
যুগপৎ আন্দোলনের গণঅবস্থান কর্মসূচির জন্য বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা রাজধানীর নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। কিছু সময়ের মধ্যেই নয়াপল্টনে গণ–অবস্থান শুরু হবে।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) ঢাকার কর্মসূচির নেতৃত্বে থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাস।
বিএনপির পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, আজ বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ গণ অবস্থান কর্মসূচি চলবে। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি এবং রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। গণমিছিলের পর দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে বুধবার (১১ জানুয়ারি) ঢাকাসহ ১০টি বিভাগীয় (সাংগঠনিক বিভাগসহ) সদরে এই গণ–অবস্থান কর্মসূচি।
সিলেট বিভাগে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রাজশাহীতে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ময়মনসিংহে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রামে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরিশালে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, রংপুরে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কুমিল্লায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা, খুলনায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান এবং ফরিদপুরে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আযম খান গণ অবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন।
সাত–দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২–দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটও আলাদাভাবে এই কর্মসূচি একযোগে পালন করবে বলে জানিয়েছে।গণ–অবস্থান কর্মসূচি থেকে যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৪ জন নেতা কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সাফল্যে খুশি বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করছেন, প্রতিকূল পরিবেশে জয়ী হয়ে আসা দুষ্কর। ক্ষমতাসীনদের দাপটের মধ্যে জয়ী হয়ে আসায় আগামীর আন্দোলন সংগ্রামে স্থানীয় রাজনীতিতে তারা আরও প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন। তবে জয়ী হলেও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এখনই এই নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। পরবর্তিত পরিস্থিতিতে এসব নেতার দলের সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে, সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেদের ভূমিকা রাখতে পারলে এবং দলের শক্তি বাড়ানোর প্রয়োজনে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত দিতে পারে বিএনপি।
যদি নিজেদের ভুল স্বীকার করে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের অনেকেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বাস্তবতা তুলে ধরে দলীয় কর্মকা-ে যোগদানের সুযোগ চাওয়া হয়েছে। এই নেতারা মনে করেন, বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবিতে সর্বক্ষেত্রে শক্তির অংশ হিসেবে গাজীপুরেও তারা ভূমিকা রাখতে চান।
বহিষ্কৃতদের এমন মনোভাবের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০১-পরবর্তী সময়ে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সারা দেশের জনপ্রতিনিধিদের ১০টি ভাগে ভাগ করে প্রায় ৪ হাজার জনপ্রতিনিধির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তারেক রহমান বলেছেন, সব মান-অভিমান ভুলে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ে দলটির কেন্দ্রীয় নির্দেশ পালন ও বাস্তবায়ন করুন।
জানতে চাইলে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সদর থানা যুবদলের আহ্বায়ক হাসান আজমল ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে জানান, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি। ফলে গাজীপুর নির্বাচনে কাউন্সিলর যারা প্রার্থী হয়েছেন তারাও পূর্বের সিদ্ধান্তগুলো ফলো করেছেন। কিন্তু দল যখন আমাদের নির্বাচন থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছে, তখন মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ ছিল না। ফলে ১৭ মে বহিষ্কারাদেশের চিঠি দেওয়ার পর ১৯ মে আমি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছি। যেহেতু আমি ২০ বছর ধরে এই এলাকার জনপ্রতিনিধি, তাই ভোটাররাই আমাকে জয়ী করেছেন। তিনি জানান, আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভুল করেছি, দলের সিদ্ধান্তই সঠিক এমনটি জানিয়ে ১৯ মে আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বরাবর ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিয়েছি, বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার জন্য। দলের মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকদের বরাবর প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর এখনো কেন্দ্রে যোগাযোগ করিনি। খুব শিগগিরই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী দিকনির্দেশনা চাইব।
২৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী কাউন্সিলর ও সদর থানার বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হান্নান মিয়াও জানিয়েছেন, ক্ষমা চেয়ে কেন্দ্রে চিঠি দেবেন।
গত ১৭ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ২৯ নেতার আজীবন বহিষ্কারের কথা জানিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়।
দলটির নীতিনির্ধারকদের শঙ্কা ছিল, অনেক জনপ্রতিনিধিকে নানা প্রলোভনে ফেলে কিংবা তাদের রাগ-ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে দলের ব্যানারে নির্বাচনে নিতে চেষ্টা করবে সরকার। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপনির্বাচনের পর সেই প্রবণতা দেখা গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলের একটি অংশকে এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে নিতে চায় এমন আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এখনই কঠোর না হলে দলের শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না মনে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এমন বাস্তবতায় দলের নেতাদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। সতর্কতা আমলে না নিয়ে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি কার্যকর করে ভবিষ্যতে নেতাদের শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার কৌশল নিয়েছে দলটি।
জানতে চাইলে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেখানে আমরা এই সরকারের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া জন্য আন্দোলন করছি, এই মুহূর্তে তাদের নির্বাচনে যাওয়া উচিত ছিল না। দলীয় শৃঙ্খলা ফেরাতে আমাদের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন মূল ভিত্তি বিএনপির রাজনীতি করার মধ্য দিয়ে। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তারা নির্বাচন করে জয়ী হলে বিএনপির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ দেওয়া যেত। কিন্তু তারা দলের বৃহত্তর স্বার্থের প্রতি নজর না দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থের প্রতি মনোযোগ বেশি দিয়েছেন।
তবে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান পর্যায়ের এক নেতা জানান, কাউন্সিলর পদে জয়ী হওয়ায় মূলত বিএনপি খুশি। কেননা, দলের স্বার্থে যেকোনো সময় তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে কাজে লাগানো যাবে। আবার বহিষ্কার থাকায় দলে ফিরতে এসব নেতারা দলীয় কর্মকা-ে আরও বেশি সক্রিয় থাকবেন। ফলে বিএনপির তাদের বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে অংশ নেওয়া দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৈমুর আলম খন্দকারের মতো ক্ষমা চেয়ে আবেদন করলেও গ্রহণ না করে ঝুলিয়ে রাখবে।
সূত্রগুলো বলছে, ১৫, ১৯, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৮, ৩০, ৪০, ৪২, ৪৮ ও ৫৫ এবং সংরক্ষিত ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিএনপির বহিষ্কৃতরা জয়ী হয়েছেন। এই ভোটের এমন ফলাফল নিয়ে স্থানীয়ভাবে নানা আলোচনা হচ্ছে। স্থানীয় রাজনীতিকদের অনেকে মনে করছেন, ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ও বিএনপির নীরব ভোটারদের সমর্থনের কারণেই তারা জয়ী হয়েছেন। তবে আলোচনা রয়েছে- যেসব ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা জিতেছেন, সেসব ওয়ার্ডে মেয়র পদে জায়েদা খাতুন বেশি ভোট পেয়েছেন। বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ‘আঁতাত করায়’ ফলাফল এমন হয়েছে।
তবে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলছেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো থাকায় বিএনপি সমর্থকদের অনেকেই নিজ দলের কাউন্সিলর প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। আর নৌকা প্রতীকের পরাজয় ঘটাতে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনকে ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান গত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন। তাদের নির্বাচিত হওয়া বা না হওয়ায় বিএনপির কিছু যায় আসে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দলটির সভাপতিমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী ও সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভা আজ রোববার।
বিকাল ৪টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ যৌথ সভায় সভাপতিত্ব করবেন।
স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে যথাসময়ে সংশ্লিষ্টদের সভায় উপস্থিত থাকার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, সরকার ক্ষমতায় থাকতে বিদেশি শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তারা গোপন চুক্তির মাধ্যমে দেশের বহু এলাকা বিদেশিদের কাছে তুলে দিয়ে আগ্রাসনের পথ করে দিয়েছে। ক্ষমতা থেকে গেলে সব বের হবে। তখন কোনো প্রভু তাদের বাঁচাতে পারবে না।
আজ শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি দেশের জন্য লজ্জার। সরকারের লোকজনকে কোথাও ভিসা দেয়া হবে না। কোনো সভ্যদেশ আপনাদের যায়গা দেবে না, কোথাও আপনাদের যায়গা হবে না। বাংলার মাটিতেই থাকতে হবে। সকল অপকর্মের বিচার এই দেশের মাটিতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করছে সরকার। বিএনপির কর্মীদের ঘরে ঘুমাতে দেয়নি তারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিচার হবে, শাস্তি হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। কিন্তু বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবেই সবকিছু মোকাবিলা করবে। জনগণই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ সময় দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রতিরোধ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনেই নির্বাচন হবে। সরকারকে বিদায় নিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। জনগণ অতীতের মতো আবারও বিএনপিকে ক্ষমতায় আনবে।
ঝড়বৃষ্টিসহ দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। অবিলম্বে বর্তমান সরকার পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি ও দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনুর মুক্তি দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া দেশের ১৫ জেলা ও মহানগরে আজ জনসমাবেশ করছে বিএনপি। একইসঙ্গে সমমনা গণফোরাম জোটের উদ্যোগেও একই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দাবিতে ঢাকাসহ দেশের ১৫ জেলা ও মহানগরে জনসমাবেশ করবে বিএনপি।
বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচির শেষ দিনে শনিবার (২৭ মে) ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দলের অন্যান্য দাবির সঙ্গে মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর মুক্তির দাবিও রয়েছে।
সারাদেশে সমাবেশ সফল করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, নোয়াখালীতে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, পঞ্চগড়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাহিদ হোসেন, বাগেরহাটে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ঝিনাইদহে ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, নড়াইলে ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, জয়পুরহাটে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, নাটোরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, শরীয়তপুরে উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, যশোর জেলা বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, হবিগঞ্জে যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গাইবান্ধায় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল উপস্থিত থাকবেন। গণফোরাম জোটের উদ্যোগে মতিঝিল নটর ডেম কলেজের উল্টো দিকে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
গত ১৩ মে সারাদেশে দলের ৮২ সাংগঠনিক ইউনিটে চার দিনের এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার, পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং, দুর্নীতির প্রতিবাদ’ এবং ১০ দফা দাবিতে এ জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সে সঙ্গে সমমনা গণফোরাম জোটের উদ্যোগেও একই কর্মসূচি পালন করা হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভিসা পলিসি দেখে বিএনপির রাতের ঘুম হারাম। দিনের আরাম হারাম। তারা ভয় পেয়ে গেছে। মির্জা ফখরুল কথা বলে মুখ লুকিয়ে। মুখ শুকিয়ে গেছে কারণ সেখানে যেগুলো নেগেটিভ সবই তাদের জন্য।
তিনি বলেন, কথায় কথায় আগুন, বাসে আগুন, গাছ কাটে, বিদ্যুতের স্টেশনে আগুন দেয়, ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়, রেললাইন পুড়িয়ে দেয়, হাজার হাজার মানুষকে পুড়িয়ে মারে এই অপরাজনীতি ভিসা নীতির মধ্যে এই বিষয়গুলো পড়ে। আমরা তো তো নির্বাচন করতে চাই। আমরা বাধা দেব কেন। যারা বাধা দেয় তাদের বিরুদ্ধে আপনাদের এই পলিসি কার্যকর হয় কি না আমরা দেখব।
শুক্রবার (২৬ মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা তাকিয়ে ছিল নিষেধাজ্ঞা আসবে কবে। শেখ হাসিনার ওপর নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞার আশায় আশায় কেউ যায় লন্ডনে, কেউ যায় ওয়াশিংটনে, লবিস্ট নিয়োগ করে। ভিসা নীতি আসছে, নিষেধাজ্ঞা কই? এখানে তো নিষেধাজ্ঞার কিছু নেই।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আমাদের নির্বাচন আমরা করবো। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা আমরা তৈরি করবো। আমাদের গণতন্ত্র আমাদের সিস্টেমে চলছে। আমরা কারো ভয়ে ভীত নই। আমরা আমাদের লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত সংবিধান মেনে চলব। কারও হুমকি-ধামকি, কারও নিষেধাজ্ঞায় কাবু হয়ে মাথা নত করার মানুষ শেখ মুজিবের বেটি নয়। একথা যেন সবার মনে থাকে।
গাজীপুরে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, তেমনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন চাই, আমরা বাধা দেব কেন। সেই পরামর্শ তো আমাদের দেয়ার দরকার নেই। নির্বাচনে বাধা দেওয়ার দিন শেষ। যারা নির্বাচন চায় না, তত্ত্বাবধায়ক চায়...খালেদা জিয়া বলেছেন শিশু আর পাগল ছাড়া নিরপেক্ষ নেই।
নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক হবে না। কোনও বিদেশি বন্ধু একবারও আমাদের কাউকে বলেননি যে তত্ত্বাবধায়ক চায়। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত দাওয়াত করেছিল, তার সঙ্গে আলাপকালে জানতে চেয়েছিলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আপনাদের কোনও পরামর্শ আছে কিনা? তখন পিটার হাস (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) আমাকে যেটা বলেছেন যে, ‘উই ডোন্ট কেয়ার অ্যাবাউট কেয়ারটেকার। আমরা চাই- বাংলাদেশের একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহযোগ্য নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন।’
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, অর্থপাচারে দণ্ডিত হয়েছে, বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এই দণ্ডিত ব্যক্তি তারেক রহমান কি করে প্রতিদিন অনলাইনে রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্য দিচ্ছে। এর কি কোনও প্রতিকার নেই! আইন কি তারা মানবে না! আদালতের আদেশ কেন মানছে না তারেক রহমান? তারা আইন মানে না, আদালত মানে না।
বিএনপির নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দাবির ব্যাপারে তিনি বলেন, নির্বাচনের রেজাল্ট যদি কমিশন বলে দেয় বিএনপি জিতবে তাহলে ভালো। নিরপেক্ষ নির্বাচনের গ্যারিন্ট তখনই তারা যাবে যখন নির্বাচন কমিশন বলবে, বিএনপিই জিতবে। বিএনপিকে জেতার গ্যারিন্ট মানে নিরপেক্ষ নির্বাচন! এই নিরপেক্ষ নির্বাচন আমরা চাই না। বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায় না, সংসদের বিলুপ্তি চায় না। তারা অবান্তর কথা বলতে বলতে অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, গাজীপুরে নির্বাচনে মানুষ সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য। আওয়ামী লীগ জোর করে নিজের প্রার্থীকে জেতাতে যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলেছেন এবং হয়েছে; যা সারাদেশে প্রশংসিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনে একটি বিষয় পরিষ্কার, মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা নির্বাচন নিয়ে যে মিথ্যাচার করেছে যে, এই সরকার অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে না, করবে না সেটা গাজীপুরে প্রমাণ হয়েছে। শেখ হাসিনার ওয়াদা তিনি পূরণ করেছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হারবে কি জিতবে তার চেয়ে বড় কথা এই নির্বাচনে গণতন্ত্র জয়লাভ হয়েছে। আগামীতে চারটি সিটি নির্বাচন তারপর জাতীয় নির্বাচন একইভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে দ্য ইকোনিস্টের প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সেখানে বলা হয়েছে ক্ষমতায় তিনি দীর্ঘদিন আছেন বলে বাংলাদেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধি অনেক বেড়েছে এবং দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আজ সারা দুনিয়া প্রশংসা করে। আর দেশের একটি মহল দিনরাত শেখ হাসিনার দুর্নাম করে বেড়ায়। তাকে হত্যার হুমকি দেয়। এতে বাংলাদেশের মানুষ কষ্ট পায়। এই কথা বলে লক্ষ লক্ষ ভোট আওয়ামী লীগের হয়েছে। শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিলে তোমাদের (বিএনপি) ভোট কমে যাবে। আরো কমে যাবে। তলানিতে গিয়ে ঠেকবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ছয়টি জন্মদিন দাবি করে তিনি বলেন, আমি ফখরুলকে জিজ্ঞেসা করি, আপনাদের নেত্রীর জন্ম তারিখ কয়টা? আগে ছিল পাঁচটা। করোনা টেস্টে আরও একটা বেড়েছে। একটা মানুষের ছয়টা জন্মদিবস! যে দলের প্রধানের একাধিক জন্ম তারিখ সেই মিথ্যাবাদী দলের ক্ষমতায় আসার কোনো অধিকার নেই। তারা পনেরো আগস্টে মিথ্যা জন্মদিন পালন করে!
এ সময় আওয়ামী লীগের কেউ খারাপ কাজ করলে তাকে সংশোধিত হয়ে শেখ হাসিনার উন্নয়ন-অর্জনের দিকে খেয়াল রেখে নিজেকে পরিচালিত করার এ সময় পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহেমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার বাসায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে হাজার হাজার সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ী আসছেন তার ছয়দানার বাসায়। শনিবারও সেখানে ফুল আর মিষ্টির ছড়াছড়ি। মানুষের ভালোবাসার জবাব দিচ্ছেন নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম।
তবে এত উচ্ছ্বাসের মধ্যেও আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া জাহাঙ্গীরের শিবিরে অস্বস্তি আছে। কারণ তার সহযোগীরা মূল আওয়ামী লীগের। দলের প্রার্থী হেরে যাওয়ার পর পদ-পদবি পাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বাস ভবনে বিরাজ করছে নীরবতা। নেতাকর্মীদের কোনো আনাগোনা নেই।
শনিবার দুপুরে জাহাঙ্গীর আলমের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে তার মায়ের নির্বাচনে কাজ করা কর্মী ও সমর্থকরা দল বেঁধে তার বাস ভবনে আসছেন। অনেকের হাতে ফুল ও মিষ্টি। তারা মেয়র জায়েদা খাতুনের বাস ভবনের নিচতলা, দোতলা, তিনতলা ও বাড়ির প্রাঙ্গণে ভিড় করে আছেন। কিছুক্ষণ পরপর জায়েদা খাতুন বের হয়ে এসে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শুভেচ্ছার জবাব দিচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর আলম নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। সবাইকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছেন।
জাহাঙ্গীর আলম তার কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ সৃষ্টি করা যাবে না। আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করব।
জাহাঙ্গীর আলমের সান্নিধ্যে থেকে এবং তার মায়ের নির্বাচন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনে অনেক নেতাকর্মী বহিষ্কার হয়েছেন। কাউকে কাউকে শোকজ করা হয়েছে। তারা এখন কিছুটা উজ্জীবিত হলেও তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটা শঙ্কার মধ্যে আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সালনা এলাকার এক আওয়ামী লীগ নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম যখন দলের মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তখন আমিসহ প্রায় সব নেতাকর্মীই তার সঙ্গে ছিলাম। তিনি দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর তার কাছ থেকে অনেকে চলে গেছে আবার অনেকে গোপনে বা প্রকাশ্যে সম্পর্ক রেখেছে। এখন মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন বাকি আছে। এই কমিটিতে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে সখ্য থাকার কারণে তারা কোনো পদ-পদবি পাবেন কি না, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। এছাড়া মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের নির্বাচন অনেকে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে। আবার বেশিরভাগ গোপনে তার পক্ষে কাজ করেছে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা বেশ চিন্তায় আছি।
তিনি মনে করেন, জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগ ছেড়ে অন্য কোনো দলে যোগ দেবেন না। কারণ জাহাঙ্গীর ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। একই সঙ্গে ওই আওয়ামী লীগ নেতা আশা প্রকাশ করেন, যেহেতু জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন তার ছেলের জনপ্রিয়তার কারণেই মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, সেহেতু তার জনপ্রিয়তা দেখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীর আলমকে ফের দলে ফিরিয়ে নেবেন; যা দলের অনেক নেতাকর্মীই বিশ্বাস করেন।
অন্যদিকে টঙ্গীর আরিচপুর এলাকার বাসিন্দা সুজন মিয়া বলেন, আজমত উল্লা খান মেয়র মনোনয়ন পাওয়ার পর অনেকে ধরে নিয়েছিলেন বিজয় নিশ্চিত। নেতাকর্মীদের মাঝেও ছিল এমন আত্মবিশ্বাস। কিন্তু নির্বাচন শেষে ফলাফল দেখে সবাই হতবাক। তারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তাদের এমন ফল বিপর্যয় হবে। তিনি জানান, দুপুরের দিকে গিয়ে তিনি জানতে পারেন আজমত উল্লা খান বাসায় নেই। কোনো নেতাকর্মীকেও দেখতে পাননি।
জয়দেবপুর এলাকার আওয়ামী লীগের এক প্রবীণ নেতা নাম প্রকাশ না করে জানান, গাজীপুরের ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রের একটিতেও কোনো কর্মীর বুকে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের ব্যাজ ছিল না। কেন্দ্রগুলোতে কোনো এজেন্ট না থাকার পরও ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের জনপ্রিয়তায় অপরিচিত এক নারী আওয়ামী লীগের বাঘা প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন, যা আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের অপর এক নেতা বলেন, তারা সবকিছুর চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। প্রতিটি কেন্দ্রের কেন্দ্র কমিটি, ওয়ার্ড কমিটি, থানা কমিটিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের কাছ থেকে তাদের এলাকায় নৌকা প্রতীকের ফলাফল খারাপ হওয়ার কারণ জানতে চাইব। তার পর এ বিষয়ে কী করণীয় তা নিয়ে দলের মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এগিয়ে যাব। এখন সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনই দলের জন্য চ্যালেঞ্জ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা খানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের কী ভুলত্রুটি ছিল, নেতাকর্মীদের ভূমিকা কী ছিল, এসব বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। উপযুক্ত সময়ে আমরা সব বিষয়ে কথা বলব।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।