ছায়ানট, রমনা বটমূল ও বাঙালির সাংস্কৃতিক আন্দোলন
পিটার মাহ্মুদ | ২৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
১৯৬১ সালের কথা। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। তখন ঢাকাতেও বেশ কয়েকজন উদ্যোগী হলেন রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের। বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মুর্শেদ, ডক্টর গোবিন্দচন্দ্র দেব, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে ঢাকার বেশ কিছু সংস্কৃতিকর্মীও এগিয়ে এলেন শতবর্ষ উদ্যাপনের জন্য। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনে কড়াকড়ি আরোপ করে। এতে করে ফল হয় উল্টো। বিধিনিষেধ পেয়ে সংস্কৃতিকর্মীরা আরও বিপুল উৎসাহ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে শতবর্ষ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে। সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজন। এই আয়োজন তাদের আরও উৎসাহী ও সাহসী করে তোলে। এর পরে ঢাকার কাছেই গাজীপুরের জয়দেবপুরে একটি পিকনিকের অনুষ্ঠানে মিলিত হন সুফিয়া কামাল, মোখলেসুর রহমান (সিধু ভাই), সায়েরা আহমদ, শামসুন্নাহার রহমান (রোজ বু), আহমেদুর রহমান, ওয়াহিদুল হক, সাইদুল হাসান, ফরিদা হাসান, সন্জীদা খাতুন, মীজানুর রহমান (ছানা), সাইফউদ্দীন আহমেদ মানিকসহ বেশ কয়েকজন। সেখানে তারা এই সাংস্কৃতিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি সমিতি গঠন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আর এভাবেই জন্ম হয় ছায়ানটের।
শুরুতে কেবল সংগীতকে অবলম্বন কার্যক্রম পরিচালনা করে ছায়ানট। এরপরে সংগীত শিক্ষাদান কার্যক্রমের সুবাদে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কীর্তিমান গুণী শিল্পীরা সমবেত হন ছায়ানটে। ছায়ানটের উদ্যোগে শৈল্পিক ও মননশীল মেধার সম্মিলন ও অনুশীলন জাতিকে জোগায় এক নতুন সাংস্কৃতিক অবলম্বন। চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী, নাট্যশিল্পী, চলচ্চিত্র সংসদ-কর্মী, বিজ্ঞানী, সমাজব্রতী ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রের মানুষের সৃজনচর্চার মিলনমঞ্চ হয়ে ওঠে ছায়ানট।
সংগীত শিক্ষার কেন্দ্র হিসেহে ছায়ানটের সুনাম আজ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লেও এ প্রতিষ্ঠানের উত্থান ও বিকাশ ঘটেছে একটি দীর্ঘ সাংস্কৃডতক অঠন্দোলনের মধ্যদিয়ে। ছায়ানট বললেই পয়লা বৈশাখের ভোরে রমনার বটমূলের গানের আয়োজনের কথা সবচেয়ে বেশি মনে হয়। এ উদযাপনের ইতিহাসও দীর্ঘ। স্বাধীন বাংলাদেশে ছায়ানট একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তৈরি করেছে।
ছায়ানটের প্রথম অনুষ্ঠান
ছায়ানটের প্রথম অনুষ্ঠানের স্মৃতিচারণ করেন ড. সন্জীদা খাতুন এভাবে, ছায়ানট কাজ শুরু করেছিল ১৯৬২ সালে পুরনো গানের অনুষ্ঠান দিয়ে । তার পরে প্রথম শ্রোতার আসর সাজানো হয় সিধুভাইদের (মোখলেসুর রহমান) বাসায়। ফিরোজা বেগমের নানা ধরনের গান হয়েছিল সেদিন। দ্বিতীয়বার হলো ফাহমিদা খাতুনের রবীন্দ্রসংগীত। তৃতীয় আসরে শুদ্ধ সংগীত। তখন শ্রোতাদের জায়গা হতে চায় না ঘরে ।
নববর্ষ বরণ
এত এত কাজের মধ্যে কোনটিকে ছায়ানটের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে মনে করেন? সন্জীদা খাতুনের কাছেই পেয়ে যাই জবাবÑ ছায়ানটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছিল সুপ্রসর অঙ্গনে নববর্ষ বরণ করে বাঙালির সম্মিলনের সুযোগ সৃষ্টি করা । ঋতু উৎসবগুলো থেকে শুরু করে ক্রমে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সব বাঙালির উৎসব প্রতিষ্ঠা পেল এর মধ্য দিয়ে। বিশেষ করে বর্ষবরণের বটমূল যেন হলো বাঙালির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জায়গা। দিনে দিনে আপন অধিকার অর্জনের শপথ অন্তরে অন্তরে বলিষ্ঠ হতে লাগল। সকালের আলোয় আমাদের প্রার্থনা হলো ‘আলোকের এই ঝরনাধারায় ধুইয়ে দাও’। মন্ত্র হলো ‘সবারে বাস রে ভালো, নইলে মনের কালো ঘুচবে না রে’। প্রতিজ্ঞা হয়ে দাঁড়াল ‘অনুকরণ খোলস ভেদি কায়মনে বাঙ্গালি হ.. বিশ্বমানব হবি যদি শাশ্বত বাঙ্গালি হ, সম্পূর্ণ বাঙ্গালি হ’। সাধনার পথ আসলে অনন্ত। তাই বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন সফল হলেও ছায়ানটের সাধনা শেষ হয়নি। জীবনকে তো প্রতিনিয়ত ধুয়ে নিতে হয়, মলিনতার গ্লানি ক্ষালন করতে হয়। কিন্তু এ সাধনা কি কেবল সংগীতচর্চা দিয়েই সফল হতে পারে? পারে না বলেই স্বাধীন বাংলাদেশের নববর্ষ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা ঘটে। সেই আঘাতেই আমাদের চেতনা হয়, আমরা সর্বাত্মক সাধনার কথা ভাবিনি এতদিন ।
সংগীত বিদ্যায়তন
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছায়ানট ঘরোয়া আর উন্মুক্ত অঙ্গনে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। ষাটের দশকে দেশে সংগীতশিল্পীর ঘাটতি ছিল। ঘাটতি পূরণের ভাবনায় ১৯৬৩ সালে সংগীত বিদ্যায়তন করার পরিকল্পনা নেয় ছায়ানট। লক্ষ্য ছিল প্রথাসিদ্ধ সংগীত সাধনায় সেখান থেকেই জন্ম নেবে নতুন শিল্পী। বিদ্যায়তনের খরচ বহনের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে কার্যকরী সংসদের সভ্যদের সবার নামে চাঁদা ধার্য হয়। আর ছিল ছাত্র বেতনের ভরসা। ১৩৭০ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ইংলিশ প্রিপারেটরি স্কুলে (বর্তমান উদয়ন বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন) সংগীত বিদ্যায়তনের উদ্বোধন হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগীতসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁর ভাই ওস্তাদ আয়েত আলী খান। অনুষ্ঠানের দ্বারোদ্ঘাটন করেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। অধ্যক্ষ হলেন ঢাকা বেতারের গুণী যন্ত্রশিল্পী মতি মিঞা (মতিয়র রহমান খান)। অবশ্য তার আগেই, নজরুলগীতিতে প্রখ্যাত শিল্পী সোহরাব হোসেন, তবলায় বজলুল করিম এবং রবীন্দ্রসংগীতে ফরিদা খান (বারি মালিক) ও সন্জীদা খাতুনকে নিয়ে ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের ক্লাস শুরু হয়েছিল বাংলা একাডেমির তৃতীয় তলায়। শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত শিক্ষণ নিশ্চিত করতে অদ্যাবধি প্রয়োজনমতো নানা প্রক্রিয়া-পদ্ধতির অনুসন্ধান করে চলেছে ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তন। দিন দিন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মী বাড়ছে। আপন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটানোর লক্ষ্য ও সাধনায় এগিয়ে চলেছে সংগীত বিদ্যায়তন। নিরন্তর কার্যক্রম ও শিক্ষণপদ্ধতি প্রভৃতির পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে, যুক্ত হচ্ছে নতুন কার্যক্রম।
নালন্দা
শিশুদের সামূহিক বিকাশকেন্দ্র নালন্দা। ছায়ানটের সহ-প্রতিষ্ঠান এর লক্ষ্য শিশুর গ্রহণ ও ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তার পরিণতিতে শিশুচিত্তে উদ্ভাবন-মনস্কতা ও বিচার-বোধ উসকে দেওয়া। ২০০৩ সালে তিনটি শ্রেণি নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতি বছর একটি করে শ্রেণি বাড়িয়ে প্রাক-প্রাথমিকের তিনটি শ্রেণি অঙ্কুর, কিশলয়, মঞ্জুরীসহ বর্তমানে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি থেকে প্রতিষ্ঠিত, আধুনিক এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগুলোর ভালো দিকগুলো পর্যালোচনা করে তা বাঙালি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ দিয়ে জারিত করে পাঠক্রম ও শিক্ষা পদ্ধতি নির্ধারণ করার চেষ্টা হয়েছে নালন্দায়।
শিকড়
কার্যক্রম : প্রতি শনিবার সকাল ৯: ৩০ থেকে বেলা ১২: ৩০
অংশগ্রহণকারীদের বয়সসীমা : ৬ থেকে ১৩ বছর
শিকড় কার্যক্রমের বিষয়সমূহের মধ্যে রয়েছে ছড়া-ছন্দ-আবৃত্তি, আঁকা-গড়া, গীত-নৃত্য-খেলা, ব্রতচারী, গল্প বলা-অভিনয়, লিখন-পঠন, ভ্রমণ এবং দেশীয় খাবারের সঙ্গে জানাশোনা ও স্বাদ গ্রহণ।
পাঠ ও চর্চায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দেশ-ঐতিহ্য, প্রকৃতি-পরিবেশ, উৎসব-পার্বণ, আলোকচিত্র-চলচ্চিত্র, মনীষী-কথা, বাঙালির খাদ্যরুচি ইত্যাদি।
অনুষ্ঠান
ছায়ানটের প্রথম অনুষ্ঠান পুরনো গানের আসর। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনের ওই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন আবদুল আহাদ।
পাকিস্তানি শাসকরা তখন পর্যন্ত কোনোরকম সহ্য করছে রবীন্দ্রনাথের গান। ভাবতে পারেনি বিদ্যাপতির গান বা দ্বিজেন্দ্রলাল-অতুলপ্রাসাদ-রজনীকান্ত প্রমুখ গীতিকারের গান এদেশের ঐতিহ্য বলে স্বীকৃত হতে পারে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন এবং জাতীয় পর্যায়ের নানা আয়োজন-নজরুল জয়ন্তী ও প্রয়াণ দিবস, রবীন্দ্রজয়ন্তী ও প্রয়াণ দিবস, নৃত্য-উৎসব, শুদ্ধ সংগীত উৎসব, ঋতু উৎসব, জাতীয় দিবস ও শ্রোতার আসরসহ বর্তমানে বছরে চল্লিশটিরও বেশি অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে ছায়ানট।
ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন
রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডিতে ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০০২ সালের ১৫ মে। নানা জটিলতায় নির্মাণ স্থগিত ছিল ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৫ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই, সংস্কৃতি-ভবনে নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে। বাকি কাজগুলো ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা হয়েছে।
২০০৭ সালে সম্পূর্ণ হয় ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের নির্মাণ।
সংস্কৃতি-ভবন নির্মিত হয়েছে ছায়ানটের সঞ্চিত অর্থ ও সমমানসিকতার মানুষের দান দিয়ে। ভবন নির্মাণের ব্যয় ছয় কোটি টাকার ওপরে। এক বিঘা জমির ওপর ছয় তলা ভবনের মেঝের পরিমাণ ৩৯ হাজার বর্গফুট। গাড়ি রাখার ব্যবস্থা বেইসমেন্টে। মোট ৪১টি কক্ষের মধ্যে শ্রেণিকক্ষ ২২টি। বাকি কক্ষগুলো কার্যালয়, গবেষণাগার, সংগ্রহশালা এবং রক্ষণাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভবনে আছে আলাদা মিলনায়তন, মিলনকেন্দ্র, বক্তৃতা কক্ষ, পাঠাগার, শ্রবণ-দর্শন কক্ষ ও শব্দধারণকেন্দ্র।
ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন নির্মিত হয়েছে সর্বসাধারণের সহৃদয় সহযোগিতা ও ছায়ানটের নিজস্ব অর্থায়নে। সকল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, শিল্পীসমাজ এবং ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মীদের সর্বাত্মক চেষ্টায় নির্মিত হয়েছে ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন।
ভবন নির্মাণে বড় অঙ্কের অর্থ সহায়তার জন্য পৃষ্ঠপোষক ন্যূনতম ১০ লক্ষ টাকা, স্থাপনা সুহৃদ ন্যূনতম ৫ লক্ষ টাকা, স্থাপনা সহযোগী ন্যূনতম ১ লক্ষ টাকা। পৃষ্ঠপোষক, স্থাপনা সুহৃদ ও স্থাপনা সহযোগীদের নাম ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের একতলার সম্মিলন স্থানে স্থায়ীভাবে লিখিত রয়েছে।
সাংগঠনিক কাঠামো
ছায়ানটের সমুদয় স্থাবর সম্পত্তির স্বত্বাধিকারী ছায়ানট ট্রাস্ট। ছায়ানটের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তিনটি সংসদ :
১. সাধারণ সংসদ : সাধারণ সংসদ ছায়ানটের সাধারণ সভ্যদের সমবায়ে গঠিত। সাধারণ সংসদ ছায়ানটের সর্বপ্রধান সংসদরূপে কাজ করে। বছরে একবার সাধারণ সংসদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ সংসদ তিন বছরের জন্য একটি কার্যকরী সংসদ গঠন করে যা সংগঠনের কার্যাবলি পরিচালনা করে।
২. কার্যকরী সংসদ : কার্যকরী সংসদ ছায়ানটের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত এবং তা বাস্তবায়নের জন্য সর্বদা সচেষ্ট। কার্যকরী সংসদ তার কর্মকাণ্ডের জন্য সাধারণ সংসদের কাছে দায়বদ্ধ। কার্যকরী সংসদের সদস্য সংখ্যা ১৫। তবে কার্যকরী সংসদ ছায়ানটের সাধারণ সংসদ থেকে সর্ব্বাধিক দুজন সভ্যকে সহযোজন করতে পারবে।
৩. উপ-সংসদ : ছায়ানটের কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে প্রয়োজনবোধে কার্যকরী সংসদ যে কোনো সময়ে যে কোনো বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য উপ-সংসদ গঠন করতে পারবে। প্রতিটি উপ-সংসদ তার কাজের জন্য কার্যকরী সংসদের কাছে দায়বদ্ধ।
ট্রাস্টি
ছায়ানট পরিচালনা হয় এর ট্রাস্টি বোর্ড দ্বারা। এই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা হলেন-
আ. ফ. ম. সাইফুদ্ দৌলা, আবুল হাসনাত, খায়রুল আনাম (শাকিল), নুরুন্নাহার আবেদীন, সন্জীদা খাতুন, সারওয়ার আলী, সেলিনা মালেক চৌধুরী।
কার্যকরী সংসদ
সভাপতি : সন্জীদা খাতুন
নির্বাহী-সভাপতি : ডা. সারওয়ার আলী
সহ-সভাপতি : আবুল হাসনাত, খায়রুল আনাম (শাকিল)
সাধারণ সম্পাদক : লাইসা আহমদ লিসা
এক নজরে ছায়ানট
প্রতিষ্ঠা : ১৯৬১
প্রথম সভাপতি : সুফিয়া কামাল
প্রথম সাধারণ সম্পাদক : ফরিদা হাসান
বর্তমান ঠিকানা : বাড়ি ৭২, সড়ক ১৫ /এ, ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা ১২০৯।
সূত্র : ছায়ানট
সন্জীদা খাতুনের সঙ্গে আলাপচারিতা
ইন্টারনেট
শেয়ার করুন
পিটার মাহ্মুদ | ২৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০

১৯৬১ সালের কথা। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। তখন ঢাকাতেও বেশ কয়েকজন উদ্যোগী হলেন রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের। বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মুর্শেদ, ডক্টর গোবিন্দচন্দ্র দেব, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে ঢাকার বেশ কিছু সংস্কৃতিকর্মীও এগিয়ে এলেন শতবর্ষ উদ্যাপনের জন্য। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনে কড়াকড়ি আরোপ করে। এতে করে ফল হয় উল্টো। বিধিনিষেধ পেয়ে সংস্কৃতিকর্মীরা আরও বিপুল উৎসাহ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে শতবর্ষ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে। সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজন। এই আয়োজন তাদের আরও উৎসাহী ও সাহসী করে তোলে। এর পরে ঢাকার কাছেই গাজীপুরের জয়দেবপুরে একটি পিকনিকের অনুষ্ঠানে মিলিত হন সুফিয়া কামাল, মোখলেসুর রহমান (সিধু ভাই), সায়েরা আহমদ, শামসুন্নাহার রহমান (রোজ বু), আহমেদুর রহমান, ওয়াহিদুল হক, সাইদুল হাসান, ফরিদা হাসান, সন্জীদা খাতুন, মীজানুর রহমান (ছানা), সাইফউদ্দীন আহমেদ মানিকসহ বেশ কয়েকজন। সেখানে তারা এই সাংস্কৃতিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি সমিতি গঠন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আর এভাবেই জন্ম হয় ছায়ানটের।
শুরুতে কেবল সংগীতকে অবলম্বন কার্যক্রম পরিচালনা করে ছায়ানট। এরপরে সংগীত শিক্ষাদান কার্যক্রমের সুবাদে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কীর্তিমান গুণী শিল্পীরা সমবেত হন ছায়ানটে। ছায়ানটের উদ্যোগে শৈল্পিক ও মননশীল মেধার সম্মিলন ও অনুশীলন জাতিকে জোগায় এক নতুন সাংস্কৃতিক অবলম্বন। চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী, নাট্যশিল্পী, চলচ্চিত্র সংসদ-কর্মী, বিজ্ঞানী, সমাজব্রতী ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রের মানুষের সৃজনচর্চার মিলনমঞ্চ হয়ে ওঠে ছায়ানট।
সংগীত শিক্ষার কেন্দ্র হিসেহে ছায়ানটের সুনাম আজ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লেও এ প্রতিষ্ঠানের উত্থান ও বিকাশ ঘটেছে একটি দীর্ঘ সাংস্কৃডতক অঠন্দোলনের মধ্যদিয়ে। ছায়ানট বললেই পয়লা বৈশাখের ভোরে রমনার বটমূলের গানের আয়োজনের কথা সবচেয়ে বেশি মনে হয়। এ উদযাপনের ইতিহাসও দীর্ঘ। স্বাধীন বাংলাদেশে ছায়ানট একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তৈরি করেছে।
ছায়ানটের প্রথম অনুষ্ঠান
ছায়ানটের প্রথম অনুষ্ঠানের স্মৃতিচারণ করেন ড. সন্জীদা খাতুন এভাবে, ছায়ানট কাজ শুরু করেছিল ১৯৬২ সালে পুরনো গানের অনুষ্ঠান দিয়ে । তার পরে প্রথম শ্রোতার আসর সাজানো হয় সিধুভাইদের (মোখলেসুর রহমান) বাসায়। ফিরোজা বেগমের নানা ধরনের গান হয়েছিল সেদিন। দ্বিতীয়বার হলো ফাহমিদা খাতুনের রবীন্দ্রসংগীত। তৃতীয় আসরে শুদ্ধ সংগীত। তখন শ্রোতাদের জায়গা হতে চায় না ঘরে ।
নববর্ষ বরণ
এত এত কাজের মধ্যে কোনটিকে ছায়ানটের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে মনে করেন? সন্জীদা খাতুনের কাছেই পেয়ে যাই জবাবÑ ছায়ানটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছিল সুপ্রসর অঙ্গনে নববর্ষ বরণ করে বাঙালির সম্মিলনের সুযোগ সৃষ্টি করা । ঋতু উৎসবগুলো থেকে শুরু করে ক্রমে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সব বাঙালির উৎসব প্রতিষ্ঠা পেল এর মধ্য দিয়ে। বিশেষ করে বর্ষবরণের বটমূল যেন হলো বাঙালির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জায়গা। দিনে দিনে আপন অধিকার অর্জনের শপথ অন্তরে অন্তরে বলিষ্ঠ হতে লাগল। সকালের আলোয় আমাদের প্রার্থনা হলো ‘আলোকের এই ঝরনাধারায় ধুইয়ে দাও’। মন্ত্র হলো ‘সবারে বাস রে ভালো, নইলে মনের কালো ঘুচবে না রে’। প্রতিজ্ঞা হয়ে দাঁড়াল ‘অনুকরণ খোলস ভেদি কায়মনে বাঙ্গালি হ.. বিশ্বমানব হবি যদি শাশ্বত বাঙ্গালি হ, সম্পূর্ণ বাঙ্গালি হ’। সাধনার পথ আসলে অনন্ত। তাই বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন সফল হলেও ছায়ানটের সাধনা শেষ হয়নি। জীবনকে তো প্রতিনিয়ত ধুয়ে নিতে হয়, মলিনতার গ্লানি ক্ষালন করতে হয়। কিন্তু এ সাধনা কি কেবল সংগীতচর্চা দিয়েই সফল হতে পারে? পারে না বলেই স্বাধীন বাংলাদেশের নববর্ষ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা ঘটে। সেই আঘাতেই আমাদের চেতনা হয়, আমরা সর্বাত্মক সাধনার কথা ভাবিনি এতদিন ।
সংগীত বিদ্যায়তন
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছায়ানট ঘরোয়া আর উন্মুক্ত অঙ্গনে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। ষাটের দশকে দেশে সংগীতশিল্পীর ঘাটতি ছিল। ঘাটতি পূরণের ভাবনায় ১৯৬৩ সালে সংগীত বিদ্যায়তন করার পরিকল্পনা নেয় ছায়ানট। লক্ষ্য ছিল প্রথাসিদ্ধ সংগীত সাধনায় সেখান থেকেই জন্ম নেবে নতুন শিল্পী। বিদ্যায়তনের খরচ বহনের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে কার্যকরী সংসদের সভ্যদের সবার নামে চাঁদা ধার্য হয়। আর ছিল ছাত্র বেতনের ভরসা। ১৩৭০ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ইংলিশ প্রিপারেটরি স্কুলে (বর্তমান উদয়ন বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন) সংগীত বিদ্যায়তনের উদ্বোধন হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগীতসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁর ভাই ওস্তাদ আয়েত আলী খান। অনুষ্ঠানের দ্বারোদ্ঘাটন করেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। অধ্যক্ষ হলেন ঢাকা বেতারের গুণী যন্ত্রশিল্পী মতি মিঞা (মতিয়র রহমান খান)। অবশ্য তার আগেই, নজরুলগীতিতে প্রখ্যাত শিল্পী সোহরাব হোসেন, তবলায় বজলুল করিম এবং রবীন্দ্রসংগীতে ফরিদা খান (বারি মালিক) ও সন্জীদা খাতুনকে নিয়ে ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের ক্লাস শুরু হয়েছিল বাংলা একাডেমির তৃতীয় তলায়। শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত শিক্ষণ নিশ্চিত করতে অদ্যাবধি প্রয়োজনমতো নানা প্রক্রিয়া-পদ্ধতির অনুসন্ধান করে চলেছে ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তন। দিন দিন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মী বাড়ছে। আপন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটানোর লক্ষ্য ও সাধনায় এগিয়ে চলেছে সংগীত বিদ্যায়তন। নিরন্তর কার্যক্রম ও শিক্ষণপদ্ধতি প্রভৃতির পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে, যুক্ত হচ্ছে নতুন কার্যক্রম।
নালন্দা
শিশুদের সামূহিক বিকাশকেন্দ্র নালন্দা। ছায়ানটের সহ-প্রতিষ্ঠান এর লক্ষ্য শিশুর গ্রহণ ও ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তার পরিণতিতে শিশুচিত্তে উদ্ভাবন-মনস্কতা ও বিচার-বোধ উসকে দেওয়া। ২০০৩ সালে তিনটি শ্রেণি নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতি বছর একটি করে শ্রেণি বাড়িয়ে প্রাক-প্রাথমিকের তিনটি শ্রেণি অঙ্কুর, কিশলয়, মঞ্জুরীসহ বর্তমানে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি থেকে প্রতিষ্ঠিত, আধুনিক এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগুলোর ভালো দিকগুলো পর্যালোচনা করে তা বাঙালি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ দিয়ে জারিত করে পাঠক্রম ও শিক্ষা পদ্ধতি নির্ধারণ করার চেষ্টা হয়েছে নালন্দায়।
শিকড়
কার্যক্রম : প্রতি শনিবার সকাল ৯: ৩০ থেকে বেলা ১২: ৩০
অংশগ্রহণকারীদের বয়সসীমা : ৬ থেকে ১৩ বছর
শিকড় কার্যক্রমের বিষয়সমূহের মধ্যে রয়েছে ছড়া-ছন্দ-আবৃত্তি, আঁকা-গড়া, গীত-নৃত্য-খেলা, ব্রতচারী, গল্প বলা-অভিনয়, লিখন-পঠন, ভ্রমণ এবং দেশীয় খাবারের সঙ্গে জানাশোনা ও স্বাদ গ্রহণ।
পাঠ ও চর্চায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দেশ-ঐতিহ্য, প্রকৃতি-পরিবেশ, উৎসব-পার্বণ, আলোকচিত্র-চলচ্চিত্র, মনীষী-কথা, বাঙালির খাদ্যরুচি ইত্যাদি।
অনুষ্ঠান
ছায়ানটের প্রথম অনুষ্ঠান পুরনো গানের আসর। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনের ওই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন আবদুল আহাদ।
পাকিস্তানি শাসকরা তখন পর্যন্ত কোনোরকম সহ্য করছে রবীন্দ্রনাথের গান। ভাবতে পারেনি বিদ্যাপতির গান বা দ্বিজেন্দ্রলাল-অতুলপ্রাসাদ-রজনীকান্ত প্রমুখ গীতিকারের গান এদেশের ঐতিহ্য বলে স্বীকৃত হতে পারে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন এবং জাতীয় পর্যায়ের নানা আয়োজন-নজরুল জয়ন্তী ও প্রয়াণ দিবস, রবীন্দ্রজয়ন্তী ও প্রয়াণ দিবস, নৃত্য-উৎসব, শুদ্ধ সংগীত উৎসব, ঋতু উৎসব, জাতীয় দিবস ও শ্রোতার আসরসহ বর্তমানে বছরে চল্লিশটিরও বেশি অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে ছায়ানট।
ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন
রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডিতে ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০০২ সালের ১৫ মে। নানা জটিলতায় নির্মাণ স্থগিত ছিল ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৫ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই, সংস্কৃতি-ভবনে নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে। বাকি কাজগুলো ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা হয়েছে।
২০০৭ সালে সম্পূর্ণ হয় ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের নির্মাণ।
সংস্কৃতি-ভবন নির্মিত হয়েছে ছায়ানটের সঞ্চিত অর্থ ও সমমানসিকতার মানুষের দান দিয়ে। ভবন নির্মাণের ব্যয় ছয় কোটি টাকার ওপরে। এক বিঘা জমির ওপর ছয় তলা ভবনের মেঝের পরিমাণ ৩৯ হাজার বর্গফুট। গাড়ি রাখার ব্যবস্থা বেইসমেন্টে। মোট ৪১টি কক্ষের মধ্যে শ্রেণিকক্ষ ২২টি। বাকি কক্ষগুলো কার্যালয়, গবেষণাগার, সংগ্রহশালা এবং রক্ষণাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভবনে আছে আলাদা মিলনায়তন, মিলনকেন্দ্র, বক্তৃতা কক্ষ, পাঠাগার, শ্রবণ-দর্শন কক্ষ ও শব্দধারণকেন্দ্র।
ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন নির্মিত হয়েছে সর্বসাধারণের সহৃদয় সহযোগিতা ও ছায়ানটের নিজস্ব অর্থায়নে। সকল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, শিল্পীসমাজ এবং ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মীদের সর্বাত্মক চেষ্টায় নির্মিত হয়েছে ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন।
ভবন নির্মাণে বড় অঙ্কের অর্থ সহায়তার জন্য পৃষ্ঠপোষক ন্যূনতম ১০ লক্ষ টাকা, স্থাপনা সুহৃদ ন্যূনতম ৫ লক্ষ টাকা, স্থাপনা সহযোগী ন্যূনতম ১ লক্ষ টাকা। পৃষ্ঠপোষক, স্থাপনা সুহৃদ ও স্থাপনা সহযোগীদের নাম ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের একতলার সম্মিলন স্থানে স্থায়ীভাবে লিখিত রয়েছে।
সাংগঠনিক কাঠামো
ছায়ানটের সমুদয় স্থাবর সম্পত্তির স্বত্বাধিকারী ছায়ানট ট্রাস্ট। ছায়ানটের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তিনটি সংসদ :
১. সাধারণ সংসদ : সাধারণ সংসদ ছায়ানটের সাধারণ সভ্যদের সমবায়ে গঠিত। সাধারণ সংসদ ছায়ানটের সর্বপ্রধান সংসদরূপে কাজ করে। বছরে একবার সাধারণ সংসদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ সংসদ তিন বছরের জন্য একটি কার্যকরী সংসদ গঠন করে যা সংগঠনের কার্যাবলি পরিচালনা করে।
২. কার্যকরী সংসদ : কার্যকরী সংসদ ছায়ানটের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত এবং তা বাস্তবায়নের জন্য সর্বদা সচেষ্ট। কার্যকরী সংসদ তার কর্মকাণ্ডের জন্য সাধারণ সংসদের কাছে দায়বদ্ধ। কার্যকরী সংসদের সদস্য সংখ্যা ১৫। তবে কার্যকরী সংসদ ছায়ানটের সাধারণ সংসদ থেকে সর্ব্বাধিক দুজন সভ্যকে সহযোজন করতে পারবে।
৩. উপ-সংসদ : ছায়ানটের কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে প্রয়োজনবোধে কার্যকরী সংসদ যে কোনো সময়ে যে কোনো বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য উপ-সংসদ গঠন করতে পারবে। প্রতিটি উপ-সংসদ তার কাজের জন্য কার্যকরী সংসদের কাছে দায়বদ্ধ।
ট্রাস্টি
ছায়ানট পরিচালনা হয় এর ট্রাস্টি বোর্ড দ্বারা। এই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা হলেন-
আ. ফ. ম. সাইফুদ্ দৌলা, আবুল হাসনাত, খায়রুল আনাম (শাকিল), নুরুন্নাহার আবেদীন, সন্জীদা খাতুন, সারওয়ার আলী, সেলিনা মালেক চৌধুরী।
কার্যকরী সংসদ
সভাপতি : সন্জীদা খাতুন
নির্বাহী-সভাপতি : ডা. সারওয়ার আলী
সহ-সভাপতি : আবুল হাসনাত, খায়রুল আনাম (শাকিল)
সাধারণ সম্পাদক : লাইসা আহমদ লিসা
এক নজরে ছায়ানট
প্রতিষ্ঠা : ১৯৬১
প্রথম সভাপতি : সুফিয়া কামাল
প্রথম সাধারণ সম্পাদক : ফরিদা হাসান
বর্তমান ঠিকানা : বাড়ি ৭২, সড়ক ১৫ /এ, ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা ১২০৯।
সূত্র : ছায়ানট
সন্জীদা খাতুনের সঙ্গে আলাপচারিতা
ইন্টারনেট