
ব্রন বা ব্ল্যাক হেডসের সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। এর থেকে সমাধানের নানা উপায়ও জানি। কিন্তু অনেকের ত্বকেও হোয়াইট হেডসের সমস্যা দেখা দেয়। অথচ হোয়াইট হেডসের সমস্যা নিয়ে ভাবি না। ত্বক ভালো রাখতে হোয়াইট হেডস দূর করাও জরুরি। ত্বকের হোয়াইট হেডস হলো এক ধরনের অ্যাকনে যা ক্লগড হেয়ার ফলিকলের জন্য হয়। ত্বকের মরা কোষ, ব্যাকটেরিয়া এবং ধুলোময়লা আমাদের ত্বকের ওপরের হেয়ার ফলিকলসে জমে যায় এর ফলে এক ধরনের সোলেন গ্রোথ হয়। সাধারণত ত্বকে অতিরিক্ত তেল এবং ব্যাকটেরিয়া জমা হয়, তখনই দেখা দেয় হোয়াইট হেডস। বয়ঃসন্ধির সময় থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক, সবারই এই সমস্যা হতে পারে। মুখের পাশাপাশি ঘাড়ে, গলায়, পিঠে এবং হাতেও হোয়াইট হেডস হয়।
কী করবেন
ত্বকে কখনো সেন্টেড সাবান বা ক্লিনজার ব্যবহার করবেন না। ক্লিনজার কেনার সময়ে দেখে নিন, তাতে স্যালিসিলিক অ্যাসিড বা আলফা হাইড্রোক্সিল অ্যাসিড আছে কি না। কারণ এতে থাকা উপাদান বন্ধ লোমকূপের মুখ খুলতে সাহায্য করে। ত্বক পরিষ্কার রাখা মানেই যে বারবার মুখ ধুতে হবে এমন নয়। বারবার মুখ ধোয়ায় অ্যাকনে এবং ইনফ্ল্যামেশনের সমস্যা বাড়ে। সপ্তাহে দু থেকে তিনবার ত্বক এক্সফোলিয়েট করা একান্তই জরুরি। ত্বকের ধরন অনুযায়ী স্ক্রাব ব্যবহার করতে হবে। এক্সফোলিয়েশন লোমকূপে জমে থাকা ময়লা যেমন বের করে তেমন ত্বকে কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। এক্সফোলিয়েশনের পরে অবশ্যই ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। না হলে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। ময়েশ্চারাইজার ত্বক প্রোটেক্টিভ লোশন হিসেবেও কাজ করে। বারবার হোয়াইট হেডসে হাত দেওয়া বা খুঁটবেন না। এতে সমস্যা আরও বেড়ে যাবে, একটা সময় ত্বকে দাগ পড়ে যায়। হোয়াইট হেডসের সমস্যা খুব বেড়ে গেলে ত্বক বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে পারেন। মাসে অন্তত একবার পারলারে গিয়ে হোয়াইট হেডস দূর করে নিতে পারেন। হোয়াইট হেডস দূর করতে ঘরে বানানো ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
মধু ও ডিমের প্যাক : মধুতে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান থাকে। যা ত্বকের হোয়াইট হেডসের আকার এবং ইনফ্ল্যামেশন কমাতেও সাহায্য করে। ত্বকের অতিরিক্ত তেলও শুষে নেয়। ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে এক টেবিল চামচ দুধ ও দুই টেবিল চামচ মধু মেশান। এরপরে ডিমের হলুদ অংশ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। এই প্যাক অতিরিক্ত তেল ও হোয়াইট হেডস তুলে নেবে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় স্টাইল। একসময়কার লম্বা ও ঝোলা ব্যাগগুলো ক্রমেই আধুনিক ও স্টাইলিস্ট হচ্ছে। শুধু ভ্রমণ নয়, হাল আমলে ফ্যাশনপ্রেমী তরুণ-তরুণীদের পিঠে এখন ঝুলতে দেখা যাচ্ছে নানা ধরনের ব্যাকপ্যাক। এসব ব্যাকপ্যাক একটা সময় পর্যন্ত তরুণরা বেশি ব্যবহার করলেও আজকাল স্টাইলিস্ট নানা ধরনের ব্যাকপ্যাক দেখা যাচ্ছে মেয়েদের ফ্যাশনে। লিখেছেন জাহান রিসা
ফিটফাট পোশাক, জুতসই সানগ্লাস, স্টাইলিস্ট জুতোতেই ফ্যাশনেবল এই শব্দটা আটকে নেই আপনার। পারফেক্ট আউটফিটে নতুনত্ব দিতে পারে সুন্দর একটা ব্যাগ। সময়োপযোগী স্টাইলিস্ট ও মানানসই ব্যাগের ব্যাপারে সবাই কমবেশি সচেতন। মানুষের প্রয়োজনের তাগিদে ব্যাগের আকারেও এসেছে ভিন্নতা। ডাবল হ্যান্ডেল থাকে এবং দুই কাঁধে নেওয়া যায় এমন ব্যাগকে আমরা ব্যাকপ্যাক নামে চিনি। এ সময়ে মেয়েদের ব্যাগগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় ও আরামদায়কের দিক থেকে বিবেচনা করলে ব্যাকপ্যাক সবার প্রথমে আসে, কারণ এ ব্যাগ নেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিশেষ সুবিধা এটি দুই কাঁধে ভর করে পিঠের ওপর নেওয়া যায়, ফলে ব্যাগের ওজন অনেকটাই কমে আসে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বহনে বাহারি এ ব্যাগগুলো অনন্য। বেশির ভাগ ব্যাকপ্যাকই ওয়াটারপ্রুফ, ফলে ভিজে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। সব বয়সীর পছন্দের তালিকায় আছে ব্যাকপ্যাক। প্রতিটি ব্যাকপ্যাকের একাধিক চেম্বার থাকে এবং চেম্বারগুলো বিভিন্ন আকারের হয়, যাতে ব্যবহারকারী তার পছন্দের জিনিসগুলো ঠিক স্থানে রেখে নিশ্চিন্তে বহন করতে পারে। স্কুল ও কলেজপড়–য়া মেয়েদের বই সঙ্গে রাখার প্রয়োজন হয়, তাই তারা একটু বড় সাইজের ব্যাগ বেশি পছন্দ করে। বড় সাইজের ব্যাগগুলোর মেইন চেম্বারটা বেশ বড় হয়। এতে সহজে অনেক বই রাখা যায়। এ ধরনের ব্যাগ অনেকে ল্যাপটপ, কাপড়চোপড় কিংবা অন্য জিনিসপত্র বহনে ব্যবহার করেন। কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের মেয়েরা একটু ছোট সাইজের ব্যাগ বহনে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অধিক জিনিসপত্র আনার ক্ষেত্রে কাঁধে ঝোলানো বড় ব্যাকপ্যাকগুলোই বেশি ব্যবহার করেন। সব ধরনের জিনিসপত্র একসঙ্গে গুছিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাকপ্যাকের সুবিধাই বেশি। আকারে বৈচিত্র্যময়তার পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি ব্যাগেই টিফিন বক্স, ছাতা, ওয়াটার পট নেওয়ার সুবিধা তো আছেই।
লেদারের তৈরি ব্যাকপ্যাকগুলোর নকশা খুবই সাধারণ। প্রায় প্রতিটি ব্যাগে নানাভাবে ব্যবহার করার সুবিধা রয়েছে। কারণ দুই থেকে চার ধরনের বেল্ট থাকে। তাই খুব সহজেই কখনো কাঁধে ঝুলিয়ে, কখনো বা পিঠে ভর করে, আবার কখনো বা হ্যান্ডব্যাগের মতো হাতে নেওয়া যায়। এ ছাড়া আর্টিফিশিয়াল লেদারের বেশ কিছু ব্যাকপ্যাক পাওয়া যায়, যেগুলো লেদারের ব্যাগের মতোই আকর্ষণীয়। ফেব্রিকসে তৈরি ব্যাগগুলো খুব কালারফুল, কারণ এগুলোর ওপর বাহারি সব ডিজাইন থাকে। যেমন গ্লিটারের তৈরি বিভিন্ন রকমের পুতুল, মানুষের মুখোশ, বাড়ি, গাছপালা, পশুপাখি, নানা ধরনের দৃশ্য, কখনো বা হাস্যোজ্জ্বল ইমোজি। এ ছাড়া কখনো কখনো এমব্রয়ডারির কাজ করার নানান ডিজাইন চোখে পড়ে। বেশির ভাগ ব্যাগগুলোতে চেইনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া রংবেরঙের পুতুল, আর্টিফিশিয়াল স্টার ইত্যাদি ঝোলানো থাকে।
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র স্বাচ্ছন্দ্যে বহন করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকপ্যাক পাওয়া যাচ্ছে। ল্যাপটপ রাখা কিংবা ক্লাসে ব্যবহারের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যাকপ্যাক। এ ছাড়া হাতে ঝোলানোর জন্যও রয়েছে নানা ধরনের সুদৃশ্য ব্যাগ। বর্তমানে এক ধরনের স্মার্টব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলোর ভেতরে মোবাইল রেখে ব্যাগের নির্দিষ্ট স্থানে হেডফোন কানেকশন জুড়ে দিলেই গান শোনা যাবে। ইমারজেন্সি মুহূর্তে ফোনে চার্জ দেওয়ার জন্য কিছু কিছু ব্যাগে ইউএসবি পোর্ট সংযুক্ত আছে। এসব সুবিধা নেওয়া ব্যাকপ্যাক মেয়েদের জন্যও তৈরি হচ্ছে।
মেয়েদের ব্যাকপ্যাক ব্যবহারের সুবিধা হলো ওজনে এটি হালকা এবং একসঙ্গে অনেক অপশন থাকে। অনেকেই আছেন হ্যান্ডব্যাগে ল্যাপটপ ক্যারি করতে চান না। তাদের জন্য নানা ধরনের পিঠে ঝোলানো ব্যাগপ্যাক পাওয়া যাচ্ছে। এসব ব্যাগের মধ্যে কাপড় দিয়ে তৈরি ব্যাগের দামটা হাতের নাগালে থাকায় এর চাহিদা বেশি। কাপড়ের ব্যাগগুলোতে স্ক্রিন প্রিন্টের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে লোকজ নানা মোটিভ। ছাত্রছাত্রীদের জন্য ক্লাসে ব্যবহার উপযোগী কাপড়, রেক্সিন ও আর্টিফিশিয়াল লেদারের নানা ধরনের ব্যাকপ্যাক পাওয়া যাচ্ছে। ব্যবহারের সুবিধার জন্য যেমন জনপ্রিয়, তেমনি দামটাও হাতের নাগালে।
এ ছাড়া প্যারাসুট কাপড়ের বেশ কিছু ব্যাগ পাওয়া যায়, যেগুলো টেকসই ও ফ্যাশনেবল। এ ধরনের ব্যাগের সুবিধা হলো খুব সহজে ওয়াশ করা যায়। ব্যাকগুলোতে কালারফুল চুমকি দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইন করা আছে। প্রায় প্রতিটি ব্যাগে এক্সট্রা একটা বেল্ট থাকে, যাতে বড় লাগেজের সঙ্গে আটকে সহজেই ব্যবহার করা যায়। পাটের তৈরি ছোট-বড় বিভিন্ন ব্যাকপ্যাকও পাওয়া যাচ্ছে। তবে পাটের ব্যাকপ্যাকগুলোতে দুই থেকে তিনটার বেশি চেম্বার থাকে না।
দরদাম : পিওর লেদারের ব্যাগগুলোর দাম তুলনামূলক একটু বেশি। যার দাম পড়বে ১৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। আর্টিফিশিয়াল লেদারের ব্যাকপ্যাক পাবেন ৯০০ থেকে ১৫০০ মধ্যে। এ ছাড়া ফেব্রিকস কিংবা প্যারাসুট কাপড়ের তৈরি ব্যাকপ্যাক কিনতে আপনাকে ৯০০ থেকে ১৩০০-এর মতো টাকা খরচ করতে হবে। খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের ব্যাকপ্যাক পাবেন ৫০০০ টাকায়। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড আড়ং, ব্যাগপ্যাকার্স, ব্যাগবিডিতে পাবেন নানা ধরনের ব্যাকপ্যাক। দাম পড়বে সর্বনিম্ন ৭০০ টাকা।
হার্ট সুস্থ রাখতে কী করবেন জানালেন ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের প্রধান পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার
আমরা সবাই জানি, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। রোগ সারানোর চেষ্টায় যতটুকু আর্থিক জোগান দিতে হয়, তার তুলনায় একটু সাবধানতা, একটু নিয়ম মেনে চলার জন্য আর্থিক জোগান কিছুই নয়। আমরা অনেক সময় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে গিয়ে উদাসীন থাকি। অথচ হার্ট ভালো রাখতে ইচ্ছা শক্তিই জরুরি।
যা করবেন
ঘুম থেকে উঠে দম চর্চা করুন সকালে ও বিকেলে। একেকবার কমপক্ষে ২০ বার করে করুন। নাক দিয়ে লম্বা দম নিয়ে মুখ দিয়ে লম্বা করে ছেড়ে দিন। খালি পেটে পানি পান হার্টকে সুস্থ রাখে। খালি পেটে অন্তত ২ গ্লাস পানি পানের অভ্যাস করুন। সারা দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পানের চেষ্টা করুন। দেহের প্রতিটি অঙ্গ সুস্থ রাখতে দেহ সচল রাখা প্রয়োজন। সেজন্য অন্তত ২০ মিনিট ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। সকালের এই ২০ মিনিটের এক্সারসাইজ আপনাকে প্রায় ১৬ ঘণ্টা কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করবে। সকালের খাবারের মনোযোগী হন। অধিক আঁশযুক্ত ও প্রোটিনযুক্ত খাবার প্রতিদিনের সকালে অন্তর্ভুক্ত করুন। এরই সঙ্গে না খেয়ে বাড়ির বাইরে যেন না যেতে হয় সে বিষয়ে নজর দিন। প্রতিদিনের খাবারে ভিন্নতা রাখা প্রয়োজন। অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন রঙিন শাকসবজি, ফল অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রোটিন গ্রহণে উদ্ভিজ্জ এবং প্রাণিজ মিলিয়ে গ্রহণ করুন। বয়সভেদে পরিবেশন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু আইটেমগুলো রাখার চেষ্টা করুন। সপ্তাহে অন্তত দুবার সামুদ্রিক মাছ খান। স্ন্যাক্স হিসেবে বিভিন্ন জাতের বাদাম ও ফল প্রাধান্য দিন। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, প্রসেসড খাবার, রেডিফুড সীমিত রাখুন। পাশাপাশি লিকুইড ক্যালরি অর্থাৎ কোমলপানীয় প্রতিদিনের খাবার থেকে বর্জন করুন। হার্টের সুস্থতায় মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জোর দিন। নিজে মানসিক আনন্দ পান এমন ধরনের কাজগুলো প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় অন্তর্ভুক্ত করুন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখুন। ছোট-বড় সবার সঙ্গেই আনন্দে থাকার চেষ্টা করুন। কিছু ছোট রোগ হার্টকে দুর্বল করে দেয়। যেমন : ফ্লু, নিউমোনিয়া অথবা বিভিন্ন ইনফেকশন। তা-ই প্রতিদিন বারবার হাত ধোয়া, কুলি করা, নাক পরিষ্কার রাখুন। রাতের ঘুম সুস্থতার জন্য জরুরি। অতিরিক্ত রাত না জেগে ভালো ঘুম দেওয়ার চেষ্টা করুন।
অনেক সময় অতিরিক্ত রাগ, টেনশন, মানসিক চাপ, শত্রু ভাবাপন্ন মনোভাব হার্টকে দুর্বল করে ফেলে। অতএব হার্ট সুস্থ রাখার চেষ্টা অসুস্থ হওয়ার আগেই করা প্রয়োজন। হার্ট সুস্থ রাখতে অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে খাদ্যতালিকা তৈরি করে নিতে পারেন।
ঘরে বসে অনেকেই চুল কালার করেন তেমনি পারলারে গিয়েও কালার করান। এ সময়ে তরুণদের মধ্যে ফাঙ্কি কালারগুলো বেছে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই রংগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে মেরুন,পার্ডেল, ব্লু, হোয়াইট।
গত বছরও চুল কালার করতে হাল্কা ব্রাউন কিংবা অফ হোয়াইট কালার বেছে নিতেন। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে এখন বাজারে এসেছে বিভিন্ন ধরনের হেয়ার কালার। প্রিয় শপের বিক্রয়কর্মী আরমান হোসেন জানিয়েছে, মেয়েদের চুলে লাল, নীল, আকাশি, গোলাপি হেয়ার কালারের চাহিদা বেড়েছে। তাদের এখান থেকে ভিন্নধর্মী হেয়ার কালারের বিক্রিও বেড়েছে। বেশ কয়েকটি অভিজাত শপিং মলের বিউটি প্রোডাক্ট বিক্রি হচ্ছে এমন দোকানে বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মেয়েরা সবচেয়ে বেশি আকাশি গোলাপি হেয়ার কালার কিনছেন। জনপ্রিয় ব্র্যান্ডসমূহের মধ্যে Garnier, Loreal Paris, Wella, Revlon অন্যতম। ত্বকের ও চুলের শেডের সঙ্গে মিল রেখে বেছে নিতে হয় হালকা অথবা গাঢ় রঙের যে কোনো হেয়ার কালার।
হেয়ার এক্সপার্ট সাবরিনা তারিন বলেছেন, এখন মেয়েরা নানা ধরনের হেয়ার কালার বেছে নিচ্ছেন। তারা চুলে ভিন্ন রঙের স্টিকও করতে চায়। সবচেয়ে করছেন লাল এবং নীল রংগুলো। যদিও হেয়ার কালারের বিভিন্ন নাম রয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হেয়ার কালার হচ্ছে বিচ ব্রাউন, ক্যারামেল, গোল্ডেন ব্রাউন, চেস্টনাট, মেহগনি রং, অ্যাশ ব্রাউন, অ্যাশ ব্ল্যাক। তবে লাল, নীল, সবুজ, আকাশি, গোলাপি কালারও নারীরা এখন স্টিক আকারে ব্যবহার করে থাকেন।’
একটা সময় রঙিন হেয়ার কালারগুলো খুব একটা ব্যবহার করতে কেউ আগ্রহী হতো না। কারণ এই কালারগুলো দুই থেকে তিন সপ্তাহের পর চুল ওয়াশ করলে চলে যেত। এখন যেসব ফাঙ্কি হেয়ার কালার রয়েছে তা অনেকদিন লাস্টিং করে। আর এইসব হেয়ারকারার লাস্টিং করাতে বাজারে পার্পেল শ্যাম্পুও পাওয়া যাচ্ছে।
চুলে কালারের স্থায়িত্ব রাখতে বিভিন্ন রকম শ্যাম্পু, সিরাম, কালার প্রটেকশন তেলসহ আরও অনেক কিছু উপাদান রয়েছে। তবে এলার্জি বা শরীরের অন্যান্য সমস্যা থাকলে প্রথমে শরীরের কোনো একটা জায়গায় লাগিয়ে দেখতে হবে ইরিটেশন হচ্ছে কি না। হেয়ার কালারের কারণে চুল অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়, তাই নিয়মিত হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। আমাদের দেশের মেয়েদের ত্বক সাধারণত উষ্ণ টোনেরই হয়। তাই চুলের রং করতে হলে গাঢ় বাদামি, লাল বা বার্গান্ডির মতো শেড বেছে নিতে পারেন। এমন রং বেছে নিন যা আপনার চুলের আসল রঙের চেয়ে হয় এক বা দুই শেড হালকা অথবা গাঢ়।
কোথায় পাবেন : সুপার শপ এবং বিউটি প্রোডাক্ট পাওয়া যায় এমন দোকান থেকেই হেয়ার কালার কেনার চেষ্টা করুন। সাজগোজ, আলমাস, প্রিয়শপ ও যমুনা ফিউচার পার্ক ও ডিসিসি মার্কেটের প্রসাধনী পাওয়া যায় এমন দোকান থেকে কিনতে পারেন।
শীতে সবার বাড়িতেই কমবেশি পিঠা তৈরি হয়। পিঠার রেসিপি দিয়েছেন জিন্নাত রায়হান সুমি
সুজি
উপকরণ
সুজি আধা কাপ, চিনি এক কাপের তিন ভাগের একভাগ, ময়দা আধা কাপ, গুঁড়ো দুধ আধা কাপ, লবণ ১ চিমটি, পানি আধা কাপ।
পুর তৈরি: পেস্তা, কিশমিশ, বাদাম কুচি ১ কাপ, গুঁড়ো দুধ আধা কাপ, ঘি ১ টেবিল চামচ, পেষা চিনি ১ টেবিল চামচ।
পুরের উপকরণ সব একসঙ্গে মেখে রাখুন।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. গুঁড়ো দুধ, সুজি ও লবণ সোয়া কাপ দিয়ে মেখে রাখুন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট।
২. ময়দা ও চিনি মিশিয়ে গোলা ফেটে নিন।
৩. ফ্রাইপ্যানে তেল মেখে গরম হলে গোলা দিয়ে রুটির মতো ছড়িয়ে দিন।
৪. রুটি শুকিয়ে গেলে ভেতরে পুর দিয়ে পাটির মতো ভাঁজ করে উঠিয়ে নিন।
ক্ষীরশা
উপকরণ
পোলাও চালের গুঁড়ো ২ কাপ, গুঁড়ো দুধ ২ টেবিল চামচ, চিনি বা খেজুরের গুড় সিকি কাপ, তেল আধা কাপ, ময়দা সিকি কাপ, ডিম ১টি, লবণ ১ চিমটি, বেকিং পাউডার আধা চা চামচ।
গোলা তৈরি : তেল ছাড়া সব উপকরণ পানি দিয়ে মেখে রেখে দিন ২ ঘণ্টা। পাতলা গোলা হবে।
ক্ষীরশা তৈরি : দুধ ২ লিটার, মালাই আধা কাপ, পোলাও চালের গুঁড়ো ২ টেবিল চামচ, চিনি ৩ টেবিল চামচ।
দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিন। চালের গুঁড়ো শুকনো খোলায় টেলে নিন। কিছু দুধ তুলে ঠান্ডা করে চালের গুঁড়ো গুলিয়ে দুধে ঢেলে দিন।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. ফ্রাইপ্যানে তেল গরম করে ডালের চামচে ২ চামচ গোলা দিয়ে ছড়িয়ে দিন রুটিরমতো করে।
২. রুটি শুকিলে ক্ষীরশা দিয়ে পাটির মতো মুড়িয়ে নিন।
৩. নামিয়ে ঠান্ডা বা গরম পরিবেশন করুন।
নারিকেল
উপকরণ
পোলাও চালের গুঁড়ো ২ কাপ, গুঁড়ো দুধ ২ টেবিল চামচ, বেকিং পাউডার আধা চা চামচ, তেল আধা কাপ, ময়দা সিকি কাপ, চিনি সিকি কাপ, লবণ ১ চিমটি।
গোলা তৈরি : তেল ছাড়া সব উপকরণ পানি দিয়ে গোলা করে রাখুন ২ ঘণ্টা।
পুরের উপকরণ : নারিকেল কোরা ২ কাপ, এলাচ ৩টি, গুঁড়ো দুধ ৪ টেবিল চামচ, চিনি ৩ টেবিল চামচ, দারুচিনি ২ টুকরো।
পুর তৈরি : সব উপকরণ জ¦াল দিয়ে চটচটে হলে নামিয়ে এলাচ, দারুচিনি তুলে ফেলে দিন।
যেভাবে তৈরি করবেন
১, ফ্রাইপ্যানে তেল দিয়ে ডালের চামচে ২ চামচ গোলা দিয়ে রুটির মতো ছড়িয়ে দিন।
২. রুটি শুকালে নারিকেলের পুর দিয়ে রুটি ভাঁজ করে পাটির মতো মুড়িয়ে নামিয়ে নিন।
সবজি
উপকরণ
পোলাও চালের গুঁড়ো ২ কাপ, ডিম ৪টি, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, ময়দা সিকি কাপ, লবণ আধা চা চামচ, আদা বাটা ২ চা চামচ, জিরা বাটা ১ চা চামচ।
পুর তৈরি : মুরগির কিমা ১ কাপ, বরবটি কুচি আধা কাপ, ধনেপাতা কুচি সিকি কাপ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, লবণ আধা চা চামচ, গরম মসলার গুঁড়ো ১ চা চামচ, গাজর কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি সিকি কাপ, আদা বাটা ১ চা চামচ, কাঁচা মরিচ কুচি ১ টেবিল চামচ, তেল ১ টেবিল চামচ।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. পিঠার উপকরণ মেখে পানি দিয়ে গোলা করে নিন।
২. চুলায় তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি দিন। নরম হলে আদা-রসুন বাটা দিয়ে কষিয়ে কিমা দিন। কষানো হলে লবণ ও আধা কাপ পানি দিয়ে ঢেকে সেদ্ধ করুন।
৩. পানি শুকিয়ে গেলে সবজি দিয়ে নাড়–ন। সবজি সেদ্ধ হলে বাকি উপকরণ দিয়ে ঢেকে মৃদু আঁচে ১০ মিনিট রেখে নামিয়ে ঠান্ডা করুন।
৪. ফ্রাইপ্যানে তেল গরম করে ডালের ১ চামচ গোলা দিয়ে রুটি বানিয়ে শুকালে ভিতরে পুর দিয়ে পেচিয়ে নামিয়ে নিন।
ইলিশ মাছ
উপকরণ
গোলা : পোলাও চালের গুঁড়ো ১ কাপ, ডিম ১টি, কাঁচা মরিচ বাটা ১ চা চামচ, লবণ সিকি চা চামচ, পানি আধা কাপ, ময়দা ২ টেবিল চামচ, কর্নফ্লাওয়ার ১ টেবিল চামচ, ধনেপাতা বাটা ১ টেবিল চামচ, আদা বাটা ১ চা চামচ।
গোলা তৈরি : সব উপকরণ মিশিয়ে পরিমাণমতো পানি দিয়ে পাটিসাপটার গোলা তৈরি করে নিন।
পুর তৈরি : ইলিশ মাছের টুকরো ৫টি, কাঁচা মরিচ কুচি ১ চা চামচ, সরিষা বাটা ২ চা চামচ, সরিষা তেল ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, হলুদের গুঁড়ো ১ চিমটি, লবণ আধা চা চামচ।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. হলুদ-লবণ ও পানি দিয়ে মাছ সেদ্ধ কাঁটা বেছে নিন।
২. কড়াইয়ে তেল গরম হলে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে নরম হলে সরিষা বাটা দিয়ে কষিয়ে মাছ, কাঁচা মরিচ কুচি ও একটু লবণ দিয়ে ভাজা ভাজা করে নামিয়ে নিন।
৩. ফ্রাইপ্যানে তেল দিয়ে পাটিসাপটার গোলা চামচের হাতল ঘুরিয়ে ছড়িয়ে ১ মিনিট ঢেকে রাখুন।
৪. রুটি শুকালে পুর দিয়ে রোল করে চুলা থেকে নামিয়ে নিন।
মসজিদ ও মাদ্রাসায় ইমামদের সচেতনতা বার্তা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর মিরপুরে পিএসসি (পুলিশ স্টাফ কলেজ) কনভেনশন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদের ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসি এলাকার এক হাজার ইমাম ও খতিব অংশগ্রহণ করেন।
উপস্থিত ইমামদের উদ্দেশে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা মসজিদে গিয়ে ওয়াক্ত নামাজের সময়, জুমার নামাজের সময় মনোযোগ দিয়ে আপনাদের বয়ান শুনি। আপনারাই পারেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে। আপনারাই পারেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আপনারা মানুষকে জানাবেন বর্ষাকালে এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যায়। এডিস মশার কামড়ে জ্বর হয়, মৃত্যু হয়। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। অতএব কোনোভাবে যেন পানি জমে না থাকে’।
মেয়র আরো বলেন, ‘এডিস মশা যখম কামড় দেবে, মশা কিন্তু চিনবে না কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কে ইমাম আর কে খতিব। এডিস মশা সবার জন্যই হুমকি। অতএব এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একমাত্র সচেতনতা পারে ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সিটি করপোরেশন থেকে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যকরী লার্ভিসাইডিং করছি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। কিন্তু সবার সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’।
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে উপস্থিত ইমামদের সচেতন করেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে লাখো লাখো মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার খতিব রয়েছেন। ইমাম ও খতিবরা মসজিদে মুসুল্লিদের ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সচেতন করলে এই ভয়াবহ মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির ও অন্যান্য সাধারণ মানুষের বক্তৃতা থেকে ইমামদের বক্তৃতা বেশি কার্যকর হবে। মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় বয়ানে, খুতবায় মুসুল্লিরা ইমামগণের কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনাদের বার্তা মানুষের মনে গেথে থাকে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
পিছিয়ে পড়া রিয়াল মাদ্রিদকে বহুবার ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন করিম বেনজেমা। ক্লাবের হয়ে শেষ ম্যাচেও তাই করলেন। তার গোলে ড্র করে মৌসুম শেষ করেছে রিয়াল।
ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে নামে অ্যাথলেটিক ক্লাবের সঙ্গে। ম্যাচের প্রথমার্ধটা গোল শূন্য থেকে যায়। এই সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
তবে বিরতি থেকে ফিরে চার মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যায় অ্যাথলেটিক। ৪৯ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় একাধিক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে লক্ষ্য বরাবর শট নেন ওয়েন সানচেত। তবে তিবু কুর্তোয়া দারুণভাবে সেটা প্রতিহত করেন। কিন্তু তিনি উল্লাসটা খুব দ্রুত করে ফেলেন, বলের দিকে তার নজর ছিল না। আর সেই সুযোগটা নেন সানচেত। আদায় করে নেন গোল।
সেই গোল হজম করে হার দিয়ে মৌসুম শেষের শঙ্কায় পড়েছিল রিয়াল। তবে প্রতিবার যেমন শেষবেলায় ত্রাতা হতেন বেনজেমা, এবারও তাই হলেন। গোল শোধ করতে মরিয়া মাদ্রিদিয়ানরা সেটা আদায় করে ৭২ মিনিটে। তবে সেটা নিজেদের পায়ের জাদুর নৈপুণ্যে নয়। ডি বক্সের ভেতরে মিলিতাওকে ফাউল করেন জুরি বারচিকে। হলুদ কার্ডের সঙ্গে জরিমানা হিসেবে গুনেন পেনালটি। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন বেনজেমা।
গোলের পরে তাকে নিয়ে সতীর্থরা মেতে উঠেন উল্লাসে। কারণ এটাই যে ছিল তার শেষ ম্যাচ। বিদায়ী ম্যাচটা গোল করে রাঙালেন বেনজেমা।
রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ১৪ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছেন ২০২২'র ব্যালন ডি'অর জয়ী করিম বেনজেমা। ক্লাবের তরফ থেকে আজ এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'রিয়াল মাদ্রিদ এবং আমাদের অধিনায়ক করিম বেনজেমা এই ক্লাবের হয়ে তার অসাধারণ ও অবিস্মরণীয় ক্যারিয়ারের ইতি টানার জন্য রাজি হয়েছে।'
মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার একসঙ্গে তিন মৌসুম খেলেছেন বার্সেলোনায়। ২০১৪ সালে লিভারপুল থেকে সুয়ারেজ বার্সায় আসার পর এবং ২০১৭-তে নেইমার পিএসজিতে পাড়ি জমানো পর্যন্ত ‘এমএসএন’ এর রাজত্ব ছিল বার্সেলোনায়। সে সময়ে এই তিনজন মিলে ৩৬৪ গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ১৭৩টি। এই ত্রয়ী বার্সাকে দুটি লা লিগা খেতাব, তিনটি কোপা দেল রে এবং একটি করে সুপারকোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন।
সুয়ারেজ-নেইমার বার্সা ছেড়ে চলে গেলে মাঠের জুটি ভাঙলেও বন্ধুত্ব অটুট এমএসএনের। সেদিন মেসিকে মাঠে দর্শকরা দুয়ো ধনি দলে তার প্রতিবাদ করেছেন সুয়ারেজ নেইমার। মেসির পিএসজি ছাড়ার পর নেইমার বন্ধুর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন, সুয়ারেজও জানিয়েছেন সাধুবাদ।
নেইমার ইনস্টাগ্রামে একটি বিদায় নোট পোস্ট করেছেন মেসিকে উদ্দেশ্য করে, 'ভাই.. আমরা যেমন ভেবেছিলাম তেমনটা হয়নি কিন্তু আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েছিলাম। তোমার সাথে আরও ২ বছর ভাগ করে নিতে পারাটা আনন্দের ছিল। তোমার পরবর্তী। তোমার নতুন অধ্যায়ের জন্য শুভকামনা এবং সুখী হও। তোমাকে ভালোবাসি।'
উত্তরে মেসি বলেছেন, 'ধন্যবাদ নে! সব কিছুর পরও আমরা একসাথে খেলা উপভোগ করেছি এবং প্রতিদিন ভাগ করে নিয়েছি। তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি কিছু পাগলাটে, কিন্তু মানুষ তুমি দারুন।আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নেইমার।'
আর এই বার্তা পড়ে সুয়ারেজ লিখেছেন,' কি সুন্দর বার্তা মেসি। নেইমারের সাথে আপনাকে আবার একসাথে দেখে খুব ভালো লাগলো। একে অপরের প্রতি এই ভালবাসা, সর্বদা সবকিছুতে একে অপরকে সমর্থন করা আরও সুন্দর! আমি তোমাদের ভালোবাসি বন্ধুরা।'
তিনজনের এই বার্তা পড়ে একটা কথাই বলতে হয়, বন্ধুত্বের জয় হোক।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।