এইডস সচেতনতা
ডা. মো. ফারুক হোসেন | ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
২০২১ সালের ওয়ার্ল্ড এইডস ডের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, ‘End Inequalities. End Aids’ এইডস রোগের বিষয়ে সচেতনতা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জন্য অসমতা দূর করে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। বিশ্ব এইডস দিবসে সাধারণ জনগণকে এইচআইভি সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পালিত হয়। ২০১৬ সালে UNAIDS-এর ডেটা অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী এক মিলিয়ন মানুষ এইডস সম্পৃক্ত রোগে মারা গেছে। প্রতি বছর বিশ্বের সবগুলো দেশ একযোগে ১ ডিসেম্বর এইডস দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন আয়োজন থাকে।
কভিড-১৯ বুঝিয়ে দিয়েছে মহামারী চলাকালে কেউই নিরাপদ নয়। এইডস প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে বাদ দিয়ে সফলতা অর্জন করা যায় না। কভিড-১৯-এর মাধ্যমে আমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছি কীভাবে স্বাস্থ্যজীবনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত যেমন মানবাধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এভাবে এইডস রোগের সংক্রমণ শেষ করতে হবে। এইচআইভি ভাইরাস এইডস বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে থাকে। এই ভাইরাস একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়তে পারে রক্ত সঞ্চালন, এইচআইভি আক্রান্ত সুই এবং যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে। এ ছাড়া এইচআইভি বহনকারী মহিলা থেকে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবকালীন সময়ে তার সন্তানের কাছে এ ভাইরাস বিস্তার লাভ করতে পারে। এইডস তখনই হয় যখন এইচআইভি সংক্রমণের কারণে কারও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। সচেতনতার জন্য এইচআইভি সংক্রমণের কিছু লক্ষণ জানা প্রয়োজন। যেমন : দ্রুতগতিতে ওজন কমে যাওয়া।
শুষ্ক কাশি। বারবার জ্বর আসা। রাতের বেলায় প্রচ- ঘাম হওয়া। অনবরত এবং বর্ণনাতীত দুর্বলতা। শরীরের কিছু স্থানের লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া। এক সপ্তাহের বেশি সময় ডায়রিয়া থাকা। এর ব্যতিক্রমধর্মী কোনো দাগ জিহ্বা বা মুখের ভেতর দেখা দিলে। স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে নষ্ট হওয়া ও বিষণœতা।
এইচআইভি আক্রান্তদের মুখের সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। এইচআইভি আক্রান্তদের তিন ভাগের এক ভাগেরও বেশি মানুষের মুখে সমস্যা থাকে। এটি হয়ে থাকে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে। এইচআইভি আক্রান্তদের মুখের সমস্যার লক্ষণসমূহ : ওরাল ক্যাভিডোসিস (থ্রাস)। বারবার মুখে অ্যাপথাস আলসার। হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়া। জ্বরঠোসা। ক্যাপোসিস সারকোমা (টিউমার)। হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস সংক্রমণ। লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া। শুষ্ক মুখ যার কারণে দাঁতে ক্ষয়, খাবার গ্রহণ এবং গলধঃকরণে সমস্যা হতে পারে। জিহ্বা বা মুখে কালো, সাদা বিশেষ ধরনের দাগ।
তার মানে এই নয় যে, ওপরের মুখের ও শারীরিক লক্ষণসমূহ দেখা দিলেই কেউ এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছেন বা এইডস রোগ আছে এমনটি ভাবা মোটেও ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে আপনাকে এইডস পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন। এইডস পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ হওয়ার অর্থ এই নয় যে, আপনার এইডস রোগ হয়ে গেছে। এমন অনেক মানুষ দেখা গেছে যারা এইচআইভি পজিটিভ কিন্তু তাদের অনেক বছর কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি। এইচআইভি সংক্রমণের লক্ষণসমূহের ওপর ভিত্তি করে সব সময় মন্তব্য করা ঠিক নয়। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এইডস বিস্তারে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। এইডস রোগীর পরিসংখ্যান যাই হোক না কেন এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, সময়োপযোগী ব্যবস্থা ও সচেতন না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
শেয়ার করুন
ডা. মো. ফারুক হোসেন | ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

২০২১ সালের ওয়ার্ল্ড এইডস ডের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, ‘End Inequalities. End Aids’ এইডস রোগের বিষয়ে সচেতনতা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জন্য অসমতা দূর করে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। বিশ্ব এইডস দিবসে সাধারণ জনগণকে এইচআইভি সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পালিত হয়। ২০১৬ সালে UNAIDS-এর ডেটা অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী এক মিলিয়ন মানুষ এইডস সম্পৃক্ত রোগে মারা গেছে। প্রতি বছর বিশ্বের সবগুলো দেশ একযোগে ১ ডিসেম্বর এইডস দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন আয়োজন থাকে।
কভিড-১৯ বুঝিয়ে দিয়েছে মহামারী চলাকালে কেউই নিরাপদ নয়। এইডস প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে বাদ দিয়ে সফলতা অর্জন করা যায় না। কভিড-১৯-এর মাধ্যমে আমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছি কীভাবে স্বাস্থ্যজীবনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত যেমন মানবাধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এভাবে এইডস রোগের সংক্রমণ শেষ করতে হবে। এইচআইভি ভাইরাস এইডস বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে থাকে। এই ভাইরাস একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়তে পারে রক্ত সঞ্চালন, এইচআইভি আক্রান্ত সুই এবং যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে। এ ছাড়া এইচআইভি বহনকারী মহিলা থেকে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবকালীন সময়ে তার সন্তানের কাছে এ ভাইরাস বিস্তার লাভ করতে পারে। এইডস তখনই হয় যখন এইচআইভি সংক্রমণের কারণে কারও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। সচেতনতার জন্য এইচআইভি সংক্রমণের কিছু লক্ষণ জানা প্রয়োজন। যেমন : দ্রুতগতিতে ওজন কমে যাওয়া।
শুষ্ক কাশি। বারবার জ্বর আসা। রাতের বেলায় প্রচ- ঘাম হওয়া। অনবরত এবং বর্ণনাতীত দুর্বলতা। শরীরের কিছু স্থানের লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া। এক সপ্তাহের বেশি সময় ডায়রিয়া থাকা। এর ব্যতিক্রমধর্মী কোনো দাগ জিহ্বা বা মুখের ভেতর দেখা দিলে। স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে নষ্ট হওয়া ও বিষণœতা।
এইচআইভি আক্রান্তদের মুখের সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। এইচআইভি আক্রান্তদের তিন ভাগের এক ভাগেরও বেশি মানুষের মুখে সমস্যা থাকে। এটি হয়ে থাকে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে। এইচআইভি আক্রান্তদের মুখের সমস্যার লক্ষণসমূহ : ওরাল ক্যাভিডোসিস (থ্রাস)। বারবার মুখে অ্যাপথাস আলসার। হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়া। জ্বরঠোসা। ক্যাপোসিস সারকোমা (টিউমার)। হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস সংক্রমণ। লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া। শুষ্ক মুখ যার কারণে দাঁতে ক্ষয়, খাবার গ্রহণ এবং গলধঃকরণে সমস্যা হতে পারে। জিহ্বা বা মুখে কালো, সাদা বিশেষ ধরনের দাগ।
তার মানে এই নয় যে, ওপরের মুখের ও শারীরিক লক্ষণসমূহ দেখা দিলেই কেউ এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছেন বা এইডস রোগ আছে এমনটি ভাবা মোটেও ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে আপনাকে এইডস পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন। এইডস পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ হওয়ার অর্থ এই নয় যে, আপনার এইডস রোগ হয়ে গেছে। এমন অনেক মানুষ দেখা গেছে যারা এইচআইভি পজিটিভ কিন্তু তাদের অনেক বছর কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি। এইচআইভি সংক্রমণের লক্ষণসমূহের ওপর ভিত্তি করে সব সময় মন্তব্য করা ঠিক নয়। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এইডস বিস্তারে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। এইডস রোগীর পরিসংখ্যান যাই হোক না কেন এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, সময়োপযোগী ব্যবস্থা ও সচেতন না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।