শীতের অসুখ
ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ | ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
সতর্কতা ও করণীয় শীত সমাগত। ঘুম থেকে উঠলেই দেখা যায় প্রকৃতি কুয়াশাচ্ছন্ন, আর সবুজ ঘাসে জমে বিন্দু বিন্দু শিশির। শীতকাল শুরুর এই সময়টা উপভোগ্য হলেও দেখা দিতে পারে বাড়তি কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই এই সময়টাতে প্রয়োজন কিছুটা বাড়তি সতর্কতার।
শ্বাসতন্ত্রের রোগ
শীতে প্রধানত বাড়ে শ্বাসতন্ত্রের রোগ। যদিও এসব রোগের প্রধান কারণ ভাইরাস, তথাপি বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গেও এর সম্পর্ক রয়েছে। শীতে বাতাসের তাপমাত্রা কমার সঙ্গে আর্দ্রতাও কমে যায়, যা আমাদের শ্বাসনালির স্বাভাবিক কর্ম প্রক্রিয়াকে বিঘিœত করে ভাইরাসের আক্রমণকে সহজ করে। এ ছাড়া ধুলাবালির পরিমাণ বেড়ে যায়। ঠাণ্ডা, শুষ্ক বাতাস হাঁপানি রোগীর শ্বাসনালিকে সরু করে দেয়, ফলে হাঁপানির টান বাড়ে।
স্বাস্থ্য-সমস্যার মধ্যে প্রথমেই চলে আসে সাধারণ ঠাণ্ডাজনিত সর্দি-কাশির কথা বা কমন কোল্ড, আমাদের একটি পরিচিত নাম। এ রোগের শুরুতে গলা ব্যথা করে, গলায় খুসখুস ভাব ও শুকনা কাশি দেখা দেয়, নাক বন্ধ হয়ে যায়, নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরতে থাকে এবং ঘন ঘন হাঁচি আসে। হালকা জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ করা, দুর্বল লাগা ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। এ রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাশি কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে।
শীতে ইনফ্লুয়েঞ্জা বেশি মাত্রায় দেখা যায়। এই রোগটি মূলত ভাইরাসজনিত। ঠাণ্ডার অন্যান্য উপসর্গ ছাড়াও এ রোগের ক্ষেত্রে জ্বর ও কাশিটা খুব বেশি হয় এবং শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এই রোগের তেমন কোনো চিকিৎসা প্রয়োজন পড়ে না, লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিলেই হয়। শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হলেই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়। শীতের প্রকোপ শুধু ফুসফুস নয়, সাইনাস, কান ও টনসিলের প্রদাহও বাড়ে, যেমন ঘন ঘন সাইনোসাইটিস, টনসিলাইটিস ইত্যাদি। এ সব ক্ষেত্রে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে চিকিৎসা নেওয়াই ভালো। প্রায় ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়।
প্রতিরোধ
যদি প্রতিরোধের চেষ্টা সত্ত্বেও সর্দি-কাশি দেখা দেয়, তবু প্রতিরোধের উপায়গুলো চালিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি প্যারাসিটামল এবং অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেলেই যথেষ্ট। এটা শুধু রোগের তীব্রতাকে কমাবে না, রোগের বিস্তারও কমাবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। পাশাপাশি মধু, আদা, তুলসিপাতা, কালিজিরা ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এগুলো রোগের উপসর্গকে কমাতে সাহায্য করবে। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই রোগ আবার আরেক জনের মধ্যেও ছড়ায়। তাই রোগ যাতে অন্যদের আক্রান্ত করতে না পারে, সে জন্য সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাসায় থাকাই ভালো। বিশেষ করে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী যারা আক্রান্ত, তাদের অবশ্যই বাসায় রাখতে হবে। নেহাত বাইরে যেতে হলে মাস্ক ব্যবহার করা ভালো।
ঠাণ্ডা ও হাঁপানি প্রতিরোধে করণীয়
ঠাণ্ডা খাবার ও পানীয় পরিহার করা।
কুসুম কুসুম গরম পানি পান করা ভালো। হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা উচিত।
প্রয়োজন মতো গরম কাপড় পরিধান করা। তীব্র শীতের সময় কান-ঢাকা টুপি পরা এবং গলায় মাফলার ব্যবহার করা।
ধুলাবালি এড়িয়ে চলা।
ধূমপান পরিহার করা।
ঘরের দরজা-জানালা সব সময় বন্ধ না রেখে মুক্ত ও নির্মল বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা।
হাঁপানির রোগীরা শীত শুরুর আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রতিরোধমূলক ইনহেলার বা অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।
যাদের অনেক দিনের শ্বাসজনিত কষ্ট আছে, তাদের জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোক্কাস নিউমোনিয়ার টিকা নেওয়া উচিত।
তাজা, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা, যা দেহকে সতেজ রাখবে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করবে।
হাত ধোয়ার অভ্যাস করা। বিশেষ করে চোখ বা নাক মোছার পরপর হাত ধোয়া।
তবে মনে রাখা দরকার, সব সময়ই যে শীতে রোগব্যাধি বাড়বে তাও সত্য নয়। সাধারণভাবে শীতকালে মানুষের রোগ কম হয়। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও যথেষ্ট কমে যায়। এমনকি ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে শ্বাসযন্ত্রের ত্বকের রোগ ছাড়া অন্যান্য রোগ খুব একটা দেখা যায় না। তাই বাড়তি সতর্কতার পাশাপাশি অযথা আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
শেয়ার করুন
ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ | ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

সতর্কতা ও করণীয় শীত সমাগত। ঘুম থেকে উঠলেই দেখা যায় প্রকৃতি কুয়াশাচ্ছন্ন, আর সবুজ ঘাসে জমে বিন্দু বিন্দু শিশির। শীতকাল শুরুর এই সময়টা উপভোগ্য হলেও দেখা দিতে পারে বাড়তি কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই এই সময়টাতে প্রয়োজন কিছুটা বাড়তি সতর্কতার।
শ্বাসতন্ত্রের রোগ
শীতে প্রধানত বাড়ে শ্বাসতন্ত্রের রোগ। যদিও এসব রোগের প্রধান কারণ ভাইরাস, তথাপি বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গেও এর সম্পর্ক রয়েছে। শীতে বাতাসের তাপমাত্রা কমার সঙ্গে আর্দ্রতাও কমে যায়, যা আমাদের শ্বাসনালির স্বাভাবিক কর্ম প্রক্রিয়াকে বিঘিœত করে ভাইরাসের আক্রমণকে সহজ করে। এ ছাড়া ধুলাবালির পরিমাণ বেড়ে যায়। ঠাণ্ডা, শুষ্ক বাতাস হাঁপানি রোগীর শ্বাসনালিকে সরু করে দেয়, ফলে হাঁপানির টান বাড়ে।
স্বাস্থ্য-সমস্যার মধ্যে প্রথমেই চলে আসে সাধারণ ঠাণ্ডাজনিত সর্দি-কাশির কথা বা কমন কোল্ড, আমাদের একটি পরিচিত নাম। এ রোগের শুরুতে গলা ব্যথা করে, গলায় খুসখুস ভাব ও শুকনা কাশি দেখা দেয়, নাক বন্ধ হয়ে যায়, নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরতে থাকে এবং ঘন ঘন হাঁচি আসে। হালকা জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ করা, দুর্বল লাগা ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। এ রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাশি কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে।
শীতে ইনফ্লুয়েঞ্জা বেশি মাত্রায় দেখা যায়। এই রোগটি মূলত ভাইরাসজনিত। ঠাণ্ডার অন্যান্য উপসর্গ ছাড়াও এ রোগের ক্ষেত্রে জ্বর ও কাশিটা খুব বেশি হয় এবং শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এই রোগের তেমন কোনো চিকিৎসা প্রয়োজন পড়ে না, লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিলেই হয়। শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হলেই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়। শীতের প্রকোপ শুধু ফুসফুস নয়, সাইনাস, কান ও টনসিলের প্রদাহও বাড়ে, যেমন ঘন ঘন সাইনোসাইটিস, টনসিলাইটিস ইত্যাদি। এ সব ক্ষেত্রে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে চিকিৎসা নেওয়াই ভালো। প্রায় ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়।
প্রতিরোধ
যদি প্রতিরোধের চেষ্টা সত্ত্বেও সর্দি-কাশি দেখা দেয়, তবু প্রতিরোধের উপায়গুলো চালিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি প্যারাসিটামল এবং অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেলেই যথেষ্ট। এটা শুধু রোগের তীব্রতাকে কমাবে না, রোগের বিস্তারও কমাবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। পাশাপাশি মধু, আদা, তুলসিপাতা, কালিজিরা ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এগুলো রোগের উপসর্গকে কমাতে সাহায্য করবে। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই রোগ আবার আরেক জনের মধ্যেও ছড়ায়। তাই রোগ যাতে অন্যদের আক্রান্ত করতে না পারে, সে জন্য সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাসায় থাকাই ভালো। বিশেষ করে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী যারা আক্রান্ত, তাদের অবশ্যই বাসায় রাখতে হবে। নেহাত বাইরে যেতে হলে মাস্ক ব্যবহার করা ভালো।
ঠাণ্ডা ও হাঁপানি প্রতিরোধে করণীয়
ঠাণ্ডা খাবার ও পানীয় পরিহার করা।
কুসুম কুসুম গরম পানি পান করা ভালো। হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা উচিত।
প্রয়োজন মতো গরম কাপড় পরিধান করা। তীব্র শীতের সময় কান-ঢাকা টুপি পরা এবং গলায় মাফলার ব্যবহার করা।
ধুলাবালি এড়িয়ে চলা।
ধূমপান পরিহার করা।
ঘরের দরজা-জানালা সব সময় বন্ধ না রেখে মুক্ত ও নির্মল বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা।
হাঁপানির রোগীরা শীত শুরুর আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রতিরোধমূলক ইনহেলার বা অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।
যাদের অনেক দিনের শ্বাসজনিত কষ্ট আছে, তাদের জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোক্কাস নিউমোনিয়ার টিকা নেওয়া উচিত।
তাজা, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা, যা দেহকে সতেজ রাখবে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করবে।
হাত ধোয়ার অভ্যাস করা। বিশেষ করে চোখ বা নাক মোছার পরপর হাত ধোয়া।
তবে মনে রাখা দরকার, সব সময়ই যে শীতে রোগব্যাধি বাড়বে তাও সত্য নয়। সাধারণভাবে শীতকালে মানুষের রোগ কম হয়। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও যথেষ্ট কমে যায়। এমনকি ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে শ্বাসযন্ত্রের ত্বকের রোগ ছাড়া অন্যান্য রোগ খুব একটা দেখা যায় না। তাই বাড়তি সতর্কতার পাশাপাশি অযথা আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।