মৃত্যুর দু’কদম পিছে দাঁড়িয়ে ও অন্যান্য কবিতা
এস এ আহসান সিদ্দিক | ৩১ জুলাই, ২০১৯ ২২:২০
একটা শূন্যস্থানের মধ্যে ঢুইকা আছি
একটা শূন্যস্থানের মধ্যে ঢুইকা আছি। আমারে আজকে সকাল দশটা থেইকা একটা অনেক বড় কালো মাকড়সা তাড়া করতাছে, কিন্তু আমি জানি না ক্যান হুদাই আমারে হালায় তাড়া করতাছে। এখন আর পিছে ফিরা তাকানো যাইবো না, তাকাইলেই বিপদ।
দৌড়াইতে দৌড়াইতে একটা টাইমে গিয়া আমি একটা শূন্যস্থানের মধ্যে ঢুইকা বইসা পড়লাম— আর দেখলাম মাকড়সাটা শূন্যের বাহিরে দাঁড়ায়া আমারে অনেক ডিস্টেন্ট একটা পয়েন্ট থেইকা দেখতাছে। এইখানে মনে হয় হালায় আর
ঢুকতে পারবো না।
এইখানে ঢুইকাই আমি যা রিয়েলাইজ করলাম সেইটা হইলো— আমরা কেউই এখন আর ইয়েলো সাবমেরিনে বাস করি না, ঐটা তো বিটেল্স-এর সাথেই ডুইবা গেছিলো। বরং, এখন আমরা সবাই যেইখানে বাস করি সেইটা হইলো গিয়া আমাদের ‘বেডরুম' ।
এইটা চিন্তা করতে করতে দেখি— হঠাৎ কইরা কই থেইকা জানি কয়েকটা পোলাপাইন আমার সামনে আসলো, আর আইসা কইলো তারা নাকি আমার বন্ধু। এরপর তারা আমারে একটা মেয়েরে দেখাইয়া কইলো,
ঐ মেয়েটা নাকি আমার প্রেমিকা ।
আমি তো এগুলা শুইনা খুব খুশি হইলাম, আমার খুব ভাল্লাগলো, সবকিছু রঙিন লাগা শুরু করলো।
বন্ধুবান্ধব আর প্রেমিকার সাথে খুব সুন্দর একটা টাইম কাটানো শুরু করলাম ।
বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেললাম, চা-সিগারেট খাইলাম, রেস্তোরাঁয় বইসা সিঙ্গারা-সমুচা খাইলাম, আড্ডা দিলাম।
ঐদিকে, প্রেমিকার সাথেও পার্কে ঘুরলাম, সিনেমা দেখতে গেলাম, সেক্স করলাম—
খুব সুন্দর একটা সময় কাটাইলাম আমরা ।
কিন্তু হঠাৎ কইরা এখন আবার দেখতাছি কেউই নাই।
নাই কোনো বন্ধুবান্ধব, নাই কোনো প্রেমিকা।
আশেপাশে তাকাইয়া দেখি— আমারে যেই মাকড়সাটা তাড়া করতাছিল,
সেই মাকড়সাটাও এখন আর কোথাও নাই।
তাইলে গ্যালো কই সব?
সবকিছুই আবার ক্যান জানি সাদাকালো হইয়া যাইতাছে।
আমার খুব বাজে বাজে লাগতাছে,
আমার খুব ভয় লাগতাছে, ভীষণ একা একা লাগতেছে।
আমি আসলে কই? এইটা কোন জায়গা? এইখানে কেউ নাই ক্যান? আমি কি এখনো আমার...
বেডরুমে?
১৯ জুলাই, ২০১৯, মিরপুর ১০, ঢাকা
এইদিকে এখন আর কেউ আসে না
এইদিকে এখন আর কেউ আসেনা ।
বিশাল দরজাটার ফাঁকে— রাখে না কেউ কোনো চোখ।
সেই দরজা, যেই দরজার ফাঁক দিয়ে চোখ রাখলেই
এ্যানেস্থেসিয়ার নীল ঢুকে যায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে,
শীতল হয়ে যায় শ্বাস-প্রশ্বাস—
ঘুণপোকারা উল্টো হয়ে আত্মহত্যা করে যে দরজার দেয়ালে বসে,
সেই দরজাটার কথাই বলছি আমি ।
কেউ যেতে চায় না সেদিকে আর ।
করতে চায় না সে ভুলটি, যে ভুলটি করেছিল—
স্বল্পালোচিত কিছু পথিক ।
আমি যদিও তাদের মধ্যকার কেউ নই,
সবকিছুই জানতাম আমি,
তবুও চোখ রেখেছিলাম সেথায় ।
এককালে আমারও তো ইচ্ছে হয়েছিল
মাছরাঙা হয়ে মাছ শিকার করার,
স্তন হয়ে ছুরি জয় করার,
হাত হয়ে ফাঁসির দড়ি খোলার; আর
চুম্বন হয়ে কথাবার্তা বলার।
ভেবেছিলাম হয়ত, পেগ ভরে ভরে আর
পান করা লাগবে না কোনো তীব্রতা ।
কিন্তু কিছুই হলো না,
শুধুই পেলাম সিলিং ফ্যানের
যান্ত্রিক শীতলতার ন্যায়— যন্ত্রণা ।
এই দরজার সৃষ্টিকর্তারাও হয়ত
অনেকটা এরকমই ভেবেছিল।
অথচ, জীবনানন্দ কিন্তু দরিদ্রই রয়ে গেলো—
বাজলোনা সানাই আবুল হাসানের বিয়ের,
জীবিতাবস্থায় স্বদেশে ফিরতে পারলো না
শহীদ কাদরীও।
অতঃপর আমার স্বপ্নিল চোখগুলোও
কিছু ভাংতি পয়সার মতোই—
অবহেলিত হলো ।
১৭ জুন, ২০১৮, রামপুরা, ঢাকা
মৃত্যুর দু’কদম পিছে দাঁড়িয়ে
মনের অজান্তেই আজ খুব ভিজে যাচ্ছি ।
নিজ দেহের ঘামে—
কী যেনো আজ খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে; অস্তিত্বে নাড়ছে কড়া ।
কিন্তু এমনটা হচ্ছেই বা ক্যানো ?
আমার তো সবই আছে!
দিনের হাসি, রাতের অশ্রু,
জন্মের কারণ হতে মৃত্যুর কারণ,
পৈতৃক সূত্রে পাওয়া যত প্রাচীন শূন্যতা;
সবই জমা আছে আমার বুকের কালিমায়—
তবু ক্যানো এই বিশাল পরাজয় ?
গুল্মে জড়ানো এই দেহে ফুটে আছে
পাঁচটি রজনীগন্ধা ।
আর মেরুদন্ড জুড়ে আছে
অসীম বিশালতা ।
তবু ক্যানো বসে না কোনো ভ্রমর সেথায় ?
মধু আহরণ করে না কেন তুমুল দেদারসে ?
নাকি জীবনের মানে জেনে গেলেই,
মানুষকে চুপ করে থাকতে হয় ?
আর ভালোবাসতে হয় নিঃসঙ্গতাকে ?
যেমনটা করেছিল মহামতি সক্রেটিস
যেমনটা করেছিল ফ্রেডরিক নীৎসে
যেমনটা করেছিল লিওনার্দ কোহেন ?
আমি তো তা জানি না।
আমি শুধু জানি—
যেখানে মৃত্যু দাঁড়িয়ে আছে,
তার ঠিক দু'কদম পিছেই
আমার ব্যক্তিগত পা-সমূহ; হাঁটার কথা ভাবছে ।
আর মানুষ?
মানুষ শুধুই চায় অমরত্ব ।
কিন্তু কেউ কেউ চায়,
কিন্তু কেউ
কেউ চায়....
প্রচুর সম্ভাবনা ।
১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, মিরপুর ১০, ঢাকা
এস এ আহসান সিদ্দিক'র জন্ম ২৬ মে, ১৯৯৭, ঢাকায়। থাকছেন মিরপুর ১০। গান ও কবিতা করেন কৈশোর থেকেই ।
গানের দল : একদল মানুষ।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
এস এ আহসান সিদ্দিক | ৩১ জুলাই, ২০১৯ ২২:২০

একটা শূন্যস্থানের মধ্যে ঢুইকা আছি
একটা শূন্যস্থানের মধ্যে ঢুইকা আছি। আমারে আজকে সকাল দশটা থেইকা একটা অনেক বড় কালো মাকড়সা তাড়া করতাছে, কিন্তু আমি জানি না ক্যান হুদাই আমারে হালায় তাড়া করতাছে। এখন আর পিছে ফিরা তাকানো যাইবো না, তাকাইলেই বিপদ। দৌড়াইতে দৌড়াইতে একটা টাইমে গিয়া আমি একটা শূন্যস্থানের মধ্যে ঢুইকা বইসা পড়লাম— আর দেখলাম মাকড়সাটা শূন্যের বাহিরে দাঁড়ায়া আমারে অনেক ডিস্টেন্ট একটা পয়েন্ট থেইকা দেখতাছে। এইখানে মনে হয় হালায় আর ঢুকতে পারবো না। এইখানে ঢুইকাই আমি যা রিয়েলাইজ করলাম সেইটা হইলো— আমরা কেউই এখন আর ইয়েলো সাবমেরিনে বাস করি না, ঐটা তো বিটেল্স-এর সাথেই ডুইবা গেছিলো। বরং, এখন আমরা সবাই যেইখানে বাস করি সেইটা হইলো গিয়া আমাদের ‘বেডরুম' । এইটা চিন্তা করতে করতে দেখি— হঠাৎ কইরা কই থেইকা জানি কয়েকটা পোলাপাইন আমার সামনে আসলো, আর আইসা কইলো তারা নাকি আমার বন্ধু। এরপর তারা আমারে একটা মেয়েরে দেখাইয়া কইলো, ঐ মেয়েটা নাকি আমার প্রেমিকা । আমি তো এগুলা শুইনা খুব খুশি হইলাম, আমার খুব ভাল্লাগলো, সবকিছু রঙিন লাগা শুরু করলো। বন্ধুবান্ধব আর প্রেমিকার সাথে খুব সুন্দর একটা টাইম কাটানো শুরু করলাম । বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেললাম, চা-সিগারেট খাইলাম, রেস্তোরাঁয় বইসা সিঙ্গারা-সমুচা খাইলাম, আড্ডা দিলাম।
ঐদিকে, প্রেমিকার সাথেও পার্কে ঘুরলাম, সিনেমা দেখতে গেলাম, সেক্স করলাম— খুব সুন্দর একটা সময় কাটাইলাম আমরা । কিন্তু হঠাৎ কইরা এখন আবার দেখতাছি কেউই নাই। নাই কোনো বন্ধুবান্ধব, নাই কোনো প্রেমিকা। আশেপাশে তাকাইয়া দেখি— আমারে যেই মাকড়সাটা তাড়া করতাছিল, সেই মাকড়সাটাও এখন আর কোথাও নাই। তাইলে গ্যালো কই সব? সবকিছুই আবার ক্যান জানি সাদাকালো হইয়া যাইতাছে। আমার খুব বাজে বাজে লাগতাছে, আমার খুব ভয় লাগতাছে, ভীষণ একা একা লাগতেছে। আমি আসলে কই? এইটা কোন জায়গা? এইখানে কেউ নাই ক্যান? আমি কি এখনো আমার... বেডরুমে?
১৯ জুলাই, ২০১৯, মিরপুর ১০, ঢাকা এইদিকে এখন আর কেউ আসে না এইদিকে এখন আর কেউ আসেনা । বিশাল দরজাটার ফাঁকে— রাখে না কেউ কোনো চোখ। সেই দরজা, যেই দরজার ফাঁক দিয়ে চোখ রাখলেই এ্যানেস্থেসিয়ার নীল ঢুকে যায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে, শীতল হয়ে যায় শ্বাস-প্রশ্বাস— ঘুণপোকারা উল্টো হয়ে আত্মহত্যা করে যে দরজার দেয়ালে বসে, সেই দরজাটার কথাই বলছি আমি । কেউ যেতে চায় না সেদিকে আর । করতে চায় না সে ভুলটি, যে ভুলটি করেছিল— স্বল্পালোচিত কিছু পথিক । আমি যদিও তাদের মধ্যকার কেউ নই, সবকিছুই জানতাম আমি, তবুও চোখ রেখেছিলাম সেথায় । এককালে আমারও তো ইচ্ছে হয়েছিল মাছরাঙা হয়ে মাছ শিকার করার, স্তন হয়ে ছুরি জয় করার, হাত হয়ে ফাঁসির দড়ি খোলার; আর চুম্বন হয়ে কথাবার্তা বলার। ভেবেছিলাম হয়ত, পেগ ভরে ভরে আর পান করা লাগবে না কোনো তীব্রতা । কিন্তু কিছুই হলো না, শুধুই পেলাম সিলিং ফ্যানের যান্ত্রিক শীতলতার ন্যায়— যন্ত্রণা । এই দরজার সৃষ্টিকর্তারাও হয়ত অনেকটা এরকমই ভেবেছিল। অথচ, জীবনানন্দ কিন্তু দরিদ্রই রয়ে গেলো— বাজলোনা সানাই আবুল হাসানের বিয়ের, জীবিতাবস্থায় স্বদেশে ফিরতে পারলো না শহীদ কাদরীও। অতঃপর আমার স্বপ্নিল চোখগুলোও কিছু ভাংতি পয়সার মতোই— অবহেলিত হলো । ১৭ জুন, ২০১৮, রামপুরা, ঢাকা
মৃত্যুর দু’কদম পিছে দাঁড়িয়ে
মনের অজান্তেই আজ খুব ভিজে যাচ্ছি । নিজ দেহের ঘামে— কী যেনো আজ খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে; অস্তিত্বে নাড়ছে কড়া । কিন্তু এমনটা হচ্ছেই বা ক্যানো ? আমার তো সবই আছে! দিনের হাসি, রাতের অশ্রু, জন্মের কারণ হতে মৃত্যুর কারণ, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া যত প্রাচীন শূন্যতা; সবই জমা আছে আমার বুকের কালিমায়— তবু ক্যানো এই বিশাল পরাজয় ? গুল্মে জড়ানো এই দেহে ফুটে আছে পাঁচটি রজনীগন্ধা । আর মেরুদন্ড জুড়ে আছে অসীম বিশালতা । তবু ক্যানো বসে না কোনো ভ্রমর সেথায় ? মধু আহরণ করে না কেন তুমুল দেদারসে ? নাকি জীবনের মানে জেনে গেলেই, মানুষকে চুপ করে থাকতে হয় ? আর ভালোবাসতে হয় নিঃসঙ্গতাকে ? যেমনটা করেছিল মহামতি সক্রেটিস যেমনটা করেছিল ফ্রেডরিক নীৎসে যেমনটা করেছিল লিওনার্দ কোহেন ? আমি তো তা জানি না। আমি শুধু জানি— যেখানে মৃত্যু দাঁড়িয়ে আছে, তার ঠিক দু'কদম পিছেই আমার ব্যক্তিগত পা-সমূহ; হাঁটার কথা ভাবছে । আর মানুষ? মানুষ শুধুই চায় অমরত্ব । কিন্তু কেউ কেউ চায়, কিন্তু কেউ কেউ চায়....
প্রচুর সম্ভাবনা ।
১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, মিরপুর ১০, ঢাকা এস এ আহসান সিদ্দিক'র জন্ম ২৬ মে, ১৯৯৭, ঢাকায়। থাকছেন মিরপুর ১০। গান ও কবিতা করেন কৈশোর থেকেই । গানের দল : একদল মানুষ।