
হজে যাওয়ার আগে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিন। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, সহকর্মী ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মনোমালিন্য থাকলে, পারিবারিক কোনো হিসাব থাকলে মিটিয়ে নিন। ঋণ পরিশোধ করে যান হজ থেকে ফেরার সুযোগ নাও হতে পারে।
শুধু হজযাত্রার শুরুতে নয়, সর্বদা সন্তান-সন্ততিদের ভালো কাজের ও সৎপথে থাকার উপদেশ দিন।
হজে গিয়ে ছবি তোলা কিংবা ভিডিও করা কাম্য নয়। যতটা বেশি সম্ভব মসজিদে হারাম কিংবা মসজিদে নববিতে সময় কাটান। বাকি সময়টুকু হোটেল রুমে বিশ্রামে থাকুন, টিভি দেখে, প্রবাসে থাকে বন্ধু কিংবা আত্মীয়দের ডেকে এনে গল্প-গুজব করে সময় নষ্ট করবেন না।
আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবদের কেউ অসুস্থ থাকলে তার জন্য হারাম শরিফে আলাদাভাবে দোয়া করুন, এমনকি সে যদি আপনার পূর্বে কোনো ক্ষতি বা মনোকষ্টও দিয়ে থাকে। মা-বাবার জন্য প্রাণভরে দোয়া করুন। দেশের জন্য দোয়া করুন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (দ.)-এর প্রশংসায় বরাবরই সরব ছিলেন কবিরা। পূর্ব থেকে শুরু করে পশ্চিম পর্যন্ত যেখানেই ইসলামের শ্বাশত বাণী পৌঁছেছে সেখানেই উচ্চারিত হয়েছে প্রিয় নবীর জয়গান। তার (দ.) শানে রচিত হয়েছে কবিতা, গান অথবা আমরা যেভাবে বলি নাতে রাসুল (দ.)।
বাংলার কবিরাও নিজেদের ভাষায় মনের সমস্ত আবেগ, ভালোবাস উজার করে দিয়ে প্রশংসার ঝড় তুলেছেন প্রিয় নবীর জন্য। সে ঝড় এতটাই শক্তিশালী যে, বছরের পর বছর পার হলেও তার আবেদন, নতুনত্ব, চাকচিক্য কমেনি একবিন্দুও। মনে হয়, এইতো বুঝি আজই প্রিয় নবীর স্মরণে লেখা হলো এ কবিতা।
বাংলাদেশে যে কয়জন কবি, লেখক দোজাহানের সর্দার হযরত মুহাম্মদ (দ.)-কে নিয়ে লিখেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগণ্য জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি শুধু রাসুল (দ.)-কে নিয়ে নয়, কবিতা লিখেছেন ইসলামের নানা শাখা নিয়ে। তাকে বলা হয় বাংলা আধুনিক ইসলামি সঙ্গীতের প্রবর্তক।
নজরুল-মানসে ইসলাম আল্লাহ রাসূল বিভিন্ন মাত্রিকতায় ধরা দিয়েছিল। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কাজী নজরুল ইসলামের বিশ্বাস-বোধ-চেতনা এবং প্রকাশ ছিল সত্য-সহজ-সুন্দর ও শিল্পীত। হযরত মোহাম্মদ (দ.)-এর রূপ, গুণ, কর্মজীবন, শিষ্টাচার নজরুলের শেষ আশ্রয়স্থল এবং হযরত মোহাম্মদ (দ.)-এর আদর্শের বাস্তবায়নসহ বহুবিধ বিষয়কে উপজীব্য করে তিনি নাতে রাসুল রচনা করেছেন।
‘মোহাম্মদের নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে।তাই কিরে তোর কণ্ঠেরি গান, (ওরে) এমন মধুর লাগে।ওরে গোলাপ নিরিবিলিনবীর কদম ছুঁয়েছিলিতাঁর কদমের খোশবু আজো তোর আতরে জাগে।’
এমন অসংখ্য নাতে রাসুলে ওঠে এসেছে প্রিয় নবীর প্রতি কবির অকৃত্রিম ভালোবাসা। রাসূলকে (দ.) নিয়ে নজরুল এত গান রচনা করেছেন ভাবলে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। মানুষের কল্পনা এমনও হতে পারে! এতভাবে কল্পনা করা যায়! এভাবে সুরে ছন্দে বাঁধা যায় একজন মানুষকে! এ অসাধ্য সাধন করেছেন নজরুল। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষটিকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েই তিনি রচনা করেছেন এসব নাতে রাসূল।
তার রচিত ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ/এলো রে দুনিয়ায়/আয়রে সাগর আকাশ বাতাস/দেখবি যদি আয়।’ এ গান তো বাঙালি মুসলমানের মুখে মুখে। মুসলমান যখনই সুরে সুরে প্রিয় নবীকে স্মরণ করতে চান তখনই তার অজান্তে হলেও মনের মধ্যে ভেসে ওঠে চির নতুন এ সুর। যেন আজও বাতাসে দোল খাচ্ছে প্রিয় নবীর দোলনা। আজও কানে বাজে আর জীবন্ত হয়ে ওঠে সে দৃশ্য। কবি বলছেন— ‘দেখ আমিনা মায়ের কোলে/দোলে শিশু ইসলাম দোলে/কচি মুখের শাহাদাতের/বাণী যে কে শুনায়/আয়রে সাগর আকাশ বাতাস/দেখবি যদি আয়।’
সুদীর্ঘকাল ধরে বাংলাভাষী মুসলমানের মনে যে অভাব ও তৃষ্ণা ছিল কাজী নজরুল ইসলাম তার সোনার কলমের ছোঁয়ায় স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছেন। তিনি তুলে ধরেছেন একজন সত্যিকারের মুসলমানের কর্তব্য কী, আদর্শ কী? সদিচ্ছা কী? সফলতা কিসে। কাজী নজরুল ইসলামের রচিত এসব নাতে রাসুল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ইসলামের বার্তাবাহকের ছবি, কর্ম, জীবনাদর্শ পৌঁছে দেবে।
ভবিষ্যতের মানুষ তাদের চরম বিপর্যয়ের দিনে পাবে আশ্রয়ের স্থল। স্থির করতে পারবে তাদের কর্তব্য। মুখে মুখে, ঠোঁটে ঠোঁটে ফিরবে ‘মোহাম্মদের নাম’। শুধু মানবজাতি নয়, বুলবুলি পাখিও জপছে প্রিয় নবীর নাম। এ কবিতা পড়ে আমরা বুঝতে পারি, হযরত মুহাম্মদ (দ.) শুধু মানবজাতির জন্যই নবী হয়ে আসেননি, তিনি সমগ্র সৃষ্টিকূলের নবী। যেভাবে কোরআনুল করিমে বর্ণিত হয়েছে রাসুল (দ.) সমগ্র সৃষ্টির জন্যই এসেছেন রহমত হয়ে।
‘হে মদিনার বুলবুলি গোগাইলে তুমি কোন গজল।মরুর বুকে উঠল ফুটেপ্রেমের রঙিন গোলাপ দলদুনিয়ার দেশ-বিদেশ থেকেগানের পাখি উঠল ডেকে,মুয়াজ্জিনের আজান ধ্বনিউঠল ভেদি গগনতলসাহারার দগ্ধ বুকে রচলে তুমি গুলিস্তান সেথাআসহাব সব ভ্রমর হয়ে শাহদতের গাইল গান।’
কবির এসব সৃষ্টিতে প্রিয় নবী আশেকের অন্তরে হাজির হচ্ছেন আরও নবরূপে, প্রতিমুহূর্তে, প্রতিঅন্তরে। নবী (দ.)-এর নামে এমন নেশা, এমন ভালোবাসা, উম্মত মাত্রই পাগলপারা হয়ে যাচ্ছেন, আশেকে রাসুল চোখের পানিতে জপছেন সে একটাই নাম— মুহাম্মদ।
‘তোমার নামে একি নেশা হে প্রিয় হজরত।যত চাহি তত কাঁদি, আমার মেটে না হসরত।কোথায় আরব কোথায় এ হিন্দ্নয়নে মোর নাই তবু নিন্দপ্রাণে শুধু জাগে (তোমার) মদিনার ঐ পথ।কে বলে তুমি গেছ চলে হাজার বছর আগেআছ লুকিয়ে তুমি প্রিয়তম আমার অনুরাগে।’
নজরুলের চেতনায় সাহারা মরুভূমিতে গুলিস্তানের আবাদ হয়েছে নবীজির আবির্ভাবে। সাহারার ধূলিপথের ওপর দিয়ে যখন সে মহাপুরুষের পদচারণা হত সে খবর বুলবুলি তার সুরে সুরে পৌঁছে দিত— ‘সাহারাতে ফুটল রে রঙিন গুলে লালা’। যে ফুলের খুশবুতে সূর্য, আকাশ, বাতাস, সাগর, নদী, তারকাসহ সমগ্র প্রকৃতি আচ্ছন্ন, কাজী নজরুল ইসলামের মায়াবী বর্ণনায় রাসূল (দ.)-এর আবির্ভাব ও তার পবিত্র উপস্থিতি প্রকৃতির রূপকল্পে উঠে এসেছে। যা নিঃসন্দেহে বিচিত্র, বর্ণিল, প্রাণময় আন্তরিক সৌন্দর্যে ভরপুর।
‘সাহারাতে ফুটল রে রঙিন গুলে লালা/ সেই ফুলেরি খোশবুতে আজ দুনিয়া মাতোয়ালা। সে ফুল নিয়ে কাড়াকাড়ি চাঁদ— সুরুজ গ্রহ-তারায়/ ঝুঁকে প'ড়ে চুমে সে ফুল নীল গগন নিরালা। সেই ফুলেরি রঙ লেগে আজ ত্রিভুবন উজালা। চাহে সে ফুল জ্বীন ও ইনসান হুরপরী ফেরেশতায়/ ফকির দরবেশবাদশা চাহে করিতে গরার মালা (তারে)/ চেনে রসিক ভ্রমর, বুলবুল সেই ফুলের ঠিকানা/ কেউ বলে হযরত মোহাম্মদ (বলে) কেউ বা কমলিওয়ালা।’
প্রিয় নবীর সান্নিধ্য পাওয়া একজন মুমিনের আজন্ম বাসনা। কিন্তু নজরুল না লিখলে বোধহয় আমরা জানতে পারতাম না, মানুষ না হয়ে যদি মদিনার মাটি হতাম তাহলেও সে আক্ষেপ ঘুচে যেত প্রিয় নবীর ধুলি নিয়ে। তিনি লিখছেন, ‘আমি যদি আরব হতাম মদিনারই পথ/ এই পথে মোর চলে যেতেন নূর নবী হযরত/ পয়জার তাঁর লাগত এসে আমার কঠিন বুকে, আমি ঝর্ণা হয়ে গ’লে যেতাম অম্নি পরম সুখে/ সেই চিহ্ন বুকে পুরে পালিযে যেতাম কোহ্-ই-তুরে/ দিবা নিশি করতাম তাঁর কদম জিয়ারত। মা ফাতেমা খেলতো এসে আমার ধূলি ল’য়ে/ আমি পড়তাম তাঁর পায়ে লুটিয়ে ফুলের রেণু হয়ে। হাসান হোসেন হেসে হেসে/ নাচতো আমার বক্ষে এসে/ চক্ষে আমার বইতো নদী পেয়ে সে নেয়ামত।’
দরূদ পাঠ মুসলিম সমাজের একটি নিদর্শন, রাসুল (দ.)- এর প্রতি ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন, গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী আমল। আর আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি অসাধারণ দরূদ হল- হযরত শেখ সাদী (র.) রচিত ‘বালাগাল উলা বি-কামালিহি/ কাশাফাদ্দুজা বি-জামালিহি/ হাসুনাৎ জামিয়ু খিসালিহি/ সাল্লু আলায়হি ওয়া আলিহি।’ যখন সুর দিয়ে দরূদটি পড়া হয়, তখন তার সঙ্গীত মাধুরিতে মনের মধ্যে সৃষ্টি করে অন্যরকম এক কাঁপন। হৃদয় নিংড়ানো সে সুরে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসায় বিমোহিত হন সকলে। কাজী নজরুল ইসলাম এ অসম্ভব সুন্দর, হৃদয়কাড়া দরুদ পড়েও ভালোবাসায় পতিত হন রাসুলের প্রতি। তিনি লিখেন—
কুল মখলুক গাহে হযরতবালাগাল উলা বেকামালিহী।আঁধার ধরায় এলে আফতাবকাশাফাদ দুজা বেজমালিহী ॥রৌশনীতে আজো ধরা মশগুলতাইতো ওফাতে করি না কবুল,হাসনাতে আজো উজালা জাহানহাসুনাত জমিউ খেসালিহী ॥নাস্তিরে করি’ নিতি নাজেহালজাগে তাওহীদ দ্বীন-ই কামালখুশবুতে খুশী দুনিয়া বেহেশতসাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী।’
প্রশংসাবাণীর পাশাপাশি মানুষের অন্যায়-অপররাধ আর রাসুলের আদর্শ থেকে বিচ্যুতির জন্যই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন প্রিয় নবী। নজরুলের ‘ক্ষমা করো হজরত’ কবিতাটি পড়লে মনে হয়, কবি যেন প্রায় শতবর্ষ আগেই আমাদের বর্তমান অবস্থা স্বচক্ষে দেখে কবিতাটি লিখেছিলেন। কবি দেখতে পেয়েছিলেন, মানুষ রাসুল (দ.)-এর মর্মবাণী ভুলে গিয়ে পারষ্পরিক হিংসা বিদ্বেষে জড়িয়ে পড়বে। আজ যখন সারাদেশ, সাম্প্রদায়িকতার বিষ আগুনে জ্বলছে, তখন বারবার মনে পড়ে নজরুলকে। তার ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে ‘ক্ষমা কর হযরত।’
‘তোমার বাণীরে করিনি গ্রহণ ক্ষমা কর হজরত।মোরা ভুলিয়া গিয়াছি তব আদর্শ, তোমারি দেখানো পথ।প্রভু তোমার ধর্মে অবিশ্বাসীরে তুমি ঘৃণা নাহি ক’রেআপনি তাদের করিয়াছ সেবা ঠাঁই দিয়ে নিজ ঘরে।ভিন্ ধর্মীর পূজা-মন্দির, ভাঙিতে আদেশ দাওনি, হে বীর,প্রভু আমরা আজিকে সহ্য করিতে পারিনে’ক পর-মত ॥তুমি চাহ নাই ধর্মের নামে গ্লানিকর হানাহানি,তলোয়ার তুমি দাও নাই হাতে, দিয়াছ অমর বাণী।মোরা ভুলে গিয়ে তব উদারতাসার করিয়াছি ধর্মন্ধতা,বেহেশ্ত্ হ’তে ঝরে নাকো আর তাই তব রহমত।
লেখক: সাংবাদিক
রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরতের পর রাষ্ট্রের সংস্কারের কাজে লেগে পড়েন এবং একটি শান্তিময় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করেন। সুন্দর, শান্তিময়, শৃঙ্খলাময় নীতিমালায় সমৃদ্ধ ছিল এ ইসলামি রাষ্ট্র । রাসুল (সা.) নব-প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রকে সুদৃঢ়ীকরণের জন্য রাজস্ব ব্যবস্থার প্রচলন করেন। তাঁর শাসনামলে রাজস্ব আয়ের বিভিন্ন উৎস ছিল। এই উৎসসমূহের মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পদে জনসাধারণের অধিকার ও ভোগ করার সুযোগ নিশ্চিত করেন। রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নে এবং দেশের প্রতিরক্ষাকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করেন। উল্লেখিত খাতসমূহ থেকে উপার্জনকৃত অর্থ গরিব জনগণ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে ব্যয় করতেন। রাষ্ট্রের জন্য বায়তুলমাল প্রতিষ্ঠা করেন এবং কৃষি ও ব্যবসার উন্নতি নিশ্চিত করেন। সেসব উৎস থেকে প্রধান পাঁচটি উৎস নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো- ১. জাকাত ২.খারাজ ৩. জিজিয়া ৪. গনিমত ৫. আল-ফে
এক. জাকাত
ইসলামী রাজস্ব ব্যবস্থায় ইসলামী বিধান অনুসারে সচ্ছল মুসলমানদের অবশ্যই প্রদেয় কর হচ্ছে জাকাত। নামাজের পরেই জাকাতের স্থান। জাকাত অর্থ পবিত্রকরণ এবং প্রত্যেক সক্ষম মুসলিমকে তার স্থাবর সম্পত্তির কিয়দংশ রাজকোষ বা বায়তুল-মালে প্রদান করতে হতো। সম্পদশালী মুসলমানদের ওপর জাকাত প্রযোজ্য। বাৎসরিক খরচ বাদে এবং ঋণ বাদে বহনযোগ্য মাল নির্দিষ্ট পরিমাণে পৌঁছালে তার ওপর দেয় কর জাকাত শরয়ী নীতি অনুযায়ী জাকাত বণ্টিত হতো। জাকাত ও সাদকা বাবদ যে অর্থ বা মাল (সংগৃহীত হতো রাসুল (সাঃ)-এর নির্দেশে তার হিসাব কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করতেন জোবায়ের ইবনে আল আওয়াম ও যুহাহির ইবনে আল সালাত। পরবর্তীতে মুহাম্মদ (সাঃ) প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য স্বতন্ত্র আদায়কারী নিযুক্ত করেন। এই আদায়কারী সাহাবিদের সাময়িকভাবে নিযুক্ত করা হয়। প্রয়োজনে তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হতো।
জাকাত প্রধানত সোনা, রুপা, খাদ্য-শস্য, গৃহপালিত জন্তু ও বাণিজ্য দ্রব্যের ওপর অর্পিত হতো। নির্দিষ্ট পরিমাণ সোনা-রুপা অথবা সঞ্চিত অর্থের ঊর্ধ্বে সম্পদ থাকলে জাকাত প্রদান বাধ্যতামূলক। ২০০ দিরহামের ঊর্ধ্বে জাকাত প্রদান অপরিহার্য। সেই ক্ষেত্রে শতকরা ২.৫ ভাগ জাকাত দিতে হয়। জাকাত হিসেবে গৃহীত কর বিভিন্নভাবে ব্যয় করা হয়; যেমন- দুস্থ ও অক্ষম ব্যক্তিদের সাহায্যে অভাবগ্রস্তদের অভাব দূরীকরণ, কর আদায়কারীদের বেতন, দাস ও বন্দীদের মুক্তিপণ, ঋণগ্রস্তদের সাহায্যে, জিহাদ ও আল্লাহর পথের পথিকদের সাহায্য। জাকাত হিসেবে প্রদত্ত অর্থকে নিসাব বলে। আয়করের সঙ্গে পার্থক্য এই যে, এটি বাৎসরিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল নয়।
দুই. খারাজ
খারাজ বা ভূমি রাজস্ব। অমুসলিম ভূ-স্বামীদের ওপর রাসুলে (সা.) এই কর ধার্য করেন। রোমীয় সাম্রাজ্য (ট্রাইবিউটান সোলি) এবং পারস্যের ‘খাবাগ’ হতে খারাজের উৎপত্তি। রাসুল (সা.) খাইবার যুদ্ধের পর এই ভূমি কর প্রচলন করেন। বিশেষ করে বিত্তশালী ইহুদি সম্প্রদায় ভূমির উৎপন্ন দ্রব্যের অর্ধেক সরকারকে প্রদান করত। ‘খারাজ’’ হতে গৃহীত রাজস্ব সেনাবাহিনীদের বেতনের জন্য খরচ করা হতো।
তিন. জিজিয়া
অমুসলমানদের ওপর আরোপিত কর ‘জিজিয়া’ নামে পরিচিত। কোরানের নির্দেশ অনুযায়ী রাসুল (সা.) অমুসলিমদের ওপর এই কর ধার্য করেন। এর পরিবর্তে তারা ইসলামী রাষ্ট্রের জিম্মিতে পরিণত হয় এবং রাষ্ট্রের নিকট হতে জান ও মালের নিরাপত্তা লাভ করত; উপরন্তু, তাদেরকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হত না। সাধারণভাবে সকল সক্ষম অমুসলমানকে মাথাপিছু এক দিনার ‘জিজিয়া’ দিতে হত। অবশ্য অপ্রকৃতিস্থ, শিশু, অসুস্থ, দরিদ্র ধর্মযাজকদের ‘জিজিয়া’ হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়। জিজিয়ার অর্থ মূলত সেনাবাহিনীর সাজসজ্জা, রসদ ও বেতন বাবদ খরচ করা হত।
চার. গনিমত
যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রু পক্ষের নিকট হতে প্রাপ্ত মালকে গানীমাত বলে। ‘গনিমত’ বা ‘খুমস’ অথবা এক-পঞ্চমাংশ কর যুদ্ধ লব্ধ দ্রব্য-সামগ্রী হতে গ্রহণ করা হত। গনিমত লুণ্ঠিত দ্রব্যাদিকে বোঝায় এবং বিজিতরা যুদ্ধক্ষেত্র হতে যে সমস্ত সম্পদ আহরণ করত তার এক-পঞ্চমাংশ বায়তুল মালে প্রদান করে অবশিষ্ট চার-পঞ্চমাংশ সৈনিকেরা নিজেরা বণ্টন করে নিতেন। এখানেও শ্রেণিবিভাগ ছিল; যেমন- অশ্বারোহী পদাতিক অপেক্ষা দ্বিগুণ অথবা তিনগুণ পেত। এক-পঞ্চমাংশ সম্পদের মধ্যে নবী সা. ও তাঁর পরিবার বর্গ ও অনাথদের ভরণপোষণের জন্য ব্যয় করা হত। এ ছাড়া মুসাফির ও দুস্থরাও কিয়দংশ পেত।
৫. আল-ফে :
মুসলিম রাষ্ট্রের আয়ের পঞ্চম উৎস ছিল আল-ফে। বিজিত দেশের আবাদী ভূমির কতকাংশ সরাসরি রাষ্ট্রের দখলে নেয়া হতো। এই ভূমিকে রাষ্ট্রীয় ভূ-সম্পত্তি বলা হতো। এই ভূমি হতে যা আয় হতো তা গরীব-দুঃখীদের মাঝে ও জনহিতকর কাজে ব্যয় করা হতো। বিজিত অঞ্চলে মুসলিম ভূ- স্বামীদের ভূমিকর ‘আল-ফে’ নামে পরিচিত। এই ভূমি রাজস্ব নবিজির আত্মীয়-স্বজন, দুস্থ পরিবার ও মুসাফিরদের মধ্যে বিতরণ করা হত। খারাজ ও আল-ফে-এর মধ্যে প্রভেদ হচ্ছে এই যে, ভূমিকর হওয়া সত্ত্বেও প্রথমটি অমুসলিম এবং পরেরটি মুসলিম ভূস্বামীগণ প্রদান করতেন।
লেখক: শিক্ষক ও অনুবাদক
আজান ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দশন। এর সঙ্গে জরিয়ে আছে ইসলামের অন্যতম বিধান নামাজ। আজানই মুসলমানদের নামাজের কথা মনে করিয়ে দেন। জানিয়ে দেয় মহান রবের সামনে দাঁড়িয়ে একনিষ্ঠ চিত্তে তাকে স্মরণের সময় হয়েছে। সব কাজ রেখে মসজিদ পানে চলার আহ্বান আজান। প্রতি ওয়াক্ত ও জুমার নামাজে যোগ দেওয়ার জন্য আজান দেওয়া হয়। আজান শোনার পর দোয়া পড়তে হয়।
আজানের দোয়া: আল্লাহুম্মা রব্বা হাজিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াস সালাতিল কায়িমাতি আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলাতা ওয়াদ দারজাতার রফিআতা ওয়াবআসহু মাকামাম মাহমুদানিল্লাজি ওয়াআত্তাহু; ওয়ারজুকনা শাফাআতাহু ইয়াওমাল কিয়ামাতি, ইন্নাকা লা তুখলিফুল মিআদ।
আজানের দোয়ার অর্থ: হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বানের ও স্থায়ী প্রতিষ্ঠিত নামাজের আপনিই প্রভু। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ওয়াসিলা ও সুমহান মর্যাদা দান করুন এবং তাঁকে ওই প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করুন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন আর কিয়ামতের দিন তাঁর সুপারিশ আমাদের নসিব করুন; নিশ্চয়ই আপনি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।
আজানের পর দোয়া পড়ার ফজিলত
মুয়াজ্জিনের আজান শুনে উত্তর দেওয়া এবং আজানের পর দোয়া পড়ার ফজিলত অত্যাধিক। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আজানের পর দোয়া পাঠকারীর জন্য রয়েছে ফজিলতপূর্ণ পুরস্কার।
আজানের পর দোয়া ও মুনাজাত মুলত নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরুদ ও প্রশংসা। নবিজির দরুদ পাঠ ও প্রশংসায় মিলবে পরকালের সুপারিশ। এর চেয়ে বড় পুরস্কার মুমিনের জন্য আর কী হতে পারে! হাদিসের বর্ণনায় এসব ফজিলত, দরুদ ও দোয়া ওঠে এসেছে। তাহলো-
১. হজরত জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনে এ দোয়া পড়বে-
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ্ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াছ ছালাতিল ক্বায়িমাহ, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলাহ, ওয়াবাআছহু মাক্বামাম্ মাহমুদানিল্লাজি ওয়া আত্তাহ।‘
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও আসন্ন ছালাতের তুমি মালিক। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ওয়াসিলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন। এবং তাঁকে সেই প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত কর। যার ওয়াদা তুমি করেছ।’
কেয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ পাওয়ার অধিকারী হবে।’ (বুখারি, মিশকাত)
২. হজরত সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আজান শুনে এ দোয়া পড়বে-
উচ্চারণ : ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। রাদিতু বিল্লাহি রাব্বাও ওয়া বিমুহাম্মাদির রাসুলাও ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনা।’
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতিত কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল। আমি আল্লাহকে প্রভু হিসাবে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসুল হিসেবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে খুশী হয়েছি।’
তার গুনাহসমূহ মাফ করা হবে।’ (মুসলিম ও মিশকাত)
আজান ও ইকামাতের বাক্যগুলো
প্রথমে আল্লাহু আকবার, ‘আল্লাহ মহান’ (চারবার), অতঃপর আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই’ (দুবার), তারপর আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল’ (দুবার), তারপর হাইয়া আলাস সালাহ, ‘নামাজের জন্য আসো’ (দুবার) ও হাইয়া আলাল ফালাহ, ‘কল্যাণের জন্য আসো’ (দুবার) ; পরিশেষে আল্লাহু আকবার, ‘আল্লাহ মহান’ (দুবার) ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই’ (একবার)।
ফজরের নামাজের আজানে পঞ্চম বাক্যের (হাইয়া আলাল ফালাহ) পর বলতে হয়, আস সালাতু খায়রুম মিনান নাওম, ‘ঘুম অপেক্ষা নামাজ উত্তম’ (দুবার) এবং একামতে এই স্থানে বলতে হয় কদ কমাতিস সালাহ, ‘জামাত প্রস্তুত’ (দুবার)।
মুসলিমদের জন্য দোয়া ইউনুস বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো সংকট ও অস্থিতিশীল সময়ে এই দোয়া পড়া সুন্নত। আল্লাহর নবী ইউনুস (আ.) বিপদে পড়ে বারবার এই দোয়া পড়েছিলেন। তখন আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে তাকে সংকট থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এ দোয়ার সঠিক আমলে মানুষ দুনিয়ায় যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে উপকার পায়। হাদিসে দোয়া ইউনুস-এর ফজিলত ও উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে।
দোয়া ইউনুস কি?
আল্লাহর পয়গাম্বর হজরত ইউনুস আলাইহিস সালাম দেশ ত্যাগ করে চলে যাওয়ার সময় নদীতে ঝাঁপ দিলে তিনি মাছের পেটে বন্দি হন। এ অবস্থায় বিপদে পড়ে তিনি মহান আল্লাহর কাছে যে দোয়া পড়েন আর সে দোয়ার বরকতে আল্লাহ তাকে মহাবিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন, তাই দোয়া ইউনুছ। আর তাহলো-
উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।'
অর্থ : 'তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।'
দোয়া ইউনুসের ফজিলত
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি এই দোয়া ইউনুসের সাহায্যে আল্লাহর নিকট কিছু চাইবে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।
অন্য হাদীস অনুযায়ী, এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তার দুঃশ্চিন্তা দূর করে দেবেন সুনানে আত-তিরমিযীঃ ৩৫০৫, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
দোয়া ইউনুস কিভাবে পড়তে হবে
বিপদ আপদ বা দুঃশ্চিন্তার সময় এই দোয়া বেশি বেশি করে পড়তে হয়। আপনার যতবার ইচ্ছা ও যতবার সম্ভব হয়, ততবার পড়বেন। তবে আমাদের দেশে টাকা কিংবা হাদিয়ার বিনিময়ে হুজুর বা মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে ভাড়া করে এক লক্ষ পঁচিশ হাজার বার এই দোয়া পড়ে যে ‘খতমে ইউনুস’ পড়ানো হয়, এমন দোয়া কেনাবেচা করা বিদআত। এরকম খতম করানোর কোনো দলিল নেই। আপনার যতবার সম্ভব হয় ততবার দোয়া ইউনুস পড়বেন, এত এত বার পড়তে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। আপনি নিজের জন্য নিজে যেই দোয়া করবেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে সেটাই বেশি পছন্দনীয়। ভাড়া করে হুজুর দিয়ে দোয়া পড়ানো বা কোরআন খতম পড়ানোর কোনো উপকারিতা বা প্রয়োজন নেই।
বিপদ-মসিবতে দোয়া ইউনুস পড়ার উপকারিতা
দোয়া ইউনুস-এর ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক বেশি। যে কোনো বিপদ-মসিবত, দুশ্চিন্তা-পেরেশানি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে দোয়া ইউনুস পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর আমল। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় ইউনুস (আ.) নদীতে বিশালাকৃতির একটি মাছের পেটে বন্দি হন। এই মহাবিপদে তিনি মহান আল্লাহর কাছে যে দোয়া পড়েন তা-ই দোয়া ইউনুস। এই দোয়ার বরকতে আল্লাহ তাঁকে মসিবত থেকে উদ্ধার করেছিলেন।
আল্লাহ তাআলা এ ফজিলতপূর্ণ দোয়াটি পবিত্র কোরআনে তুলে ধরেন এভাবে—‘আর স্মরণ করুন জুন নুন (মাছ ওয়ালা ইউনুস)-এর কথা। তিনি রাগ করে চলে গিয়েছিলেন। অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধরতে পারব না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে (মাছের পেটে থাকা অবস্থায়) এ কথা বলে আহ্বান করলেন- ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বলিমিন।’ অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তামুক্ত করে দিলাম। আমি এভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।’ (সুরা আম্বিয়া: ৮৭)
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে অবকাশ তথা পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধি করে দিলে অধিক সওয়াব অর্জিত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি অভাবী হয়, তাহলে তাকে সচ্ছল হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও। আর যদি ঋণ মাফ করে দাও, তাহলে সেটা তোমাদের জন্য আরও উত্তম, যদি তোমরা তা জানতে।’-সুরা আল বাকারা: ২৮০
আয়াতে বর্ণিত অবস্থায় ঋণ গ্রহণকারীকে অবকাশ প্রদান করার পরও যদি স্বচ্ছলতা ফিরে না আসে, তবে তা পরিশোধ করার দায়িত্ব ইসলামি রাষ্ট্রের ওপর বর্তাবে। রাষ্ট্রের জাকাত-ফেতরার ফান্ড থেকে এ ঋণ শোধ করার নিয়ম প্রচলিত রয়েছে।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
কুমিল্লার লাকসামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ৭ জনকে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পৌর সদরের ৭নং ওয়ার্ডের গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন— ফারুক, রাশেদ, শাহজাহান ও মনির হোসেন। প্রাথমিকভাবে এদের নাম জানা যায়। তবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ব্যক্তির নাম মনির হোসেন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের অভিযোগ করে বলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে তিনি দাবি করছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মিলাদ ও বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান। সকালে শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়। তবে চারটার দিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর অনুসারী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবিদার জাহাঙ্গীর আলম, লাকসাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শিহাব খান এবং পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফ খানের নেতৃত্বে শতাধিক লোক মাদ্রাসার ফটকে তালা দেন। এ সময় আবদুল মান্নান তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আবদুল মান্নানের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে হামলা হয়। এতে আহত হয়েছেন সাতজন। হামলার সময় রামদা দিয়ে মনির হোসেন নামের এক হকারের হাত ও পা কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। পরে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনৈতিক)। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর অনুষ্ঠান করি। বিকেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে দোয়ার আয়োজন করি। এ সময় জাহাঙ্গীর, শিহাব ও স্বাধীনের নেতৃত্বে শতাধিক লোক আমার এলাকার লোকজনের ওপর হামলা করেন। মনির নামের এক হকার অনুষ্ঠান দেখতে আসেন। তাঁকে কোপানো হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মন্ত্রীর লোকজন এই হামলা করেছেন। আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইব। সামাজিক এই কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক ঘটনা।
এ ঘটনার অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর, শিহাব ও সাইফের মুঠো ফোনে বার বার কল দিও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাহাঙ্গীরকে প্রথমে মান্নান মারধর করে। এরপর সেখানে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের কর্মসূচিতে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এ নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির আওতায় আসতে পারেন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এমন কথাই জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
একইসঙ্গে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসসহ অন্য সকল কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিনের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ছাড়াও নাগরিকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি এখন নির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপ ঘোষণা করতে যাচ্ছি না। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ঘোষণা অনুসারে বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকার এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভীসা নীতি কার্যকর করার পদক্ষেপ আমরা শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ মে ভিসা নীতি ঘোষণার সময় আমরা এটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। আমরা ভিসা নীতির কথা বলেছি তবে কারও নাম উল্লেখ করিনি। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল ও বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত যেকোনও বাংলাদেশির ক্ষেত্রে এই ভিসা নীতি কার্যকর হবে। অন্য যেকোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি আমরা মনে করি তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে আমরা এই নীতি প্রয়োগ করব।
দেশের ক্রিকেট নিয়ে নানা সময়ে আলোচিত-সমালোচিত বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপান। জাতীয় দলের প্রায় প্রতিটি বিষয় নিয়েই মাথা ঘামান তিনি। তার এই তৎপরতাকে কীভাবে দেখেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রশ্ন করা হয়েছিল সাকিবে। তার সোজাসাপটা জবাব, ‘আমার সঙ্গে (সম্পর্ক) কখনো অস্বস্তির হয়নি। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো। আমি ওনাকে বুঝি। উনি আমাকে বোঝেন। আমাদের মধ্যে কথা হয়, এমন হলে ভালো হতো, অমন হলে ভালো হতো। যে আলোচনাটা হয়, ফলদায়ক হয়। আমার কাছে (তাঁর সঙ্গে কাজ করা) সমস্যা হয়নি কখনো।’
নাজমুলের আগে বিসিবি সভাপতি ছিলেন এখনকার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তিনিও জাতীয় দলের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই জড়িত ছিলেন বলে জানান সাকিব। তবে নাজমুল অনেক বেশি জড়িত বলে মনে করেন সাকিব, 'কামাল ভাইও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। হয়তো তখন এত মিডিয়া ছিল না, উনি হয়তো মিডিয়াতে অত কথা বলেন নাই। যে কারণে জানা যেত না। কিন্তু দলে কী হচ্ছে, এসবে উনিও জড়িত ছিলেন। আর পাপন ভাই যেটাকে বলে ইন হ্যান্ডস জড়িত। অনেক বেশি যুক্ত। এমন বোর্ড প্রেসিডেন্ট পাওয়াও কঠিন।’
অনেক বেশি জড়িত থাকা বোর্ডপ্রধান ভালো কি মন্দ, প্রশ্ন করা হলে সাকিবের চটজলদি জবাব, ‘দুটোই। নিতে পারলে ভালো। যারা নিতে পারে না, তাদের জন্য অনেক ডিফিকাল্ট।’
নাজমুল হাসানের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে তার মধ্যে যদি একটা ভালো দিক খুঁজতে বলেন প্রশ্নকর্তা। সাকিব বলেন ‘বিশেষভাবে জাতীয় দলের জন্য সবকিছু করতে রাজি আছেন।'আর মন্দ দিক কোনটি? হাসতে হাসতে সাকিবের জবাব, ‘মে বি ইন্টারভিউ (হয়তো সাক্ষাৎকার)’।
চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিয়ের আট মাসের মাথায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। নিহত গৃহবধূর নাম উন্মে সুলতানা সুইটি (২২)। সে উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মুছা চৌধুরীর বাড়ির মমতাজ আহম্মেদের ছেলে রিয়াজ আহম্মদ সাকিবের স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে শশুরবাড়ির নিজ বসত ঘরে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত উন্মে সালমা সুইটি একই উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের শেখ মোহাম্মদ পাড়ার আবুল কালামের ছোট মেয়ে। সে পটিয়া কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তবে কেন সুইটি আত্মহত্যা করেছেন সে ব্যাপারে উভয় পরিবারের কেউ কিছু বলতে পারেননি।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উম্মে সুলতানা সুইটির সাথে গত ৮ মাস পূর্বে মো. রিয়াজ আহম্মদ প্রকাশ শাকিবের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে তার শয়ন কক্ষের আড়ার সাথে ওড়না পেছিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি । এ সময় পরিবারের সদস্যরা দেখতে পেয়ে পটিয়া থানা পুলিশকে খবর দিলে হলে তারা মরদেহটি উদ্ধার করে পটিয়া থানায় নিয়ে যায়। সেখানে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের বড়ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার বোনের মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের পরিবারের কোন সন্দেহ নাই। মৃত্যুর বিষয়ে পরিবারের কোন সদস্য ভবিষ্যতে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা মামলা মোকদ্দমা করব না।
পটিয়া থানার ওসি (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে খবর পেয়ে আমরা নিহত গৃহবধূর মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় এনে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠাই। নিহতের পরিবারের কারো কোন অভিযোগ না থাকায় রাতেই থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।