মেয়েদের প্রথম ক্যাডেট কলেজ
রাইসুল ইসলাম | ২৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
১৯৮২ সালে দেশের প্রথম গার্লস ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহে। ‘ময়মনসিংহ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল ফর গার্লস’ নামক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজে রূপান্তরিত হয়। ১৯৮২ সালের ১ জুলাই দেশের প্রথম গার্লস ক্যাডেট কলেজটি গড়ে তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয় অধ্যক্ষ করিম উদ্দিন আহমেদকে। শহরের ধোপাখোলা এলাকায় ছিমছাম সুন্দর পরিবেশে এই কলেজটি গৌরব ও গর্ব নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কেবল দেশের অনন্য সম্পদ ভালো ক্যাডেট তৈরি করাই নয়, একই সঙ্গে ভালো আর পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্রতও এই প্রতিষ্ঠানটির।
নারীশিক্ষার মডেল ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ। সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় আজ থেকে ৩৮ বছর আগে। প্রতিষ্ঠাকাল অনুযায়ী ক্যাডেট কলেজগুলোর মধ্যে এর অবস্থান নবম। দেশের প্রথম এই গার্লস ক্যাডেট কলেজটি গড়ে তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয় করিম উদ্দিন আহমেদকে। সময়টি ছিল ১৯৮২ সালের পহেলা জুলাই। অর্থাৎ, তিনি কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। এর আগে অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন করিম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন কলেজটির প্রকল্প পরিচালক। প্রথম উপাধ্যক্ষ ছিলেন আশরাফ আলী এবং অ্যাডজুটেন্ট মেজর মনোয়ার। অভিযাত্রা শুরু যেভাবে সবুজের সমারোহে অনন্য ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ ক্যাম্পাস। ধোপাখোলা এলাকায় ২৭.২৯২৫ একর জায়গাজুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এ কলেজ।
‘প্রভু আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করো’ এ হচ্ছে কলেজের মূলমন্ত্র। ১৯৮৩ সালের ১৯ মার্চ অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির একঝাঁক নবীন ক্যাডেট নিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু এই ক্যাডেট কলেজের। সপ্তম শ্রেণির প্রথম ব্যাচের ক্যাডেট কলেজে যোগ দেয় সেই বছরের ২৯ মে।মূলত নারীশিক্ষার অগ্রগতি, আদর্শ নাগরিক গঠন, সশস্ত্র বাহিনী ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যেই কলেজটির অভিযাত্রা শুরু হয়। আবাসিক প্রতিষ্ঠানটির তিনটি হাউজ রয়েছে। হাউজ তিনটির নাম শান্তি, সত্য ও সদাচার। কলেজটি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় ঐতিহ্য নির্মাণ করে জাতীয় পর্যায়ে উজ্জ্বল করেছে নিজেদের ভাবমূর্তি। কলেজের মূল গেট দিয়ে ঢুকলেই পশ্চিম পাশে রয়েছে কলেজ আবাসিক এলাকা। সংলগ্ন রাস্তা ধরে সোজা চলে গেলে পড়বে মূল কলেজের ভবনসমূহ। সেগুলো হলোÑ প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষা ভবন, কলেজ ক্যান্টিন, কলেজ ডাইনিং হল, হাউজ ভবন ও কলেজ হসপিটাল।
উল্লেখ্য, এই প্রতিটি ভবন করিডর দিয়ে একটি অপরটির সঙ্গে সংযুক্ত। এ ছাড়া পুকুর এবং এর লাগোয়া মাছ চাষ কেন্দ্র রয়েছে। কলেজ হসপিটালের দক্ষিণ দিকে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, অ্যাডজুটেন্ট ও মেডিকেল অফিসারের বাসভবন। দেশের নারীশিক্ষায় মডেল এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে বরাবরই ময়মনসিংহের সেরাদের সেরা হিসেবে নিজেদের আবির্ভূত করেছে। সারা দেশের নির্বাচিত মেয়েরা কলেজটি পড়াশোনা করছে। সংস্কৃতিচর্চাতেও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
২০১৯ সালেও মাধ্যমিকের ফলাফলে অভূত সাফল্য অর্জন করে ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ। ঢাকা বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক পরীক্ষায় শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করে। তাদের ৫৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৩ জন জিপিএ ৫ পায়। গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫১ পরীক্ষার্থীই। একই বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে এই কলেজ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই পাস করে। জিপিএ ৫ পায় ৪১ শিক্ষার্থী। লেকচার শিডিউল অনুযায়ী পাঠদান এবং এসব মনিটরিংয়ের জন্য কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের সার্বক্ষণিক তদারকির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা ভালো ফলাফলে বরাবরই বিশেষ অবদান রাখছে। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যাডেট কলেজে বেশ কিছু ক্লাব রয়েছে, যার কোনো একটিতে একজন ক্যাডেটকে অংশগ্রহণ করতে হয়। সাহিত্য ও সংস্কৃতি, আবৃত্তি, বিতর্ক, বক্তৃতা, নাট্যাভিনয়, সংগীত, সাধারণ জ্ঞান, কিরাত ও নৃত্য ইত্যাদি। খেলাধুলার মধ্যে আছে ভলিবল, বাস্কেটবল, ক্রিকেট, লন টেনিস, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, টেবিল টেনিস, ক্যারম ও দাবা ইত্যাদি। অন্যান্য কাজের মধ্যে আছে বাগান করা ইত্যাদি।
ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজের বর্তমান প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ আবদুল মান্নান কলেজটির ১৭তম প্রিন্সিপাল। ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয় ক্যাডেট কলেজ পরিচালনা পরিষদের নির্দেশনাক্রমে।
শেয়ার করুন
রাইসুল ইসলাম | ২৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০

১৯৮২ সালে দেশের প্রথম গার্লস ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহে। ‘ময়মনসিংহ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল ফর গার্লস’ নামক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজে রূপান্তরিত হয়। ১৯৮২ সালের ১ জুলাই দেশের প্রথম গার্লস ক্যাডেট কলেজটি গড়ে তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয় অধ্যক্ষ করিম উদ্দিন আহমেদকে। শহরের ধোপাখোলা এলাকায় ছিমছাম সুন্দর পরিবেশে এই কলেজটি গৌরব ও গর্ব নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কেবল দেশের অনন্য সম্পদ ভালো ক্যাডেট তৈরি করাই নয়, একই সঙ্গে ভালো আর পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্রতও এই প্রতিষ্ঠানটির।
নারীশিক্ষার মডেল ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ। সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় আজ থেকে ৩৮ বছর আগে। প্রতিষ্ঠাকাল অনুযায়ী ক্যাডেট কলেজগুলোর মধ্যে এর অবস্থান নবম। দেশের প্রথম এই গার্লস ক্যাডেট কলেজটি গড়ে তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয় করিম উদ্দিন আহমেদকে। সময়টি ছিল ১৯৮২ সালের পহেলা জুলাই। অর্থাৎ, তিনি কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। এর আগে অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন করিম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন কলেজটির প্রকল্প পরিচালক। প্রথম উপাধ্যক্ষ ছিলেন আশরাফ আলী এবং অ্যাডজুটেন্ট মেজর মনোয়ার। অভিযাত্রা শুরু যেভাবে সবুজের সমারোহে অনন্য ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ ক্যাম্পাস। ধোপাখোলা এলাকায় ২৭.২৯২৫ একর জায়গাজুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এ কলেজ।
‘প্রভু আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করো’ এ হচ্ছে কলেজের মূলমন্ত্র। ১৯৮৩ সালের ১৯ মার্চ অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির একঝাঁক নবীন ক্যাডেট নিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু এই ক্যাডেট কলেজের। সপ্তম শ্রেণির প্রথম ব্যাচের ক্যাডেট কলেজে যোগ দেয় সেই বছরের ২৯ মে।মূলত নারীশিক্ষার অগ্রগতি, আদর্শ নাগরিক গঠন, সশস্ত্র বাহিনী ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যেই কলেজটির অভিযাত্রা শুরু হয়। আবাসিক প্রতিষ্ঠানটির তিনটি হাউজ রয়েছে। হাউজ তিনটির নাম শান্তি, সত্য ও সদাচার। কলেজটি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় ঐতিহ্য নির্মাণ করে জাতীয় পর্যায়ে উজ্জ্বল করেছে নিজেদের ভাবমূর্তি। কলেজের মূল গেট দিয়ে ঢুকলেই পশ্চিম পাশে রয়েছে কলেজ আবাসিক এলাকা। সংলগ্ন রাস্তা ধরে সোজা চলে গেলে পড়বে মূল কলেজের ভবনসমূহ। সেগুলো হলোÑ প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষা ভবন, কলেজ ক্যান্টিন, কলেজ ডাইনিং হল, হাউজ ভবন ও কলেজ হসপিটাল।
উল্লেখ্য, এই প্রতিটি ভবন করিডর দিয়ে একটি অপরটির সঙ্গে সংযুক্ত। এ ছাড়া পুকুর এবং এর লাগোয়া মাছ চাষ কেন্দ্র রয়েছে। কলেজ হসপিটালের দক্ষিণ দিকে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, অ্যাডজুটেন্ট ও মেডিকেল অফিসারের বাসভবন। দেশের নারীশিক্ষায় মডেল এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে বরাবরই ময়মনসিংহের সেরাদের সেরা হিসেবে নিজেদের আবির্ভূত করেছে। সারা দেশের নির্বাচিত মেয়েরা কলেজটি পড়াশোনা করছে। সংস্কৃতিচর্চাতেও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
২০১৯ সালেও মাধ্যমিকের ফলাফলে অভূত সাফল্য অর্জন করে ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ। ঢাকা বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক পরীক্ষায় শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করে। তাদের ৫৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৩ জন জিপিএ ৫ পায়। গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫১ পরীক্ষার্থীই। একই বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে এই কলেজ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই পাস করে। জিপিএ ৫ পায় ৪১ শিক্ষার্থী। লেকচার শিডিউল অনুযায়ী পাঠদান এবং এসব মনিটরিংয়ের জন্য কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের সার্বক্ষণিক তদারকির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা ভালো ফলাফলে বরাবরই বিশেষ অবদান রাখছে। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যাডেট কলেজে বেশ কিছু ক্লাব রয়েছে, যার কোনো একটিতে একজন ক্যাডেটকে অংশগ্রহণ করতে হয়। সাহিত্য ও সংস্কৃতি, আবৃত্তি, বিতর্ক, বক্তৃতা, নাট্যাভিনয়, সংগীত, সাধারণ জ্ঞান, কিরাত ও নৃত্য ইত্যাদি। খেলাধুলার মধ্যে আছে ভলিবল, বাস্কেটবল, ক্রিকেট, লন টেনিস, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, টেবিল টেনিস, ক্যারম ও দাবা ইত্যাদি। অন্যান্য কাজের মধ্যে আছে বাগান করা ইত্যাদি।
ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজের বর্তমান প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ আবদুল মান্নান কলেজটির ১৭তম প্রিন্সিপাল। ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয় ক্যাডেট কলেজ পরিচালনা পরিষদের নির্দেশনাক্রমে।