শামস আল মমীনের একগুচ্ছ কবিতা
শামস আল মমীন। জন্ম ১৯৫৭, বদরগঞ্জ, রংপুর
বাংলা কবিতা ২০১৮
বাংলা কবিতা এখন অনেক রাতে
বসে থাকে
এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে; উড়াল সেতুর ওপর দিয়ে
উড়ে যায় বহু বহু দেশে;
টেমস নদীর পাড়ে বসে শরীর জুড়ায়, আর
ব্রহ্মপুত্রের দুঃখের কাহিনি শোনায় তারে..
ব্রীক লেনে বসে মুজিব ইরম
ইতা তিনি লিখে রাখে।
‘ব্রহ্মাণ্ডের গোপন আয়না’ আছে তার, তবু
‘মধু ও মসলার বন’ ছেড়ে
কী দেখে মজনু শাহ, একা একা
দান্তে’র নরকে।
ক্যাঙারুর দেশ কিন্তু এক ইঞ্চি লাফায় না
সুব্রত, বিব্রত মাঝে মাঝে
তবু কবিতার দাড়ি কমা মন দিয়ে দেখে;
বাংলা কবিতাও বাসা ভাড়া খোঁজে গ্লোবাল ভিলেজে।
নায়েগ্রায় স্নান শেষে ঘরে ফেরে কবি
নতশিরে কাব্য করে; মনে হয়,
সরাইখানায় একজন হারানো মানুষ,
আর বুঝি কোনদিন
যাবে না সে কুড়িগ্রাম..
হাডসনে হাওয়া খায় শামস মমীন, বহুদিন; কিন্তু
কবিতা শোনায় মেঘনার, যমুনার..
মাঝে মাঝে কি যে হয়, মাঝরাতে শুনি
আহাজারি, কেন
’আমি বন্দী খোলা জানালার কাছে’।
এরা সবে আলো করে রাখে সমকাল
এরাই প্রথম আলো
এরা আছে জনকণ্ঠে, এরা থেকে যাবে
কালের কন্ঠে..
কাঁটাবন, শাহবাগ..
যদি দেখা হয় ফের গ্রীষ্মের ছুটিতে, জানতে চাইবে কেউ
হাউ ডু ইউ ডু ?
আমার বাড়ি
আমার বাড়ি যে রংপুরে আমি কি ভুলে গেছি?
আনিস আমার বন্ধু ছিল, আমি কোনদিন ভুলে যাবো?
গ্রাম্য পথে গাড়ির চাকার আঁকাবাঁকা দাগ
শ্মশানের চারপাশে পোড়া কাঠ খড়ি
ছড়ানো ছিটানো হাড়, আমি কি ভুলে গেছি?
আমি কি ভুলে গেছি বদরগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়,
ডাকবাংলার কিচিরমিচির আর ভাঙা ভাঙা পাখিদের ছায়া, হক সাহেব
মমিন চৌধুরী আর মিজান স্যারের নীরবে স্নেহের কথা?
আমি কি ভুলে গেছি ডালে ডালে বসে থাকা
হলুদ পাখিটার কথা, কেন যে আমাকে দেখলেই
পাখিটা উড়াল দিতো?
আমি কি ভুলে গেছি, ঘন বরষায় মাথা উঁচু করে থাকা
সোনালি আঁশের ক্ষেত, মাইক বাজিয়ে ঘাটিয়ালের হালখাতা,
আমি কি ভুলে গেছি, কোন মাসে সরস্বতী পূজা?
আমি কি ভুলে গেছি যাত্রানায়কের রকমারি জামা, আর
শেষ রাতে বাংলা বিহার উড়িষ্যার শেষ নবাবের শেষ আর্তনাদ?
আমি তো দেখেছি সারি সারি পিঁপড়ার দল
কি অলীক ঐক্যে উঠে গেছে ঢিবির ওপর।
আমার তো মনে আছে পায়রাবন্দর, বেগম
রোকেয়ার বাড়িঘর
আমার তো মনে আছে তাজহাট জমিদারবাড়ি,
‘রঙ্গপুর বার্তাবহ’;
আমার তো মনে আছে ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা
আমার তো মনে আছে নূরল দীনের কথা...
তোমরা সবাই লেখি রাখেন বাহে
মোর বাড়ি বদরগঞ্জ
রংপুর জেলা..
একটি কবিতার খসড়া
আপনি এখানে!
নানান রঙের মানুষ আর দোকানে দোকানে
ঝুলে থাকা রকমারি সব পণ্য দেখে
ভেবেছিলাম..
কিছুই কিনব না আজ..
কিন্তু শেষমেশ আমি ফিরে এসেছি
আমার হাতের মতো চেনা এ শহরে।
নিত্যপ্রয়োজনীয়
কিছু কেনাকাটা, আর
কিছু দেখা সাক্ষাৎও খুব জরুরী..
ওই তো দেখছি শামসুর রাহমান চালের আড়তে
একা একা পায়চারি করছেন, আর আল মাহমুদ
রাস্তায় দাঁড়িয়ে গরম চায়ে ফুঁ দিচ্ছেন ঘন ঘন।
কিছু কেনাকাটা না করলেই নয় আজ,
অন্তত
ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলোর জন্য কিছু ললিপপ
কিম্বা চকলেট,
সত্যি বলতে কি ওদের জন্য কোনদিন
কিছুই কিনিনি আমি,
কেন যে ওই ছোট ছোট মুখগুলো মাঝে মাঝে
এতো বড়, আর মায়াময় হয়ে ওঠে।
প্রেমিকাদের জন্য হীরের আংটি না হোক
নিদেনপক্ষে
একগুচ্ছ গোলাপ
অথবা চন্দ্রমল্লিকা..
আমার এই অনাড়ম্বর, কোলাহলহীন, উদাসীন জীবনের
ছিটেফোঁটা কাহিনি প্রায় সকলেরই জানা;
নয়টা পাঁচটা অফিস কিম্বা বউ বাচ্চার শখের
বায়না মেটাই, এমন সাধ ও সাধ্য কোনকালে হয় নাই;
লেক্সাস-লিম্বারগিনি কিম্বা জি কিউ ম্যাগাজিন দেখে চোখে ধাঁ ধাঁ,
না, সেরকম কিছুই না, বরং বন্ধুর পয়সায়
মদ খেয়ে সিগারেটের ধোওয়ায়
গোল গোল রিং হাওয়ায় উড়িয়ে
আমার একান্ত
বলয়ে, বলা যায়, রাজাই ছিলাম আমি।
আর প্রেম ট্রেম যা হয়েছে..
আমাদের ক্ষুধাময় জীবনের সামান্য সুধা
দরোজায় খিল দিয়ে আধ ঘণ্টার নিবিড় ভালোবাসা,
তাও একেবারে কম কিসে!
আমার প্রথম প্রেমিক ছিল খুব প্রেমের কাঙাল,
অতো ভালোবাসা সয় নাই কপালে আমার..
ফের চাঁদ হয়ে এলো বিদেশিনী, হায়!
আমার শ্যামল বর্ণ আর গরিব দেশের কবি-নাম
দিল-এ দাগা দেয় নাই তার..অবশেষে,
হাত রাখি ফের বাংলার নোনা-জলে।
ভবঘুরে, বুদ্ধিজীবী, বেহায়া প্রেমিক যাই বল
দিনশেষে আমি কিন্তু কবি, শুধু কবি। আশ্চর্য..
শামসুর রাহমান কিছু না বলেই চলে গেলেন!
না, না, মাছের বাজারে যাবো না আর, ওই
থক থক কাঁদায় অনেকেরই স্যান্ডেল আটকে গেছে..
তার চেয়ে ভালো পিছনের দরোজা দিয়ে কেটে পড়ি।
আজও বোধ হয় কেনাকাটা কিছু হবে না।
কবিতা নিয়ে কবিতা
জসীম উদদীনের ‘কবর’ কবিতা আমার ভালোলাগে,
আহা! কী অপূর্ব শোকগাথা। কিন্তু
কবিবন্ধুরা কহেন, সে তো পুরাতন অতি সনাতন,
অতিকথনে আক্রান্ত ; মাঝে মাঝে তাই উলুধ্বনি দিয়ে
বোদলেয়র শোনায়। মফস্বল থেকে আসা
দৈনিকের উপসম্পাদক কবি, ভেবেছিলাম, হয়তো
বুঝবে; কারণ তারও গায়ে মাটি আর
মাছের আঁশটে গন্ধ। কিন্তু হায়!
সেও আজকাল ক্যাপাচিনো খায়, আর..
ছোট কাগজের, আর সাময়িকীর পাতায় পাতায় কবিতার
ব্যাকরণ লেখে। বহুদিন পর দেখি কবরের ওপর সবুজ
ঘাস; আর তার চারপাশ
পাখিসব খুঁটে খুঁটে খায় পোকামাকড়ের তাবৎ বসতি..
বঙ্গ-ভঙ্গ, অথবা..
আর যদি একটা গুলি চলে..
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম..
-শেখ মুজিবুর রহমান
আর যদি একটা গুলি চলে..
বাঙালি জাগে
টিএসসি, কলাভবন
নকশিকাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট
১৯০৫
বঙ্গভঙ্গ
গান্ধী..
জিন্নাহ
উত্তপ্ত কলকাতা
বিষের বাঁশি, অগ্নিবীণা
উত্তম সুচিত্রা
আসাদের শার্ট, রক্তমাখা
অপুর সংসার,
সোফিয়া লরেন, মার্লোন ব্রান্ডো
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম..
ভুট্টো, ইয়াহিয়া
প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে
রাইফেল
স্টেনগান
অসংখ্য মৃত্যু
টেলিফোন তারে কালো কালো কাক
হর্ষধ্বনি
ইস্টিমার
মানুষ বোঝাই রেলগাড়ি
রাজ্জাক কবরী
১৯৭৪
দুর্ভিক্ষ
ক্ষুধা
মৃত্যু,
আরও কয়েকটি মৃত্যু
খাল কাটা
কুমিরের চাষ
বুটের মচমচ
নিঃশব্দ পায়চারি
লেফটেন্যান্ট জেনারেল
মিছিল
মিছিলে স্লোগান
স্বপ্ন দেখে গণতন্ত্র
স্বপ্ন দেখে রঙিন টেলিভিশন
আফজাল-সুবর্ণা
স্বপ্ন দেখে নতুন বৌ, ময়না পাখি, পদ্মা-যমুনা
স্বপ্ন দেখে পূর্ব-পশ্চিম
স্বপ্ন দেখে কুড়িগ্রাম, কুতুবদিয়া
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া...
ভালো ছেলে
মায়েদের বাবাদের আদরের ছেলেগুলা
ভালো আছে,
শহরে শহরে থাকে ওরা
ঘড়ি ধরে হাওয়া খায়
কথা বলে কম, মেয়েদের সাথে আরও কম
ওরা রাত জেগে ইংলিশ ফিংলিশ পড়ে
ভারী ভারী ডিগ্রি লয়
ওরা ডাক্তার হয়, ওরা ইঞ্জিনিয়ার হয়
ওরা মহকুমা থেকে মহানগরে যায়
ওরা থাকে ঝাড়বাতিঅলা ফ্ল্যাটে, ওদের বিষণ্ন ছাদে
গোলাপ আর চন্দ্র মল্লিকা হাসে
ওদের বউগুলো ক্যান জানি ধনী হয়
ওরা চকলেট খায়, ক্যাপাচিনো খায়
ওরা পুসি বেড়ালের মতো পাশে পাশে থাকে
বউদের কথা মন দিয়ে শোনে
ওদের মায়েরা বারান্দা উঠান পাক-সাফ করে
মোয়া দিয়ে, নাড়ু দিয়ে, পিঠা দিয়ে কৌটাগুলো ভরে,
আকাশে ঈদের চাঁদ ..
মানুষ বোঝাই রেলগাড়ি আসে বাস আসে টেম্পু আসে
কিন্তু, ভালো ছেলেগুলো আসে না
শিশিরের মতো টলোমলো ভোরে
ফেসবুকে বার্তা আসে
ঈদ মোবারক,
মায়েদের বুক ভারী হয়ে আসে
চোখগুলো ভেজা ভেজা..
লাল...
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর

বাংলা কবিতা ২০১৮
বাংলা কবিতা এখন অনেক রাতে বসে থাকে এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে; উড়াল সেতুর ওপর দিয়ে উড়ে যায় বহু বহু দেশে; টেমস নদীর পাড়ে বসে শরীর জুড়ায়, আর ব্রহ্মপুত্রের দুঃখের কাহিনি শোনায় তারে.. ব্রীক লেনে বসে মুজিব ইরম ইতা তিনি লিখে রাখে।
‘ব্রহ্মাণ্ডের গোপন আয়না’ আছে তার, তবু ‘মধু ও মসলার বন’ ছেড়ে কী দেখে মজনু শাহ, একা একা দান্তে’র নরকে।
ক্যাঙারুর দেশ কিন্তু এক ইঞ্চি লাফায় না সুব্রত, বিব্রত মাঝে মাঝে তবু কবিতার দাড়ি কমা মন দিয়ে দেখে; বাংলা কবিতাও বাসা ভাড়া খোঁজে গ্লোবাল ভিলেজে।
নায়েগ্রায় স্নান শেষে ঘরে ফেরে কবি নতশিরে কাব্য করে; মনে হয়, সরাইখানায় একজন হারানো মানুষ, আর বুঝি কোনদিন যাবে না সে কুড়িগ্রাম..
হাডসনে হাওয়া খায় শামস মমীন, বহুদিন; কিন্তু কবিতা শোনায় মেঘনার, যমুনার.. মাঝে মাঝে কি যে হয়, মাঝরাতে শুনি আহাজারি, কেন ’আমি বন্দী খোলা জানালার কাছে’।
এরা সবে আলো করে রাখে সমকাল এরাই প্রথম আলো এরা আছে জনকণ্ঠে, এরা থেকে যাবে কালের কন্ঠে.. কাঁটাবন, শাহবাগ.. যদি দেখা হয় ফের গ্রীষ্মের ছুটিতে, জানতে চাইবে কেউ হাউ ডু ইউ ডু ?
আমার বাড়ি
আমার বাড়ি যে রংপুরে আমি কি ভুলে গেছি? আনিস আমার বন্ধু ছিল, আমি কোনদিন ভুলে যাবো? গ্রাম্য পথে গাড়ির চাকার আঁকাবাঁকা দাগ শ্মশানের চারপাশে পোড়া কাঠ খড়ি ছড়ানো ছিটানো হাড়, আমি কি ভুলে গেছি?
আমি কি ভুলে গেছি বদরগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, ডাকবাংলার কিচিরমিচির আর ভাঙা ভাঙা পাখিদের ছায়া, হক সাহেব মমিন চৌধুরী আর মিজান স্যারের নীরবে স্নেহের কথা?
আমি কি ভুলে গেছি ডালে ডালে বসে থাকা হলুদ পাখিটার কথা, কেন যে আমাকে দেখলেই পাখিটা উড়াল দিতো?
আমি কি ভুলে গেছি, ঘন বরষায় মাথা উঁচু করে থাকা সোনালি আঁশের ক্ষেত, মাইক বাজিয়ে ঘাটিয়ালের হালখাতা,
আমি কি ভুলে গেছি, কোন মাসে সরস্বতী পূজা? আমি কি ভুলে গেছি যাত্রানায়কের রকমারি জামা, আর শেষ রাতে বাংলা বিহার উড়িষ্যার শেষ নবাবের শেষ আর্তনাদ?
আমি তো দেখেছি সারি সারি পিঁপড়ার দল কি অলীক ঐক্যে উঠে গেছে ঢিবির ওপর।
আমার তো মনে আছে পায়রাবন্দর, বেগম রোকেয়ার বাড়িঘর আমার তো মনে আছে তাজহাট জমিদারবাড়ি, ‘রঙ্গপুর বার্তাবহ’; আমার তো মনে আছে ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা আমার তো মনে আছে নূরল দীনের কথা...
তোমরা সবাই লেখি রাখেন বাহে মোর বাড়ি বদরগঞ্জ রংপুর জেলা..
একটি কবিতার খসড়া
আপনি এখানে! নানান রঙের মানুষ আর দোকানে দোকানে ঝুলে থাকা রকমারি সব পণ্য দেখে ভেবেছিলাম.. কিছুই কিনব না আজ.. কিন্তু শেষমেশ আমি ফিরে এসেছি আমার হাতের মতো চেনা এ শহরে। নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটা, আর কিছু দেখা সাক্ষাৎও খুব জরুরী.. ওই তো দেখছি শামসুর রাহমান চালের আড়তে একা একা পায়চারি করছেন, আর আল মাহমুদ রাস্তায় দাঁড়িয়ে গরম চায়ে ফুঁ দিচ্ছেন ঘন ঘন।
কিছু কেনাকাটা না করলেই নয় আজ, অন্তত ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলোর জন্য কিছু ললিপপ কিম্বা চকলেট, সত্যি বলতে কি ওদের জন্য কোনদিন কিছুই কিনিনি আমি, কেন যে ওই ছোট ছোট মুখগুলো মাঝে মাঝে এতো বড়, আর মায়াময় হয়ে ওঠে। প্রেমিকাদের জন্য হীরের আংটি না হোক নিদেনপক্ষে একগুচ্ছ গোলাপ অথবা চন্দ্রমল্লিকা..
আমার এই অনাড়ম্বর, কোলাহলহীন, উদাসীন জীবনের ছিটেফোঁটা কাহিনি প্রায় সকলেরই জানা; নয়টা পাঁচটা অফিস কিম্বা বউ বাচ্চার শখের বায়না মেটাই, এমন সাধ ও সাধ্য কোনকালে হয় নাই; লেক্সাস-লিম্বারগিনি কিম্বা জি কিউ ম্যাগাজিন দেখে চোখে ধাঁ ধাঁ, না, সেরকম কিছুই না, বরং বন্ধুর পয়সায় মদ খেয়ে সিগারেটের ধোওয়ায় গোল গোল রিং হাওয়ায় উড়িয়ে আমার একান্ত বলয়ে, বলা যায়, রাজাই ছিলাম আমি।
আর প্রেম ট্রেম যা হয়েছে.. আমাদের ক্ষুধাময় জীবনের সামান্য সুধা দরোজায় খিল দিয়ে আধ ঘণ্টার নিবিড় ভালোবাসা, তাও একেবারে কম কিসে!
আমার প্রথম প্রেমিক ছিল খুব প্রেমের কাঙাল, অতো ভালোবাসা সয় নাই কপালে আমার.. ফের চাঁদ হয়ে এলো বিদেশিনী, হায়! আমার শ্যামল বর্ণ আর গরিব দেশের কবি-নাম দিল-এ দাগা দেয় নাই তার..অবশেষে, হাত রাখি ফের বাংলার নোনা-জলে।
ভবঘুরে, বুদ্ধিজীবী, বেহায়া প্রেমিক যাই বল দিনশেষে আমি কিন্তু কবি, শুধু কবি। আশ্চর্য.. শামসুর রাহমান কিছু না বলেই চলে গেলেন! না, না, মাছের বাজারে যাবো না আর, ওই থক থক কাঁদায় অনেকেরই স্যান্ডেল আটকে গেছে.. তার চেয়ে ভালো পিছনের দরোজা দিয়ে কেটে পড়ি।
আজও বোধ হয় কেনাকাটা কিছু হবে না।
কবিতা নিয়ে কবিতা
জসীম উদদীনের ‘কবর’ কবিতা আমার ভালোলাগে, আহা! কী অপূর্ব শোকগাথা। কিন্তু কবিবন্ধুরা কহেন, সে তো পুরাতন অতি সনাতন, অতিকথনে আক্রান্ত ; মাঝে মাঝে তাই উলুধ্বনি দিয়ে বোদলেয়র শোনায়। মফস্বল থেকে আসা দৈনিকের উপসম্পাদক কবি, ভেবেছিলাম, হয়তো বুঝবে; কারণ তারও গায়ে মাটি আর মাছের আঁশটে গন্ধ। কিন্তু হায়! সেও আজকাল ক্যাপাচিনো খায়, আর..
ছোট কাগজের, আর সাময়িকীর পাতায় পাতায় কবিতার ব্যাকরণ লেখে। বহুদিন পর দেখি কবরের ওপর সবুজ ঘাস; আর তার চারপাশ পাখিসব খুঁটে খুঁটে খায় পোকামাকড়ের তাবৎ বসতি..
বঙ্গ-ভঙ্গ, অথবা..
আর যদি একটা গুলি চলে.. এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম.. -শেখ মুজিবুর রহমান
আর যদি একটা গুলি চলে.. বাঙালি জাগে টিএসসি, কলাভবন নকশিকাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট
১৯০৫ বঙ্গভঙ্গ গান্ধী.. জিন্নাহ উত্তপ্ত কলকাতা বিষের বাঁশি, অগ্নিবীণা
উত্তম সুচিত্রা
আসাদের শার্ট, রক্তমাখা অপুর সংসার, সোফিয়া লরেন, মার্লোন ব্রান্ডো
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম.. ভুট্টো, ইয়াহিয়া
প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে
রাইফেল স্টেনগান অসংখ্য মৃত্যু টেলিফোন তারে কালো কালো কাক
হর্ষধ্বনি ইস্টিমার মানুষ বোঝাই রেলগাড়ি
রাজ্জাক কবরী
১৯৭৪ দুর্ভিক্ষ ক্ষুধা মৃত্যু, আরও কয়েকটি মৃত্যু
খাল কাটা কুমিরের চাষ বুটের মচমচ নিঃশব্দ পায়চারি লেফটেন্যান্ট জেনারেল
মিছিল মিছিলে স্লোগান স্বপ্ন দেখে গণতন্ত্র
স্বপ্ন দেখে রঙিন টেলিভিশন আফজাল-সুবর্ণা
স্বপ্ন দেখে নতুন বৌ, ময়না পাখি, পদ্মা-যমুনা স্বপ্ন দেখে পূর্ব-পশ্চিম স্বপ্ন দেখে কুড়িগ্রাম, কুতুবদিয়া টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া...
ভালো ছেলে
মায়েদের বাবাদের আদরের ছেলেগুলা ভালো আছে, শহরে শহরে থাকে ওরা ঘড়ি ধরে হাওয়া খায় কথা বলে কম, মেয়েদের সাথে আরও কম ওরা রাত জেগে ইংলিশ ফিংলিশ পড়ে ভারী ভারী ডিগ্রি লয় ওরা ডাক্তার হয়, ওরা ইঞ্জিনিয়ার হয় ওরা মহকুমা থেকে মহানগরে যায় ওরা থাকে ঝাড়বাতিঅলা ফ্ল্যাটে, ওদের বিষণ্ন ছাদে গোলাপ আর চন্দ্র মল্লিকা হাসে
ওদের বউগুলো ক্যান জানি ধনী হয় ওরা চকলেট খায়, ক্যাপাচিনো খায় ওরা পুসি বেড়ালের মতো পাশে পাশে থাকে বউদের কথা মন দিয়ে শোনে
ওদের মায়েরা বারান্দা উঠান পাক-সাফ করে মোয়া দিয়ে, নাড়ু দিয়ে, পিঠা দিয়ে কৌটাগুলো ভরে, আকাশে ঈদের চাঁদ ..
মানুষ বোঝাই রেলগাড়ি আসে বাস আসে টেম্পু আসে কিন্তু, ভালো ছেলেগুলো আসে না শিশিরের মতো টলোমলো ভোরে ফেসবুকে বার্তা আসে ঈদ মোবারক, মায়েদের বুক ভারী হয়ে আসে চোখগুলো ভেজা ভেজা.. লাল...