
প্রতিবছর তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমরা ফান্ড পেতাম। সেই অর্থায়নে আমরা উৎসবটি সুন্দরভাবে করতাম। কিন্তু গত বছর থেকে সেই ফান্ডটি আমরা পাচ্ছি না। সরকার থেকে এবার তাদের কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য নির্দেশ দেওয়ায় সে ফান্ডটিও পাইনি। একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে এবার আমরা কিছু ফান্ড পাওয়ার কারণ উৎসবটি করতে পারছি। তার প্রভাব পড়েছে আমাদের ভেন্যু এবং আয়োজনের ব্যাপ্তির ওপর। অন্যবারের তুলনায় কম চলচ্চিত্র প্রদর্শন করতে পাচ্ছি আমরা। মাত্র দুটি ভেন্যুতে আমাদের এবারের উৎসবটি হচ্ছে। আমরা অর্থনৈতিক সংকটে থাকার কারণে বেশ কিছু নিয়মিত উদ্যোগ নিতে পারিনি। যেমন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আমরা গাড়ি পাঠাতাম। যেন শিক্ষার্থীরা চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিতে পারে। কিন্তু এবার সেটা করতে পারছি না। তবে আমরা আশা করি, এবারের উৎসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় তারা পরিবারের সঙ্গে দেখতে আসবে। তবে কিছু ব্যাপার আমরা অপরিবর্তিত রাখতে পারছি। যেমন, প্রতিবছরের মতো কিন্তু এবারও আমরা কোনো প্রবেশ মূল্য রাখিনি। শিশুরা তাদের অভিভাবকসহ চলচ্চিত্রগুলো উপভোগ করতে পারবে বিনামূল্যে। এই উৎসবটি পরিচালনার ক্ষেত্রে আমরা এখন যে বাধার সম্মুখীন হচ্ছি তা হলো ফান্ড। ফান্ড পেলে উৎসবটি নিয়ে আমরা জেলা পর্যায়ে, বিভাগীয় পর্যায়ে যেতে পারতাম। সিনেমার দর্শক এবং নির্মাতা নির্মাণের ক্ষেত্রে চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ কাজ করছে। এই কাজ এগিয়ে নিতে আমাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের উৎসবে কিন্তু ওয়ার্কশপ হয়। এবার কিন্তু ওয়ার্কশপ হচ্ছে না। অর্থের অভাবে এভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। শিশুদের গড়ে তোলার জন্য সুন্দর আগামীর জন্য আমাদের পাশে থাকতে হবে। নইলে থমকে যাবে আমাদের সব প্রচেষ্টা।
লেখক : উৎসব পরিচালক, ১৬তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব বাংলাদেশ ২০২৩
‘ফ্রেমে ফ্রেমে আগামী স্বপ্ন’ স্লোগানে চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশের আয়োজনে ৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ১৬তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব বাংলাদেশ ২০২৩। চলবে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এবারের উৎসব বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তন ও আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ১ম পর্বে উদ্বোধনী সংগীত, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে উৎসবটি উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, এমপি। অনুষ্ঠানের ২য় পর্বে বক্তব্য রাখেন চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, সভাপতি ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সাধারণ সম্পাদক মুনিরা মোরশেদ মুন্নী, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব সালাহ উদ্দিন আহাম্মদ ও উৎসব পরিচালক শাহরিয়ার আল মামুন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মোহাম্মদ নুরুজ্জামান পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘আম কাঁঠালের ছুটি’ (বাংলাদেশ) উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হয়।
দ্বিতীয় দিন ১১টা, দুপুর ২টা ও সন্ধ্যা ৬টায়, মোট ৩টি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এবারের উৎসবে মোট ৩৯টি দেশের ১০১টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। সিনেমা দেখার জন্য কোনো ধরনের প্রবেশমূল্য নেই।
উৎসবে যাদের চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য মনোনীত হয়েছে তারা প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন। এবারের উৎসবে আমন্ত্রিত প্রতিনিধিদের জন্য ২টি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
উৎসবের তৃতীয় দিন ৯ সেপ্টেম্বর (শনিবার) প্রদর্শিতব্য চলচ্চিত্রের তালিকা
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে বেলা ১১টায়: মিরাক্কেল অ্যান্ড হ্যাভেন (বাংলাদেশ), যায় যায় দিন (বাংলাদেশ), সুড আই কিল মাই সেলফ অর হ্যাভ এ কাপ অব কফি? (বাংলাদেশ), নিরন্তর (বাংলাদেশ), ফ্লাইং চাইল্ড (বাংলাদেশ), গুঠলে লাড্ডু (ভারত), দুপুর ২টায় : অপাল (ফ্রান্স), সিটি অব লাইট (বাংলাদেশ) সন্ধ্যা ৬টায় : আলফনস জিটেরবিট ক্লাস ট্রিপ কেয়স (জার্মানি)।
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে বেলা ১১টায় : দ্য ইয়ার অব ব্লোসামস (চায়না), আলএফ (জাপান), দ্য টুরনিপ (এস্তোনিয়া), লাভলি রিতা (সোয়াজিল্যান্ড)। দুপুর ২টায় : দ্য মনউমেন্ট ( স্লোভাকিয়া), হাউ টু সেভ দ্য ফায়ারফ্লাইস (সিঙ্গাপুর), ওয়ায়েল ড্রাগন (যুক্তরাজ্য), স্পিরিট অব দ্য ফরেস্ট (ইন্ডিয়া), এইগার ১৫৫২ (হাঙ্গেরি), নাও দ্য ওলভেস উইল রান (যুক্তরাজ্য)।
একটা সিনেমা তৈরি করতে কী লাগে। একটা স্ক্রিপ্ট লাগে, অভিনেতা-অভিনেত্রী লাগে, একজন ভালো পরিচালক লাগে, সেখানে মিউজিক দিতে হয়, সেখানে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করতে হয়, একটা মেকআপ রুম লাগে, একটা ক্যামেরা লাগে, একজন এডিটর লাগে, টেকনিক্যাল সব কাজ করার পর আমরা একটা চলচ্চিত্র পাই। এত সুন্দর একটা মাধ্যম আমরা যদি তাদের উৎসাহ না দিই তাহলে কাদের উৎসাহ দেব। আর এই উৎসবের গুরুত্ব কোথায়? এখানে শিশুরাই জুরি, তারাই জাজ, তারাই দেখাচ্ছে, তারাই নির্মাণ করছে। আগে যারা অংশগ্রহণকারী ছিল তারা এটি ছেড়ে যায়নি, তারাই এখন আয়োজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। যখন আমরা শুরু করেছিলাম তখন কিন্তু আমরা ভাবিনি এটা হবে। শুধু চলচ্চিত্র দেখাতে হবে তা না, এর ফলে একটা বিশাল কর্মী বাহিনী তৈরি হবে যারা এটার নেতৃত্ব দেবে। আমি আশা করি আগামী বছর থেকেই আমরা বড় আকারে এই উৎসবটি করতে পারব এবং সারা বাংলাদেশে এটি ছড়িয়ে দিতে পারব। আমি মনে করি যারা ভালো ভালো চলচ্চিত্র নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে বিশ্বে তারা এই প্ল্যাটফর্ম থেকে আসবে।
লেখক : সভাপতি, চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ
বাচ্চারা সারা বছর শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য অপেক্ষা করে। প্রতিবছর উৎসবে আমরা দারুণ সাড়া পাই। ঢাকার বাইরে থেকেও চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ডেলিগেট হিসেবে নির্মাতাদের নিয়ে আসি। কিন্তু এবার আমাদের আয়োজনের পরিসরকে ছোট করে নিয়ে আসতে হয়েছে। কারণ সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির কারণে এবার আমরা তেমন অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাইনি। এটা হওয়ার কথা ছিল আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে। কিন্তু যেন উৎসবের ধারাবাহিকতা নষ্ট না হয় সে কারণে এবার ছোট করে করতে হচ্ছে। মানসিকভাবে কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু তারপরও উৎসবটা হচ্ছে এটা একটা পজেটিভ দিক।
এই আয়োজনটা হওয়া দরকার এবং তার জন্য পৃষ্ঠপোষকতাও দরকার। কারণ কিশোর বয়সটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। গড়ে ওঠার বয়স। এ সময় চলচ্চিত্রের মতো একটি মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত থাকলে তারা মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। কারণ ফিল্ম মানে তো শুধু ফিল্ম না। এখানে গল্প আছে, ক্যামেরা আছে, সংগীত আছে। পরে তারা যেকোনো একটি বা একাধিক শিল্প নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে। আমাদের ফিল্ম এখন কিন্তু ভালো হচ্ছে, বাংলাদেশের নামটা উঠে আসছে। আর ফিল্ম বানানোটাও কিন্তু একটা কৌশল। অনেক মানুষকে ম্যানেজ করে একটা ফিল্ম বানাতে হয়। এতে কিন্তু বাচ্চাদের ম্যানেজিং ক্যাপাবিলিটি বাড়ে। সাঁটিকাপ যে বানিয়েছে সে কিন্তু আমাদের বাচ্চা। রাজশাহীর বাচ্চা। এই যে বিভাগীয় শহরে থেকে বাচ্চারা এসে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। সেটা কিন্তু এই প্ল্যাটফরম থাকার ফলেই সম্ভব হচ্ছে। যে যে ফিল্ডেই যাক না কেন, সে যদি মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে না তাহলে কিন্তু সমাজ এগোবে না। সুস্থ সুন্দর মানুষ কিন্তু দিন দিন কমে যাচ্ছে। হবি বা শখ যদি না থাকে তাহলে কিন্তু মানবিকবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে না একটি বাচ্চা। আজকের এই বাচ্চারাই তো আগামীর প্রজন্ম। তাই তাদের গড়ে তোলার জন্য আমাদের নজর দিতে হবে। বাচ্চাদের কাজ দিলে ওরা এত খুশি হয় এবং আগ্রহী হয়ে কাজটা করে যে আশ্চর্য হতে হয়। কারণ অন্য কেউ তো তার ওপর ওভাবে আস্থা রাখে না। ফলে তাকে যখন একটা কাজ দেওয়া হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে যে, তুমি এটা পারবা তখন তারা খুবই খুশি হয়। এটা আলাদীনের চেরাগের মতো কাজ করে। ফলে এই উৎসব জাতীয় পর্যায়ে বড় আকারে হওয়া উচিত। জেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। ফলে এই উৎসবকে জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হলে বেশি কিছু লাগে না। তিন দিনের জন্য একটা হল আর কিছু অর্থ। আমরা বাচ্চাদের কোনো টাকা দেই না, কিন্তু তাদের খাবারটা তো দিতে হবে। ছবি দেখার জন্য একটা ভালো মিলনায়তন লাগে। খরচগুলো যদি একটু স্পন্সর কেউ তাহলেই সেটা সম্ভব। তবে দুঃখের ব্যাপার হলো এই উৎসবের গুরুত্বটা বুঝতে পারছেন না বা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোও যদি এদিকে এগিয়ে আসত তাহলে কাজ করা অনেক সুবিধা হতো আমাদের জন্য।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, চিনড্রেন ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ
‘এটা কী, দাদি?’ বড় বড় চোখে জানতে চায় মিনি।
দাদি একটুখানি হেসে বলল, ‘এটার নাম জাবার। অনেক বছর আগে মণে মণ ধান আসত এ বাড়িতে। ছিল পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু। আমার শাশুড়ি আম্মার ছিল এ রকম অনেক জাবার। এগুলোতে ধান রাখতেন।’
‘রাইস হয় যেটা থেকে সেই ধানের কথা বলছ?’ ফের অবাক চোখে প্রশ্ন করে মিনি।
দাদি আবারও হাসে। হাসতে হাসতে বলল, ‘হ্যাঁ! রাইস হয় যেটা থেকে সেই ধানের কথাই বলছি। শুধু কি ধান! এটা যে আরও কত কাজে লেগেছে সে তো জানিসই না।’
‘আর কী কী কাজে লাগত, দাদি!’
‘শাশুড়ি আম্মার কাছে শুনেছি জাবারটা সবচেয়ে বেশি কাজে লেগেছে তোর বাবার।’
‘তাই নাকি! কেমন করে শুনতে চাই, বলো বলো।’ দারুণ কৌতূহলে লাফাতে লাফাতে মিনি বলল।
দাদিও বলতে শুরু করল, ‘ছোটবেলায় তোর বাবার ছিল এতগুলো ডাংগুলি। আরও ছিল মার্বেল, ঘুলঘুলি, ঘুড়ি। এগুলো নিয়ে টইটই করে ঘুরত আর বন্ধুদের সঙ্গে খেলত।’
‘দাদি! বাবা আর জাবার...!’ মিনি ফিসফিস করে বলল।
‘আরে শোন না! বাড়ির পেছনে তাল গাছের নিচে যে মাঠটা দেখেছিস, সেখানে পাড়ার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দাড়িয়াবান্ধা আর গোল্লাছুটও খেলত তোর বাবা।’
‘ও দাদি!’ আহ্লাদি সুরে ডাকে মিনি, ‘বলো না এই জাবার দিয়ে কী করত, বাবা?’
‘সেটাই তো বলছি! তো খেলায় হেরে গেলে বা বন্ধুদের কারও সঙ্গে ঝগড়া হলে বাড়ি ফিরে জাবারের ভেতর বসে থাকত তোর বাবা। ডাকতে গেলে বলত এটাই নাকি ওর ঘর। এখানে বসে ও বুক ভরে ধানের গন্ধ নেয়। ওর নিঃশ্বাসের টানে টানে নাকি পাকা ধানের গন্ধ ভেসে আসে। চোখ বুজলে দেখে ধানে ভরা মাঠে কৃষকের হাসিমুখ। একবার হয়েছে কী শোন, তোর দাদার বকা খেয়ে সেই যে ঘর থেকে বের হলো আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ছেলেটাকে। আমরা তো ভেবেছি রাগ করে বাড়ির বাইরে চলে গেছে। এখানে ওখানে, এ বাড়ি ও বাড়ি খুঁজে খুঁজে হয়রান সবাই। শেষে এই জাবারের ভেতরে পাওয়া গেল। দেখি এমা! কী সুন্দর বসে বসে বিস্কুট খাচ্ছে।’
দাদির কথা শুনে মিনি হেসেই যাচ্ছে। হাসতে হাসতে বলল, ‘খুঁজে পেয়ে ছেলেকে খুব আদর করলে, তাই না?’
আদর আবার কী রে! কান ধরে বের করে এনে বলেছিলাম তুই কী ধান যে, এর ভেতরে বসে আছিস? তোর বাবা তখন বলল হ্যাঁ! আমি ধান, এখন থেকে জাবারের ভেতরেই থাকব। এখানেই পড়ব খাবো ঘুমাবো। এটাই আমার ইস্কুল, এটাই মক্তব।
এই কথা শুনে তোর দাদার হলো আরও রাগ। বলল ‘ঠিক আছে, তোর কথাই মেনে নিলাম এখানেই খাবি থাকবি ঘুমাবি। কিন্তু পায়খানা পেলে কী করবি? জাবারের ভেতরে তো বাথরুম নেই।’
ফের হাসে মিনি। নাতনির মুখে সুন্দর হাসি দেখে দাদিও ফের বলতে শুরু করে একবার কী মজার ঘটনা ঘটল শোন! অনেক বছর আগের কথা। তখন তোর দাদারই অল্প বয়স। সবে স্কুলে যেতে শুরু করেছে। খবর রটল গ্রামে ডাকাত পড়েছে। সেই সময় গ্রামে খুব ডাকাতি হতো। খবর শুনে তোর দাদার বাবা বাড়ির সোনা, রুপা সব এই জাবারের ভেতরে ধানের নিচে লুকিয়ে রাখেন। এ বাড়ি ও বাড়ি ডাকাতি করে ডাকাতরা আসে আমাদের বাড়িতে। ঘর, আলমারি সবখানে খুঁজেও কিছু পেল না যখন, জাবারের পাশে সদ্য গাছ পাড়া দুটো কলার ছড়ি ছিল; ওই নিয়ে ডাকাতরা চলে যাচ্ছিল। অমনি তোর দাদা পেছন থেকে ডাকাত সর্দারকে ডেকে বলল ‘আবার আইসেন।’
বলতে বলতে দাদি খুব হাসছে। এমন সময় মিনির বাবা তড়িঘড়ি করে ঘরে ঢুকে বলল, ‘কী রে মিনি! তুই নাকি দাদুর শখের কাচের মগটা ভেঙে ফেলেছিস। মা খুঁজছে তোকে। পেলে দেবে আচ্ছা করে বকা। চল এখান থেকে আমরা পালাই।’
বাবার কথা শুনে মিনি দাদির দিকে তাকায়। দাদি বলল, ‘পালাতে হলে তুই পালা। আমার দিদিভাই এখানেই থাকবে। ছোটবেলায় দুষ্টুমি করে এসে বাবার বকা থেকে বাঁচতে তুই যেমন আমার আঁচলে লুকিয়ে থাকতি, মিনিকেও তেমনি লুকিয়ে রাখব আঁচলে। মা ওকে খুঁজে পেলে না বকা দেবে!’
অমনি মিনির বাবার মনটা নরম হয়ে গেল। স্মৃতিকাতুরে হয়ে বলল, ‘কত স্মৃতি তোমার আঁচল ঘিরে, আম্মা। মনে আছে ছোটবেলায় একবার বন্ধুদের সঙ্গে চড়ুইভাতি খেলবো বলে লুকিয়ে তোমার আঁচলের গিট্টু খুলে পয়সা নিয়েছিলাম, চড়ুইভাতির চাঁদা দেব তাই?’
‘খুব মনে আছে। পরে তোকে বুঝিয়েও বলেছিলাম কোনো কিছুর দরকার হলে যেন বাবা, মায়ের কাছ থেকে চেয়ে নিস, লুকিয়ে নয়।’
‘একবার আম পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে ব্যথা পেয়েছিলাম। মনে আছে, আম্মা? সেদিন
ব্যথায় সারা বিকেল তোমার আঁচলে মুখ গুঁজে কান্না করেছিলাম?’
‘সব মনে আছে পাগল ছেলে আমার। এখন যা, দেখ মিনির মা কোথায়। খবরদার, এইদিকে যেন না আসে।’
বলতে বলতেই মিনির মা হুড়মুড় করে ঘরে ডুকে পড়ল। ঘরের এদিক ওদিক, খাটের নিচে মিনিকে খুঁজতে খুঁজতে বলছে, ‘পেয়ে নিই তোকে আজ, আচ্ছা করে দেব পিটুনি। বাসায় জ্বালিয়ে মারিস আমায়, এখন গ্রামে দাদিবাড়ি এসেও জ্বালাচ্ছিস। ভেবেছিসটা কী? লুকিয়ে থাকবি? খুঁজে পাবো না মনে করেছিস?’
মিনিকে মা বকেই যাচ্ছে আর সেটা শুনে মুখ টিপে হাসছে দাদি। বাবাও হাসছে। ওদের হাসতে দেখে মা ঠিক বুঝে যায় মিনি কোথায় আছে। তবুও না বোঝার ভান করে খুঁজতে থাকে। খুঁজতে খুঁজতে মাও ফিক করে হেসে দেয়। তিনজন মানুষ যখন হেসে কুটিকুটি, মিনি তখন জাবারের ভেতরে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ওর নিঃশ্বাসের টানে টানে ভেসে আসে পাকা ধানের গন্ধ। চোখ বুজে দেখে ধানে ভরা মাঠে কৃষকের হাসিমুখ।
প্রথম বন্ধু : আজ আমার জন্মদিন। ঠিক করেছি সারাদিন ভালো হয়ে থাকব। কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করব না। সবার কথা শুনব।
দ্বিতীয় বন্ধু : সত্যি বলছিস?
প্রথম বন্ধু : সত্যি বলছিস?
প্রথম বন্ধু : একদম সত্যি।
দ্বিতীয় বন্ধু : তাহলে ৫০০ টাকা ধার দে। পিজ্জা খাবো।
প্রথম ব্যক্তি : শুনলাম আপনার কুকুর নাকি হারিয়ে গেছে। তা পেলেন?
দ্বিতীয় ব্যক্তি : নারে ভাই!
প্রথম ব্যক্তি : খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে দেখেছেন? বিজ্ঞাপন দিলে পেতেও পাড়েন।
দ্বিতীয় ব্যক্তি : নারে ভাই, লাভ নেই। কুকুর তো আর খবরের কাগজ পড়তে পারে না!
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।