ঢাকায় আন্দোলন জোরদারের ঘোষণা বিএনপি নেতাদের
আহসান হাবীব অপু, রাজশাহী | ২ মার্চ, ২০২১ ২২:৩৪
ঢাকার আন্দোলনে রাজপথে রক্ত ঝরলে সাতদিনে বর্তমান সরকারের হবে। মঙ্গলবার বিকালে রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে এমন মন্তব্য করেন বিএনিপ নেতারা। ঢাকায় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতিমধ্যে রাজপথ উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। অচিরেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। এই আন্দোলনে সবাইকে সামিল হতে হবে।
বিএনপি নেতারা বলেন, সকল রুটের বাস, ছোটছোট যানবাহন বন্ধ করে, পথে পথে বাধা দিয়েও সরকার বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে মানুষকে থামাতে পারেনি। আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। এখন আন্দোলন বেগবান করে সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
রাজশাহী মহানগরীর মাদরাসা ময়দানসংলগ্ন নাইস কনভেনশন সেন্টারের সামনে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
তিনি বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সে প্রস্তুত আছি। জীবনের শেষবিন্দু রক্ত দিয়ে হলেও গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে আমি আছি। সবাই প্রস্তুতি নিন।’
সমাবেশে টুকু বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চের রাতে দেশের স্বাধীনতার জন্য যে পুলিশ সবচেয়ে বেশি ত্যাগ করেছে, স্বাধীন দেশে সেই পুলিশ একটি দলের কর্মীবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। দেশ এখন দুর্নীতিতে ভরে গেছে। ফরিদপুরের ছাত্রলীগ সভাপতিই দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। তাহলে রাঘব-বোয়ালরা কত টাকা পাচার করেছে, তার হিসাব দেশের জনগণ নেবে’।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ এখন সরকারি দলের কর্মী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার আগে থেকেই দেশের নানা সমস্যার সমাধান হয়েছে রাজপথে। এবারও রাজপথেই ফয়সালা হবে।’
দেশব্যাপী নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন, ভোট চুরি ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লে. কর্নেল (অব.) আব্দুল লতিফ ঢাকা থেকে আন্দোলন জোরদার করার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সাত দিনের মধ্যে সরকারের পতন দেখতে পাব। এর জন্য ঢাকার রাজপথে রক্ত দিতে হবে। রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রামে আন্দোলন করে কিছু হবে না। ঢাকাকে সুসংগঠিত করতে হবে।’
পরে বক্তব্য দেওয়ার সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন ঢাকায় আন্দোলন জোরদার করার ঘোষণা দেন। ইশরাক বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আজ একটা সুন্দর পরিবেশ থাকার কথা ছিল। তার বদলে আমাদের আন্দোলনের বার্তা নিয়ে রাজশাহী আসতে হয়েছে। আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে।’
তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আজ জাতীয় ভোটার দিবস। অথচ মানুষ ভোটই দিতে পারে না। আমরা এমন অবস্থা চাই না। সে কারণে আন্দোলনের আর কোন বিকল্প নেই।’
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার, হারুনর রশিদ এমপি, রাজশাহী বিভাগীর সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শামসুল হক প্রামাণিক, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফা, দেশের ছয়টি সিটি করপোরেশনে অংশ নেয়া বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
সমাবেশ পরিচালনা করেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। সমাবেশে বিভাগের আট জেলার সভাপতি ও সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশ নেন।
বিএনপির এ সমাবেশকে ঘিরে সেসামবার সকাল থেকে রাজশাহীর সঙ্গে দেশের সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বিভিন্ন যানবাহনে সমাবেশে আসেন। দুপুরের পর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তারা সমাবেশে যোগ দেন। পথে পথে পুলিশ সদস্যরা তল্লাশি করে। সমাবেশ ঘিরে রাজশাহীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় ছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সমাবেশস্থলে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল জলকামান, এপিসি যান এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি করে গাড়ি।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
আহসান হাবীব অপু, রাজশাহী | ২ মার্চ, ২০২১ ২২:৩৪

ঢাকার আন্দোলনে রাজপথে রক্ত ঝরলে সাতদিনে বর্তমান সরকারের হবে। মঙ্গলবার বিকালে রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে এমন মন্তব্য করেন বিএনিপ নেতারা। ঢাকায় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতিমধ্যে রাজপথ উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। অচিরেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। এই আন্দোলনে সবাইকে সামিল হতে হবে।
বিএনপি নেতারা বলেন, সকল রুটের বাস, ছোটছোট যানবাহন বন্ধ করে, পথে পথে বাধা দিয়েও সরকার বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে মানুষকে থামাতে পারেনি। আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। এখন আন্দোলন বেগবান করে সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
রাজশাহী মহানগরীর মাদরাসা ময়দানসংলগ্ন নাইস কনভেনশন সেন্টারের সামনে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
তিনি বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সে প্রস্তুত আছি। জীবনের শেষবিন্দু রক্ত দিয়ে হলেও গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে আমি আছি। সবাই প্রস্তুতি নিন।’
সমাবেশে টুকু বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চের রাতে দেশের স্বাধীনতার জন্য যে পুলিশ সবচেয়ে বেশি ত্যাগ করেছে, স্বাধীন দেশে সেই পুলিশ একটি দলের কর্মীবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। দেশ এখন দুর্নীতিতে ভরে গেছে। ফরিদপুরের ছাত্রলীগ সভাপতিই দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। তাহলে রাঘব-বোয়ালরা কত টাকা পাচার করেছে, তার হিসাব দেশের জনগণ নেবে’।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ এখন সরকারি দলের কর্মী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার আগে থেকেই দেশের নানা সমস্যার সমাধান হয়েছে রাজপথে। এবারও রাজপথেই ফয়সালা হবে।’
দেশব্যাপী নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন, ভোট চুরি ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লে. কর্নেল (অব.) আব্দুল লতিফ ঢাকা থেকে আন্দোলন জোরদার করার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সাত দিনের মধ্যে সরকারের পতন দেখতে পাব। এর জন্য ঢাকার রাজপথে রক্ত দিতে হবে। রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রামে আন্দোলন করে কিছু হবে না। ঢাকাকে সুসংগঠিত করতে হবে।’
পরে বক্তব্য দেওয়ার সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন ঢাকায় আন্দোলন জোরদার করার ঘোষণা দেন। ইশরাক বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আজ একটা সুন্দর পরিবেশ থাকার কথা ছিল। তার বদলে আমাদের আন্দোলনের বার্তা নিয়ে রাজশাহী আসতে হয়েছে। আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে।’
তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আজ জাতীয় ভোটার দিবস। অথচ মানুষ ভোটই দিতে পারে না। আমরা এমন অবস্থা চাই না। সে কারণে আন্দোলনের আর কোন বিকল্প নেই।’
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার, হারুনর রশিদ এমপি, রাজশাহী বিভাগীর সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শামসুল হক প্রামাণিক, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফা, দেশের ছয়টি সিটি করপোরেশনে অংশ নেয়া বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
সমাবেশ পরিচালনা করেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। সমাবেশে বিভাগের আট জেলার সভাপতি ও সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশ নেন।
বিএনপির এ সমাবেশকে ঘিরে সেসামবার সকাল থেকে রাজশাহীর সঙ্গে দেশের সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বিভিন্ন যানবাহনে সমাবেশে আসেন। দুপুরের পর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তারা সমাবেশে যোগ দেন। পথে পথে পুলিশ সদস্যরা তল্লাশি করে। সমাবেশ ঘিরে রাজশাহীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় ছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সমাবেশস্থলে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল জলকামান, এপিসি যান এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি করে গাড়ি।