মোহাম্মদ বিন সালমানের টলমল সিংহাসন
পরাগ মাঝি | ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
মাত্র কয়েক বছর আগে রাজধানী রিয়াদের কিং সৌদ ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক হওয়ার পর সৌদি আরবের সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন ‘এমবিএস’ তথা মোহাম্মদ বিন সালমান। তার বাবা সালমান বিন আবদুল আজিজ তখন রিয়াদের গভর্নর। পুত্রকে তিনি নিজের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ২০১৫ সালের আগেও সৌদি আরবের বাইরে মোহাম্মদ বিন সালমানের নামটি ছিল একেবারেই অপরিচিত। ওই বছরই তার বাবা সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদি বাদশাহর সিংহাসনে আরোহণ করেন। সেই থেকে নানা তৎপরতার মধ্য দিয়ে ৩২ বছর বয়সী প্রিন্স সালমান বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু একটি হত্যাকা-ই তার ক্ষমতার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। ধারণা করা হয়, গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ক্রাউন প্রিন্স মোহম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই হত্যা করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকা-ের মতো চাঞ্চল্যে ভরা মোহাম্মদ বিন সালমানের জীবনও। লিখেছেন পরাগ মাঝি
যেভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রে এমবিএস
মাত্র ১২ বছর বয়সেই ক্রাউন পিন্স মোহাম্মদ তার বাবা সালমানের পাশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে শুরু করেছিলেন। কিশোর বয়সেই যুবরাজ মোহাম্মদের শেয়ার বাজার এবং প্রপার্টি ব্যবসায় হাতেখড়ি হয়। সে সময় তার দুএকটি ভুল ভ্রান্তি তার বাবাই সামলিয়ে নিতেন। সৎ বড় ভাইদের মতো বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না গিয়ে তিনি রিয়াদেই থেকে গিয়েছিলেন। সেখানকার কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। কর্তৃপক্ষ তাকে একজন উদ্যমি যুবক হিসেবেই বিবেচনা করত, যে কিনা কখনো ধূমপান কিংবা মদ্যপান করে না, যার নেই কোনো পার্টিতে যাওয়ার বদভ্যাস।
২০১২ সালে মোহাম্মদের বাবা সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন। এ মন্ত্রণালয় দেশটির সবচেয়ে বেশি বাজেট এবং লাভজনক অস্ত্রচুক্তির। এ সময় থেকেই বাবার সহকারী হিসেবে রাজকীয় দরবারে সদর্পে আনাগোনা শুরু করেন এমবিএস। তার বাবাও অনুগত পুত্রকে গোলাপের মতো ঠাঁই দেন হাউস অব সৌদে। সৌদি ধর্মীয় এবং ব্যবসায়িক অভিজাতরা খুব ভালো করেই বুঝে গিয়েছিল যে, বাবার সঙ্গে দেখা করতে হলে পুত্রই একমাত্র দরজা। সমালোচকরা বলেন, এমবিএস এ সময় তার বিশাল আখের গুছিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু আসলে এটা টাকা নয়, ক্ষমতা!
২০১৫ সালে সালমান যখন সৌদি সিংহাসনে বসেন, তখন তিনি তার পুত্র মোহাম্মদের ওপর আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ৭৯ বছর বয়সে স্মৃতিভ্রমজনিত রোগে আক্রান্ত হলে সারাদিনে অল্পকিছু সময় মনোযোগ দিতে পারতেন বাদশাহ। বাবার দরজা রক্ষক হিসেবে মোহাম্মদ সে সময়েই সৌদি সাম্রাজ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজপুরুষে আবির্ভূত হন। মাত্র ২৯ বছর বয়সে পৃথিবীর সবচেয়ে কমবয়সী হিসেবে তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সময় শুধু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নয়, বরং সব মন্ত্রণালয়েই ক্ষমতার জাল বিস্তার করতে শুরু করেন এমবিএস। সে সময়ে মোহাম্মদ ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্সের দায়িত্ব পালন করলেও তার প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রাউন প্রিন্স ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন নায়েফের ওপর দিয়েই কর্তৃত্ব ফলাতে থাকেন। আর সিংহাসনের দৌড়ে থাকা পথের কাঁটা নায়েফকে মাত্র দুই বছরের মধ্যে সরিয়ে ২০১৭ সালে ক্রাউন প্রিন্সের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন তিনি।
তরুণ প্রজন্মের সমর্থন
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তরুণদের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হন এমবিএস। বর্তমানে সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ’র বয়সই ৩০ বছরের নিচে। যদিও বেকারদের সংখ্যা সেখানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দেশের তরুণ তরুণীদের কথা ভেবে একের পর এক যুগোপযোগী সংস্কার ও সুদূর প্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন যুবরাজ। তার ঘোষিত ‘ভিশন-২০৩০’ তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পরিবর্তনের হাওয়া এখন পুরো দমেই বইছে সৌদি আরবে। দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ থাকা নারীরা দেশটিতে গাড়ি চালানোর অনুমতি পেয়েছে। ধাপে ধাপে অধিকার পাওয়া সৌদি নারীরা এবার দেশটির সেনাবাহিনীতেও যোগ দিতে পারবেন। একই সঙ্গে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া সৌদি মেয়েদের মোবাইল ফোন ব্যবহার, এমনকি তাদের মাঠে বসে ফুটবল সহ অন্যান্য খেলা দেখারও অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি প্রশাসন দেশটিতে তরুণদের বিনোদনের বেশ কিছু পথ খুলে দিয়েছে। বিভিন্ন মিলনায়তনে বিখ্যাত আরব গায়করা নিয়মিত কনসার্ট করছেন। এসব কনসার্টে তরুণদের উপচে পড়া ভিড়। আর মরুভূমির বালিয়াড়িতে তারা চাইলেই এখন দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে পারছেন।
সৌদিকে বদলে দেবে ভিশন-২০৩০
সৌদি আরবের আর্ত-সামাজিক অবস্থাকে বদলে দেওয়ার রূপরেখা ভিশন-২০৩০। যুবরাজ এমবিএস-এর এটি একটি সুদূর প্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনা। এ অর্থনৈতিক প্রকল্পের মাধ্যমে তেল বিক্রির ওপর দেশটির আর্থিক নির্ভরশীলতা সিংহ ভাগ কমে আসবে বলে আশা করছে পর্যবেক্ষকরা।
সৌদি আরবের রাজস্ব আয়ের ৭০ শতাংশ আসে জ্বালানি তেল বিক্রি থেকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ কমে যাওয়ায় সৌদির অর্থনীতিতে ভাঙন ধরেছে।
ভিশন ২০৩০ এর পরিকল্পনাধীন একটি পর্যটন প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১০০ মাইল দীর্ঘ বালুকাময় উপকূল ও ৫০টি দ্বীপের একটি উপহ্রদ। দেশটির পবিত্র শহর মক্কায় বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসা হবে, যা ভিশন ২০৩০ এর জন্য অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে দেশটিকে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার কেন্দ্রভূমিতে পরিণত করার জন্য এবং দেশটিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পুরো পৃথিবীর মৌলিক প্রবেশদ্বারে রূপান্তরিত করতে সৌদি আরব যে রোডম্যাপ তৈরি করেছে, তার মূলে প্রতিবছর হজ পালন করার বিষয়টি কাজ করছে। মক্কাকে আবার সুবিন্যস্ত করে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টা চলছে। মক্কাকে ২০০ কোটি মানুষের পবিত্র শহরে রূপান্তরিত করতে পারলে তা মুসলমানদের অর্থনৈতিক শক্তি ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে নতুন আন্দোলন হিসেবেই গণ্য হবে। ভিশনের স্তম্ভ তিনটি। এক. আরব ও ইসলামী গভীরতা। দুই. বিনিয়োগ শক্তি। তিন. কৌশলগত ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। স্বপ্নের শহর নিওমও ভিশন-২০৩০ এর অন্তর্ভুক্ত।
এমবিএস-এর বিলাসিতা
সম্প্রতি মার্কিন গণমাধ্যম দাবি করে, বছর দুএক আগে ফ্রান্সের শেতো লুই কেদভ নামের বিখ্যাত বাড়িটি ৩০০ মিলিয়ন ডলারে (প্রায় ২৪০০ কোটি টাকা) কিনে নিয়েছেন এমবিএস।
৫৭ একরের আকাশচুম্বী ওই বাড়িতে রয়েছে স্বর্ণপাতার ঝরনা, মার্বেলের ভাস্কর্য এবং আঁকাবাঁকা গাছের বেড়ার দেয়াল, যা গোলক ধাঁধার সৃষ্টি করে। আরো আছে মুভি থিয়েটার, মদ্যপানের কক্ষ, পানির নিচে স্বচ্ছ চেম্বারসহ নানা বিনোদনমূলক নানা ব্যবস্থা। সপ্তদশ শতকে নির্মিত এ প্রাসাদটিতে একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তির মিশেলে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এর ঝরনা, লাইট, সাউন্ড সিস্টেম এবং নিঃশব্দের এয়ার কন্ডিশনারগুলো আইফোনের মাধ্যমে দূর থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এ ছাড়াও ৫০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যেও একটি ইয়টও কিনেছেন এমবিএস। ভিঞ্চির আঁকা একটি চিত্রশিল্প ৪৫০ মিলিয়ন ডলারে কিনেছেন বলেও জানা গেছে। দেশের ভেতরে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালানোর মধ্য দিয়ে নিজের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ করে বিদেশে বিলাসিতা করছেন বলে দাবি করে মার্কিন গণমাধ্যম।
ছেলেবেলায় কেমন ছিলেন যুবরাজ
১১ বছর বয়সে মোহাম্মদ বিন সালমান ইংরেজির শিক্ষক রশিদ সেকাইয়ের কাছে কিছুদিন পড়েছিলেন। এমবিএস এর বেড়ে ওঠার নানা গল্প তিনি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। রশিদ বলেন, ১১ বছরের প্রিন্স মোহম্মদ ছিলেন ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়। তাই তাকে শাসন করা হতো খুব কম। পড়াশোনার চেয়ে খেলাধুলাতেই মন বেশি ছিল তার। আর পড়াশোনা ফাঁকি দিয়ে প্রাসাদের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করত। নিজে ধরা না দিলে তাকে খুঁজে পাওয়াই মুশকিল ছিল। অবস্থা এমন যে, তাকে পড়ানোর জন্য মাঝেমধ্যে ওয়াকিটকিও ব্যবহার করতে হয়েছে। আর ওয়াকিটকিতে মোহাম্মদ তার ভাই ও প্রহরীদের শুনিয়ে প্রায়ই শিক্ষকের সম্পর্কে তামাশা করত।
সাংবাদিক হত্যায় বেসামাল এমবিএস
পশ্চিমা বিশ্বে ‘এমবিএস’ বলে পরিচিত ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে যুবরাজ মোহাম্মদ বাবার মৃত্যুর পর তার স্থলাভিষক্ত হবেন এটাই ছিল সহজ হিসেব। কিন্তু সম্প্রতি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে জামাল খাশোগিকে হত্যা করার জের ধরে সব হিসেব নিকেশ উল্টে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্রমতে, শাসক আল সৌদ পরিবারের বেশ কয়েকজন যুবরাজ এবং যুবরাজ মোহাম্মদের চাচাত ভাইয়েরা উত্তরাধিকারের সারিতে পরিবর্তন চান। তবে তারা এটাও জানেন, ৮২ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান বেঁচে থাকতে এটা সম্ভব না। এই পরিস্থিতিতে তারা সম্ভাব্য নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। বাদশাহর মৃত্যুর পর তার একমাত্র জীবিত আপন ভাই ৭৬ বছর বয়সী যুবরাজ আহমেদ বিন আবদুল আজিজ সিংহাসনে আরোহণ করতে পারেন বলে সেই সব আলোচনায় ওঠে আসছে।
হাউস অব সৌদে শত শত যুবরাজ রয়েছেন। ইউরোপের রাজপরিবারের মতো সেখানে উত্তরাধিকার হিসেবে বাবার মৃত্যুর পর বড় ছেলে ক্ষমতাসীন হন না। রাজ্যের প্রথা অনুসারে, বাদশাহ ও পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা নেতৃত্বের জন্য যাকে যোগ্য মনে করেন, তাকেই উত্তরাধিকার দেওয়া হয়।
বাদশাহ মারা গেলে বা শাসন করার মতো সক্ষমতা না থাকলে ৩৪ সদস্যের অ্যালেজিয়ান্স কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুসারে দেশ পরিচালিত হবে। সেখানে যুবরাজ মোহাম্মদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদশাহ হওয়ার সুযোগ নেই। সিংহাসনে আরোহণের জন্য তার কাউন্সিলের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
এমন পরিস্থিতিতে গত ডিসেম্বরের শুরুতেই সৌদি আরবে অভ্যুত্থানের শঙ্কা দেখা দিয়েছিল বলে দাবি করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। এমন পরিস্থিতিতে সৌদির অন্যান্য অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনীকে রাজধানী রিয়াদে তলব করেন ক্রাউন প্রিন্স। রাজপরিবারের সদস্যরা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যুবরাজকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে দাবি করে আমিরাতভিত্তিক গণমাধ্যম। সে সময়কার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিশ্লেষকরাও বলেছিলেন, অভ্যুত্থানের বিষয়টি কিছুটা হলেও আমলে নিয়েছিলেন জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে সেই সময়ে আর্জেন্টিনায় অবস্থান করা যুবরাজ। সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ খাশোগি হত্যার তদন্ত শেষে যুবরাজের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করে। তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখনো ধারাবাহিকভাবেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন এমবিএসকে। ট্রাম্পের কন্যা ইভানকার স্বামী জেরার্ড কুশনারের সঙ্গেও যুবরাজের সুসম্পর্ক রয়েছে। বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে এই সম্পর্কগুলোও খুব কাজে দিচ্ছে। তাই, সৌদি বর্তমান উন্মাতাল পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে এবং এমবিএস এর ভবিষ্যত কীভাবে রচিত হবে, তা কেবল সময় গড়ালেই বলা যাবে।
শেয়ার করুন
পরাগ মাঝি | ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

মাত্র কয়েক বছর আগে রাজধানী রিয়াদের কিং সৌদ ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক হওয়ার পর সৌদি আরবের সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন ‘এমবিএস’ তথা মোহাম্মদ বিন সালমান। তার বাবা সালমান বিন আবদুল আজিজ তখন রিয়াদের গভর্নর। পুত্রকে তিনি নিজের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ২০১৫ সালের আগেও সৌদি আরবের বাইরে মোহাম্মদ বিন সালমানের নামটি ছিল একেবারেই অপরিচিত। ওই বছরই তার বাবা সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদি বাদশাহর সিংহাসনে আরোহণ করেন। সেই থেকে নানা তৎপরতার মধ্য দিয়ে ৩২ বছর বয়সী প্রিন্স সালমান বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু একটি হত্যাকা-ই তার ক্ষমতার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। ধারণা করা হয়, গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ক্রাউন প্রিন্স মোহম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই হত্যা করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকা-ের মতো চাঞ্চল্যে ভরা মোহাম্মদ বিন সালমানের জীবনও। লিখেছেন পরাগ মাঝি
যেভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রে এমবিএস
মাত্র ১২ বছর বয়সেই ক্রাউন পিন্স মোহাম্মদ তার বাবা সালমানের পাশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে শুরু করেছিলেন। কিশোর বয়সেই যুবরাজ মোহাম্মদের শেয়ার বাজার এবং প্রপার্টি ব্যবসায় হাতেখড়ি হয়। সে সময় তার দুএকটি ভুল ভ্রান্তি তার বাবাই সামলিয়ে নিতেন। সৎ বড় ভাইদের মতো বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না গিয়ে তিনি রিয়াদেই থেকে গিয়েছিলেন। সেখানকার কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। কর্তৃপক্ষ তাকে একজন উদ্যমি যুবক হিসেবেই বিবেচনা করত, যে কিনা কখনো ধূমপান কিংবা মদ্যপান করে না, যার নেই কোনো পার্টিতে যাওয়ার বদভ্যাস।
২০১২ সালে মোহাম্মদের বাবা সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন। এ মন্ত্রণালয় দেশটির সবচেয়ে বেশি বাজেট এবং লাভজনক অস্ত্রচুক্তির। এ সময় থেকেই বাবার সহকারী হিসেবে রাজকীয় দরবারে সদর্পে আনাগোনা শুরু করেন এমবিএস। তার বাবাও অনুগত পুত্রকে গোলাপের মতো ঠাঁই দেন হাউস অব সৌদে। সৌদি ধর্মীয় এবং ব্যবসায়িক অভিজাতরা খুব ভালো করেই বুঝে গিয়েছিল যে, বাবার সঙ্গে দেখা করতে হলে পুত্রই একমাত্র দরজা। সমালোচকরা বলেন, এমবিএস এ সময় তার বিশাল আখের গুছিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু আসলে এটা টাকা নয়, ক্ষমতা!
২০১৫ সালে সালমান যখন সৌদি সিংহাসনে বসেন, তখন তিনি তার পুত্র মোহাম্মদের ওপর আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ৭৯ বছর বয়সে স্মৃতিভ্রমজনিত রোগে আক্রান্ত হলে সারাদিনে অল্পকিছু সময় মনোযোগ দিতে পারতেন বাদশাহ। বাবার দরজা রক্ষক হিসেবে মোহাম্মদ সে সময়েই সৌদি সাম্রাজ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজপুরুষে আবির্ভূত হন। মাত্র ২৯ বছর বয়সে পৃথিবীর সবচেয়ে কমবয়সী হিসেবে তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সময় শুধু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নয়, বরং সব মন্ত্রণালয়েই ক্ষমতার জাল বিস্তার করতে শুরু করেন এমবিএস। সে সময়ে মোহাম্মদ ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্সের দায়িত্ব পালন করলেও তার প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রাউন প্রিন্স ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন নায়েফের ওপর দিয়েই কর্তৃত্ব ফলাতে থাকেন। আর সিংহাসনের দৌড়ে থাকা পথের কাঁটা নায়েফকে মাত্র দুই বছরের মধ্যে সরিয়ে ২০১৭ সালে ক্রাউন প্রিন্সের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন তিনি।
তরুণ প্রজন্মের সমর্থন
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তরুণদের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হন এমবিএস। বর্তমানে সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ’র বয়সই ৩০ বছরের নিচে। যদিও বেকারদের সংখ্যা সেখানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দেশের তরুণ তরুণীদের কথা ভেবে একের পর এক যুগোপযোগী সংস্কার ও সুদূর প্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন যুবরাজ। তার ঘোষিত ‘ভিশন-২০৩০’ তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পরিবর্তনের হাওয়া এখন পুরো দমেই বইছে সৌদি আরবে। দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ থাকা নারীরা দেশটিতে গাড়ি চালানোর অনুমতি পেয়েছে। ধাপে ধাপে অধিকার পাওয়া সৌদি নারীরা এবার দেশটির সেনাবাহিনীতেও যোগ দিতে পারবেন। একই সঙ্গে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া সৌদি মেয়েদের মোবাইল ফোন ব্যবহার, এমনকি তাদের মাঠে বসে ফুটবল সহ অন্যান্য খেলা দেখারও অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি প্রশাসন দেশটিতে তরুণদের বিনোদনের বেশ কিছু পথ খুলে দিয়েছে। বিভিন্ন মিলনায়তনে বিখ্যাত আরব গায়করা নিয়মিত কনসার্ট করছেন। এসব কনসার্টে তরুণদের উপচে পড়া ভিড়। আর মরুভূমির বালিয়াড়িতে তারা চাইলেই এখন দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে পারছেন।
সৌদিকে বদলে দেবে ভিশন-২০৩০
সৌদি আরবের আর্ত-সামাজিক অবস্থাকে বদলে দেওয়ার রূপরেখা ভিশন-২০৩০। যুবরাজ এমবিএস-এর এটি একটি সুদূর প্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনা। এ অর্থনৈতিক প্রকল্পের মাধ্যমে তেল বিক্রির ওপর দেশটির আর্থিক নির্ভরশীলতা সিংহ ভাগ কমে আসবে বলে আশা করছে পর্যবেক্ষকরা।
সৌদি আরবের রাজস্ব আয়ের ৭০ শতাংশ আসে জ্বালানি তেল বিক্রি থেকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ কমে যাওয়ায় সৌদির অর্থনীতিতে ভাঙন ধরেছে।
ভিশন ২০৩০ এর পরিকল্পনাধীন একটি পর্যটন প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১০০ মাইল দীর্ঘ বালুকাময় উপকূল ও ৫০টি দ্বীপের একটি উপহ্রদ। দেশটির পবিত্র শহর মক্কায় বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসা হবে, যা ভিশন ২০৩০ এর জন্য অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে দেশটিকে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার কেন্দ্রভূমিতে পরিণত করার জন্য এবং দেশটিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পুরো পৃথিবীর মৌলিক প্রবেশদ্বারে রূপান্তরিত করতে সৌদি আরব যে রোডম্যাপ তৈরি করেছে, তার মূলে প্রতিবছর হজ পালন করার বিষয়টি কাজ করছে। মক্কাকে আবার সুবিন্যস্ত করে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টা চলছে। মক্কাকে ২০০ কোটি মানুষের পবিত্র শহরে রূপান্তরিত করতে পারলে তা মুসলমানদের অর্থনৈতিক শক্তি ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে নতুন আন্দোলন হিসেবেই গণ্য হবে। ভিশনের স্তম্ভ তিনটি। এক. আরব ও ইসলামী গভীরতা। দুই. বিনিয়োগ শক্তি। তিন. কৌশলগত ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। স্বপ্নের শহর নিওমও ভিশন-২০৩০ এর অন্তর্ভুক্ত।
এমবিএস-এর বিলাসিতা
সম্প্রতি মার্কিন গণমাধ্যম দাবি করে, বছর দুএক আগে ফ্রান্সের শেতো লুই কেদভ নামের বিখ্যাত বাড়িটি ৩০০ মিলিয়ন ডলারে (প্রায় ২৪০০ কোটি টাকা) কিনে নিয়েছেন এমবিএস।
৫৭ একরের আকাশচুম্বী ওই বাড়িতে রয়েছে স্বর্ণপাতার ঝরনা, মার্বেলের ভাস্কর্য এবং আঁকাবাঁকা গাছের বেড়ার দেয়াল, যা গোলক ধাঁধার সৃষ্টি করে। আরো আছে মুভি থিয়েটার, মদ্যপানের কক্ষ, পানির নিচে স্বচ্ছ চেম্বারসহ নানা বিনোদনমূলক নানা ব্যবস্থা। সপ্তদশ শতকে নির্মিত এ প্রাসাদটিতে একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তির মিশেলে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এর ঝরনা, লাইট, সাউন্ড সিস্টেম এবং নিঃশব্দের এয়ার কন্ডিশনারগুলো আইফোনের মাধ্যমে দূর থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এ ছাড়াও ৫০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যেও একটি ইয়টও কিনেছেন এমবিএস। ভিঞ্চির আঁকা একটি চিত্রশিল্প ৪৫০ মিলিয়ন ডলারে কিনেছেন বলেও জানা গেছে। দেশের ভেতরে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালানোর মধ্য দিয়ে নিজের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ করে বিদেশে বিলাসিতা করছেন বলে দাবি করে মার্কিন গণমাধ্যম।
ছেলেবেলায় কেমন ছিলেন যুবরাজ
১১ বছর বয়সে মোহাম্মদ বিন সালমান ইংরেজির শিক্ষক রশিদ সেকাইয়ের কাছে কিছুদিন পড়েছিলেন। এমবিএস এর বেড়ে ওঠার নানা গল্প তিনি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। রশিদ বলেন, ১১ বছরের প্রিন্স মোহম্মদ ছিলেন ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়। তাই তাকে শাসন করা হতো খুব কম। পড়াশোনার চেয়ে খেলাধুলাতেই মন বেশি ছিল তার। আর পড়াশোনা ফাঁকি দিয়ে প্রাসাদের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করত। নিজে ধরা না দিলে তাকে খুঁজে পাওয়াই মুশকিল ছিল। অবস্থা এমন যে, তাকে পড়ানোর জন্য মাঝেমধ্যে ওয়াকিটকিও ব্যবহার করতে হয়েছে। আর ওয়াকিটকিতে মোহাম্মদ তার ভাই ও প্রহরীদের শুনিয়ে প্রায়ই শিক্ষকের সম্পর্কে তামাশা করত।
সাংবাদিক হত্যায় বেসামাল এমবিএস
পশ্চিমা বিশ্বে ‘এমবিএস’ বলে পরিচিত ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে যুবরাজ মোহাম্মদ বাবার মৃত্যুর পর তার স্থলাভিষক্ত হবেন এটাই ছিল সহজ হিসেব। কিন্তু সম্প্রতি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে জামাল খাশোগিকে হত্যা করার জের ধরে সব হিসেব নিকেশ উল্টে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্রমতে, শাসক আল সৌদ পরিবারের বেশ কয়েকজন যুবরাজ এবং যুবরাজ মোহাম্মদের চাচাত ভাইয়েরা উত্তরাধিকারের সারিতে পরিবর্তন চান। তবে তারা এটাও জানেন, ৮২ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান বেঁচে থাকতে এটা সম্ভব না। এই পরিস্থিতিতে তারা সম্ভাব্য নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। বাদশাহর মৃত্যুর পর তার একমাত্র জীবিত আপন ভাই ৭৬ বছর বয়সী যুবরাজ আহমেদ বিন আবদুল আজিজ সিংহাসনে আরোহণ করতে পারেন বলে সেই সব আলোচনায় ওঠে আসছে।
হাউস অব সৌদে শত শত যুবরাজ রয়েছেন। ইউরোপের রাজপরিবারের মতো সেখানে উত্তরাধিকার হিসেবে বাবার মৃত্যুর পর বড় ছেলে ক্ষমতাসীন হন না। রাজ্যের প্রথা অনুসারে, বাদশাহ ও পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা নেতৃত্বের জন্য যাকে যোগ্য মনে করেন, তাকেই উত্তরাধিকার দেওয়া হয়।
বাদশাহ মারা গেলে বা শাসন করার মতো সক্ষমতা না থাকলে ৩৪ সদস্যের অ্যালেজিয়ান্স কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুসারে দেশ পরিচালিত হবে। সেখানে যুবরাজ মোহাম্মদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদশাহ হওয়ার সুযোগ নেই। সিংহাসনে আরোহণের জন্য তার কাউন্সিলের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
এমন পরিস্থিতিতে গত ডিসেম্বরের শুরুতেই সৌদি আরবে অভ্যুত্থানের শঙ্কা দেখা দিয়েছিল বলে দাবি করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। এমন পরিস্থিতিতে সৌদির অন্যান্য অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনীকে রাজধানী রিয়াদে তলব করেন ক্রাউন প্রিন্স। রাজপরিবারের সদস্যরা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যুবরাজকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে দাবি করে আমিরাতভিত্তিক গণমাধ্যম। সে সময়কার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিশ্লেষকরাও বলেছিলেন, অভ্যুত্থানের বিষয়টি কিছুটা হলেও আমলে নিয়েছিলেন জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে সেই সময়ে আর্জেন্টিনায় অবস্থান করা যুবরাজ। সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ খাশোগি হত্যার তদন্ত শেষে যুবরাজের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করে। তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখনো ধারাবাহিকভাবেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন এমবিএসকে। ট্রাম্পের কন্যা ইভানকার স্বামী জেরার্ড কুশনারের সঙ্গেও যুবরাজের সুসম্পর্ক রয়েছে। বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে এই সম্পর্কগুলোও খুব কাজে দিচ্ছে। তাই, সৌদি বর্তমান উন্মাতাল পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে এবং এমবিএস এর ভবিষ্যত কীভাবে রচিত হবে, তা কেবল সময় গড়ালেই বলা যাবে।