সুস্বাস্থ্যের ৭ অভ্যাস
লায়লা আরজুমান্দ | ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০
চিকিৎসক, পুষ্টি ও চিকিৎসাসেবা বিভাগ, আন্তর্জাতিক উদরাময় কেন্দ্র
জীবনকে উপভোগ করতে শারীরিক সুস্থতার গুরুত্ব অপরিসীম। সবারই নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া উচিত। শুরু হয়েছে নতুন আরেকটি বছর। আগের বছরটি যেমনই কাটুক, নতুন বছর সুন্দর হোক, ভালো কাটুকÑ এটাই প্রত্যাশা। সুস্থ জীবনের জন্য চাইলেই বছরের শুরু থেকে কয়েকটি অভ্যাস রপ্ত করতে পারেন। এতে জীবন হবে সুন্দর, স্বাস্থ্যকর ও গতিময়। কমবে ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগের ঝুঁকি।
খাদ্যাভ্যাসে সংযত হন : বছরের শুরু থেকেই খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দিন। খাবার তালিকায় রঙিন ও সবুজ শাকসবজি রাখুন। স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার যেমন : তৈলাক্ত মাছ, বাদাম, তিল, সয়াবিন, শস্যবীজ ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস করুন। ওজন কমাতে সচেষ্ট হন। শুধু ওজন কমালেই বেশ কিছু জটিল রোগের প্রকোপ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। ওজন কমাতে শর্করাজাতীয় খাবার কম খান। মনে রাখবেন, ভাতের চেয়ে রুটি শরীরের জন্য বেশি উপকারী। কারণ রুটিতে আঁশের পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা শরীরে কম শোষিত হয়। অধিকাংশ চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের মতে, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একবেলা ভাত ও দুবেলা রুটি থাকাটাই উত্তম।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন : পানি পানের বিকল্প নেই। প্রাপ্তবয়স্ক ও কর্মক্ষম মান১ুষের প্রতিদিন কমপক্ষে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে কিডনি, যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড ও
মস্তিষ্ক ভালো থাকে, শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
ধূমপান পরিত্যাগ করুন : ধূমপান মৃত্যুর কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, সব জটিল রোগের সঙ্গেই ধূমপানের যোগসাজশ রয়েছে। তাই যেকোনো উপায়ে ধূমপানের বদ-অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। মনে রাখবেন, ধূমপান ত্যাগ করতে আপনার সিদ্ধান্তই যথেষ্ট।
পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি : হাল আমলে জীবনযাত্রার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যস্ততা ও মানসিক চাপ। রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে মানসিক চাপ বাড়ে, কাজকর্মে গতি পাওয়া যায় না। কাজ করে এক ধরনের নির্লিপ্ততা। মানসিক সুস্থতা ও কর্মক্ষমতা অটুট রাখতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং অন্ততপক্ষে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
শারীরিক পরিশ্রম ও প্রার্থনা করুন : বছরের প্রথম থেকেই ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠুন, প্রার্থনা করুন এবং কিছুক্ষণ হাঁটার অভ্যাস করুন। এই অভ্যাসগুলো জীবনধারাকেই বদলে দেবে। এ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। নিয়মিত হাঁটাও ব্যায়াম। গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে মোট আড়াই ঘণ্টা অর্থাৎ দিনে প্রায় ২০ মিনিটের মতো হাঁটলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কমে যায়। এ ছাড়া হাঁটলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, ক্যানসারের ঝুঁকি কমে, রক্তচাপ ও রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
বই পড়–ন : বই পড়লে মানসিক চাপ কমে। আর তাই বই হোক আপনার নতুন বছরের সঙ্গী। রাতে ঘুমানোর আগে দশ মিনিট বই পড়–ন। এতে ঘুম ভালো হবে, সচল থাকবে আপনার মস্তিষ্ক।
পরিবারকে সময় দিন : কর্মব্যস্ততার কারণে অনেকেই পরিবারকে ঠিকমতো সময় দিতে পারেন না। ব্যস্ততায় জীবন হয়ে উঠে একঘেয়ে ও যান্ত্রিক। এগুলো থেকে মুক্তি পেতে পরিবার নিয়ে দূরে কোথাও বেড়িয়ে আসতে পারেন। এতে সারা বছরের কর্মচাঞ্চল্য সঞ্চয় হওয়ার পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধনও দৃঢ় হবে।
পাশাপাশি কম্পিউটার ও স্মার্টফোনের ব্যবহার কমিয়ে আনুন। যান্ত্রিক ব্যস্ততা এড়িয়ে একান্ত কিছু সময় নিজের মতো করে উপভোগ করুন। সর্বোপরি হাসুন, ভালোবাসুন ও খোশগল্পে মেতে উঠুন। দূর করুন একাকিত্ব, ক্লান্তি ও বিষণœতা। সুস্বাস্থ্যে কাটুক আপনার নতুন বছর।
সম্পাদনা : লায়লা আরজুমান্দ
শেয়ার করুন
লায়লা আরজুমান্দ | ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০

চিকিৎসক, পুষ্টি ও চিকিৎসাসেবা বিভাগ, আন্তর্জাতিক উদরাময় কেন্দ্র
জীবনকে উপভোগ করতে শারীরিক সুস্থতার গুরুত্ব অপরিসীম। সবারই নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া উচিত। শুরু হয়েছে নতুন আরেকটি বছর। আগের বছরটি যেমনই কাটুক, নতুন বছর সুন্দর হোক, ভালো কাটুকÑ এটাই প্রত্যাশা। সুস্থ জীবনের জন্য চাইলেই বছরের শুরু থেকে কয়েকটি অভ্যাস রপ্ত করতে পারেন। এতে জীবন হবে সুন্দর, স্বাস্থ্যকর ও গতিময়। কমবে ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগের ঝুঁকি।
খাদ্যাভ্যাসে সংযত হন : বছরের শুরু থেকেই খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দিন। খাবার তালিকায় রঙিন ও সবুজ শাকসবজি রাখুন। স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার যেমন : তৈলাক্ত মাছ, বাদাম, তিল, সয়াবিন, শস্যবীজ ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস করুন। ওজন কমাতে সচেষ্ট হন। শুধু ওজন কমালেই বেশ কিছু জটিল রোগের প্রকোপ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। ওজন কমাতে শর্করাজাতীয় খাবার কম খান। মনে রাখবেন, ভাতের চেয়ে রুটি শরীরের জন্য বেশি উপকারী। কারণ রুটিতে আঁশের পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা শরীরে কম শোষিত হয়। অধিকাংশ চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের মতে, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একবেলা ভাত ও দুবেলা রুটি থাকাটাই উত্তম।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন : পানি পানের বিকল্প নেই। প্রাপ্তবয়স্ক ও কর্মক্ষম মান১ুষের প্রতিদিন কমপক্ষে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে কিডনি, যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড ও
মস্তিষ্ক ভালো থাকে, শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
ধূমপান পরিত্যাগ করুন : ধূমপান মৃত্যুর কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, সব জটিল রোগের সঙ্গেই ধূমপানের যোগসাজশ রয়েছে। তাই যেকোনো উপায়ে ধূমপানের বদ-অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। মনে রাখবেন, ধূমপান ত্যাগ করতে আপনার সিদ্ধান্তই যথেষ্ট।
পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি : হাল আমলে জীবনযাত্রার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যস্ততা ও মানসিক চাপ। রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে মানসিক চাপ বাড়ে, কাজকর্মে গতি পাওয়া যায় না। কাজ করে এক ধরনের নির্লিপ্ততা। মানসিক সুস্থতা ও কর্মক্ষমতা অটুট রাখতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং অন্ততপক্ষে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
শারীরিক পরিশ্রম ও প্রার্থনা করুন : বছরের প্রথম থেকেই ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠুন, প্রার্থনা করুন এবং কিছুক্ষণ হাঁটার অভ্যাস করুন। এই অভ্যাসগুলো জীবনধারাকেই বদলে দেবে। এ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। নিয়মিত হাঁটাও ব্যায়াম। গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে মোট আড়াই ঘণ্টা অর্থাৎ দিনে প্রায় ২০ মিনিটের মতো হাঁটলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কমে যায়। এ ছাড়া হাঁটলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, ক্যানসারের ঝুঁকি কমে, রক্তচাপ ও রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
বই পড়–ন : বই পড়লে মানসিক চাপ কমে। আর তাই বই হোক আপনার নতুন বছরের সঙ্গী। রাতে ঘুমানোর আগে দশ মিনিট বই পড়–ন। এতে ঘুম ভালো হবে, সচল থাকবে আপনার মস্তিষ্ক।
পরিবারকে সময় দিন : কর্মব্যস্ততার কারণে অনেকেই পরিবারকে ঠিকমতো সময় দিতে পারেন না। ব্যস্ততায় জীবন হয়ে উঠে একঘেয়ে ও যান্ত্রিক। এগুলো থেকে মুক্তি পেতে পরিবার নিয়ে দূরে কোথাও বেড়িয়ে আসতে পারেন। এতে সারা বছরের কর্মচাঞ্চল্য সঞ্চয় হওয়ার পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধনও দৃঢ় হবে।
পাশাপাশি কম্পিউটার ও স্মার্টফোনের ব্যবহার কমিয়ে আনুন। যান্ত্রিক ব্যস্ততা এড়িয়ে একান্ত কিছু সময় নিজের মতো করে উপভোগ করুন। সর্বোপরি হাসুন, ভালোবাসুন ও খোশগল্পে মেতে উঠুন। দূর করুন একাকিত্ব, ক্লান্তি ও বিষণœতা। সুস্বাস্থ্যে কাটুক আপনার নতুন বছর।
সম্পাদনা : লায়লা আরজুমান্দ