নাজমুস সাকিব রহমানের একগুচ্ছ কবিতা
নাজমুস সাকিব রহমান
কবি ও গদ্যকার নাজমুস সাকিব রহমানের জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৩ সালে। পড়েছেন জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ। একমাত্র প্রকাশিত বই রাউলা (২০২০)।
সেলিং টু ফিলাডেলফিয়া
আসো মধ্যরাত। বেজে উঠো
নফলারের গিটারে।
ছুটে চলো দূরে। নিয়ে যাও
ফিলাডেলফিয়ায়
ভোরের দিকে।
আলো ফুটছে ঘাসে
সীমানা রেখায় ভিজছে শিশির।
ম্যাসন-ডিকসন লাইনে আমি
খালি খালি পা।
রাউলা
এই যে, আপনার বিয়েতে আসতে পারিনি, তাই উপহার হিসাবে একটা বাক্স নিয়ে এলাম। এটা দেখে খালি মনে হতে পারে। এটা খালিই—আমি স্রেফ বাতাস ভরে দিয়েছিলাম। আপনি চাইলে এখানে যা খুশি রাখতে পারেন। চাইলে স্বাধীনতা পেয়ে একটা প্রশ্নও ছুড়ে দিতে পারেন: যাকে বিয়ের দাওয়াত দেয়া হয়নি, সে কীভাবে আপনার বিয়েতে আসবে? খাবে-দাবে, ছবি তুলবে? ম্যাস কমিউনিকেশনে এগুলাকে বলা হয় হিউম্যান ইন্টারেস্ট; তাই আগেই জেনে রাখুন—দাওয়াত ছাড়াও বিয়ে, খতনা এসব অনুষ্ঠানে যাওয়া যায়। না হলে, আপনি যে পৃথিবীতে এসেছেন, কেউ কি আপনাকে দাওয়াত দিয়ে এনেছিল?
ক্র্যাক
[There is no God in Heaven
And there is no Hell below
So says the great professor
Of all there is to know
But I've had the invitation
That a sinner can't refuse
And it's almost like salvation
It's almost like the blues
—Leonard Cohen]
সে বলল, লিওনার্দ কোহেন মারা গেছে।
আমি বললাম, লিওনার্দ কোহেন! কে উনি?
কোনো উত্তর এলো না।
সে তার গান ছাড়ল। কিছুক্ষণ কাঁদল।
আমি তাকে সান্ত্বনা দিলাম।
অথচ সান্ত্বনাটা আমারই বেশি
প্রয়োজন ছিল।
তার কাছে লিওনার্দ কোহেন মাত্র মরেছে,
আর আমার জন্যে তিনি মাত্র জন্ম নিলেন।
প্রাচীন দালানের মতো গায়কি তার।
চট্টেশ্বরী রোড
ক্রমাগত দীর্ঘ হয় শিরীষের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়া;
ঝরে যাওয়া পাতার ওপর ব্যাকুল প্রতিচ্ছবি পড়ে।
তার মধ্যে কেউ কেউ সিগারেটের ধোঁয়ার মতো
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে আসে। যার অর্ধেক উড়ে
যেতে যেতে বাকি অর্ধেক পরবর্তী নিশ্বাসের সঙ্গে
ভেতরে প্রবেশ করে। এ বিষয় নিয়ে ভাবতে ভাবতে
কড়া নাড়ে মধ্যদুপুর। এরপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হতে হতে
আবারও তাকে দীর্ঘ হওয়ার জন্য অপেক্ষা
করতে হয়।
গোসল
কিছু একটা লেখার জন্যে গোসল করি না
কতদিন; কাটি না নখ, চুল, যৎসামান্য
দাড়ি। আরও যা যা করার—তাও করছি।
কাপড় ধোয়া বন্ধ। কিছুদিন এক চোপড়ে
থাকছি। বিছানা ঝাড়ু দেয়া ভুলে গেছি।
প্যান্টের সাথে উঠে আসা বালি নিয়ে
ভাসছি।
পত্রিকার স্তূপ, না-পড়া বই: ক্রমশ জমা
হচ্ছে বালিশের পাশে। এশট্রে উপচে
পড়ছে অনেক না-লেখার কাছে। কাগজ,
কলম, অভিধান, সিগারেট, লাইটার সব
রেডি। এখন একটা ঘনঘোরের অপেক্ষা
করছি—
রুম ভর্তি মেঘ। কাগজের ওপর বৃষ্টি
হচ্ছে। চুলায় পানি গরম। এখন একটা
কবিতা হয়ে গেলেই গোসলের পর চা
খাব। আজকাল এভাবেই নিজের
শরীর ধুচ্ছি।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর

কবি ও গদ্যকার নাজমুস সাকিব রহমানের জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৩ সালে। পড়েছেন জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ। একমাত্র প্রকাশিত বই রাউলা (২০২০)।
সেলিং টু ফিলাডেলফিয়া
আসো মধ্যরাত। বেজে উঠো
নফলারের গিটারে।
ছুটে চলো দূরে। নিয়ে যাও
ফিলাডেলফিয়ায়
ভোরের দিকে।
আলো ফুটছে ঘাসে
সীমানা রেখায় ভিজছে শিশির।
ম্যাসন-ডিকসন লাইনে আমি
খালি খালি পা।
রাউলা
এই যে, আপনার বিয়েতে আসতে পারিনি, তাই উপহার হিসাবে একটা বাক্স নিয়ে এলাম। এটা দেখে খালি মনে হতে পারে। এটা খালিই—আমি স্রেফ বাতাস ভরে দিয়েছিলাম। আপনি চাইলে এখানে যা খুশি রাখতে পারেন। চাইলে স্বাধীনতা পেয়ে একটা প্রশ্নও ছুড়ে দিতে পারেন: যাকে বিয়ের দাওয়াত দেয়া হয়নি, সে কীভাবে আপনার বিয়েতে আসবে? খাবে-দাবে, ছবি তুলবে? ম্যাস কমিউনিকেশনে এগুলাকে বলা হয় হিউম্যান ইন্টারেস্ট; তাই আগেই জেনে রাখুন—দাওয়াত ছাড়াও বিয়ে, খতনা এসব অনুষ্ঠানে যাওয়া যায়। না হলে, আপনি যে পৃথিবীতে এসেছেন, কেউ কি আপনাকে দাওয়াত দিয়ে এনেছিল?
ক্র্যাক
[There is no God in Heaven
And there is no Hell below
So says the great professor
Of all there is to know
But I've had the invitation
That a sinner can't refuse
And it's almost like salvation
It's almost like the blues
—Leonard Cohen]
সে বলল, লিওনার্দ কোহেন মারা গেছে।
আমি বললাম, লিওনার্দ কোহেন! কে উনি?
কোনো উত্তর এলো না।
সে তার গান ছাড়ল। কিছুক্ষণ কাঁদল।
আমি তাকে সান্ত্বনা দিলাম।
অথচ সান্ত্বনাটা আমারই বেশি
প্রয়োজন ছিল।
তার কাছে লিওনার্দ কোহেন মাত্র মরেছে,
আর আমার জন্যে তিনি মাত্র জন্ম নিলেন।
প্রাচীন দালানের মতো গায়কি তার।
চট্টেশ্বরী রোড
ক্রমাগত দীর্ঘ হয় শিরীষের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়া;
ঝরে যাওয়া পাতার ওপর ব্যাকুল প্রতিচ্ছবি পড়ে।
তার মধ্যে কেউ কেউ সিগারেটের ধোঁয়ার মতো
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে আসে। যার অর্ধেক উড়ে
যেতে যেতে বাকি অর্ধেক পরবর্তী নিশ্বাসের সঙ্গে
ভেতরে প্রবেশ করে। এ বিষয় নিয়ে ভাবতে ভাবতে
কড়া নাড়ে মধ্যদুপুর। এরপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হতে হতে
আবারও তাকে দীর্ঘ হওয়ার জন্য অপেক্ষা
করতে হয়।
গোসল
কিছু একটা লেখার জন্যে গোসল করি না
কতদিন; কাটি না নখ, চুল, যৎসামান্য
দাড়ি। আরও যা যা করার—তাও করছি।
কাপড় ধোয়া বন্ধ। কিছুদিন এক চোপড়ে
থাকছি। বিছানা ঝাড়ু দেয়া ভুলে গেছি।
প্যান্টের সাথে উঠে আসা বালি নিয়ে
ভাসছি।
পত্রিকার স্তূপ, না-পড়া বই: ক্রমশ জমা
হচ্ছে বালিশের পাশে। এশট্রে উপচে
পড়ছে অনেক না-লেখার কাছে। কাগজ,
কলম, অভিধান, সিগারেট, লাইটার সব
রেডি। এখন একটা ঘনঘোরের অপেক্ষা
করছি—
রুম ভর্তি মেঘ। কাগজের ওপর বৃষ্টি
হচ্ছে। চুলায় পানি গরম। এখন একটা
কবিতা হয়ে গেলেই গোসলের পর চা
খাব। আজকাল এভাবেই নিজের
শরীর ধুচ্ছি।