
শীতে সবার বাড়িতেই কমবেশি পিঠা তৈরি হয়। পিঠার রেসিপি দিয়েছেন জিন্নাত রায়হান সুমি
সুজি
উপকরণ
সুজি আধা কাপ, চিনি এক কাপের তিন ভাগের একভাগ, ময়দা আধা কাপ, গুঁড়ো দুধ আধা কাপ, লবণ ১ চিমটি, পানি আধা কাপ।
পুর তৈরি: পেস্তা, কিশমিশ, বাদাম কুচি ১ কাপ, গুঁড়ো দুধ আধা কাপ, ঘি ১ টেবিল চামচ, পেষা চিনি ১ টেবিল চামচ।
পুরের উপকরণ সব একসঙ্গে মেখে রাখুন।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. গুঁড়ো দুধ, সুজি ও লবণ সোয়া কাপ দিয়ে মেখে রাখুন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট।
২. ময়দা ও চিনি মিশিয়ে গোলা ফেটে নিন।
৩. ফ্রাইপ্যানে তেল মেখে গরম হলে গোলা দিয়ে রুটির মতো ছড়িয়ে দিন।
৪. রুটি শুকিয়ে গেলে ভেতরে পুর দিয়ে পাটির মতো ভাঁজ করে উঠিয়ে নিন।
ক্ষীরশা
উপকরণ
পোলাও চালের গুঁড়ো ২ কাপ, গুঁড়ো দুধ ২ টেবিল চামচ, চিনি বা খেজুরের গুড় সিকি কাপ, তেল আধা কাপ, ময়দা সিকি কাপ, ডিম ১টি, লবণ ১ চিমটি, বেকিং পাউডার আধা চা চামচ।
গোলা তৈরি : তেল ছাড়া সব উপকরণ পানি দিয়ে মেখে রেখে দিন ২ ঘণ্টা। পাতলা গোলা হবে।
ক্ষীরশা তৈরি : দুধ ২ লিটার, মালাই আধা কাপ, পোলাও চালের গুঁড়ো ২ টেবিল চামচ, চিনি ৩ টেবিল চামচ।
দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিন। চালের গুঁড়ো শুকনো খোলায় টেলে নিন। কিছু দুধ তুলে ঠান্ডা করে চালের গুঁড়ো গুলিয়ে দুধে ঢেলে দিন।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. ফ্রাইপ্যানে তেল গরম করে ডালের চামচে ২ চামচ গোলা দিয়ে ছড়িয়ে দিন রুটিরমতো করে।
২. রুটি শুকিলে ক্ষীরশা দিয়ে পাটির মতো মুড়িয়ে নিন।
৩. নামিয়ে ঠান্ডা বা গরম পরিবেশন করুন।
নারিকেল
উপকরণ
পোলাও চালের গুঁড়ো ২ কাপ, গুঁড়ো দুধ ২ টেবিল চামচ, বেকিং পাউডার আধা চা চামচ, তেল আধা কাপ, ময়দা সিকি কাপ, চিনি সিকি কাপ, লবণ ১ চিমটি।
গোলা তৈরি : তেল ছাড়া সব উপকরণ পানি দিয়ে গোলা করে রাখুন ২ ঘণ্টা।
পুরের উপকরণ : নারিকেল কোরা ২ কাপ, এলাচ ৩টি, গুঁড়ো দুধ ৪ টেবিল চামচ, চিনি ৩ টেবিল চামচ, দারুচিনি ২ টুকরো।
পুর তৈরি : সব উপকরণ জ¦াল দিয়ে চটচটে হলে নামিয়ে এলাচ, দারুচিনি তুলে ফেলে দিন।
যেভাবে তৈরি করবেন
১, ফ্রাইপ্যানে তেল দিয়ে ডালের চামচে ২ চামচ গোলা দিয়ে রুটির মতো ছড়িয়ে দিন।
২. রুটি শুকালে নারিকেলের পুর দিয়ে রুটি ভাঁজ করে পাটির মতো মুড়িয়ে নামিয়ে নিন।
সবজি
উপকরণ
পোলাও চালের গুঁড়ো ২ কাপ, ডিম ৪টি, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, ময়দা সিকি কাপ, লবণ আধা চা চামচ, আদা বাটা ২ চা চামচ, জিরা বাটা ১ চা চামচ।
পুর তৈরি : মুরগির কিমা ১ কাপ, বরবটি কুচি আধা কাপ, ধনেপাতা কুচি সিকি কাপ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, লবণ আধা চা চামচ, গরম মসলার গুঁড়ো ১ চা চামচ, গাজর কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি সিকি কাপ, আদা বাটা ১ চা চামচ, কাঁচা মরিচ কুচি ১ টেবিল চামচ, তেল ১ টেবিল চামচ।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. পিঠার উপকরণ মেখে পানি দিয়ে গোলা করে নিন।
২. চুলায় তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি দিন। নরম হলে আদা-রসুন বাটা দিয়ে কষিয়ে কিমা দিন। কষানো হলে লবণ ও আধা কাপ পানি দিয়ে ঢেকে সেদ্ধ করুন।
৩. পানি শুকিয়ে গেলে সবজি দিয়ে নাড়–ন। সবজি সেদ্ধ হলে বাকি উপকরণ দিয়ে ঢেকে মৃদু আঁচে ১০ মিনিট রেখে নামিয়ে ঠান্ডা করুন।
৪. ফ্রাইপ্যানে তেল গরম করে ডালের ১ চামচ গোলা দিয়ে রুটি বানিয়ে শুকালে ভিতরে পুর দিয়ে পেচিয়ে নামিয়ে নিন।
ইলিশ মাছ
উপকরণ
গোলা : পোলাও চালের গুঁড়ো ১ কাপ, ডিম ১টি, কাঁচা মরিচ বাটা ১ চা চামচ, লবণ সিকি চা চামচ, পানি আধা কাপ, ময়দা ২ টেবিল চামচ, কর্নফ্লাওয়ার ১ টেবিল চামচ, ধনেপাতা বাটা ১ টেবিল চামচ, আদা বাটা ১ চা চামচ।
গোলা তৈরি : সব উপকরণ মিশিয়ে পরিমাণমতো পানি দিয়ে পাটিসাপটার গোলা তৈরি করে নিন।
পুর তৈরি : ইলিশ মাছের টুকরো ৫টি, কাঁচা মরিচ কুচি ১ চা চামচ, সরিষা বাটা ২ চা চামচ, সরিষা তেল ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, হলুদের গুঁড়ো ১ চিমটি, লবণ আধা চা চামচ।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. হলুদ-লবণ ও পানি দিয়ে মাছ সেদ্ধ কাঁটা বেছে নিন।
২. কড়াইয়ে তেল গরম হলে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে নরম হলে সরিষা বাটা দিয়ে কষিয়ে মাছ, কাঁচা মরিচ কুচি ও একটু লবণ দিয়ে ভাজা ভাজা করে নামিয়ে নিন।
৩. ফ্রাইপ্যানে তেল দিয়ে পাটিসাপটার গোলা চামচের হাতল ঘুরিয়ে ছড়িয়ে ১ মিনিট ঢেকে রাখুন।
৪. রুটি শুকালে পুর দিয়ে রোল করে চুলা থেকে নামিয়ে নিন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় স্টাইল। একসময়কার লম্বা ও ঝোলা ব্যাগগুলো ক্রমেই আধুনিক ও স্টাইলিস্ট হচ্ছে। শুধু ভ্রমণ নয়, হাল আমলে ফ্যাশনপ্রেমী তরুণ-তরুণীদের পিঠে এখন ঝুলতে দেখা যাচ্ছে নানা ধরনের ব্যাকপ্যাক। এসব ব্যাকপ্যাক একটা সময় পর্যন্ত তরুণরা বেশি ব্যবহার করলেও আজকাল স্টাইলিস্ট নানা ধরনের ব্যাকপ্যাক দেখা যাচ্ছে মেয়েদের ফ্যাশনে। লিখেছেন জাহান রিসা
ফিটফাট পোশাক, জুতসই সানগ্লাস, স্টাইলিস্ট জুতোতেই ফ্যাশনেবল এই শব্দটা আটকে নেই আপনার। পারফেক্ট আউটফিটে নতুনত্ব দিতে পারে সুন্দর একটা ব্যাগ। সময়োপযোগী স্টাইলিস্ট ও মানানসই ব্যাগের ব্যাপারে সবাই কমবেশি সচেতন। মানুষের প্রয়োজনের তাগিদে ব্যাগের আকারেও এসেছে ভিন্নতা। ডাবল হ্যান্ডেল থাকে এবং দুই কাঁধে নেওয়া যায় এমন ব্যাগকে আমরা ব্যাকপ্যাক নামে চিনি। এ সময়ে মেয়েদের ব্যাগগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় ও আরামদায়কের দিক থেকে বিবেচনা করলে ব্যাকপ্যাক সবার প্রথমে আসে, কারণ এ ব্যাগ নেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিশেষ সুবিধা এটি দুই কাঁধে ভর করে পিঠের ওপর নেওয়া যায়, ফলে ব্যাগের ওজন অনেকটাই কমে আসে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বহনে বাহারি এ ব্যাগগুলো অনন্য। বেশির ভাগ ব্যাকপ্যাকই ওয়াটারপ্রুফ, ফলে ভিজে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। সব বয়সীর পছন্দের তালিকায় আছে ব্যাকপ্যাক। প্রতিটি ব্যাকপ্যাকের একাধিক চেম্বার থাকে এবং চেম্বারগুলো বিভিন্ন আকারের হয়, যাতে ব্যবহারকারী তার পছন্দের জিনিসগুলো ঠিক স্থানে রেখে নিশ্চিন্তে বহন করতে পারে। স্কুল ও কলেজপড়–য়া মেয়েদের বই সঙ্গে রাখার প্রয়োজন হয়, তাই তারা একটু বড় সাইজের ব্যাগ বেশি পছন্দ করে। বড় সাইজের ব্যাগগুলোর মেইন চেম্বারটা বেশ বড় হয়। এতে সহজে অনেক বই রাখা যায়। এ ধরনের ব্যাগ অনেকে ল্যাপটপ, কাপড়চোপড় কিংবা অন্য জিনিসপত্র বহনে ব্যবহার করেন। কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের মেয়েরা একটু ছোট সাইজের ব্যাগ বহনে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অধিক জিনিসপত্র আনার ক্ষেত্রে কাঁধে ঝোলানো বড় ব্যাকপ্যাকগুলোই বেশি ব্যবহার করেন। সব ধরনের জিনিসপত্র একসঙ্গে গুছিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাকপ্যাকের সুবিধাই বেশি। আকারে বৈচিত্র্যময়তার পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি ব্যাগেই টিফিন বক্স, ছাতা, ওয়াটার পট নেওয়ার সুবিধা তো আছেই।
লেদারের তৈরি ব্যাকপ্যাকগুলোর নকশা খুবই সাধারণ। প্রায় প্রতিটি ব্যাগে নানাভাবে ব্যবহার করার সুবিধা রয়েছে। কারণ দুই থেকে চার ধরনের বেল্ট থাকে। তাই খুব সহজেই কখনো কাঁধে ঝুলিয়ে, কখনো বা পিঠে ভর করে, আবার কখনো বা হ্যান্ডব্যাগের মতো হাতে নেওয়া যায়। এ ছাড়া আর্টিফিশিয়াল লেদারের বেশ কিছু ব্যাকপ্যাক পাওয়া যায়, যেগুলো লেদারের ব্যাগের মতোই আকর্ষণীয়। ফেব্রিকসে তৈরি ব্যাগগুলো খুব কালারফুল, কারণ এগুলোর ওপর বাহারি সব ডিজাইন থাকে। যেমন গ্লিটারের তৈরি বিভিন্ন রকমের পুতুল, মানুষের মুখোশ, বাড়ি, গাছপালা, পশুপাখি, নানা ধরনের দৃশ্য, কখনো বা হাস্যোজ্জ্বল ইমোজি। এ ছাড়া কখনো কখনো এমব্রয়ডারির কাজ করার নানান ডিজাইন চোখে পড়ে। বেশির ভাগ ব্যাগগুলোতে চেইনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া রংবেরঙের পুতুল, আর্টিফিশিয়াল স্টার ইত্যাদি ঝোলানো থাকে।
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র স্বাচ্ছন্দ্যে বহন করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকপ্যাক পাওয়া যাচ্ছে। ল্যাপটপ রাখা কিংবা ক্লাসে ব্যবহারের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যাকপ্যাক। এ ছাড়া হাতে ঝোলানোর জন্যও রয়েছে নানা ধরনের সুদৃশ্য ব্যাগ। বর্তমানে এক ধরনের স্মার্টব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলোর ভেতরে মোবাইল রেখে ব্যাগের নির্দিষ্ট স্থানে হেডফোন কানেকশন জুড়ে দিলেই গান শোনা যাবে। ইমারজেন্সি মুহূর্তে ফোনে চার্জ দেওয়ার জন্য কিছু কিছু ব্যাগে ইউএসবি পোর্ট সংযুক্ত আছে। এসব সুবিধা নেওয়া ব্যাকপ্যাক মেয়েদের জন্যও তৈরি হচ্ছে।
মেয়েদের ব্যাকপ্যাক ব্যবহারের সুবিধা হলো ওজনে এটি হালকা এবং একসঙ্গে অনেক অপশন থাকে। অনেকেই আছেন হ্যান্ডব্যাগে ল্যাপটপ ক্যারি করতে চান না। তাদের জন্য নানা ধরনের পিঠে ঝোলানো ব্যাগপ্যাক পাওয়া যাচ্ছে। এসব ব্যাগের মধ্যে কাপড় দিয়ে তৈরি ব্যাগের দামটা হাতের নাগালে থাকায় এর চাহিদা বেশি। কাপড়ের ব্যাগগুলোতে স্ক্রিন প্রিন্টের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে লোকজ নানা মোটিভ। ছাত্রছাত্রীদের জন্য ক্লাসে ব্যবহার উপযোগী কাপড়, রেক্সিন ও আর্টিফিশিয়াল লেদারের নানা ধরনের ব্যাকপ্যাক পাওয়া যাচ্ছে। ব্যবহারের সুবিধার জন্য যেমন জনপ্রিয়, তেমনি দামটাও হাতের নাগালে।
এ ছাড়া প্যারাসুট কাপড়ের বেশ কিছু ব্যাগ পাওয়া যায়, যেগুলো টেকসই ও ফ্যাশনেবল। এ ধরনের ব্যাগের সুবিধা হলো খুব সহজে ওয়াশ করা যায়। ব্যাকগুলোতে কালারফুল চুমকি দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইন করা আছে। প্রায় প্রতিটি ব্যাগে এক্সট্রা একটা বেল্ট থাকে, যাতে বড় লাগেজের সঙ্গে আটকে সহজেই ব্যবহার করা যায়। পাটের তৈরি ছোট-বড় বিভিন্ন ব্যাকপ্যাকও পাওয়া যাচ্ছে। তবে পাটের ব্যাকপ্যাকগুলোতে দুই থেকে তিনটার বেশি চেম্বার থাকে না।
দরদাম : পিওর লেদারের ব্যাগগুলোর দাম তুলনামূলক একটু বেশি। যার দাম পড়বে ১৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। আর্টিফিশিয়াল লেদারের ব্যাকপ্যাক পাবেন ৯০০ থেকে ১৫০০ মধ্যে। এ ছাড়া ফেব্রিকস কিংবা প্যারাসুট কাপড়ের তৈরি ব্যাকপ্যাক কিনতে আপনাকে ৯০০ থেকে ১৩০০-এর মতো টাকা খরচ করতে হবে। খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের ব্যাকপ্যাক পাবেন ৫০০০ টাকায়। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড আড়ং, ব্যাগপ্যাকার্স, ব্যাগবিডিতে পাবেন নানা ধরনের ব্যাকপ্যাক। দাম পড়বে সর্বনিম্ন ৭০০ টাকা।
হার্ট সুস্থ রাখতে কী করবেন জানালেন ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের প্রধান পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার
আমরা সবাই জানি, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। রোগ সারানোর চেষ্টায় যতটুকু আর্থিক জোগান দিতে হয়, তার তুলনায় একটু সাবধানতা, একটু নিয়ম মেনে চলার জন্য আর্থিক জোগান কিছুই নয়। আমরা অনেক সময় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে গিয়ে উদাসীন থাকি। অথচ হার্ট ভালো রাখতে ইচ্ছা শক্তিই জরুরি।
যা করবেন
ঘুম থেকে উঠে দম চর্চা করুন সকালে ও বিকেলে। একেকবার কমপক্ষে ২০ বার করে করুন। নাক দিয়ে লম্বা দম নিয়ে মুখ দিয়ে লম্বা করে ছেড়ে দিন। খালি পেটে পানি পান হার্টকে সুস্থ রাখে। খালি পেটে অন্তত ২ গ্লাস পানি পানের অভ্যাস করুন। সারা দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পানের চেষ্টা করুন। দেহের প্রতিটি অঙ্গ সুস্থ রাখতে দেহ সচল রাখা প্রয়োজন। সেজন্য অন্তত ২০ মিনিট ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। সকালের এই ২০ মিনিটের এক্সারসাইজ আপনাকে প্রায় ১৬ ঘণ্টা কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করবে। সকালের খাবারের মনোযোগী হন। অধিক আঁশযুক্ত ও প্রোটিনযুক্ত খাবার প্রতিদিনের সকালে অন্তর্ভুক্ত করুন। এরই সঙ্গে না খেয়ে বাড়ির বাইরে যেন না যেতে হয় সে বিষয়ে নজর দিন। প্রতিদিনের খাবারে ভিন্নতা রাখা প্রয়োজন। অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন রঙিন শাকসবজি, ফল অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রোটিন গ্রহণে উদ্ভিজ্জ এবং প্রাণিজ মিলিয়ে গ্রহণ করুন। বয়সভেদে পরিবেশন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু আইটেমগুলো রাখার চেষ্টা করুন। সপ্তাহে অন্তত দুবার সামুদ্রিক মাছ খান। স্ন্যাক্স হিসেবে বিভিন্ন জাতের বাদাম ও ফল প্রাধান্য দিন। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, প্রসেসড খাবার, রেডিফুড সীমিত রাখুন। পাশাপাশি লিকুইড ক্যালরি অর্থাৎ কোমলপানীয় প্রতিদিনের খাবার থেকে বর্জন করুন। হার্টের সুস্থতায় মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জোর দিন। নিজে মানসিক আনন্দ পান এমন ধরনের কাজগুলো প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় অন্তর্ভুক্ত করুন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখুন। ছোট-বড় সবার সঙ্গেই আনন্দে থাকার চেষ্টা করুন। কিছু ছোট রোগ হার্টকে দুর্বল করে দেয়। যেমন : ফ্লু, নিউমোনিয়া অথবা বিভিন্ন ইনফেকশন। তা-ই প্রতিদিন বারবার হাত ধোয়া, কুলি করা, নাক পরিষ্কার রাখুন। রাতের ঘুম সুস্থতার জন্য জরুরি। অতিরিক্ত রাত না জেগে ভালো ঘুম দেওয়ার চেষ্টা করুন।
অনেক সময় অতিরিক্ত রাগ, টেনশন, মানসিক চাপ, শত্রু ভাবাপন্ন মনোভাব হার্টকে দুর্বল করে ফেলে। অতএব হার্ট সুস্থ রাখার চেষ্টা অসুস্থ হওয়ার আগেই করা প্রয়োজন। হার্ট সুস্থ রাখতে অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে খাদ্যতালিকা তৈরি করে নিতে পারেন।
ব্রন বা ব্ল্যাক হেডসের সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। এর থেকে সমাধানের নানা উপায়ও জানি। কিন্তু অনেকের ত্বকেও হোয়াইট হেডসের সমস্যা দেখা দেয়। অথচ হোয়াইট হেডসের সমস্যা নিয়ে ভাবি না। ত্বক ভালো রাখতে হোয়াইট হেডস দূর করাও জরুরি। ত্বকের হোয়াইট হেডস হলো এক ধরনের অ্যাকনে যা ক্লগড হেয়ার ফলিকলের জন্য হয়। ত্বকের মরা কোষ, ব্যাকটেরিয়া এবং ধুলোময়লা আমাদের ত্বকের ওপরের হেয়ার ফলিকলসে জমে যায় এর ফলে এক ধরনের সোলেন গ্রোথ হয়। সাধারণত ত্বকে অতিরিক্ত তেল এবং ব্যাকটেরিয়া জমা হয়, তখনই দেখা দেয় হোয়াইট হেডস। বয়ঃসন্ধির সময় থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক, সবারই এই সমস্যা হতে পারে। মুখের পাশাপাশি ঘাড়ে, গলায়, পিঠে এবং হাতেও হোয়াইট হেডস হয়।
কী করবেন
ত্বকে কখনো সেন্টেড সাবান বা ক্লিনজার ব্যবহার করবেন না। ক্লিনজার কেনার সময়ে দেখে নিন, তাতে স্যালিসিলিক অ্যাসিড বা আলফা হাইড্রোক্সিল অ্যাসিড আছে কি না। কারণ এতে থাকা উপাদান বন্ধ লোমকূপের মুখ খুলতে সাহায্য করে। ত্বক পরিষ্কার রাখা মানেই যে বারবার মুখ ধুতে হবে এমন নয়। বারবার মুখ ধোয়ায় অ্যাকনে এবং ইনফ্ল্যামেশনের সমস্যা বাড়ে। সপ্তাহে দু থেকে তিনবার ত্বক এক্সফোলিয়েট করা একান্তই জরুরি। ত্বকের ধরন অনুযায়ী স্ক্রাব ব্যবহার করতে হবে। এক্সফোলিয়েশন লোমকূপে জমে থাকা ময়লা যেমন বের করে তেমন ত্বকে কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। এক্সফোলিয়েশনের পরে অবশ্যই ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। না হলে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। ময়েশ্চারাইজার ত্বক প্রোটেক্টিভ লোশন হিসেবেও কাজ করে। বারবার হোয়াইট হেডসে হাত দেওয়া বা খুঁটবেন না। এতে সমস্যা আরও বেড়ে যাবে, একটা সময় ত্বকে দাগ পড়ে যায়। হোয়াইট হেডসের সমস্যা খুব বেড়ে গেলে ত্বক বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে পারেন। মাসে অন্তত একবার পারলারে গিয়ে হোয়াইট হেডস দূর করে নিতে পারেন। হোয়াইট হেডস দূর করতে ঘরে বানানো ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
মধু ও ডিমের প্যাক : মধুতে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান থাকে। যা ত্বকের হোয়াইট হেডসের আকার এবং ইনফ্ল্যামেশন কমাতেও সাহায্য করে। ত্বকের অতিরিক্ত তেলও শুষে নেয়। ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে এক টেবিল চামচ দুধ ও দুই টেবিল চামচ মধু মেশান। এরপরে ডিমের হলুদ অংশ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। এই প্যাক অতিরিক্ত তেল ও হোয়াইট হেডস তুলে নেবে।
ঘরে বসে অনেকেই চুল কালার করেন তেমনি পারলারে গিয়েও কালার করান। এ সময়ে তরুণদের মধ্যে ফাঙ্কি কালারগুলো বেছে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই রংগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে মেরুন,পার্ডেল, ব্লু, হোয়াইট।
গত বছরও চুল কালার করতে হাল্কা ব্রাউন কিংবা অফ হোয়াইট কালার বেছে নিতেন। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে এখন বাজারে এসেছে বিভিন্ন ধরনের হেয়ার কালার। প্রিয় শপের বিক্রয়কর্মী আরমান হোসেন জানিয়েছে, মেয়েদের চুলে লাল, নীল, আকাশি, গোলাপি হেয়ার কালারের চাহিদা বেড়েছে। তাদের এখান থেকে ভিন্নধর্মী হেয়ার কালারের বিক্রিও বেড়েছে। বেশ কয়েকটি অভিজাত শপিং মলের বিউটি প্রোডাক্ট বিক্রি হচ্ছে এমন দোকানে বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মেয়েরা সবচেয়ে বেশি আকাশি গোলাপি হেয়ার কালার কিনছেন। জনপ্রিয় ব্র্যান্ডসমূহের মধ্যে Garnier, Loreal Paris, Wella, Revlon অন্যতম। ত্বকের ও চুলের শেডের সঙ্গে মিল রেখে বেছে নিতে হয় হালকা অথবা গাঢ় রঙের যে কোনো হেয়ার কালার।
হেয়ার এক্সপার্ট সাবরিনা তারিন বলেছেন, এখন মেয়েরা নানা ধরনের হেয়ার কালার বেছে নিচ্ছেন। তারা চুলে ভিন্ন রঙের স্টিকও করতে চায়। সবচেয়ে করছেন লাল এবং নীল রংগুলো। যদিও হেয়ার কালারের বিভিন্ন নাম রয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হেয়ার কালার হচ্ছে বিচ ব্রাউন, ক্যারামেল, গোল্ডেন ব্রাউন, চেস্টনাট, মেহগনি রং, অ্যাশ ব্রাউন, অ্যাশ ব্ল্যাক। তবে লাল, নীল, সবুজ, আকাশি, গোলাপি কালারও নারীরা এখন স্টিক আকারে ব্যবহার করে থাকেন।’
একটা সময় রঙিন হেয়ার কালারগুলো খুব একটা ব্যবহার করতে কেউ আগ্রহী হতো না। কারণ এই কালারগুলো দুই থেকে তিন সপ্তাহের পর চুল ওয়াশ করলে চলে যেত। এখন যেসব ফাঙ্কি হেয়ার কালার রয়েছে তা অনেকদিন লাস্টিং করে। আর এইসব হেয়ারকারার লাস্টিং করাতে বাজারে পার্পেল শ্যাম্পুও পাওয়া যাচ্ছে।
চুলে কালারের স্থায়িত্ব রাখতে বিভিন্ন রকম শ্যাম্পু, সিরাম, কালার প্রটেকশন তেলসহ আরও অনেক কিছু উপাদান রয়েছে। তবে এলার্জি বা শরীরের অন্যান্য সমস্যা থাকলে প্রথমে শরীরের কোনো একটা জায়গায় লাগিয়ে দেখতে হবে ইরিটেশন হচ্ছে কি না। হেয়ার কালারের কারণে চুল অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়, তাই নিয়মিত হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। আমাদের দেশের মেয়েদের ত্বক সাধারণত উষ্ণ টোনেরই হয়। তাই চুলের রং করতে হলে গাঢ় বাদামি, লাল বা বার্গান্ডির মতো শেড বেছে নিতে পারেন। এমন রং বেছে নিন যা আপনার চুলের আসল রঙের চেয়ে হয় এক বা দুই শেড হালকা অথবা গাঢ়।
কোথায় পাবেন : সুপার শপ এবং বিউটি প্রোডাক্ট পাওয়া যায় এমন দোকান থেকেই হেয়ার কালার কেনার চেষ্টা করুন। সাজগোজ, আলমাস, প্রিয়শপ ও যমুনা ফিউচার পার্ক ও ডিসিসি মার্কেটের প্রসাধনী পাওয়া যায় এমন দোকান থেকে কিনতে পারেন।
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।