নারীকে গড়ে তোলার বিদ্যালয়
এম এ রাজ্জাক | ২৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
নারী সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে আর সেই সঙ্গে বেড়ে উঠবে সব মানবীয় গুণাবলি নিয়ে এমন ভাবনা নিয়ে ১৯৩৮ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় নারী শিক্ষালয় ভারতশ্বেরী হোমসের। যেন কোনো নারী এদেশের বোঝা হয়ে না থাক। প্রকৃত শিক্ষায় তারা আলোকিত হয়ে উঠবে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে প্রতিটি নারী যেন জয় করতে পারে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি। আর ঠিক এমন মন্ত্রেই দীক্ষিত হচ্ছে ভারতেশ্বরী হোমসের ছাত্রীরা। মনটাই জানালেন হোমসের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অমলেন্দু সাহা। ঢাকা থেকে মাত্র ৬৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে আর টাঙ্গাইল শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মির্জাপুর থানা।
হোমসের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অমলেন্দু সাহা জানান, টাঙ্গাইলের জমিদার দানবীর হিসেবে খ্যাত রণদা প্রসাদ সাহা। তিনি প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন তার পিতামহী ভারতেশ্বরী দেবীর নামানুসারে ১৯৩৮ সালে ভিত্তিস্থাপন করে প্রতিষ্ঠা করেন ভারতেশ্বরী হোমস। সে সময় ভারতেশ্বরী দেবী সুশিক্ষিত ও বিচক্ষণ বুদ্ধিসম্পন্ন নারী হিসেবে খ্যাত ছিলেন। অনাথ রণদা প্রসাদ সাহাকে তিনিই হ দিয়ে ছেলেবেলায় শিক্ষা দেওয়ার আন্তরিক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুরন্ত রণদাকে বিদ্যালয়মুখী করতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে রণদা প্রসাদ সাহা যখন জীবন সংগ্রামে জয়ী হলেন তখন এই পুণ্যময়ীর কথা স্মরণ করেন। তার দেখানো পথ অনুসরণ করে বুঝতে পেরেছিলেন শিক্ষাই জাতির উন্নতির সোপান। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে যে সমাজে নারীরা পিছিয়ে রয়েছে, কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে বাস করে নিজেকে তিলে তিলে হারিয়ে ফেলেছে, সেই সমাজ থেকে নারীকে তুলে নিয়ে আত্মনির্ভরশীল করা প্রয়োজন। সম্মানের সঙ্গে তাদের বেঁচে থাকার যোগ্যতা অর্জন করার মানসে নারী শিক্ষার প্রয়াস চালান আর পি সাহা। রণদা প্রসাদ সাহা তারই পরম স্মৃতি চির অম্লান করে রাখার জন্য ভারতেশ্বরী হোমস নামে ছাত্রীদের আবাসিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৪৫ সাল থেকে এই হোমসের শিক্ষা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেন। এই হোমসের প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন হরিপদ চন্দ।
রণদা প্রসাদ সাহা ১৮৯৬ সালের নভেম্বর মাসে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা দেবেন্দ্রনাথ পোদ্দার ও মা কুমুদিনী দেবীর সংসার ছিল অতি সাধারণ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির। বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখে প্রতিজ্ঞা করেন সামর্থ্য থাকলে গরিব দুঃখীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেবেন। কৈশোর বয়সে অনেক সংগ্রাম করেছেন। কঠোর সাধনা ও তিতিক্ষার ফলে তিনি বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী হন। সেই সম্পদই দেশের মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেন। স্থাপন করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তার প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী কলেজ, কুমুদিনী হাসপাতাল, দেবেন্দ্র কলেজ ও ভারতেশ্বরী হোমস অক্ষয় কীর্তি হয়ে আছে এখনো। জনগণকে বহুমাত্রিক সেবা প্রদানে ১৯৪৭ সালে গঠন করেন কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। এর অধীনে উইমেন মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল, কলেজ, পানি শোধনাগার, নিজস্ব পাওয়ার প্ল্যান্ট, সবজি চাষ, মাছ চাষ, ডেইরি ফার্মসহ শিক্ষক-ছাত্রীর আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে মির্জাপুরের একই চত্বরে।
এখানে ৫৮ শিক্ষক নিয়ে অধ্যয়নরত প্রায় ৮০০ ছাত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, সহায়ক কর্মের দক্ষতা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ করতে যে উদ্দেশ্যগুলো রয়েছেÑ নারীদের সৎ, সাহসী, সুশিক্ষিত ও সুশৃঙ্খল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। কর্মঠ, সামাজিক ও সহনশীল করা। যে কোনো বিরূপ সময়, প্রতিবেশ ও পরিবেশের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানবীয় গুণাবলিতে উদ্ভাসিত অবিচল ও আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে পরিবারের ভেতর ও বাইরে স্বাবলম্বী হওয়া। এসব উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে ভারতেশ্বরী হোমসে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকারা বর্তমানে প্লে থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা দিয়ে থাকেন। বিদ্যালয়টি ১৯৪৫ সালে শিক্ষাকার্যক্রম চালু হলেও ১৯৬২ সাল থেকে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণি খোলা হয়। স্বাধীনতার পরপরই উত্তপ্ত রাজনীতি ও উচ্ছৃঙ্খলতার কারণে ১৯৭৩ সালে উচ্চমাধ্যমিক শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসএসসি পাসের পর অন্য কলেজে ভর্তি হওয়া, আবাসিক সমস্যা, সুন্দর পরিবেশের অভাব ইত্যাদি সমস্যার কথা বিবেচনা করে কর্র্তৃপক্ষ ১৯৮৩ সালে এই প্রতিষ্ঠান আবার উচ্চমাধ্যমিক শাখা খোলে। উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখা রয়েছে। শিক্ষার সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশে ছাত্রীদের ফলাফল অত্যন্ত সন্তোষজনক বলেও তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন এই অধ্যক্ষ।
এই হোমসের ছাত্রীরা আদর্শ ব্যক্তিত্বে গড়ে ওঠে। ভর্তি ব্যবস্থা প্রাইমারি শাখাটি একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প। কুমুদিনী কমপেক্স ও পাশের এলাকার ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হতে পারে। এ শাখায় ছাত্রছাত্রী অনাবাসিক। স্কুল শাখায় ৫ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। ভর্তিসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনে ভর্তি পরীক্ষা, পরবর্তী দিনে নির্বাচিতদের ডাক্তারি ছাড়পত্র পাওয়া সাপেক্ষে ভর্তি করা হয়। এদিকে কলেজ শাখায় মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদপ্তর ও বোর্ডের জারিকৃত নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ভর্তি করা হয়। এ ক্ষেত্রেও ডাক্তারি ছাড়পত্র আবশ্যক। ছাত্রীদের অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও জিনিসপত্রের প্রতি যতœশীল হওয়ার জন্য ১৯৯৩ সাল থেকে মাধ্যমিক শাখার পোশাক ব্যক্তিগতভাবে কিনতে হচ্ছে। তবে বিদ্যালয়ের সমতা ও শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য কুমুদিনী চত্বরে ন্যায্যমূল্যে বিপণি থেকে কিনে ছাত্রীনিবাসে যেতে হয়। বাইরের পোশাক এখানে একদমই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ছাড়া পড়াশোনার সরঞ্জামাদি, পোশাকের অন্যান্য অনুষঙ্গ বাইরে থেকে কেনা যাবে। কেউ চাইলে ন্যায্যমূল্যে বিপণি থেকেও কিনতে পারবে।
হোমসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশ জুড়ে এমনকি দেশের বাইরে ভারতেশ্বরী হোমস শিক্ষার পাশাপাশি সহপাঠ্য কার্যক্রমে সুপরিচিত বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা নিজেদের কাজ নিজেরা করে অভ্যস্ত। নিজেদের থাকার ঘর, আঙিনার নর্দমা, নিজেদের ব্যবহৃত বাথরুম নিজেরাই হোস্টেল কেয়ার টেকিং স্টাফের সহযোগিতায় পরিষ্কার করে থাকে। বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে রান্নার কাজে সহযোগিতা করে। খাওয়া-দাওয়া তত্ত্বাবধান করে এবং খাওয়ার পর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠানের মহান প্রতিষ্ঠাতার আদর্শই এই প্রতিষ্ঠানের আলোকবর্তিকা। তার আদর্শকেই চিরঞ্জীব করতে সব অভিভাবকের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। কেননা মেয়েকে আদর্শ করে গড়ে তোলা শিক্ষক ও অভিভাবকের যৌথ দায়িত্ব।
শেয়ার করুন
এম এ রাজ্জাক | ২৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০

নারী সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে আর সেই সঙ্গে বেড়ে উঠবে সব মানবীয় গুণাবলি নিয়ে এমন ভাবনা নিয়ে ১৯৩৮ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় নারী শিক্ষালয় ভারতশ্বেরী হোমসের। যেন কোনো নারী এদেশের বোঝা হয়ে না থাক। প্রকৃত শিক্ষায় তারা আলোকিত হয়ে উঠবে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে প্রতিটি নারী যেন জয় করতে পারে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি। আর ঠিক এমন মন্ত্রেই দীক্ষিত হচ্ছে ভারতেশ্বরী হোমসের ছাত্রীরা। মনটাই জানালেন হোমসের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অমলেন্দু সাহা। ঢাকা থেকে মাত্র ৬৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে আর টাঙ্গাইল শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মির্জাপুর থানা।
হোমসের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অমলেন্দু সাহা জানান, টাঙ্গাইলের জমিদার দানবীর হিসেবে খ্যাত রণদা প্রসাদ সাহা। তিনি প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন তার পিতামহী ভারতেশ্বরী দেবীর নামানুসারে ১৯৩৮ সালে ভিত্তিস্থাপন করে প্রতিষ্ঠা করেন ভারতেশ্বরী হোমস। সে সময় ভারতেশ্বরী দেবী সুশিক্ষিত ও বিচক্ষণ বুদ্ধিসম্পন্ন নারী হিসেবে খ্যাত ছিলেন। অনাথ রণদা প্রসাদ সাহাকে তিনিই হ দিয়ে ছেলেবেলায় শিক্ষা দেওয়ার আন্তরিক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুরন্ত রণদাকে বিদ্যালয়মুখী করতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে রণদা প্রসাদ সাহা যখন জীবন সংগ্রামে জয়ী হলেন তখন এই পুণ্যময়ীর কথা স্মরণ করেন। তার দেখানো পথ অনুসরণ করে বুঝতে পেরেছিলেন শিক্ষাই জাতির উন্নতির সোপান। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে যে সমাজে নারীরা পিছিয়ে রয়েছে, কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে বাস করে নিজেকে তিলে তিলে হারিয়ে ফেলেছে, সেই সমাজ থেকে নারীকে তুলে নিয়ে আত্মনির্ভরশীল করা প্রয়োজন। সম্মানের সঙ্গে তাদের বেঁচে থাকার যোগ্যতা অর্জন করার মানসে নারী শিক্ষার প্রয়াস চালান আর পি সাহা। রণদা প্রসাদ সাহা তারই পরম স্মৃতি চির অম্লান করে রাখার জন্য ভারতেশ্বরী হোমস নামে ছাত্রীদের আবাসিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৪৫ সাল থেকে এই হোমসের শিক্ষা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেন। এই হোমসের প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন হরিপদ চন্দ।
রণদা প্রসাদ সাহা ১৮৯৬ সালের নভেম্বর মাসে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা দেবেন্দ্রনাথ পোদ্দার ও মা কুমুদিনী দেবীর সংসার ছিল অতি সাধারণ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির। বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখে প্রতিজ্ঞা করেন সামর্থ্য থাকলে গরিব দুঃখীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেবেন। কৈশোর বয়সে অনেক সংগ্রাম করেছেন। কঠোর সাধনা ও তিতিক্ষার ফলে তিনি বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী হন। সেই সম্পদই দেশের মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেন। স্থাপন করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তার প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী কলেজ, কুমুদিনী হাসপাতাল, দেবেন্দ্র কলেজ ও ভারতেশ্বরী হোমস অক্ষয় কীর্তি হয়ে আছে এখনো। জনগণকে বহুমাত্রিক সেবা প্রদানে ১৯৪৭ সালে গঠন করেন কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। এর অধীনে উইমেন মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল, কলেজ, পানি শোধনাগার, নিজস্ব পাওয়ার প্ল্যান্ট, সবজি চাষ, মাছ চাষ, ডেইরি ফার্মসহ শিক্ষক-ছাত্রীর আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে মির্জাপুরের একই চত্বরে।
এখানে ৫৮ শিক্ষক নিয়ে অধ্যয়নরত প্রায় ৮০০ ছাত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, সহায়ক কর্মের দক্ষতা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ করতে যে উদ্দেশ্যগুলো রয়েছেÑ নারীদের সৎ, সাহসী, সুশিক্ষিত ও সুশৃঙ্খল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। কর্মঠ, সামাজিক ও সহনশীল করা। যে কোনো বিরূপ সময়, প্রতিবেশ ও পরিবেশের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানবীয় গুণাবলিতে উদ্ভাসিত অবিচল ও আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে পরিবারের ভেতর ও বাইরে স্বাবলম্বী হওয়া। এসব উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে ভারতেশ্বরী হোমসে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকারা বর্তমানে প্লে থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা দিয়ে থাকেন। বিদ্যালয়টি ১৯৪৫ সালে শিক্ষাকার্যক্রম চালু হলেও ১৯৬২ সাল থেকে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণি খোলা হয়। স্বাধীনতার পরপরই উত্তপ্ত রাজনীতি ও উচ্ছৃঙ্খলতার কারণে ১৯৭৩ সালে উচ্চমাধ্যমিক শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসএসসি পাসের পর অন্য কলেজে ভর্তি হওয়া, আবাসিক সমস্যা, সুন্দর পরিবেশের অভাব ইত্যাদি সমস্যার কথা বিবেচনা করে কর্র্তৃপক্ষ ১৯৮৩ সালে এই প্রতিষ্ঠান আবার উচ্চমাধ্যমিক শাখা খোলে। উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখা রয়েছে। শিক্ষার সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশে ছাত্রীদের ফলাফল অত্যন্ত সন্তোষজনক বলেও তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন এই অধ্যক্ষ।
এই হোমসের ছাত্রীরা আদর্শ ব্যক্তিত্বে গড়ে ওঠে। ভর্তি ব্যবস্থা প্রাইমারি শাখাটি একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প। কুমুদিনী কমপেক্স ও পাশের এলাকার ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হতে পারে। এ শাখায় ছাত্রছাত্রী অনাবাসিক। স্কুল শাখায় ৫ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। ভর্তিসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনে ভর্তি পরীক্ষা, পরবর্তী দিনে নির্বাচিতদের ডাক্তারি ছাড়পত্র পাওয়া সাপেক্ষে ভর্তি করা হয়। এদিকে কলেজ শাখায় মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদপ্তর ও বোর্ডের জারিকৃত নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ভর্তি করা হয়। এ ক্ষেত্রেও ডাক্তারি ছাড়পত্র আবশ্যক। ছাত্রীদের অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও জিনিসপত্রের প্রতি যতœশীল হওয়ার জন্য ১৯৯৩ সাল থেকে মাধ্যমিক শাখার পোশাক ব্যক্তিগতভাবে কিনতে হচ্ছে। তবে বিদ্যালয়ের সমতা ও শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য কুমুদিনী চত্বরে ন্যায্যমূল্যে বিপণি থেকে কিনে ছাত্রীনিবাসে যেতে হয়। বাইরের পোশাক এখানে একদমই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ছাড়া পড়াশোনার সরঞ্জামাদি, পোশাকের অন্যান্য অনুষঙ্গ বাইরে থেকে কেনা যাবে। কেউ চাইলে ন্যায্যমূল্যে বিপণি থেকেও কিনতে পারবে।
হোমসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশ জুড়ে এমনকি দেশের বাইরে ভারতেশ্বরী হোমস শিক্ষার পাশাপাশি সহপাঠ্য কার্যক্রমে সুপরিচিত বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা নিজেদের কাজ নিজেরা করে অভ্যস্ত। নিজেদের থাকার ঘর, আঙিনার নর্দমা, নিজেদের ব্যবহৃত বাথরুম নিজেরাই হোস্টেল কেয়ার টেকিং স্টাফের সহযোগিতায় পরিষ্কার করে থাকে। বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে রান্নার কাজে সহযোগিতা করে। খাওয়া-দাওয়া তত্ত্বাবধান করে এবং খাওয়ার পর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠানের মহান প্রতিষ্ঠাতার আদর্শই এই প্রতিষ্ঠানের আলোকবর্তিকা। তার আদর্শকেই চিরঞ্জীব করতে সব অভিভাবকের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। কেননা মেয়েকে আদর্শ করে গড়ে তোলা শিক্ষক ও অভিভাবকের যৌথ দায়িত্ব।