লেবুর হরেক গুণ
এ বি সিদ্দিক, পুষ্টিবিদ | ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০
লেবু অতি পরিচিত ফল। দেশে বিভিন্ন ধরনের লেবু পাওয়া যায়। তার মধ্যে পাতি লেবু, বাতাবি লেবু, কাগজি লেবু উল্লেখযোগ্য। লেবুতে ভিটামিন সি ছাড়াও রয়েছে ফ্ল্যাভনয়েডস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানসমূহ। সালাদ, জ্যুস, রান্নাবান্না, চিকিৎসাসহ নানা কাজে লেবু ব্যবহৃত হয়। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদির তৈরি করা রোগ দূর ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে লেবু। লেবুর ভিটামিন সি শরীরে আয়রন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
পুষ্টিগুণ : লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। এছাড়াও ভিটামিন বি, ফলিক এসিড, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে।
স্বাস্থ্যতথ্য
লিভার পরিষ্কার ও হজমে সহায়তা করে। শরীর থেকে অযাচিত পদার্থ এবং টক্সিন বের করে দেয় লেবুর রস। ত্বকের কুঞ্চন এবং দাগ দূর করে লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ব্রণ বা অ্যাকনে সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করে। তারুণ্য ধরে রাখতেও কার্যকর। লেবু ত্বকের ক্ষত সারায়। ত্বকে কোলাজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ত্বক উজ্জ্বল হয় । ত্বকের পোড়া ভাব যেমন দূর করতে পারে লেবু, তেমনি চোখের চারপাশের কালো দাগও মিলিয়ে দেয়। শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে। শরীরে মূত্রের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং এর মাধ্যমে খুব দ্রুত ক্ষতিকর এবং বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লেবুতে থাকে অনেকটা ভিটামিন সি এবং লৌহ যা ঠা-াজ্বর জাতীয় রোগের বিরুদ্ধে ভীষণ কার্যকর। এতে আরও আছে পটাসিয়াম যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকে সক্রিয় রাখে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এতে থাকা অ্যাসকরবিক এসিড প্রদাহ দূর এবং অ্যাজমা জাতীয় শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমায়। এছাড়াও কফ কমাতে সাহায্য করে লেবু।
এসিডিটি থাকলে
এসিডিটি হলে লেবু খাওয়া যাবে না কথাটা পুরাপুরি সঠিক নয়। যদিও লেবু এসিডিক ফল কিন্তু এটি শরীরকে অ্যালকালাইন করতে সহায়তা করে। লেবুতে এসিডের সঙ্গে সঙ্গে কিছু ক্ষারকীয় লবণ থাকে। ফলে লেবুর রস বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় রক্তবাহিকায় অ্যালকালাইন অ্যাশে পরিণত হয়। রক্তের পিএইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং এসিডিটি হ্রাস করে দেয়। শরীরের এসিডিটির মাত্রা কমে যায়। তাই এসিডিটি হলে লেবু খাওয়া খারাপ তো নয়ই বরং এসিডিটি কমাতে বেশ উপকারী। যাদের এসিডিটির সমস্যা আছে তারা কুসুম গরম পানিতে লেবু চিপে সকালে খেতে পারেন। খালি পেটে না খেয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে তারপর খাওয়া ভালো।
কীভাবে লেবু খাবেন
অর্ধেকটা তাজা লেবু কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হবে। গ্রিন টি’র সঙ্গে লেবু মিশিয়ে অথবা লেবু চা খাওয়া যেতে পারে। ভাত বা সালাদে লেবু মিশিয়ে খাওয়া ভালো। প্রচ- গরমে খেতে পারেন বরফকুচি দিয়ে লেবুর শরবত । কুসুম গরম পানিতে লেবু ও এক টেবিল চামচ মধু শরীরকে চাঙ্গা করার বেশ ভালো টনিক। ছোলার ডাল সেদ্ধ অথবা যে কোনো ধরনের ভর্তা মাখাতে লেবুর খোসা কুচি কুচি করে কেটে দিলে খাবারের স্বাদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যোগ হবে।
জেনে রাখুন
লেবু কেটে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলা ভালো। যাদের এসিডিটির সমস্যা তারা লেবুর শরবত খাওয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোনো মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য না মেশানো হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। ওজন কমানোর জন্য লেবুর শরবতে চিনি বা লবণ ব্যবহার করা যাবে না। ব্লাডপ্রেশারের রোগীদের অবশ্যই লেবুর শরবতে লবণ মেশানো পরিহার করতে হবে। যাদের কিডনি ও গলব্লাডারের সমস্যা আছে তাদের লেবুর খোসা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। খুব বেশি ঘন লেবুর রস দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে ফেলতে পারে। তাই বেশি ঘন লেবুর শরবত খেলে স্ট্র দিয়ে খাওয়া ভালো। এছাড়া নিয়মিত লেবুর শরবত খেলেও স্ট্র ব্যবহার করাই উত্তম।
শেয়ার করুন
এ বি সিদ্দিক, পুষ্টিবিদ | ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০

লেবু অতি পরিচিত ফল। দেশে বিভিন্ন ধরনের লেবু পাওয়া যায়। তার মধ্যে পাতি লেবু, বাতাবি লেবু, কাগজি লেবু উল্লেখযোগ্য। লেবুতে ভিটামিন সি ছাড়াও রয়েছে ফ্ল্যাভনয়েডস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানসমূহ। সালাদ, জ্যুস, রান্নাবান্না, চিকিৎসাসহ নানা কাজে লেবু ব্যবহৃত হয়। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদির তৈরি করা রোগ দূর ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে লেবু। লেবুর ভিটামিন সি শরীরে আয়রন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
পুষ্টিগুণ : লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। এছাড়াও ভিটামিন বি, ফলিক এসিড, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে।
স্বাস্থ্যতথ্য
লিভার পরিষ্কার ও হজমে সহায়তা করে। শরীর থেকে অযাচিত পদার্থ এবং টক্সিন বের করে দেয় লেবুর রস। ত্বকের কুঞ্চন এবং দাগ দূর করে লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ব্রণ বা অ্যাকনে সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করে। তারুণ্য ধরে রাখতেও কার্যকর। লেবু ত্বকের ক্ষত সারায়। ত্বকে কোলাজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ত্বক উজ্জ্বল হয় । ত্বকের পোড়া ভাব যেমন দূর করতে পারে লেবু, তেমনি চোখের চারপাশের কালো দাগও মিলিয়ে দেয়। শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে। শরীরে মূত্রের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং এর মাধ্যমে খুব দ্রুত ক্ষতিকর এবং বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লেবুতে থাকে অনেকটা ভিটামিন সি এবং লৌহ যা ঠা-াজ্বর জাতীয় রোগের বিরুদ্ধে ভীষণ কার্যকর। এতে আরও আছে পটাসিয়াম যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকে সক্রিয় রাখে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এতে থাকা অ্যাসকরবিক এসিড প্রদাহ দূর এবং অ্যাজমা জাতীয় শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমায়। এছাড়াও কফ কমাতে সাহায্য করে লেবু।
এসিডিটি থাকলে
এসিডিটি হলে লেবু খাওয়া যাবে না কথাটা পুরাপুরি সঠিক নয়। যদিও লেবু এসিডিক ফল কিন্তু এটি শরীরকে অ্যালকালাইন করতে সহায়তা করে। লেবুতে এসিডের সঙ্গে সঙ্গে কিছু ক্ষারকীয় লবণ থাকে। ফলে লেবুর রস বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় রক্তবাহিকায় অ্যালকালাইন অ্যাশে পরিণত হয়। রক্তের পিএইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং এসিডিটি হ্রাস করে দেয়। শরীরের এসিডিটির মাত্রা কমে যায়। তাই এসিডিটি হলে লেবু খাওয়া খারাপ তো নয়ই বরং এসিডিটি কমাতে বেশ উপকারী। যাদের এসিডিটির সমস্যা আছে তারা কুসুম গরম পানিতে লেবু চিপে সকালে খেতে পারেন। খালি পেটে না খেয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে তারপর খাওয়া ভালো।
কীভাবে লেবু খাবেন
অর্ধেকটা তাজা লেবু কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হবে। গ্রিন টি’র সঙ্গে লেবু মিশিয়ে অথবা লেবু চা খাওয়া যেতে পারে। ভাত বা সালাদে লেবু মিশিয়ে খাওয়া ভালো। প্রচ- গরমে খেতে পারেন বরফকুচি দিয়ে লেবুর শরবত । কুসুম গরম পানিতে লেবু ও এক টেবিল চামচ মধু শরীরকে চাঙ্গা করার বেশ ভালো টনিক। ছোলার ডাল সেদ্ধ অথবা যে কোনো ধরনের ভর্তা মাখাতে লেবুর খোসা কুচি কুচি করে কেটে দিলে খাবারের স্বাদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যোগ হবে।
জেনে রাখুন
লেবু কেটে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলা ভালো। যাদের এসিডিটির সমস্যা তারা লেবুর শরবত খাওয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোনো মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য না মেশানো হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। ওজন কমানোর জন্য লেবুর শরবতে চিনি বা লবণ ব্যবহার করা যাবে না। ব্লাডপ্রেশারের রোগীদের অবশ্যই লেবুর শরবতে লবণ মেশানো পরিহার করতে হবে। যাদের কিডনি ও গলব্লাডারের সমস্যা আছে তাদের লেবুর খোসা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। খুব বেশি ঘন লেবুর রস দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে ফেলতে পারে। তাই বেশি ঘন লেবুর শরবত খেলে স্ট্র দিয়ে খাওয়া ভালো। এছাড়া নিয়মিত লেবুর শরবত খেলেও স্ট্র ব্যবহার করাই উত্তম।