সুষমা সরকারের একগুচ্ছ কবিতা
সুষমা সরকার
জীবন
নিয়মবিহীন অর্থহীন জীবন!
অথবা অর্থময় জীবন!
সফলতা-বিফলতা ধ্বংস-গড়া
জীবনের মানে কেমন ধোঁয়াশায় ভরা।
জীবন কখনো ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলে থাকা দড়ি
কখনো শরতের আকাশে মেঘের ওড়াউড়ি।
জীবন নষ্ট হয়, পচে যায়, গলে যায়, মরে যায়, বয়ে যায়
সময়ের মতো চলে যায়।
আবার সে ফিরে ফিরে আসে।
আবার জীবন জন্ম নেয়, বেড়ে ওঠে,
প্রস্ফুটিত হয়, বিস্ফোরিত হয়।
জীবনের ভেতর আর এক নতুন জীবন অঙ্কুরিত হয়।
সে জীবন রোদের মতো
সে জীবন জলের মতো
সে জীবন বাতাসের মতো
তাকে ধরে রাখা যায় না, ছুঁয়ে থাকা যায় না,
তাকে নিয়ম করে বেঁধে রাখা যায় না।
জীবন তখন এক যৌবনবতী নদী।
তাকে অনুভব করা যায়
ভালোবাসার মতো জড়িয়ে নেওয়া যায়।
মুক্ত আলোর মতো ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
পাহাড়ি ঢলের মতো বইয়ে দেওয়া যায়।
জীবনের গভীরে জন্ম নেওয়া জীবন এমনি উচ্ছৃঙ্খল।
২৫ জুলাই ২০২০
স্বপ্ন
মাথার ভিতর স্বপ্নেরা ঘুরে বেড়ায়,
উড়ে বেড়ায়
তারা মিছিল করে, মিটিং করে
কিংবা আন্দোলন করে,
মাথা ফেটে বেড়িয়ে আসার আয়োজন করে।
স্বপ্নের দল ছড়িয়ে পড়ে দুঃস্বপ্নের বাজারে
তারা লড়াই করে
ভাঙচুর করে,আর্তনাদ করে
সমুদ্রের ঢেউয়ের মতন আছড়ে পড়ে।
তারা ধূসর আকাশে রংধনু হয়ে ফোটে।
অহর্নিশ স্বপ্নরা দল বাঁধে, ডানা মেলে।
স্বপ্নগুচ্ছ বাস্তবতা চায়
তারা রাজনৈতিক হতে চায়।
ছোট্ট শিশুর তুলতুলে গাল হতে চায়
শিমুল তুলার মতো ভাসতে চায়
জোনাক পোকার মতো জ্বলতে চায়।
স্বপ্ন দল বাস্তব হতে চায়,
প্রাঞ্জল সত্য হতে চায়।
২৯ জুলাই ২০২০
অরুণিমা
অরুণিমা তুমি কেন নারী হয়ে জন্মালে?
তুমি গাছ হয়ে জন্মাতে পারতে,
অথবা সমুদ্র কিংবা পাহাড়?
তুমি তো আকাশ হলেও পারতে?
কেন নারী হয়ে জন্মালে?
তোমার শরীরের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে সন্ত্রাসের আলামত।
তুমি তো সন্ত্রাসী।
অরুণিমা এই একবিংশ শতাব্দীর সভ্য পৃথিবীতে তুমি কেন সন্ত্রাসের জন্ম দিলে?
তুমি তো অপরাধী।
তোমার শরীর পুরুষকে উন্মাদিত করে
তাকে তুমি ধর্ষক করে তোলো
তুমি তো তবে অপরাধী।
এবার কিন্তু তোমার ফাঁসি হবে।
অরুণিমা কেন নারী হয়ে জন্মালে?
তুমি কেন রোদ হলে না?
রোদ ও কিন্তু উত্তাপ দেয়
তবে সে উত্তাপে কোন উন্মাদনা জাগে না।
তাই রোদ অপরাধী না।
কিন্তু তুমি তো অপরাধী; কারণ তোমার শরীরের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে উন্মাদিত হবার রসদ।
কেন তুমি অপরাধী হয়ে জন্মালে?
তুমি তো বৃষ্টি হতে পারতে?
হ্যাঁ কখনো কখনো তুমি বৃষ্টির মতো ভিজাও হয়তো।
কিন্তু সেই বৃষ্টিতে কজন ভিজতে পারে?
অরুণিমা কেন তুমি নারী হয়ে জন্মালে?
নারী হয়ে জন্মে আরও হাজারো নারীর জন্ম দিলে?
তাদের একেক জনের একেক রকম অপরাধ
অপরাধে অপরাধে সভ্য পৃথিবীটাকে তুমি অসভ্য করে তুললে!
নারী… তুমি একটা অসভ্য।
১৩ আগস্ট ২০২১
সহবাস
প্রেম, ভালোবাসা, যৌনতা
প্রত্যেকের সাথে আলাদা সহবাস করতে চায় নীরা
প্রেম-ভালোবাসাহীন যৌনতা; কতোটা অর্গাজম ঘটায়!
নাকি ঘটায় না, অথবা ঘটায়
যদি ঘটায় তবে কেমন তার অনুভূতি
সহবাস করে দেখতে চায় নীরা।
যেমন করে প্রেমহীন বিবাহ বন্ধনে
বছরের পর বছর
শুধুমাত্র যৌনতার সাথে সহবাস করে নারী;
কখনো বা পুরুষ
প্রেম আর ভালোবাসা;
শব্দের বৈচিত্র্য ছাড়া কতোটা বৈচিত্র্যময় তারা!
নাকি একই বৃক্ষে দুই বৃন্তে ফোটা ফুল তারা!
তাবৎ পৃথিবীর সাথে প্রেম করা যায়
ভালোও বাসা যায়;
সেথায় যৌনতা কোথায়!
যৌনতা তবে একা কেমন?
প্রেম-ভালোবাসাহীন রগরগে যৌনতার সাথে
সহবাস তবে কেমন হবে!
যৌনাঙ্গের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেলে
সহবাস আর কি সম্ভব হবে!
নীরা তা উপলব্ধি করতে চায়।
আর যৌনতাবিহীন প্রেম বা ভালোবাসা;
কেমন তারা?
প্রেম হারিয়ে গেলে; ভালোবাসা ফুরিয়ে গেলে
সহবাস কি সম্ভব তবে?
উপলব্ধি করতে চায় নীরা।
প্রেম ভালোবাসায় পূর্ণ যে যৌনতা
কেমন তা!
উপলব্ধি করতে চায় নীরা।
০৬ এপ্রিল ২০২১
মৃত্যু
শহরজুড়ে কেবলই অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বেজে চলে;
নাকি মৃত্যুর সাইরেন!
রাত গভীরে আকাশ জমিনে জেগে থাকা তারারা
তখনো কি একই রকম জ্বলজ্বল করে জ্বলে!
নাকি পৃথিবীর মৃত্যু-মিছিলে ধূসর হয় তারা?
মৃত্যু; কী অদ্ভুত এক শব্দ,
কী অদ্ভুত এক অনুভূতি,
কী ভয়ংকর রহস্যে ঘেরা এই মৃত্যু।
সুখমৃত্যু কী হয় কখনো!
নাকি মৃত্যু কেবলই শোকের
ভয়ানক বীভৎসতায় ঢাকা; দম বন্ধ করা এক শব্দ মৃত্যু।
আত্মহননে যে মৃত্যুর জন্ম হয়
তাকে কি সুখমৃত্যু বলা যায়?
নাকি তা জন্মের প্রতি এক ভয়ানক প্রতিশোধ?
মৃত্যু যত ভয়ংকর বীভৎস শোকেরই হোক
জীবনের চেয়ে তেজদীপ্ত নয় সে কখনোই।
তাই আর নয় মৃত্যুর সাইরেন।
মৃত্যুর আজ হোক তবে মৃত্যু,
জন্ম হোক গভীরতম অনন্ত জীবনের।
৭ এপ্রিল ২০২১
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর

জীবন
নিয়মবিহীন অর্থহীন জীবন!
অথবা অর্থময় জীবন!
সফলতা-বিফলতা ধ্বংস-গড়া
জীবনের মানে কেমন ধোঁয়াশায় ভরা।
জীবন কখনো ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলে থাকা দড়ি
কখনো শরতের আকাশে মেঘের ওড়াউড়ি।
জীবন নষ্ট হয়, পচে যায়, গলে যায়, মরে যায়, বয়ে যায়
সময়ের মতো চলে যায়।
আবার সে ফিরে ফিরে আসে।
আবার জীবন জন্ম নেয়, বেড়ে ওঠে,
প্রস্ফুটিত হয়, বিস্ফোরিত হয়।
জীবনের ভেতর আর এক নতুন জীবন অঙ্কুরিত হয়।
সে জীবন রোদের মতো
সে জীবন জলের মতো
সে জীবন বাতাসের মতো
তাকে ধরে রাখা যায় না, ছুঁয়ে থাকা যায় না,
তাকে নিয়ম করে বেঁধে রাখা যায় না।
জীবন তখন এক যৌবনবতী নদী।
তাকে অনুভব করা যায়
ভালোবাসার মতো জড়িয়ে নেওয়া যায়।
মুক্ত আলোর মতো ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
পাহাড়ি ঢলের মতো বইয়ে দেওয়া যায়।
জীবনের গভীরে জন্ম নেওয়া জীবন এমনি উচ্ছৃঙ্খল।
২৫ জুলাই ২০২০
স্বপ্ন
মাথার ভিতর স্বপ্নেরা ঘুরে বেড়ায়,
উড়ে বেড়ায়
তারা মিছিল করে, মিটিং করে
কিংবা আন্দোলন করে,
মাথা ফেটে বেড়িয়ে আসার আয়োজন করে।
স্বপ্নের দল ছড়িয়ে পড়ে দুঃস্বপ্নের বাজারে
তারা লড়াই করে
ভাঙচুর করে,আর্তনাদ করে
সমুদ্রের ঢেউয়ের মতন আছড়ে পড়ে।
তারা ধূসর আকাশে রংধনু হয়ে ফোটে।
অহর্নিশ স্বপ্নরা দল বাঁধে, ডানা মেলে।
স্বপ্নগুচ্ছ বাস্তবতা চায়
তারা রাজনৈতিক হতে চায়।
ছোট্ট শিশুর তুলতুলে গাল হতে চায়
শিমুল তুলার মতো ভাসতে চায়
জোনাক পোকার মতো জ্বলতে চায়।
স্বপ্ন দল বাস্তব হতে চায়,
প্রাঞ্জল সত্য হতে চায়।
২৯ জুলাই ২০২০
অরুণিমা
অরুণিমা তুমি কেন নারী হয়ে জন্মালে?
তুমি গাছ হয়ে জন্মাতে পারতে,
অথবা সমুদ্র কিংবা পাহাড়?
তুমি তো আকাশ হলেও পারতে?
কেন নারী হয়ে জন্মালে?
তোমার শরীরের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে সন্ত্রাসের আলামত।
তুমি তো সন্ত্রাসী।
অরুণিমা এই একবিংশ শতাব্দীর সভ্য পৃথিবীতে তুমি কেন সন্ত্রাসের জন্ম দিলে?
তুমি তো অপরাধী।
তোমার শরীর পুরুষকে উন্মাদিত করে
তাকে তুমি ধর্ষক করে তোলো
তুমি তো তবে অপরাধী।
এবার কিন্তু তোমার ফাঁসি হবে।
অরুণিমা কেন নারী হয়ে জন্মালে?
তুমি কেন রোদ হলে না?
রোদ ও কিন্তু উত্তাপ দেয়
তবে সে উত্তাপে কোন উন্মাদনা জাগে না।
তাই রোদ অপরাধী না।
কিন্তু তুমি তো অপরাধী; কারণ তোমার শরীরের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে উন্মাদিত হবার রসদ।
কেন তুমি অপরাধী হয়ে জন্মালে?
তুমি তো বৃষ্টি হতে পারতে?
হ্যাঁ কখনো কখনো তুমি বৃষ্টির মতো ভিজাও হয়তো।
কিন্তু সেই বৃষ্টিতে কজন ভিজতে পারে?
অরুণিমা কেন তুমি নারী হয়ে জন্মালে?
নারী হয়ে জন্মে আরও হাজারো নারীর জন্ম দিলে?
তাদের একেক জনের একেক রকম অপরাধ
অপরাধে অপরাধে সভ্য পৃথিবীটাকে তুমি অসভ্য করে তুললে!
নারী… তুমি একটা অসভ্য।
১৩ আগস্ট ২০২১
সহবাস
প্রেম, ভালোবাসা, যৌনতা
প্রত্যেকের সাথে আলাদা সহবাস করতে চায় নীরা
প্রেম-ভালোবাসাহীন যৌনতা; কতোটা অর্গাজম ঘটায়!
নাকি ঘটায় না, অথবা ঘটায়
যদি ঘটায় তবে কেমন তার অনুভূতি
সহবাস করে দেখতে চায় নীরা।
যেমন করে প্রেমহীন বিবাহ বন্ধনে
বছরের পর বছর
শুধুমাত্র যৌনতার সাথে সহবাস করে নারী;
কখনো বা পুরুষ
প্রেম আর ভালোবাসা;
শব্দের বৈচিত্র্য ছাড়া কতোটা বৈচিত্র্যময় তারা!
নাকি একই বৃক্ষে দুই বৃন্তে ফোটা ফুল তারা!
তাবৎ পৃথিবীর সাথে প্রেম করা যায়
ভালোও বাসা যায়;
সেথায় যৌনতা কোথায়!
যৌনতা তবে একা কেমন?
প্রেম-ভালোবাসাহীন রগরগে যৌনতার সাথে
সহবাস তবে কেমন হবে!
যৌনাঙ্গের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেলে
সহবাস আর কি সম্ভব হবে!
নীরা তা উপলব্ধি করতে চায়।
আর যৌনতাবিহীন প্রেম বা ভালোবাসা;
কেমন তারা?
প্রেম হারিয়ে গেলে; ভালোবাসা ফুরিয়ে গেলে
সহবাস কি সম্ভব তবে?
উপলব্ধি করতে চায় নীরা।
প্রেম ভালোবাসায় পূর্ণ যে যৌনতা
কেমন তা!
উপলব্ধি করতে চায় নীরা।
০৬ এপ্রিল ২০২১
মৃত্যু
শহরজুড়ে কেবলই অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বেজে চলে;
নাকি মৃত্যুর সাইরেন!
রাত গভীরে আকাশ জমিনে জেগে থাকা তারারা
তখনো কি একই রকম জ্বলজ্বল করে জ্বলে!
নাকি পৃথিবীর মৃত্যু-মিছিলে ধূসর হয় তারা?
মৃত্যু; কী অদ্ভুত এক শব্দ,
কী অদ্ভুত এক অনুভূতি,
কী ভয়ংকর রহস্যে ঘেরা এই মৃত্যু।
সুখমৃত্যু কী হয় কখনো!
নাকি মৃত্যু কেবলই শোকের
ভয়ানক বীভৎসতায় ঢাকা; দম বন্ধ করা এক শব্দ মৃত্যু।
আত্মহননে যে মৃত্যুর জন্ম হয়
তাকে কি সুখমৃত্যু বলা যায়?
নাকি তা জন্মের প্রতি এক ভয়ানক প্রতিশোধ?
মৃত্যু যত ভয়ংকর বীভৎস শোকেরই হোক
জীবনের চেয়ে তেজদীপ্ত নয় সে কখনোই।
তাই আর নয় মৃত্যুর সাইরেন।
মৃত্যুর আজ হোক তবে মৃত্যু,
জন্ম হোক গভীরতম অনন্ত জীবনের।
৭ এপ্রিল ২০২১