কোথাও কেটে গেলে
ডা. হিমেল ঘোষ | ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
ধারালো কোনো বস্তু দিয়ে ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি হওয়াকে ইনজুরি এবং ভোঁতা কোনো জিনিস দিয়ে বা কোথাও পড়ে গিয়ে ছিলে বা থেঁতলে গেলে তাকে বলে ল্যাসারেসন। যেভাবেই ক্ষত তৈরি হোক না কেন শরীরের কোথাও কেটে যাওয়ার পর মূল করণীয় হলো রক্তপাত বন্ধ করা এবং সংক্রমণ যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা। রক্তপাত বেশি না হলে কিংবা সংক্রমণ না হলে বাড়িতেই প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। কিন্তু অবস্থা জটিল হয়ে গেলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হবে। এজন্য কোথাও কেটে গেলে প্রাথমিকভাবে কিছু বিষয় পালন করতে পারেন
একটা পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে কাটা স্থানটি চেপে ধরে রাখতে হবে। কাপড় বা গজ না পেলে হাতের তালু কিংবা দুই আঙুল ব্যবহার করে চিমটির মতো ধরে রাখা যেতে পারে। টানা ২০ থেকে ৩০ মিনিট চাপ দিয়ে ধরে রাখলে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি এক টুকরো বরফও পেঁচিয়ে ধরে রাখতে পারেন। কাটা জায়গাটা একটু উঁচু করে রাখতে হবে। রক্ত বন্ধ হয়েছে কি না বারবার খুলে না দেখাই শ্রেয়।
রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেলে টিউবওয়েল বা ট্যাপের পানি দিয়ে জায়গাটুকু ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। কাটা স্থান জীবাণুমুক্ত এবং পরিষ্কার করার জন্য সাবান বা আয়োডিন ও আয়োডিনজাত অ্যান্টিসেপটিক কিংবা ক্লিনজারও ব্যবহার করা যায়।
কাটা স্থান পরিষ্কার করার পরে ওই জায়গায় পাতলা স্তরে অ্যান্টিবায়োটিক মলম দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। মিউপিরোসিন, নিওমাইসিন বা এ জাতীয় মলম সব সময় বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ হিসেবে বাসায় রাখা উচিত। এগুলো হাতের কাছে না পেলে হলুদের গুঁড়ো কিংবা লবণ-পানিও ব্যবহার করা যায়।
ব্যবহৃত ব্যান্ডেজটি সাধারণ গজ ব্যান্ডেজ বা স্টিকারযুক্ত ব্যান্ডেজ, যা-ই হোক না কেন, প্রতিদিন অন্তত একবার তা পরিবর্তন করতে হবে।
ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটলে বুঝতে হবে রক্তনালি কেটে গেছে, যা সহজে বন্ধ নাও হতে পারে। আবার রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা থাকলে, যেমন যকৃতের রোগ, হিমোফিলিয়া, ডেঙ্গু কিংবা দীর্ঘদিন ধরে অ্যাসপিরিন সেবন করছেন, এমন রোগীর রক্তপাত সহজে বন্ধ নাও হতে পারে। অতিরিক্ত ও অব্যাহত রক্তক্ষরণের ফলে নাড়ির স্পন্দন মৃদু ও ক্ষীণ হয়ে আসতে পারে, রক্তচাপ কমে যেতে পারে এবং হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসতে পারে। এর অর্থ হলো রোগীর জীবন বিপন্ন হয়ে আসছে। আবার কোনো রোগী কাটা-ছেঁড়ার পর হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন। সাধারণত রক্ত দেখে বা ব্যথায় বা ভয়ে স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা হলে এমনটি হয়। আধা ঘণ্টা চেপে রাখার পরও যদি রক্তপাত বন্ধ না হয় কিংবা ক্ষত ছয় মিলিমিটারের বেশি পুরু হয়, তাহলে ওই স্থানে সেলাই লাগতে পারে। কারণ ছোটখাটো কাটা-ছেঁড়ায় কেবল ত্বক ও ত্বকের নিচের কিছু কোষকলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু গভীর ক্ষতের ক্ষেত্রে চর্বি, মাংস, এমনকি হাড়ের কাছ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সেলাই লাগতে পারে। এ রকম হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে হবে।
শেয়ার করুন
ডা. হিমেল ঘোষ | ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

ধারালো কোনো বস্তু দিয়ে ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি হওয়াকে ইনজুরি এবং ভোঁতা কোনো জিনিস দিয়ে বা কোথাও পড়ে গিয়ে ছিলে বা থেঁতলে গেলে তাকে বলে ল্যাসারেসন। যেভাবেই ক্ষত তৈরি হোক না কেন শরীরের কোথাও কেটে যাওয়ার পর মূল করণীয় হলো রক্তপাত বন্ধ করা এবং সংক্রমণ যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা। রক্তপাত বেশি না হলে কিংবা সংক্রমণ না হলে বাড়িতেই প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। কিন্তু অবস্থা জটিল হয়ে গেলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হবে। এজন্য কোথাও কেটে গেলে প্রাথমিকভাবে কিছু বিষয় পালন করতে পারেন
একটা পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে কাটা স্থানটি চেপে ধরে রাখতে হবে। কাপড় বা গজ না পেলে হাতের তালু কিংবা দুই আঙুল ব্যবহার করে চিমটির মতো ধরে রাখা যেতে পারে। টানা ২০ থেকে ৩০ মিনিট চাপ দিয়ে ধরে রাখলে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি এক টুকরো বরফও পেঁচিয়ে ধরে রাখতে পারেন। কাটা জায়গাটা একটু উঁচু করে রাখতে হবে। রক্ত বন্ধ হয়েছে কি না বারবার খুলে না দেখাই শ্রেয়।
রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেলে টিউবওয়েল বা ট্যাপের পানি দিয়ে জায়গাটুকু ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। কাটা স্থান জীবাণুমুক্ত এবং পরিষ্কার করার জন্য সাবান বা আয়োডিন ও আয়োডিনজাত অ্যান্টিসেপটিক কিংবা ক্লিনজারও ব্যবহার করা যায়।
কাটা স্থান পরিষ্কার করার পরে ওই জায়গায় পাতলা স্তরে অ্যান্টিবায়োটিক মলম দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। মিউপিরোসিন, নিওমাইসিন বা এ জাতীয় মলম সব সময় বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ হিসেবে বাসায় রাখা উচিত। এগুলো হাতের কাছে না পেলে হলুদের গুঁড়ো কিংবা লবণ-পানিও ব্যবহার করা যায়।
ব্যবহৃত ব্যান্ডেজটি সাধারণ গজ ব্যান্ডেজ বা স্টিকারযুক্ত ব্যান্ডেজ, যা-ই হোক না কেন, প্রতিদিন অন্তত একবার তা পরিবর্তন করতে হবে।
ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটলে বুঝতে হবে রক্তনালি কেটে গেছে, যা সহজে বন্ধ নাও হতে পারে। আবার রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা থাকলে, যেমন যকৃতের রোগ, হিমোফিলিয়া, ডেঙ্গু কিংবা দীর্ঘদিন ধরে অ্যাসপিরিন সেবন করছেন, এমন রোগীর রক্তপাত সহজে বন্ধ নাও হতে পারে। অতিরিক্ত ও অব্যাহত রক্তক্ষরণের ফলে নাড়ির স্পন্দন মৃদু ও ক্ষীণ হয়ে আসতে পারে, রক্তচাপ কমে যেতে পারে এবং হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসতে পারে। এর অর্থ হলো রোগীর জীবন বিপন্ন হয়ে আসছে। আবার কোনো রোগী কাটা-ছেঁড়ার পর হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন। সাধারণত রক্ত দেখে বা ব্যথায় বা ভয়ে স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা হলে এমনটি হয়। আধা ঘণ্টা চেপে রাখার পরও যদি রক্তপাত বন্ধ না হয় কিংবা ক্ষত ছয় মিলিমিটারের বেশি পুরু হয়, তাহলে ওই স্থানে সেলাই লাগতে পারে। কারণ ছোটখাটো কাটা-ছেঁড়ায় কেবল ত্বক ও ত্বকের নিচের কিছু কোষকলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু গভীর ক্ষতের ক্ষেত্রে চর্বি, মাংস, এমনকি হাড়ের কাছ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সেলাই লাগতে পারে। এ রকম হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে হবে।