের টিকিট কাটতেও অনেক সময় পাওয়া যায় বিশেষ মূল্যছাড়। আর অনলাইন কেনাকাটার জন্যও এখন ক্রেডিট কার্ড বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়, নামিদামি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ায় ছাড় এবং অফার দিয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আবাসিক হোটেলগুলোও ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। একটি কিনলে একটি ফ্রি (বাই ওয়ান গেট ওয়ান) অফারও দেওয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে মূল্যছাড়সহ নানা অফার। অনেকেই পরিবার নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে ঘুরতে যান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল বুক করা যায়। এ ক্ষেত্রেও আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিদেশে হোটেল বুকিংয়ের টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হবে।
অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও কম নয়। এজন্য বেশ সতর্ক হতে হবে গ্রাহককে। একটু বেখেয়ালি হলেই পড়তে পারেন ঋণের ফাঁদে।
ঋণের ফাঁদ
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবসময়ই একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। মনে রাখতে হবে অর্থ খরচের ৪৫ দিনের মধ্যে সেটি পরিশোধ করতেই হবে। অন্যথায় ঋণের ওপর সুদ শুরু হবে। যা ঋণের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়িয়ে দেবে। তাই কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়।
লুক্কায়িত ব্যয়
সুদের হার পরিশোধই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একমাত্র ব্যয় নয়। সময়মতো মাসিক বিল পরিশোধ না করলে গ্রাহককে জরিমানা গুনতে হতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নগদ অর্থ তুলতে এর জন্য নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হতে পারে। সরাসরি বুথ থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে গেলে বাড়তি ফি এবং ওইদিন থেকেই (এ ক্ষেত্রে ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয় না) সুদ গণনা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে চেক দিয়ে টাকা সঞ্চয় হিসেবে স্থানান্তর করে তারপর সেটি নগদায়ন করলে ৪৫ দিন সময় পাওয়া যাবে।
মহামারী করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের প্রায় সব দেশই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে জনসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়াসহ নীতিনির্ধারণী নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাংলাদেশও এমন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বিদেশি মুদ্রার সংকটসহ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে শর্তসাপেক্ষে ধার নেওয়া ছাড়াও আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখনো এর সুফল মেলেনি। এমন সংকটের মধ্যেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট উপস্থাপন হতে যাচ্ছে।
এবারের বাজেট সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে সামনে নির্বাচন, অন্যদিকে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক চাপে চিড়েচেপ্টা দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম, আইএমএফের শর্তের জাল নানান বাস্তবতার মধ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ করা অর্থ পুরোপুরি খরচ করতে না পারার শঙ্কার মধ্যেই আরও বড় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। যদিও অর্থনীতিবিদরা এ বাজেটকে বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন।
এবারের বাজেটের স্লোগান ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। এটি মুস্তফা কামালের দায়িত্বকালে পঞ্চম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। ১ জুন সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার কথা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। আজ বুধবার থেকে বাজেট অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে।
দেশের অর্থনীতি যখন চাপের মুখে, তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। নানান চড়াই-উতরাই শেষে গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭ কোটি ডলার ছাড়ও করে ঋণদাতা সংস্থাটি। কিন্তু ঋণ দেওয়ার আগে নানান শর্ত জুড়ে দেয় তারা। এর মধ্যে ‘দুর্বল’ এনবিআরকে সবল করার বিশেষ শর্ত ছিল। জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের কর আদায়ের হার ৯ শতাংশের মধ্যে। ৩৮টি শর্তের মধ্যে কর আদায় বাড়ানোর অন্যতম শর্ত ছিল তাদের। এবারের বাজেটেও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই কর আদায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আদতে কতটুকু বাস্তবসম্মত তা নিয়েও সন্দিহান তারা।
বাজেটের আয়ের খাত বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজস্ব থেকে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানসহ এর আকার দাঁড়াবে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি বছরের মতো এবারও বাড়ছে। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরবহির্র্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কর ব্যতীত অন্য আয় হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজেটের যে লক্ষ্যমাত্রার হিসাব ধারা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। গত বছরের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটি থেকে বাড়িয়ে তারা বাজেট ধরছে। তবে আমি মনে করি, বাজেটে পাস হওয়ার পর তা কতটুকু কার্যকর হয়েছে সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার কতটা আদায় হয়েছে তা বিবেচনা করে নতুন করে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা বাস্তবসম্মত নয়। সম্পদ আছে মনে করে যদি ব্যয় কাঠামো তৈরি করা হয়, তাহলে যে অর্থ নেই তাকে ব্যয় মনে করে দেখানো হবে। তার মানে হলো, সম্পদ না থাকলে ব্যয়ও হবে না।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘এই মুহূর্তে লোক দেখানোর মতো একটা হিসাব দেখা যায়। আয়ও হবে না, ব্যয়ও হবে না। আমার ভাষায় এটি পরাবাস্তব বাজেট।’
ব্যয়ের খাত : অন্যান্য বারের মতো এবারও আয়ের তুলনায় ব্যয়ের খাত বেশি হচ্ছে। এবারের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে পরিচালন ব্যয় অর্থাৎ আবর্তক ব্যয়, মূলধন ব্যয়, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ও বৈদেশিক ঋণের সুদসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। তাছাড়া এবারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পগুলোর ব্যয় ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় অনুদানসহ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটানো হবে যেভাবে : বাজেটের ঘাটতি মেটানো হবে মূলত অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে। এবারের বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিদেশিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ভরসা এবারও ব্যাংক খাত। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকেই নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ। ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
তাছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও এবারের বাজেটে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। এবারের ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরও এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এবারের সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা।
জিডিপি : আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সংশোধিত জিডিপির চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির আকার ৪৪ লাখ ৩৯ কোটি ২৭৩ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভোক্তা মূল্যসূচক বা মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
আগামী অর্থবছরের বাজেট সরকারের জন্য সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের যে ৩৮টি শর্ত রয়েছে, অর্ধেকের বেশিই বাস্তবায়ন করতে হবে এ অর্থবছরে। সরকারকে বেঁধে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রিজার্ভের যথাযথ গণনা পদ্ধতি প্রণয়ন, প্রতি তিন মাস অন্তর জিডিপির হার নির্ধারণ, সুদের হারে করিডোর পদ্ধতি তৈরি, মুদ্রা বিনিময় হারের একটি দর রাখাসহ কয়েকটি শর্ত পূরণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর কিছু বাস্তবায়নের ঘোষণা আসবে আগামী জুন মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণার সময়, কিছু আসবে জুলাইয়ে। আইএমএফের চাওয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ।
ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়েই চলছে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান। নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়েছে, তারপরও যেন ভাগ্যটা ফেরানো যাচ্ছিল না। পরাশক্তির তকমাটা খসে যায় গেল এক যুগে। লিগ শিরোপা তাদের কাছে শুধুই মরীচিকা। সাদা-কালোদের কাছে টুর্নামেন্টের শিরোপাও দূর আকাশের তারায় রূপ নিয়েছিল। সেখান থেকে মোহামেডানকে বলতে গেলে একাই শিরোপার স্বাদ দিয়েছেন ‘ঘরের ছেলে’ সুলেমান দিয়াবাতে। মালির এই স্ট্রাইকার টানা পাঁচ মৌসুম ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মাঝারি মানের মোহামেডানকে। তার জাদুতে গতকাল ফেডারেশন কাপের মহা-ফাইনালে আবাহনীকে হারিয়েছে সাদা-কালোরা। এই অর্জন এসেছে অনেক অপেক্ষার পর। তাই তো এই শিরোপাকে মোহামেডানের ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন দিয়াবাতেও। বিশ্বাস করেন, এই শিরোপা বদলে দেবে মোহামেডানের চিন্তাধারাকে।
টাইব্রেকারে শিরোপা জয়ের পর ড্রেসিং রুমে সতীর্থদের হুল্লোড়ের মধ্যে ম্যাচসেরা, টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার নিয়ে এক কোনায় বসে দেশে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন দিয়াবাতে। সেই ফাঁকেই সাংবাদিকদের কাছে জানালেন প্রতিক্রিয়া, ‘পেনাল্টি শুটআউটের আগ পর্যন্ত ম্যাচটা ভীষণ কঠিন ছিল আমাদের জন্য। আল্লাহ আমাদের সহায়তা করেছেন এই ট্রফিটি জিততে। তাই আমি অনেক খুশি। আমার ক্যারিয়ারে কোনো ফাইনালে প্রথমবারের মতো চার গোল করলাম। তাই সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’ দিয়াবাতে বলেন, ‘৯ বছর পর আমি একা নই, সব খেলোয়াড় মিলে মোহামেডানকে একটা শিরোপা এনে দিয়েছি। বিশ্বাস ছিল ম্যাচে ফিরতে পারলে আমরাই শিরোপা জিতব, সেটাই হয়েছে। আমি এই অর্জন মালিতে থাকা আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার মাকে উৎসর্গ করছি।’ শিরোপাটা মোহামেডানের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ আলফাজ আহমেদের জন্যও বিশেষ অর্জন। ফুটবল ক্যারিয়ারে অসংখ্য আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ খেলেছেন এবং জিতেছেন। তবে এই জয়টাকে আলাদা করে রাখছেন তিনি, ‘আজকের খেলাটা অনেক বড় অর্জন। ব্যাকফুটে থেকে ফিরে আসা, ম্যাচ দেখে বোঝা যাচ্ছিল না কে জিতবে। দিয়াবাতে আসাধারণ ফুটবল খেলেছে। মুজাফ্ফারভের হাত ভেঙে দিয়েছিল, ওই অবস্থায়ও সে খেলা চালিয়ে গেছে। খেলোয়াড়দের কমিটম্যান্ট ছিল অসাধারণ। খেলোয়াড় হিসেবে আমি শিরোপা জিতেছি, এবার কোচ হিসেবে শীর্ষ পর্যায়ে প্রথম শিরোপা জিতলাম। তাই শিরোপাটাকেই আমি এগিয়ে রাখব।’ প্রথমার্ধে ২ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও হাল ছাড়েননি আলফাজ। শিষ্যদের শিখিয়েছেন মাথা ঠান্ডা রেখে পাল্টা জবাব দেওয়ার মন্ত্র, ‘প্রথমার্ধের খেলা শেষে শিষ্যদের বলেছি, তোমরা মাথা ঠা-া রেখে খেলো। তারা সেটাই করেছে।’
চোটে পড়ে মাঠ ছাড়া গোলকিপার সুজন সতীর্থ বিপুকে টাইব্রেকারে দারুণ পারফরম্যান্সের জন্য প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, ‘মাঠ ছাড়ার এক মিনিটের মধ্যে আবাহনী যখন গোল পরিশোধ করল, তখন ভীষণ খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমরা আর পারব না। তবে আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে বিপু। আমি তাই অনেক বেশি খুশি।’
বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলিম উম্মাহকে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তাদের সন্তানদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) ক্যাম্পাসে ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে হবে।’
মুসলমানদের যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে যথাযথভাবে এই সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা এটা করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখনই আমি ওআইসি সদস্য দেশে যাই, তাদের আমি এই অনুরোধই করি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইসলামের স্বর্ণযুগে বিশ^সভ্যতা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, রসায়ন, গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোলসহ জ্ঞানের আরও অনেক শাখায় মুসলিম স্কলারদের ব্যাপক অবদান রয়েছে, যা আমাদের মুসলিমদের ঐতিহ্যের গৌরবময় ইতিহাস গড়েছে। সেই যুগের মুসলিম স্কলাররা সংস্কৃতি, জ্ঞান অর্জন, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং সমসাময়িক সাহিত্যে বিশে^ আধিপত্য বিস্তার করেছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেই অবস্থান থেকে বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর এই পিছিয়ে থাকার কারণগুলো আমাদের বিশ্লেষণ করা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির অভাব, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভাব এবং অন্য অনেক বিষয় মুসলিম উম্মাহর পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এই হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের মুসলিম উম্মাহকে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোকে, বিশেষ করে তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও বিজ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আধুনিক যুগে মুসলিমরা মাত্র তিনটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এটাই এই আধুনিক যুগে গবেষণা, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর অবদানের প্রকৃত উদাহরণ। তিনি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘মুসলিম জাতির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে জোরালো প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে করে তারা এ ক্ষেত্রে আরও অবদান রাখতে পারেন।’
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দ্বারা উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া উচিত নয়; বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকস, ইন্টারনেট অব থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য খাতে।
ওআইসির মহাসচিব ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) চ্যান্সেলর হিসেন ব্রাহিম তাহার সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন আইইউটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনিও বক্তব্য দেন।
সমাবর্তনে ২০২১ এবং ২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক, মাস্টার্স, পিএইচডি এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অসামান্য ফলাফলের জন্য দুই ধরনের স্বর্ণপদক আইইউটি স্বর্ণপদক এবং ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইইউটির ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার অর্থায়নে আইইউটির নবনির্মিত মহিলা হলেরও উদ্বোধন করেন।।
ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য। বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংক এখন ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে। বাংলাদেশে ইস্যুকৃত মোট ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ২২ লাখ কিন্তু একক (ইউনিক) গ্রাহক সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। ক্রেডিট কার্ড পুরোপুরি জামানতবিহীন পার্সোনাল ঋণ হলেও ঋণ পরিশোধের হার খুব সন্তোষজনক। গ্রাহক পর্যায়ে একটি ক্রেডিট কার্ড দিতে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশ কিছু অত্যাবশ্যক কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। এটিকে ঋণ হিসেবে না দেখে লাইফস্টাইল পণ্য হিসেবে দেখে এর আবশ্যকীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা কিছুটা শিথিল করা হলে ক্রেডিট কার্ড ব্যাপ্তি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তখন নিম্ন আয়ের মানুষরাও ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন, যা ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা দ্রুতগতিতে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনে রূপান্তরিত হচ্ছে। ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে যেমন পিওএস, এটিএম, সিআরএম, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কিউআর কোড ইত্যাদি। বিগত বছরগুলোতে ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ মাসে ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার কোটি টাকা, ২০২২ সালে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। তাই বলা যায়, প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুতগতিতে অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে প্রথাগত আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা।
তুলনামূলক কম ব্যবহারকারী
আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক কম। দেশে ইস্যুকৃত ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ৩ কোটি ১০ লাখ যেখানে ইস্যুকৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যার মধ্যে যে বড় ব্যবধান, এর প্রধান এবং অন্যতম কারণ হলো ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা। এছাড়া রয়েছে ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে গ্রাহকদের প্রচলিত বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা।
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে হলে আগে কার্ড ব্যবহারের ইকোসিস্টেম প্রসারিত করতে হবে। কিউ-আরকোড এবং অ্যাপসভিত্তিক লেনদেন বৃদ্ধি পেলে পুরো দেশে ক্রেডিট কার্ড তথা সামগ্রিকভাবে কার্ডের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়বে।
ব্যবহারকারী কারা
ব্যাংকগুলো চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ী উভয় শ্রেণির গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে, তবে এক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ঋণের সহজলভ্যতা এবং সুবিধাজনক পরিশোধ ব্যবস্থা। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রমোশনাল অফার যেমন ইএমআই, ক্যাশব্যাক ডিসকাউন্টসহ বাই ওয়ান গেট ওয়ান, ইন্স্যুরেন্স, রিওয়ার্ড পয়েন্ট, মিট অ্যান্ড গ্রিট, লাউঞ্জ সুবিধা ইত্যাদি।
ঋণ শোধের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়
ক্রেডিট কার্ড আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য পণ্য হয়ে উঠেছে। এটি নিতে হলে ঋণ পরিশোধের যোগ্যতার প্রমাণের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণও দাখিল করতে হয়। দেশে এখন রিটার্ন জমা দেওয়ার হার বেড়েছে। সবাই প্রতি বছর তার আয়কর রিটার্ন জমা দেয়। কিন্তু অনেকে অসাবধানতাবশত আয়কর রিটার্ন জমা দেয় না। তাছাড়া অনেকের করযোগ্য আয় না থাকায় তারাও রিটার্ন জমা দেয় না। যা ক্রেডিট ইস্যু করার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও প্রভাব বিস্তার করছে বলে মনে করি।
জীবন সহজ করছে ক্রেডিট কার্ড
ক্রেডিট কার্ড আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটির ব্যবহারও অত্যন্ত সহজ। ক্রেডিট কার্ড বিলম্বিত বিল পরিশোধের ভিত্তিতে কাজ করে, যার অর্থ আপনি এখন আপনার প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করে অর্থ ব্যয় করতে পারেন এবং পরে তা সুবিধামতো সময়ে পরিশোধ করতে পারেন। ব্যবহৃত অর্থ গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ডেবিট হয় না। এভাবে গ্রাহক প্রতিবার তার প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করতে পারেন, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল করে তুলেছে। একজন গ্রাহক যদি নিয়মিত সঠিক সময়ে তার ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করেন তাহলে কখনোই সেই গ্রাহক ঋণগ্রস্ত হবেন না। ব্যাংকগুলোর শক্তিশালী মনিটরিং ও রিকভারি ব্যবস্থা থাকার কারণে এই সেক্টরের খেলাপি ঋণের হার তুলনামূলক অনেক কম।
নিরাপত্তায় প্রয়োজন সচেতনতা
ডিজিটাল পেমেন্টগুলো সাধারণত বিভিন্ন ব্যবহারিক কারণে অফলাইন পেমেন্টের চেয়ে বেশি নিরাপদ। যেমন নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি না থাকা, চুরি, জালিয়াতির আশঙ্কা কম থাকা। ডিজিটাল লেনদেনে গ্রাহকের যে ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন
কার্ড নম্বর, কার্ডের পেছনের ৩ সংখ্যার কার্ড ভেরিফিকেশন ভ্যালু (CVV2), ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP), মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং নিরাপত্তা পিন কারও সঙ্গে বিনিময় না করা।
সন্দেহজনক কোনো ওয়েবসাইটে ই-কমার্স লেনদেন থেকে বিরত থাকা ও কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ থেকে বিরত থাকা।
সন্দেহজনক কোনো ই-মেইল অথবা এসএমএসে থাকা লিঙ্কে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা।
সাইবার সংক্রান্ত ঝুঁকি বিবেচনায় ডিজিটাল ডিভাইসের সব সফটওয়্যার হালনাগাদ রাখা এবং নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
যেকোনো সন্দেহজনক লেনদেন অতিসত্বর ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ব্রাঞ্চ অথবা ব্যাংকের কল সেন্টারে অবহিত করা।
কার্ড হারানোর পরপরই ব্যাংকের কল সেন্টারে অবহিত করা।
সাধারণত, অধিকাংশ ব্যাংকই নির্দিষ্ট লেনদেনের পরিমাণের ভিত্তিতে ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক ফি সম্পূর্ণ বা আংশিক মওকুফ করে দিয়ে থাকে, যার ফলে এটি গ্রাহকের ওপর বাড়তি কোনো চাপ সৃষ্টি করে না। ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্রেডিট কার্ডের সুদের হারের তুলনায় বাংলাদেশে তা অপেক্ষাকৃত অনেক কম। তবে ব্যাংকগুলো সেটেলমেন্টের দিন থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনাসুদে বিল পরিশোধের সুযোগ দিয়ে থাকে। তাই যদি কোনো গ্রাহক বুঝে সচেতনভাবে নিয়মিত বিল পরিশোধ করে তবে এটা কিন্তু গ্রাহকদের জন্য একটি চমৎকার সুযোগ।
গ্রাহকদের বিভিন্ন চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন উৎসবে নানা ধরনের অফার দিয়ে থাকে যার ফলে গ্রাহক বেশি বেশি লেনদেন করতে উদ্বুদ্ধ হয় যা ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।