
আল্লাহতায়ালা মহাপ্রজ্ঞাময়। তার কোনো কাজই প্রজ্ঞাবিহীন নয়। বলা হয়ে থাকে, ‘প্রজ্ঞাবানের কর্ম প্রজ্ঞাবিহীন হয় না।’ এ হিসেবে মুমিনদের ওপর সিয়াম বা রোজা ফরজ করার পেছনেও বিশ্বপ্রভুর একটি মহান উদ্দেশ্য নিহিত আছে।
তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত হওয়া
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা আল বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
এ আয়াতে রোজা ফরজ করার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তাকওয়া অর্জন। তাকওয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ সতর্ক হওয়া, ভয় করা, সংযত হওয়া, বেঁচে থাকা, পরহেজ করা, শক্তি সঞ্চয় করা, দায়িত্বশীল হওয়া, জবাবদিহির দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পাদন করা। পরিভাষায় তাকওয়া বলা হয় সতর্ক ও সচেতনতার সঙ্গে পরকালে আল্লাহতায়ালার কাছে জবাবদিহির মনোভাব নিয়ে নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী সব কাজ সম্পাদন করা। তার সন্তুষ্টির পরিপন্থী সব কাজ বর্জন করা।
তাকওয়ার বৈশিষ্ট্য হলো ছয়টি। যেমন- ১. সত্যের সন্ধান, ২. সত্য গ্রহণ, ৩. সত্যের ওপর অটল থাকা, ৪. আল্লাহভীতি, ৫. দায়িত্বানুভূতি, ৬. জবাবদিহিভিত্তিক দায়িত্বশীলতার সঙ্গে যথাযথভাবে কর্তব্য সম্পাদন। আলোচ্য ছয়টি বৈশিষ্ট্যের আলোকে জীবনের সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা, আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী সব কাজ সম্পাদন করা, তার সন্তুষ্টির পরিপন্থী সব মত ও পথ পরিহার করা, যেসব কাজে তিনি অসন্তুষ্ট হন এবং যে পথে চললে তার সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল হয়, তা বর্জন করার নামই তাকওয়া।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
সিয়াম সাধনার আরেকটি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, বান্দার প্রতি প্রদত্ত আল্লাহতায়ালার অগণিত নেয়ামতের, বিশেষ করে দীনের সঠিক পথের সন্ধান দানের জন্য শুকরিয়া আদায় ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। বান্দার প্রতি আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হলো দীনের হেদায়েত দান। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েতের ও সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশক, আর ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাস পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য সময় গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা চান না। যাতে তোমরা গণনা পূরণ করো এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহতায়ালার মহত্ত্ব বর্ণনা করো, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
এ আয়াতে সিয়াম ফরজ করার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
আল্লাহ মুমিনদের দীনের সঠিক পথপ্রদর্শন করার কারণে তার শুকরিয়া আদায় করা অপরিহার্য। আর এ শুকরিয়া আদায় করা হয় সিয়াম সাধনা, তারাবি, ইফতার, সাহরি, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা, জিকির-আজকার ইত্যাদির মাধ্যমে। উত্তম শুকরিয়া হলো, কর্মের মাধ্যমে তা প্রকাশ করা। আর কর্মের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কর্ম হলো সিয়াম সাধনা। আর এজন্যই সিয়ামের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে।
পাশবিক ইচ্ছা ও জৈবিক অভ্যাস থেকে মুক্ত হওয়া
আল্লামা ইবনুল কায়িম সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, সিয়ামের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে তার পাশবিক ইচ্ছা ও জৈবিক অভ্যাস থেকে মুক্ত করা এবং জৈবিক চাহিদাগুলোর মধ্যে সুস্থতা ও স্বাভাবিকতা প্রতিষ্ঠা করা। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতা অর্জন করে চিরন্তন জীবনের অনন্ত সফলতার চূড়ায় আরোহণ করে। পশুত্ব নিস্তেজ হয়ে মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয়। সিয়াম দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের প্রতি সহানুভূতির উদ্রেক করে মানুষের শারীরিক ও আত্মিক শক্তির উন্নতি করে এবং পাশবিক চাহিদা, যা মানুষের স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করে, তা থেকে মুক্ত করে। তদ্রুপ সিয়াম কলবের ইসলাহ ও চরিত্র সংশোধনের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। (জাদুল মাআদ, প্রম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ১৫২)
জাগতিক ও দৈহিক উৎকর্ষ সাধন
আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উৎকর্ষ সাধনে সিয়ামের ভূমিকা বর্ণনাতীত। সিয়াম সাধনায় যেমন আত্মিক পরিচ্ছন্নতা রয়েছে, তেমনি রয়েছে দৈহিক সুস্থতা ও স্বাচ্ছন্দ্য। অধ্যক্ষ ডাক্তার বিসি গুপ্ত বলেছেন, ইসলাম সিয়াম সাধনার যে বৈজ্ঞানিক নির্দেশ দিয়েছে, তা মানুষের দৈহিক ও আত্মিক মঙ্গল সাধনে সক্ষম, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ডাক্তার আর ক্যামবারড বলেছেন, সিয়াম পরিপক্ব শক্তির সহায়ক। ডক্টর এমারসন বলেন, যদি কারও স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য উপবাসের প্রয়োজন হয়, তবে সে যেন ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী সিয়াম পালন করে। সুতরাং এ কথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, সিয়াম সাধনায় দৈহিক ও আধ্যাত্মিক পরিবর্তন হয়।
ধৈর্য ও সহানুভূতির শিক্ষা
সিয়াম সাধনা সিয়াম পালনকারীকে ধৈর্য ও সহানুভূতির শিক্ষা দান করে। আত্মসংযম ও আত্মত্যাগের মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দৈহিক, আত্মিক ও মানসিক অবস্থা পরিশুদ্ধ হয়। নিজে জঠরজ্বালা সহ্য করে এবং সমাজের গরিব-দুঃখী, ফকির-মিসকিন, যারা উপবাসে দিন কাটায়, তাদের অবস্থা অনুভব করে। তাই রমজান মাসকে বলা হয় ধৈর্য ও সহ-মমতার মাস।
আত্মশুদ্ধি ও প্রবৃত্তি দমন
সিয়াম সাধনা প্রবৃত্তি দমনের মাধ্যমে কামনা-বাসনার শিখা নির্বাপিত করে। আত্মার লালসা দূরীভূত করে মুমিনের দেহ ও মনে পরিচ্ছন্নতা আনয়ন করে। ফলে সিয়াম সাধনা আত্মশুদ্ধির অন্যতম সুযোগ। সিয়াম প্রবৃত্তি পুড়ে ছাই করে দিয়ে মুত্তাকি হওয়ার পরম সুযোগ করে দেয়। সিয়াম সাধনা অনর্থক কাজ, মিথ্যা বচন, প্রবঞ্চনা, পরনিন্দা, অশ্লীলতা, অসৎকর্ম, কর্কশ বাক্য ব্যবহার ইত্যাদি থেকে মুক্ত রাখে। মহানবী (সা.) বলেন, পাঁচটি জিনিস সিয়াম নষ্ট করে দেয়। তা হলো- মিথ্যা কথা, পরনিন্দা, কূটনামি, মিথ্যা শপথ ও কামভাবে দৃষ্টিপাত। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যা কাজ করা ছাড়তে পারল না, তার পানাহার ত্যাগ তথা রোজা রাখা আল্লাহর কোনোই প্রয়োজন নেই।’ (বোখারি, হাদিস : ১৭৭০)
ঐশ্বরিক গুণে গুণান্বিত হওয়া
সিয়াম সাধনা মানুষকে ঐশ্বরিক গুণে গুণান্বিত করে। ইমাম গাজালি (রহ.) ‘ইয়াহইয়াউল উলুম’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘আখলাকে ইলাহি তথা ঐশ্বরিক গুণে মানুষকে গুণান্বিত করে তোলাই সিয়ামের উদ্দেশ্য। আল্লাহতায়ালা পানাহার করেন না। রোজাদার পানাহার বর্জনের ফলে আখলাকে ইলাহির গুণে গুণান্বিত হয়। তদ্রুপ সিয়াম সাধনার মাধ্যমে রোজাদার ফেরেশতার গুণে গুণান্বিত হয়। ফেরেশতারা যেমন পানাহার করে না, রোজাদারও পানাহার করে না। ফলে পানাহার ও কামাচার বর্জনের দিক দিয়ে ফেরেশতা ও রোজাদার সমগুণে গুণান্বিত হয়। ফলে রোজাদার এমন মর্যাদাসম্পন্ন হয় যে, তার মুখের গন্ধ আল্লাহতায়ালার কাছে মৃগনাভির সুঘ্রাণের চেয়েও উত্তম। (মুসলিম, হাদিস : ১৯৪৫)
বিবেকের শাসন
মানব দেহের মূল হলো নফস বা আত্মা। এই আত্মাকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং মন্দ চিন্তা থেকে মুক্ত রাখার একমাত্র পন্থা হলো সিয়াম পালন। নফস বা প্রবৃত্তিকে বিবেকের শাসন মানতে অভ্যস্ত করে তোলাই সিয়ামের উদ্দেশ্য। প্রবৃত্তি ও বিবেক এই দুয়ের জয়-পরাজয় নিয়েই মানুষের মধ্যে পশুত্ব ও সততার জয়-পরাজয় সূচিত হয়ে থাকে আর সিয়াম পালনের মাধ্যমেই পশুত্বের ওপর সততা ও অন্যায়ের ওপর ন্যায় বিজয়ী হয়।
পাপমুক্তি
সিয়াম সাধনা নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখার শ্রেষ্ঠ পন্থা। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল অথচ গুনাহগুলো মাফ করিয়ে নিতে পারল না, সে ধ্বংস হোক। (আদারুল মুদরাবাদ, ইমাম বোখারি) এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তে দোয়া কবুল হয়। বিশেষ করে ইফতারের সময়, শেষ রাতে, কদরের রাতে, জুমার দিনে। এ মাসের দানে ৭০০ গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। একটি নফল আদায় করলে ফরজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। আল্লাহতায়ালা নিজে সিয়াম পালনকারীর প্রতিদান প্রদান করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ১৯৪৫)
জান্নাতে একটি দরজার নাম রাইয়ান, যা দিয়ে শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবেন। এ মাসের প্রম ১০ দিন রহমতের, মধ্য ১০ দিন মাগফিরাতের এবং শেষ ১০ দিন নাজাতের। অতএব, সবদিক বিবেচনা করলে স্পষ্ট হয় যে নিজেকে পাপমুক্ত রাখার এবং অধিক পুণ্য লাভের মুখ্য সময় হলো এ মাহে রমজান।
৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত এই পাঁচ দিনকে হজের দিন বলা হয়। আপনি যদি তামাত্তু হজপালনকারী (বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ হজযাত্রী তামাত্তু হজপালন করেন। তামাত্তু হজ হলো, এক ইহরামে ওমরা শেষ করে আলাদা ইহরাম করে হজপালন করা) হন, তাহলে আজ আগের মতো আবার ইহরাম বেঁধে নিন। তারপর এভাবে ইহরামের নিয়ত করুন : ‘হে আল্লাহ! আমি তামাত্তু হজ করতে ইচ্ছা করেছি, আপনি এ হজ আমার জন্য সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে কবুল করুন।’ নিয়তের সঙ্গে সঙ্গে তিনবার তালবিয়া একটু উচ্চ স্বরে পড়ুন। (মহিলারা নীরবে পড়ুন)। যারা কিরান বা ইফরাদ হজপালন করার নিয়ত করেছেন, তারা তো আগে থেকেই ইহরামের অবস্থায় আছেন, কাজেই নতুন করে ইহরাম বাঁধতে হবে না।
৭ জিলহজ রাত থেকে সাধারণত হজযাত্রীদের মিনার নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। রাতে যেতে না পারলে ৮ জিলহজ সকালে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মিনার উদ্দেশে রওনা হবেন। সেখানে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা এবং ৯ জিলহজের ফজরের নামাজ আদায় করা এবং রাতে মিনায় অবস্থান করা সুন্নত।
হজের দ্বিতীয় দিন ৯ জিলহজ আরাফায় অবস্থান ফরজ। ফজরের নামাজ মিনায় পড়ে আরাফার ময়দানের দিকে রওনা করতে হয়। প্রয়োজনে ফজরের আগে রাতেও আরাফার উদ্দেশে রওনা করা যাবে। আরাফার ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে। আরাফার ময়দানে দোয়া কবুল হয়। সুতরাং এ সময় সবাইকে দোয়ায় মগ্ন থাকা উচিত। আরাফার ময়দানে জাবালে রহমতের কাছাকাছি অবস্থান করা ভালো। জোহর এবং আসরের নামাজ মসজিদে নামিরায় জামাতের সঙ্গে নির্দিষ্ট শর্তানুসারে আদায় করা উত্তম। তবে ওই জামাতে শরিক হওয়া সম্ভব না হলে যথাসময়ে জোহরের ওয়াক্তে জোহর এবং আসরের ওয়াক্তে আসর নিজ নিজ তাঁবুতে আজান-ইকামতসহকারে জামাতের সঙ্গে পড়ুন।
মুজদালিফায় অবস্থান: মিনা ও আরাফার মাঝখানে অবস্থিত ময়দানের নাম মুজদালিফা। এখানে ১০ জিলহজ রাত (৯ জিলহজ দিবাগত রাত) অতিবাহিত করা হাজিদের জন্য জরুরি। মুজদালিফায় পৌঁছে এশার ওয়াক্ত হলে এক আজান ও এক ইকামতে প্রথমে মাগরিবের ফরজ তারপর এশার ফরজ পড়ুন এরপর মাগরিবের ও এশার সুন্নত এবং বেতর পড়ুন। মাগরিব ও এশার নামাজ পড়ার পর সুবহে সাদিক পর্যন্ত মুজদালিফায় অবস্থান করা সুন্নতে মোয়াক্কাদাহ। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান ওয়াজিব। এ রাতে জাগ্রত থাকা ও ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া মোস্তাহাব।
হজের তৃতীয় দিন ১০ জিলহজ মিনায় পৌঁছার পর এ দিনের চারটি কাজ ধারাবাহিকভাবে পালন করতে হবে
পাথর নিক্ষেপ : এই দিনের প্রথম কাজ হলো জামারায় আকাবায় গিয়ে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করা (ওয়াজিব)। এটাকে জামারাতুল কুবরাও বলা হয়, আবার ‘বড় শয়তান’ বলেও প্রসিদ্ধ আছে। মিনায় পাথর নিক্ষেপের তিনটি স্থান রয়েছে। আগে ওই তিনটি স্থানে তিনটি স্তম্ভ বা পিলার ছিল বর্তমানে পিলারের জায়গায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য উঁচু দেওয়াল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে, হ১াজিদের সুবিধার জন্য নিচতলা, দ্বিতীয় তলায় এবং তৃতীয় তলায় রাস্তা করা হয়েছে। যাতে একই সঙ্গে অসংখ্য লোক পাথর নিক্ষেপ করতে পারেন। পাথর নিক্ষেপের নিয়ম হচ্ছে পাথর নিক্ষেপের সময় মিনাকে ডান দিকে রেখে দাঁড়ান। তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা পাথর ধরে নিক্ষেপ করুন। প্রথম পাথর নিক্ষেপের পূর্বমুহূর্ত থেকে তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিতে হবে। পাথর নিক্ষেপের সময় বলুন : বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।
কোরবানি করা : এই দিনের দ্বিতীয় কাজ হলো দমে শোকর বা হজের শোকরিয়াস্বরূপ কোরবানি করা (ওয়াজিব)। নিজ হাতে করুন কিংবা কাউকে পাঠান; কিন্তু জবেহ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হোন। কিরান ও তামাত্তু হজ পালনকারীদের জন্য এটা ওয়াজিব। আর ইফরাদ হজ পালনকারীদের জন্য মুস্তাহাব। মিনায় কোরবানি করতে না পারলে মক্কায়ও কোরবানি করে নিতে পারেন।
চুল মুণ্ডন বা কর্তন করা : এই দিনের তৃতীয় কাজ হলো হলক বা কসর করা। (চুল মুণ্ডন বা কর্তন) এটি ওয়াজিব। কোরবানির পর পুরো মাথার চুল মুণ্ডন করে ফেলুন। মুণ্ডনকারীদের জন্য নবী করিম (সা.) তিনবার দোয়া করেছেন। তাই এতে ফজিলত বেশি।
তাওয়াফে জিয়ারত : এ দিনের চতুর্থ কাজ হলো তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ) একে ‘তাওয়াফে ইফাযা’ও বলা হয়, এটা হজের শেষ রুকন। মিনায় উপরোক্ত কাজগুলো সেরে হাজিরা মক্কা শরিফে গিয়ে তাওয়াফ-ই-জিয়ারত করবেন। এ তাওয়াফে ইজতিবা নেই। ১০ তারিখে সম্ভব না হলে ১১ বা ১২ তারিখের সূর্যাস্তের আগে অবশ্যই এ তাওয়াফ করতে হবে। যারা মক্কা থেকে ৮ জিলহজ আসার আগে একটি নফল তাওয়াফের সঙ্গে সায়ী করে আসেনি তাওয়াফে জিয়ারতে তাদের অবশ্যই সায়ী করতে হবে। তাওয়াফে জিয়ারতের কোনো বদলা নেই, এ তাওয়াফ করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
১১ জিলহজ মিনায় রাতযাপন সুন্নত। এদিন মিনায় তিন শয়তানকে পাথর মারা ওয়াজিব।
দুপুরের পর প্রথমে জামারায়ে সুগরা, (মসজিদে খাইফের সন্নিকটে) অতঃপর জামারায়ে উসতা, সর্বশেষ জামারায়ে আকাবায় ৭টি করে মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করতে হবে। প্রত্যেকটি পাথর নিক্ষেপের সময় তাকবির বলবেন।
১২ জিলহজেও আগের দিনের মতো তিন জামারায় পাথর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। অনেকেই ১২ জিলহজ তাড়াতাড়ি মক্কায় ফিরে যাওয়ার জন্য সূর্য মাথার ওপর ওঠার আগেই পাথর নিক্ষেপ করে ফেলেন, অথচ এরূপ করা নাজায়েজ। মনে রাখতে হবে, সূর্য মাথার ওপর থেকে কিছুটা ঢলে যাওয়ার পর পাথর নিক্ষেপ করতে পারবেন। ১২ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ করে মক্কায় ফিরে যাওয়া জায়েজ, তবে ১৩ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ করে তারপর মক্কায় ফিরে যাওয়া উত্তম। ১২ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ করে মক্কায় ফিরতে চাইলে সূর্যাস্তের আগেই মিনা থেকে বের হয়ে যাবেন। সূর্যাস্তের পর ফিরা মাকরুহ।
মক্কায় পৌঁছার পর বিদায়ী তাওয়াফ ছাড়া হজের আর কোনো জরুরি কাজ বাকি নেই। হজ আদায়ের তাওফিকদানের জন্য আল্লাহ পাকের শোকর, নফল তাওয়াফ, ওমরাহ ও অন্যান্য ইবাদত করতে থাকুন।
বিদায়ী তাওয়াফ
মক্কা শরিফ থেকে বিদায়ের আগে বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব) করুন। মাকামে ইবরাহিমে দুরাকাত নামাজ পড়ে মূলতাযাম, কাবার দরজা ও হাতিমে দোয়া করুন; যমযমের পানি পান করেও দোয়া করুন এবং বিয়োগ-বিরহের বেদনা দিয়ে কাবা ঘর থেকে বিদায় নিন। তাওয়াফে বিদা না করলে দম দিতে হবে।
গ্রহণযোগ্য মতে, হজ ওয়াজিব হলে তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়। সুতরাং যদি কারো ওপর হজ ওয়াজিব হয়, তাহলে তার অর্থ দাঁড়ায়, গত বছর বা তার আগে কোনো বছর হজের সময় আপনার কাছে হজ আদায় করার মতো যথেষ্ট অর্থ ছিল। এখন এই অর্থ খরচ করা জায়েজ হবে না। যদি হজের সময় কারো কাছে টাকা না থাকে, বরং হজের পর টাকা আসে অথবা সব সময় হজের আগেই টাকা আসে এবং খরচ হয়ে যায়, তাহলে এ অবস্থায় এই টাকা দ্বারা ঘর নির্মাণ করা যাবে। (ইমদাদুল আহকাম : ১/১৫৮)
বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সেতুবন্ধনের উপায় হলো হজ পালন করা। হজ আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ বিধান, ইসলামের মৌলিক পাঁচটি ভিত্তির অন্যতম। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সমর্থ নারী-পুরুষের ওপর হজ ফরজ।
বেশির ভাগ হজযাত্রীর ক্ষেত্রেই জীবনে একবারই হজ হয়। তাই হজে যাওয়ার আগে কি কি সংগ্রহ করা উচিত, তা অনেকেরই জানা থাকে না।
নির্ভরযোগ্য কোনো আলেমের লিখিত হজের মাসয়ালা-মাসায়েল সংক্রান্ত বই।
তাওয়াফের সময় নির্ভুল হিসাব রাখার জন্য একটি তাওয়াফ তাসবিহ সংগ্রহে রাখা যেতে পারে।
হালাল অবস্থায় ব্যবহারের জন্য পছন্দমতো আতর সংগ্রহ করা যেতে পারে।
মসজিদে জুতা বহনের জন্য কাপড়ের ছোট ব্যাগ দুটি।
কোরবানির খরচ ও হজের ব্যক্তিগত খরচের জন্য প্রয়োজনমতো সৌদি রিয়াল আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখা ভালো, কারণ বিগত বছরগুলোতে যাঁরা হজ করেছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা হলো—শেষ সময়ে রিয়ালের দাম বেড়ে যায়।
ইহরাম অবস্থায় পুরুষদের পরার জন্য দুই ফিতার স্যান্ডেল বা জুতা দুই জোড়া। হালাল অবস্থায় পুরুষদের পরার জন্য শু বা চামড়ার জুতা এক জোড়া। মা-বোনদের জুতায় কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তারা দুই-তিন জোড়া আরামদায়ক জুতা সঙ্গে নিতে পারেন।
অনেক ক্ষেত্রে হজ কাফেলা সম্মানিত হাজি সাহেবদের বাংলাদেশের পতাকা চিহ্নিত ও হজ কাফেলার ঠিকানা সংবলিত ব্যাগ সরবরাহ করে তাই মোয়াল্লেমকে না জানিয়ে বড় কোনো ব্যাগ কিনলে অর্থের অপচয় হতে পারে।
সহজেই কাঁধে বা হাতে বহন করা যায় এমন একটি ছোট হালকা চামড়া বা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে যাওয়া ভালো। এই ব্যাগটি যাত্রাপথে বিশেষ করে হজের মূল সফরে (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ) বিশেষ দরকার হবে। কারণ ওই সময় বড় ব্যাগ হাজিদের কাছে রাখা সম্ভব হয় না। তাই সেই দিনগুলোতে একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সঙ্গে রাখতে ছোট ব্যাগটি খুব উপকারে আসবে।
হজের সফরের জন্য একাধিক সেট ইহরামের কাপড় সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উত্তম। কমপক্ষে দুই সেট ইহরামের কাপড় সঙ্গে নিয়ে যাওয়া জরুরি। হজের সময় মা-বোনদের স্বাভাবিক কাপড় পরা বৈধ। তবে মুখের পর্দা রক্ষার জন্য মহিলা হাজিদের জন্য কিছু বিশেষ সানক্যাপ পাওয়া যায়, যেগুলোতে যুক্ত বিশেষ পর্দাটি নারী হাজিদের মুখের পর্দা যথাযথভাবে রক্ষা করে, আবার ইহরামেরও কোনো সমস্যা হয় না।
ছোট আয়না, চিরুনি, কাঁচি, রেজর, ব্লেড, সুই-সুতা, নাইলনের দড়ি ইত্যাদি। তবে নেওয়ার সময় অবশ্য হাতব্যাগে রাখা যাবে না। বরং এগুলো বড় ব্যাগে দিতে হবে। ধাতব পদার্থ ও দড়ি হ্যান্ডব্যাগে বহনে বিমানের নিষেধাজ্ঞা আছে। ব্যাগ গোছানোর সময় নাইলনের দড়ির অর্ধেকটা বাইরে রাখতে হবে, যাতে তা দিয়ে বড় ব্যাগটা যাত্রার পূর্বে ভালো করে বাঁধা যায়।
সাবান দুটি, সাবানের গুঁড়া ৫০০ গ্রাম, নীলের ছোট কৌটা একটি, ব্যবহারের তেল পরিমাণমতো, পেট্রোলিয়াম জেলি মাঝারি সাইজের একটি, টয়লেট পেপার তিনটি, টুথপেস্ট একটি, ব্রাশ ও মেসওয়াক দুটি, ছোট তালা-চাবি এক সেট।
সুবিধার জন্য অল্প চিড়া ও গুড়, দুই-তিন প্যাকেট বিস্কুটও সঙ্গে রাখা যেতে পারে। যাত্রাপথে বিশেষ করে আরাফাত ও মিনায় খাবার পৌঁছতে বিলম্ব হলে এগুলো কাজে আসবে। কারণ গত হজে এসব জায়গায় দোকানের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
চা-কফি পানে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা কফির উপকরণ সঙ্গে নেবেন। সেই সঙ্গে মেলামাইনের থালা একটা, গ্লাস একটি, মগ একটি, চা চামচ একটি, ফল কাটার ছোট চাকু একটি। কোমর বেল্ট, টাকার ব্যাগ, গলায় ঝোলানো ব্যাগ—এগুলো বিভিন্ন সংস্থা প্রচার ও সওয়াবের নিয়তে হাদিয়া দিয়ে থাকে। তাই এগুলো আগে কেনার দরকার নেই।
তোয়ালে বা গামছা, একটি চাদর, একটি কাঁথা, একটি ছোট বাতাসের বালিশ নেওয়া যেতে পারে। এগুলো মুজদালিফায় কাজে আসতে পারে। পুরুষরা হজে হালাল অবস্থায় পরার জন্য কমপক্ষে তিনটি পাঞ্জাবি, দুটি পায়জামা, দুটি লুঙ্গি, দুটি গেঞ্জি বা ফতুয়া সঙ্গে নেওয়া যেতে পারেন। মহিলারা সব সময় পরার জন্য কমপক্ষে চার সেট সালোয়ার-কামিজ, স্কার্ফ ও দুটি বোরকা, হাতমোজা এবং মোজা সঙ্গে নিতে পারেন।
হজে যাওয়ার আগে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত। নিজের দৈনন্দিন ব্যবহারের ওষুধের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জ্বর, ঠাণ্ডা, পেটের পীড়া ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া ভালো। কারণ সৌদি আরবে ওষুধের দাম তুলনামূলক বেশি।
বায়তুল্লাহ বা মহান আল্লাহ ঘর হচ্ছে পবিত্র কাবা। কাবা আল্লাহ তায়ালার এক কুদরতি নিদর্শন। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই তিনি কাবাকে তাঁর মকবুল বান্দাদের বন্দেগির কেন্দ্র হিসেবে মনোনীত করেছেন। এই ঘরকে কেন্দ্র করেই বিশ্বাসীরা কালে কালে একত্রিত হয়েছেন। এখানে উপস্থিত হয়ে প্রতিটি বিশ্বাসী মানুষ তাঁর স্রষ্টার কাছে আকুলতা প্রদর্শন করে। এ ঘর নিজে উপাস্য নয়। এ গৃহের মালিকের ইবাদত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র আল কোরআনের সুরা কুরাইশে বলা হয়েছে- ‘তোমরা এ গৃহের মালিকের বন্দেগি করো।’
হজরত জাবের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘অন্যত্র নামাজ আদায়ের চেয়ে আমার মসজিদে (মসজিদে নববিতে) নামাজ আদায় করা এক হাজার গুণ উত্তম এবং মসজিদুল হারামে নামাজ আদায় করা অন্য মসজিদে নামাজ আদায় করা অপেক্ষা এক লাখ গুণ উত্তম। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৯১৬)
হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি যথাযথভাবে সাতবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করে তার একটি গোলাম আজাদ করার সমান সওয়াব হয়। তাওয়াফের প্রতি কদমে আল্লাহ তার একটি করে গুনাহ মাফ করেন, একটি করে নেকি লেখেন এবং ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। ’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৪৪৬২)
হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সেতুবন্ধনের উপায় হলো হজ পালন করা। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সমর্থ নারী-পুরুষের ওপর হজ ফরজ।
সুরা আল–ইমরানের ৯৭তম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যাঁদের মক্কায় কাবায় যাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাঁর কর্তব্য হজ পালন করা। আর যে অবিশ্বাসী, হজকে অস্বীকার করল, সে আল্লাহকে অস্বীকার করল।’
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর মেহমান হলো তিনটি দল—আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধকারী, হজকারী ও ওমরাহকারী। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ২৬২৫)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক ওমরাহ অপর ওমরাহ পর্যন্ত সময়ের (সগিরা গুনাহের) কাফফারাস্বরূপ। আর জান্নাতই হলো হজে মাবরুর বা কবুল হজের একমাত্র প্রতিদান। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩)
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করেছে, যার মধ্যে সে অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কার্য করেনি, সে হজ থেকে ফিরবে সেদিনের মতো (নিষ্পাপ অবস্থায়) যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিলেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৫২১)
হজরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হজ ও ওমরাহকারীরা আল্লাহর প্রতিনিধি দল। তারা দোয়া করলে তাদের দোয়া কবুল করা হয় এবং তারা কিছু চাইলে তাদের তা দেওয়া হয়। ’ (মুসনাদে বাযযার, হাদিস : ১১৫৩)
হজরত বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘হজের জন্য খরচ করা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার মতোই, যার সওয়াব সাত শ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩০০০)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরাহর মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখ (অর্থাৎ সঙ্গে সঙ্গে কর)। কেননা এ দুটি মুমিনের দরিদ্রতা ও গোনাহগুলো দূর করে দেয়, যেমন (কামারের আগুনের) হাপর লোহা, স্বর্ণ ও রৌপ্যের ময়লা দূর করে দেয়। আর কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া কিছুই নয়। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৮১০)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন আমলটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন, ‘শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর ঈমান আনা। বলা হলো, তারপর কী? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হলো, তারপর কী? তিনি বললেন, কবুল হজ। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৫১৯)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে বের হলো, অতঃপর মৃত্যুবরণ করল, কিয়ামত পর্যন্ত তার হজের সওয়াব লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি ওমরার উদ্দেশ্যে বের হলো, আর সে অবস্থায় তার মৃত্যু হলো, কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য ওমরার সওয়াব, লেখা হবে। ’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস : ৬৩৫৭)
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য দেশের আইন ও আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির মামলায় এর আগে বিএনপির দুই নেতাকে নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রেখে দেশের উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে, সে সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেশবাসীকে হতাশ করেছে।’
গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদে জানিয়ে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনে করেন, মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করার পর বিএনপি তাদের বিদেশি প্রভুদের কাছ থেকে করুণা প্রাপ্তির আশায় সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। উচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলা তাদের সেই চলমান ষড়যন্ত্রেরই অংশ। বিএনপির এ দুই নেতার আজকের পরিণতি তাদের ধারাবাহিক অপরাজনীতিরই ফসল বলে মন্তব্য করেন সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট শাসন আমলে হাওয়া ভবন খুলে তারা দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠেছিল, যার পরিণতিতে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সে সময় হাওয়া ভবনের কর্ণধার জিয়াপুত্র তারেক রহমানের দুর্নীতির খতিয়ান বিশ^ গণমাধ্যম ও বিশ^খ্যাত গোপন নথি প্রকাশকারী সংস্থা উইকিলিকসে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি দুই নেতার দুর্নীতির মামলার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কোনো যোগসূত্র নেই। ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং তাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পর নিম্ন আদালত সাজা দিয়ে রায় দেয়। প্রায় ১৬ বছর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে আদালত তাদের সাজা দিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের পবিত্র সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও আইন ও বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এমনকি বিশ্বজিৎ হত্যাকা- এবং বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যা মামলায়ও ছাত্রলীগের নেতারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করছেন।’ তিনি বলেন, বিএনপি দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছে এবং দলের চিহ্নিত শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দিয়েছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলেই আলোচনায় আসেন সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। নগরীর লোকেরা বলে, তার মতো নগর পিতা দরকার। এবার আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত নগরবাসীকে কথা দিয়েছেন, হিরণের মতো করে নগরী গড়বেন তিনি। শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর এক দশক পেরিয়ে গেছে, তবু তিনি আলোচনায়; শুধু বরিশালে নয়, সারা দেশে।
সংশ্লিষ্ট লোকজন বলে, হিরণের কর্মফলই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। একসময় সব ক্ষেত্রে বরিশাল সিটির মানুষ অবহেলিত ছিল। সেসব অবহেলার কারণ ঘুচিয়ে এবং মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী নগরীকে আধুনিক করার অঙ্গীকার নিয়ে হাজির হন হিরণ। মেয়র নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরের মধ্যে নগরীর রূপ পাল্টে দেন তিনি। বরিশালকে সাজান আধুনিক রূপে।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ ছিলেন আদর্শ নেতা। মানুষকে বোঝার চেষ্টা করতেন। দক্ষ ও বিচক্ষণ এবং সৃজনশীল মানুষ। তিনি নগরীর উন্নয়ন নিয়ে যেমন ভেবেছেন, ঠিক তেমনি মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। তাই মানুষ ভুলতে পারে না তাকে।’
বিসিক শিল্পনগরীসংলগ্ন চায়ের দোকানদার মো. হালিম বলেন, ‘হিরণ সবসময় মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। সাধারণ পোশাকে চলতেন। দলমত নির্বিশেষ সবাইকে ভালোবাসতেন।’
নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সমির বলেন, ‘মেয়র হিরণ আমাদের জন্য রাস্তাঘাট, সড়কে বাতির ব্যবস্থাসহ অনেক কিছু করেছেন। তার কাজগুলোই কোনোমতে অনুসরণ করেছে অন্যরা। যে কাজ করে তাকেই তো মনে রাখব আমরা, তাই হিরণকে মনে রেখেছি।’
রিকশাচালক মো. হারুন বলেন, ‘এ নগরীর রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য ছিল। রাতে অন্ধকারে ডুবে থাকত। চুরি-ডাকাতি নিত্যখবর ছিল। কিন্তু হিরণ মেয়র হওয়ার পর রাতারাতি নগরী বদলে গেল। অনেক মানুষকে সিটি করপোরেশনে চাকরি দিয়েছেন তিনি। নগরীর গরিব মানুষকে এক টাকা করে হলেও সাহায্য করেছেন। সবার মন জয় করেছেন। আজ তার মতো একজন মানুষ থাকলে আমরা শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারতাম।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যাকে হারিয়েছি তাকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু তার কর্ম, মানুষের প্রতি তার সম্মান এবং ভালোবাসা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তিনি বিদ্যালয়ে এলে কখনো রাজনৈতিক আলাপ করতেন না। সবসময় শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য বলতেন, গল্প শোনাতেন।’
একজন ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব থাকাকালে ব্যবসা করতে গিয়ে কখনো হেনস্তার শিকার হইনি। তিনি নিজেও ব্যবসায়ী ছিলেন। আমাদের ব্যবসায়ীদের কষ্ট তিনি বুঝতেন। কিন্তু নগরীর একদল মানুষ তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাকে নির্বাচনে হারিয়ে দিয়েছে। তারপর হিরণ সাহেব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।’
বিএম কলেজের সাবেক ভিপি ও শওকত হোসেন হিরণের ঘনিষ্ঠ মঈন তুষার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব প্রত্যেক নেতাকর্মীর নাম জানতেন। তিনি যার সাঙ্গে কথা বলতেন, সেই মানুষটিকে ভুলতেন না। এজন্য মানুষ তার প্রতি এত দুর্বল এবং আকৃষ্ট। নগরীর জন্য তিনি মাস্টারপ্ল্যান করে কাজ করেছেন। তার সঙ্গে মানুষ সরাসরি কথা বলতে পারত এবং দেখা করত। এখনো মানুষ তাকে ভালোবাসে এবং মনে রেখেছে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, ‘সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ বরিশালকে আধুনিক নগরীতে রূপান্তরিত করে গেছেন। উন্নয়ন-আন্তরিকতা ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতার সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি একজন আইকনিক সিটি মেয়র ছিলেন। আন্তরিকতাই একজন প্রশাসকের মূল সূচক। তাই তিনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছেন।’
মেয়র হিরণ ব্যক্তিগত জীবনে কেমন ছিলেন এ প্রশ্নের উত্তরে তার সহধর্মিণী ও সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেসা আফরোজ হিরণ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২৬ বছর আমি তাকে দেখেছি। তিনি কারও ভাই ছিলেন, একজন স্বামী ছিলেন এবং সন্তানদের বাবা ছিলেন। পরিবারভক্ত একজন মানুষ। মানবিক গুণাবলি ছিল। তার মা-ভক্তির খুব নাম আছে বরিশাল শহরে। স্বজন-সন্তান ও পরিবারের প্রতি যতœ নেওয়ায় কোনো কমতি ছিল না। স্ত্রী হিসেবে তাকে অসাধারণ কর্তব্যপরায়ণ একজন মানুষ হিসেবে দেখেছি আমি।’
তিনি বলেন, ‘উনি রাজনৈতিক মহলে অত্যন্ত বিচক্ষণ একজন ব্যক্তি ছিলেন। কর্মী ও সহযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা ছিল; নেতাদের প্রতি সম্মানে কোনো ঘাটতি ছিল না তার। ২০০১ সালের জামায়াত-বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন কর্মীদের কীভাবে বুকে আগলে রাখতে হয় আমি তা পাশে থেকে দেখেছি। রাজনীতি এবং নগর উন্নয়নÑ দুই ক্ষেত্রেই তিনি সফল।’
প্রসঙ্গত, শওকত হোসেন হিরণ এলএলবি পাস করার পর জাসদ ছাত্রলীগে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সালে ২২ বছর বয়সে বরিশাল সদর উপজেলা থেকে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রাজনীতিতে আরেক দফা পরিবর্তন আসে ১৯৯৬ সালের পর। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ভালো সখ্য থাকায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন হিরণ। তার রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা বিবেচনা করে ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনোনীত করে। ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। বরিশাল মহানগরীকে আধুনিক সাজে সাজান। স্থানীয় মানুষ ও তার অনুসারীদের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১২ সালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের কাছে পরাজিত হন। গুঞ্জন রয়েছে, তার দলীয় লোকেরাই তার পরাজয়ের কারণ। হিরণের মন ভাঙলেও তিনি থেমে যাননি। ২০১৪ সালে বরিশাল সদর আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর ৯ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে থাকা কুড়িগ্রামের চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি অবশেষে বিলীন হয়ে গেছে। ক্লিনিকটি সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের চর ভগপতিপুর এলাকায় ছিল।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়। এর আগে ওই এলাকার একটি স্কুলও ভাঙনের শিকার হয়। এ ছাড়াও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে একটি মসজিদ ও আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের। ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে ব্রহ্মপুত্র নদসহ অন্যান্য নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতির কারণে ক্লিনিকটি নিলামে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও ক্লিনিকটি রক্ষা করা গেল না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।