
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জনশক্তির ওপর কোনো শক্তি থাকতে পারে না। জনশক্তির বিরুদ্ধে কোনো অপশক্তি থাকতে পারে না। এটা বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার যুদ্ধে প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশের মানুষ ভাষার জন্য প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে প্রমাণ করেছে এবং এবারও প্রমাণ করছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের মানুষের যে অবস্থান সেটা তারা জানিয়ে দিয়েছে। কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে এবং বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে তারা এই কাজটি করছে।
আজ সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বনানীর তার অফিসে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য করে আমির খসরু বলেন, তারা চরম দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে বাংলাদেশের কোষাগার শূন্যের কোটায় নিয়ে গেছে। তারপর ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে চালাচ্ছে। তার উপড়ে আবার ৫০ হাজার কোটি টাকার নোট ছাপিয়েছে ইতিমধ্যে। তারা দেশে কীভাবে চালাচ্ছে এটা মানুষের জানা দরকার। তারা মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে, উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের টাকা শুধু লুটপাট করে দেশের তহবিল খালি করে নাই, এই টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
আমির খসরু বলেন, একদিকে মেগা প্রজেক্টের নামে লুটপাট করে টাকা বিদেশে পাচার করেছে। অন্যদিকে লুটপাট করে ব্যাংকগুলো খালি করে দিয়েছে। টাকার অভাবে এলসি খুলতে পারছে না, ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছে না। পুরো বিষয়টি হচ্ছে একটি অবৈধ দখলদার সরকার ক্ষমতায় রয়েছে যাদের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিটি জায়গায় লুটপাটের কারণে মূল্য বেড়ে যাচ্ছে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বলেন, অবৈধ দখলদার সরকার জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ক্ষমতা দখল করে অব্যাহতভাবে থাকতে চাচ্ছে। তারা চাচ্ছে এখানে একটি সহিংসতা, তারা নিজেরা সহিংসতা করছে এবং সহিংসতা বাড়ানোর একটি প্রক্রিয়া তারা করছে। সাম্প্রতিক আগুন সন্ত্রাসের কথা বলেছে, তারা বিরোধী দলে থাকতে আগুন সন্ত্রাস করেছে, সরকারি দলে থাকতে আগুন সন্ত্রাস করেছে, আবার এখন আগুন সন্ত্রাসের কথা বলছে সুতরাং এরা চাচ্ছে একটি সহিংসতা। অবৈধভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার যে একটি প্রক্রিয়া, ভোট চুরি করার প্রক্রিয়া রয়েছে এটাকে তারা অব্যাহত রাখতে চাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সহিংসতা চাচ্ছে না তারা চাচ্ছে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর, তারা জনগণের নির্বাচিত সরকার গঠন করতে চাচ্ছে। সুতরাং আন্দোলন সেদিকে চলছে এটাই আন্দোলনের ধারা, আমাদের এর বাইরে যাওয়ার কোনো প্রশ্ন ওঠে না।
২০১৫ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুইমাস আটকে রাখার পর তাকে ভারতে রেখে এসেছিল বলে ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। বর্তমানে দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন তিনি।
গতকাল রাতে ডয়চে ভেলের কাছে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি এ দাবি করেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি উত্তরায় এক বন্ধুর বাড়িতে ছিলাম। একদিন রাতে সাদা পোষাকের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অস্ত্রসহ আমাকে তুলে নেয়। চোখ বেঁধে ও হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে।
এরপর প্রায় ৬১দিন গোপন জায়গায় আটকে রেখে। ১০ মে একটি গাড়িতে তোলে। অনেক দূর নিয়ে যায়। কত ঘণ্টা বলতে পারবো না। তারা যেখানে অপেক্ষা করছিলো কয়েকঘন্টা ধরে। সেখানে নামার পর পায়ে হেটে কিছু এলাকা হাটিয়ে নেয়। পরে আবার একটি গাড়িতে তুলে নেয়। সকালের দিকে আমার চোখের পর্দা খুলে নিয়ে যায়।
সীমান্ত পার হওয়ার বিষয়টি কিভাবে বুঝলেন সে বিষয়ে তিনি বলেন, আমাকে এক জায়গায় হাটিয়ে নিয়ে পরে আবার গাড়িতে করে নিয়ে যায়। কেন মেঘালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সে বিষয়ে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।
খরচ কিভাবে চলে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, পরিবার আমার খরচের টাকা পাঠায়।
বাংলাদেশের সরকার কোনো যোগাযোগ করেছিলো কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। যেখানে বাংলাদেশ হাইকমিশন রয়েছে সেখানে গিয়েছিলাম ট্রাভেল পাসের জন্য। কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি।
সালাহউদ্দিন বলেন, মেঘালয় সরকার কেন্দ্রীয় ভারত সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছে আমাকে দেশে পাঠাতে। এখন কি অবস্থা বলতে পারবো নাবাংলাদেশের আদালতের মাধ্যমে কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলবো।
রাজনীতির বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি স্থায়ী কমিটির সদস্য। রাজনীতির সঙ্গে আছি। শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, খুব একটা ভালো নেই। আমার প্রথম পদক্ষেপ হবে চিকিৎসা।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গাছের চারা বিতরণসহ তিনটি দাবিতে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ পালন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ।
সোমবার (৫ জুন) দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন গাছের চারা বিতরণ করে পরিবেশ র্যালি বের করে দলটি। রাজু ভাস্কর্য থেকে, ভিসি চত্বর, শ্যাডো, কলা ভবন, লাইব্রেরি হয়ে শাহবাগে শেষ করে র্যালি। এ সময় তারা গাছ খেকো চাই না, নদী খেকো চাই না, খাল খেকো চাই না, গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান স্লোগান দেয়।
দিবসট উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা বলেন, আমরাতো মানুষের বাচ্চা, আমাদের সুকুমার বৃত্তির বিকাশের জন্য খেলার মাঠ দরকার, আমরা খাদ্য হিসেবে ফার্মে উৎপাদিত গুরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নই কিন্তু এখন শহরে বন্দরে বিভিন্ন শপিংমল ও বাণিজ্যিক ভবনে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে। তারা ছাত্রদের থেকে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে কিন্তু একটা মাঠ দিতে পারছে না।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বিন ইয়ামীন মোল্লা বলেন, আপনারা মাঠ চেয়ে আন্দোলন করুন ছাত্র অধিকার পরিষদ আপনাদের সাথে থাকবে। যারা গাছ খেকো, নদী খেকো, সাগর খেকো, পাহাড় খেকো, বন খেকো, পাথর খেকো, বালু খেকো, মাটি খেকো তারা দেশের সব থেকে বড় শক্র, মানব সভ্যতার শত্রু। এই দানবদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিক সাহেব চিফ হিট অফিসার নিয়োগ দিয়ে মানুষের সাথে আরও মশকরা করেছেন। ফেসবুকে তার কিছু নাচ গান ছাড়া আর কোন কাজ দেখলাম না। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তাপস সাহেব ধানমন্ডিতে উন্নয়নের নামে গাছ কাটছেন অথচ একটা গাছও তিনি কোনদিন লাগাননি। এভাবে উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করে প্রকল্পগুলো থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন আর দেশটাকে জাহান্নাম বানাচ্ছেন।
বিন ইয়ামীন মোল্লা বলেন, বায়ু দুষণে বিশ্বে প্রথম স্থান দখল করে আছে ঢাকা। বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় ১৭২ টির মধ্যে শেষ দিক থেকে সপ্তম। এই বায়ু দূষণ করছে যারা এসি গাড়ি, এসি বাড়ি, এসিতে অফিসে করছে, আর দূষণের শিকার হচ্ছে গরিবরা নানাবিধ অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে। সমাবেশ থেকে তিনটি দাবি উত্থাপন করেন এই নেতা।
১. প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ দিতে হবে। ২. ১৮ কোটি মানুষের জন্য ১৮ কোটি গাছ লাগাতে হবে। ৩. নদী, খাল, বিল-ঝিল খেলার মাঠ দখল মুক্ত করতে হবে।
এ ছাড়া তিনি ঘোষণা দেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের সারাদেশের ৫০ হাজার নেতাকর্মী ৫০ হাজার বৃক্ষরোপন করবে।
কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘পরিবেশ দূষণকারী, নদী, খাল দখলকারীদের রাজনীতিতে অবাঞ্ছিত করতে হবে। ঋণ খেলাপি ও ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিদের যেভাবে নির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিল করা হয় তেমনি পরিবেশ দূষণকারীদেরও নির্বাচনে প্রার্থীতা বাতিল করতে হবে। দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ থাকতে হবে।
কর্মসূচিতে ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নাহিদ উদ্দিন তারেক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, নাজমুল হাসান, মাহমুদুল হাসান, মামুনুর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক আহনাফ খান সাঈদ, মহানগর দক্ষিণ সভাপতি আসাদ বিন রনি, তিতুমীর সভাপতি নেওয়াজ খান বাপ্পিসহ কেন্দ্রীয় ও ইউনিটের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
ভারতের নতুন সংসদ ভবনে বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশকে অঙ্গীভূত করে ভিস্তা প্রকল্পের আওতায় তথাকথিত অখণ্ড ভারতের মানচিত্রের ম্যুরাল স্থাপনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
সোমবার (৫ জুন) এক বিবৃতিতে অখণ্ড ভারতের মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রদর্শনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
তিনি বিবৃতিতে বলেন, অখণ্ড ভারতের মানচিত্র প্রদর্শন স্বাধীন বাংলাদেশকে অস্বীকারের শামিল ও সার্বভৌমত্বের জন্য চপোটাঘাত। যারা বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য মনে করে তারাই এহেন স্বাধীনতা বিরোধী ও ধৃষ্ঠতা মনোভাব প্রদর্শন করেছে। ইতোপুর্বে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের ‘বাংলাদেশ ভারতের অংশ’ দাবী এবং হিন্দুমহাজোট মহাসচিব গোবিন্দ প্রমানিক ও শ্যামলী পরিবহনের মালিক গনেশ চন্দ্রের বাংলাদেশকে ভারতের অংশ করার শপথ গ্রহণ একসূত্রে গাঁথা। তাদের রাষ্ট্রদ্রোহী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তমুলক বক্তব্য বিবৃতি ও কর্মকান্ড দেশপ্রেমিক শক্তিকে হৃদয়ে আঘাত করেছে।
ওই বিবৃতিতে ডা. ইরান আরও বলেন, ভারতের বিজেপি সরকার কর্তৃক স্থাপিত এই ম্যুরাল বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও আত্মমর্যাদার প্রতি এক অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের অবমাননা এবং বাংলাদেশের জনগণের মর্যাদাবোধকে তা দারুণভাবে আহত করেছে। অখণ্ড ভারতের এই ম্যুরাল এই অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য খুবই উদ্বেগজনক। ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন উগ্র সাম্প্রদায়িক বিজেপি সরকার হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য অখণ্ড ভারতের মানচিত্রের ম্যুরাল স্থাপন করেছে। আমরা ভারতীয় আগ্রাসী নীতির তীব্র নিন্দা জানাই এবং তার পেছনে থাকা ইতিহাসের হিন্দুত্ববাদী পুনঃর্নির্মাণের প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করছি।
তিনি অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারকে ভারতীয় হাইকমিশনকে তলব করে তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়ে ‘অখণ্ড ভারতের ম্যুরাল অপসারণের পদক্ষেপ নিতে আহবান জানান।
আজ পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি স্থগিত করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আজ সোমবার (০৫ জুন) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, আগামী ১০ জুন বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি করবে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী। সমাবেশকে ঘিরে প্রশাসনেরও সহযোগিতা চেয়েছে দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আজকের কর্মসূচি স্থগিত করে আগামী শনিবার (১০ জুন) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে দুপুর ২টায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। শিগগিরই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চেয়ে পুলিশ প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হবে। আমরা আশা করছি, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা পাব। পুলিশ প্রশাসন যেন গণতন্ত্রবিরোধী, শান্তিপুর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে নিজেদের প্রতিবন্ধক হিসেবে দাঁড় না করায়, সে আহ্বান জানাই।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ২৩ দফার ভিত্তিতে গঠিত ১৪ দলীয় জোট আর বড় হবে না। সংগত ও যৌক্তিক কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হলে এ জোট ছোটও হবে না। যদিও জোট গঠনের শুরুতে ১৪ দল থাকলেও এখন এ জোটে ১৪টি দল নেই। যারা আছে তাদের বাইরে আর কোনো দল আদর্শিক এ জোটে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে নানা আলোচনা ছিল। কিন্তু গতকাল রবিবার ১৪ দলীয় জোটের সভায় জোট বড় না করারই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জোটের অন্যতম শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভা-ারী দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্প্রতি এ নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীও ১৪ দলীয় জোট বড় হবে না বলে জানিয়েছেন।’ বৈঠকে উপস্থিত জোটের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে একই তথ্য জানিয়ে বলেন, জোটের এ বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বিশদ আলোচনা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ১৪ দল। জোটের পক্ষ থেকে দ্রুত বাজার ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৈঠকে জোটের সমন্বয়ক-মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিটিং-সিটিং ও নানা আলোচনা হতে পারে। তার মানে এই নয় যে, এ দল ১৪ দলে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।
জোটের এক নেতা আমুর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনে যত বেশি দলের অংশগ্রহণ ঘটে সরকারপ্রধান সেই চেষ্টা করছেন। আমি ও আমরা ১৪ দল তাই চায়। তার উদ্দেশ্য জোটে নেওয়া নয়। এ ব্যাপারে ভাবনার কোনো কারণ নেই।’
বৈঠকের আলোচনায় আরও ছিল যে, বিএনপি নির্বাচনে এলেও জোটগতভাবেই আগামী নির্বাচন করবে, না এলেও জোটগতভাবেই নির্বাচন হবে। এক্ষেত্রে আসন ভাগাভাগি নিয়ে দফারফা হবে।
১৪ দলীয় জোটের আরেক নেতা বলেন, এই সময়ে আসন ভাগাভাগির বিষয় নিয়ে জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন আলোচনা তুললে সে আলোচনা এখন নয় জানিয়ে তার বক্তব্যের রাশ টেনে ধরেন সমন্বয়ক আমু।
বৈঠকে জোটগতভাবে সারা দেশে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে ৬ জুন মঙ্গলবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে জোটের এ সভায়। এরপর ধারাবাহিক কর্মসূচির দিনক্ষণও ঠিক করবেন তারা।
বৈঠকে উপস্থিত জোটের একাধিক নেতা আমির হোসেন আমুর উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলেন, আসন্ন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে অনেক দলকে নির্বাচনে আনতে প্রয়োজনে ভিন্ন কোনো ফ্রন্ট হলেও হতে পারে। সেটা নির্বাচনী জোট হবে। আদর্শিক জোট নয়। এর আগেও জাতীয় নির্বাচনে মহাজোট হয়েছে, সামনেও তেমন কিছু হতে পারে। কিন্তু ১৪ দলে যুক্ত করে নয়।
মার্কিন ভিসানীতি দুরভিসন্ধিমূলক : যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতিবাচকভাবে দেখে এলেও ১৪ দলীয় জোট নেতারা ভিসানীতিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন। ১৪ দলের দাবি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি দুরভিসন্ধিমূলক। ভিসানীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থানের সঙ্গে একমত হয়নি ১৪ দল।
ইস্কাটনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠকে আলোচনা শেষে জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এ দাবি করেন। জোটের সমন্বয়কের ইস্কাটনের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন আমির হোসেন আমু। জোটের বৈঠক শেষে আমু দাবি করেন, এ ভিসানীতি অনাকাক্সিক্ষত।
তবে জোটের অন্যতম নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বারবার দাবি করেছেন, এটা আওয়ামী লীগকে টার্গেট করে করা হয়নি। এ বিষয়ে আমু বলেন, ‘আমরা ভিসানীতিকে অনাকাক্সিক্ষত মনে করি। আরেকটা কথা হলো, এটা তো ১৪ দল। আওয়ামী লীগের মিটিং না। মনে রাখবেন। আমরা তো রাবার স্ট্যাম্প না। এখানে আরও ১৩টা দল আছে, সবাই তো আওয়ামী লীগ না, এটা আপনাকে মনে রাখতে হবে। এখানে কথাটা হচ্ছে ১৪ দল যেটা ফিল করে, সেটাই বলবে। অন্যদল কে কী বলবে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। আমাদের আলোচনায় যেটা আসবে সেটা আমরা প্রকাশ করব।’
আমির হোসেন আমু বলেন, ‘মার্কিন ভিসানীতি অনাকাক্সিক্ষত ও অনাহূতভাবে আসায় তা অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক মনে হচ্ছে। এটা কারও কারও পক্ষে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি জাতি সংবিধানের প্রত্যেকটি প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকবে। আমরা একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। এক্ষেত্রে অন্য কোনো হস্তক্ষেপ আমরা কামনা করি না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি যারা নির্বাচনকে বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে বানচাল করতে চায়, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের জন্য এটা (ভিসানীতি) সহায়ক হতে পারে। সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা কথাগুলো বলতে চাই।’
বাজেট নিয়ে সংসদে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানিয়ে আমু বলেন, ‘আমরা যেহেতু পড়াশোনার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা পয়সায় বই বিতরণ করছেন। সবকিছু ঠিক আছে। সেক্ষেত্রে কলম ও কাগজের দাম বৃদ্ধি পড়াশোনার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। সংবাদপত্রের ওপর ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। তাই আমরা মনে করি কাগজ-কলমের দাম কমানো উচিত। আরোপিত কর প্রত্যাহার করা উচিত।’
বৈঠকে আরও ছিলেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন প্রমুখ।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।