
রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকার নাইটিঙ্গেল মোড়-ফকিরাপুল এবং ফকিরাপুল-নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত দুই দিকের রাস্তা জনসাধারণের জন্য খুলে দিয়েছে পুলিশ। রাস্তা খুলে দিলেও গাড়িতে টহল অব্যাহত আছে।
বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেল চারটার দিকে চলাচলের সড়ক দুটি খুলে দেয় পুলিশ। এর আগে, বুধবার বিকেলে বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর ওই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এদিকে, রাস্তা খুলে দেওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই বিএনপি কর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে রাস্তার দখল নিতে চাইছে। তারা মিছিল-স্লোগান না দিলেও পার্টি অফিস এবং আশপাশের রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন।
অন্যদিকে, পুলিশ রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বিএনপি কার্যালয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে মিছিল নিয়ে যান। ‘বিএনপির গুণ্ডারা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘রাজপথে নামবি না, পিঠের চামড়া থাকবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। পুলিশ সদস্যরা মিছিলে বাধা দেয়নি।
বিএনপির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমরা চিৎকার করলেও আওয়ামী লীগ ভয় পায় আবার নিরব থাকলেও ভয় পায়।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও ১০ দফা দাবি আদায়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পদযাত্রা কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে দুপুর ১টা থেকেই নেতাকর্মীরা কমলাপুর এলাকায় এসে জড়ো হতে থাকেন। কমলাপুর স্টেডিয়ামের সামনে থেকে শুরু হয়ে খিলগাঁও মোড় হয়ে মালিবাগ বাজারের সামনে গিয়ে এই পদযাত্রা শেষ হয়।
মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা বলিনি মন্ত্রীত্ব দেন, বিএনপির জন্য গদি ছেড়ে দেন। জনগণের দাবি নিয়ে কথা বলছি। আমাদের পদযাত্রা জনগণের দাবি নিয়ে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে আমরা যদি চিৎকার করি আওয়ামী লীগ ভয় পায়। নিরব থাকলেও আওয়ামী লীগ ভয় পায়। বিএনপির পদযাত্রায় আজকে যে রাস্তা প্রকম্পিত হচ্ছে, সে কারণে তারা ভয় পেয়েছে।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। বিদ্যুৎমন্ত্রী বললেন মাসে-মাসে সমন্বয় করা হবে। ভাবটা এরকম যেন এটা কারো একটা রাজত্ব। রাজার হুকুম মতো দেশ চলবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের হুকুম মতো দেশ চলবে, কারও রাজতন্ত্রে নয়। তবে এখন তো কোনো সরকার নেই। একটা অবৈধ দানব আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে। এই দানবকে ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ আজ মাইকিং করে ভোটারদের কেন্দ্রে ডাকছে। কেন্দ্রে ভোটার নেই, কুকুর দেখা যাচ্ছে। কারণ, জনগণ এই প্রহসনের নির্বাচন বয়কট করেছে।
আব্বাস বলেন, এই পদযাত্রা আওয়ামী লীগের পতন যাত্রা। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষায়। আজকে আমি মুগদা থেকে হেঁটে আসলাম। রাস্তায় মানুষের উপস্থিতির কারণে সুঁই ফেলারও যায়গা নেই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এ দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয় মানুষ। কিন্তু তারা প্রয়োজনে এমন শক্ত হয় তখন তাদের মতো আর কেউ নেই। এই সরকারকে এখন মানুষ বিশ্বাস করে না। হাসিনা সরকার আগে বলেছে ঘরে ঘরে চাকরি, এখন দিচ্ছেন উপদেশ। ব্যবসা করেন।
পদযাত্রা কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায় আব্দুস সালাম। সঞ্চালনা করেন ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু। পদযাত্রায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন, মীর সরাফত আলী সপু, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, ডা. রফিকুল ইসলাম, নবী উল্লাহ নবী, কাজী আবুল বাশার, লিটন মাহমুদ, রবিন, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, সাইফুল আলম নিরব, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস।
এর আগে গত শনিবার (২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর বাড্ডা থেকে রামপুরা হয়ে মালিবাগ হোটেল পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে এ পদযাত্রা শুরু হয়ে শ্যামপুর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) গাবতলি থেকে শুরু হয়ে মাজার রোড হয়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্ত্বর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেছেন, বিএনপি নেতাদের অধিকার বা দক্ষতা নাই এই দেশ পরিচালনা করার। আপনাদের চেয়ারম্যান দুর্নীতির দায় গ্রস্ত; আপনি কার মুখপাত্র? আওয়ামী লীগ সরকারে ক্ষমতাচ্যুত করার শক্তি বিএনপি জামায়াতের নেই।
আজ বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দেশব্যাপী বিএনপি-জামাতের নৈরাজ্য ও তাণ্ডবের প্রতিবাদে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল, সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা, সঞ্চালনা করেন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা।
শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, আজ যুব সমাজ ঐক্যবদ্ধ। যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য রাজপথে তারা ঐক্যবদ্ধ। তারা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার অত্যন্ত প্রহরীর মতো রাজপথে থেকে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখে।
পরশ বলেন, বিএনপি জামায়াতের কৌশল আমাদেরকে অত্যাচারী এবং কর্তৃত্ববাদী সরকার হিসাবে বহির্বিশ্বে উপস্থাপন করা। এত নমনীয়তার পরও আমরা নাকি অত্যাচারী সরকার। ওরা মিথ্যাচারী ও পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চায়, বিভিন্ন রকম উসকানি দিতে চেষ্টা করবে। আমরা ওদের ফাঁদে পা দেব না। ওরা প্রতারণায় এবং প্রোপাগান্ডায় ভীষণ ভাবে পটু। কিন্তু রাজপথে আমরা এক ইঞ্চি ও ছাড় দেব না। আমাদের ব্ল্যাকমেল করার সুযোগ দেব না।
বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, এই ঢাকার রাজপথে আপনারা পোস্টার হয়েছেন, নুর হোসেন, ফাত্তাহ বাবুল হয়েছেন। তারপরেও দেশের স্বার্থে, সংগঠনের স্বার্থে, বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রশ্নে যুবলীগ আপোস করে নাই, যুবলীগ আপস করতে জানে না।
তিনি যুবলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেমনি করে বিগত দিনে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথ আগলে রেখে প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথে মানুষের কল্যাণে, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আপনারা সব সময় কাজ করেছেন। আগামী নির্বাচনেও সেই সাহসিকতা আর বীরত্বের সঙ্গে রাজপথে থাকবেন। বিএনপি-জামাতের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আবারও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে ঘরে ফিরবেন।
উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য- অ্যাড. মামুনুর রশিদ, মঞ্জুর আলম শাহীন, হাবিবুর রহমান পবন, মোঃ নবী নেওয়াজ, মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মৃনাল কান্তি জোদ্দার, মোঃ জসিম মাতুব্বর, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জহির উদ্দিন খসরু, আবু মুনির মোঃ শহিদুল হক চৌধুরী রাসেল, মশিউর রহমান চপল, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, দপ্তর সম্পাদক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ জহুরুল ইসলাম মিল্টন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক মোঃ শামছুল আলম অনিক, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মোঃ হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা, উপ- দপ্তর সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক অ্যাড. শেখ নবীরুজ্জামান বাবু, উপ-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এন আই আহমেদ সৈকত, উপ- ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মো: আব্দুর রহমান, উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক- শামসুল ইসলাম পাটোয়ারী, উপ-কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মোল্লা রওশন জামির রানা, উপ- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক েেমা: গোলাম কিবরিয়া শামীম, উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হরে কৃষ্ণ বৈদ্য, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সহ-সভাপতি সোহরাব হোসেন স্বপন, আনোয়ার ইকবাল সান্টু, নাজমুল হোসেন টুটুল, মুরসালিম আহম্মেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু, মাকসুদুর রহমান, কাজী ইব্রাহীম খলিল মারুফ, দপ্তর সম্পাদক এমদাদুল হক এমদাদ, অর্থ সম্পাদক ফিরোজ উদ্দিন আহম্মেদ সায়মন, উপ-দপ্তর সম্পাদক খন্দকার আরিফ-উজ-জামান, উপ-শিক্ষা ও পাঠাগার-আলতাফ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।
রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের জনসভা হয়েছে রবিবার (২৯ জানুয়ারি)। সাম্প্রতিক সময়ের বড় এই জনসভা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনাকে উসকে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসাদুজ্জামান আসাদকে মঞ্চে ডাকার বিষয়টি।
আসাদ রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ২০১৮ সালে সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়ার পর থেকেই তিনি কোণঠাসা। এর জেরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি আসাদকে মঞ্চে ওঠার পাশ দেননি। তবে সভাপতি শেখ হাসিনা জনসভায় উপস্থিত হয়ে আসাদকে দেখতে না পেয়ে ডেকে পাঠান। এ ঘটনা এখন ‘টক অব দা টাউন’।
রোববার রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের জনসভা। মঞ্চে ওঠার পাশ না পেয়ে সভাস্থলের বাইরের সড়কে দাঁড়িয়ে জনসভা শুনছিলেন আসাদুজ্জামান আসাদসহ কয়েকজন প্রবীণ নেতা। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতারা জনসভা মঞ্চের পাশ না দেওয়ায় তিনি মাঠের ভেতর ঢুকতে পারেননি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকাল ৪টার কিছুক্ষণ আগে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের জনসভা মঞ্চে ওঠার পরই নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি মঞ্চে থাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে জানতে চান আসাদ কোথায়? প্রধানমন্ত্রী কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকেও জিজ্ঞেস করেন আসাদ কোথায়?
তারা জানান, আসাদকে মঞ্চের পাশ দেওয়া হয়নি। এ কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী নেতাদের ওপর অসন্তুষ্ট হন এবং আসাদকে মঞ্চে ডেকে আনতে বলেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা আসাদের খোঁজ শুরু করেন। স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও খোঁজ লাগান তার। মোবাইলে খবর পেয়ে মঞ্চে ওঠেন আসাদ। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন।
জনসভা মঞ্চে উপস্থিত নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে সালাম দেন আসাদুজ্জামান আসাদ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আসাদের কাছে জানতে চান, ‘তুমি মঞ্চে নেই কেন’? আসাদ উত্তর দেন, ‘মঞ্চে আসার জন্য আমাকে পাশ দেওয়া হয়নি। বাইরে দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুনছিলাম’। এরপর প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতার কাছে প্রশ্ন করেন, ‘আসাদ মঞ্চে নেই কেন? তাকে কেন পাশ দেওয়া হয়নি?’ এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আসাদ সব সময় নৌকার বিরোধিতা করেন। এ কারণে তাকে পাশ দেওয়া হয়নি। দলের নেতাকর্মীরা তার প্রতি ক্ষুব্ধ’।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী আসাদকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এই তুমি নৌকার বিরোধিতা কর কেন?’ জবাবে আসাদ বলেন, ‘আমি কখনো নৌকার বিরোধিতা করি না। যারা দলের নাম ভাঙিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেন, দল বিক্রি করে খান, জামায়াত-বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতা করেন, আমি শুধু তাদের বিরোধিতা করি’।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অনেক কিছুই শুনি। সে নৌকার বিরোধিতা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমি নেব। এ জন্য তাকে জনসভায় ডাকা হবে না কেন’?
জানতে চাইলে আসাদকে মঞ্চে ডেকে নেয়ার বিষয়ে কোনো কথা বলতে চান না স্থানীয় নেতারা।
মঞ্চে উপস্থিত এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, জেলার নেতারা যে ভুল করেছিলেন সেটাই নিশ্চিত হয়েছে। আসাদ মঞ্চে থাকলে হয়তো এ নিয়ে কোনো আলোচনা হতো না। তাকে মঞ্চ থেকে মাইনাস করতে গিয়ে উল্টো সে-ই বেশি আলোচিত হলো।
মঞ্চে ডেকে কী বিষয়ে কথা হয়েছে এ নিয়ে মুখ খুলতে চান না আসাদ নিজেও। তবে, তিনি দলের সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানো তার একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে আসাদুজ্জামান লেখেন, ‘কৃতজ্ঞতা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আপা।’
আসাদ জানান, প্রধানমন্ত্রী আমার ও সংগঠনের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। আমি তার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।
গত দুই দিন ধরে রাজশাহী শহরে আসাদকে মঞ্চে ডাকার বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত। বিশেষ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। এমনকি মঞ্চে আসাদকে প্রধানমন্ত্রীর ডেকে আনার বিষয়টিতে কার লাভ বা কার ক্ষতি, কে বড় হলো আর কে ছোট হলো-এ নিয়েও চলছে কানাকানি।
আসাদুজ্জামান ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে আসাদ রাজশাহী জেলার প্রতিটি এলাকায় আওয়ামী লীগকে ব্যাপকভাবে সংগঠিত করায় আলোচিত হন। তবে তাকে কোণঠাসা করতে জেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পদ হারানোর পরও তিনি জেলার সবগুলো উপজেলায় দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন। আসাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি উপজেলায় তিনি নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছেন। তার বলয়ে থাকা বেশির ভাগই সাবেক নেতাকর্মী। বড় অংশই প্রবীণ। আসাদের এ বলয়ের কারণে দলের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেন বর্তমান নেতাদের কেউ কেউ।
বিএনপি জনগণকে সাথে নিয়ে সঠিক পথে হাঁটছে উল্লেখ করে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হরণ-গুম-খুন-চুরি-দুর্নীতি-লুটপাটের চোরাবালিতে আটকে আছে। এখান থেকে তারা বের হতে পারছে না, আর বের হতে পারবেও না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা নিজেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চুরি-লুটপাটের জন্য দলকে চোরের খনি আখ্যায়িত করেছিলেন। আজও তারা সেখান থেকে বের হতে পারেনি। রিলিফের কম্বল চুরি দিয়ে শুরু করে ছাগল চুরি, ভোট চুরি থেকে রিজার্ভ চুরি, কোনো চুরি বাদ দিচ্ছে না তারা। বাকশাল কায়েম দিয়ে গণতন্ত্র হত্যা শুরু করেছিল। এখন গণতন্ত্র-ভোটাধিকার হরণ করে দেশের মালিকানা কেড়ে নিয়েছে। জনগণের জীবন, জীবিকা বিপন্ন করে তুলেছে।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ রেলস্টেশন চত্বরে ৪ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ সফল করতে এক পথসভায় বক্তব্য রাখছিলেন।
এর আগে, বিকেল থেকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্সের নেতৃত্বে নতুন বাজার থেকে গাঙ্গিনা পাড় হয়ে রেলওয়ে ষ্টেশন প্রদক্ষিণ করে। বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলমের নেতৃত্বে হরি কিশোর রায় রোড থেকে আঠার বাড়ী বিল্ডিং ,ছোট বাজার, বড় বাজার হয়ে রেলওয়ে ষ্টেশন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুনের নেতৃত্বে র্যালির মোড় থেকে রেলওয়ে ষ্টেশন পর্যন্ত নেতাকর্মীরা পদযাত্রা সহকারে প্রচারপত্র বিতরণ শেষে রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে পথ সভায় মিলিত হয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদকরা সকালে দলীয় কার্যালয়ে ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপি, দুপুরে ইতিকথা কমিউনিটি সেন্টারে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা যুবদল, সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে ময়মনসিংহ মহানগর যুবদল, রাতে একইস্থানে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা সংগঠনের প্রস্তুতি সভায় যোগ দিয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনদুর্ভোগ নিরসনের দাবিতে চলমান আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার যদি দাবি না মানে, তবে অভূত্থানের মাধ্যমে গণবিরোধী সরকারের পতন ঘটানো হবে। ৪ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
শরীফুল আলম বলেন, সরকারের ব্যর্থতায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। লুটপাটের ক্ষতি পোষাতে দফায় দফায় বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটছে সরকার। দেশের বেহাল অবস্থার জন্য সরকারের দুর্নীতি-লুটপাট-অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত-অব্যবস্থাপনা দায়ী।
বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, শেখ আমজাদ আলী,কাজী রানা,শাহ শিব্বির আহমেদ বুলু, ফারজানা রহমান হোসনা, অ্যাড. এম এ হান্নান খান, শামীম আজাদ, মাহবুবুল আলম বক্তব্য রাখেন।
রাজধানীতে পদযাত্রা নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারি দলের নেতাদের সমালোচনার জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আপনাদের সময় শেষ; আগামীতে হবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বাংলাদেশ। সে জন্য আমরা আপনাদের বিদায়ের অগ্রীম শোভাযাত্রা হিসেবে এ পদযাত্রা করছি।’
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গাবতলীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে তৃতীয় দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
শনিবার রাজধানীর বাড্ডা থেকে রামপুরা হয়ে মালিবাগ হোটেল পর্যন্ত প্রথম পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। এরপর সোমবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে দ্বিতীয় পদযাত্রা শুরু হয়ে শ্যামপুর পর্যন্ত। এ কর্মসূচি পালন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।
বুধবার রাজধানীর মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত চতুর্থ পদযাত্রা করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। মঙ্গলবার তৃতীয় পদযাত্রার আগে দুপুর ১২টা থেকে নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে গাবতলী বাস টার্মিনালের আরিচা সড়কে সমবেত হন।
নেতাকর্মীরা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন। এ সময় সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেন তারা। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পদযাত্রা গাবতলী থেকে মাজার রোড হয়ে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আওয়মী লীগ ভয়ে ভীত হয়ে আমাদের পদযাত্রা নিয়ে নানা সমালোচনা করছে। আমরা আপনাদের বলতে চাই, আপনাদের সময় শেষ। আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বাংলাদেশ। অতএব প্রস্তুতি নিন। আমরা কিন্তু আপনাদের অগ্রিম বিদায়ের শোভাযাত্রা করছি এই পদযাত্রার মাধ্যমে।’
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা মনে করেছিলেন মামলা-নির্যাতন করে বিএনপিকে ঘরে বসিয়ে দেবেন। বিএনপি এবং দেশের জনগণ প্রমাণ করেছে, তারা বসে যায়নি, বরঞ্চ আপনাদের বিদায় করার জন্য রাস্তায় নেমেছে। আওয়ামী লীগ দেশের সব কিছু ধ্বংস করেছে। তাই তারা দেশের কোনো কিছু মেরামত করতে পারবে না। তাদের বিদায় যত দ্রুত সম্ভব হবে, জনগণ ও দেশের জন্য ততই মঙ্গল।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘বর্তমান দুর্নীতিবাজ, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটানোর জন্য, দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব হচ্ছে বিএনপির। কারণ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। আর খালেদা জিয়া দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। যাতে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়। সে জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যারা ধ্বংস করে দিয়েছে, তারা এ দেশে কোনোভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। সে জন্য এ সরকারকে বিদায় করতে হবে।’
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে এত লেখালেখি, বিদেশিরা এত চাপ দিচ্ছে, এরপরও কি পরিমাণ দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশে! দুর্নীতি দমন তো দূরের কথা, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ১৩ থেকে ১২ তে নেমে এসেছে। এই দুর্নীতি করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সিন্ডিকেট। সুতরাং তাদের পক্ষে দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকার মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করছে। তাদের বিদেশে টাকা পাচার, লুটপাটের কারণে ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। তারপরও বলে অর্থনীতি সবদিকে ভালো। তাহলে দ্রব্যমূল্য বাড়ে কেন? ১৯ দিন আগে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছিল, আজকে ফের ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। আবার বলেছে মাসে মাসে নাকি দাম বাড়াবে। তার মানে সরকারের হাতে টাকা নেই। জাহাজ এসে বসে আছে, টাকা দিতে পারে না সেজন্য মাল খালাস হয় না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘দেশের জনগণের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য সৃষ্টি করে এই সরকারের বিদায়ের আন্দোলনে আমরা অগ্রসর হব। অতি দ্রুত আমরা এই সরকারকে বিদায় দিতে সমর্থ হব।’
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, নাজিমুদ্দিন আলম, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নীরব, স্বে¯ে^চ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, সদস্য সচিব মোস্তফা জগলুল পাশা পাপেল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আদালতের রায় অমান্য করে বড় মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে পালিয়ে চেষ্টার সময় জাপানি নারী নাকানো এরিকোকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশ।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগেও তিনি তার দুই মেয়েকে নিয়ে জাপানে পালানোর চেষ্টা করলে আদালতের রায়ের কারণে ইমিগ্রেশন পুলিশ ফিরিয়ে দেয় তাদের। তবে এবার সে কোন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তা প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি।
বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের উপ-পরিদর্শক পদ মর্যাদা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই জাপানি মা তার বড় মেয়েকে নিয়ে বিদেশে গমনের জন্য আজ বিমানবন্দরে আসেন। এ বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাকে ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জাপানি মেয়েদের বাবা ইমরান শরিফের আইনি সহায়তা নেওয়া প্রতিষ্ঠান নাসিমা আক্তার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের কর্মকর্তা মির্জা মো. নাহিদ হাসান বলেন, আমরা সূত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি জাপানি মা তার বড় মেয়েকে নিয়ে আজ দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেন। এই নিয়ে তার বড় মেয়েকে নিয়ে দুইবার পালানোর চেষ্টা করেছেন তিনি।
সূত্র মতে, গত মাসেও তিনি সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করে পালাতে চেষ্টা করলে তার মেজ কন্যা লাইলা বাবাকে হারাবে বলে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে বাবার আশ্রয় নেয়। তাই এবার মেজ কন্যা তার সাথে ছিল না। এবারও প্রথমবারের মতো পালানোর সময় নাসরিন নাহার নামের এক বাংলাদেশি নারী নাকানোকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছিলেন। এ ঘটনায় বিমানবন্দরের পরিস্থিতি খারাপ দেখা দিলে সেখান থেকে পালিয়ে যান তিনি।
জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান। মেয়েদের জিম্মা পেতে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নারী। তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক।
কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেন। আপিল বিভাগের রায়েও দুই শিশুকে মায়ের কাছে রাখার অনুমতি দেওয়া হলো।
‘ও মোর বানিয়া বন্ধুরে একটা তাবিজ বানাইয়া দে, একটা মাদুলি বানাইয়া দে’। কমবেশি গানটি অনেকেই শুনেছি। ‘বানিয়া’ বা ‘বেনিয়া’ আমাদের পরিচিত শব্দ। মানে যারা ব্যবসা করে। এশিয়ার বড় গ্রাম হবিগঞ্জের বানিয়াচং নামটিও নাকি এসেছে খাসি ভাষা থেকে, বেনিয়াদের ছোনং মানে বেনিয়াদের গ্রাম। খাসি ভাষায় ছোনং মানে গ্রাম। অনেকে আবার বেদেদের ভেতর সান্দারদের ‘বাইন্যা’ হিসেবে চেনেন, মানে যারা ফেরি করে বাণিজ্য করে। কিছুদিন আগেও প্রাচীন গঞ্জ ও মফস্বলগুলোতে ‘বাইন্যাতির দোকান’ ভাষাটি প্রচলিত ছিল। তো এই বেনিয়া, বানিয়া বা বাণিজ্য কারবারিরা নদীতীরের আশপাশে ঘাটের কাছে কোথাও বসতেন। সাধারণত তাদের বসতে হতো বৃহৎ কোনো গাছের তলায়। নদীতীরে গ্রামগঞ্জে এমন বৃহৎ গাছগুলো সাধারণত বট, অশ্বত্থ, তেঁতুল, পাকুড়, ছাতিয়ান, জারুল, শিমুল। হয়তো বটগাছের তলায় বেনিয়া বা বানিয়ারা বসতেন বলে একসময় ইউরোপীয় বণিকরা এই বটগাছকে ‘বানিয়াদের গাছ বা বানিয়ান ট্রি’ বলতে শুরু করেন। আর এভাবেই বাংলা বটের ইংরেজি নাম হয়ে যায় ‘বেনিয়ান ট্রি’। ভাষাবিদ কলিম খান বিষয়টি এভাবেই দেখেন। গাছের নামকরণের উৎস যাই হোক বৃহৎ গাছকে ঘিরেই আমাদের গ্রাম বা বসতি স্থাপনের বহু নামকরণ হয়েছে। বটতলা, পাকুড়তলা, শিমুলতলী, কড়ইতলী, কাঁঠালবাগান, হিজলতলী, বড়ইবাড়ি, ছাতিয়ানতলা, গাবতলী কত কী স্থাননাম জড়িয়ে আছে বহু গাছের স্মৃতি-বিস্মৃতি নিয়ে। সৌরজগতের এই ছোট্ট নীলগ্রহে গাছ সভ্যতার আদিবন্ধু। আজকের হোমো স্যাপিয়েন্স মানবপ্রজাতি থেকে শুরু করে ফ্লোরিয়েনসিস, ডেনিসোভান, নিয়ানডার্থাল কী হোমো ইরেকটাস সব মানবপ্রজাতি গাছেদের কাছে ঋণী। কিন্তু সভ্যতার দীর্ঘ পরিভ্রমণ ঘাঁটলে দেখা যায় মানুষ সবসময় গাছেদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকেনি, নতজানু হয়নি। বরং নৃশংসভাবে গাছেদের হত্যা করেছে, বিনাশ করেছে, রক্তাক্ত করেছে। আর এর পরিণতি হয়েছে বরাবরই ভয়াবহ। দুনিয়ায় যত বেশি গাছের বৈচিত্র্য ও সংখ্যা কমেছে তত বেশি প্রাণের বিলুপ্তি ঘটেছে। মানুষের সমাজে রোগব্যাধি ও নানামুখী অস্থিরতা বেড়েছে। তাপমাত্রা বেড়েছে, জলবায়ু উল্টেপাল্টে গেছে, বাস্তুতন্ত্র ক্ষয় হয়েছে, দুর্যোগ ও সংকট বেড়েছে লাগাতার। প্রতিটি নগরসভ্যতা গড়ে উঠেছে বহু বৃক্ষপ্রাণের জীবনের বিনিময়ে। ইনকা, মায়া, সরস্বতী, সিন্ধু, মেসোপটেমীয়, মিসরীয় বা গ্রিক সভ্যতার নগর নির্মাণ ও পরিকল্পনা কতটুকু বৃক্ষ সংবেদনশীল ছিল আমরা পুরোটা জানি না। কিন্তু আজকের নগর উন্নয়ন কর্মসূচি ও নগর পরিকল্পনা বৃক্ষসংবেদনশীল হতে হবে। কারণ গত দুশো বছরের প্রবল শিল্পায়ন ও নগরায়ণের চাপ ও ক্ষত আমরা বর্তমানে সামাল দিতে বাধ্য হচ্ছি। পৃথিবীর চারধারে আজ কার্বন বিষের পদচ্ছাপ। উল্টেপাল্টে গেছে জলবায়ু পঞ্জিকা। জলবায়ু সংকটের এই নিদারুণ বিপদের ময়দানে দাঁড়িয়ে আমরা কি আবারও নির্বিচারে গাছ কেটে, জলাভূমি উধাও করে, মাঠ-প্রান্তর গায়েব করে, বুনো প্রাণদের তাড়িয়ে একের পর এক কংক্রিট-প্লাস্টিক-কাচের শহর বানিয়ে যাব? এভাবে কি সবকিছু তাড়িয়ে কেবলমাত্র মানুষ এককভাবে বাঁচতে পারবে? বহু প্রমাণ আছে পারবে না, মানুষ পারছে না। গাছ, পাখি, পতঙ্গ, মানুষ, জলাভূমি, উন্মুক্ত প্রান্তর সব নিয়েই আজ সবার নগর গড়ে তোলার দাবি উঠেছে বিশ্বময়। আমাদের নগর পরিকল্পনাবিদ, রাজনীতিক, নীতিনির্ধারক, নগর উন্নয়নবিদ সবাইকে এই আওয়াজ বুঝতে হবে। অন্তরে ধারণ করতে হবে। সম্মান ও স্বীকৃতি দিতে হবে। আমরা বরাবরই দেখছি ঢাকাসহ যেকোনো শহরে সড়ক বা কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য নির্দয়ভাবে গাছেদের কেটে ফেলা হয়। এসব কর্মসূচির আগে কোনো ধরনের পরিবেশগত, প্রতিবেশগত ও সামাজিক সমীক্ষা ও যাচাই হয় কিনা আমরা জানি না। কিন্তু একটিবারও ভেবে দেখা হয় না, এভাবে একের পর এক গাছ কেটে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কেমন সর্বনাশ তৈরি করছি। এক একটি গাছ কেবলমাত্র একটি একক প্রাণসত্তা নয়, গাছের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে বহু প্রাণ। পতঙ্গ, পাখি, বন্যপ্রাণী, মানুষ। প্রতিটি নগরে বড় হয়ে ওঠা প্রতিটি গাছেদের সঙ্গে কত মানুষের নানা স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। গাছেরা মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক স্মৃতির ধারক।
সম্প্রতি ঢাকার ধানম-ি সাত মসজিদ সড়কের বহু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে এবং আরও গাছ মৃত্যুদ-ের আতঙ্ক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃক নিয়োগকৃত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সাতমসজিদ সড়কের গাছ কেটে সড়কদ্বীপ উন্নয়নের কাজ করছে। ধানম-ি অঞ্চলটি ঐতিহাসিক ও সামাজিকভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে শুরু করে বহু ঐতিহাসিক মানুষের স্মৃতিময় স্থল এটি। বর্ডার গার্ড সদর দপ্তর, আবাহনী খেলার মাঠ, ছায়ানট, বেঙ্গল গ্যালারি, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও এখানে। এককালের পা-ু নদী আজকের ধানম-ি লেক এখানেই। শিক্ষা, ক্রীড়া, শরীরচর্চা ও সাংস্কৃতিক অনুশীলন এবং চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ সুরক্ষা বিষয়ে আমাদের গভীর মনোযোগ ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি। গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকার একটি গাছ কেটে ফেলার আগে এর সামগ্রিক পরিবেশ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভাবের বিষয়গুলো আন্দাজ করা জরুরি। কারণ এই এলাকার প্রতিটি গাছ এই অঞ্চলের সামগ্রিক প্রতিবেশব্যবস্থার সঙ্গে জটিলভাবে সম্পর্কিত। ইতিমধ্যেই আবাহনী মাঠের বিপরীতে স্টার কাবাব থেকে জিগাতলা পর্যন্ত বহু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অবশ্যই আমাদের নগর সম্প্রসারণ, সড়ক উন্নয়ন দরকার। কিন্তু একের পর এক গাছ কেটে নিশ্চয়ই নয়। ঢাকার মতো শহরে যেখানে সড়ক ও সড়ক বিভাজকে গাছ আছে সেখানে নতুনভাবে সড়ক সম্প্রসারণ বা সড়ক উন্নয়ন কর্মসূচি কীভাবে পরিবেশবান্ধব হতে পারে এ বিষয়ে আমাদের নীতিমালা দরকার। এই শহরে আমাদের খুব বেশি গাছ নেই। বিশেষ করে শহরের প্রবীণ গাছেদের বহু আগেই আমরা হত্যা করেছি। তাহলে কার ছায়ায় কার স্মৃতি মমতায় বড় হবে আমাদের আগামীর প্রজন্ম? আমরা আশা করব রাষ্ট্র এ বিষয়ে তৎপর হবে। সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ-বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় বিষয়টি আমলে নেবেন।
বৃক্ষরোপণে দেশে রাষ্ট্রীয় তৎপরতাগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস ছাড়াও বৃক্ষরোপণে আমরা বছরব্যাপী বেশ জনসম্পৃক্ততা দেখি। ‘আগ্রাসী (ইনভ্যাসিভ বা এলিয়েন স্পিসিস) প্রজাতি’ নিয়ে বহু তর্ক আছে। বিশেষ করে একাশিয়া, ম্যাঞ্জিয়াম, ইপিলইপিল, শিশু, ইউক্যালিপটাস গাছের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বহু নেতিবাচক প্রভাব আছে। ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২’ আগ্রাসী প্রজাতির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা এনেছে। সাত মসজিদ সড়কে আগ্রাসী প্রজাতি খুব একটা নেই। বট, বড়ই, বকুল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, শিরিষ গাছগুলো দেখা যায়। এমনকি কেবল বৃক্ষ নয়, বেশকিছু বছরে কিছু তৃণগুল্ম ও লতা ঝোপও এখানে বিকশিত হয়েছে। এখানে পাখি, পতঙ্গ, সরীসৃপ দেখা গেছে বর্ষাকালে। এক চিলতে ছোট্ট জায়গায় একটা বিশেষ বাস্তুতন্ত্রও তৈরি হয়েছে। এখন সড়ক উন্নয়নের নামে গাছ কেটে আমরা এই বাস্তুতন্ত্র চুরমার করে দিতে পারি কি? কেবল প্রাকৃতিক সম্পর্কই নয়; এই গাছেদের সঙ্গে আমাদের শিশুদের এক ধরনের স্মৃতিময় সামাজিক সম্পর্কও তৈরি হচ্ছে। স্কুলে যাওয়ার পথে, আবাহনী খেলার মাঠে অনুশীলনের যাওয়ার পথে এই গাছগুলো তাদের সঙ্গী হয়ে উঠেছিল। আমরা চাইলেই গাছেদের সঙ্গে শিশুদের গড়ে ওঠা এই সামাজিক সম্পর্ক ভেঙে দিতে পারি না। গাছেরাও মানুষের মতোই রাষ্ট্রের নাগরিক। আর সব নাগরিকের নিরাপত্তার বিধান সংবিধানে অঙ্গীকার করেছে রাষ্ট্র। সংবিধানের ১৮ (ক) ধারায় উল্লেখ আছে, ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন’। সাতমসজদি রোডে সড়ক উন্নয়নের নামে গাছ কেটে প্রাকৃতিক ও সামাজিক বৈচিত্র্যময় সম্পর্কগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে লঙ্ঘন করে। ২০১৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন ২০১৬’ নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়। এ আইনের মাধ্যমে যত্রতত্র বৃক্ষসম্পদ আহরণ সীমিত ও প্রাচীন বৃক্ষগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ২৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী দেশের এমন বৃক্ষগুলো সংরক্ষণ করার কথা সরকারের। যেসব ঐতিহ্যবাহী, পুরাতন বয়স্ক, দেশীয় ও শতবর্ষী বৃক্ষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও প্রথাগত মূল্য রয়েছে সেসব বৃক্ষ উক্ত আইন অনুযায়ী ‘স্মারক বৃক্ষ’। সাত মসজিদ সড়কের গাছগুলো হয়তো বয়সে এত প্রবীণ নয়, কিন্তু দীর্ঘ সময়ে পাবলিক পরিসরে অবস্থানের কারণে এসব গাছও নগরের পাবলিক স্মৃতিস্মারক হয়ে উঠেছে।
আমরা কি সড়কের বৃক্ষপ্রাণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পেরেছি? নগরায়ণ, সড়ক সম্প্রসারণ আর অবকাঠামো উন্নয়নের নামে বৃক্ষহীন এক প্লাস্টিক মোড়ানো শহর তৈরি করে চলেছি আমরা। এমন বৃক্ষহীন শহরের পরিণতি বারবার ‘দ্য লোরাক্স’ ছবির কথা মনে করিয়ে দেয়। ২০১২ সালে ইউনিভার্সাল স্টুডিও থেকে ড. সিউ্যসের কাহিনী থেকে ক্রিস রিনাউড ‘দ্য লোরাক্স’ নামের একটি কার্টুন অ্যানিমেশন ছবি নির্মাণ করেন। গাছেদের মেরে প্লাস্টিকের শহর বানানোর এক তীব্র করুণ পরিণতি দেখানো হয়েছে ছবিটিতে। ছবিটিতে দেখানো হয়, এক কল্পিত থিনিডভিল শহরের কোথাও কোনো জীবিত গাছ নেই। সব প্লাস্টিক, সব মেশিনে চলে। ও’হেয়ার নামের একটি কোম্পানি মূলত থিনিড শহরটি চালায়। যেহেতু শহরে কোনো গাছ নেই, ও-হেয়ার কোম্পানিটিই বোতলে ভরে অক্সিজেন বিক্রি করে। শহরের এ অবস্থাটি মূলত তৈরি হয়েছে ওয়ান্স-লারের জন্য। গাছ কেটে থিনিড শহর বানানোর পরিকল্পনা করে সে। অরণ্য ও প্রকৃতির দেবতা লোরাক্স এবং বন্যপ্রাণীর কথা কানে তুলে না। তৈরি করে গাছশূন্য এক নতুন শহুর থিনিডভিল। ততদিনে ওয়ান্স-লার থেকে শহরের মালিকানা দখল করে ও-হেয়ার কোম্পানি এবং তার পোষা মাস্তান বাহিনী। তারপর শহরের এক ছোট্ট ছেলে খুব কষ্টে সত্যিকারের গাছের বীজ শহরে এনে বুনে দেয় এবং আবার শহরটি বৃক্ষময় হয়ে ওঠে, প্রাণ ফিরে পায়। আমরা কোনোভাবেই চাই না গাছেদের কেটে কেটে কল্পিত এই থিনিড শহরের মতো প্লাস্টিকের শহর হয়ে উঠুক আমাদের প্রিয় নগর ঢাকা। আমরা চাই গাছে-মানুষে, পাখি-পতঙ্গে, জলাভূমি-উন্মুক্ত মাঠ আর অজস্র প্রাণের মায়ায় গড়ে উঠুক আমাদের সবার শহর। আশা করি নগর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন, ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কের গাছগুলো কাটা থেকে বিরত থাকবেন। কাটা গাছের স্থানে দেশি প্রজাতির চারা রোপণ করে সড়ক ও সড়ক বিভাজকগুলোকে বৃক্ষবান্ধব করে গড়ে তুলবেন।
লেখক: গবেষক, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ
ছয় সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, তারা অনুমান করছেন, ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোট গণনা শেষে এটি সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে।
তিনি বলেন, ভোটের মাঠে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে যে সহায়তা পাওয়া গেছে তা সন্তোষজনক।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোট গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সিইসি।
সিইসি বলেন, ছয় আসনে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে ভোট হয়েছে। ভোটে অনিয়মের উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তারা সার্বক্ষণিক মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য নিয়েছেন। টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে নজর রেখেছেন। অনিয়মের উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কয়েকটি জায়গায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। দুয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষে ‘ডাকাত’ দেখা গেছে—এমন সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, গণমাধ্যমের খবর দেখে তারা ওই এলাকা থেকে তথ্য নিয়েছেন। একটি কেন্দ্রে একজন নারী ভোটার তার দুই বাচ্চাকে নিয়ে বুথে ঢুকেছেন। আরেকটি কেন্দ্রে এক ভদ্রমহিলা একজন অসুস্থ লোককে ভোট দিতে ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন।
সিইসি বলেন, ‘এগুলো হতে পারে। এগুলোকে আমরা খুব গুরুতর বা ব্যাপক অনিয়ম মনে করছি না। ভোটের ফলাফল পাল্টে যেতে পারে এ ধরনের ঘটনা আমাদের কাছে মনে হয়নি।’
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
তার কলাম মানেই সেদিন বাংলার বাণী অফিস সরগরম। সকাল থেকেই ফোন আসত। বিভিন্ন আড্ডায়ও আলোচনা হতো সেই কলাম নিয়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়-আশয় এবং দেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো আকর্ষণীয় এবং সহজ করে পাঠকের কাছে তুলে ধরতেন এই সাংবাদিক। এর বাইরে প্রকৃতি, পাহাড়, নদী ও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লিখতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের লাল পাহাড়ের মানুষের জীবনের গল্পও তুলে আনতেন। প্রায় দেড় দশক নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। লিখেছেন অসংখ্য কলাম।
যখন সাংবাদিকতা করতেন তখন তার কাজের জায়গাটিতে তিনি ছিলেন সেরা। ছাত্ররাজনীতির জন্য যেমন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, ছাত্রনেতা হিসেবেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়। সফল হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী হিসেবে। দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং ইতিহাসসমৃদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি সফল। তৃতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বাইরে তার আরও অনেক পরিচয়ের মধ্যে সাংবাদিক পরিচয়টাও অনেক বেশি উজ্জ্বল।
ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন স্পষ্টবাদী, সাহসী ও দেশপ্রেমিক। পাকিস্তান আমলে ছাত্র ও গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এ নেতা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ওই ভয়াল রাতে নিহত হন তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি তখন দৈনিক বাংলার বাণীর সম্পাদক। ফলে পত্রিকাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৮১ সালে পত্রিকাটি আবার ছাপার অনুমতি পায়। ওই সময় ওবায়দুল কাদের জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সেই সঙ্গে লেখালেখি। দ্বিতীয়বার শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য) সম্পাদনায় বাংলার বাণী পত্রিকার ছাপা শুরু হওয়ার পর যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। তিনি পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য ও পরে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগপর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতা করেছেন।
টানা ১৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে ওবায়দুল কাদের অসংখ্য কলাম লিখেছেন বাংলার বাণীতে। ‘ও কাদের’ নামে তিনি কলাম লিখতেন। প্রতিদিন সকালে অফিসে আসতেন। সম্পাদকীয় বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে মিটিং করতেন। সম্পাদকীয় বিভাগের বাইরে সেই সময় তিনি বাংলার বাণীর আন্তর্জাতিক পাতাটি নিজের দায়িত্বে বের করতেন। আন্তর্জাতিক বিষয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে তিনি খুব বেশি সচেতন ও আগ্রহী ছিলেন।
ওবায়দুল কাদেরের সেই সময়কার সহকর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সহকর্মী হিসেবে তিনি চমৎকার ছিলেন। তাছাড়া সাংবাদিক হিসেবেও খুব পেশাদার ছিলেন। তিনি যদি রাজনীতি না করে সাংবাদিক থাকতেন, তার অনেক লেখা এবং অসংখ্য বই আমরা পেতাম। যদিও তিনি এখন রাজনীতিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা তাকে পেয়েছি, তারা তার লেখা মিস করছি। তার লেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। যেহেতু বাংলার বাণী ছিল বিরোধী ঘরানার পত্রিকা, তাই সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ থাকত।
ওবায়দুল কাদেরের লেখালেখি ও তার কলাম সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কবীর চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘যখনি সংকট, যখনই এক অপয়া অন্ধকার ওঁৎ পেতে আসে, যখনই সমাজ ধূসরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, যখনই মিথ্যা ও ইতিহাস বিকৃতির গোলকধাঁধায় নয়া প্রজন্মকে দিগভ্রান্ত করার অপচেষ্টা, যখনই রাজনীতির গৌরব কলুষতায় ঢেকে দেওয়ার অপপ্রয়াস তখনই ওবায়দুল কাদেরের এই জীবন ঘনিষ্ঠ, সত্য ও সুন্দরের আরাধনাময় সাহসী রচনা সমাজকে আলোর ইতিহাস শোনাতে পারে।’
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকতা জীবনে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়, রাজনৈতিক কলাম লিখেছেন অসংখ্য। কবি নির্মলেন্দু গুণ তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাংলার বাণী পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে আমার সহকর্মী ছিলেন, কলাম লেখক হিসেবেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন।... আমি তার অলংকৃত কাব্যিক ভাষায় বক্তৃতার একজন ভক্তশ্রোতা।’
প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মূল্যায়ন ছিল, ‘ওবায়দুল কাদের শুধু রাজনীতিক নন, তিনি সাংবাদিক, তিনি বাগ্মী, তিনি লেখক। বক্তৃতায় বাংলা শব্দ উচ্চারণ, ছন্দের ব্যবহারে চারণকবি তিনি। নিবন্ধ লেখক হিসেবে যুক্তি ও বিশ্লেষণে তীব্র লক্ষ্যভেদী তিনি।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন বাংলার বাণীতে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৮৯ সালে বাংলার বাণীতে যখন জয়েন করি তখন সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাদের ভাইকে পাই। আমরা বার্তাকক্ষে বসতাম আর তিনি তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটরদের রুমে বসতেন। ওনাদের আলাদা রুম ছিল। তিনি রুম থেকে বের হয়ে সবসময় আমাদের খোঁজখবর নিতেন। মাঝেমধ্যে আমাদের এখানে এসে গল্প করতেন। তিনি সহকর্মী হিসেবে খুবই আন্তরিক ও সহকর্মীবান্ধব ছিলেন।’
সেই সময়ে বাংলার বাণীতে ওবায়দুল কাদেরের আরেক সহকর্মী ও পাক্ষিক ক্রীড়াজগৎ পত্রিকার সম্পাদক দুলাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তাকে ১৯৮৫ সালে পেয়েছি। আমি তখন সহ-সম্পাদক হিসেবে জয়েন করেছি বাংলার বাণীতে। ওবায়দুল কাদের তখন সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তিনি কলাম লিখতেন। তার কলাম পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তার লেখার মধ্যে সাহিত্য ছিল। লেখা খুব আকর্ষণীয় ছিল। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন, সেসব বিষয় নিয়েও লিখতেন। তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল চট্টগ্রাম, পাহাড়-সমুদ্র খুব পছন্দ করতেন এবং এসব নিয়েও তিনি লেখালেখি করতেন। তিনি খুব আবেগী লোক ছিলেন এবং লেখার মধ্যে সেটা ফুটে উঠত। তার লেখা পাঠক পড়তে বাধ্য হতেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মানুষ হলেও অফিসে ঢুকলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবেই থাকতেন ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বিষয়টা বাইরে রাখতেন। বরাবরই তিনি শৌখিন টাইপের লোক ছিলেন। ভালো কাগজ-কলম ব্যবহার করতেন লেখার সময়। লেখার সময় আলাদা একটা মেজাজে থাকতেন। তখন খুব জরুরি না হলে কোনো বিষয় অ্যালাউ করতেন না। লেখা শেষ করলে বেশ ফুরফুরে থাকতেন। তখন আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, গল্প করতেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তার মনোভাব আমরা দেখতে পেয়েছি।’
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাংবাদিক সুভাষ চন্দ বাদল বাংলার বাণী পত্রিকায় ওবায়দুল কাদেরের সহকর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কাদের ভাইকে ছাত্ররাজনীতি থেকেই চিনতাম। ১৯৭৫ সালের পর যখন তিনি কারাগারে যান তখন আমিও কারাগারে। তাকে কারাগারে দেখেছি বই নিয়ে ডুবে থাকতে। বাংলার বাণীতে এসে তাকে নতুন করে পেয়েছি। সেই সময় আজিজ মিসির ও তার কলাম ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তিনি সাংবাদিকবান্ধব। বাংলার বাণী অফিসেও সহকর্মীদের সবসময় সহযোগিতা করতেন। আমি রিপোর্টার হিসেবে যদি কখনো কোথাও আটকে যেতাম তিনি সহযোগিতা করতেন। কাদের ভাই সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন মেধাবী ও জ্ঞানী। তার সাহসের ঘাটতি ছিল না। তার কলামেও এর প্রভাব দেখেছি।’
ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন। বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন। মা ফজিলাতুন্নেছা। ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলেজজীবন থেকে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন।
১৯৭৫-এর পর একনাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুবার সভাপতি ছিলেন।
তার সেই সময়ের সহকর্মীরা বলেন, সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের তথা কাদের ভাই মানেই অন্যরকম। তিনি ছিলেন খুব সংবেদনশীল। সবাইকে মেনে নেওয়ার একটা ক্ষমতা ছিল। তিনি যে এত বড় একজন রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা, এত বড় ছাত্রনেতা, তা কখনই সাংবাদিকদের কাছে মনে হতো না। মনে হতো, কাদের ভাই যেন সাংবাদিকতার মধ্যেই ডুবে আছেন। কোনো রিপোর্টার বা সাব-এডিটর অনুবাদ করতে সমস্যায় পড়েছেÑ কাদের ভাইয়ের কাছে গেলেই সমাধান। নিজের রুমে, ডেস্কে বসিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। আর তার টেবিলে ছিল সবসময়ই গাদা গাদা বই।
বাংলার বাণীর সেই সময়ের একাধিক সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাদের ভাই ছিলেন সাংবাদিকতার প্রতি পুরো নিষ্ঠাবান। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি দীর্ঘক্ষণ কোথাও বসে থাকতেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে অন্য সহকর্মীদের টেবিলে টেবিলে আড্ডা দিতেন। সেখানে হয়তো আমরা চায়ের অর্ডার দিয়েছি। চা আসতে না আসতেই তিনি উঠে যেতেন। তারপর আবার তাকে চায়ের কাপ নিয়ে খুঁজতে হতো কাদের ভাই কই...।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
আজ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। আর অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন যুবলীগ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা, মানবাধিকারের কথা মানায় না। আপনাদের হিংসাত্মক রাজনীতি আর সন্ত্রাসের কারণে নতুন প্রজন্ম রাজনীতি করতে চায় না। যারা একুশে আগস্ট ঘটিয়েছে, নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, কৃষকের বুকে গুলি চালিয়েছে, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়েছে, তাদের সকল অপকর্মের মেডেল আছে। আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপির প্রধান শত্রু এ দেশের সাধারণ জনগণ। যারা একাত্তরে হাতিয়ার তুলে নিয়েছিল দেশকে স্বাধীন করার জন্য, একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আপনারা বার বার তাদেরকেই আক্রমণ করেন। আওয়ামী লীগ আপনাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে আসে বলেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপনাদের বিরোধ ঘটে। সব সময় এ দেশের সাধারণ মানুষকে আপনাদের ষড়যন্ত্রের শিকার বানান, হত্যার শিকার বানান এবং আপনাদের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের শিকার বানান।
পরশ আরও বলেন, এ বছরটা নির্বাচনের বছর। আমাদের রাজপথে থাকতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। শুধু নেতাকর্মী দ্বারা আবর্ত থাকলে চলবে না, আমাদের চলে যেতে হবে সাধারণ মানুষের কাছে। গত ১৪ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অর্জনের কথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যদি সাধারণ মানুষ উন্নয়নের সুফল না পায় তাহলে সেই উন্নয়নের কোনো মূল্য থাকে না। যখন আমাদের সকল উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারব তখনই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যুবলীগের ভাই ও বোনেরা- আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, আপনারা ধৈর্যশীল থাকবেন। ওদের কৌশল আমাদের সন্ত্রাসী হিসাবে উপস্থাপন করা। ওরা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাইবে। আপনারা ওদের ফাঁদে পা দেবেন না। কিন্তু রাজপথ আমরা ছেড়ে দেব না। ভুলে যাবেন না, ওরা কিন্তু দিনকে রাত এবং রাতকে দিন বানাতে পারদর্শী। মিথ্যার ওপরই দলটার সৃষ্টি। ওরা জাতির পিতার নাম মুছে ফেলেছিল, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছিল। সুতরাং মিথ্যা চর্চার ক্ষেত্রে এই দলকে দুর্বল ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, যখন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশের জিডিপি সিংগাপুর, মালয়েশিয়ার উপরে, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে পেছনের দিকে নেওয়ার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তারা সবাই ভবিষ্যদ্বণী করছে, বাংলাদেশ যেভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যদি এভাবে এগিয়ে যায় তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৭তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। আর এটা সম্ভব শুধুমাত্র রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে।
তিনি যুবলীগের উদ্দেশে বলেন, বিএনপি-জামায়াত আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা নানা মিথ্যা প্রচারণা ও গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং ইউনিটে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। বলতে হবে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়নি, বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আপনারা শেখ হাসিনার পাশে থাকুন, নৌকার পাশে থাকুন, নৌকায় ভোট দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, যারা স্যাংশন নিয়ে কথা বলেন তাদের দলের প্রধান খালেদা জিয়া তৎকালীন আমেরিকার পরারাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্যাংশন চেয়েছেন। যাতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে ভেঙে পড়ে, দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়, খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়, বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পায়, মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। এটাই হলো বিএনপির আসল চেহারা। তারা কখনোই এ দেশের মানুষের ভালো চায় না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞতা আছে কিভাবে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে তোলা যায়। সামনের যে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কথা বলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ তা কাটিয়ে উঠতে পারবে। আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা তার দূরদর্শী নেতৃত্বে একটি উন্নত-সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে।
সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগ সম্পাদক নিখিল বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঢাকার রাজপথে আপনারা পোস্টার হয়েছেন। নুর হোসেন, ফাত্তাহ বাবুল হয়েছেন। তারপরেও দেশের স্বার্থে সংগঠনের স্বার্থে, বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রশ্নে যুবলীগ আপস করেনি, যুবলীগ আপস করতে জানে না। তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেমনি করে বিগত দিনে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথ আগলে রেখে প্রিয় নেত্রীর নির্দেশিত পথে মানুষের কল্যাণে, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আপনারা সব সময় কাজ করেছেন। আগামী নির্বাচনেও সেই সাহসিকতা আর বীরত্বের সাথে রাজপথে থাকবেন। বিএনপি-জামায়াতের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আবারও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে ঘরে ফিরবেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. হাবিবুর রহমান পবন, মো. নবী নেওয়াজ প্রমুখ।
আইন অনুযায়ী তরল জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের একক ক্ষমতা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) হলেও তাদের তা করতে দেওয়া হয় না। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের একক এখতিয়ার কমিশনের থাকলেও সম্প্রতি সেটিও খর্ব হয়েছে।
সরকারের নির্বাহী আদেশ আর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের হস্তক্ষেপের কারণে লাইসেন্সসংক্রান্ত কাজের পাশাপাশি সীমিত পরিসরে বিরোধ মীমাংসা ছাড়া আর কিছুই এককভাবে করতে পারছে না জ্বালানি খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে ভোক্তার মতোই কমিশনও অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে কমিশনের মোট জনবল সংখ্যা ৮৪। প্রতি বছর বেতনভাতা ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। দিনে দিনে ক্ষমতা খর্ব হওয়ায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ কী বা এ কমিশনের কোনো প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য মোহাম্মদ মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী গত সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, “এখন শুধু লাইসেন্সসংক্রান্ত কিছু কাজ আর ‘আরবিট্রেশনটা’ (বিরোধ মীমাংসা) কমিশনের হাতে আছে। দরকার হলে দুদিন পর সরকার সেটাও ‘উইথড্র’ (প্রত্যাহার) করবে। যখন দেখবে আরবিট্রেশনগুলো সুবিধাভোগীদের বিপক্ষে যাচ্ছে তখন এটাও উইথড্র হবে। সরকারের নির্বাহী ক্ষমতায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সুযোগ রেখে যে আইন হলো তা করা হয়েছে তাদের মোটাতাজা করার জন্য।” তিনি বলেন, ‘নতুন এ আইন করার ফলে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কাছ থেকে দূরে গেল না কাছে এলো সেই বিষয়টা অনুধাবন করা দরকার।’
খানিকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বিইআরসির এ সদস্য বলেন, ‘আমার মেয়াদ আছে আর কয়েক দিন। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করিনি। কারণ আমার বাবা আমাকে শিখিয়েছেন যেটা তোমার পছন্দ হবে না সেই কাজ তুমি করবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছি।’
বিইআরসির কার্যাবলির প্রথমেই জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি, জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করা, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত এবং এনার্জি অডিটের মাধ্যমে জ্বালানি ব্যবহারের খরচের হিসাব যাচাইয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে এগুলোর বাস্তবায়ন নেই বললে চলে। অন্যদিকে জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিশ্চিত করা এবং সরকারকে সুপারিশ করা কমিশনের কার্যাবলির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও এর বাস্তবায়ন তেমন একটা চোখে পড়ে না।
উচ্চ আদালতের আদেশে কমিশন প্রতি মাসে এলপি গ্যাসের মূল্য সমন্বয় শুরু করেছে। কিন্তু বাজারে কখনই বিইআরসি ঘোষিত মূল্যহার অনুযায়ী এলপি গ্যাস পাওয়া যায় না। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানির সামান্য সিস্টেম লস কমাতে পারে না কমিশন। সেখানে অন্যান্য কাজ কীভাবে করবে? বিইআরসি নির্দেশ দেয়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় না। এ জন্য কিছু করারও সক্ষমতা নেই কমিশনের।’
সূত্রমতে, অভিযোগের ভিত্তিতে বিইআরসি আইন অনুযায়ী লাইসেন্সি প্রতিষ্ঠান ও ভোক্তার মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে কমিশন। কিন্তু গত ১০ বছরে কমিশনে ৩৭৮টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ২১০টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তির হার কম হওয়া এবং জনসচেতনার অভাবে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ কম করা হয় বলে অনেকে মনে করেন।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করতে করতে প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা ভোক্তার জন্য এবং বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত তথা সামগ্রিক দেশের জন্য অশনিসংকেত।’ তিনি বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত পুরোপুরি কারিগরি। এর সঙ্গে আইনের নানারকম বিষয় জড়িত। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের এসব বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সই করা ছাড়া তারা কিছুই করে না। এভাবে তো সাধারণ মানুষের কল্যাণ সম্ভব নয়। বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত বলে সেখানে কিছুটা হলেও বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতা করতে হতো। তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল। সেখানে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল বলে কোম্পানিগুলোও যেনতেন হিসাব উপস্থাপন করে মূল্যহার বাড়ানোর ব্যাপারে কঠিন চ্যালেঞ্জর সম্মুখীন হয়। কিন্তু আইন সংশোধনের কারণে সেই সুযোগ আর থাকল না। তড়িঘড়ি করে করা এ সংশোধন অসাধু ব্যবসাকে সুরক্ষা দেবে বলে তিনি দাবি করেন।
শামসুল আলম মনে করেন, বিইআরসি আইন সংশোধন করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়ে ক্ষমতার সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে সরকার। অন্যদিকে বিইআরসি আইন অনুযায়ী তরল জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের একক ক্ষমতা বিইআরসির হলেও তারা তা করতে পারে না। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ আইন লঙ্ঘন করে অনেক আগে থেকেই অবৈধভাবে তরল জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করে আসছে।
খাতসংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) নিজে তরল জ্বালানি ব্যবসায়ী তথা বিইআরসির লাইসেন্সি হওয়া সত্ত্বেও ফার্নেস অয়েলের মূল্য বিপিসিই নির্ধারণ করে। আর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাইরে অন্যসব কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি তেলের ক্রয়-বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়। এসব ক্ষেত্রে সিস্টেম লসের নামে তেল চুরি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেল ও কয়লার ব্যবহার বেশি দেখানো হয়। ফলে উৎপাদন ব্যয় বাড়ে।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন কোম্পানি এবং সংস্থার পরিচালনা বোর্ডে পদাধিকারবলে মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্য কর্মকর্তা কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যান ও পরিচালক। ফলে ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় বিইআরসি এসব প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময়ে নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন হয় না।
সরকারের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রবল চাপে ২০০৩ সালের মার্চ মাসে বিইআরসি আইন করা হয়। এরপর ২০০৫, ২০১০ ও ২০২০ সালে এ আইন সংশোধন করা হয়। এর মধ্যে আইনের ৩৪ ধারার উপধারা-৫-এ উল্লেখযোগ্য সংশোধনী আনা হয় ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর। এর আগে বছরে সর্বোচ্চ একবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম সমন্বয় বা পুনর্নির্ধারণের সুযোগ থাকলেও নতুন ওই সংশোধনীতে একাধিকবার দাম পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়। এর ফলে গ্রাহকের কাঁধে এক বছরেই একাধিকবার দাম বৃদ্ধির খড়গ নেমে আসে।
সম্প্রতি বিইআরসির পাশাপাশি সরকারকে ভোক্তাপর্যায়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম পুনর্র্নির্ধারণ ও সমন্বয় করার ক্ষমতা দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এরপরই গণশুনানি ছাড়াই চলতি মাসে এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাহী আদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।
সরকারের ওই আদেশ জারির আগে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর আবেদন নিয়ে গত ৮ জানুয়ারি গণশুনানি করেছিল বিইআরসি। চলতি মাসে মূল্যসংক্রান্ত নতুন আদেশ দেবে বলে জানিয়েছিল কমিশন। কিন্তু এর মধ্যেই গত ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সরকার। এরপর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে বিইআরসির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
বিইআরসির আইন অনুযায়ী, গণশুনানির মাধ্যমে দাম সমন্বয় হবে। এ ক্ষেত্রে বাড়তেও পারে কমতেও পারে। কিন্তু বিইআরসির দাম কমানোর কোনো নজির নেই। গণশুনানিতে ভোক্তারা দাম কমানোর বিষয়টি যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করলেও তা আমলে না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দাম বাড়ানোর সময় অবশ্য সংস্থাগুলোকে সাশ্রয়ী ও দক্ষ হওয়ার পরামর্শসহ নানারকম শর্ত জুড়ে দেয় কমিশন।
তবে বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানির প্রস্তাব অনুসারে, কখনই দাম বাড়ায়নি বিইআরসি। এর আগে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব এলেও বিইআরসি বাড়িয়েছে ২০ শতাংশ। গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব এলে বিইআরসি বাড়িয়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ।