চোখের যত্নে নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
চোখের গুরুত্বপূর্ণ স্তর রেটিনা। রেটিনা স্নায়ুর একটি স্তর, যা বিশেষভাবে আলোক-সংবেদনশীল। এর কাজ চোখের ভেতর আলোকরশ্মিকে শোষণ করে এক ধরনের তরঙ্গের সৃষ্টি করে এই বিশেষ তরঙ্গ মস্তিষ্কে পাঠানো। আর মস্তিষ্ক এই তরঙ্গের মাধ্যমে আমাদের দেখতে সাহায্য করে। রেটিনার এমন সূক্ষ্ম দায়িত্ব পালনের জন্য এর ভেতরের রক্তনালিগুলো খুবই সূক্ষ্ম। এই সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলো ডায়াবেটিসে খুব সহজেই আক্রান্ত হয়। একই কারণে এই চারটি অঙ্গ চোখ, মস্তিষ্ক, হার্ট ও কিডনি ডায়াবেটিসে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
রক্তে যখন সুগারের মাত্রা বেড়ে যায় এবং দীর্ঘদিন চলতে থাকে তখন রক্তনালিতে এক ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। যেমন রক্তনালিগুলো সরু হয়ে রক্ত পরিবহনে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। দীর্ঘ সময়ে রক্তনালি দেহে এক ধরনের ক্ষত সৃষ্টি করে। এতে রক্তনালিতে এক ধরনের ভঙ্গুর অবস্থার সৃষ্টি হয়। রক্তনালির এই পরিবর্তনকে বলা হয় রেটিনোপ্যাথি। রেটিনোপ্যাথির অন্য অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে ডায়াবেটিস হলো উল্লেখযোগ্য। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির এ অবস্থাটি একসময় চোখে রক্তক্ষরণের মতো সমস্যা সৃষ্টি করে এবং স্থায়ী অন্ধত্ব হয়।
রেটিনোপ্যাথি একবার শুরু হয়ে গেলে সমস্যা অনেক। তাই প্রথমেই চেষ্টা করতে হবে যাতে ডায়াবেটিস না হয়। আর যদি কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়, তাহলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে। সাধারণত ১০-১২ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর কারও কারও বেলায় রেটিনোপ্যাথি হতে দেখা যায়। তবে যাদের ডায়াবেটিসের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপানের অভ্যাস আছে এবং যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস তাদের রেটিনোপ্যাথিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। রেটিনোপ্যাথি থেকে দূরে থাকতে হলে ধূমপান বাদ দিতে হবে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিন বা অন্য ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম উপকারী। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পরেও যেহেতু রেটিনোপ্যাথির সম্ভাবনা একেবারে নাকচ করা যায় না তাই পরবর্তী কাজ হবে নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করা। কোনো সময় যদি চোখে রেটিনোপ্যাথির লক্ষণ দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। রেটিনোপ্যাথির প্রাথমিক অবস্থায় লেজার চিকিৎসা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে রেটিনোপ্যাথিকে সম্পূর্ণ সারিয়ে ফেলা সম্ভব না হলেও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর তাতে দীর্ঘদিন অন্ধত্বকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব।
অতএব ডায়াবেটিসজনিত অন্ধত্ব প্রতিকার করতে ধূমপান পরিহার করা, কায়িক পরিশ্রম ও এক্সারসাইজ এবং পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক। আর প্রাথমিক অবস্থায় ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে নিয়মিত সুগারের মাত্রা পরিমাপ করার অভ্যাস করতে হবে। ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করানোর বিকল্প নেই।
শেয়ার করুন

চোখের গুরুত্বপূর্ণ স্তর রেটিনা। রেটিনা স্নায়ুর একটি স্তর, যা বিশেষভাবে আলোক-সংবেদনশীল। এর কাজ চোখের ভেতর আলোকরশ্মিকে শোষণ করে এক ধরনের তরঙ্গের সৃষ্টি করে এই বিশেষ তরঙ্গ মস্তিষ্কে পাঠানো। আর মস্তিষ্ক এই তরঙ্গের মাধ্যমে আমাদের দেখতে সাহায্য করে। রেটিনার এমন সূক্ষ্ম দায়িত্ব পালনের জন্য এর ভেতরের রক্তনালিগুলো খুবই সূক্ষ্ম। এই সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলো ডায়াবেটিসে খুব সহজেই আক্রান্ত হয়। একই কারণে এই চারটি অঙ্গ চোখ, মস্তিষ্ক, হার্ট ও কিডনি ডায়াবেটিসে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
রক্তে যখন সুগারের মাত্রা বেড়ে যায় এবং দীর্ঘদিন চলতে থাকে তখন রক্তনালিতে এক ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। যেমন রক্তনালিগুলো সরু হয়ে রক্ত পরিবহনে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। দীর্ঘ সময়ে রক্তনালি দেহে এক ধরনের ক্ষত সৃষ্টি করে। এতে রক্তনালিতে এক ধরনের ভঙ্গুর অবস্থার সৃষ্টি হয়। রক্তনালির এই পরিবর্তনকে বলা হয় রেটিনোপ্যাথি। রেটিনোপ্যাথির অন্য অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে ডায়াবেটিস হলো উল্লেখযোগ্য। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির এ অবস্থাটি একসময় চোখে রক্তক্ষরণের মতো সমস্যা সৃষ্টি করে এবং স্থায়ী অন্ধত্ব হয়।
রেটিনোপ্যাথি একবার শুরু হয়ে গেলে সমস্যা অনেক। তাই প্রথমেই চেষ্টা করতে হবে যাতে ডায়াবেটিস না হয়। আর যদি কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়, তাহলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে। সাধারণত ১০-১২ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর কারও কারও বেলায় রেটিনোপ্যাথি হতে দেখা যায়। তবে যাদের ডায়াবেটিসের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপানের অভ্যাস আছে এবং যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস তাদের রেটিনোপ্যাথিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। রেটিনোপ্যাথি থেকে দূরে থাকতে হলে ধূমপান বাদ দিতে হবে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিন বা অন্য ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম উপকারী। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পরেও যেহেতু রেটিনোপ্যাথির সম্ভাবনা একেবারে নাকচ করা যায় না তাই পরবর্তী কাজ হবে নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করা। কোনো সময় যদি চোখে রেটিনোপ্যাথির লক্ষণ দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। রেটিনোপ্যাথির প্রাথমিক অবস্থায় লেজার চিকিৎসা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে রেটিনোপ্যাথিকে সম্পূর্ণ সারিয়ে ফেলা সম্ভব না হলেও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর তাতে দীর্ঘদিন অন্ধত্বকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব।
অতএব ডায়াবেটিসজনিত অন্ধত্ব প্রতিকার করতে ধূমপান পরিহার করা, কায়িক পরিশ্রম ও এক্সারসাইজ এবং পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক। আর প্রাথমিক অবস্থায় ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে নিয়মিত সুগারের মাত্রা পরিমাপ করার অভ্যাস করতে হবে। ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করানোর বিকল্প নেই।