
আল্লাহর মেহমান হজযাত্রীদের জন্য উপহার হিসেবে হজের মাসয়ালা, বিধিবিধান, দরকারি পরামর্শ ও হজপালনের উপকারিতা এবং আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে বিশেষ আয়োজন—
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘কোন আমল সবচেয়ে উত্তম?’ তিনি বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ইমান। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, এরপর কোন কাজটি সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, এরপর কোন কাজটি সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, হজে মাবরুর অর্থাৎ ত্রুটিমুক্ত হজ।’ সহিহ্ বোখারি ও মুসলিম
তালবিয়া পাঠসহ হজ ওমরাহর নিয়ত করাকে ইহরাম বলা হয়। বাংলাদেশি হাজিদের মিকাত বা ইহরাম বাঁধার নির্ধারিত স্থান ‘ইয়ালামলাম।’ যারা প্রথমে মক্কা শরিফ যাবেন, তাদের উড়োজাহাজে আরোহণের আগেই ইহরাম বেঁধে নেওয়া ভালো। কারণ উড়োজাহাজ এ স্থানটি কখন অতিক্রম করে তা আপনার জন্য অনুধাবন করা কঠিন হতে পারে। মনে রাখতে হবে যে, ওমরাহ বা হজ আদায়কারীকে অবশ্যই জেদ্দা পৌঁছার আগেই ইহরাম বাঁধতে হবে। তবে যারা মদিনা শরিফে প্রথমে যাওয়ার ইচ্ছা করেন, তারা ইহরাম ছাড়া রওনা হবেন এবং জেদ্দা পৌঁছে সরাসরি মদিনা শরিফে চলে যাবেন। মদিনা শরিফ থেকে মক্কা শরিফে আসার পথে জুলহুলাইফা (বর্তমান ‘বীরে আলী’ নামে পরিচিত) থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কা শরিফে পৌঁছবেন।
ইহরাম বাঁধার সময় লক্ষণীয় বিষয় হলো আপনি কোন ধরনের হজ করবেন। হজে তামাত্তু, নাকি কিরান নাকি ইফরাদ? বাংলাদেশ থেকে যারা যান, তারা সাধারণত তামাত্তু তথা প্রথমে ওমরাহ, তারপর হজ করেন। আপনিও যদি হজে তামাত্তু করতে চান, তাহলে আপনাকে ইহরাম বাঁধতে হবে ওমরাহর। মক্কায় পৌঁছে ওমরাহ পালন শেষে ৮ জিলহজ হারাম শরিফ থেকে ফের যে ইহরাম করবেন সেটি হবে আপনার হজের ইহরাম।
১. ইহরাম বাঁধার আগে গোঁফ, চুল, নখ, ইত্যাদি কেটে যথারীতি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে সাবান দিয়ে খুব ভালোভাবে গোসল করে আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করে তৈরি হয়ে থাকা উচিত।
২. ইহরাম বাঁধার সময় ইহরামের নিয়তে গোসল করা সুন্নত। অসুবিধা থাকলে অজু করলেও চলবে।
৩. সেলাই করা কাপড় খুলে একটি সাদা চাদর নাভির ওপর থেকে লুঙ্গির মতো পরে নিন। আর একখানা চাদর গায়ে জড়িয়ে নিন। যেন দুই কাঁধ ও পিঠ ঢাকা থাকে। ইহরামের পোশাক সাদা এবং নতুন হওয়া ভালো।
৪. নিয়তের সঙ্গে সঙ্গে তিনবার তালবিয়া (লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ... ) উচ্চ স্বরে পড়ুন। যদি কেউ পড়তে না পারেন তবে অন্য কেউ তাকে পড়িয়ে দিন। তারপর দরুদ শরিফ পড়ুন এবং মোনাজাত করুন।
৫. দুই ফিতার স্যান্ডেল ব্যবহার করুন যেন পায়ের ওপরের মাঝখানের উঁচু হাড় এবং গোড়ালি খোলা থাকে।
১. মহিলাদের জন্য ইহরামের কোনো নির্দিষ্ট পোশাক নেই। মহিলারা সেলাইযুক্ত ওইসব কাপড়-চোপড় পরিধান করবেন, যেগুলো তারা স্বাভাবিকভাবে পরিধান করেন। যেমন : শাড়ি, সালোয়ার, কামিজ, ম্যাক্সি, বোরখা ইত্যাদি। যে কোনো ধরনের আরামদায়ক জুতাও ব্যবহার করতে পারবেন।
২. ইহরাম বাঁধার আগে গোসল করে নিন। গোসল করতে অসুবিধা থাকলে শুধু ওজু করে নিন। চিরুনি দিয়ে খুব ভালোভাবে চুল আছড়িয়ে নিন।
৩. এই গোসল শুধু পরিচ্ছন্নতার জন্য। এ কারণে ঋতুবতী মহিলা এবং শিশুদের জন্যও তা সুন্নত। এর পরিবর্তে তায়াম্মুম করা শরিয়তসিদ্ধ নয়।
৪. যদি মাকরুহ ওয়াক্ত না হয়, তবে ইহরামের নিয়তে সাধারণ নফল নামাজের মতো দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন। আর যদি মাকরুহ ওয়াক্ত হয় তবে ওই দুই রাকাত নফল নামাজ ছাড়াই ইহরামের নিয়ত করুন।
৫. নিয়তের সঙ্গে সঙ্গে তিনবার তালবিয়া (লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ... ) নিম্নস্বরে পড়ুন। যদি কোনো মহিলা পড়তে না পারেন তবে অন্য কোনো মহিলা তাকে পড়িয়ে দিন। তারপর দরুদ শরিফ পড়ুন এবং মোনাজাত করুন।
১. সেলাইযুক্ত কাপড় যেমন কোর্তা, পায়জামা, টুপি, গেঞ্জি, মোজা ইত্যাদি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। কিন্তু মহিলারা সেলাইযুক্ত স্বাভাবিক কাপড় পরিধান করবেন।
২. পুরুষের জন্য মাথা ও মুখমণ্ডল আবৃত করা নিষিদ্ধ, জাগ্রত বা ঘুমন্ত উভয় অবস্থায় খোলা রাখতে হবে।
৩. যেকোনো ধরনের সুগন্ধি, আতর, সুগন্ধি তেল বা সুগন্ধি সাবান ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
৪. ক্ষৌরকার্য করা যেমন : চুল, দাড়ি, গোঁফ ইত্যাদি কামানো বা নখ কাটা বা ছিঁড়ে ফেলা নিষিদ্ধ।
৫. বন্য পশুপাখি শিকার করা বা কাউকে শিকারে কোনোরূপ সাহায্য-সহযোগিতা করা নিষিদ্ধ।
৬. এমন জুতা পরিধান করা নিষিদ্ধ যার ফলে পায়ের ওপরের মাঝখানে উঁচু হাড় ঢাকা পড়ে যায়। কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ নয়।
৭. স্বামী-স্ত্রী দৈহিক সম্পর্ক, এমনকি ওই সম্পর্কে কোনোরূপ আলাপ-আলোচনা ইত্যাদি নিষিদ্ধ।
৮. ঝগড়া-বিবাদ করা, অশ্লীল কথাবার্তা বলা এমনিতেও নিষিদ্ধ, ইহরামের অবস্থায় আরও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
হজের উদ্দেশে কাবা শরিফের চারপাশে ঘোরাকে তাওয়াফ বলা হয়। তাওয়াফের ওয়াজিবগুলো-
১. তাহারাত অর্থাৎ গোসল ফরজ থাকলে তা করে নেওয়া এবং অজু না থাকলে অজু করে নেওয়া।
২. শরীর ঢাকা।
৩. কোনো কিছুতে আরোহণ না করে তাওয়াফ করা (তবে বৃদ্ধ, অসুস্থ ও রুগ্ণ এবং অক্ষম ব্যক্তির জন্য কোনো কিছুতে আরোহণ করে তাওয়াফ করা জায়েজ)।
৪. ডান দিক থেকে তাওয়াফ শুরু করা।
৫. হাতিমসহ (বায়তুল্লাহর উত্তর দিকে বায়তুল্লাহ সংলগ্ন অর্ধচক্রাকৃতি দেওয়াল ঘেরা জায়গা) তাওয়াফ করা।
৬. সবকটি চক্কর পূর্ণ করা ও
৭. তাওয়াফ শেষে দুই রাকাত নামাজ পড়া।
১. হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করা,
২. ইজতিবা করা (অর্থাৎ ইহরামের চাদর ডান বগলের নিচ দিয়ে এনে বাম কাঁধে জড়ানো),
৩. হাজরে আসওয়াদে চুমু প্রদান করা বা হাতে ইশারা করে তাতে চুমু দেওয়া,
৪. প্রথম তিন চক্করে রমল করা (অর্থাৎ বীরদর্পে হাত দুলিয়ে দ্রুত পায়ে চলা),
৫. বাকি চক্করগুলোতে রমল না করা,
৬. সায়ী ও তাওয়াফের মধ্যে ইস্তিলাম (হাজরে আসওয়াদে চুমু প্রদান বা হাত কিংবা ছড়ি দিয়ে ইশারা করে তাতে চুমু প্রদান করা,
৭. হাজরে আসওয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত ওঠানো,
৮. তাওয়াফের শুরুতে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করা ও ৯. চক্করগুলো বিরতি না দিয়ে পরপর করা।
সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়ানোকে ‘সায়ী’ বলে। বর্তমানে এ স্থানটুকুর কিছু অংশ সবুজ পিলার দ্বারা চিহ্নিত আছে। সেখানে এসে দ্রুত দৌড়াতে হয়। সায়ী করা ওয়াজিব এবং তাওয়াফ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই এটা করা সুন্নাত।
১. পায়ে চলে সায়ী করা,
২. সাত চক্কর পূর্ণ করা,
৩. সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থান পরিপূর্ণভাবে অতিক্রম করা।
১. হাজরে আসওয়াদে চুমু দিয়ে সায়ীর জন্য বের হওয়া,
২. তাওয়াফ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে সায়ী করা,
৩. সাফা ও মারওয়ায় আরোহণ করা,
৪. সাফা ও মারওয়ায় আরোহণ করে কেবলামুখী হওয়া,
৫. সায়ীর চক্করগুলো একটির পর একটি আদায় করা ও
৬. সবুজ স্তম্ভ দুটির মধ্যবর্তী স্থানটি একটু দৌড়ে অতিক্রম করা।
১. ইহরাম বাঁধা।
২. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা অর্থাৎ ৯ জিলহজের সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো সময় এক মুহূর্তের জন্য হলেও আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।
৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা অর্থাৎ ১০ জিলহজের ভোর থেকে ১২ জিলহজের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বায়তুল্লাহ শরিফের তাওয়াফ করা।
১. নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ইহরাম বাঁধা।
২. সায়ী অর্থাৎ সাফা ও মারওয়ার মধ্যে দৌড়ানো।
৩. সাফা থেকে সায়ী শুরু করা।
৪. তাওয়াফের পর সায়ী করা।
৫. সূর্যাস্ত পর্যন্ত উকুফে আরাফা করা।
৬. মুজদালিফায় উকুফ বা অবস্থান করা।
৭. মাগরিব এবং এশার নামাজ মুজদালিফায় এসে একত্রে এশার সময় পড়া।
৮. দশ তারিখ শুধু জামরাতুল আকাবায় এবং ১১ ও ১২ তারিখে তিন জামরায় রমি-পাথর নিক্ষেপ করা।
৯. জামরাতুল আকবার ‘রমি’ বা পাথর নিক্ষেপ দশ তারিখে হলক অর্থাৎ মস্তক মুণ্ডনের আগে করা।
১০. কোরবানির পর মাথা কামানো কিংবা চুল ছাঁটা।
১১. কিরান এবং তামাত্তু হজপালনকারীর জন্য কোরবানি করা।
১২. তাওয়াফ হাতিমের বাইরে দিয়ে করা।
১৩. তাওয়াফ ডান দিক থেকে করা।
১৪. কঠিন কোনো অসুবিধা না থাকলে হেঁটে তাওয়াফ করা।
১৫. অজু অবস্থায় সঙ্গে তাওয়াফ করা। ১৬. তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজ পড়া।
১৭. তাওয়াফের সময় সতর ঢাকা থাকা।
১৮. পাথর নিক্ষেপ করা ও কোরবানি করা, মাথা মুণ্ডানো এবং তাওয়াফ করার মধ্যে তারতিব বা ক্রম বজায় রাখা।
১৯. মিকাতের বাইরে অবস্থানকারীদের বিদায়ী তাওয়াফ করা এবং
২০. ইহরামের নিষিদ্ধ কাজগুলো না করা।
আরও পড়ুন—
হজে যাওয়ার আগে কি কি সংগ্রহ করবেন?
হজ সম্পর্কে মহানবী (সা.) যা বলেছেন
মাহরাম ছাড়া নারীরা হজে যেতে পারবেন?
নানাবিধ দুশ্চিন্তা ও হতাশার কারণে মানুষের মাঝে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ সমাধান হিসেবে বেছে নেয় আত্মহত্যা। কেউ আবার জীবনের স্বাভাবিক গতিপথ হারিয়ে ফেলে। বিশ্বাস-অবিশ্বাস থেকে অশান্তি আর সেখান থেকে জন্ম নেয় বিভিন্ন কৃত্রিম সংকট ও সমস্যা। কেউ কেউ তা মোকাবিলা করতে পারে কেউ কেউ পারে না। সহজ সমাধান খুঁজতে গিয়ে কেউ পথ হারিয়ে দিগ্ভ্রান্ত হয়ে পড়ে আর মুমিনগণ মাথা অবনত করে মহান আল্লাহ দরবারে।
মুসলিম হিসাবে আমরা বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ নেই যার চিকিৎসা আল্লাহ তায়ালা দেননি। মানসিক চাপসহ নানাবিধ রোগবালাই থেকে উত্তরণে ইসলামী ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর। অহেতুক দুশ্চিন্তা অনেকটা চক্রের মতো। যত দূর করতে চাইবেন, তত আপনাকে জেঁকে ধরবে। কথায় আছে, ‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা’। মস্তিষ্ক যত অলস বসে থাকে, তত মাথায় জমা হয় অহেতুক চিন্তা।
তাই নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, আপনার ভালো লাগে এমন ভালো কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করুন। জীবনে পাওয়া না পাওয়ার বেদনায় হতাশ হওয়া কিংবা মানসিক চাপ অনুভব করা নতুন কোনো বিষয় নয়। বিপদ-আপদ, চাপ কিংবা না পাওয়ার বেদনা যত বেশিই হোক না কেন কোনো অবস্থায়ই হতাশ হওয়া ঈমানদারের কাজ নয়। বরং সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর ওপর আস্থা রাখাই সুস্থ থাকার উপায় এবং বুদ্ধিমানের কাজ।
তরুণ-তরুণীর মধ্যে প্রেম সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সাংসারিক জটিলতা থেকে একজন অন্যজনকে ছেড়ে যাওয়া কিংবা কোনো কিছু না পাওয়া থেকে মানুষ হতাশ হয়ে পড়েন।
মানসিক অশান্তি থেকে মুক্ত থাকতে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলের বিকল্প নেই। কেননা তিনিই বলেছেন, ‘যে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক : আয়াত ৩)।
আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা ও পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস স্থাপনে তার মনোবল বেড়ে যায়। ফলে সে অন্তরে খুঁজে পায় এক অনাবিল সুখ ও পরিতুষ্টি। সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়ায় সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করতে জানে তার জন্য কোনো চিন্তা নেই। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, আমি সে রূপ, যে রূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (বুখারি)।
মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত দোয়া করাও উচিত। কারণ হাদিসে দোয়াকে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। দোয়া বা প্রার্থনা করলে, কোনো কিছু চাইলে মহান আল্লাহ খুশি হন। না করলে বরং অসন্তুষ্ট হন। তবে দোয়ার ক্ষেত্রে হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে জানি, কোনো বিপদে পড়া লোক যদি তা পড়ে তবে আল্লাহ সে বিপদ দূর করে দেন। সেটি হচ্ছে- আমার ভাই (হজরত) ইউনুস (আলাইহিস সালাম)-এর দোয়া। তা হলো, ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন।
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত।’ -তিরমিজি
যে কোনো বিপদ-মুসিবত, পেরেশানির সময় নামাজের মাধ্যমেই প্রকৃত প্রশান্তি লাভ কর যায়। কেননা নামাজের মাধ্যমেই বান্দা মহান আল্লাহর সাহায্য লাভ করে থাকেন। তাই মানসিক প্রশান্তি লাভে নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার নিকটে সাহায্য প্রার্থনা কর। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সেসব বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।' (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৫)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন।’ (আবু দাউদ)। সাহাবায়ে কেরামও এ আমলে অভ্যস্ত ছিলেন। ছোট থেকে ছোট কোনো বিষয়ের জন্যও তারা নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে বেশি বেশি ইসতেগফারের বিকল্প নেই। যেসব কারণে মানুষ চাপে পড়ে, এর মধ্যে অন্যায়-অপরাধ বেশি করা, অর্থ কষ্টে থাকা, সন্তানসন্ততি না থাকা, জীবিকার অপ্রতুলতা,বেকারত্ব সমস্যা, সামাজিক সমস্যা,পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি। এ সবের সমাধানে কোরআনের প্রজ্ঞান হলো ইসতেগফার করা। এ ইসতেগফারেই মানুষ উল্লিখিত সমস্যা থেকে সমাধান খুঁজে পায় বলে ঘোষণা করেছেন মহান আল্লাহ।
কোরআনে এসেছে, 'অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার করবে, আল্লাহ তায়ালা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। তার সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। -সুনানে আবু দাউদ
কোরআন তিলাওয়াত মানুষের অন্তরকে প্রফুল্ল করে তোলে হৃদয়কে করে প্রশান্ত। কেননা কোরআন তিলাওয়াত মোমিনের প্রফুল্লতার অনন্য উৎস। শুধু তাই নয়, কোরআন তিলাওয়াতে মোমিনের মনের প্রফুল্লতা ও মানসিক প্রশান্তি বাড়তে থাকে।
কোরআনের আলোয় আলোকিত মানুষ সব দুশ্চিন্তা ও হতাশা থেকে মুক্ত থাকে। আল্লাহ বলেন, 'যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, আল্লাহ তাদের পবিত্র কোরআন দ্বারা শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে তাদের কুফরির অন্ধকার থেকে বের করে ইমানের আলোর দিকে নিয়ে যান এবং তাদের সরল পথে পরিচালিত করেন।’ (সুরা মায়িদা : আয়াত ১৫-১৬)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) হতাশা দুশ্চিন্তা দুঃখ-কষ্ট মানসিক চাপ থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে কীভাবে দোয়া করব তা বলে দিয়েছেন।হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি ওয়া দ্বালাইদ-দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’
হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার কাছে পানাহ চাচ্ছি। -সহিহ বোখারি: ২৮৯৩
দরুদ পড়লে আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি রহমত নাজিল করেন। এ রহমত মানুষকে যাবতীয় মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখে। এটি আত্ম প্রশান্তি লাভের সহজ উপায়ও বটে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পড়া এমন একটি ইবাদত যে, আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করে নেন।
হাদিসে এসেছে- হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বর্ণনা করেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার ওপর অনেক বেশি দরুদ পড়তে চাই। আপনি বলে দিন আমি দরুদে কতটুকু সময় দেব? তিনি বললেন, ‘তুমি যতটুকু চাও! আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ সময়?
তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও! যদি আরও বাড়াও তা তোমার জন্য ভালো। আমি বললাম, অর্ধেক সময়? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু সময় পড়তে পার, যদি এর চেয়ে আরও সময় বাড়াও তোমার জন্য ভালো। আমি বললাম, তাহলে সময়ের দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও, যদি আরও বাড়াও তোমার জন্য ভালো। আমি বললাম, সম্পূর্ণ সময় আমি আপনার ওপর দরুদ পড়ায় কাটিয়ে দেব। তখন তিনি বললেন, তাহলে এখন থেকে তোমার পেরেশানি দূর হওয়ার জন্য দরুদই যথেষ্ট এবং তোমার পাপের কাফফারার জন্য দরুদই যথেষ্ট।’ (তিরমিজি)।সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ সবকিছুর ক্ষেত্রেই মোমিন তাকদিরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে। আর দুঃখ-হতাশা, অভাব-অনটন, বিপদ-আপদে তাকদিরের ওপর বিশ্বাস থাকলে কোনো মানুষই মানসিক চাপে ভোগে না। তাই মানসিক চাপের সময় মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাকদিরের ওপর ছেড়ে দেওয়ায় রয়েছে মানসিক প্রশান্তি। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিলে তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা মোচন করতে পারে না। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তার অনুগ্রহ পরিবর্তন করারও কেউ নেই। -সুরা ইউনুস : ১০৭।
মৃত্যুর স্মরণ মানসিক চাপকে একেবারেই মিটিয়ে দেয়। পরকালের কঠিন পরিস্থিতির কথা স্মরণ রাখলে দুনিয়ায় মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। ফলে মানুষের দ্বারা কোনো অন্যায় কাজ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। তখনই মানুষ থাকে মানসিক চাপমুক্ত। কারণ পরকালের তুলনায় দুনিয়ার বিপদ-আপদ একেবারেই নগণ্য। আল্লাহ বলেন- যেদিন তারা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা পৃথিবীতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাত অবস্থান করেছে। (সূরা নাযিআত : আয়াত ৪৬)।
অনেক ক্ষেত্রেই হতাশা থেকে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। তাই দুনিয়ার জীবনে বিপদ-আপদে হতাশ না হওয়া ইমানদারের কাজ। যেকোনো সময়, যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদ আসতে পারে এ মানসিকতা সব সময় পোষণ করা। ফলে তা মানুষকে বিপদে হতাশা থেকে রক্ষা করে মানসিক চাপমুক্ত রাখে। কোরআনে কারিমে এসব বিপদ-আপদ দিয়ে বান্দাকে পরীক্ষার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও- যাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে, ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তার কাছেই ফিরে যাব।’ -সুরা বাকারা : ১৫৫-১৫৬
আজকাল মানসিক চাপে থাকেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুর্গম। কম-বেশি সবাই মানসিক চাপ ও উদ্বেগে থাকে। মনে হয় তা যেন এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই উল্লিখিত আমলগুলো অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
যারা ইমান আনে ও আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর প্রশান্ত হয়। জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণেই শুধু হৃদয় প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ, আয়াত ২৮)
মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের কে বেশি বেশি হাদিস কোরআন পড়তে হবে এবং আমাদের সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে। বিশ্বাস করতে হবে যা কিছু হয় আমাদের ভালোর জন্যই হচ্ছে হয়তো জ্ঞান স্বল্পতার জন্য আমরা তা বুঝতে পারছি না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে যা করতে পারি তা হলো চেষ্টা ফলাফল দেওয়ার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালা। চেষ্টা করে যদি আমরা সফল হতে না পারি তাহলে বুঝতে হবে এটা আমার জন্য না কিংবা আমার চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রয়েছে।তবে আমার এই চেষ্টার উত্তম প্রতিদান নিশ্চয়ই একদিন পাব।
লেখক: প্রধান নির্বাহী পরিচালক, ওয়েলফশন মানবকল্যাণ সংঘ। কাপাসিয়া, গাজীপুর।
আজ শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫ আশ্বিন ১৪৩০, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫। ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ-
আজকের নামাজের সময়সূচি-
ফজর- ৪:৩৫ মিনিট
জোহর - ১১:৫১ মিনিট
আসর- ৪:০৭ মিনিট
মাগরিব- ৫:৫০ মিনিট
ইশা- ৭:০২ মিনিট
আগামীকাল ফজর- ৪:৩৫ মিনিট
আজ সূর্যাস্ত- ৫:৪৫ মিনিট
আজ সূর্যোদয়- ৫:৫০ মিনিট
বিভাগীয় শহরের জন্য উল্লেখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগে সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, তা নিম্নরূপ
বিয়োগ করতে হবে যেসব বিভাগের জন্য-
চট্টগ্রাম: -০৫ মিনিট
সিলেট: -০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে যেসব বিভাগের জন্য-
খুলনা: +০৩ মিনিট
রাজশাহী: +০৭ মিনিট
রংপুর: +০৮ মিনিট
বরিশাল: +০১ মিনিট
তথ্যসূত্র: ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন মুসলমানের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে ফরজ করেছেন। নামাজ দুনিয়ায় সব ধরনের অন্যায় কাজ থেকে আমাদের বিরত রাখে। কর্মক্ষম উজ্জীবিত মানসিকতা লাভে নামাজ আল্লাহর এক মহা নেয়ামত। বান্দার জন্য অন্যতম রহমতও বটে। তাইতো আল্লাহ তাআলা মানুষকে সার্বিকভাবে উজ্জীবিত করতে নামাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। আর নামাজ না পড়লে শাস্তির বিধানও রেখেছেন।
নামায আদায়ে পরকালে পুরস্কার পাওয়া ছাড়াও পাবেন অনেক শারীরিক উপকার। তাহলে চলুন কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কেগুলো জানি:
অজু: নামাজের জন্য মানুষকে প্রতিদিন পাঁচ বার অজু করতে হয়। আর এতে মানুষের ত্বক পরিষ্কার থাকে। অজুর সময় মানুষের দেহের মূল্যবান অংশগুলো পরিষ্কার হয়। এতে জীবাণু থেকে ত্বক সুরক্ষা থাকে। এছাড়া চেহারার লাবণ্যতাও বাড়ে ও মুখের বলিরেখা কমে যায়।
নামাজে দাঁড়ানো: মানুষ যখন নামাজে দাঁড়ায়, তখন চোখ সিজদার স্থানে স্থির থাকে। ফলে মানুষের একাগ্রতা ও মনোযোগ বাড়ে।
রুকু: নামাজি ব্যক্তি যখন রুকু করেন আবার রুকু থেকে ওঠে সোজা হয়ে দাঁড়ান তখন মানুষের কোমর ও হাঁটুর ভারসাম্য রক্ষা হয়। রক্ত চলাচল বাড়ে। ফলে কোমর ও হাঁটু ব্যথা কমে।
সেজদা: নামাজে যখন সেজদা করা হয় তখন নামাজি ব্যক্তির মস্তিস্কে দ্রুত রক্ত প্রবাহিত হয়। ফলে তার স্মৃতি শক্তি বহুগুণে বাড়ে। আবার সেজদা থেকে ওঠে যখন দুই সেজদার মাঝখানে বসে এতে তার পায়ের উরু ও হাঁট সংকোচন এবং প্রসরণ ঘটে। এতে করে মানুষের হাঁটু ও কোমরের ব্যথা উপশম হয়।
সালাম ফেরানো: নামাজ শেষে বসা অবস্থায় ডান ও বাম দিকে সালাম ফেরানো হয়। এতে শরীরের শুধু মাথা ও ঘাড় ডান দিকে ও বাম দিকে ফেরানো হয়। এটা ঘাড়ের উত্তম ব্যায়াম, যা নামাজের মাধ্যমে সাধিত হয়।
বিনয়ী হওয়া: নামাজ মানুষকে সময় সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। বান্দা সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য সময় মতো নামাজে বিনয়ী হয়ে দাঁড়ায়। আর এখান থেকেই কীভাবে বিনয়ী হতে হয় তার শিক্ষাগ্রহণ করা যায়।
স্বাস্থ্য উপকারিতা: নামাজ মানুষের দেহের কাঠামোগত ভারসাম্যতা বজায় রাখে। ফলে স্থুলতা কমে। নামাজে নড়া-চড়া করায় অঙ্গগুলো স্থানভেদে সংবর্ধিত, সংকুচিত হয়ে বিশেষ কাজ করে থাকে। অঙ্গ ও জোড়াগুলোর বর্ধন ও উন্নতি এবং শক্তি বাড়ায়।
মন প্রশান্ত করে: নামাজের মাধ্যমে একজন মুসলমান নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করে। এই আত্মসমর্পণে আত্মিক দিক দিয়ে নামাজি ব্যক্তি শক্তিশালী হন। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর ধ্যানে তার মন প্রশান্ত হয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক উপকারিতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (দ.)-এর প্রশংসায় বরাবরই সরব ছিলেন কবিরা। পূর্ব থেকে শুরু করে পশ্চিম পর্যন্ত যেখানেই ইসলামের শ্বাশত বাণী পৌঁছেছে সেখানেই উচ্চারিত হয়েছে প্রিয় নবীর জয়গান। তার (দ.) শানে রচিত হয়েছে কবিতা, গান অথবা আমরা যেভাবে বলি নাতে রাসুল (দ.)।
বাংলার কবিরাও নিজেদের ভাষায় মনের সমস্ত আবেগ, ভালোবাস উজার করে দিয়ে প্রশংসার ঝড় তুলেছেন প্রিয় নবীর জন্য। সে ঝড় এতটাই শক্তিশালী যে, বছরের পর বছর পার হলেও তার আবেদন, নতুনত্ব, চাকচিক্য কমেনি একবিন্দুও। মনে হয়, এইতো বুঝি আজই প্রিয় নবীর স্মরণে লেখা হলো এ কবিতা।
বাংলাদেশে যে কয়জন কবি, লেখক দোজাহানের সর্দার হযরত মুহাম্মদ (দ.)-কে নিয়ে লিখেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগণ্য জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি শুধু রাসুল (দ.)-কে নিয়ে নয়, কবিতা লিখেছেন ইসলামের নানা শাখা নিয়ে। তাকে বলা হয় বাংলা আধুনিক ইসলামি সঙ্গীতের প্রবর্তক।
নজরুল-মানসে ইসলাম আল্লাহ রাসূল বিভিন্ন মাত্রিকতায় ধরা দিয়েছিল। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কাজী নজরুল ইসলামের বিশ্বাস-বোধ-চেতনা এবং প্রকাশ ছিল সত্য-সহজ-সুন্দর ও শিল্পীত। হযরত মোহাম্মদ (দ.)-এর রূপ, গুণ, কর্মজীবন, শিষ্টাচার নজরুলের শেষ আশ্রয়স্থল এবং হযরত মোহাম্মদ (দ.)-এর আদর্শের বাস্তবায়নসহ বহুবিধ বিষয়কে উপজীব্য করে তিনি নাতে রাসুল রচনা করেছেন।
‘মোহাম্মদের নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে।তাই কিরে তোর কণ্ঠেরি গান, (ওরে) এমন মধুর লাগে।ওরে গোলাপ নিরিবিলিনবীর কদম ছুঁয়েছিলিতাঁর কদমের খোশবু আজো তোর আতরে জাগে।’
এমন অসংখ্য নাতে রাসুলে ওঠে এসেছে প্রিয় নবীর প্রতি কবির অকৃত্রিম ভালোবাসা। রাসূলকে (দ.) নিয়ে নজরুল এত গান রচনা করেছেন ভাবলে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। মানুষের কল্পনা এমনও হতে পারে! এতভাবে কল্পনা করা যায়! এভাবে সুরে ছন্দে বাঁধা যায় একজন মানুষকে! এ অসাধ্য সাধন করেছেন নজরুল। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষটিকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েই তিনি রচনা করেছেন এসব নাতে রাসূল।
তার রচিত ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ/এলো রে দুনিয়ায়/আয়রে সাগর আকাশ বাতাস/দেখবি যদি আয়।’ এ গান তো বাঙালি মুসলমানের মুখে মুখে। মুসলমান যখনই সুরে সুরে প্রিয় নবীকে স্মরণ করতে চান তখনই তার অজান্তে হলেও মনের মধ্যে ভেসে ওঠে চির নতুন এ সুর। যেন আজও বাতাসে দোল খাচ্ছে প্রিয় নবীর দোলনা। আজও কানে বাজে আর জীবন্ত হয়ে ওঠে সে দৃশ্য। কবি বলছেন— ‘দেখ আমিনা মায়ের কোলে/দোলে শিশু ইসলাম দোলে/কচি মুখের শাহাদাতের/বাণী যে কে শুনায়/আয়রে সাগর আকাশ বাতাস/দেখবি যদি আয়।’
সুদীর্ঘকাল ধরে বাংলাভাষী মুসলমানের মনে যে অভাব ও তৃষ্ণা ছিল কাজী নজরুল ইসলাম তার সোনার কলমের ছোঁয়ায় স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছেন। তিনি তুলে ধরেছেন একজন সত্যিকারের মুসলমানের কর্তব্য কী, আদর্শ কী? সদিচ্ছা কী? সফলতা কিসে। কাজী নজরুল ইসলামের রচিত এসব নাতে রাসুল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ইসলামের বার্তাবাহকের ছবি, কর্ম, জীবনাদর্শ পৌঁছে দেবে।
ভবিষ্যতের মানুষ তাদের চরম বিপর্যয়ের দিনে পাবে আশ্রয়ের স্থল। স্থির করতে পারবে তাদের কর্তব্য। মুখে মুখে, ঠোঁটে ঠোঁটে ফিরবে ‘মোহাম্মদের নাম’। শুধু মানবজাতি নয়, বুলবুলি পাখিও জপছে প্রিয় নবীর নাম। এ কবিতা পড়ে আমরা বুঝতে পারি, হযরত মুহাম্মদ (দ.) শুধু মানবজাতির জন্যই নবী হয়ে আসেননি, তিনি সমগ্র সৃষ্টিকূলের নবী। যেভাবে কোরআনুল করিমে বর্ণিত হয়েছে রাসুল (দ.) সমগ্র সৃষ্টির জন্যই এসেছেন রহমত হয়ে।
‘হে মদিনার বুলবুলি গোগাইলে তুমি কোন গজল।মরুর বুকে উঠল ফুটেপ্রেমের রঙিন গোলাপ দলদুনিয়ার দেশ-বিদেশ থেকেগানের পাখি উঠল ডেকে,মুয়াজ্জিনের আজান ধ্বনিউঠল ভেদি গগনতলসাহারার দগ্ধ বুকে রচলে তুমি গুলিস্তান সেথাআসহাব সব ভ্রমর হয়ে শাহদতের গাইল গান।’
কবির এসব সৃষ্টিতে প্রিয় নবী আশেকের অন্তরে হাজির হচ্ছেন আরও নবরূপে, প্রতিমুহূর্তে, প্রতিঅন্তরে। নবী (দ.)-এর নামে এমন নেশা, এমন ভালোবাসা, উম্মত মাত্রই পাগলপারা হয়ে যাচ্ছেন, আশেকে রাসুল চোখের পানিতে জপছেন সে একটাই নাম— মুহাম্মদ।
‘তোমার নামে একি নেশা হে প্রিয় হজরত।যত চাহি তত কাঁদি, আমার মেটে না হসরত।কোথায় আরব কোথায় এ হিন্দ্নয়নে মোর নাই তবু নিন্দপ্রাণে শুধু জাগে (তোমার) মদিনার ঐ পথ।কে বলে তুমি গেছ চলে হাজার বছর আগেআছ লুকিয়ে তুমি প্রিয়তম আমার অনুরাগে।’
নজরুলের চেতনায় সাহারা মরুভূমিতে গুলিস্তানের আবাদ হয়েছে নবীজির আবির্ভাবে। সাহারার ধূলিপথের ওপর দিয়ে যখন সে মহাপুরুষের পদচারণা হত সে খবর বুলবুলি তার সুরে সুরে পৌঁছে দিত— ‘সাহারাতে ফুটল রে রঙিন গুলে লালা’। যে ফুলের খুশবুতে সূর্য, আকাশ, বাতাস, সাগর, নদী, তারকাসহ সমগ্র প্রকৃতি আচ্ছন্ন, কাজী নজরুল ইসলামের মায়াবী বর্ণনায় রাসূল (দ.)-এর আবির্ভাব ও তার পবিত্র উপস্থিতি প্রকৃতির রূপকল্পে উঠে এসেছে। যা নিঃসন্দেহে বিচিত্র, বর্ণিল, প্রাণময় আন্তরিক সৌন্দর্যে ভরপুর।
‘সাহারাতে ফুটল রে রঙিন গুলে লালা/ সেই ফুলেরি খোশবুতে আজ দুনিয়া মাতোয়ালা। সে ফুল নিয়ে কাড়াকাড়ি চাঁদ— সুরুজ গ্রহ-তারায়/ ঝুঁকে প'ড়ে চুমে সে ফুল নীল গগন নিরালা। সেই ফুলেরি রঙ লেগে আজ ত্রিভুবন উজালা। চাহে সে ফুল জ্বীন ও ইনসান হুরপরী ফেরেশতায়/ ফকির দরবেশবাদশা চাহে করিতে গরার মালা (তারে)/ চেনে রসিক ভ্রমর, বুলবুল সেই ফুলের ঠিকানা/ কেউ বলে হযরত মোহাম্মদ (বলে) কেউ বা কমলিওয়ালা।’
প্রিয় নবীর সান্নিধ্য পাওয়া একজন মুমিনের আজন্ম বাসনা। কিন্তু নজরুল না লিখলে বোধহয় আমরা জানতে পারতাম না, মানুষ না হয়ে যদি মদিনার মাটি হতাম তাহলেও সে আক্ষেপ ঘুচে যেত প্রিয় নবীর ধুলি নিয়ে। তিনি লিখছেন, ‘আমি যদি আরব হতাম মদিনারই পথ/ এই পথে মোর চলে যেতেন নূর নবী হযরত/ পয়জার তাঁর লাগত এসে আমার কঠিন বুকে, আমি ঝর্ণা হয়ে গ’লে যেতাম অম্নি পরম সুখে/ সেই চিহ্ন বুকে পুরে পালিযে যেতাম কোহ্-ই-তুরে/ দিবা নিশি করতাম তাঁর কদম জিয়ারত। মা ফাতেমা খেলতো এসে আমার ধূলি ল’য়ে/ আমি পড়তাম তাঁর পায়ে লুটিয়ে ফুলের রেণু হয়ে। হাসান হোসেন হেসে হেসে/ নাচতো আমার বক্ষে এসে/ চক্ষে আমার বইতো নদী পেয়ে সে নেয়ামত।’
দরূদ পাঠ মুসলিম সমাজের একটি নিদর্শন, রাসুল (দ.)- এর প্রতি ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন, গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী আমল। আর আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি অসাধারণ দরূদ হল- হযরত শেখ সাদী (র.) রচিত ‘বালাগাল উলা বি-কামালিহি/ কাশাফাদ্দুজা বি-জামালিহি/ হাসুনাৎ জামিয়ু খিসালিহি/ সাল্লু আলায়হি ওয়া আলিহি।’ যখন সুর দিয়ে দরূদটি পড়া হয়, তখন তার সঙ্গীত মাধুরিতে মনের মধ্যে সৃষ্টি করে অন্যরকম এক কাঁপন। হৃদয় নিংড়ানো সে সুরে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসায় বিমোহিত হন সকলে। কাজী নজরুল ইসলাম এ অসম্ভব সুন্দর, হৃদয়কাড়া দরুদ পড়েও ভালোবাসায় পতিত হন রাসুলের প্রতি। তিনি লিখেন—
কুল মখলুক গাহে হযরতবালাগাল উলা বেকামালিহী।আঁধার ধরায় এলে আফতাবকাশাফাদ দুজা বেজমালিহী ॥রৌশনীতে আজো ধরা মশগুলতাইতো ওফাতে করি না কবুল,হাসনাতে আজো উজালা জাহানহাসুনাত জমিউ খেসালিহী ॥নাস্তিরে করি’ নিতি নাজেহালজাগে তাওহীদ দ্বীন-ই কামালখুশবুতে খুশী দুনিয়া বেহেশতসাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী।’
প্রশংসাবাণীর পাশাপাশি মানুষের অন্যায়-অপররাধ আর রাসুলের আদর্শ থেকে বিচ্যুতির জন্যই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন প্রিয় নবী। নজরুলের ‘ক্ষমা করো হজরত’ কবিতাটি পড়লে মনে হয়, কবি যেন প্রায় শতবর্ষ আগেই আমাদের বর্তমান অবস্থা স্বচক্ষে দেখে কবিতাটি লিখেছিলেন। কবি দেখতে পেয়েছিলেন, মানুষ রাসুল (দ.)-এর মর্মবাণী ভুলে গিয়ে পারষ্পরিক হিংসা বিদ্বেষে জড়িয়ে পড়বে। আজ যখন সারাদেশ, সাম্প্রদায়িকতার বিষ আগুনে জ্বলছে, তখন বারবার মনে পড়ে নজরুলকে। তার ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে ‘ক্ষমা কর হযরত।’
‘তোমার বাণীরে করিনি গ্রহণ ক্ষমা কর হজরত।মোরা ভুলিয়া গিয়াছি তব আদর্শ, তোমারি দেখানো পথ।প্রভু তোমার ধর্মে অবিশ্বাসীরে তুমি ঘৃণা নাহি ক’রেআপনি তাদের করিয়াছ সেবা ঠাঁই দিয়ে নিজ ঘরে।ভিন্ ধর্মীর পূজা-মন্দির, ভাঙিতে আদেশ দাওনি, হে বীর,প্রভু আমরা আজিকে সহ্য করিতে পারিনে’ক পর-মত ॥তুমি চাহ নাই ধর্মের নামে গ্লানিকর হানাহানি,তলোয়ার তুমি দাও নাই হাতে, দিয়াছ অমর বাণী।মোরা ভুলে গিয়ে তব উদারতাসার করিয়াছি ধর্মন্ধতা,বেহেশ্ত্ হ’তে ঝরে নাকো আর তাই তব রহমত।
লেখক: সাংবাদিক
রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরতের পর রাষ্ট্রের সংস্কারের কাজে লেগে পড়েন এবং একটি শান্তিময় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করেন। সুন্দর, শান্তিময়, শৃঙ্খলাময় নীতিমালায় সমৃদ্ধ ছিল এ ইসলামি রাষ্ট্র । রাসুল (সা.) নব-প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রকে সুদৃঢ়ীকরণের জন্য রাজস্ব ব্যবস্থার প্রচলন করেন। তাঁর শাসনামলে রাজস্ব আয়ের বিভিন্ন উৎস ছিল। এই উৎসসমূহের মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পদে জনসাধারণের অধিকার ও ভোগ করার সুযোগ নিশ্চিত করেন। রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নে এবং দেশের প্রতিরক্ষাকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করেন। উল্লেখিত খাতসমূহ থেকে উপার্জনকৃত অর্থ গরিব জনগণ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে ব্যয় করতেন। রাষ্ট্রের জন্য বায়তুলমাল প্রতিষ্ঠা করেন এবং কৃষি ও ব্যবসার উন্নতি নিশ্চিত করেন। সেসব উৎস থেকে প্রধান পাঁচটি উৎস নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো- ১. জাকাত ২.খারাজ ৩. জিজিয়া ৪. গনিমত ৫. আল-ফে
এক. জাকাত
ইসলামী রাজস্ব ব্যবস্থায় ইসলামী বিধান অনুসারে সচ্ছল মুসলমানদের অবশ্যই প্রদেয় কর হচ্ছে জাকাত। নামাজের পরেই জাকাতের স্থান। জাকাত অর্থ পবিত্রকরণ এবং প্রত্যেক সক্ষম মুসলিমকে তার স্থাবর সম্পত্তির কিয়দংশ রাজকোষ বা বায়তুল-মালে প্রদান করতে হতো। সম্পদশালী মুসলমানদের ওপর জাকাত প্রযোজ্য। বাৎসরিক খরচ বাদে এবং ঋণ বাদে বহনযোগ্য মাল নির্দিষ্ট পরিমাণে পৌঁছালে তার ওপর দেয় কর জাকাত শরয়ী নীতি অনুযায়ী জাকাত বণ্টিত হতো। জাকাত ও সাদকা বাবদ যে অর্থ বা মাল (সংগৃহীত হতো রাসুল (সাঃ)-এর নির্দেশে তার হিসাব কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করতেন জোবায়ের ইবনে আল আওয়াম ও যুহাহির ইবনে আল সালাত। পরবর্তীতে মুহাম্মদ (সাঃ) প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য স্বতন্ত্র আদায়কারী নিযুক্ত করেন। এই আদায়কারী সাহাবিদের সাময়িকভাবে নিযুক্ত করা হয়। প্রয়োজনে তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হতো।
জাকাত প্রধানত সোনা, রুপা, খাদ্য-শস্য, গৃহপালিত জন্তু ও বাণিজ্য দ্রব্যের ওপর অর্পিত হতো। নির্দিষ্ট পরিমাণ সোনা-রুপা অথবা সঞ্চিত অর্থের ঊর্ধ্বে সম্পদ থাকলে জাকাত প্রদান বাধ্যতামূলক। ২০০ দিরহামের ঊর্ধ্বে জাকাত প্রদান অপরিহার্য। সেই ক্ষেত্রে শতকরা ২.৫ ভাগ জাকাত দিতে হয়। জাকাত হিসেবে গৃহীত কর বিভিন্নভাবে ব্যয় করা হয়; যেমন- দুস্থ ও অক্ষম ব্যক্তিদের সাহায্যে অভাবগ্রস্তদের অভাব দূরীকরণ, কর আদায়কারীদের বেতন, দাস ও বন্দীদের মুক্তিপণ, ঋণগ্রস্তদের সাহায্যে, জিহাদ ও আল্লাহর পথের পথিকদের সাহায্য। জাকাত হিসেবে প্রদত্ত অর্থকে নিসাব বলে। আয়করের সঙ্গে পার্থক্য এই যে, এটি বাৎসরিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল নয়।
দুই. খারাজ
খারাজ বা ভূমি রাজস্ব। অমুসলিম ভূ-স্বামীদের ওপর রাসুলে (সা.) এই কর ধার্য করেন। রোমীয় সাম্রাজ্য (ট্রাইবিউটান সোলি) এবং পারস্যের ‘খাবাগ’ হতে খারাজের উৎপত্তি। রাসুল (সা.) খাইবার যুদ্ধের পর এই ভূমি কর প্রচলন করেন। বিশেষ করে বিত্তশালী ইহুদি সম্প্রদায় ভূমির উৎপন্ন দ্রব্যের অর্ধেক সরকারকে প্রদান করত। ‘খারাজ’’ হতে গৃহীত রাজস্ব সেনাবাহিনীদের বেতনের জন্য খরচ করা হতো।
তিন. জিজিয়া
অমুসলমানদের ওপর আরোপিত কর ‘জিজিয়া’ নামে পরিচিত। কোরানের নির্দেশ অনুযায়ী রাসুল (সা.) অমুসলিমদের ওপর এই কর ধার্য করেন। এর পরিবর্তে তারা ইসলামী রাষ্ট্রের জিম্মিতে পরিণত হয় এবং রাষ্ট্রের নিকট হতে জান ও মালের নিরাপত্তা লাভ করত; উপরন্তু, তাদেরকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হত না। সাধারণভাবে সকল সক্ষম অমুসলমানকে মাথাপিছু এক দিনার ‘জিজিয়া’ দিতে হত। অবশ্য অপ্রকৃতিস্থ, শিশু, অসুস্থ, দরিদ্র ধর্মযাজকদের ‘জিজিয়া’ হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়। জিজিয়ার অর্থ মূলত সেনাবাহিনীর সাজসজ্জা, রসদ ও বেতন বাবদ খরচ করা হত।
চার. গনিমত
যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রু পক্ষের নিকট হতে প্রাপ্ত মালকে গানীমাত বলে। ‘গনিমত’ বা ‘খুমস’ অথবা এক-পঞ্চমাংশ কর যুদ্ধ লব্ধ দ্রব্য-সামগ্রী হতে গ্রহণ করা হত। গনিমত লুণ্ঠিত দ্রব্যাদিকে বোঝায় এবং বিজিতরা যুদ্ধক্ষেত্র হতে যে সমস্ত সম্পদ আহরণ করত তার এক-পঞ্চমাংশ বায়তুল মালে প্রদান করে অবশিষ্ট চার-পঞ্চমাংশ সৈনিকেরা নিজেরা বণ্টন করে নিতেন। এখানেও শ্রেণিবিভাগ ছিল; যেমন- অশ্বারোহী পদাতিক অপেক্ষা দ্বিগুণ অথবা তিনগুণ পেত। এক-পঞ্চমাংশ সম্পদের মধ্যে নবী সা. ও তাঁর পরিবার বর্গ ও অনাথদের ভরণপোষণের জন্য ব্যয় করা হত। এ ছাড়া মুসাফির ও দুস্থরাও কিয়দংশ পেত।
৫. আল-ফে :
মুসলিম রাষ্ট্রের আয়ের পঞ্চম উৎস ছিল আল-ফে। বিজিত দেশের আবাদী ভূমির কতকাংশ সরাসরি রাষ্ট্রের দখলে নেয়া হতো। এই ভূমিকে রাষ্ট্রীয় ভূ-সম্পত্তি বলা হতো। এই ভূমি হতে যা আয় হতো তা গরীব-দুঃখীদের মাঝে ও জনহিতকর কাজে ব্যয় করা হতো। বিজিত অঞ্চলে মুসলিম ভূ- স্বামীদের ভূমিকর ‘আল-ফে’ নামে পরিচিত। এই ভূমি রাজস্ব নবিজির আত্মীয়-স্বজন, দুস্থ পরিবার ও মুসাফিরদের মধ্যে বিতরণ করা হত। খারাজ ও আল-ফে-এর মধ্যে প্রভেদ হচ্ছে এই যে, ভূমিকর হওয়া সত্ত্বেও প্রথমটি অমুসলিম এবং পরেরটি মুসলিম ভূস্বামীগণ প্রদান করতেন।
লেখক: শিক্ষক ও অনুবাদক
আগামী চেস গিল্ড স্কুল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইয়ান রহমান ও মনন রেজা নীড়। একক ইভেন্টের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে আইয়ান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীড়। ৭ রাউন্ডের খেলায় আইয়ান ও নীড় দুজনই পেয়েছে সাড়ে ছয় পয়েন্ট করে।
বিটজ দলগত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এলিগেন্ট চেস একাডেমি। এই দলে খেলেছে জারিফ হক আফনান, তাসরিক সায়হান, সিয়াম চৌধুরী ও নীলাভা চৌধুরী। আজ শনিবার দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।
আগামী চেস গিল্ডের আয়োজনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ‘আমরা ৯২’ আগামী চেস গিল্ড স্কুল রেটিং টুর্নামেন্ট। সুইস লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। একক ও দলগত দুই বিভাগে অংশ নেয় ১৪৫ জন দাবাড়ু। টুর্নামেন্টে বিজয়ীরা ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
টানা ৬ ম্যাচ জিতে লা লিগার শীর্ষে উঠে এসেছিল জিরোনা। আগের রাতে সেভিয়াকে হারানো বার্সেলোনা সেই জিরোনাকে পেছনে ফেলে। আর রিয়াল মাদ্রিদ এবার উড়তে থাকা জিরোনাকে হারিয়ে লা লিগার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করেছে।
শনিবার মন্তিলিভি স্টেডিয়ামে জিরোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। রিয়ালের হয়ে গোল তিনটি করেছেন জোসেলু, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও জুড বেলিংহাম।
আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ২১। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা। আর টানা ছয় জয়ের পর রিয়ালের কাছে হেরে যাওয়া জিরোনা ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে।
সপ্তাহ খানেক আগেই আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে ৩-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। এবার জিরোনায় গিয়ে
প্রথমার্ধেই ২ গোলে এগিয়ে যায় আনচেলোত্তির শিষ্যরা। এর মধ্যে ১৭ মিনিটে বেলিংহামের ক্রস থেকে বল জালে পাঠান জোসেলু। আর ২২ মিনিটে টনি ক্রুসের কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন চুয়ামেনি।
রিয়াল ব্যবধান ৩-০ করে ৭১ মিনিটে। জোসেলুর শট জিরোনা গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। নাগালে বল পেয়ে দারুণভাবে বল জালে পাঠান বেলিংহাম। এটি রিয়ালের হয়ে ৭ ম্যাচে তার অষ্টম গোল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।