
ভারতের আদালতে বেকসুর খালাস পাওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে অবিলম্বে সসম্মানে দেশে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
একইসঙ্গে, সালাহ উদ্দিন আহমেদের মানবাধিকার সমুন্নত রেখে তার সম্মান রক্ষার আহ্বানও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। তাকে বিনা কারণে অন্যায়ভাবে দীর্ঘ ৮ বছর ভারতে কারাগারে ও নজরবন্দি অবস্থায় কাটাতে হয়েছে। এখন তাকে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বেকসুর খালাস দিয়েছে। অবিলম্বে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকারের। আমরা বাংলাদেশ সরকারের নিকট আহ্বান জানাচ্ছি সালাহ উদ্দিন আহমেদকে মুক্ত অবস্থায় অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন।’
তিনি বলেন. ‘সালাহ উদ্দিন আহমেদকে অপহরণ ও গুম করার পর তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করার জন্য অনেকবার চেষ্টা করেও পুলিশি অসহযোগিতার কারণে ব্যর্থ হন। তারপর হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করলে আদালত সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে বের করতে সরকারকে নির্দেশনা দেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিশ্বের প্রায় সকল মানবাধিকার সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং তার মুক্তি ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানায়। দেশে-বিদেশে গণমাধ্যমগুলো এ বিষয়ে সোচ্চার ছিল। পাশাপাশি, বাংলাদেশে অবস্থিত প্রায় সকল গণতান্ত্রিক দেশের দূতাবাসগুলোকে বিএনপির পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হলে তাদের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত কূটনৈতিক সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়া যায়। সকলের আন্তরিক সমর্থন ও সহযোগিতা এবং উল্লেখিত সব মহলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘২০১৫ সালের উত্তাল সরকারবিরোধী আন্দোলন দমাতে ১০ মার্চ ২০১৫ রাত প্রায় ১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে কিছু সাদা পোশাকধারী সশস্ত্র সদস্যরা উত্তরার এক বন্ধুর বাসা থেকে সালাহউদ্দিনকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ ৬১ দিন অজ্ঞাত স্থানে তাকে গুম করে রাখা হয়।
অবশেষে, ১০মে ২০১৫ চোখ বাঁধা অবস্থায় একটি গাড়িতে করে তাকে দীর্ঘ পথযাত্রা করিয়ে ১১মে ২০১৫ তারিখে ভোররাতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ের গলফ লিংক রাস্তার ওপর ফেলে রেখে যায়। এরপর থেকে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হয় তাতে তাকে জেল খাটেন তিনি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবত ভারতে মিথ্যা মামলা মোকাবিলা করে নির্বাসিত জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বিচারিক আদালত ও আপিল আদালতের রায়ে বেকসুর খালস পেয়েছেন। এ রায়ের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয় যে, সালাহ উদ্দিন আহমেদকে বাংলাদেশের এই অবৈধ সরকার চক্রান্ত করে সীমাহীন নির্যাতন ও হয়রানি করেছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৪ জন নেতা কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সাফল্যে খুশি বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করছেন, প্রতিকূল পরিবেশে জয়ী হয়ে আসা দুষ্কর। ক্ষমতাসীনদের দাপটের মধ্যে জয়ী হয়ে আসায় আগামীর আন্দোলন সংগ্রামে স্থানীয় রাজনীতিতে তারা আরও প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন। তবে জয়ী হলেও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এখনই এই নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। পরবর্তিত পরিস্থিতিতে এসব নেতার দলের সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে, সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেদের ভূমিকা রাখতে পারলে এবং দলের শক্তি বাড়ানোর প্রয়োজনে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত দিতে পারে বিএনপি।
যদি নিজেদের ভুল স্বীকার করে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের অনেকেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বাস্তবতা তুলে ধরে দলীয় কর্মকা-ে যোগদানের সুযোগ চাওয়া হয়েছে। এই নেতারা মনে করেন, বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবিতে সর্বক্ষেত্রে শক্তির অংশ হিসেবে গাজীপুরেও তারা ভূমিকা রাখতে চান।
বহিষ্কৃতদের এমন মনোভাবের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০১-পরবর্তী সময়ে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সারা দেশের জনপ্রতিনিধিদের ১০টি ভাগে ভাগ করে প্রায় ৪ হাজার জনপ্রতিনিধির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তারেক রহমান বলেছেন, সব মান-অভিমান ভুলে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ে দলটির কেন্দ্রীয় নির্দেশ পালন ও বাস্তবায়ন করুন।
জানতে চাইলে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সদর থানা যুবদলের আহ্বায়ক হাসান আজমল ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে জানান, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি। ফলে গাজীপুর নির্বাচনে কাউন্সিলর যারা প্রার্থী হয়েছেন তারাও পূর্বের সিদ্ধান্তগুলো ফলো করেছেন। কিন্তু দল যখন আমাদের নির্বাচন থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছে, তখন মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ ছিল না। ফলে ১৭ মে বহিষ্কারাদেশের চিঠি দেওয়ার পর ১৯ মে আমি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছি। যেহেতু আমি ২০ বছর ধরে এই এলাকার জনপ্রতিনিধি, তাই ভোটাররাই আমাকে জয়ী করেছেন। তিনি জানান, আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভুল করেছি, দলের সিদ্ধান্তই সঠিক এমনটি জানিয়ে ১৯ মে আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বরাবর ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিয়েছি, বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার জন্য। দলের মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকদের বরাবর প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর এখনো কেন্দ্রে যোগাযোগ করিনি। খুব শিগগিরই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী দিকনির্দেশনা চাইব।
২৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী কাউন্সিলর ও সদর থানার বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হান্নান মিয়াও জানিয়েছেন, ক্ষমা চেয়ে কেন্দ্রে চিঠি দেবেন।
গত ১৭ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ২৯ নেতার আজীবন বহিষ্কারের কথা জানিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়।
দলটির নীতিনির্ধারকদের শঙ্কা ছিল, অনেক জনপ্রতিনিধিকে নানা প্রলোভনে ফেলে কিংবা তাদের রাগ-ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে দলের ব্যানারে নির্বাচনে নিতে চেষ্টা করবে সরকার। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপনির্বাচনের পর সেই প্রবণতা দেখা গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলের একটি অংশকে এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে নিতে চায় এমন আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এখনই কঠোর না হলে দলের শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না মনে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এমন বাস্তবতায় দলের নেতাদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। সতর্কতা আমলে না নিয়ে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি কার্যকর করে ভবিষ্যতে নেতাদের শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার কৌশল নিয়েছে দলটি।
জানতে চাইলে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেখানে আমরা এই সরকারের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া জন্য আন্দোলন করছি, এই মুহূর্তে তাদের নির্বাচনে যাওয়া উচিত ছিল না। দলীয় শৃঙ্খলা ফেরাতে আমাদের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন মূল ভিত্তি বিএনপির রাজনীতি করার মধ্য দিয়ে। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তারা নির্বাচন করে জয়ী হলে বিএনপির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ দেওয়া যেত। কিন্তু তারা দলের বৃহত্তর স্বার্থের প্রতি নজর না দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থের প্রতি মনোযোগ বেশি দিয়েছেন।
তবে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান পর্যায়ের এক নেতা জানান, কাউন্সিলর পদে জয়ী হওয়ায় মূলত বিএনপি খুশি। কেননা, দলের স্বার্থে যেকোনো সময় তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে কাজে লাগানো যাবে। আবার বহিষ্কার থাকায় দলে ফিরতে এসব নেতারা দলীয় কর্মকা-ে আরও বেশি সক্রিয় থাকবেন। ফলে বিএনপির তাদের বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে অংশ নেওয়া দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৈমুর আলম খন্দকারের মতো ক্ষমা চেয়ে আবেদন করলেও গ্রহণ না করে ঝুলিয়ে রাখবে।
সূত্রগুলো বলছে, ১৫, ১৯, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৮, ৩০, ৪০, ৪২, ৪৮ ও ৫৫ এবং সংরক্ষিত ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিএনপির বহিষ্কৃতরা জয়ী হয়েছেন। এই ভোটের এমন ফলাফল নিয়ে স্থানীয়ভাবে নানা আলোচনা হচ্ছে। স্থানীয় রাজনীতিকদের অনেকে মনে করছেন, ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ও বিএনপির নীরব ভোটারদের সমর্থনের কারণেই তারা জয়ী হয়েছেন। তবে আলোচনা রয়েছে- যেসব ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা জিতেছেন, সেসব ওয়ার্ডে মেয়র পদে জায়েদা খাতুন বেশি ভোট পেয়েছেন। বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ‘আঁতাত করায়’ ফলাফল এমন হয়েছে।
তবে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলছেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো থাকায় বিএনপি সমর্থকদের অনেকেই নিজ দলের কাউন্সিলর প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। আর নৌকা প্রতীকের পরাজয় ঘটাতে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনকে ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান গত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন। তাদের নির্বাচিত হওয়া বা না হওয়ায় বিএনপির কিছু যায় আসে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দলটির সভাপতিমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী ও সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভা আজ রোববার।
বিকাল ৪টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ যৌথ সভায় সভাপতিত্ব করবেন।
স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে যথাসময়ে সংশ্লিষ্টদের সভায় উপস্থিত থাকার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, সরকার ক্ষমতায় থাকতে বিদেশি শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তারা গোপন চুক্তির মাধ্যমে দেশের বহু এলাকা বিদেশিদের কাছে তুলে দিয়ে আগ্রাসনের পথ করে দিয়েছে। ক্ষমতা থেকে গেলে সব বের হবে। তখন কোনো প্রভু তাদের বাঁচাতে পারবে না।
আজ শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি দেশের জন্য লজ্জার। সরকারের লোকজনকে কোথাও ভিসা দেয়া হবে না। কোনো সভ্যদেশ আপনাদের যায়গা দেবে না, কোথাও আপনাদের যায়গা হবে না। বাংলার মাটিতেই থাকতে হবে। সকল অপকর্মের বিচার এই দেশের মাটিতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করছে সরকার। বিএনপির কর্মীদের ঘরে ঘুমাতে দেয়নি তারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিচার হবে, শাস্তি হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। কিন্তু বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবেই সবকিছু মোকাবিলা করবে। জনগণই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ সময় দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রতিরোধ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনেই নির্বাচন হবে। সরকারকে বিদায় নিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। জনগণ অতীতের মতো আবারও বিএনপিকে ক্ষমতায় আনবে।
ঝড়বৃষ্টিসহ দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। অবিলম্বে বর্তমান সরকার পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি ও দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনুর মুক্তি দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া দেশের ১৫ জেলা ও মহানগরে আজ জনসমাবেশ করছে বিএনপি। একইসঙ্গে সমমনা গণফোরাম জোটের উদ্যোগেও একই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দাবিতে ঢাকাসহ দেশের ১৫ জেলা ও মহানগরে জনসমাবেশ করবে বিএনপি।
বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচির শেষ দিনে শনিবার (২৭ মে) ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দলের অন্যান্য দাবির সঙ্গে মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর মুক্তির দাবিও রয়েছে।
সারাদেশে সমাবেশ সফল করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, নোয়াখালীতে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, পঞ্চগড়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাহিদ হোসেন, বাগেরহাটে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ঝিনাইদহে ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, নড়াইলে ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, জয়পুরহাটে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, নাটোরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, শরীয়তপুরে উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, যশোর জেলা বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, হবিগঞ্জে যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গাইবান্ধায় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল উপস্থিত থাকবেন। গণফোরাম জোটের উদ্যোগে মতিঝিল নটর ডেম কলেজের উল্টো দিকে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
গত ১৩ মে সারাদেশে দলের ৮২ সাংগঠনিক ইউনিটে চার দিনের এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার, পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং, দুর্নীতির প্রতিবাদ’ এবং ১০ দফা দাবিতে এ জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সে সঙ্গে সমমনা গণফোরাম জোটের উদ্যোগেও একই কর্মসূচি পালন করা হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৪ জন নেতা কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সাফল্যে খুশি বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করছেন, প্রতিকূল পরিবেশে জয়ী হয়ে আসা দুষ্কর। ক্ষমতাসীনদের দাপটের মধ্যে জয়ী হয়ে আসায় আগামীর আন্দোলন সংগ্রামে স্থানীয় রাজনীতিতে তারা আরও প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন। তবে জয়ী হলেও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এখনই এই নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। পরবর্তিত পরিস্থিতিতে এসব নেতার দলের সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে, সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেদের ভূমিকা রাখতে পারলে এবং দলের শক্তি বাড়ানোর প্রয়োজনে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত দিতে পারে বিএনপি।
যদি নিজেদের ভুল স্বীকার করে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের অনেকেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বাস্তবতা তুলে ধরে দলীয় কর্মকা-ে যোগদানের সুযোগ চাওয়া হয়েছে। এই নেতারা মনে করেন, বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবিতে সর্বক্ষেত্রে শক্তির অংশ হিসেবে গাজীপুরেও তারা ভূমিকা রাখতে চান।
বহিষ্কৃতদের এমন মনোভাবের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০১-পরবর্তী সময়ে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সারা দেশের জনপ্রতিনিধিদের ১০টি ভাগে ভাগ করে প্রায় ৪ হাজার জনপ্রতিনিধির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তারেক রহমান বলেছেন, সব মান-অভিমান ভুলে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ে দলটির কেন্দ্রীয় নির্দেশ পালন ও বাস্তবায়ন করুন।
জানতে চাইলে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সদর থানা যুবদলের আহ্বায়ক হাসান আজমল ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে জানান, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি। ফলে গাজীপুর নির্বাচনে কাউন্সিলর যারা প্রার্থী হয়েছেন তারাও পূর্বের সিদ্ধান্তগুলো ফলো করেছেন। কিন্তু দল যখন আমাদের নির্বাচন থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছে, তখন মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ ছিল না। ফলে ১৭ মে বহিষ্কারাদেশের চিঠি দেওয়ার পর ১৯ মে আমি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছি। যেহেতু আমি ২০ বছর ধরে এই এলাকার জনপ্রতিনিধি, তাই ভোটাররাই আমাকে জয়ী করেছেন। তিনি জানান, আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভুল করেছি, দলের সিদ্ধান্তই সঠিক এমনটি জানিয়ে ১৯ মে আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বরাবর ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিয়েছি, বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার জন্য। দলের মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকদের বরাবর প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর এখনো কেন্দ্রে যোগাযোগ করিনি। খুব শিগগিরই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী দিকনির্দেশনা চাইব।
২৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী কাউন্সিলর ও সদর থানার বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হান্নান মিয়াও জানিয়েছেন, ক্ষমা চেয়ে কেন্দ্রে চিঠি দেবেন।
গত ১৭ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ২৯ নেতার আজীবন বহিষ্কারের কথা জানিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়।
দলটির নীতিনির্ধারকদের শঙ্কা ছিল, অনেক জনপ্রতিনিধিকে নানা প্রলোভনে ফেলে কিংবা তাদের রাগ-ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে দলের ব্যানারে নির্বাচনে নিতে চেষ্টা করবে সরকার। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপনির্বাচনের পর সেই প্রবণতা দেখা গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলের একটি অংশকে এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে নিতে চায় এমন আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এখনই কঠোর না হলে দলের শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না মনে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এমন বাস্তবতায় দলের নেতাদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। সতর্কতা আমলে না নিয়ে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি কার্যকর করে ভবিষ্যতে নেতাদের শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার কৌশল নিয়েছে দলটি।
জানতে চাইলে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেখানে আমরা এই সরকারের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া জন্য আন্দোলন করছি, এই মুহূর্তে তাদের নির্বাচনে যাওয়া উচিত ছিল না। দলীয় শৃঙ্খলা ফেরাতে আমাদের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন মূল ভিত্তি বিএনপির রাজনীতি করার মধ্য দিয়ে। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তারা নির্বাচন করে জয়ী হলে বিএনপির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ দেওয়া যেত। কিন্তু তারা দলের বৃহত্তর স্বার্থের প্রতি নজর না দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থের প্রতি মনোযোগ বেশি দিয়েছেন।
তবে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান পর্যায়ের এক নেতা জানান, কাউন্সিলর পদে জয়ী হওয়ায় মূলত বিএনপি খুশি। কেননা, দলের স্বার্থে যেকোনো সময় তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে কাজে লাগানো যাবে। আবার বহিষ্কার থাকায় দলে ফিরতে এসব নেতারা দলীয় কর্মকা-ে আরও বেশি সক্রিয় থাকবেন। ফলে বিএনপির তাদের বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে অংশ নেওয়া দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৈমুর আলম খন্দকারের মতো ক্ষমা চেয়ে আবেদন করলেও গ্রহণ না করে ঝুলিয়ে রাখবে।
সূত্রগুলো বলছে, ১৫, ১৯, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৮, ৩০, ৪০, ৪২, ৪৮ ও ৫৫ এবং সংরক্ষিত ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিএনপির বহিষ্কৃতরা জয়ী হয়েছেন। এই ভোটের এমন ফলাফল নিয়ে স্থানীয়ভাবে নানা আলোচনা হচ্ছে। স্থানীয় রাজনীতিকদের অনেকে মনে করছেন, ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ও বিএনপির নীরব ভোটারদের সমর্থনের কারণেই তারা জয়ী হয়েছেন। তবে আলোচনা রয়েছে- যেসব ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা জিতেছেন, সেসব ওয়ার্ডে মেয়র পদে জায়েদা খাতুন বেশি ভোট পেয়েছেন। বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ‘আঁতাত করায়’ ফলাফল এমন হয়েছে।
তবে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলছেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো থাকায় বিএনপি সমর্থকদের অনেকেই নিজ দলের কাউন্সিলর প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। আর নৌকা প্রতীকের পরাজয় ঘটাতে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনকে ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান গত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন। তাদের নির্বাচিত হওয়া বা না হওয়ায় বিএনপির কিছু যায় আসে না।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।