মনদীপ ঘরাই'র ৫ কবিতা
পুড়ছে সময়
সিদ্ধান্ত নেও প্রিয়তমা; সময় নিও না
নিতে পারো পুরোটা আমায়; সময় নিও না
ঘড়িতে কাঁটা আছে জানি, ফুল তো নেই!
তবে কেন সযতনে সময়কে দিয়েছ ঠাঁই?
আমার অলস চিন্তা দেব, সময় নিও না।
আমার ব্যস্ত সকাল দেব, সময় নিও না।
জীবন কিংবা যাপন দেব, সময় নিও না।
পরের মাঝে আপন দেব, সময় নিও না।
তোমাকে তো আমি নিষেধ করি না কিছুতেই।
আজ কেন করছি?
সময়টা বড্ড বেশি হাত ফস্কে যাচ্ছে দিন কে দিন....
তবে, তোমায় কিভাবে দেই বলো তো!
তাই খাপছাড়া পুড়তে থাকা সময়ের ধোঁয়া সরিয়ে বলি....
সিদ্ধান্ত নাও প্রিয়তমা, সময় নিও না।
আধাসেদ্ধ
আজ রাতও তবে রয়ে যাবে অপূর্ণ?
চুলোয় ফুটতে থাকা আধাসেদ্ধ ভাতের মতো!
রান্না পুরো হওয়ার আগেই,
নিভেছে আগুন;
হাড়ির উতলে ওঠা ফুটন্ত মাড়ে।
আমার চাল-চুলো সব ভিজেই গেল।
নিভেই গেল কাঠ-কয়লার আগুন।
আর তুমি চুলোর পাশে বসে
অবাক হয়ে দেখছো-
আমার আধাসেদ্ধ আবেগ।
যাতে ঠোঁট ছোঁয়ানো যায় না,
আবার ফেলে দেয়াও পাপ।
প্রাক্তন লেখক
কাগজ ভুলে যাই;
কলমটা ঠিকই আছে বুক পকেটে।
হৃদপিন্ডের স্পন্দন শুনে চলছে ঘুম।
কলমের ঘুম।
প্রহর থেকে প্রহর।
ঘুমন্ত কলমের কালি শুকায়; চোখের জলের মতো:
সময়ের স্রোতে।
হঠাৎ এসে জানতে চাইলে, কেমন চলছে সংসার?
মাথা নিচু করে জানালাম,
বিচ্ছেদ হয়েছে; ভেঙ্গেছে সংসার।
কার? কাগজ আর কলমের।
এখন আর লেখা হয় না কিছুই।
তবুও কলম রয়ে গেছে বুক-পকেটে।
শুকনো কালির স্মৃতিতে।
লেখক মানে কাগজ-কলমের সংসার।
বিপত্নীক কলমের খেলা নয় এটা।
কিংবা বিধবা সাদা কাগজেরও নয়।
কলমে এখনও কাগজের খোঁজ
প্রতি বছর, প্রতি মাস, রোজ।
তোমার দানব কে?
আমার দানব "ইচ্ছে-খুশি", বাড়ছে মনে মনে
তোমার দানব "অনিচ্ছা" টা, আমার কথা শোনে।
আমার দানব সকাল- দুপুর তোমার দানব রাত
আমার দানব পা দুটোতেই, তোমার দানব হাত
দানব আমার খ্যাপাটে খুব, রগচটা যে বড়ো
তোমার দানব একটু ভীতু, ভয়ে জড়োসড়ো
দানব আবার কোন্ কালেতে লেগেছে কোন্ চুলোয়?
মানব ভজেই পাই না দিশা, আমার কি আর কুলোয়?
তবুও আমার, তবুও তোমার দানব অনেক দামী
আমার দানব জগৎ জোড়া, তোমার দানব আমি....
দুঃখ তুলিতে রং
ঘড়ির কাঁটাগুলো থেমে গেছে হৃদয়ের সাথে;
স্পন্দন নেই ঘড়িতে কিংবা হৃদপিন্ডে।
একটা দুশো টাকার দেয়াল ঘড়ি,
কিংবা দুটাকার জন্য খুন হওয়া জীবন দিয়ে
রুখতে পারবো কি সময়ের রথ?
সময় সবার কথা শোনে না।
সবার হৃদয়ে জাল বোনে না।
মন্ত্রটা শুধুই তোমার জানা।
শিখেছিলে আদিম তপস্যায়।
বোধিবৃক্ষের ছায়া তোমায় শিখিয়েছিল;
চুপিসারে। মন্ত্র। মন্ত্র এবং মন্ত্র।
তাই তোমার দু ঠোঁটের মাঝে -
এক চিলতে উষ্ণ মন্ত্রের আনাগোনায়
থেমে গেছে সময়।
ভেজা ঠোঁটে-ঠোঁট ছোঁয়ালে কি শিখতে পারবো সে মন্ত্র?
দেবে আমায় বর, কিংবা সুমধুর অভিশাপ?
এক পলকের জন্য সময় থামাতাম!
অবাধ্য চুলগুলোকে আদর দিয়ে বশে এনে,
সরিয়ে দিতাম এলোমেলো করে।
দেখে নিতাম তোমার চোখের জলাশয়।
যেখানে মীন রাশির মাছেরা স্বপ্নের জালে
-ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে।
আর আমি? দুঃখবেশী স্ত্রিস্তান হয়ে
শব্দের কালো রং আর থেমে থাকা সময়ের তুলিতে
-আঁকছি তোমায়, প্রিয়তমা ইসল্ড।
মনদীপ ঘরাই: কবি ও লেখক।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর

পুড়ছে সময়
সিদ্ধান্ত নেও প্রিয়তমা; সময় নিও না
নিতে পারো পুরোটা আমায়; সময় নিও না
ঘড়িতে কাঁটা আছে জানি, ফুল তো নেই!
তবে কেন সযতনে সময়কে দিয়েছ ঠাঁই?
আমার অলস চিন্তা দেব, সময় নিও না।
আমার ব্যস্ত সকাল দেব, সময় নিও না।
জীবন কিংবা যাপন দেব, সময় নিও না।
পরের মাঝে আপন দেব, সময় নিও না।
তোমাকে তো আমি নিষেধ করি না কিছুতেই।
আজ কেন করছি?
সময়টা বড্ড বেশি হাত ফস্কে যাচ্ছে দিন কে দিন....
তবে, তোমায় কিভাবে দেই বলো তো!
তাই খাপছাড়া পুড়তে থাকা সময়ের ধোঁয়া সরিয়ে বলি....
সিদ্ধান্ত নাও প্রিয়তমা, সময় নিও না।
আধাসেদ্ধ
আজ রাতও তবে রয়ে যাবে অপূর্ণ?
চুলোয় ফুটতে থাকা আধাসেদ্ধ ভাতের মতো!
রান্না পুরো হওয়ার আগেই,
নিভেছে আগুন;
হাড়ির উতলে ওঠা ফুটন্ত মাড়ে।
আমার চাল-চুলো সব ভিজেই গেল।
নিভেই গেল কাঠ-কয়লার আগুন।
আর তুমি চুলোর পাশে বসে
অবাক হয়ে দেখছো-
আমার আধাসেদ্ধ আবেগ।
যাতে ঠোঁট ছোঁয়ানো যায় না,
আবার ফেলে দেয়াও পাপ।
প্রাক্তন লেখক
কাগজ ভুলে যাই;
কলমটা ঠিকই আছে বুক পকেটে।
হৃদপিন্ডের স্পন্দন শুনে চলছে ঘুম।
কলমের ঘুম।
প্রহর থেকে প্রহর।
ঘুমন্ত কলমের কালি শুকায়; চোখের জলের মতো:
সময়ের স্রোতে।
হঠাৎ এসে জানতে চাইলে, কেমন চলছে সংসার?
মাথা নিচু করে জানালাম,
বিচ্ছেদ হয়েছে; ভেঙ্গেছে সংসার।
কার? কাগজ আর কলমের।
এখন আর লেখা হয় না কিছুই।
তবুও কলম রয়ে গেছে বুক-পকেটে।
শুকনো কালির স্মৃতিতে।
লেখক মানে কাগজ-কলমের সংসার।
বিপত্নীক কলমের খেলা নয় এটা।
কিংবা বিধবা সাদা কাগজেরও নয়।
কলমে এখনও কাগজের খোঁজ
প্রতি বছর, প্রতি মাস, রোজ।
তোমার দানব কে?
আমার দানব "ইচ্ছে-খুশি", বাড়ছে মনে মনে
তোমার দানব "অনিচ্ছা" টা, আমার কথা শোনে।
আমার দানব সকাল- দুপুর তোমার দানব রাত
আমার দানব পা দুটোতেই, তোমার দানব হাত
দানব আমার খ্যাপাটে খুব, রগচটা যে বড়ো
তোমার দানব একটু ভীতু, ভয়ে জড়োসড়ো
দানব আবার কোন্ কালেতে লেগেছে কোন্ চুলোয়?
মানব ভজেই পাই না দিশা, আমার কি আর কুলোয়?
তবুও আমার, তবুও তোমার দানব অনেক দামী
আমার দানব জগৎ জোড়া, তোমার দানব আমি....
দুঃখ তুলিতে রং
ঘড়ির কাঁটাগুলো থেমে গেছে হৃদয়ের সাথে;
স্পন্দন নেই ঘড়িতে কিংবা হৃদপিন্ডে।
একটা দুশো টাকার দেয়াল ঘড়ি,
কিংবা দুটাকার জন্য খুন হওয়া জীবন দিয়ে
রুখতে পারবো কি সময়ের রথ?
সময় সবার কথা শোনে না।
সবার হৃদয়ে জাল বোনে না।
মন্ত্রটা শুধুই তোমার জানা।
শিখেছিলে আদিম তপস্যায়।
বোধিবৃক্ষের ছায়া তোমায় শিখিয়েছিল;
চুপিসারে। মন্ত্র। মন্ত্র এবং মন্ত্র।
তাই তোমার দু ঠোঁটের মাঝে -
এক চিলতে উষ্ণ মন্ত্রের আনাগোনায়
থেমে গেছে সময়।
ভেজা ঠোঁটে-ঠোঁট ছোঁয়ালে কি শিখতে পারবো সে মন্ত্র?
দেবে আমায় বর, কিংবা সুমধুর অভিশাপ?
এক পলকের জন্য সময় থামাতাম!
অবাধ্য চুলগুলোকে আদর দিয়ে বশে এনে,
সরিয়ে দিতাম এলোমেলো করে।
দেখে নিতাম তোমার চোখের জলাশয়।
যেখানে মীন রাশির মাছেরা স্বপ্নের জালে
-ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে।
আর আমি? দুঃখবেশী স্ত্রিস্তান হয়ে
শব্দের কালো রং আর থেমে থাকা সময়ের তুলিতে
-আঁকছি তোমায়, প্রিয়তমা ইসল্ড।
মনদীপ ঘরাই: কবি ও লেখক।