জামদানি ও মসলিনের নবজাগরণ
মোহসীনা লাইজু | ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
বাংলাদেশের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য টেক্সটাইল জামদানি। মসলিনের অসংখ্য ধরনের সর্বশেষটি হলো জামদানি। এর ইতিহাস কয়েকশ বছরের। এক সময় প্রায় হারিয়ে যেতে বসা জামদানির পুনজাগরনের উদ্যোগ আসে আশির দশকে। তৎকালীন ফার্স্টলেডি বেগম রওশন এরশাদ জামদানি শাড়ি পরে একে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করেন। জামদানি শাড়ি পরে সব অনুষ্ঠানে গিয়ে চালু করেন নতুন ট্রেন্ড। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নিয়মিত জামদানি শাড়ি পরেন। রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক সব অনুষ্ঠানেই। জামদানির পুনর্জাগরণে শুরু থেকে বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। পাশাপাশি আছে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আড়ং, কুমুদিনী, অরণ্য এবং টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরের উল্লেখযোগ্য অবদান। ২০০৮ সালে আড়ং শিল্পকলা একাডেমিতে জামদানির প্রদর্শনী করে তাক লাগিয়ে দেয়। সেই সময়ে উন্নত মানের শাড়ির প্রতি মানুষের আগ্রহ বিশেষভাবে চোখে পড়ে। অনেক দাম দিয়েও মানুষ জামদানি শাড়ি কিনতে শুরু করে। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
জামদানি শাড়ি নিয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ আছে রুবি গজনবীর। তিনি প্রাকৃতিক রঙের জামদানি ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনেন। কারণ তিনি জামদানির সুতা প্রাকৃতিক রঙে রাঙিয়ে তা দিয়ে শাড়ি বুনিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠান ‘অরণ্যর জন্য’। সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে এখনো। কারণ এক সময় প্রাকৃতিক সুতায় প্রাকৃতিক রংই ব্যবহৃত হতো।
কারুশিল্প পরিষদ জামদানি বয়নশিল্পীকে নানাভাবে সহায়তা করে আসছে। পুরস্কৃত করার পাশাপাশি মানসম্পন্ন জামদানি বয়ন ও বাজার সম্প্রসারণের চেষ্টা করে চলেছে। ২০১৪ সালে আমেরিকান অ্যাম্বাসাডরস ফান্ড ফর কালচারাল প্রিজারভেশনের আর্থিক সহায়তায় দুই বছরের প্রকল্পে জামদানির আদি মোটিফ সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। এর আগে জামদানির মোটিফ নিয়ে তেমন কোনো কাজ হয়নি। খাতায় কলমে মোটিফ সংরক্ষণ করা হয়নি। কারণ এই বয়ন সবসময়েই ছিল স্মৃতিনির্ভর। ওস্তাদ কারিগর মুখে মুখে বুলি বলেন, আর সাগরেদ কারিগর সেই অনুযায়ী বুনে চলেন। এভাবে ফুটে ওঠে নকশা। কারুশিল্প পরিষদ ঐ প্রকল্পের আওতায় ২০০ মোটিফ সংরক্ষণ করে। পরবর্তী সময়ে মোটিফগুলো থেকে ৬৭টি সংকলিত হয়েছে ‘ঐতিহ্যের জামদানি নকশা’ বইতে। এই প্রকল্পের অধীনে বয়নশিল্পীদের নিয়ে কর্মশালা করা হয় এবং মোটিফের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। মোটিফ নিয়ে কাজ ভবিষ্যতেও কারুশিল্প পরিষদ অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে। এরপর আবারও ২০১৮ সালে কারুশিল্প পরিষদ শুরু করে জামদানি উৎসবের প্রস্তুতি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায়। এর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাদুঘর থেকে ৫০ থেকে ২৫০ বছরের পুরনো জামদানির ছবি সংগ্রহ করে সেখান থেকে বাছাই করে ৮০টির মতো শাড়ি বোনানো হয়। এক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নেয় চারটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান আড়ং, কুমুদিনী, অরণ্য, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির। পাশাপাশি কারুশিল্প পরিষদের মাধ্যমে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনও উৎসবের জন্য শাড়ি বুনিয়ে নেয়।
বেঙ্গল শিল্পালয়ে ‘ঐতিহ্যের বির্নিমাণ’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত পাঁচ সপ্তাহের প্রদর্শনীতে স্থান পায় এসব অনিন্দসুন্দর জামদানি শাড়ি, ওড়না এবং গজ কাপড়। ছবি দেখে এসব শাড়ি বোনার দক্ষতা দেখান আমাদের বর্তমান প্রজন্মের বয়নশিল্পীরা। এই প্রদর্শনীর জন্য প্রথমবারের মতো ২০০ বাই ২০০ কাউন্টের হাতে কাটা খাদি সুতা দিয়ে জামদানি বোনা হয়। তবে আড়ং ৩০০ কাউন্টের মিহি খাদি সুতা দিয়ে জামদানি বোনার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে শুধু শাড়িতে সীমাবদ্ধ না রেখে জামদানির ব্যবহার বহুমুখী করতে হবে। ড্রেস মেটেরিয়ালে আরও ব্যাপকভাবে কাজ করতে হবে। এই জায়গা থেকে কেউ কেউ বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন। তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনার শারমিন রহমানের তৈরি জামদানির ট্রেঞ্চ কোর্ট গত বছর প্যারিসের একটি প্রদর্শনীতে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এমনকি বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো এই কোর্ট দেখে জামদানির প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা বাংলাদেশে এসে জামদানি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে। জামদানির বিশ্বব্যাপী প্রসারের অংশ হিসাবে কারুশিল্প পরিষদের উদ্যোগে গত অক্টোবর মাসে সোনারগাঁ ‘ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফট সিটি’র মর্যাদা পেয়েছে। ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফট কাউন্সিল প্রদত্ত এই মর্যাদা পাওয়ার জন্য কারুশিল্প পরিষদ ২০১৩ সাল থেকে প্রক্রিয়া শুরু করে। এই মর্যাদা বিশ্বব্যাপী জামদানির প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
তবে একটা বিষয় স্পষ্ট, তাহলো জামদানি গণমানুষের মানুষের কাপড় নয়, হবেও না। এর গুণগত মান নষ্ট করে কম দামে তৈরি করে সাধারণ মানুষের কাপড় বানাতে গেলে হারিয়ে যাবে এই বয়নের বৈশিষ্ট্য এবং ধ্রুপদি গুণাবলি। সারা পৃথিবীতে এমন অনেক জিনিস আছে যা সাধারণ মানুষের নয়।
সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা জামদানি শিল্প বলয়। এখানকার জামদানি বয়নশিল্পীদের ভাগ্য উন্নয়ন ধীরে হলেও ঘটছে। একটা সময় তাদের তেমন কাজ ছিল না। তবে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তারা কাজ পাচ্ছে। কলকাতা, দিল্লি, বোম্বে থেকে তাঁতিদের কাছে জামদানি শাড়ির অর্ডার আসছে। এদেশ থেকে জামদানি তৈরি করে রপ্তানি করা হচ্ছে। তাঁতিরা সরাসরি কাজ করছেন। তবে কর্মী সংকট আছে। অবস্থাপন্ন বয়নশিল্পীদের ছেলেমেয়েরা এখন আর এই পেশায় যুক্ত হতে চায় না। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে নতুন বয়নশিল্পী তৈরি করাও কষ্টকর। তবে এর মধ্যে আবার আশার দিকও আছে। এখন জামদানি শিল্পে নারী বয়নশিল্পীরা আসছেন। এমনকি এরই মধ্যে অনেকেই ওস্তাদ কারিগরও হয়ে উঠেছেন। অথচ এই বছর ১৫ আগের জামদানি বয়ন প্রক্রিয়ায় মেদের সম্পৃক্ততা থাকলেও তাঁতে তারা বসতেন না। জামদানিও এক ধরনের মসলিন। একে বলা হয় নকশাদার মসলিন। অর্থাৎ বোনার সময় একমাত্র জামদানিতেই নকশা তোলা হয়। মসলিনের পেছনে পারস্যের বয়নশিল্পীদের বিশেষ ভূমিকা ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে জামদানির উদ্ভব বলে ধারণা করা হয়। পাশাপাশি জামদানি বয়নশিল্পের প্রসারে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো এর কাঁচামালের সহজপ্রাপ্যতা না থাকা। জামদানি তৈরির জন্য খাদি সুতা এবং মিলের সুতা সহজপ্রাপ্য না।
মসলিন
এক সময় মসলিনের আবেদন ছিল বিশ্বব্যাপী। মসলিন ৩০ থেকে ৩২ ধরনের। যে মসলিন আমাদের দেশে পাওয়া যেত সেটা সেই সময়ে ৪০০ থেকে ৬০০ কাউন্টে তৈরি হতো। এই কাপড় খুবই স্বচ্ছ। এ নিয়ে একটা গল্প চালু আছে; সম্রাট আওরঙ্গজেবের মেয়ে তার সামনে মসলিনের কাপড় পরে বাবার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। আওরঙ্গজেব মেয়েকে বলেন, তুমি এমন বেআব্রু হয়ে এসেছ কেন। অথচ তার কন্যা পরেছিলেন সাত পরতের মসলিন কাপড়।
এখন মসলিনের নতুন করে পুনরুদ্ধার করা অনেক কঠিন। কারণ সেই তুলা কোথায়। মসলিন বোনা হতো ফুটি কার্পাস তুলা থেকে হাতে কাটা সুতা দিয়ে। সেই তুলা আর তার বীজ আর পাওয়া যায় না।
তবে শোনা যায় এর কাছাকাছি এক ধরনের তুলা পাওয়া গেছে। যেটা দিয়ে তুলা উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। এর পুনরুদ্ধারের কাজও চলছে। মসলিনের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ফুটি কার্পাসের অনুসন্ধান চলছে রাজশাহী, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা এবং পাহাড়ি এলাকায়। এই গাছের তুলা ব্যবহার করে মসলিন আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড। ফুটি কার্পাস গাছ পাওয়া গেলে এর বীজ সংগ্রহ করা হবে। যদি ফুটি কার্পাস না পাওয়া যায় তাহলে একসময় যেসব দেশে মসলিন কাপড় রপ্তানি করা হতো, বিশেষ করে ইংল্যান্ড, জাপান, ভারত, পাকিস্তান ও
উজবেকিস্তান থেকে মসলিন কাপড়ের জার্মকিট সংগ্রহ করা হবে। সেই জার্মকিট থেকেও ফুটি কার্পাস গাছ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। মসলিন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ‘সোনালি ঐতিহ্য মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার’ নামে প্রকল্প নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি সংস্থা তাঁত বোর্ড। প্রকল্পের আওতায় মসলিন শাড়ি ও কাপড় তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। তাঁত বোর্ড, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্স, বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি ও বস্ত্র পরিদপ্তর প্রভৃতি সংস্থার সহযোগিতায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
ঐতিহ্যবাহী মসলিন কাপড় ফুটি কার্পাস থেকেই তৈরি হয়েছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
একসময় উন্নত মানের কার্পাস জন্মাত কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে। সপ্তদশ শতকে মসলিন শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায়। তবে এর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে মোগল আমলে। ওই সময়ে মসলিন তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল ঢাকা, সোনারগাঁ, ধামরাই, টিটবাদি, বাজিতপুর ও জঙ্গলবাড়ি।
বিলুপ্ত সেই মসলিনের ফিরে আসার পথ তৈরি করেছে সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান দৃক। শত বছর পর মসলিন ফিরে আসছে বাংলাদেশে। এদিকে ঐতিহ্যবাহী মসলিন সুতার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের কাজ চলছে।
দৃকের মসলিন প্রকল্প
২০১৩ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মসলিন কাপড় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় দৃক। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং মসলিন প্রকল্পের উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম তিন বছর ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে মসলিন কাপড় নিয়ে গবেষণা ও অধ্যয়ন করেন। অনুসন্ধান করেন আসল মসলিন কাপড়ের। এক পর্যায়ে ভারতের জয়পুরে খুঁজে পান মসলিন কাপড় তৈরির তুলা গাছ ‘ফুটি কার্পাস’। সেখান থেকে বীজ নিয়ে এসে গাজীপুরের শ্রীপুরের তুলা উন্নয়ন বোর্ড গবেষণা কেন্দ্রে নতুন করে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে এ গাছের চাষ শুরু করে দৃক। বিলুপ্ত আসল ফুটি কার্পাসের সঙ্গে এ গাছের কোনো তারতম্য আছে কি-না তা জানতেও চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। গত বছর এখানে প্রায় ৩০০ গাছের আবাদ হয়। এ বছর প্রায় ১৫০টি গাছের চাষাবাদ হচ্ছে। আসল ফুটি কার্পাস গাছ বছরে দু’বার চাষ হতো। এ গাছে বছরে একবার চাষ হচ্ছে। সাধারণত জুলাই মাসে ফুটি কার্পাস হয় এবং ডিসেম্বরে গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা হয়। দৃক এসব গাছ থেকে তুলা সংগ্রহ করে ভারত থেকে সুতা বানিয়ে নিয়ে আসছে। সেই সুতা দিয়ে দেশীয় তাঁতে মসলিন কাপড় তৈরি করা হচ্ছে।
সর্বনি¤œ ২৫০ কাউন্ট সুতার তৈরি কাপড়কে মসলিন বলা হয়। ফুটি কার্পাস গাছের তুলা থেকে দৃক সাত মাস সময় নিয়ে ৩০০ কাউন্ট সুতার মসলিন কাপড় তৈরি করে। এ কাজে নিয়োজিত ছিল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও ডেমরার তাঁতিরা। প্রস্তুতকৃত সব কাপড়ই শাড়ি। প্রতিষ্ঠানটি এসব কাপড়কে ‘নতুন যুগের মসলিন’ নাম দিয়েছে। দৃকের পরিকল্পনা রয়েছে, তাঁতিরা অভিজ্ঞ হয়ে ওঠার পর ৪০০ এবং ৫০০ কাউন্ট সুতার মসলিন কাপড় তৈরি করার। মোগলরা ৬০০ কাউন্ট সুতার তৈরি মসলিন ব্যবহার করত, যাকে তারা ‘মলমল খাস’ নামে ডাকত। আজকাল বাজারে যে জামদানি পাওয়া যায় তা মসলিনেরই একটি ধারা। দৃকের উদ্যোগে একটি মসলিন শাড়ি তৈরিতে ব্যয় হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। তাই এ শাড়ি সাধারণ ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে না।
বাংলাদেশের তাঁতিরা সাধারণত ৩০ কাউন্ট সুতার কাপড় তৈরি করে। প্রথম দিকে ৩০০ কাউন্ট সুতার কাপড় তৈরিই হতো না। বারবার ছিঁড়ে যেত। অনেক ধৈর্য নিয়ে এ কাপড় তৈরির পর তাঁতিরা এখন খুশি। মসলিনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দৃকের এ উদ্যোগে বাংলাদেশে মসলিনের ফিরে আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সুতা যত বেশি সূক্ষ্ম হবে তত মসলিন কাপড়ের গুণগত মান বাড়বে। আমরা আশাবাদী হতে পারি একদিন ঐতিহ্যবাহী মসলিন আবার স্বমহিমায় ফিরে আসবে।
শেয়ার করুন
মোহসীনা লাইজু | ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০

বাংলাদেশের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য টেক্সটাইল জামদানি। মসলিনের অসংখ্য ধরনের সর্বশেষটি হলো জামদানি। এর ইতিহাস কয়েকশ বছরের। এক সময় প্রায় হারিয়ে যেতে বসা জামদানির পুনজাগরনের উদ্যোগ আসে আশির দশকে। তৎকালীন ফার্স্টলেডি বেগম রওশন এরশাদ জামদানি শাড়ি পরে একে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করেন। জামদানি শাড়ি পরে সব অনুষ্ঠানে গিয়ে চালু করেন নতুন ট্রেন্ড। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নিয়মিত জামদানি শাড়ি পরেন। রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক সব অনুষ্ঠানেই। জামদানির পুনর্জাগরণে শুরু থেকে বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। পাশাপাশি আছে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আড়ং, কুমুদিনী, অরণ্য এবং টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরের উল্লেখযোগ্য অবদান। ২০০৮ সালে আড়ং শিল্পকলা একাডেমিতে জামদানির প্রদর্শনী করে তাক লাগিয়ে দেয়। সেই সময়ে উন্নত মানের শাড়ির প্রতি মানুষের আগ্রহ বিশেষভাবে চোখে পড়ে। অনেক দাম দিয়েও মানুষ জামদানি শাড়ি কিনতে শুরু করে। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
জামদানি শাড়ি নিয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ আছে রুবি গজনবীর। তিনি প্রাকৃতিক রঙের জামদানি ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনেন। কারণ তিনি জামদানির সুতা প্রাকৃতিক রঙে রাঙিয়ে তা দিয়ে শাড়ি বুনিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠান ‘অরণ্যর জন্য’। সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে এখনো। কারণ এক সময় প্রাকৃতিক সুতায় প্রাকৃতিক রংই ব্যবহৃত হতো।
কারুশিল্প পরিষদ জামদানি বয়নশিল্পীকে নানাভাবে সহায়তা করে আসছে। পুরস্কৃত করার পাশাপাশি মানসম্পন্ন জামদানি বয়ন ও বাজার সম্প্রসারণের চেষ্টা করে চলেছে। ২০১৪ সালে আমেরিকান অ্যাম্বাসাডরস ফান্ড ফর কালচারাল প্রিজারভেশনের আর্থিক সহায়তায় দুই বছরের প্রকল্পে জামদানির আদি মোটিফ সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। এর আগে জামদানির মোটিফ নিয়ে তেমন কোনো কাজ হয়নি। খাতায় কলমে মোটিফ সংরক্ষণ করা হয়নি। কারণ এই বয়ন সবসময়েই ছিল স্মৃতিনির্ভর। ওস্তাদ কারিগর মুখে মুখে বুলি বলেন, আর সাগরেদ কারিগর সেই অনুযায়ী বুনে চলেন। এভাবে ফুটে ওঠে নকশা। কারুশিল্প পরিষদ ঐ প্রকল্পের আওতায় ২০০ মোটিফ সংরক্ষণ করে। পরবর্তী সময়ে মোটিফগুলো থেকে ৬৭টি সংকলিত হয়েছে ‘ঐতিহ্যের জামদানি নকশা’ বইতে। এই প্রকল্পের অধীনে বয়নশিল্পীদের নিয়ে কর্মশালা করা হয় এবং মোটিফের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। মোটিফ নিয়ে কাজ ভবিষ্যতেও কারুশিল্প পরিষদ অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে। এরপর আবারও ২০১৮ সালে কারুশিল্প পরিষদ শুরু করে জামদানি উৎসবের প্রস্তুতি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায়। এর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাদুঘর থেকে ৫০ থেকে ২৫০ বছরের পুরনো জামদানির ছবি সংগ্রহ করে সেখান থেকে বাছাই করে ৮০টির মতো শাড়ি বোনানো হয়। এক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নেয় চারটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান আড়ং, কুমুদিনী, অরণ্য, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির। পাশাপাশি কারুশিল্প পরিষদের মাধ্যমে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনও উৎসবের জন্য শাড়ি বুনিয়ে নেয়।
বেঙ্গল শিল্পালয়ে ‘ঐতিহ্যের বির্নিমাণ’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত পাঁচ সপ্তাহের প্রদর্শনীতে স্থান পায় এসব অনিন্দসুন্দর জামদানি শাড়ি, ওড়না এবং গজ কাপড়। ছবি দেখে এসব শাড়ি বোনার দক্ষতা দেখান আমাদের বর্তমান প্রজন্মের বয়নশিল্পীরা। এই প্রদর্শনীর জন্য প্রথমবারের মতো ২০০ বাই ২০০ কাউন্টের হাতে কাটা খাদি সুতা দিয়ে জামদানি বোনা হয়। তবে আড়ং ৩০০ কাউন্টের মিহি খাদি সুতা দিয়ে জামদানি বোনার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে শুধু শাড়িতে সীমাবদ্ধ না রেখে জামদানির ব্যবহার বহুমুখী করতে হবে। ড্রেস মেটেরিয়ালে আরও ব্যাপকভাবে কাজ করতে হবে। এই জায়গা থেকে কেউ কেউ বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন। তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনার শারমিন রহমানের তৈরি জামদানির ট্রেঞ্চ কোর্ট গত বছর প্যারিসের একটি প্রদর্শনীতে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এমনকি বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো এই কোর্ট দেখে জামদানির প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা বাংলাদেশে এসে জামদানি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে। জামদানির বিশ্বব্যাপী প্রসারের অংশ হিসাবে কারুশিল্প পরিষদের উদ্যোগে গত অক্টোবর মাসে সোনারগাঁ ‘ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফট সিটি’র মর্যাদা পেয়েছে। ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফট কাউন্সিল প্রদত্ত এই মর্যাদা পাওয়ার জন্য কারুশিল্প পরিষদ ২০১৩ সাল থেকে প্রক্রিয়া শুরু করে। এই মর্যাদা বিশ্বব্যাপী জামদানির প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
তবে একটা বিষয় স্পষ্ট, তাহলো জামদানি গণমানুষের মানুষের কাপড় নয়, হবেও না। এর গুণগত মান নষ্ট করে কম দামে তৈরি করে সাধারণ মানুষের কাপড় বানাতে গেলে হারিয়ে যাবে এই বয়নের বৈশিষ্ট্য এবং ধ্রুপদি গুণাবলি। সারা পৃথিবীতে এমন অনেক জিনিস আছে যা সাধারণ মানুষের নয়।
সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা জামদানি শিল্প বলয়। এখানকার জামদানি বয়নশিল্পীদের ভাগ্য উন্নয়ন ধীরে হলেও ঘটছে। একটা সময় তাদের তেমন কাজ ছিল না। তবে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তারা কাজ পাচ্ছে। কলকাতা, দিল্লি, বোম্বে থেকে তাঁতিদের কাছে জামদানি শাড়ির অর্ডার আসছে। এদেশ থেকে জামদানি তৈরি করে রপ্তানি করা হচ্ছে। তাঁতিরা সরাসরি কাজ করছেন। তবে কর্মী সংকট আছে। অবস্থাপন্ন বয়নশিল্পীদের ছেলেমেয়েরা এখন আর এই পেশায় যুক্ত হতে চায় না। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে নতুন বয়নশিল্পী তৈরি করাও কষ্টকর। তবে এর মধ্যে আবার আশার দিকও আছে। এখন জামদানি শিল্পে নারী বয়নশিল্পীরা আসছেন। এমনকি এরই মধ্যে অনেকেই ওস্তাদ কারিগরও হয়ে উঠেছেন। অথচ এই বছর ১৫ আগের জামদানি বয়ন প্রক্রিয়ায় মেদের সম্পৃক্ততা থাকলেও তাঁতে তারা বসতেন না। জামদানিও এক ধরনের মসলিন। একে বলা হয় নকশাদার মসলিন। অর্থাৎ বোনার সময় একমাত্র জামদানিতেই নকশা তোলা হয়। মসলিনের পেছনে পারস্যের বয়নশিল্পীদের বিশেষ ভূমিকা ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে জামদানির উদ্ভব বলে ধারণা করা হয়। পাশাপাশি জামদানি বয়নশিল্পের প্রসারে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো এর কাঁচামালের সহজপ্রাপ্যতা না থাকা। জামদানি তৈরির জন্য খাদি সুতা এবং মিলের সুতা সহজপ্রাপ্য না।
মসলিন
এক সময় মসলিনের আবেদন ছিল বিশ্বব্যাপী। মসলিন ৩০ থেকে ৩২ ধরনের। যে মসলিন আমাদের দেশে পাওয়া যেত সেটা সেই সময়ে ৪০০ থেকে ৬০০ কাউন্টে তৈরি হতো। এই কাপড় খুবই স্বচ্ছ। এ নিয়ে একটা গল্প চালু আছে; সম্রাট আওরঙ্গজেবের মেয়ে তার সামনে মসলিনের কাপড় পরে বাবার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। আওরঙ্গজেব মেয়েকে বলেন, তুমি এমন বেআব্রু হয়ে এসেছ কেন। অথচ তার কন্যা পরেছিলেন সাত পরতের মসলিন কাপড়।
এখন মসলিনের নতুন করে পুনরুদ্ধার করা অনেক কঠিন। কারণ সেই তুলা কোথায়। মসলিন বোনা হতো ফুটি কার্পাস তুলা থেকে হাতে কাটা সুতা দিয়ে। সেই তুলা আর তার বীজ আর পাওয়া যায় না।
তবে শোনা যায় এর কাছাকাছি এক ধরনের তুলা পাওয়া গেছে। যেটা দিয়ে তুলা উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। এর পুনরুদ্ধারের কাজও চলছে। মসলিনের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ফুটি কার্পাসের অনুসন্ধান চলছে রাজশাহী, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা এবং পাহাড়ি এলাকায়। এই গাছের তুলা ব্যবহার করে মসলিন আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড। ফুটি কার্পাস গাছ পাওয়া গেলে এর বীজ সংগ্রহ করা হবে। যদি ফুটি কার্পাস না পাওয়া যায় তাহলে একসময় যেসব দেশে মসলিন কাপড় রপ্তানি করা হতো, বিশেষ করে ইংল্যান্ড, জাপান, ভারত, পাকিস্তান ও
উজবেকিস্তান থেকে মসলিন কাপড়ের জার্মকিট সংগ্রহ করা হবে। সেই জার্মকিট থেকেও ফুটি কার্পাস গাছ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। মসলিন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ‘সোনালি ঐতিহ্য মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার’ নামে প্রকল্প নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি সংস্থা তাঁত বোর্ড। প্রকল্পের আওতায় মসলিন শাড়ি ও কাপড় তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। তাঁত বোর্ড, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্স, বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি ও বস্ত্র পরিদপ্তর প্রভৃতি সংস্থার সহযোগিতায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
ঐতিহ্যবাহী মসলিন কাপড় ফুটি কার্পাস থেকেই তৈরি হয়েছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
একসময় উন্নত মানের কার্পাস জন্মাত কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে। সপ্তদশ শতকে মসলিন শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায়। তবে এর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে মোগল আমলে। ওই সময়ে মসলিন তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল ঢাকা, সোনারগাঁ, ধামরাই, টিটবাদি, বাজিতপুর ও জঙ্গলবাড়ি।
বিলুপ্ত সেই মসলিনের ফিরে আসার পথ তৈরি করেছে সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান দৃক। শত বছর পর মসলিন ফিরে আসছে বাংলাদেশে। এদিকে ঐতিহ্যবাহী মসলিন সুতার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের কাজ চলছে।
দৃকের মসলিন প্রকল্প
২০১৩ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মসলিন কাপড় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় দৃক। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং মসলিন প্রকল্পের উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম তিন বছর ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে মসলিন কাপড় নিয়ে গবেষণা ও অধ্যয়ন করেন। অনুসন্ধান করেন আসল মসলিন কাপড়ের। এক পর্যায়ে ভারতের জয়পুরে খুঁজে পান মসলিন কাপড় তৈরির তুলা গাছ ‘ফুটি কার্পাস’। সেখান থেকে বীজ নিয়ে এসে গাজীপুরের শ্রীপুরের তুলা উন্নয়ন বোর্ড গবেষণা কেন্দ্রে নতুন করে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে এ গাছের চাষ শুরু করে দৃক। বিলুপ্ত আসল ফুটি কার্পাসের সঙ্গে এ গাছের কোনো তারতম্য আছে কি-না তা জানতেও চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। গত বছর এখানে প্রায় ৩০০ গাছের আবাদ হয়। এ বছর প্রায় ১৫০টি গাছের চাষাবাদ হচ্ছে। আসল ফুটি কার্পাস গাছ বছরে দু’বার চাষ হতো। এ গাছে বছরে একবার চাষ হচ্ছে। সাধারণত জুলাই মাসে ফুটি কার্পাস হয় এবং ডিসেম্বরে গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা হয়। দৃক এসব গাছ থেকে তুলা সংগ্রহ করে ভারত থেকে সুতা বানিয়ে নিয়ে আসছে। সেই সুতা দিয়ে দেশীয় তাঁতে মসলিন কাপড় তৈরি করা হচ্ছে।
সর্বনি¤œ ২৫০ কাউন্ট সুতার তৈরি কাপড়কে মসলিন বলা হয়। ফুটি কার্পাস গাছের তুলা থেকে দৃক সাত মাস সময় নিয়ে ৩০০ কাউন্ট সুতার মসলিন কাপড় তৈরি করে। এ কাজে নিয়োজিত ছিল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও ডেমরার তাঁতিরা। প্রস্তুতকৃত সব কাপড়ই শাড়ি। প্রতিষ্ঠানটি এসব কাপড়কে ‘নতুন যুগের মসলিন’ নাম দিয়েছে। দৃকের পরিকল্পনা রয়েছে, তাঁতিরা অভিজ্ঞ হয়ে ওঠার পর ৪০০ এবং ৫০০ কাউন্ট সুতার মসলিন কাপড় তৈরি করার। মোগলরা ৬০০ কাউন্ট সুতার তৈরি মসলিন ব্যবহার করত, যাকে তারা ‘মলমল খাস’ নামে ডাকত। আজকাল বাজারে যে জামদানি পাওয়া যায় তা মসলিনেরই একটি ধারা। দৃকের উদ্যোগে একটি মসলিন শাড়ি তৈরিতে ব্যয় হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। তাই এ শাড়ি সাধারণ ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে না।
বাংলাদেশের তাঁতিরা সাধারণত ৩০ কাউন্ট সুতার কাপড় তৈরি করে। প্রথম দিকে ৩০০ কাউন্ট সুতার কাপড় তৈরিই হতো না। বারবার ছিঁড়ে যেত। অনেক ধৈর্য নিয়ে এ কাপড় তৈরির পর তাঁতিরা এখন খুশি। মসলিনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দৃকের এ উদ্যোগে বাংলাদেশে মসলিনের ফিরে আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সুতা যত বেশি সূক্ষ্ম হবে তত মসলিন কাপড়ের গুণগত মান বাড়বে। আমরা আশাবাদী হতে পারি একদিন ঐতিহ্যবাহী মসলিন আবার স্বমহিমায় ফিরে আসবে।