শিশুর জগৎ শিশু একাডেমি
মুহিত মুসতবা আলম | ২৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
মুহিত মুসতবা আলম শিশুদের জন্য বিশেষায়িত কোনো প্রতিষ্ঠানের কথা ভাবলেই প্রথমেই মাথায় আসে বাংলাদেশ শিশু একডেমির নাম। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিশুদের সুস্থ মানসিক বিকাশ, প্রতিভা অন্বেষণ, দেশীয় সংস্কৃতির বিস্তার এবং পৃষ্ঠপোষকতার কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। শিশু একাডেমি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, যার উদ্দেশ্য শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃ তিক এবং সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে সহায়তা করা। ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে সারা দেশে একাডেমির ৭০টির বেশি শাখা রয়েছে। ঢাকার পুরাতন হাইকোর্ট এলাকায় এর সদর দপ্তর অবস্থিত। শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পুরাতন হাইকোর্ট এলাকায় শিশু একাডেমির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। শুরুতে একাডেমির কার্যক্রম রাজধানীকেন্দ্রিক হলেও পরবর্তীকালে এর শাখা সারা দেশে বিস্তৃৃত হয়। তৃণমূল পর্যায়ে একাডেমির কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮০- ৮১ সালে তৎকালীন বৃহত্তর ২০টি জেলায় শিশু একাডেমির শাখা স্থাপন করা হয়। ১৯৯৩-৯৫ সালে বাকি ৫৫টি জেলায় এবং ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে পরীক্ষামূলকভাবে ৬টি বিভাগের ৬ উপজেলায় শাখা স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির কার্যক্রম পরিচালিত হয় ১৩ সদস্যবিশিষ্ট বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট-এর মাধ্যমে। পরিচালক এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রধান। একাডেমির বিভিন্ন কর্মকা- পরিচালনার জন্য মোট ছয়টি বিভাগ রয়েছে। একাডেমির মূল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে। সারা দেশের জেলা ও উপজেলা শাখাগুলো এ কর্মসূচি অনুসরণ করে। জেলা শাখাগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি পরিচালনা কমিটি রয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় শিশু একাডেমির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে স্থানীয় কমিটি রয়েছে।
একাডেমির কার্যক্রমের পরিধি নির্ধারণের জন্য ১৯৮৩ সালে একটি কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির সুপারিশ অনুসারে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মূল দায়িত্ব হলো : ১. শিশুদের উপযোগী বিভিন্ন বই, মাসিক পত্রিকা কোষগ্রন্থ ইত্যাদি প্রকাশনা, ২. শিশুদের পাঠের সুবিধা সৃষ্টি এবং পাঠাভ্যাস গড়তে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মসূচি যেমন কুইজ প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ইত্যাদি আয়োজন, ৩. প্রতি বছর শিশুদের জন্য জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা, মৌসুমি প্রতিযোগিতা এবং আনন্দমেলার আয়োজন, ৪. বাংলাদেশের শিশুদের আন্তর্জাতিক চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি, ৫. শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ, ৬. বিভিন্ন দেশে শিশু সাংস্কৃতিক দল প্রেরণ, ৭. বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক তথ্যসমৃদ্ধ শিশু জাদুঘর পরিচালনা, ৮. জাতীয়, আন্তর্জাতিক এবং ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসসহ রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী এবং বিভিন্ন সামাজিক ও ঐতিহ্যগত আচার-অনুষ্ঠান উদযাপন এবং ৯. শিশুদের জন্য সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি বছরব্যাপী যে সব কার্যক্রম পরিচালনা করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা। ১৯৮৭ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার ৬২টি বিষয়ে উপজেলা, জেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় এ চারটি পর্যায়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতায় প্রতি বছর সারা দেশে প্রায় ৩ লাখ শিশু অংশগ্রহণ করে।
শিশু একাডেমির দ্বিতীয় বৃহত্তম সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হচ্ছে মৌসুমি প্রতিযোগিতা। জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতার মতো এই প্রতিযোগিতা ও উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন পর্যায় পার হয়ে ঢাকার চূড়ান্ত পর্যায়ে জাতীয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। শিশু আনন্দমেলা হচ্ছে শিশু একাডেমির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয়
অনুষ্ঠান। শিশুদের তৈরি বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও হস্তশিল্প এই মেলায় প্রদর্শিত হয়। সপ্তাহব্যাপী এই মেলায় বিভিন্ন সংগঠনের শিশুরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করে থাকে। শিশু নাট্যচর্চায় দেশের বিভিন্ন শিশু সংগঠনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ মেলায় শিশু নাট্য প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮০ সাল থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে
শিশুদের জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হয়। এসবের মধ্যে চিত্রাংকন, সংগীত, নৃত্য, নাট্যকলা, আবৃত্তি, উচ্চারণ ও সরব পাঠ, তবলা, গিটার, স্পোকেন ইংলিশ ও কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। দরিদ্র শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। শিশু একাডেমির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে শিশু চলচ্চিত্র নির্মাণ, দ্বিবার্ষিক আন্তর্জাতিক শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, শিশু সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদল বিদেশে প্রেরণ, মেয়ে-শিশুদের জন্য বিশেষ কার্যক্রম, শিশুদের নির্বাচিত চিত্র সংরক্ষণ ও প্রদর্শনী, শিক্ষা সফর ও পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। এছাড়াও একাডেমির উদ্যোগে শিশু নামে একটি পত্রিকা এবং শিশুদের উপযোগী বই প্রকাশ করা হয়। একাডেমি এ পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে ৫০১টি পুস্তক প্রকাশ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শিশু বিশ্বকোষ ও ছোটদের বিজ্ঞানকোষ নামে দুটি কোষগ্রন্থ। দেশের বিশিষ্ট লেখকদের মানসম্মত শিশুসাহিত্য রচনায় আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে ১৯৮৯ সাল থেকে প্রবর্তন করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’। এ ছাড়া একাডেমি অগ্রণী ব্যাংকের অর্থানুকূল্যে প্রতি বছরে ‘অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য ও শিশু নাট্য পুরস্কার’ প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির কেন্দ্রীয় অফিসসহ সকল শাখা অফিসসমূহে শিশু গ্রন্থাগার রয়েছে।
এতে শিশুদের উপযোগী দেশি ও বিদেশি বই রয়েছে। গ্রন্থাগারে এসে শিশু ও কিশোররাও শিশু বিষয়ক গবেষকরা বই ও পত্র-পত্রিকা পড়তে পারেন ও নিয়মিত সদস্যরা বাড়িতে বই নিয়ে যেতে
পারে। ৫-১৬ বছর বয়সের যে কোনো শিশুওকিশোর এই গ্রন্থাগারের সদস্য হতে পারে। শিশুদের মধ্যে পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি ও গ্রন্থাগারের প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তোলার উদ্দেশে গ্রন্থাগারভিত্তিক বিভিন্ন প্রকার শিক্ষামূলক কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়ে থাকে। দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে শিশুদের সচেতন করা ও জ্ঞানদানের উদ্দেশে গড়ে তোলা হয়েছে ‘শিশু জাদুঘর’। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৬৫০ আসন বিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক মিলনায়তন রয়েছে। এ ছাড়াও ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানে নিহত কিশোর শহীদ মতিউরের স্মৃতি রক্ষার্থে একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘মতিউর মঞ্চ’ নামে একটি মুক্তমঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন শিশু সংগঠন স্বল্পমূল্যে এই মঞ্চে তাদের অনুষ্ঠান পরিবেশন করে থাকে। এখানে প্রশাসনিক কক্ষ ছাড়াও রয়েছে জাদুঘর, গ্রন্থাগার, আর্ট গ্যালারি ও থ্রি-ডি হল। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির ‘শেখ রাসেল শিশু জাদুঘর’ সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খালা থাকে।
তিন তলা বিশিষ্ট এই জাদুঘরের নিচতলায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ রাসেলের বিভিন্ন ছবি। এর পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শিশুদের আঁকা পুরস্কারপ্রাপ্ত বিভিন্ন ছবি। প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশের অভ্যুদয় পর্যন্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা শিল্পকর্মরূপে স্থান পেয়েছে দ্বিতীয় তলায়। আর তৃ তীয় তলায় রয়েছে দৃষ্টিনন্দন একাধিক অ্যাম্বাসি শোকেস। বাংলাদেশে যে সব দেশের দূতাবাস রয়েছে, সেসব দেশের বিভিন্ন শুভেচ্ছা স্মারক সাজিয়ে রাখা রয়েছে এই শো-কেসগুলোতে। শিশু একাডেমির ‘শেখ রাসেল শিশু গ্রন্থাগার’
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ৩৬ হাজার ৮৪৫টি বই রয়েছে। অন্যদিকে একই সময়ের হিসাব অনুযায়ী মোট সদস্য রয়েছেন ৪ হাজার ৩০০ জন বিভিন্ন বয়সের শিশু-কিশোররা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিশু বিষয়ক গবেষণার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা মাত্র এককালীন ১০০ টাকা সদস্য ফি দিয়ে গ্রন্থাগারটির সদস্য হতে পারবেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত গ্রন্থাগারটি খোলা থাকে। গ্রন্থাগারটিতে রয়েছে দেশি-বিদেশি খ্যাতনামা লেখকদের শিশুতোষ বই, ইতিহাস, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন ধরনের বই। পাশাপাশি রয়েছে বাংলা ও ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও মাসিক পত্রিকা। এছাড়াও শিশু-কিশোরদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে গ্রন্থাগারটিতে রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধুকে জানো এবং বাংলাদেশকে জানো’ শীর্ষক বঙ্গবন্ধু কর্নার। প্রযুক্তিগত নানা সেবাও রয়েছে এখানে। এর মধ্যে অন্যতম হলো অডিও ভিজ্যুয়াল ইউনিট ও থিয়েটার রুম। যেখানে শিশু-কিশোরদের অত্যাধুনিক কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও অনলাইন বুক রিডিংসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও দেশজুড়েই তাদের সক্রিয় কার্যক্রম রয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বাংলাদেশ শিশু একাডেমি বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় কাজ করছে। শুধু তাই নয়, ৬৪টি উপজেলা ছাড়াও ছয়টি উপজেলাতেও রয়েছে তাদের প্রশাসনিক কার্যক্রম।
এছাড়াও ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজধানীর উত্তরা হাই স্কুল ও সাভারের অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে চালু রয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। আর কেন্দ্রীয় এবং শাখা অফিসগুলোতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম তো নিয়মিতভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সফল উদ্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো তাদের এই সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। এক বছর থেকে চার বছর মেয়াদি বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক, কারিগরি, ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ নিয়মিতভাবে শিশুদের দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বছর মেয়াদি কোর্সের মধ্যে রয়েছে সুন্দর হাতে লেখা, বাঁশি, বেহালা, দোতারা, দাবা ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। তবলা, নাট্যকলা কিংবা ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ নিতে চাইলে রয়েছে দুই বছর মেয়াদি কোর্স। এদিকে তিন বছরের কোর্সের মধ্যে রয়েছে নৃত্য, চিত্রাঙ্কন ও সৃজন, আবৃত্তি ও উপস্থাপনা শৈলী এবং হাওয়াই অথবা স্প্যানিশ গিটারের প্রশিক্ষণ। আর সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ব্যাপী কোর্স অর্থাৎ চার বছরের কোর্সটি হলো সংগীত প্রশিক্ষণের। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য নির্দেশিকা অনুযায়ী, ছয় থেকে ১৩ বছর বয়সী যেকোনো ছেলে-মেয়ে প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারে। স্বল্প খরচে মানসম্পন্ন এ ধরনের প্রশিক্ষণ থেকে উপকৃত হচ্ছে দেশের অসংখ্য শিশু-কিশোর। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশের প্রায় ৩৫ হাজার শিশুকিশোর তাদের অধীনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বছরব্যাপী নানা আয়োজন আর কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের মনে জায়গা করে নিয়েছে শিশু একাডেমি। শিশুদের সামগ্রিক উন্নয়ন আর মেধার বিকাশে শিশু একাডেমির প্রয়োজন টিকে থাকবে যুগের পর যুগ, সেই প্রত্যাশা তো করাই যায়! জাতিসংঘ ঘোষিত ৫৪টি ধারা সংবলিত শিশু অধিকার সনদ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যেও বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কাজ করে থাকে। এছাড়া শিশু একাডেমির তত্ত্বাবধানে বর্তমানে দুটি প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো হলো : ‘শিশুর বিকাশে প্রারম্ভিক শিক্ষা প্রকল্প’ এবং ‘সিসিমপুর আউটরিচ প্রকল্প’।
শেয়ার করুন
মুহিত মুসতবা আলম | ২৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০

মুহিত মুসতবা আলম শিশুদের জন্য বিশেষায়িত কোনো প্রতিষ্ঠানের কথা ভাবলেই প্রথমেই মাথায় আসে বাংলাদেশ শিশু একডেমির নাম। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিশুদের সুস্থ মানসিক বিকাশ, প্রতিভা অন্বেষণ, দেশীয় সংস্কৃতির বিস্তার এবং পৃষ্ঠপোষকতার কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। শিশু একাডেমি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, যার উদ্দেশ্য শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃ তিক এবং সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে সহায়তা করা। ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে সারা দেশে একাডেমির ৭০টির বেশি শাখা রয়েছে। ঢাকার পুরাতন হাইকোর্ট এলাকায় এর সদর দপ্তর অবস্থিত। শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পুরাতন হাইকোর্ট এলাকায় শিশু একাডেমির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। শুরুতে একাডেমির কার্যক্রম রাজধানীকেন্দ্রিক হলেও পরবর্তীকালে এর শাখা সারা দেশে বিস্তৃৃত হয়। তৃণমূল পর্যায়ে একাডেমির কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮০- ৮১ সালে তৎকালীন বৃহত্তর ২০টি জেলায় শিশু একাডেমির শাখা স্থাপন করা হয়। ১৯৯৩-৯৫ সালে বাকি ৫৫টি জেলায় এবং ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে পরীক্ষামূলকভাবে ৬টি বিভাগের ৬ উপজেলায় শাখা স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির কার্যক্রম পরিচালিত হয় ১৩ সদস্যবিশিষ্ট বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট-এর মাধ্যমে। পরিচালক এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রধান। একাডেমির বিভিন্ন কর্মকা- পরিচালনার জন্য মোট ছয়টি বিভাগ রয়েছে। একাডেমির মূল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে। সারা দেশের জেলা ও উপজেলা শাখাগুলো এ কর্মসূচি অনুসরণ করে। জেলা শাখাগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি পরিচালনা কমিটি রয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় শিশু একাডেমির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে স্থানীয় কমিটি রয়েছে। একাডেমির কার্যক্রমের পরিধি নির্ধারণের জন্য ১৯৮৩ সালে একটি কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির সুপারিশ অনুসারে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মূল দায়িত্ব হলো : ১. শিশুদের উপযোগী বিভিন্ন বই, মাসিক পত্রিকা কোষগ্রন্থ ইত্যাদি প্রকাশনা, ২. শিশুদের পাঠের সুবিধা সৃষ্টি এবং পাঠাভ্যাস গড়তে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মসূচি যেমন কুইজ প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ইত্যাদি আয়োজন, ৩. প্রতি বছর শিশুদের জন্য জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা, মৌসুমি প্রতিযোগিতা এবং আনন্দমেলার আয়োজন, ৪. বাংলাদেশের শিশুদের আন্তর্জাতিক চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি, ৫. শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ, ৬. বিভিন্ন দেশে শিশু সাংস্কৃতিক দল প্রেরণ, ৭. বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক তথ্যসমৃদ্ধ শিশু জাদুঘর পরিচালনা, ৮. জাতীয়, আন্তর্জাতিক এবং ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসসহ রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী এবং বিভিন্ন সামাজিক ও ঐতিহ্যগত আচার-অনুষ্ঠান উদযাপন এবং ৯. শিশুদের জন্য সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি বছরব্যাপী যে সব কার্যক্রম পরিচালনা করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা। ১৯৮৭ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার ৬২টি বিষয়ে উপজেলা, জেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় এ চারটি পর্যায়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতায় প্রতি বছর সারা দেশে প্রায় ৩ লাখ শিশু অংশগ্রহণ করে। শিশু একাডেমির দ্বিতীয় বৃহত্তম সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হচ্ছে মৌসুমি প্রতিযোগিতা। জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতার মতো এই প্রতিযোগিতা ও উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন পর্যায় পার হয়ে ঢাকার চূড়ান্ত পর্যায়ে জাতীয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। শিশু আনন্দমেলা হচ্ছে শিশু একাডেমির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান। শিশুদের তৈরি বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও হস্তশিল্প এই মেলায় প্রদর্শিত হয়। সপ্তাহব্যাপী এই মেলায় বিভিন্ন সংগঠনের শিশুরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করে থাকে। শিশু নাট্যচর্চায় দেশের বিভিন্ন শিশু সংগঠনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ মেলায় শিশু নাট্য প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮০ সাল থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শিশুদের জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হয়। এসবের মধ্যে চিত্রাংকন, সংগীত, নৃত্য, নাট্যকলা, আবৃত্তি, উচ্চারণ ও সরব পাঠ, তবলা, গিটার, স্পোকেন ইংলিশ ও কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। দরিদ্র শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। শিশু একাডেমির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে শিশু চলচ্চিত্র নির্মাণ, দ্বিবার্ষিক আন্তর্জাতিক শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, শিশু সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদল বিদেশে প্রেরণ, মেয়ে-শিশুদের জন্য বিশেষ কার্যক্রম, শিশুদের নির্বাচিত চিত্র সংরক্ষণ ও প্রদর্শনী, শিক্ষা সফর ও পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। এছাড়াও একাডেমির উদ্যোগে শিশু নামে একটি পত্রিকা এবং শিশুদের উপযোগী বই প্রকাশ করা হয়। একাডেমি এ পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে ৫০১টি পুস্তক প্রকাশ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শিশু বিশ্বকোষ ও ছোটদের বিজ্ঞানকোষ নামে দুটি কোষগ্রন্থ। দেশের বিশিষ্ট লেখকদের মানসম্মত শিশুসাহিত্য রচনায় আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে ১৯৮৯ সাল থেকে প্রবর্তন করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’। এ ছাড়া একাডেমি অগ্রণী ব্যাংকের অর্থানুকূল্যে প্রতি বছরে ‘অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য ও শিশু নাট্য পুরস্কার’ প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির কেন্দ্রীয় অফিসসহ সকল শাখা অফিসসমূহে শিশু গ্রন্থাগার রয়েছে। এতে শিশুদের উপযোগী দেশি ও বিদেশি বই রয়েছে। গ্রন্থাগারে এসে শিশু ও কিশোররাও শিশু বিষয়ক গবেষকরা বই ও পত্র-পত্রিকা পড়তে পারেন ও নিয়মিত সদস্যরা বাড়িতে বই নিয়ে যেতে পারে। ৫-১৬ বছর বয়সের যে কোনো শিশুওকিশোর এই গ্রন্থাগারের সদস্য হতে পারে। শিশুদের মধ্যে পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি ও গ্রন্থাগারের প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তোলার উদ্দেশে গ্রন্থাগারভিত্তিক বিভিন্ন প্রকার শিক্ষামূলক কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়ে থাকে। দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে শিশুদের সচেতন করা ও জ্ঞানদানের উদ্দেশে গড়ে তোলা হয়েছে ‘শিশু জাদুঘর’। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৬৫০ আসন বিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক মিলনায়তন রয়েছে। এ ছাড়াও ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানে নিহত কিশোর শহীদ মতিউরের স্মৃতি রক্ষার্থে একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘মতিউর মঞ্চ’ নামে একটি মুক্তমঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন শিশু সংগঠন স্বল্পমূল্যে এই মঞ্চে তাদের অনুষ্ঠান পরিবেশন করে থাকে। এখানে প্রশাসনিক কক্ষ ছাড়াও রয়েছে জাদুঘর, গ্রন্থাগার, আর্ট গ্যালারি ও থ্রি-ডি হল। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির ‘শেখ রাসেল শিশু জাদুঘর’ সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খালা থাকে। তিন তলা বিশিষ্ট এই জাদুঘরের নিচতলায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ রাসেলের বিভিন্ন ছবি। এর পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শিশুদের আঁকা পুরস্কারপ্রাপ্ত বিভিন্ন ছবি। প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশের অভ্যুদয় পর্যন্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা শিল্পকর্মরূপে স্থান পেয়েছে দ্বিতীয় তলায়। আর তৃ তীয় তলায় রয়েছে দৃষ্টিনন্দন একাধিক অ্যাম্বাসি শোকেস। বাংলাদেশে যে সব দেশের দূতাবাস রয়েছে, সেসব দেশের বিভিন্ন শুভেচ্ছা স্মারক সাজিয়ে রাখা রয়েছে এই শো-কেসগুলোতে। শিশু একাডেমির ‘শেখ রাসেল শিশু গ্রন্থাগার’ সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ৩৬ হাজার ৮৪৫টি বই রয়েছে। অন্যদিকে একই সময়ের হিসাব অনুযায়ী মোট সদস্য রয়েছেন ৪ হাজার ৩০০ জন বিভিন্ন বয়সের শিশু-কিশোররা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিশু বিষয়ক গবেষণার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা মাত্র এককালীন ১০০ টাকা সদস্য ফি দিয়ে গ্রন্থাগারটির সদস্য হতে পারবেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত গ্রন্থাগারটি খোলা থাকে। গ্রন্থাগারটিতে রয়েছে দেশি-বিদেশি খ্যাতনামা লেখকদের শিশুতোষ বই, ইতিহাস, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন ধরনের বই। পাশাপাশি রয়েছে বাংলা ও ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও মাসিক পত্রিকা। এছাড়াও শিশু-কিশোরদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে গ্রন্থাগারটিতে রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধুকে জানো এবং বাংলাদেশকে জানো’ শীর্ষক বঙ্গবন্ধু কর্নার। প্রযুক্তিগত নানা সেবাও রয়েছে এখানে। এর মধ্যে অন্যতম হলো অডিও ভিজ্যুয়াল ইউনিট ও থিয়েটার রুম। যেখানে শিশু-কিশোরদের অত্যাধুনিক কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও অনলাইন বুক রিডিংসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও দেশজুড়েই তাদের সক্রিয় কার্যক্রম রয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বাংলাদেশ শিশু একাডেমি বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় কাজ করছে। শুধু তাই নয়, ৬৪টি উপজেলা ছাড়াও ছয়টি উপজেলাতেও রয়েছে তাদের প্রশাসনিক কার্যক্রম।
এছাড়াও ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজধানীর উত্তরা হাই স্কুল ও সাভারের অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে চালু রয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। আর কেন্দ্রীয় এবং শাখা অফিসগুলোতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম তো নিয়মিতভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সফল উদ্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো তাদের এই সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। এক বছর থেকে চার বছর মেয়াদি বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক, কারিগরি, ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ নিয়মিতভাবে শিশুদের দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বছর মেয়াদি কোর্সের মধ্যে রয়েছে সুন্দর হাতে লেখা, বাঁশি, বেহালা, দোতারা, দাবা ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। তবলা, নাট্যকলা কিংবা ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ নিতে চাইলে রয়েছে দুই বছর মেয়াদি কোর্স। এদিকে তিন বছরের কোর্সের মধ্যে রয়েছে নৃত্য, চিত্রাঙ্কন ও সৃজন, আবৃত্তি ও উপস্থাপনা শৈলী এবং হাওয়াই অথবা স্প্যানিশ গিটারের প্রশিক্ষণ। আর সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ব্যাপী কোর্স অর্থাৎ চার বছরের কোর্সটি হলো সংগীত প্রশিক্ষণের। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য নির্দেশিকা অনুযায়ী, ছয় থেকে ১৩ বছর বয়সী যেকোনো ছেলে-মেয়ে প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারে। স্বল্প খরচে মানসম্পন্ন এ ধরনের প্রশিক্ষণ থেকে উপকৃত হচ্ছে দেশের অসংখ্য শিশু-কিশোর। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশের প্রায় ৩৫ হাজার শিশুকিশোর তাদের অধীনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বছরব্যাপী নানা আয়োজন আর কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের মনে জায়গা করে নিয়েছে শিশু একাডেমি। শিশুদের সামগ্রিক উন্নয়ন আর মেধার বিকাশে শিশু একাডেমির প্রয়োজন টিকে থাকবে যুগের পর যুগ, সেই প্রত্যাশা তো করাই যায়! জাতিসংঘ ঘোষিত ৫৪টি ধারা সংবলিত শিশু অধিকার সনদ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যেও বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কাজ করে থাকে। এছাড়া শিশু একাডেমির তত্ত্বাবধানে বর্তমানে দুটি প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো হলো : ‘শিশুর বিকাশে প্রারম্ভিক শিক্ষা প্রকল্প’ এবং ‘সিসিমপুর আউটরিচ প্রকল্প’।