এন্ডোমেট্রিওসিস নারীর গোপন বেদনা
ডা. আয়েশা হোসেন সাদিয়া | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
সোনোলজিস্ট কিডনি ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট মিরপুর-২, ঢাকা জরায়ুর সবচেয়ে ভেতরের যে স্তর, তার নাম এন্ডোমেট্রিয়াম। মাসিকের সময় এন্ডোমেট্রিয়ামের টিস্যুগুলো রক্তের সঙ্গে অপসারিত হয়। যদি কোনো কারণে এন্ডোমেট্রিয়ামের টিস্যু জরায়ুর ভেতরের অংশে জমা না হয়ে অন্য কোনো অঙ্গে যেমন ফেলোপিয়ান টিউব, ডিম্বাশয় ইত্যাদিতে জমা হয়, তখন একটি মারাত্মক যন্ত্রণাদায়ক অবস্থার সৃষ্টি হয়। একে বলে এন্ডোমেট্রিওসিস।
লক্ষণ
মাসিকের সময় প্রচণ্ড ব্যথা যৌন মিলনের সময় প্রচণ্ড ব্যথা মাসিক চক্রের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত মূত্রত্যাগ বা মলত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব হওয়া অবসাদ বন্ধ্যত্ব
কারা ঝুঁকিতে আছেন ৩০-৪৫ বছর বয়সী নারী যাদের সন্তান হয়নি বা বন্ধ্যত্ব আছে যারা প্রথম সন্তান দেরিতে নিয়েছেন
এ রোগের পারিবারিক ইতিহাস
কারণ
এন্ডোমেট্রিয়াল কোষসহ রক্ত মাসিকের সময় শরীর থেকে বের না হয়ে বিপরীতমুখী হয়ে ফেলোপিয়ান টিউব ও পেলভিক ক্যাভিটিতে পরিবাহিত হয়। এই স্থানচ্যুত এন্ডোমেট্রিয়াল কোষগুলো পেলভিসে আটকা পড়ে যায় এবং বৃদ্ধি পেতে শুরু করে ও ঘন হয়ে মাসিকের সময় রক্তপাত ঘটায়। এটি এন্ডোমেট্রিওসিসের অন্যতম প্রধান কারণ।
পেরিটোনিয়াল কোষের পরিবর্তন
কিছু হরমোনজনিত কারণে পেরিটোনিয়াল কোষ এন্ডোমেট্রিয়াল কোষে পরিণত হয়। এটিও এন্ডোমেট্রিওসিসের একটি কারণ।
নির্ণয়
শ্রেণিদেশের আলট্রাসাউন্ড করে এন্ডোমেট্রিওসিস নির্ণয় করা যায়। এ ছাড়া ট্রান্সভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ড, ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমেও এ রোগ নির্ণয় করা যায়।
চিকিৎসা
ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এ ছাড়া ব্যথা এবং রক্তপাত কমাতে হরমোন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপারেশনের মাধ্যমে রূপান্তরিত এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু বাদ দিয়ে এন্ডোমেট্রিওসিসের চিকিৎসা করা হয়। গুরুতর হলে ডিম্বাশয়, ফ্যালোপিয়ান টিউবও বাদ দিতে হতে পারে। ব্যথা কমাতে আইবুপ্রফেন, মেফেনোমিক অ্যাসিড ইত্যাদি ব্যথানাশক কাজ করে। একটানা ৬ থেকে ৯ মাস স্বল্পমাত্রার জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা শুধু প্রজেস্টেরন বড়ি দেওয়া হয় অনেক সময়। লেট্রোজল, প্রজেস্টেরন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি একত্রে ছয় মাস খেলে উপকার পাওয়া যায় অনেক সময়। প্রজেস্টেরন বা গোনাডোট্রপিন অ্যানালগ ইনজেকশনও ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় ল্যাপারোস্কপি বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অস্বাভাবিক অবস্থানের টিস্যুগুলোকে কেটে বা পুড়িয়ে ফেলা হয়। এটা জটিল অস্ত্রোপচার। যাদের বয়স কম ও সন্তান নেননি, তাদের এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলে সন্তান নেওয়া উচিত, কেননা এ থেকে পরবর্তী সময়ে বন্ধ্যত্ব হতে পারে। যাদের উপসর্গ সামান্য বা যাদের মেনোপজের সময় আসন্ন, তাদের জন্য তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই, কেবল নির্দিষ্ট সময় পরপর ফলোআপ করলেই হবে।
শেয়ার করুন
ডা. আয়েশা হোসেন সাদিয়া | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

সোনোলজিস্ট কিডনি ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট মিরপুর-২, ঢাকা জরায়ুর সবচেয়ে ভেতরের যে স্তর, তার নাম এন্ডোমেট্রিয়াম। মাসিকের সময় এন্ডোমেট্রিয়ামের টিস্যুগুলো রক্তের সঙ্গে অপসারিত হয়। যদি কোনো কারণে এন্ডোমেট্রিয়ামের টিস্যু জরায়ুর ভেতরের অংশে জমা না হয়ে অন্য কোনো অঙ্গে যেমন ফেলোপিয়ান টিউব, ডিম্বাশয় ইত্যাদিতে জমা হয়, তখন একটি মারাত্মক যন্ত্রণাদায়ক অবস্থার সৃষ্টি হয়। একে বলে এন্ডোমেট্রিওসিস।
লক্ষণ
মাসিকের সময় প্রচণ্ড ব্যথা যৌন মিলনের সময় প্রচণ্ড ব্যথা মাসিক চক্রের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত মূত্রত্যাগ বা মলত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব হওয়া অবসাদ বন্ধ্যত্ব
কারা ঝুঁকিতে আছেন ৩০-৪৫ বছর বয়সী নারী যাদের সন্তান হয়নি বা বন্ধ্যত্ব আছে যারা প্রথম সন্তান দেরিতে নিয়েছেন
এ রোগের পারিবারিক ইতিহাস
কারণ
এন্ডোমেট্রিয়াল কোষসহ রক্ত মাসিকের সময় শরীর থেকে বের না হয়ে বিপরীতমুখী হয়ে ফেলোপিয়ান টিউব ও পেলভিক ক্যাভিটিতে পরিবাহিত হয়। এই স্থানচ্যুত এন্ডোমেট্রিয়াল কোষগুলো পেলভিসে আটকা পড়ে যায় এবং বৃদ্ধি পেতে শুরু করে ও ঘন হয়ে মাসিকের সময় রক্তপাত ঘটায়। এটি এন্ডোমেট্রিওসিসের অন্যতম প্রধান কারণ।
পেরিটোনিয়াল কোষের পরিবর্তন
কিছু হরমোনজনিত কারণে পেরিটোনিয়াল কোষ এন্ডোমেট্রিয়াল কোষে পরিণত হয়। এটিও এন্ডোমেট্রিওসিসের একটি কারণ।
নির্ণয়
শ্রেণিদেশের আলট্রাসাউন্ড করে এন্ডোমেট্রিওসিস নির্ণয় করা যায়। এ ছাড়া ট্রান্সভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ড, ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমেও এ রোগ নির্ণয় করা যায়।
চিকিৎসা
ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এ ছাড়া ব্যথা এবং রক্তপাত কমাতে হরমোন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপারেশনের মাধ্যমে রূপান্তরিত এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু বাদ দিয়ে এন্ডোমেট্রিওসিসের চিকিৎসা করা হয়। গুরুতর হলে ডিম্বাশয়, ফ্যালোপিয়ান টিউবও বাদ দিতে হতে পারে। ব্যথা কমাতে আইবুপ্রফেন, মেফেনোমিক অ্যাসিড ইত্যাদি ব্যথানাশক কাজ করে। একটানা ৬ থেকে ৯ মাস স্বল্পমাত্রার জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা শুধু প্রজেস্টেরন বড়ি দেওয়া হয় অনেক সময়। লেট্রোজল, প্রজেস্টেরন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি একত্রে ছয় মাস খেলে উপকার পাওয়া যায় অনেক সময়। প্রজেস্টেরন বা গোনাডোট্রপিন অ্যানালগ ইনজেকশনও ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় ল্যাপারোস্কপি বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অস্বাভাবিক অবস্থানের টিস্যুগুলোকে কেটে বা পুড়িয়ে ফেলা হয়। এটা জটিল অস্ত্রোপচার। যাদের বয়স কম ও সন্তান নেননি, তাদের এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলে সন্তান নেওয়া উচিত, কেননা এ থেকে পরবর্তী সময়ে বন্ধ্যত্ব হতে পারে। যাদের উপসর্গ সামান্য বা যাদের মেনোপজের সময় আসন্ন, তাদের জন্য তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই, কেবল নির্দিষ্ট সময় পরপর ফলোআপ করলেই হবে।