
ডাল উদ্ভিজ্জ আমিষের একটি প্রধান উৎস। যদিও গুণগত মানের দিক থেকে প্রাণিজ আমিষ উদ্ভিজ্জ আমিষের তুলনায় ভালো। ডালের আমিষ গরুর মাংস বা খাসির মাংসের চেয়ে অনেক গুণে ভালো, কারণ ডালে ক্ষতিকর সম্পৃক্ত ফ্যাট নেই বললেই চলে। আমাদের দেশে নানান রকমের ডাল পাওয়া গেলেও মসুর, মুগ, কালাই ও ছোলাই বেশি জনপ্রিয়। বাঙালির খাদ্যাভ্যাসের একটি ভালো দিক হচ্ছে ডালের ব্যবহার। প্রাচীনকাল থেকেই এখানকার মানুষ ভাতের সঙ্গে ডাল খেয়ে আসছেন। একটি মজার বিষয় হলো, ভাত ও ডাল একসঙ্গে খেলে ডালের আমিষের গুণগত যে ঘাটতি থাকে তা পূরণ হয়ে যায়। সেজন্যই ছোট শিশুদের ডাল-চালের খিচুড়ি খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। ডাল ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের জন্য সমান উপযোগী ও স্বাস্থ্যকর একটি খাবার।
পুষ্টিতথ্য : আগেই বলেছি ডাল আমিষ প্রধান একটি খাবার। তবে ডালের প্রকারভেদে আমিষসহ অন্যান্য খাদ্য উপাদানের কিছুটা তারতম্য পরিলক্ষিত হয়, যা নিচের চার্টে দেখানো হলো (প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা ডালে)
এ ছাড়া ডাল থেকে আমরা নানান রকমের ভিটামিন ও খনিজ লবণ পেয়ে থাকি। উল্লেখযোগ্য অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের মধ্যে ডালে আছে প্রচুর পরিমাণে মলিবেডনাম, ফলেট, ট্রিপ্টোফ্যান, ম্যাংগানিজ ও আয়রন। তা ছাড়া থায়ামিন, ফসফরাস, কপার ও জিংক পাওয়া যায় অল্প পরিমাণে।
স্বাস্থ্যতথ্য : ডাল আমাদের শরীরের আমিষের চাহিদা পূরণ করে দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। খাদ্য আঁশের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস হলো ডাল। সব ধরনের ডালেই বেশ ভালো পরিমাণে খাদ্য আঁশ আছে। ফলে ডাল হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের জন্য আদর্শ খাবার। সেই সঙ্গে এটি খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে বাড়িয়ে দেয় ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ। ডালের শর্করা জটিল প্রকৃতির, তাই এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অন্যান্য খাদ্যশস্যের তুলনায় কম। ফলে এটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। ডালে একসঙ্গে আয়রন ও ফলেট দুটিই পাওয়া যায়। গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই দুটি উপাদান বেশ প্রয়োজনীয়। সেই সঙ্গে আয়রন, রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। যারা শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে চান তারা ভাতের পরিমাণ কমিয়ে তার বদলে নিয়মিত ডাল খেতে পারেন। এতে ক্ষুধা হ্রাস পাওয়াসহ ভরা পেটের অনুভূতি থাকবে দীর্ঘক্ষণ। ছোট শিশুদের শরীর বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে ভাত-ডাল-সবজি-তেলের খিচুড়ির জুড়ি নেই। তাই দিনে কমপক্ষে একবার শিশুকে খিচুড়ি খাওয়ানো দরকার। এ ক্ষেত্রে সঙ্গে এক টুকরা লেবু চিপে দিয়ে বাড়াতে পারেন আয়রনের শোষণক্ষমতা। কালাই ও ছোলার ডালে নানান রকমের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট আছে, যা কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
মেয়েদের ম্যানোপোজ-পরবর্তী সময়ের হট ফ্ল্যাশ থেকে মুক্তি দিতে পারে মুগডাল। এর ফ্ল্যাভোনয়েড হরমনাল কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। প্রায় সব ধরনের ডালেই প্রোটিয়েজ ইনহিবিটর নামে এক ধরনের উপাদান আছে, যা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
সতর্কতা : ডালের শর্করা যদিও জটিল, এর ক্যালরি মূল্য কম নয়, তাই যাদের ডায়াবেটিস ও শরীরের ওজন বেশি তাদের পরিমাণের প্রতি দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। ডালে পিউরিন নামাক এক ধরনের উপাদান আছে, যাদের গাউট অথবা কিডনিতে পাথর আছে তাদের সতর্কতার সঙ্গে ডাল খাওয়া উচিত। এ ছাড়া ডাল খেলে অনেকের অ্যালার্জি বা বদহজম হতে পারে। এ ক্ষেত্রে রান্না করার আগে ডালকে ৬-৮ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে সমস্যা কিছুটা কমতে পারে।
ভাষার মাসে একুশের রঙ হিসেবে সাদা আর কালো আমাদের ভাবনার জগৎকে অধিকার করে আছে। সেই সঙ্গে ছাই ও ঘিয়ে, কখনো লাল রঙও জায়গা করে নিয়েছে। ফ্যাশন হাউজগুলো পোশাকের নকশায় নানাভাবে একুশের মোটিফ ও রঙ তুলে ধরে একুশ উদযাপন করেন। লিখেছেন মোহসীনা লাইজু
একুশের পোশাকে সবার প্রথমে আসে রঙ। প্রধান বিষয় হচ্ছে বাংলা ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন সেসব শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা বোঝাতে সাদা ও কালো রঙ। এ দুটো রঙ ছাড়া একুশকে কোনোভাবেই প্রকাশ করা যায় না। নকশায় নিত্যনতুনত্ব আনতে পোশাকে সাদাকালো রঙের ব্যবহারের পাশাপাশি শুরু হয়েছে একুশের মোটিফ, কবিতা, স্লোগান ও বর্ণমালা। পোশাকের অবয়ব অলংকরণে নানাভাবে বর্ণমালাকে মোটিফ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। একুশের পোশাকে দেশীয় রীতি ধরে রাখতে শাড়ি, কামিজ, কুর্তা, ফতুয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পোশাকের নকশায় মাধ্যম হিসেবে আছে ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট, মেশিন ও হ্যান্ড এমব্রয়ডারি। পোশাকে সাদা-কালো রঙের ব্যবহার প্রসঙ্গে নিত্য-উপহারের কর্ণধার বাহার রহমান বলেন, ‘পোশাকে কালো রঙের ব্যবহার কারণ বাংলা বর্ণমালা আমরা কালো কালিতে লিখি, আবার শোক হিসেবেও কালো রঙ ব্যবহার হয়। একুশের রক্তাক্ত ইতিহাস, তাই লাল যোগ হয়েছে। আর শুদ্ধতার প্রতীক সাদা রঙকে সমতল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আগে একুশকে শুধু শোক দিবস হিসেবে পালন করা হতো। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও। তাই এই অর্জনকে বোঝাতে লাল রঙ যোগ করা হয়েছে।’
ফ্যাশন হাউজ বিবিয়ানার স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলেন, ‘সাদা-কালো রঙ কিন্তু মৌলিক রঙ। স্বাধীনতার আগে এ দেশের মেয়েদের পোশাক ছিল শাড়ি আর রঙ ছিল সাদা কোড়া। এরপর সাদা শাড়ির চিকন পাড়ে এলো কালো রঙ। আর সাদা শাড়ির চিকন কালো পাড়ই একুশে ফেব্রুয়ারির পোশাক হয়ে গেল। আর ছেলেদের প্রভাতফেরির পোশাক ছিল খাদির সাদা পাঞ্জাবি। কিন্তু দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে পোশাকের রঙ ও ধরনেরও বদল ঘটেছে। একুশের প্রধান বিষয় হচ্ছে শোকের সঙ্গে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো। এ ভাবগম্ভীর বিষয়টি কালো রঙ দিয়ে বোঝানো হয়। আর সাদার অর্থ হচ্ছে শুদ্ধতা ও শ্রদ্ধা। তাই এ দুটি রঙ ছাড়া একুশকে কোনোভাবেই বোঝানো সম্ভব নয়। যেহেতু আমাদের আত্মত্যাগ আর লড়াই ছিল ভাষার জন্য, সেহেতু ভাষা ও বর্ণমালা এখানে অনেক বেশি সংযুক্ত। একুশের পোশাকে সাদা-কালোর সঙ্গে বর্ণমালা কিংবা কোনো পঙ্ক্তিমালা কিংবা কোনো মোটিফ ছাড়া ভাবাই যায় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একুশে ফেব্রুয়ারির পোশাকে সাদা-কালোর সঙ্গে অল্পস্বল্প লালও দেখা যাচ্ছে। শাড়ির পাশাপাশি সালোয়ার-কামিজ, কুর্তা, টপ, শার্ট, টি-শার্টও জায়গা নিয়েছে।’
প্রভাতফেরির পোশাকে সাদা সুতির কাপড়ের মধ্যে নানা ধরন দেখা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ডুয়েট ঐতিহ্যের স্বত্বাধিকারী অনুপ কুমার শীল বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারিতে সাদা বা কালোর আবেদন সব সময়ই থাকবে। দেশি কাপড় আর সাদা-কালো রঙ এই দুটি মিলেই তৈরি হয়েছে আমাদের একুশের পোশাক কিংবা প্রভাতফেরির পোশাক। তবে এখন শাড়ি ও পাঞ্জাবির পাশাপাশি সালোয়ার-কামিজ, টি-শার্টও প্রাধান্য পাচ্ছে।’
প্রভাতফেরির পোশাক প্রসঙ্গে বিশ্ব রঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা জানালেন, ‘সাদা মানেই হচ্ছে শুদ্ধতা, পবিত্রতা ও শ্রদ্ধা। কালোর মধ্যেই রয়েছে সব রঙ। যদিও আমরা কালোকে অশুভ বা শোকের প্রতীক বলেই বিবেচনা করি। তবে এটিও সত্য যে, কালো ছাড়া গভীরতা অনুধাবন করা যায় না। কালোর গুরুত্ব কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। সাদা আর কালোর মিশেলেই প্রকাশ পায় আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। তাই একুশের পোশাক হিসেবে শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ, শার্ট, টি-শার্ট, টপ যেকোনো কিছুই হতে পারে। রঙ হিসেবে সাদা-কালো অ্যাশ এবং লাল রঙকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আর নকশা হিসেবে বর্ণমালা, কবিতা, গান, স্লোগান, দেশাত্মবোধক নানা মোটিফ থাকতে পারে।’
অঞ্জন’স-এর স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার শাহীন আহম্মেদ বলেন, ‘সাদা এমন একটা রঙ, যা কখনো কারও ভালো লাগবে না এমনটা হতে পারে না। সাদা রঙ মানসিক শান্তি ও স্বস্তি দেয়। একুশে ফেব্রুয়ারি পালনের সময়ের শুরু থেকেই সাদা পোশাকের প্রচলন ছিল। সাদা পোশাকের ওপরে কালো কাপড়ের শোকের ব্যাজ পরতে দেখা যেত। এখন অবশ্য সাদা-কালো এই দুই রঙের পোশাকই সবাইকে পরতে দেখা যায়।’
কোথায় পাবেন ও দরদাম
দেশীদশের ফ্যাশন হাউজ নিপুণ, কে-ক্র্যাফট, বিবিয়ানা, দেশাল, বাংলার মেলা, রঙ বাংলাদেশ, নগরদোলা, সাদাকালো, অঞ্জন’স সব বয়সীর জন্য একুশের পোশাক পাবেন। এ ছাড়া আড়ং, বিশ্বরঙ, নবরূপা, কারুপল্লী, আজিজ সুপার মার্কেটের নিত্য-উপহার, মেঘ, আর্টিজান, যোগীসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজে একুশের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ, টপস, আনস্টিচ, সিঙ্গেল ওড়না ও ব্লাউজ। জমিন অলংকরণে ব্যবহৃত হয়েছে ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট, হাতের কাজ ও প্যাচওয়ার্ক। শুধু মেয়েদের নয়, ছেলেদের আয়োজনও কম নয়। পাঞ্জাবি, পায়জামা, ফুলহাতা ও হাফহাতা শার্ট, টি-শার্ট, পোলো-শার্ট ও উত্তরীয়। মেয়েদের একুশের আয়োজনে আছে সুতি শাড়ি ৮৫০ থেকে ২,০৫০, হাফসিল্ক শাড়ি ২,১০০ থেকে ৩,৫৫০, থ্রি-পিস ২,৫০০ থেকে ৩,৯৯০, সিঙ্গেল কামিজ ১,০৫০ থেকে ১,৮৫০, আনস্টিচ ২,০০০ থেকে ২,৫০০, সিঙ্গেল ওড়না ৫০০ থেকে ৭৫০ ও ব্লাউজ ২৫০-৩৫০ টাকা। ছেলেদের একুশের আয়োজনে আছে ছেলেদের পাঞ্জাবি ১০০০-১২৫০, টি-শার্ট ৩৫০-৪৮০, শার্ট ৭৫০-৯৫০ ও উত্তরীয় ২৫০-৫০০ টাকা। বাচ্চাদের জন্য আছে শার্ট ৩৫০-৫৫০, টি-শার্ট ৩৫০-৩৮০, পাঞ্জাবি ৫৫০-৭৫০, ফ্রক ৬০০-৮৫০ ও সিঙ্গেল কামিজ ৬৫০-১১৫০ টাকা।
বলিরেখা যখন চোখের নিচের অংশে আসে তখন বিশেষ যত্নের প্রয়োজন পড়ে। বলিরেখা ও দাগ দূর করতে চোখের যত্নের সাধারণ রুটিন অনুসরণ এবং নির্দিষ্ট পণ্যগুলো ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। লিখেছেন বিউটি ব্লগার নাহিন ইসলাম
রেটিনল-সমৃদ্ধ প্রসাধন : ত্বকের যত্নের প্রসাধনীর মধ্যে রেটিনল বাজে শব্দ। কিন্তু রেটিনল-সমৃদ্ধ পণ্য ত্বকে শোষিত হয় এবং কুঁচকানো ও সূক্ষ্ম রেখার উপস্থিতি হ্রাস করে। রেটিনল-সমৃদ্ধ এই ধরনের চোখের প্রসাধনী সপ্তাহে অন্তত তিনবার ব্যবহার করলে বলিরেখা সহজেই দূর হয়ে যাবে।
ময়েশ্চারাইজার দিন : নিয়মিত আইক্রিম ব্যবহার করলে চোখের নিচের কালো দাগ ও বলিরেখা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা অর্ধেকে নেমে যায়। শুধু আইক্রিম ময়েশ্চারাইজিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত নয়, তাই হাইড্রেট ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পর আইক্রিম ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া আইক্রিম কেনার সময় পরীক্ষা করুন যে রেটিনল ছাড়াও এতে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, ভিটামিন-ই এবং সি আছে কি না। এই উপাদানগুলো ত্বকে অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে।
তেল ব্যবহার : শুষ্ক এবং ডিহাইড্রেটেড ত্বকে বলিরেখার ঝুঁকি বেশি। আপনার চোখের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে হাইড্রেট থাকলেও কিছুটা তেলের জন্য জায়গা থাকে। তেল দিয়ে ময়েশ্চারেশন সিল করা চোখের ত্বকের জন্য উপকার। সূর্যমুখী বা জলপাই তেল আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। এই তেল ত্বকের আর্দ্রতাকে বাষ্প থেকে বাধা দেয় এবং আর্দ্রতা ধরে রাখে।
চোখের ত্বকের যত্ন : আন্ডারআই ট্রিটমেন্ট মূলত চোখের চারপাশের ত্বকের যত্নে ওয়ানস্টপ সলিউশন। যার নিয়মিত চর্চায় আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে চারপাশের কালো দাগছোপ। বাড়ায় এই অংশের ত্বকের উজ্জ্বলতা। গভীর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। ফলে দাগছোপ কমে যায়। হয়ে ওঠে মসৃণ, কোমল ও টান টান।
হাইঅ্যান্ড এ আন্ডারআই ট্রিটমেন্ট চোখের জন্য স্পার মতো। যার শুরুতেই শরীর উপরিভাগে দেওয়া হয় রিল্যাক্সিং মাসাজ। গ্লাইডিং, নিংডি আর ফ্রিকশন স্ট্রোকে বিভিন্ন মাত্রার চাপ প্রয়োগ করে চলে পুরো প্রক্রিয়া। তারপর করা হয় ক্লিনজিং। চোখের চারপাশের ত্বক পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কার হয়ে ওঠে এর ফলে। গভীর থেকে তেল, ময়লা আর দূষণ দূর হয়। পাঁচ মিনিট ধরে চলে ক্লিনজিং। তারপর মাসাজ। শুধু চোখের চারপাশের অংশজুড়ে দশ থেকে পনেরো মিনিট ধরে নানা রকম বাদাম আর এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের আইক্রিম দিয়ে। এর ফলে চোখের চারপাশের ত্বককোষ উদ্দীপ্ত হয় এবং বাড়ে রক্তসঞ্চালন। এরপর চোখের ওপর দেওয়া হয় টাটকা শসা আর আলু কুচি। এটা প্রশান্তি জোগায়। সঙ্গে আলু আর শসার রসের প্রাকৃতিক গুণাবলি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে চোখের যাবতীয় সমস্যা। দাগছোপ, ফোলাভাব তো কমায়ই, সঙ্গে বাড়ায় উজ্জ্বলতা। নির্দিষ্ট সময় পর এগুলো সরিয়ে মাখানো হয় বিশেষায়িত আইক্রিম। এর ওপরই চলে মাসাজ। তবে হাতে নয়, গ্যালভানিক মেশিনে। যার ফলে আইক্রিমের সম্পূর্ণ গুণাবলি চোখের ত্বকের একদম গভীরে প্রবেশ করে। সারায় এই অংশের সূক্ষ্মরেখা আর বলিরেখা। তারপর চোখজোড়ায় দেওয়া হয় আই জেল। মাখিয়ে রেখে দেওয়া হয় পনেরো থেকে বিশ মিনিট। এতে চোখের বিশ্রামের সুযোগ মেলে। পাশাপাশি বিশেষায়িত জেল আন্ডারআই এ ট্রিটমেন্টকে কার্যকর করে তোলে বহু গুণে।
ট্রেডমিল ব্যবহারেরও বেশ কিছু নিয়মকানুন আছে। যারা নতুন ব্যবহার করবেন তাদের জানা খুব জরুরি। লিখেছেন মো. মনিরুজ্জামান
নিয়মকানুন : প্রথমেই খুব জোরে দৌড়ানোর প্রয়োজন নেই। ৫ থেকে ১০ মিনিট হালকাভাবে হেঁটে বা দৌড়ে শরীর ওয়ামআপ করে নিতে হবে। এরপর জোরে দৌড়াতে হবে। নিজের শারীরিক অবস্থা ও সামর্থ্যরে ভিত্তিতে সময় ঠিক করে নিতে হবে। কিছুক্ষণ জোরে দৌড়ানোর পর গতি কমিয়ে আবার ধীরে হাঁটতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় যতক্ষণ দৌড়াচ্ছেন, তার তিন গুণ সময় পর্যন্ত কম গতিতে হাঁটতে হবে। এরপর আবার জোরে দৌড়াতে হবে। একই নিয়মে ধীরে ধীরে হাঁটতে হবে। এভাবে ব্যালেন্স করে দ্রুত এবং ধীরে ধীরে কয়েক দিন এভাবে হাঁটতে হবে। আস্তে ধীরে হাঁটার সময়টুকু অল্প অল্প করে কমিয়ে আনতে হবে। দ্রুত হাঁটার সময় বাড়াতে হবে। প্রথমে সমান তলে দুই মিনিট দৌড়ালেন, এতে আপনার খুব বেশি বেগ পেতে হলো না। এরপর ট্রেডমিলের তল একধাপ বাঁকিয়ে নিয়ে আরও দুই মিনিট দৌড়ান। এভাবে প্রতি দুই মিনিট পরপর ট্রেডমিলের তল আরও একধাপ করে বাঁকিয়ে নিন, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি মোটামুটি হাঁপিয়ে উঠছেন। এবার প্রতি দুই মিনিট অন্তর হেলানো তলটিকে একধাপ করে মেঝের সমতলের দিকে ফিরিয়ে আনতে থাকুন। আবার সুবিধাজনক একটি বাঁকানো তল বেছে নিয়ে একই তলে হাঁটুন।
জেনে রাখবেন : প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে ব্যায়াম করার পরিবর্তে মাঝারি শক্তি খরচ করে ব্যায়াম করাটাই স্বাস্থ্যসম্মত। আধুনিক ট্রেডমিলে বিভিন্নভাবে দৌড়ানোর আলাদা আলাদা প্রোগ্রাম রয়েছে। যেটাতে আপনি সক্ষম সেটাই বেছে নিন। ট্রেডমিলের গতি মাঝারি রাখাই ভালো। ব্যায়ামের সুবিধার্থে ট্রেডমিলের তলটিকে সুবিধামতো হেলানো যেতে পারে। ট্রেডমিলে দৌড়ানোর উপযোগী জুতা ও ঢিলেঢালা ঘাম শোষণ করে এ রকম পোশাক পড়ুন। দৌড়ানোর সময় শরীর সামনের দিকে না ঝুঁকিয়ে সোজা রাখুন। খুব বেশি লম্বা পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। আবার পা ফেলার সময় পায়ের তালু একেবারে সোজা ও সমান করে ফেললে ট্রেডমিলের গতির কারণে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই স্বাভাবিক দৌড়ানোর ভঙ্গিতে পা ফেলতে হবে। হাঁটার সময় পায়ের দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দৌড়ানো ভালো। দৌড়ানোর সময় হাত দিয়ে হাতল আঁকড়ে রাখবেন না, বরং হাত বাঁকিয়ে রাখুন। হাত শক্ত না করে হালকাভাবে ধরে রাখুন।
চট্টগ্রাম থেকে শুঁটকির রেসিপি দিয়েছেন ফাহা হোসাইন
লইট্যা ভুনা
উপকরণ
লইট্যা শুঁটকি ৬টা, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি ১ কাপ, হলুদ বাটা আধা চা চামচ, মরিচ বাটা আধা চা চামচ, জিরা গুঁড়ো সিকি চা চামচ, কাঁচামরিচ ফালি ৬টা, আদা বাটা আধা চা চামচ, রসুন বাটা আধা চা চামচ, লবণ সিকি চা চামচ, তেল ৩ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. লইট্যা শুঁটকি পরিষ্কার করে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে নিন।
২. কড়াইতে তেল দিয়ে গরম করে পেঁয়াজ কুচি লালচে করে ভাজুন।
৩. এরপর আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ বাটা, মরিচ বাটা, ধনে গুঁড়ো, জিরা গুড়ো দিয়ে কষিয়ে নিন।
৪. টমেটো কুচি দিয়ে কষাতে থাকুন, যাতে টমেটো একেবারে গলে যায়, এবার লইট্যা শুঁটকি এবং কাঁচামরিচ ফালি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ রান্না করুন।
৫. অল্প আঁচে দমে রাখুন যাতে তেল ওপরে উঠে আসে, হয়ে গেলে ধনেপাতা কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।
মইল্যা ভুনা
উপকরণ
মইল্যা শুঁটকি ৬টা, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি ১ কাপ, হলুদ বাটা আধা চা চামচ, মরিচ বাটা আধা চা চামচ, জিরা গুঁড়ো সিকি চা চামচ, কাঁচামরিচ ফালি ৬টা, আদা বাটা আধা চা চামচ, রসুন বাটা আধা চা চামচ, লবণ সিকি চা চামচ, তেল ৩ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. মইল্যা শুঁটকি পরিষ্কার করে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে নিন।
২. কড়াইতে তেল দিয়ে গরম করে পেঁয়াজ কুচি লালচে করে ভাজুন।
৩. এরপর আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ বাটা, মরিচ বাটা, ধনে গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো দিয়ে কষিয়ে নিন।
৪. টমেটো কুচি দিয়ে কষাতে থাকুন, যাতে টমেটো একেবারে গলে যায়,এবার মইল্যা শুঁটকি এবং কাঁচামরিচ ফালি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ রান্না করুন।
৫. অল্প আঁচে দমে রাখুন যাতে তেল ওপরে উঠে আসে, হয়ে গেলে ধনেপাতা কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।
ছুরি শুঁটকি
উপকরণ
ছুরি শুঁটকি ১টা, পাঁচ রকমের মেলানো সবজি কুচি ১ কাপ, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়ো আধা চা চামচ, মরিচের গুঁড়ো আধা চা চামচ, আদা বাটা, আধা চা চামচ, রসুন বাটা আধা চা চামচ, কাঁচামরিচ ফালি ৬টা, লবণ আধা চা চামচ, তেল ৩ টেবিল চামচ।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. ছুরি শুঁটকি হালকা গরম পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখুন।
২. এবার কড়াইতে তেল দিয়ে গরম হলে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে লাল করে ভেজে তাতে হলুদ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, আদা বাটা, রসুন বাটা, লবণ দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন।
৩. মসলা কষানো হলে তাতে ছুরি শুঁটকি এবং সবজি দিয়ে আবার একটু কষান।
৪. কষানো হয়ে এলে তাতে এক কাপ পরিমাণ পানি দিয়ে ১০ মিনিট ঢেকে রান্না করে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
কাঁচকি ভর্তা
উপকরণ
তেলে ভাজা কাঁচকি শুঁটকি ১ কাপ, পেঁয়াজ মোটা ফালি আধা কাপ, শুকনো মরিচ ৩টা, ধনেপাতা কুচি ১ কাপ, সরিষার তেল ১ টেবিল চামচ, রসুন ৬ কোয়া, লবণ সিকি চা চামচ
যেভাবে তৈরি করবেন
১. কাঁচকি শুঁটকি গরম পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করে নিন।
২. এবার রুটির তাওয়া গরম করে তাতে সরিষার তেল দিয়ে তাতে সবগুলো উপকরণ দিয়ে খুব অল্প জ্বালে বেশ সময় নিয়ে টালতে হবে।
৩. ২০ মিনিট টালা হয়ে এলে পাটায় পিষে বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিলেই হয়ে গেল কাঁচকি শুঁটকি ভর্তা।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন হামলা করে। ওই সময় গুলি ও ককটেলে অন্তত পাঁচজন আহত হন।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল নিয়ে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্তত ১৫ নেতাকর্মীকে আহত করেছে।
সংঘর্ষের পর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগামী ১২ জুন তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির এম এ মাসুদ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম মণ্ডল।
বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উপজেলা সদর বাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয়ের কাছে যেতেই ককটেল ও গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা।
স্থানীরা জানান, এ সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে আহতদের কারো নাম সংগ্রহ করা যায়নি।
এদিকে ঘটনার পরপর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের তারাকান্দার মধুপুর বাজার এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের সর্মথকরা। সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
নুরুজ্জামান সরকার বলেন, আমার নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল, দেশীয় অস্ত্র ও নাইট শুটারগান দিয়ে আমাকে মারার জন্য হামলা করে। অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলুল হক দাবি করেন, তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে সেই মিছিলে অতর্কিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলিবর্ষণ করে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। এ সময় তার অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, তারাকান্দা থেকে গুলিবিদ্ধসহ আটজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তারাকান্দা থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে এমন তথ্য আছে আমাদের কাছে। ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে সত্য কিন্তু গুলির বিষয়টি যাচাই করতে হবে। ঘটনার পর সড়ক অবরোধ করলে পরিস্থিতি শান্ত করে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ঘটনাস্থলসহ আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১১ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১২ হাজার ৬৯৬ হাজার কোটি টাকা বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেন। সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রস্তাবিত এ বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
এ খাতে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ এবং মাসিক ভাতার হার ১০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের হিসাবে এ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার। আর মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা।
বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতাভোগীর সংখ্যাও ১ লাখ বাড়িয়ে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার এবং মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার বাড়িয়ে ২৯ লাখ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মাসিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৯০০ ও ৯৫০ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৫ বাড়িয়ে ৬ হাজার ৮৮০ করা হচ্ছে। এ জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ২০ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৬২০ করা হচ্ছে।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৯৩০ বাড়ানো হয়েছে এবং বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৫০ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ৪ হাজার ৩৮০ জন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সামাজিক সুরক্ষা আরও রয়েছে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি। এতে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কার্যক্রমে উপকারভোগীর ভাতার হার দৈনিক ২০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছর থেকে সর্বজনীন পেনশন চালুর কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন পাস হয়েছে। আশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে। শিগগির একটি পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে এবং জনবল নিয়োগের মাধ্যমে এ কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করা হবে।’
অর্থমন্ত্রী জানান, প্রস্তাবিত স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের অধিক বয়স্ক সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর পর্যন্ত চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।