
ঘরে বসে অনেকেই চুল কালার করেন তেমনি পারলারে গিয়েও কালার করান। এ সময়ে তরুণদের মধ্যে ফাঙ্কি কালারগুলো বেছে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই রংগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে মেরুন,পার্ডেল, ব্লু, হোয়াইট।
গত বছরও চুল কালার করতে হাল্কা ব্রাউন কিংবা অফ হোয়াইট কালার বেছে নিতেন। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে এখন বাজারে এসেছে বিভিন্ন ধরনের হেয়ার কালার। প্রিয় শপের বিক্রয়কর্মী আরমান হোসেন জানিয়েছে, মেয়েদের চুলে লাল, নীল, আকাশি, গোলাপি হেয়ার কালারের চাহিদা বেড়েছে। তাদের এখান থেকে ভিন্নধর্মী হেয়ার কালারের বিক্রিও বেড়েছে। বেশ কয়েকটি অভিজাত শপিং মলের বিউটি প্রোডাক্ট বিক্রি হচ্ছে এমন দোকানে বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মেয়েরা সবচেয়ে বেশি আকাশি গোলাপি হেয়ার কালার কিনছেন। জনপ্রিয় ব্র্যান্ডসমূহের মধ্যে Garnier, Loreal Paris, Wella, Revlon অন্যতম। ত্বকের ও চুলের শেডের সঙ্গে মিল রেখে বেছে নিতে হয় হালকা অথবা গাঢ় রঙের যে কোনো হেয়ার কালার।
হেয়ার এক্সপার্ট সাবরিনা তারিন বলেছেন, এখন মেয়েরা নানা ধরনের হেয়ার কালার বেছে নিচ্ছেন। তারা চুলে ভিন্ন রঙের স্টিকও করতে চায়। সবচেয়ে করছেন লাল এবং নীল রংগুলো। যদিও হেয়ার কালারের বিভিন্ন নাম রয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হেয়ার কালার হচ্ছে বিচ ব্রাউন, ক্যারামেল, গোল্ডেন ব্রাউন, চেস্টনাট, মেহগনি রং, অ্যাশ ব্রাউন, অ্যাশ ব্ল্যাক। তবে লাল, নীল, সবুজ, আকাশি, গোলাপি কালারও নারীরা এখন স্টিক আকারে ব্যবহার করে থাকেন।’
একটা সময় রঙিন হেয়ার কালারগুলো খুব একটা ব্যবহার করতে কেউ আগ্রহী হতো না। কারণ এই কালারগুলো দুই থেকে তিন সপ্তাহের পর চুল ওয়াশ করলে চলে যেত। এখন যেসব ফাঙ্কি হেয়ার কালার রয়েছে তা অনেকদিন লাস্টিং করে। আর এইসব হেয়ারকারার লাস্টিং করাতে বাজারে পার্পেল শ্যাম্পুও পাওয়া যাচ্ছে।
চুলে কালারের স্থায়িত্ব রাখতে বিভিন্ন রকম শ্যাম্পু, সিরাম, কালার প্রটেকশন তেলসহ আরও অনেক কিছু উপাদান রয়েছে। তবে এলার্জি বা শরীরের অন্যান্য সমস্যা থাকলে প্রথমে শরীরের কোনো একটা জায়গায় লাগিয়ে দেখতে হবে ইরিটেশন হচ্ছে কি না। হেয়ার কালারের কারণে চুল অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়, তাই নিয়মিত হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। আমাদের দেশের মেয়েদের ত্বক সাধারণত উষ্ণ টোনেরই হয়। তাই চুলের রং করতে হলে গাঢ় বাদামি, লাল বা বার্গান্ডির মতো শেড বেছে নিতে পারেন। এমন রং বেছে নিন যা আপনার চুলের আসল রঙের চেয়ে হয় এক বা দুই শেড হালকা অথবা গাঢ়।
কোথায় পাবেন : সুপার শপ এবং বিউটি প্রোডাক্ট পাওয়া যায় এমন দোকান থেকেই হেয়ার কালার কেনার চেষ্টা করুন। সাজগোজ, আলমাস, প্রিয়শপ ও যমুনা ফিউচার পার্ক ও ডিসিসি মার্কেটের প্রসাধনী পাওয়া যায় এমন দোকান থেকে কিনতে পারেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় স্টাইল। একসময়কার লম্বা ও ঝোলা ব্যাগগুলো ক্রমেই আধুনিক ও স্টাইলিস্ট হচ্ছে। শুধু ভ্রমণ নয়, হাল আমলে ফ্যাশনপ্রেমী তরুণ-তরুণীদের পিঠে এখন ঝুলতে দেখা যাচ্ছে নানা ধরনের ব্যাকপ্যাক। এসব ব্যাকপ্যাক একটা সময় পর্যন্ত তরুণরা বেশি ব্যবহার করলেও আজকাল স্টাইলিস্ট নানা ধরনের ব্যাকপ্যাক দেখা যাচ্ছে মেয়েদের ফ্যাশনে। লিখেছেন জাহান রিসা
ফিটফাট পোশাক, জুতসই সানগ্লাস, স্টাইলিস্ট জুতোতেই ফ্যাশনেবল এই শব্দটা আটকে নেই আপনার। পারফেক্ট আউটফিটে নতুনত্ব দিতে পারে সুন্দর একটা ব্যাগ। সময়োপযোগী স্টাইলিস্ট ও মানানসই ব্যাগের ব্যাপারে সবাই কমবেশি সচেতন। মানুষের প্রয়োজনের তাগিদে ব্যাগের আকারেও এসেছে ভিন্নতা। ডাবল হ্যান্ডেল থাকে এবং দুই কাঁধে নেওয়া যায় এমন ব্যাগকে আমরা ব্যাকপ্যাক নামে চিনি। এ সময়ে মেয়েদের ব্যাগগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় ও আরামদায়কের দিক থেকে বিবেচনা করলে ব্যাকপ্যাক সবার প্রথমে আসে, কারণ এ ব্যাগ নেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিশেষ সুবিধা এটি দুই কাঁধে ভর করে পিঠের ওপর নেওয়া যায়, ফলে ব্যাগের ওজন অনেকটাই কমে আসে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বহনে বাহারি এ ব্যাগগুলো অনন্য। বেশির ভাগ ব্যাকপ্যাকই ওয়াটারপ্রুফ, ফলে ভিজে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। সব বয়সীর পছন্দের তালিকায় আছে ব্যাকপ্যাক। প্রতিটি ব্যাকপ্যাকের একাধিক চেম্বার থাকে এবং চেম্বারগুলো বিভিন্ন আকারের হয়, যাতে ব্যবহারকারী তার পছন্দের জিনিসগুলো ঠিক স্থানে রেখে নিশ্চিন্তে বহন করতে পারে। স্কুল ও কলেজপড়–য়া মেয়েদের বই সঙ্গে রাখার প্রয়োজন হয়, তাই তারা একটু বড় সাইজের ব্যাগ বেশি পছন্দ করে। বড় সাইজের ব্যাগগুলোর মেইন চেম্বারটা বেশ বড় হয়। এতে সহজে অনেক বই রাখা যায়। এ ধরনের ব্যাগ অনেকে ল্যাপটপ, কাপড়চোপড় কিংবা অন্য জিনিসপত্র বহনে ব্যবহার করেন। কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের মেয়েরা একটু ছোট সাইজের ব্যাগ বহনে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অধিক জিনিসপত্র আনার ক্ষেত্রে কাঁধে ঝোলানো বড় ব্যাকপ্যাকগুলোই বেশি ব্যবহার করেন। সব ধরনের জিনিসপত্র একসঙ্গে গুছিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাকপ্যাকের সুবিধাই বেশি। আকারে বৈচিত্র্যময়তার পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি ব্যাগেই টিফিন বক্স, ছাতা, ওয়াটার পট নেওয়ার সুবিধা তো আছেই।
লেদারের তৈরি ব্যাকপ্যাকগুলোর নকশা খুবই সাধারণ। প্রায় প্রতিটি ব্যাগে নানাভাবে ব্যবহার করার সুবিধা রয়েছে। কারণ দুই থেকে চার ধরনের বেল্ট থাকে। তাই খুব সহজেই কখনো কাঁধে ঝুলিয়ে, কখনো বা পিঠে ভর করে, আবার কখনো বা হ্যান্ডব্যাগের মতো হাতে নেওয়া যায়। এ ছাড়া আর্টিফিশিয়াল লেদারের বেশ কিছু ব্যাকপ্যাক পাওয়া যায়, যেগুলো লেদারের ব্যাগের মতোই আকর্ষণীয়। ফেব্রিকসে তৈরি ব্যাগগুলো খুব কালারফুল, কারণ এগুলোর ওপর বাহারি সব ডিজাইন থাকে। যেমন গ্লিটারের তৈরি বিভিন্ন রকমের পুতুল, মানুষের মুখোশ, বাড়ি, গাছপালা, পশুপাখি, নানা ধরনের দৃশ্য, কখনো বা হাস্যোজ্জ্বল ইমোজি। এ ছাড়া কখনো কখনো এমব্রয়ডারির কাজ করার নানান ডিজাইন চোখে পড়ে। বেশির ভাগ ব্যাগগুলোতে চেইনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া রংবেরঙের পুতুল, আর্টিফিশিয়াল স্টার ইত্যাদি ঝোলানো থাকে।
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র স্বাচ্ছন্দ্যে বহন করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকপ্যাক পাওয়া যাচ্ছে। ল্যাপটপ রাখা কিংবা ক্লাসে ব্যবহারের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যাকপ্যাক। এ ছাড়া হাতে ঝোলানোর জন্যও রয়েছে নানা ধরনের সুদৃশ্য ব্যাগ। বর্তমানে এক ধরনের স্মার্টব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলোর ভেতরে মোবাইল রেখে ব্যাগের নির্দিষ্ট স্থানে হেডফোন কানেকশন জুড়ে দিলেই গান শোনা যাবে। ইমারজেন্সি মুহূর্তে ফোনে চার্জ দেওয়ার জন্য কিছু কিছু ব্যাগে ইউএসবি পোর্ট সংযুক্ত আছে। এসব সুবিধা নেওয়া ব্যাকপ্যাক মেয়েদের জন্যও তৈরি হচ্ছে।
মেয়েদের ব্যাকপ্যাক ব্যবহারের সুবিধা হলো ওজনে এটি হালকা এবং একসঙ্গে অনেক অপশন থাকে। অনেকেই আছেন হ্যান্ডব্যাগে ল্যাপটপ ক্যারি করতে চান না। তাদের জন্য নানা ধরনের পিঠে ঝোলানো ব্যাগপ্যাক পাওয়া যাচ্ছে। এসব ব্যাগের মধ্যে কাপড় দিয়ে তৈরি ব্যাগের দামটা হাতের নাগালে থাকায় এর চাহিদা বেশি। কাপড়ের ব্যাগগুলোতে স্ক্রিন প্রিন্টের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে লোকজ নানা মোটিভ। ছাত্রছাত্রীদের জন্য ক্লাসে ব্যবহার উপযোগী কাপড়, রেক্সিন ও আর্টিফিশিয়াল লেদারের নানা ধরনের ব্যাকপ্যাক পাওয়া যাচ্ছে। ব্যবহারের সুবিধার জন্য যেমন জনপ্রিয়, তেমনি দামটাও হাতের নাগালে।
এ ছাড়া প্যারাসুট কাপড়ের বেশ কিছু ব্যাগ পাওয়া যায়, যেগুলো টেকসই ও ফ্যাশনেবল। এ ধরনের ব্যাগের সুবিধা হলো খুব সহজে ওয়াশ করা যায়। ব্যাকগুলোতে কালারফুল চুমকি দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইন করা আছে। প্রায় প্রতিটি ব্যাগে এক্সট্রা একটা বেল্ট থাকে, যাতে বড় লাগেজের সঙ্গে আটকে সহজেই ব্যবহার করা যায়। পাটের তৈরি ছোট-বড় বিভিন্ন ব্যাকপ্যাকও পাওয়া যাচ্ছে। তবে পাটের ব্যাকপ্যাকগুলোতে দুই থেকে তিনটার বেশি চেম্বার থাকে না।
দরদাম : পিওর লেদারের ব্যাগগুলোর দাম তুলনামূলক একটু বেশি। যার দাম পড়বে ১৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। আর্টিফিশিয়াল লেদারের ব্যাকপ্যাক পাবেন ৯০০ থেকে ১৫০০ মধ্যে। এ ছাড়া ফেব্রিকস কিংবা প্যারাসুট কাপড়ের তৈরি ব্যাকপ্যাক কিনতে আপনাকে ৯০০ থেকে ১৩০০-এর মতো টাকা খরচ করতে হবে। খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের ব্যাকপ্যাক পাবেন ৫০০০ টাকায়। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড আড়ং, ব্যাগপ্যাকার্স, ব্যাগবিডিতে পাবেন নানা ধরনের ব্যাকপ্যাক। দাম পড়বে সর্বনিম্ন ৭০০ টাকা।
হার্ট সুস্থ রাখতে কী করবেন জানালেন ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের প্রধান পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার
আমরা সবাই জানি, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। রোগ সারানোর চেষ্টায় যতটুকু আর্থিক জোগান দিতে হয়, তার তুলনায় একটু সাবধানতা, একটু নিয়ম মেনে চলার জন্য আর্থিক জোগান কিছুই নয়। আমরা অনেক সময় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে গিয়ে উদাসীন থাকি। অথচ হার্ট ভালো রাখতে ইচ্ছা শক্তিই জরুরি।
যা করবেন
ঘুম থেকে উঠে দম চর্চা করুন সকালে ও বিকেলে। একেকবার কমপক্ষে ২০ বার করে করুন। নাক দিয়ে লম্বা দম নিয়ে মুখ দিয়ে লম্বা করে ছেড়ে দিন। খালি পেটে পানি পান হার্টকে সুস্থ রাখে। খালি পেটে অন্তত ২ গ্লাস পানি পানের অভ্যাস করুন। সারা দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পানের চেষ্টা করুন। দেহের প্রতিটি অঙ্গ সুস্থ রাখতে দেহ সচল রাখা প্রয়োজন। সেজন্য অন্তত ২০ মিনিট ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। সকালের এই ২০ মিনিটের এক্সারসাইজ আপনাকে প্রায় ১৬ ঘণ্টা কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করবে। সকালের খাবারের মনোযোগী হন। অধিক আঁশযুক্ত ও প্রোটিনযুক্ত খাবার প্রতিদিনের সকালে অন্তর্ভুক্ত করুন। এরই সঙ্গে না খেয়ে বাড়ির বাইরে যেন না যেতে হয় সে বিষয়ে নজর দিন। প্রতিদিনের খাবারে ভিন্নতা রাখা প্রয়োজন। অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন রঙিন শাকসবজি, ফল অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রোটিন গ্রহণে উদ্ভিজ্জ এবং প্রাণিজ মিলিয়ে গ্রহণ করুন। বয়সভেদে পরিবেশন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু আইটেমগুলো রাখার চেষ্টা করুন। সপ্তাহে অন্তত দুবার সামুদ্রিক মাছ খান। স্ন্যাক্স হিসেবে বিভিন্ন জাতের বাদাম ও ফল প্রাধান্য দিন। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, প্রসেসড খাবার, রেডিফুড সীমিত রাখুন। পাশাপাশি লিকুইড ক্যালরি অর্থাৎ কোমলপানীয় প্রতিদিনের খাবার থেকে বর্জন করুন। হার্টের সুস্থতায় মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জোর দিন। নিজে মানসিক আনন্দ পান এমন ধরনের কাজগুলো প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় অন্তর্ভুক্ত করুন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখুন। ছোট-বড় সবার সঙ্গেই আনন্দে থাকার চেষ্টা করুন। কিছু ছোট রোগ হার্টকে দুর্বল করে দেয়। যেমন : ফ্লু, নিউমোনিয়া অথবা বিভিন্ন ইনফেকশন। তা-ই প্রতিদিন বারবার হাত ধোয়া, কুলি করা, নাক পরিষ্কার রাখুন। রাতের ঘুম সুস্থতার জন্য জরুরি। অতিরিক্ত রাত না জেগে ভালো ঘুম দেওয়ার চেষ্টা করুন।
অনেক সময় অতিরিক্ত রাগ, টেনশন, মানসিক চাপ, শত্রু ভাবাপন্ন মনোভাব হার্টকে দুর্বল করে ফেলে। অতএব হার্ট সুস্থ রাখার চেষ্টা অসুস্থ হওয়ার আগেই করা প্রয়োজন। হার্ট সুস্থ রাখতে অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে খাদ্যতালিকা তৈরি করে নিতে পারেন।
ব্রন বা ব্ল্যাক হেডসের সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। এর থেকে সমাধানের নানা উপায়ও জানি। কিন্তু অনেকের ত্বকেও হোয়াইট হেডসের সমস্যা দেখা দেয়। অথচ হোয়াইট হেডসের সমস্যা নিয়ে ভাবি না। ত্বক ভালো রাখতে হোয়াইট হেডস দূর করাও জরুরি। ত্বকের হোয়াইট হেডস হলো এক ধরনের অ্যাকনে যা ক্লগড হেয়ার ফলিকলের জন্য হয়। ত্বকের মরা কোষ, ব্যাকটেরিয়া এবং ধুলোময়লা আমাদের ত্বকের ওপরের হেয়ার ফলিকলসে জমে যায় এর ফলে এক ধরনের সোলেন গ্রোথ হয়। সাধারণত ত্বকে অতিরিক্ত তেল এবং ব্যাকটেরিয়া জমা হয়, তখনই দেখা দেয় হোয়াইট হেডস। বয়ঃসন্ধির সময় থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক, সবারই এই সমস্যা হতে পারে। মুখের পাশাপাশি ঘাড়ে, গলায়, পিঠে এবং হাতেও হোয়াইট হেডস হয়।
কী করবেন
ত্বকে কখনো সেন্টেড সাবান বা ক্লিনজার ব্যবহার করবেন না। ক্লিনজার কেনার সময়ে দেখে নিন, তাতে স্যালিসিলিক অ্যাসিড বা আলফা হাইড্রোক্সিল অ্যাসিড আছে কি না। কারণ এতে থাকা উপাদান বন্ধ লোমকূপের মুখ খুলতে সাহায্য করে। ত্বক পরিষ্কার রাখা মানেই যে বারবার মুখ ধুতে হবে এমন নয়। বারবার মুখ ধোয়ায় অ্যাকনে এবং ইনফ্ল্যামেশনের সমস্যা বাড়ে। সপ্তাহে দু থেকে তিনবার ত্বক এক্সফোলিয়েট করা একান্তই জরুরি। ত্বকের ধরন অনুযায়ী স্ক্রাব ব্যবহার করতে হবে। এক্সফোলিয়েশন লোমকূপে জমে থাকা ময়লা যেমন বের করে তেমন ত্বকে কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। এক্সফোলিয়েশনের পরে অবশ্যই ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। না হলে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। ময়েশ্চারাইজার ত্বক প্রোটেক্টিভ লোশন হিসেবেও কাজ করে। বারবার হোয়াইট হেডসে হাত দেওয়া বা খুঁটবেন না। এতে সমস্যা আরও বেড়ে যাবে, একটা সময় ত্বকে দাগ পড়ে যায়। হোয়াইট হেডসের সমস্যা খুব বেড়ে গেলে ত্বক বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে পারেন। মাসে অন্তত একবার পারলারে গিয়ে হোয়াইট হেডস দূর করে নিতে পারেন। হোয়াইট হেডস দূর করতে ঘরে বানানো ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
মধু ও ডিমের প্যাক : মধুতে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান থাকে। যা ত্বকের হোয়াইট হেডসের আকার এবং ইনফ্ল্যামেশন কমাতেও সাহায্য করে। ত্বকের অতিরিক্ত তেলও শুষে নেয়। ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে এক টেবিল চামচ দুধ ও দুই টেবিল চামচ মধু মেশান। এরপরে ডিমের হলুদ অংশ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। এই প্যাক অতিরিক্ত তেল ও হোয়াইট হেডস তুলে নেবে।
শীতে সবার বাড়িতেই কমবেশি পিঠা তৈরি হয়। পিঠার রেসিপি দিয়েছেন জিন্নাত রায়হান সুমি
সুজি
উপকরণ
সুজি আধা কাপ, চিনি এক কাপের তিন ভাগের একভাগ, ময়দা আধা কাপ, গুঁড়ো দুধ আধা কাপ, লবণ ১ চিমটি, পানি আধা কাপ।
পুর তৈরি: পেস্তা, কিশমিশ, বাদাম কুচি ১ কাপ, গুঁড়ো দুধ আধা কাপ, ঘি ১ টেবিল চামচ, পেষা চিনি ১ টেবিল চামচ।
পুরের উপকরণ সব একসঙ্গে মেখে রাখুন।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. গুঁড়ো দুধ, সুজি ও লবণ সোয়া কাপ দিয়ে মেখে রাখুন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট।
২. ময়দা ও চিনি মিশিয়ে গোলা ফেটে নিন।
৩. ফ্রাইপ্যানে তেল মেখে গরম হলে গোলা দিয়ে রুটির মতো ছড়িয়ে দিন।
৪. রুটি শুকিয়ে গেলে ভেতরে পুর দিয়ে পাটির মতো ভাঁজ করে উঠিয়ে নিন।
ক্ষীরশা
উপকরণ
পোলাও চালের গুঁড়ো ২ কাপ, গুঁড়ো দুধ ২ টেবিল চামচ, চিনি বা খেজুরের গুড় সিকি কাপ, তেল আধা কাপ, ময়দা সিকি কাপ, ডিম ১টি, লবণ ১ চিমটি, বেকিং পাউডার আধা চা চামচ।
গোলা তৈরি : তেল ছাড়া সব উপকরণ পানি দিয়ে মেখে রেখে দিন ২ ঘণ্টা। পাতলা গোলা হবে।
ক্ষীরশা তৈরি : দুধ ২ লিটার, মালাই আধা কাপ, পোলাও চালের গুঁড়ো ২ টেবিল চামচ, চিনি ৩ টেবিল চামচ।
দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিন। চালের গুঁড়ো শুকনো খোলায় টেলে নিন। কিছু দুধ তুলে ঠান্ডা করে চালের গুঁড়ো গুলিয়ে দুধে ঢেলে দিন।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. ফ্রাইপ্যানে তেল গরম করে ডালের চামচে ২ চামচ গোলা দিয়ে ছড়িয়ে দিন রুটিরমতো করে।
২. রুটি শুকিলে ক্ষীরশা দিয়ে পাটির মতো মুড়িয়ে নিন।
৩. নামিয়ে ঠান্ডা বা গরম পরিবেশন করুন।
নারিকেল
উপকরণ
পোলাও চালের গুঁড়ো ২ কাপ, গুঁড়ো দুধ ২ টেবিল চামচ, বেকিং পাউডার আধা চা চামচ, তেল আধা কাপ, ময়দা সিকি কাপ, চিনি সিকি কাপ, লবণ ১ চিমটি।
গোলা তৈরি : তেল ছাড়া সব উপকরণ পানি দিয়ে গোলা করে রাখুন ২ ঘণ্টা।
পুরের উপকরণ : নারিকেল কোরা ২ কাপ, এলাচ ৩টি, গুঁড়ো দুধ ৪ টেবিল চামচ, চিনি ৩ টেবিল চামচ, দারুচিনি ২ টুকরো।
পুর তৈরি : সব উপকরণ জ¦াল দিয়ে চটচটে হলে নামিয়ে এলাচ, দারুচিনি তুলে ফেলে দিন।
যেভাবে তৈরি করবেন
১, ফ্রাইপ্যানে তেল দিয়ে ডালের চামচে ২ চামচ গোলা দিয়ে রুটির মতো ছড়িয়ে দিন।
২. রুটি শুকালে নারিকেলের পুর দিয়ে রুটি ভাঁজ করে পাটির মতো মুড়িয়ে নামিয়ে নিন।
সবজি
উপকরণ
পোলাও চালের গুঁড়ো ২ কাপ, ডিম ৪টি, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, ময়দা সিকি কাপ, লবণ আধা চা চামচ, আদা বাটা ২ চা চামচ, জিরা বাটা ১ চা চামচ।
পুর তৈরি : মুরগির কিমা ১ কাপ, বরবটি কুচি আধা কাপ, ধনেপাতা কুচি সিকি কাপ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, লবণ আধা চা চামচ, গরম মসলার গুঁড়ো ১ চা চামচ, গাজর কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি সিকি কাপ, আদা বাটা ১ চা চামচ, কাঁচা মরিচ কুচি ১ টেবিল চামচ, তেল ১ টেবিল চামচ।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. পিঠার উপকরণ মেখে পানি দিয়ে গোলা করে নিন।
২. চুলায় তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি দিন। নরম হলে আদা-রসুন বাটা দিয়ে কষিয়ে কিমা দিন। কষানো হলে লবণ ও আধা কাপ পানি দিয়ে ঢেকে সেদ্ধ করুন।
৩. পানি শুকিয়ে গেলে সবজি দিয়ে নাড়–ন। সবজি সেদ্ধ হলে বাকি উপকরণ দিয়ে ঢেকে মৃদু আঁচে ১০ মিনিট রেখে নামিয়ে ঠান্ডা করুন।
৪. ফ্রাইপ্যানে তেল গরম করে ডালের ১ চামচ গোলা দিয়ে রুটি বানিয়ে শুকালে ভিতরে পুর দিয়ে পেচিয়ে নামিয়ে নিন।
ইলিশ মাছ
উপকরণ
গোলা : পোলাও চালের গুঁড়ো ১ কাপ, ডিম ১টি, কাঁচা মরিচ বাটা ১ চা চামচ, লবণ সিকি চা চামচ, পানি আধা কাপ, ময়দা ২ টেবিল চামচ, কর্নফ্লাওয়ার ১ টেবিল চামচ, ধনেপাতা বাটা ১ টেবিল চামচ, আদা বাটা ১ চা চামচ।
গোলা তৈরি : সব উপকরণ মিশিয়ে পরিমাণমতো পানি দিয়ে পাটিসাপটার গোলা তৈরি করে নিন।
পুর তৈরি : ইলিশ মাছের টুকরো ৫টি, কাঁচা মরিচ কুচি ১ চা চামচ, সরিষা বাটা ২ চা চামচ, সরিষা তেল ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, হলুদের গুঁড়ো ১ চিমটি, লবণ আধা চা চামচ।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. হলুদ-লবণ ও পানি দিয়ে মাছ সেদ্ধ কাঁটা বেছে নিন।
২. কড়াইয়ে তেল গরম হলে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে নরম হলে সরিষা বাটা দিয়ে কষিয়ে মাছ, কাঁচা মরিচ কুচি ও একটু লবণ দিয়ে ভাজা ভাজা করে নামিয়ে নিন।
৩. ফ্রাইপ্যানে তেল দিয়ে পাটিসাপটার গোলা চামচের হাতল ঘুরিয়ে ছড়িয়ে ১ মিনিট ঢেকে রাখুন।
৪. রুটি শুকালে পুর দিয়ে রোল করে চুলা থেকে নামিয়ে নিন।
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছেন গ্যারেথ বেল। তাই এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে ওয়েলসের সাবেক অধিনায়কের। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মুখোমুখি হবে ম্যানচেস্টার সিটি ও ইন্তার মিলান। বেলের বাজি সিটির পক্ষে।
ইংলিশ ক্লাব সাউদাম্পটন ও টটেনহামে খেলার সময় ম্যানসিটির বিপক্ষে খেলেছেন বেল। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ফলাফলের সঙ্গে ম্যাচসেরা কে হবেন সেই মতামতও দিয়েছেন বেল। ইন্সটাগ্রামে বেল বলেন, 'ম্যানসিটি ৫-০ তে হারাবে ইন্তার মিলানকে।’
বেলের মতে, ম্যাচসেরা হবেন সিটি মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৩ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেন বেল। তার আগে কাতার বিশ্বকাপে খেলে বিশ্ব ফুটবল মঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে গেছেন।
মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ শিরোপা জিতেছে পেপ গার্দিওলার দল। আজ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে ট্রেবল হবে তাদের। ২০২১ এ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে চেলসির কাছে হেরেছিল ম্যানসিটি।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা প্রত্যাশামতো পায়নি অস্ট্রেলিয়া। তবে মিডল অর্ডাররা দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। তাতে ভারতকে ৪৪৪ রানের লক্ষ্য দেয় অসিরা। এই রান তাড়া করলেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন শিরোপাজয়ী হবে ভারত। রান টপকালে শুধু জয়ই হবে না, হবে রেকর্ডও। তাই শেষ দিনে বিরাট কোহলি ও অজিঙ্কা রাহানের পানে তাকিয়ে থাকবে ভারত।
টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হতে হলে বিশ্বরেকর্ডটাই করতে হবে ভারতকে। করতে হবে টেস্টের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। আর না হলে ড্রয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওভালে পঞ্চম দিনের পিচে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে কোহলি-রাহানেদের। এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই ভারতের সামনে।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে নেমে লন্ডনের ওভালে আজ চতুর্থ দিন শেষে ভারত তুলেছে ৩ উইকেটে ১৬৪ রান। দুই বছরের জন্য টেস্ট শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেতে রবিবার পঞ্চম তথা শেষ দিনে ভারতের দরকার ২৮০ রান, অস্ট্রেলিয়ার চাই ৭ উইকেট। শেষ দিনের শুরুটা করবেন অজিঙ্কা রাহানে (২০*), সঙ্গে বিরাট কোহলি (৪৪*)।
টেস্টের শেষ ইনিংসে ব্যাট করা সবসময়ই কঠিন। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে উইন্ডিজের ওই জয় এখনো সাদা পোশাকে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। সে হিসেবে ওভালে ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথটা অনেক কঠিন।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে ভারতের শুরুটা হয়েছিল ওয়ানডে মেজাজে। প্রথম ৭ ওভারে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল করেন ৪১ রান। গ্রিনের বিতর্কিত এক ক্যাচে বোল্যান্ডের বলে গিল আউট হলেও খেলার ধরন পাল্টাননি রোহিতরা।
১৯ ওভারে ৯১ রান তোলা ভারত ২০তম ওভারে হারায় রোহিতকে। এই ইনিংস খেলার পথে ওপেনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন রোহিত।
রোহিতের আউটের পর যখন সবাই ভাবছিলেন, উইকেটে থাকা চেতেশ্বর পূজারা তাঁর চিরাচরিত ধরন মেনে রয়েসয়ে ব্যাটিং করবেন। তবে পূজারা আউট হন নিজের চরিত্রের বাইরে গিয়ে কামিন্সের বলে আপার কাট খেলতে গিয়ে।
এর আগে ৪ উইকেটে ১২৩ রান তুলে গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে অস্ট্রেলিয়া। আজ চতুর্থ দিন সকালটা দুর্দান্ত শুরু করেন ভারতের পেসাররা। কাল ৪১ রানে অপরাজিত থাকা লাবুশেন চতুর্থ দিনে কোনো রান যোগ না করেই আউট হন উমেশ যাদবের দলে। স্লিপে চেতেশ্বর পূজারার হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১২৬ বলে ৪ চারে ৪১ রান করেছেন লাবুশেন। অ্যালেক্স ক্যারি (৬৬*) ও বোলার মিচেল স্টার্কের (৪১) ৯৩ রানের জুটিতে দারুণ পুঁজি গড়ে ফেলে অজিরা। সুবাদে ৮ উইকেটে ২৭০ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করা সহজ হয় দলটির। হয়তো জয়ের পথটাও তৈরি হলো ওই জুটিতে।
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেন বলেই লাতিন দেশটিকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যত উৎসাহ–উদ্দীপনা। এর আগেও বাংলাদেশের মানুষ ম্যারাডোনা–প্রীতি থেকে আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছেন। কিন্তু এবার কাতার বিশ্বকাপে অতীতের সেই ভালোবাসা বা উদ্দীপনাকে চরমভাবে হার মানিয়েছে। আর এর কারণ ওই একটাই, মেসি।
মেসি যে ইউরোপের ফুটবলের পাট চুকিয়ে মেজর লিগ সকারের দল ইন্টার মায়ামিতে যাচ্ছেন, সেই ঘোষণা আসে গত বুধবার। এখনও নাম লেখাননি, কবে থেকে মায়ামির হয়ে মাঠে নামবেন, সেটাও নিশ্চিত নয়। শুধু মেসি ইন্টার মায়ামিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইন্টার মায়ামির অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে।
গুগলে ফ্লোরিডাভিত্তিক এই ক্লাবটিকে খোঁজা শুরু করে সারা বিশ্বের মেসি–সমর্থকেরা। গুগলে গত ৭ দিনে সবচেয়ে বেশি মায়ামিকে খোঁজা হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই। গুগলে এই খোঁজার দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে মেসির নিজের দেশ আর্জেন্টিনার চেয়েও। কেউ কেউ বলতে পারেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা আর্জেন্টিনার চেয়ে বেশি ১৪ কোটি। সেই বিবেচনায় এটাই তো হওয়ার কথা।
মূলত গুগল ট্রেন্ডে কোনো ওয়েব সার্চের সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তার মানদণ্ড হচ্ছে ১০০। বাংলাদেশ এখানে পেয়েছে এক শই। শনিবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনা পেয়েছে ৮৪।
গুগল ট্রেন্ডের এই তালিকায় বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার পরের নামটা নেপালের। তারা পেয়েছে ৮২। চার নম্বরে আছে হাইতি (৮১), আর পাঁচে আইভরি কোস্ট (৭৩)। এই তালিকায় সেরা দশে আছে ইরাক, ইয়েমেন, কঙ্গো, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া। মেসিকে নিজেদের লিগে নিতে চাওয়া সৌদি আরব আছে এই তালিকার ১৪ নম্বরে।
যুক্তরাষ্ট্র আছে ৫১ নম্বরে। এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ নিজেদের দেশের ক্লাব সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ভালোই জানাশোনা থাকার কথা। তা ইন্টার মায়ামি ক্লাব হিসেবে যতই নতুন হোক না কেন।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ১২ বছরে ৭ বারই চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। পেপ গার্দিওলার অধীনেই ৫ বার। কিন্তু ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছে তারা। দুবছর আগে ফাইনালে উঠলেও পারেনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে। অবশেষে গেঁরো খুলতে পারল তারা। ইন্তার মিলানকে হারিয়ে ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসরের শিরোপা জিতেছে তারা।
ইস্তানবুলের ফাইনালে ইতালীয় ক্লাবকে ১-০ গোলে হারিয়ে এই আসরের নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। একমাত্র গোলটি করেছেন ৬৮ মিনিটে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি।
প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতে এবারের মৌসুমে ট্রেবলও পূরণ করে নিল সিটি। এর আগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের শিরোপা জিতেছিল তারা। তাদের আগে একমাত্র ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জিতেছিল তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর কোচ হিসেবে দুবার ট্রেবল জয়ের নতুন রেকর্ডও গড়লেন গার্দিওলা। এর আগে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে প্রথমবার ট্রেবল জিতেছিলেন তিনি।
২০২১-র ফাইনালে রদ্রিকে না খেলানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল গার্দিওলার। দুই বছর পর আরেকটি ফাইনালে সিটির জয়ের মূলনায়ক সেই রদ্রি। ডিফেন্সিভ এই মিডফিল্ডার গোল নিয়ে অতো ভাবেন না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১১ ম্যাচ খেলে একটা গোল ছিল তারা। সেটি ছিল এবারের আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে ঘরের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখকে ৩-০ গোলে হারানো ম্যাচের প্রথমটি। সেই গোলের পেছনে অবদান ছিল যার সেই বার্নার্দ সিলভা ইস্তানবুলে গোলশূণ্য প্রথমার্ধের পর ৬৮ মিনিটে ইন্তার গোললাইনের কাছ থেকে বল ফিরিয়ে দেন বক্সের মাথায়। অরক্ষতি রদ্রির কথা কেউ ভাবেইনি। ডান পায়ের চতুর শটে দুই ডিফেন্ডারের পা এড়িয়ে ডান দিকে জালে জড়ায় বল (১-০)।
এর পরপরই সমতা ফেরানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছিল ইন্তার। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, দিমারকোর হেড বাধা পায় পোস্টে। ২০২১'র ফাইনালে মতো এবারো চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন সিটির মধ্যমাঠের প্রাণ ডি ব্রুইনে। ৩৬ মিনিটেই মাঠে নামা ফিল ফোডেন ইন্তারের আক্রমণ ভাগে বার বার হানা দিয়েছেন। তবে সিটির আর গোল পায়নি। বরং গোল খেতে পারতো তারা। কিন্তু গোলরক্ষক এডারসনের দক্ষতায় দুবার নিশ্চিত বেচে যায়। রবিন গোসেনের ক্রস থেকে একেবারে ফাঁকায় থেকে হেড নেওয়ার সুযোগ পান লুকাকু। কিন্তু নেন গোলরক্ষক বরাবর। কোনো মতে পা দিয়ে ঠেকিয়ে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন এডারসন।
ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে এডারসনের আরও একটি দুর্দান্ত সেভ। কর্নার থেকে গোসেনের নেওয়া হেড ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি। এরপর রেফারি শেষ বাঁশি বাজালে উল্লাসে মাতে সিটিজেনরা।
সাধারণত প্রাথমিক স্তরে একটি দেশে এক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাই চালু থাকে। তবে কোনো কোনো দেশে এক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেও পাঠক্রমে (কারিকুলামে) ভিন্নতা থাকে সেটা সর্বোচ্চ দুই বা তিন ধরনের হয়ে থাকে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ঠিক করে দেয় শিক্ষার্থীরা কী ধরনের শিক্ষাগ্রহণ করবে।
বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণি থেকেই হরেক রকমের শিক্ষাব্যবস্থা এবং হরেক পরীক্ষা চালু আছে। এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা ১২ রকমে দেওয়া যায়। ফলে এক সনদের জন্য ১২ রকমের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আর শিক্ষা-প্রশাসনের পক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
প্রচলিত বা সাধারণ স্কুলগুলোতে যারা পড়ালেখা করে তারা ‘সাধারণ’ এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে থাকে। আর মাদ্রাসায় যারা পড়ে তারা দেয় দাখিল পরীক্ষা। দাখিল ভোকেশনাল নামেও একটি পরীক্ষা দেওয়া যায়। কারিগরিতে যারা পড়ে তারা দেয় এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায়। প্রাইভেট এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। মাধ্যমিকে যেসব বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভার্সন রয়েছে, সেখানে ইংরেজি ভাষায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায়।
ইংলিশ মিডিয়ামে (ইংরেজি ভার্সন নয়) যারা পড়ে, তাদের এসএসসি সমমানের পরীক্ষার নাম ‘ও’ লেভেল। সে ব্যবস্থাতেও এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামের স্কুলে পৃথক পড়ালেখা। আর সারা দেশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কওমি মাদ্রাসা; এ শিক্ষাকেও সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। কওমি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করা শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হয়েছে। কওমিতে হাফেজি ও মাওলানা (টাইটেল) ধারায় পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এম তারিক আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় বিভিন্ন ধারা থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ ধারাগুলো যদি একটা ফ্রেমওয়ার্ক ও মনিটরিংয়ে না থাকে, তাহলে বিশৃঙ্খলা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় বিভিন্ন ধারাকে একটা ফ্রেমওয়ার্কে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে; অর্থাৎ সবার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিষয় রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান ও মূল্যায়ন করা হচ্ছে কি না তা শিক্ষার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে মনিটরিং করতে হবে।’
তারিক আহসান বলেন, ‘কওমিতে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে, এটা ঠিক। তবে সরকার তাদের কিছু ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার সমমান দিচ্ছে। এই শিক্ষাকেও একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ এসএসসি ও ইংরেজি ভার্সনের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আছে ৯টি শিক্ষা বোর্ড। মাদ্রাসায় দুই ধরনের দাখিলের জন্য রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। কারিগরি শিক্ষার জন্য আছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায় এসএসসি পরীক্ষা। শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনেই প্রাইভেট এসএসসি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইদানীং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বিভাগীয় এবং জেলা শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এসবের বেশিরভাগের নিবন্ধন নেই। তারা এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামে পরীক্ষা দিলেও তাদের কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ নেই। শিক্ষা বোর্ডগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ করে না।
অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা চালু রয়েছে। করোনার পর দেশে সাধারণ স্কুলের সংখ্যা কমলেও কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। তাদের পরীক্ষার জন্য তারা নিজেরাই একাধিক বোর্ড বানিয়েছে। এগুলোতে সরকারের তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসিক বিষয়গুলো সবাই অনুসরণ করে। কারিগরি ও মাদ্রাসায় আলাদা কিছু বিষয় যুক্ত রয়েছে। আমি বলব, বিভিন্ন ধারা বলে কিছু নেই। তবে ব্যতিক্রম ইংলিশ মিডিয়াম। আমাদের দেশের ইংলিশ মিডিয়ামে সাধারণত ব্রিটিশ কারিকুলামে পড়ানো হয়। সেখানেও আমরা বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে একটি বিষয় যুক্ত করেছি। ওই কারিকুলামের শিক্ষার্থীরা যেন দেশপ্রেম ভুলে না যায় এবং নিজের ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি বিরূপ মনোভাবের না হয়। আরেকটি বড় ব্যতিক্রম কওমি মাদ্রাসা। সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।’
যারা খুব দরিদ্র তারা সাধারণত কওমি শিক্ষায় যায়। সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা থাকে। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত তারা সাধারণ স্কুলে লেখাপড়া করে। উচ্চবিত্তরা সাধারণত তাদের সন্তানদের ইংলিংশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ালেখা করান। ইদানীং মধ্যবিত্তরাও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও ইংরেজি ভার্সনের স্কুলে ঝুকছে। যারা পড়ালেখায় পিছিয়ে তারা সাধারণত কারিগরি শিক্ষায় যায়। আর যেসব অভিভাবক ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষার মিশ্রণ চান, তারা সাধারণত তাদের সন্তানদের আলিয়া মাদ্রাসায় পাঠান।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, দেশে একাধিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আবার শিক্ষাকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকছে না। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তার পছন্দের বাইরের শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ালেখা করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ফলে মাধ্যমিকে ঝরেপড়া কমছে না। আবার উচ্চশিক্ষায় গিয়েও অনেকে তাল মেলাতে পারছে না। অনেকে তার উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা তেমন কাজে লাগাতে পারছে না।
ব্রিটেনে সাধারণত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবার একই রকমের শিক্ষা। এরপর শিক্ষার্থীদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একদল যায় কারিগরি শিক্ষায়। অন্যদল যায় সাধারণ শিক্ষায়। যদিও দুই ভাগেই কিছু ট্রেড কোর্স থাকে। কে কোন ধরনের শিক্ষায় যাবে তাতে অভিভাবকদের কিছু বলার নেই। শিক্ষকরাই বিবেচনা করে শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাব্যবস্থা নির্ধারণ করেন।
কোনো দেশের উন্নয়নের মূল হচ্ছে কারিগরি শিক্ষার প্রসার। এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। কারিগরিতে এখনো মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না। সরকার ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরিতে নিতে পেরেছে বললেও তাতে নানা ফাঁকি রয়েছে। কওমি মাদ্রাসা ও ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষার্থী বাড়লেও কারিগরিতে সেভাবে শিক্ষার্থী বাড়ছে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশে^র বেশিরভাগ দেশেই শিক্ষাব্যবস্থা চলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায়। অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর পড়ালেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলেই সময় কাটায়। আমাদের দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ালেখা করা যায়। তবে টিউশন ফি ও বই ছাড়াও শিক্ষার্থীদের নানা খরচ থাকে, যা পরিবারকে বহন করতে হয়। মাধ্যমিক থেকে পুরোপুরিই পড়তে হয় অভিভাবকদের খরচে। ফলে অভিভাবকদের পছন্দে ও বাণিজ্যিক কারণে নানা ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এর থেকে সরকার কোনোভাবেই বের হতে পারছে না। বের হওয়ার পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে দেশি-বিদেশি শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছিল; অর্থাৎ সবাইকে কিছু কোর সাবজেক্ট পড়তে হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। সবাই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে আচ্ছন্ন। মতভেদও রয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা যায়, কারণ সেখানে পড়তে পয়সা লাগে না। আমাদের হাজার হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারীকরণ করেছি। কিন্তু রাষ্ট্র শিক্ষার্থীদের পুরো দায়িত্ব নিচ্ছে না। যত দিন রাষ্ট্র দায়িত্ব নেবে না, তত দিন সব ধরনের শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফরমে আনা কঠিন।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’