বিশেষ শিশুর শিক্ষা উদ্যোগ
আল আমিন | ২৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
অটিজম সমস্যায় আক্রান্তদের বলা হয় অটিস্টিক শিশু। অটিজম কোনো মানসিক রোগ নয়, মস্তিষ্কের বিকাশগত সমস্যা যা একটা শিশুর তিন বছরের মধ্যেই প্রকাশ পায়। অটিজম সম্পর্কে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে সচেতনতা নেই বললেই চলে। অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে অটিস্টিক শিশুদের প্রতি অভিভাবক ও সমাজ হয়ে ওঠে বৈরি। অনাদর অবহেলায় বড় হয়ে ওঠে তারা পরিণত হয় সমাজের বোঝা হিসেবে।
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অটিস্টিকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে ১৭ লাখেরও বেশি অটিস্টিক শিশু আছে। বোঝাই যাচ্ছে সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশেও এর হার দিন দিন বেড়েই চলছে। অথচ অটিজম চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও আমরা অনেক পিছিয়ে। অটিজম মস্তিষ্কেরয়বিক সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে গবেষকরা অটিজমকে ‘অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অটিজম কেন হয়, তার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক জৈব রাসায়নিক কার্যকলাপ, মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক গঠন, বংশগতির অস্বাভাবিকতা থেকে এ সমস্যা হতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রতীয়মান হয়।
বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অটিজম শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বগতি। সম্প্রতি শহরভিত্তিক এক জরিপে দেখা যায়, প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে একজন শিশু অটিজমে আক্রান্ত হচ্ছে। ২০০৭ সাল থেকে অটিজম সচেতনতা দিবস বাংলাদেশেও আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে। বিগত পাঁচ-ছয় বছরে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা অটিজম শিশুদের সার্বিক অগ্রগতির এক মাইলফলক।
২০১০ সালে অটিজম শিশুদের ওপর গবেষণার লক্ষ্যে সেন্টার ফর নিউরো ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন (সিএনএসি) স্থাপিত হয়। এরপর ২০১১ সালের ২৫ জুলাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা ও যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত মনস্তত্ত্ববিদ অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের পরামর্শক্রমে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়নে অটিজম স্পট্রাম ডিজঅর্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড সাউথ এশিয়ার আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১১টি দেশের অংশগ্রহণে ‘ঢাকা ঘোষণা’ গৃহীত হয়। এরই সূত্র ধরে অটিজম বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। সর্বোপরি বাংলাদেশ সরকারের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ভবিষ্যতে সবার জন্য সমান শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে। অটিজম শিশুদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষাপদ্ধতি ভালো ফল দেয়। অটিজম শিশুদের যদি জটিল বিষয়কে সহজ-সরলভাবে ধাপে ধাপে উপস্থাপন করে শেখানো যায়, তবে তারা সহজে বুঝতে পারবে। শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মাধ্যমে অটিজম শিশুদের শিক্ষাদান করা যেতে পারে। যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে অটিজম শিশুদের বিভিন্ন বিষয় শেখানো সম্ভব। সামাজিক দক্ষতা অর্জন পদ্ধতির মাধ্যমেও অটিজম শিশুদের সামাজিক আচরণ শেখানো সম্ভব।অটিজম কোনো মানসিক রোগ নয়, তাই অটিজম শিশুদের সমাজের বোঝা মনে না করে বরং এসব শিশুকে
যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের অটিজম শিশুরা যাতে ভবিষ্যতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। এই দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়, এটা আমার, আপনার, গোটা জাতির। আমরা সবাই যদি সচেতন থাকি, তবেই অটিজম শিশুরা ভবিষ্যতে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখতে পারবে। এরা পাগল বা মস্তিষ্কবিকৃত নয়, এরা প্রখর মেধার অধিকারী। বেশির ভাগ অটিস্টিক শিশুর স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকে। শতকরা ৭০ ভাগ অটিস্টিক শিশুর আইকিউ ৭০-এর নিচে থাকে। তবে আশার কথা হলো কিছু কিছু অটিস্টিক শিশু বেশ বুদ্ধিমান হয়। অনেক সময় দেখা যায় বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অটিস্টিক শিশু অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ ও পারদর্শী হয়ে থাকে।
অটিস্টিক শিশুদের প্রতিবন্ধী বলা যাবে না, কেননা প্রতিবন্ধিত্ব অর্থ হলো বিশেষ কোনো বাধার বা প্রতিবন্ধকতায় কোনো কাজ করতে না পারা। পরিবারে এমন কিছু শিশু দেখা যায় যাদের শারীরিক গঠন স্বাভাবিক নয়, হাত বা পা নেই। কানে শোনে না। ফলে কথা বলতে পারে না। অনেকে চোখে দেখে না বা কম দেখে। এটা হলো প্রতিবন্ধিত্ব। যে এই প্রতিবন্ধিত্বের শিকার সে প্রতিবন্ধী। আবার কোনো ব্যক্তি যদি তার বয়স অনুযায়ী ব্যক্তিগত বা সামাজিক পর্যায়ে কাক্সিক্ষত আচরণ করতে সক্ষম না হয় তবে তাকে মানসিক প্রতিবন্ধী বলা হয়। মানসিক প্রতিবন্ধীদের মানসিক ক্ষমতার বিকাশ একটি নির্দিষ্ট স্তরে এসে নেমে যায়।
অন্যদিকে অটিস্টিক শিশুদের সাধারণত এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকে না। এ ধরনের শিশুদের সাধারণত মানসিক ক্ষমতার বিকাশ বন্ধ হয় না। শুধু তার বিকাশ অনেক সময় কাক্সিক্ষত হয় না। তবে শিশুর মধ্যে অটিজম ও প্রতিবন্ধিত্ব একসঙ্গে থাকতে পারে। অটিস্টিক শিশুরা কখনো কখনো বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অত্যন্ত পারদর্শী হয়। এই ধরনের শিশুদের তাই বিশেষ প্রয়োজন সম্পন্ন শিশু বা বুদ্ধিবৃত্তিক চাহিদাসম্পন্ন বলা হয়। যথাযথভাবে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে তারা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে বলে এদের প্রতিবন্ধী আখ্যায়িত করা যাবে না।
অটিজম একটি মানসিক সমস্যা, তাই অভিভাবকদের প্রয়োজন অটিস্টিক শিশুকে একজন মনোবিদ বা মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া। সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা পেলে অটিস্টিক শিশু সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে প্রতিটি অটিস্টিক শিশুই আলাদা হওয়ায় তাদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারটি একজনের চেয়ে আরেকজনেরটা আলাদা। যত আগে অটিজমের বিষয়টা উপলব্ধি করে চিকিৎসা শুরু করা যায় ততই ভালো। অটিস্টিক শিশু হয়তো আর সব সাধারণ শিশুর মতো সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক আচরণ করতে পারবে না। কিন্তু সাইকোথেরাপি বা স্পেশাল শিক্ষাদানের মাধ্যমে এসব শিশুকে ৮০-৯০ ভাগ পর্যন্ত সুস্থ করে তোলা সম্ভব। সঠিক পদ্ধতিতে এগোলে প্রতিটি অটিস্টিক শিশুই উন্নতি করে। এমনকি অনেকে সাধারণ স্কুলে যাওয়ার মতোও হয়ে ওঠে। চিকিৎসা গ্রহণ করে সম্পূর্ণ সুস্থ-স্বাভাবিক হয়ে বিয়ে ও সংসার করাও অনেকের পক্ষে সম্ভব।
সরকারি বা বেসরকারি বিভিন্নভাবে নেওয়া হয় বিভিন্ন উদ্যোগ। বিশেষ শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থায় দেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। দেশের শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধকতাগ্রস্ত শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে যেমন চালু করা হয়েছে শিশু বিকাশ কেন্দ্র তেমনি বিশেষায়িত স্কুলের মাধ্যমে করা হয়ছে তাদের শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও।
সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন এনজিও বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যেগে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিশেষায়িত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ কার্যক্রমটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন বাস্তবায়ন করে থাকে। এসব বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে সুইড বাংলাদেশ পরিচালিত ৪৮টি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন পরিচালিত ৭টি ইনক্লুসিভ বিদ্যালয় এবং বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কিছু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিদ্যালয় রয়েছে।
স্কুলের সেবা : দেশের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিশেষ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও থেরাপির সাহায্যে শেখানো হয়। এই সব স্কুলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়। স্কুলের সেবাসমূহের মধ্যে : রয়েছে প্রাক-শৈশবকালীন বিকাশমূলক কার্যক্রম, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষণ, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, অবসর বিনোদন প্রশিক্ষণ, থেরাপিভিত্তিক সেবা, অকুপেশনাল ও ফিজিওথেরাপি, সেনসরি ইনটিগ্রেশন ও ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়ন থেরাপি ইত্যাদি। কোনো কোনো স্কুলে প্রতিবন্ধিতা শনাক্তের পর নিবিড় পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে ‘মা ও শিশু কার্যক্রম’-এর আওতায় এখানে ২ থেকে ৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর জন্য শিশু, মা ও পরিবারের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ হিসেবে সেলাই, মাটির কাজ, হস্তশিল্প, কম্পিউটার, পুতুল তৈরি, তাঁতের শাড়ি বুনন, অফিস সহকারী, রান্না ও ক্যান্টিনকে কাজে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিনোদনমূলক প্রশিক্ষণ হিসেবে এসব স্কুলে শেখানো হয় নাচ, গান, সাঁতার ও রান্নার কাজ।
অকুপেশনাল ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে ইন্দ্রিয় অসুবিধাগুলো দূর করার জন্য হামাগুড়ি, দাঁড়ানো, খেলা, চামচ ধরা, পেন্সিল ধরা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যোগাযোগ প্রতিবন্ধি শিশুদের কথা বলা, শব্দ উচ্চারণ, স্বর ও ধারাবাহিক কথা বলায় তাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্পিচ থেরাপিস্ট দ্বারা প্রশিক্ষক দেওয়া হয়। উপরোল্লিখিত স্কুলগুলোর পাশাপাশি শুধুমাত্র রাজধানীতেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিশেষায়িত বিদ্যালয় রয়েছে, যেগুলোর কোনো কোনোটা ফ্রি সেবাও দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু রয়েছে ব্যক্তিমালিকানাধীন আবার কিছু কিছু বিভিন্ন প্রজেক্ট বা ট্রাস্টের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ১১ লাখ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের প্রতিবন্ধিতার শিকার। এর মধ্যে প্রায় ১৭ লাখ বিদ্যালয়গামী শিশুর বিশেষ চাহিদা রয়েছে। সংখ্যাটা কিন্তু একেবারে কম নয়। এদের অন্ধকারে বা আড়ালে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের জানতে হবে, কেন একজন শিশু সবার কাছে বিশেষ চাহিদা পূরণের দাবি রাখে। আমাদের মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে শিক্ষা তাদের অধিকার। তাদের পাশে দাঁড়ানো মানে তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে, সহমর্মিতা নয়। সরকার ও আমাদের সবার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও সদিচ্ছাই পারে সব সমস্যাকে দূরীভূত করে একটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুবান্ধব সমাজ ও দেশ সৃষ্টি করতে; যেখানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য কল্যাণ নয়, তাদের অধিকার দেওয়া হবে, সহমর্মিতা নয় সহযোগিতা করা হবে।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অপ্রতুলতা কাজে অনেক বাধা সৃষ্টি করে
ডা. শামীম মতিন চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপ্যাল ও চেয়ারপারসন, বিউটিফুল মাইন্ড স্কুল
বাংলাদেশে বিশেষ শিশুদের বর্তমান অবস্থা কেমন?
সচেতনতার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ শিশুদের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ও অগ্রসরমান। সরকারের সার্বিক সহযোগিতা এ ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ বিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা একটি বিশেষ শিশুর জীবনে অনস্বীকার্য। স্কুলের জীবনমুখী শিক্ষা দৈনন্দিন জীবনের কার্যাবলি, খেলাধুলা ও শরীরচর্যা, স্নায়ু ও মানসিক সঞ্চালন, সর্বোপরি সুশৃঙ্খল এক সামাজিক নাগরিক গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এদের জন্য কাজ করতে গিয়ে আপনাকে কী কী সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়?
এসব শিশু প্রথম স্কুলে প্রবেশকালে তাদের প্রচুর পরিমাণে আচরণগত, স্নায়বিক ও মানসিক ভারসাম্যের সমস্যায় থাকে। শিশুকে তার নিজস্ব চাহিদা ও ক্ষমতা অনুযায়ী আলাদাভাবে পাঠ-পরিকল্পনা করে সেবার সাহায্যে সমস্যা ধীরে ধীরে উপশম করতে হয়। বিশেষ শিশুদের সমস্যাগুলো মোকাবিলা করাই উদ্দেশ্য। এবং সমস্যার সমাধানই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য। তাছাড়া বিশেষ শিশুদের পরিচর্যা জটিল ও ব্যয়বহুল। প্রথম সমস্যা শিশুদের অভিভাবকদের অনভিজ্ঞতা, স্বল্পজ্ঞান ও ব্যয়ভার বহন করার অনীহা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অপ্রতুলতা কাজে অনেক বাধা সৃষ্টি করে।
ভবিষ্যতে বিশেষ শিশুদের নিয়ে আপনার কর্মপরিকল্পনা
বিশেষ শিশুদের নিয়ে কর্মপরিকল্পনা অনেক। বিশেষ শিশুদের উপযোগী আরও উন্নতমানের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কারিকুলাম চালু করা। একীভূত শিক্ষার মাধ্যমে নন-অ্যাকাডেমিক ও অ্যাকাডেমিক শিক্ষার উন্নয়নে সচেষ্ট থাকা। থেরাপিস্ট, বিশেষ শিক্ষকদের উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া। অ্যাকাডেমিক অংশকে কলেজ পর্যন্ত উন্নত করা। সমসামায়িক ডিভাইসগুলোকে প্রতিনিয়ত শিক্ষার কাজে উপযোগী করে তৈরি করা। রেসিডিনসিয়াল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা। স্পেশাল এডুকেশনের ওপর রিসার্চ অ্যাকাডেমি ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ চালু করা।
শেয়ার করুন
আল আমিন | ২৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০

অটিজম সমস্যায় আক্রান্তদের বলা হয় অটিস্টিক শিশু। অটিজম কোনো মানসিক রোগ নয়, মস্তিষ্কের বিকাশগত সমস্যা যা একটা শিশুর তিন বছরের মধ্যেই প্রকাশ পায়। অটিজম সম্পর্কে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে সচেতনতা নেই বললেই চলে। অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে অটিস্টিক শিশুদের প্রতি অভিভাবক ও সমাজ হয়ে ওঠে বৈরি। অনাদর অবহেলায় বড় হয়ে ওঠে তারা পরিণত হয় সমাজের বোঝা হিসেবে।
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অটিস্টিকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে ১৭ লাখেরও বেশি অটিস্টিক শিশু আছে। বোঝাই যাচ্ছে সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশেও এর হার দিন দিন বেড়েই চলছে। অথচ অটিজম চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও আমরা অনেক পিছিয়ে। অটিজম মস্তিষ্কেরয়বিক সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে গবেষকরা অটিজমকে ‘অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অটিজম কেন হয়, তার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক জৈব রাসায়নিক কার্যকলাপ, মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক গঠন, বংশগতির অস্বাভাবিকতা থেকে এ সমস্যা হতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রতীয়মান হয়।
বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অটিজম শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বগতি। সম্প্রতি শহরভিত্তিক এক জরিপে দেখা যায়, প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে একজন শিশু অটিজমে আক্রান্ত হচ্ছে। ২০০৭ সাল থেকে অটিজম সচেতনতা দিবস বাংলাদেশেও আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে। বিগত পাঁচ-ছয় বছরে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা অটিজম শিশুদের সার্বিক অগ্রগতির এক মাইলফলক।
২০১০ সালে অটিজম শিশুদের ওপর গবেষণার লক্ষ্যে সেন্টার ফর নিউরো ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন (সিএনএসি) স্থাপিত হয়। এরপর ২০১১ সালের ২৫ জুলাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা ও যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত মনস্তত্ত্ববিদ অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের পরামর্শক্রমে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়নে অটিজম স্পট্রাম ডিজঅর্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড সাউথ এশিয়ার আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১১টি দেশের অংশগ্রহণে ‘ঢাকা ঘোষণা’ গৃহীত হয়। এরই সূত্র ধরে অটিজম বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। সর্বোপরি বাংলাদেশ সরকারের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ভবিষ্যতে সবার জন্য সমান শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে। অটিজম শিশুদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষাপদ্ধতি ভালো ফল দেয়। অটিজম শিশুদের যদি জটিল বিষয়কে সহজ-সরলভাবে ধাপে ধাপে উপস্থাপন করে শেখানো যায়, তবে তারা সহজে বুঝতে পারবে। শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মাধ্যমে অটিজম শিশুদের শিক্ষাদান করা যেতে পারে। যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে অটিজম শিশুদের বিভিন্ন বিষয় শেখানো সম্ভব। সামাজিক দক্ষতা অর্জন পদ্ধতির মাধ্যমেও অটিজম শিশুদের সামাজিক আচরণ শেখানো সম্ভব।অটিজম কোনো মানসিক রোগ নয়, তাই অটিজম শিশুদের সমাজের বোঝা মনে না করে বরং এসব শিশুকে
যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের অটিজম শিশুরা যাতে ভবিষ্যতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। এই দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়, এটা আমার, আপনার, গোটা জাতির। আমরা সবাই যদি সচেতন থাকি, তবেই অটিজম শিশুরা ভবিষ্যতে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখতে পারবে। এরা পাগল বা মস্তিষ্কবিকৃত নয়, এরা প্রখর মেধার অধিকারী। বেশির ভাগ অটিস্টিক শিশুর স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকে। শতকরা ৭০ ভাগ অটিস্টিক শিশুর আইকিউ ৭০-এর নিচে থাকে। তবে আশার কথা হলো কিছু কিছু অটিস্টিক শিশু বেশ বুদ্ধিমান হয়। অনেক সময় দেখা যায় বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অটিস্টিক শিশু অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ ও পারদর্শী হয়ে থাকে।
অটিস্টিক শিশুদের প্রতিবন্ধী বলা যাবে না, কেননা প্রতিবন্ধিত্ব অর্থ হলো বিশেষ কোনো বাধার বা প্রতিবন্ধকতায় কোনো কাজ করতে না পারা। পরিবারে এমন কিছু শিশু দেখা যায় যাদের শারীরিক গঠন স্বাভাবিক নয়, হাত বা পা নেই। কানে শোনে না। ফলে কথা বলতে পারে না। অনেকে চোখে দেখে না বা কম দেখে। এটা হলো প্রতিবন্ধিত্ব। যে এই প্রতিবন্ধিত্বের শিকার সে প্রতিবন্ধী। আবার কোনো ব্যক্তি যদি তার বয়স অনুযায়ী ব্যক্তিগত বা সামাজিক পর্যায়ে কাক্সিক্ষত আচরণ করতে সক্ষম না হয় তবে তাকে মানসিক প্রতিবন্ধী বলা হয়। মানসিক প্রতিবন্ধীদের মানসিক ক্ষমতার বিকাশ একটি নির্দিষ্ট স্তরে এসে নেমে যায়।
অন্যদিকে অটিস্টিক শিশুদের সাধারণত এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকে না। এ ধরনের শিশুদের সাধারণত মানসিক ক্ষমতার বিকাশ বন্ধ হয় না। শুধু তার বিকাশ অনেক সময় কাক্সিক্ষত হয় না। তবে শিশুর মধ্যে অটিজম ও প্রতিবন্ধিত্ব একসঙ্গে থাকতে পারে। অটিস্টিক শিশুরা কখনো কখনো বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অত্যন্ত পারদর্শী হয়। এই ধরনের শিশুদের তাই বিশেষ প্রয়োজন সম্পন্ন শিশু বা বুদ্ধিবৃত্তিক চাহিদাসম্পন্ন বলা হয়। যথাযথভাবে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে তারা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে বলে এদের প্রতিবন্ধী আখ্যায়িত করা যাবে না।
অটিজম একটি মানসিক সমস্যা, তাই অভিভাবকদের প্রয়োজন অটিস্টিক শিশুকে একজন মনোবিদ বা মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া। সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা পেলে অটিস্টিক শিশু সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে প্রতিটি অটিস্টিক শিশুই আলাদা হওয়ায় তাদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারটি একজনের চেয়ে আরেকজনেরটা আলাদা। যত আগে অটিজমের বিষয়টা উপলব্ধি করে চিকিৎসা শুরু করা যায় ততই ভালো। অটিস্টিক শিশু হয়তো আর সব সাধারণ শিশুর মতো সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক আচরণ করতে পারবে না। কিন্তু সাইকোথেরাপি বা স্পেশাল শিক্ষাদানের মাধ্যমে এসব শিশুকে ৮০-৯০ ভাগ পর্যন্ত সুস্থ করে তোলা সম্ভব। সঠিক পদ্ধতিতে এগোলে প্রতিটি অটিস্টিক শিশুই উন্নতি করে। এমনকি অনেকে সাধারণ স্কুলে যাওয়ার মতোও হয়ে ওঠে। চিকিৎসা গ্রহণ করে সম্পূর্ণ সুস্থ-স্বাভাবিক হয়ে বিয়ে ও সংসার করাও অনেকের পক্ষে সম্ভব।
সরকারি বা বেসরকারি বিভিন্নভাবে নেওয়া হয় বিভিন্ন উদ্যোগ। বিশেষ শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থায় দেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। দেশের শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধকতাগ্রস্ত শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে যেমন চালু করা হয়েছে শিশু বিকাশ কেন্দ্র তেমনি বিশেষায়িত স্কুলের মাধ্যমে করা হয়ছে তাদের শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও।
সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন এনজিও বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যেগে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিশেষায়িত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ কার্যক্রমটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন বাস্তবায়ন করে থাকে। এসব বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে সুইড বাংলাদেশ পরিচালিত ৪৮টি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন পরিচালিত ৭টি ইনক্লুসিভ বিদ্যালয় এবং বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কিছু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিদ্যালয় রয়েছে।
স্কুলের সেবা : দেশের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিশেষ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও থেরাপির সাহায্যে শেখানো হয়। এই সব স্কুলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়। স্কুলের সেবাসমূহের মধ্যে : রয়েছে প্রাক-শৈশবকালীন বিকাশমূলক কার্যক্রম, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষণ, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, অবসর বিনোদন প্রশিক্ষণ, থেরাপিভিত্তিক সেবা, অকুপেশনাল ও ফিজিওথেরাপি, সেনসরি ইনটিগ্রেশন ও ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়ন থেরাপি ইত্যাদি। কোনো কোনো স্কুলে প্রতিবন্ধিতা শনাক্তের পর নিবিড় পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে ‘মা ও শিশু কার্যক্রম’-এর আওতায় এখানে ২ থেকে ৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর জন্য শিশু, মা ও পরিবারের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ হিসেবে সেলাই, মাটির কাজ, হস্তশিল্প, কম্পিউটার, পুতুল তৈরি, তাঁতের শাড়ি বুনন, অফিস সহকারী, রান্না ও ক্যান্টিনকে কাজে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিনোদনমূলক প্রশিক্ষণ হিসেবে এসব স্কুলে শেখানো হয় নাচ, গান, সাঁতার ও রান্নার কাজ।
অকুপেশনাল ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে ইন্দ্রিয় অসুবিধাগুলো দূর করার জন্য হামাগুড়ি, দাঁড়ানো, খেলা, চামচ ধরা, পেন্সিল ধরা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যোগাযোগ প্রতিবন্ধি শিশুদের কথা বলা, শব্দ উচ্চারণ, স্বর ও ধারাবাহিক কথা বলায় তাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্পিচ থেরাপিস্ট দ্বারা প্রশিক্ষক দেওয়া হয়। উপরোল্লিখিত স্কুলগুলোর পাশাপাশি শুধুমাত্র রাজধানীতেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিশেষায়িত বিদ্যালয় রয়েছে, যেগুলোর কোনো কোনোটা ফ্রি সেবাও দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু রয়েছে ব্যক্তিমালিকানাধীন আবার কিছু কিছু বিভিন্ন প্রজেক্ট বা ট্রাস্টের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ১১ লাখ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের প্রতিবন্ধিতার শিকার। এর মধ্যে প্রায় ১৭ লাখ বিদ্যালয়গামী শিশুর বিশেষ চাহিদা রয়েছে। সংখ্যাটা কিন্তু একেবারে কম নয়। এদের অন্ধকারে বা আড়ালে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের জানতে হবে, কেন একজন শিশু সবার কাছে বিশেষ চাহিদা পূরণের দাবি রাখে। আমাদের মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে শিক্ষা তাদের অধিকার। তাদের পাশে দাঁড়ানো মানে তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে, সহমর্মিতা নয়। সরকার ও আমাদের সবার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও সদিচ্ছাই পারে সব সমস্যাকে দূরীভূত করে একটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুবান্ধব সমাজ ও দেশ সৃষ্টি করতে; যেখানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য কল্যাণ নয়, তাদের অধিকার দেওয়া হবে, সহমর্মিতা নয় সহযোগিতা করা হবে।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অপ্রতুলতা কাজে অনেক বাধা সৃষ্টি করে
ডা. শামীম মতিন চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপ্যাল ও চেয়ারপারসন, বিউটিফুল মাইন্ড স্কুল
বাংলাদেশে বিশেষ শিশুদের বর্তমান অবস্থা কেমন?
সচেতনতার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ শিশুদের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ও অগ্রসরমান। সরকারের সার্বিক সহযোগিতা এ ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ বিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা একটি বিশেষ শিশুর জীবনে অনস্বীকার্য। স্কুলের জীবনমুখী শিক্ষা দৈনন্দিন জীবনের কার্যাবলি, খেলাধুলা ও শরীরচর্যা, স্নায়ু ও মানসিক সঞ্চালন, সর্বোপরি সুশৃঙ্খল এক সামাজিক নাগরিক গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এদের জন্য কাজ করতে গিয়ে আপনাকে কী কী সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়?
এসব শিশু প্রথম স্কুলে প্রবেশকালে তাদের প্রচুর পরিমাণে আচরণগত, স্নায়বিক ও মানসিক ভারসাম্যের সমস্যায় থাকে। শিশুকে তার নিজস্ব চাহিদা ও ক্ষমতা অনুযায়ী আলাদাভাবে পাঠ-পরিকল্পনা করে সেবার সাহায্যে সমস্যা ধীরে ধীরে উপশম করতে হয়। বিশেষ শিশুদের সমস্যাগুলো মোকাবিলা করাই উদ্দেশ্য। এবং সমস্যার সমাধানই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য। তাছাড়া বিশেষ শিশুদের পরিচর্যা জটিল ও ব্যয়বহুল। প্রথম সমস্যা শিশুদের অভিভাবকদের অনভিজ্ঞতা, স্বল্পজ্ঞান ও ব্যয়ভার বহন করার অনীহা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অপ্রতুলতা কাজে অনেক বাধা সৃষ্টি করে।
ভবিষ্যতে বিশেষ শিশুদের নিয়ে আপনার কর্মপরিকল্পনা
বিশেষ শিশুদের নিয়ে কর্মপরিকল্পনা অনেক। বিশেষ শিশুদের উপযোগী আরও উন্নতমানের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কারিকুলাম চালু করা। একীভূত শিক্ষার মাধ্যমে নন-অ্যাকাডেমিক ও অ্যাকাডেমিক শিক্ষার উন্নয়নে সচেষ্ট থাকা। থেরাপিস্ট, বিশেষ শিক্ষকদের উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া। অ্যাকাডেমিক অংশকে কলেজ পর্যন্ত উন্নত করা। সমসামায়িক ডিভাইসগুলোকে প্রতিনিয়ত শিক্ষার কাজে উপযোগী করে তৈরি করা। রেসিডিনসিয়াল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা। স্পেশাল এডুকেশনের ওপর রিসার্চ অ্যাকাডেমি ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ চালু করা।