করোনা ঢেউয়ে নতুন উদ্বেগ ওমিক্রন
মুমিতুল মিম্মা | ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার খবর জানতে পারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ২৬ নভেম্বর নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের নাম দেওয়া হয় ওমিক্রন। বিভিন্ন দেশে এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের কথা শোনা গেলে এটিকে উদ্বেগজনক ধরন বলে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। লিখেছেন মুমিতুল মিম্মা
নতুন উদ্বেগ
দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান অ্যাঞ্জেলিক কুইটজি। কিছুদিন আগে তার কাছে একজন রোগী (পুরুষ) এলো। তার বয়স ৩৩ বছর। ডাক্তার অ্যাঞ্জেলিককে তিনি বললেন, গত কিছুদিন ধরে তিনি অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। তার শরীর ম্যাজম্যাজ করছে, সেই সঙ্গে মাথাব্যথাও আছে। প্রথাগত করোনা আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে তেমন কোনো মিল পেলেন না ডাক্তার অ্যাঞ্জেলিক। রোগী খাবারের স্বাদ পাচ্ছিলেন, তার নাক গন্ধও পাচ্ছে ঠিকঠাক। ডাক্তারের কেমন যেন সন্দেহ হলো। তিনি এই রোগের লক্ষণগুলো আলাদা করে টুকে রাখলেন।
কিছুদিনের ভেতরে অন্য কভিড রোগীদের ভেতরেও তিনি একই লক্ষণ দেখতে পান। তিনি বুঝতে পারেন সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। দ্রুততম সময়ে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার উপদেষ্টা কমিটিকে বিষয়টি জানান। এ বিষয়ে ডাক্তার অ্যাঞ্জেলিক বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাতে ক্লিনিক্যালি যা দেখছি তা খুবই উদ্বেগজনক। হাসপাতালে আছি মানে আমি (কভিড পর্যবেক্ষণের) কেন্দ্রস্থলে আছি। আমার চোখে কভিডের (এই ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে) অত্যন্ত হালকা ধরনের রোগ লক্ষণ দেখা দিয়েছে। আমরা এখনো কাউকে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করিনি, তবে অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও দেশের সবখানে একই চিত্র দেখছেন।’
এটি কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার চিত্র নয়। করোনার একের পর এক ঢেউয়ে যখন বিপর্যস্ত সবাই, তখন চিন্তার রেখায় আঁচড় কাটছে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। করোনার সর্বশেষ মিউটেট হওয়া সংস্করণ এটি। এর মিউটেশন তালিকার দৈর্ঘ্য দেখে বিজ্ঞানীরা একে ভয়াবহ বলে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে এখানে তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রদেশে এটি প্রথম শনাক্ত করা হয়। এখনো পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া তেমন কোথাও খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার রেকর্ড নেই এর। তবুও এটিকে নিয়ে চিন্তিত সবাই।
মিউটেশন
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি অনেকবার অনেকভাবে তার রূপ পরিবর্তন করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক অধ্যাপক টুলিও ডি অলিভিয়েরা বলেছেন, এই ভ্যারিয়েন্টটি অনেক অস্বাভাবিকভাবে মিউটেট হয়েছে। আর এখনো পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে এটি অনেকখানিই আলাদা। কভিড-১৯ এখনো পর্যন্ত আমাদের খুব অবাক করেছে। বিবর্তনের জন্য এটি একের পর এক বড় বড় ধাপ পার হয়ে গেছে। কভিড-১৯ জীবাণুতে আমরা সাধারণত যে মিউটেশন দেখি, সেটি এই ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে অনেক বেশি। ফলে এটি নিয়ে আলাদাভাবে ভাবার দরকার আছে। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে মিউটেশন হয়েছে ৫০ বার। কাউকে আক্রান্ত করতে গেলে এর স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করে থাকে। আর এর স্পাইক প্রোটিন বদলেছে ৩০ বার। সাধারণত এই স্পাইক প্রোটিন লক্ষ্য করেই করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়।
মানুষের দেহকোষের সঙ্গে যে অংশ দিয়ে ভাইরাস সংযোগ ঘটায় তার নাম রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেইন। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সেই রিসেপ্টর বাইন্ডিং মিউটেশন ঘটিয়েছে ১০ বার। ওমিক্রনের আগে চলমান ভ্যারিয়েন্টের নাম ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে এ পরিবর্তন হয়েছিল মাত্র দুবার। তবে এখানেই শেষ হচ্ছে না সবকিছু। বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন এতবার মিউটেশনের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, খুব সম্ভবত এটি একজন রোগীর দেহের জীবাণু থেকে এসেছে যিনি ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করা বেঁচে থাকতে পারেননি। তবে ভাইরাসের মিউটেশনই উদ্বেগের একমাত্র কারণ নয়। মিউটেশনের ফলাফল খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের চোখে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, প্রাথমিকভাবে বি.১.১.৫২৯ নামে পরিচিত ছিল এই ভ্যারিয়েন্টটি। গত ৯ নভেম্বর সংগৃহীত একটি নমুনা থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন ভ্যারিয়েন্টটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বেশিরভাগ অংশে এই ভ্যারিয়েন্টটিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ভ্যারিয়েন্টটির বহুবার মিউটেশন হচ্ছে। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি উদ্বেগজনক। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব কতটা তীব্র সেটি বুঝতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। কারণ এর সংক্রমণ মাত্রা এখনো নিশ্চিত নয়।
চীনের উহানে করোনার প্রাথমিক জীবাণুর সঙ্গে বর্তমানে ভ্যারিয়েন্টের ফারাক অনেকখানি। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে কভিডের যে মূল স্ট্রেইনকে মাথায় রেখে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছিল সেটি এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কাজ নাও করতে পারে। অন্য সব ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশন লক্ষ্য করলে হয়তো ওমিক্রনের ভবিষ্যৎ রূপান্তর সম্পর্কেও একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলুনাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড লেসেলস বলেছেন, ‘এই ভাইরাসটির সংক্রমণের ক্ষমতা, এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা আমাদের শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেদ করার কিছু ক্ষমতাও ইতিমধ্যে এর রয়েছে।’
তবে এতে ভেঙে পড়ার কিছু দেখছেন না অনেকে। কারণ কভিডের অনেক ভ্যারিয়েন্ট গবেষণাগারে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরে বাস্তব ক্ষেত্রে তা ভুল প্রমাণিত হয়। এ বছরের শুরুর দিকে বেটা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সবাই দুর্ভাবনায় থাকলেও সেটা তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। যদিও মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেদ করতে এর জুড়ি ছিল না। শেষে দেখা গেল বেটাকে ছাপিয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দ্রুততম গতিতে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। একের পর এক নতুন ঢেউ ছড়িয়ে গেছে দেশে দেশে। তবে এ বিষয়টিও মাথায় রেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাভি গুপ্তা বলেছেন, ‘বেটা ভ্যারিয়েন্ট শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেদ করতে পারত। এর চেয়ে বেশিকিছুর সামর্থ্য ছিল না সেটির। আর ডেল্টার সংক্রমণ ক্ষমতা ছিল বেশি, এটি মোটামুটি মাত্রায় মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এড়িয়ে যেতে পারত। কিন্তু ওমিক্রন মানুষকে সংক্রমিত করার ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতাই বেশি।’ প্রাথমিক তথ্য প্রমাণে দেখা গেছে, একবার এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে সবমিলিয়ে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন সবাই।
গবেষণাগার ওমিক্রন সম্পর্কে তথ্য দেবে ঠিকই। তবে আসলেই ওমিক্রন সংক্রমণ হার বা মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে দেবে কিনা তা জানা যাবে বাস্তব পরিস্থিতি থেকে। ফলে ইতিমধ্যেই যারা ওমিক্রনে সংক্রমিত হয়েছেন তাদের দিকে বিজ্ঞানীরা সজাগ চোখ রাখছেন। এরই মধ্যে মডার্না ও বায়ো এন টেক কভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে ওমিক্রণের বিরুদ্ধেও কার্যকর করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বরাত থেকে জানা যায়, নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে প্রচলিত ভ্যাকসিনগুলো কম কার্যকর হবে। কিন্তু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাকচারাল বায়োলজিস্ট প্রফেসর জেমস নাইসমিস বলেছেন, এটা খারাপ খবর হতে পারে, তবে আমাদের মাথায় রাখতে হবে এটিই শেষ নয়। অ্যাঞ্জেলিক কুইটজি বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার যেসব এলাকা থেকে এই ভ্যারিয়েন্টের খবর পাওয়া গেছে সেখানের কভিড পরিস্থিতি এত গুরুতর ছিল না। তারপরও নতুন ভ্যারিয়েন্টের খবর এসেছে। ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে আমাদের গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শরীর ব্যথা, আর চরম ক্লান্তিতে ভোগার কথা বলেছেন। এ ভ্যারিয়েন্টে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে অল্প বয়সীরা। কোনো বয়স্ক মানুষকে এখনো পর্যন্ত আক্রান্ত হতে দেখা যায়নি।
দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থা
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার গটেং প্রদেশে। বতসোয়ানা, হংকং, ইসরায়েল ও বেলজিয়ামেও ইতিমধ্যে এটি শনাক্ত করা গেছে। এই ভ্যারিয়েন্ট সবদিক থেকেই বেশ বৈচিত্র্যময় ফল দেখাচ্ছে। ফলে অনেকেই ধারণা করছেন গটেং প্রদেশের ৯০ ভাগ মানুষের দেশে সম্ভবত এই ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যান্য অনেক প্রদেশে এটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা সবার।
প্রচলিত ভ্যাকসিন এ ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে কিনা এ নিয়ে বর্তমানে চিন্তিত সবাই। দক্ষিণ আফ্রিকার মোট জনগোষ্ঠীর ২৪% কভিড টিকার আওতায় এসেছে। যেসব দেশ এরচেয়ে বেশি টিকার আওতায় এসেছে সেসব দেশে এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে সে বিষয়েও তেমন কোনো ধারণা দিতে পারছেন না কেউ।
ভাইরাসটি আবিষ্কার করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার একজন ডাক্তার। তার পরপরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে উদ্বেগজনক হিসেবে চিহ্নিত করে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়। কিন্তু এ ঘটনা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ওমিক্রনের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের পরপরই বিভিন্ন দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণের ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘটনায় এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, ওমিক্রন নামে কভিড-১৯ এর উদ্বেগজনক নতুন ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কার করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাধুবাদ জানানোর পরিবর্তে তাদের আন্তর্জাতিকভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের কঠোর সমালোচনা করেছেন তারা। সেই বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, অন্যান্য দেশ যখন নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কার করছিল তখন অন্যান্য দেশের অবস্থান ছিল একেবারে ভিন্ন।
নতুন ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টির জন্য উন্নত দেশগুলোকে দায়ী করেছেন আফ্রিকান ইউনিয়নের কর্মকর্তা আয়োয়াদে আলাকিজা। তিনি বলেন, যা হওয়ার ছিল তাইই হচ্ছে। বিশ্ব ন্যায়সংগতভাবে, জরুরি ভিত্তিতে ও দ্রুততম সময়ের ভেতরে টিকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলাফল হিসেবে এমন পরিস্থিতি দেখতে হচ্ছে। উচ্চ আয়ের দেশগুলো টিকা মজুদ করেছে। সত্যি বলতে পৃথিবীর এমন দুর্দশার সময়ে বিষয়টি মেনে নেওয়া কষ্টকর। এই যে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা? এ বিষয়গুলো কিসের ভিত্তিতে করা হয়? রাজনীতির ভিত্তিতে, বিজ্ঞানের ভিত্তিতে নয়। ভাইরাসটি ইতিমধ্যে তিনটি মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে কেবল আফ্রিকার ওপর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এসেছে কেন?
সতর্কতামূলক অবস্থানে থাকা দেশ
ঝুঁকি যাচাই করে ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ও সুইজারল্যান্ড দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সাময়িকভাবে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে।
ইউরোপিয়ান কমিশন প্রধান আরসালা ফর ডার লেয়েন বলেছেন, পুরো ইউরোপের দ্রুততম সময়ে ও একত্রিতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই জরুরি।
ইউরোপিয়ান কমিশনের মুখপাত্র এরিক মেমার জানিয়েছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৭টি দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান জরুরি এক বৈঠক শেষে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। বেলজিয়ামে নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত এক রোগী শনাক্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
জাপান জানিয়েছে ২৭ নভেম্বর থেকে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা অধিকাংশ দেশের নাগরিকদের ১০ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। একই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে তাদের মোট চারবার করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা ও হংকং থেকে আসা ভ্রমণকারীদের আরও কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করবে ভারতএমন খবর প্রকাশ করেছে দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম।
এদিকে ইরানও দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের ছয়টি দেশ থেকে আসা ভ্রমণকারীদের তাদের দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবর অনুযায়ী, ওই অঞ্চল থেকে আসা ইরানি নাগরিকরা দুইবার পরীক্ষার পর নেগেটিভ ফল এলে দেশে প্রবেশ করতে পারবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জো ফাহলা সাংবাদিকদের বলেছেন ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞা জারি করা ‘অন্যায়’। তিনি বলেন, ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে কিছু দেশ যেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত বিধির সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে।’
শেয়ার করুন
মুমিতুল মিম্মা | ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার খবর জানতে পারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ২৬ নভেম্বর নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের নাম দেওয়া হয় ওমিক্রন। বিভিন্ন দেশে এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের কথা শোনা গেলে এটিকে উদ্বেগজনক ধরন বলে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। লিখেছেন মুমিতুল মিম্মা
নতুন উদ্বেগ
দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান অ্যাঞ্জেলিক কুইটজি। কিছুদিন আগে তার কাছে একজন রোগী (পুরুষ) এলো। তার বয়স ৩৩ বছর। ডাক্তার অ্যাঞ্জেলিককে তিনি বললেন, গত কিছুদিন ধরে তিনি অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। তার শরীর ম্যাজম্যাজ করছে, সেই সঙ্গে মাথাব্যথাও আছে। প্রথাগত করোনা আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে তেমন কোনো মিল পেলেন না ডাক্তার অ্যাঞ্জেলিক। রোগী খাবারের স্বাদ পাচ্ছিলেন, তার নাক গন্ধও পাচ্ছে ঠিকঠাক। ডাক্তারের কেমন যেন সন্দেহ হলো। তিনি এই রোগের লক্ষণগুলো আলাদা করে টুকে রাখলেন।
কিছুদিনের ভেতরে অন্য কভিড রোগীদের ভেতরেও তিনি একই লক্ষণ দেখতে পান। তিনি বুঝতে পারেন সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। দ্রুততম সময়ে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার উপদেষ্টা কমিটিকে বিষয়টি জানান। এ বিষয়ে ডাক্তার অ্যাঞ্জেলিক বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাতে ক্লিনিক্যালি যা দেখছি তা খুবই উদ্বেগজনক। হাসপাতালে আছি মানে আমি (কভিড পর্যবেক্ষণের) কেন্দ্রস্থলে আছি। আমার চোখে কভিডের (এই ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে) অত্যন্ত হালকা ধরনের রোগ লক্ষণ দেখা দিয়েছে। আমরা এখনো কাউকে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করিনি, তবে অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও দেশের সবখানে একই চিত্র দেখছেন।’
এটি কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার চিত্র নয়। করোনার একের পর এক ঢেউয়ে যখন বিপর্যস্ত সবাই, তখন চিন্তার রেখায় আঁচড় কাটছে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। করোনার সর্বশেষ মিউটেট হওয়া সংস্করণ এটি। এর মিউটেশন তালিকার দৈর্ঘ্য দেখে বিজ্ঞানীরা একে ভয়াবহ বলে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে এখানে তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রদেশে এটি প্রথম শনাক্ত করা হয়। এখনো পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া তেমন কোথাও খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার রেকর্ড নেই এর। তবুও এটিকে নিয়ে চিন্তিত সবাই।
মিউটেশন
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি অনেকবার অনেকভাবে তার রূপ পরিবর্তন করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক অধ্যাপক টুলিও ডি অলিভিয়েরা বলেছেন, এই ভ্যারিয়েন্টটি অনেক অস্বাভাবিকভাবে মিউটেট হয়েছে। আর এখনো পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে এটি অনেকখানিই আলাদা। কভিড-১৯ এখনো পর্যন্ত আমাদের খুব অবাক করেছে। বিবর্তনের জন্য এটি একের পর এক বড় বড় ধাপ পার হয়ে গেছে। কভিড-১৯ জীবাণুতে আমরা সাধারণত যে মিউটেশন দেখি, সেটি এই ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে অনেক বেশি। ফলে এটি নিয়ে আলাদাভাবে ভাবার দরকার আছে। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে মিউটেশন হয়েছে ৫০ বার। কাউকে আক্রান্ত করতে গেলে এর স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করে থাকে। আর এর স্পাইক প্রোটিন বদলেছে ৩০ বার। সাধারণত এই স্পাইক প্রোটিন লক্ষ্য করেই করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়।
মানুষের দেহকোষের সঙ্গে যে অংশ দিয়ে ভাইরাস সংযোগ ঘটায় তার নাম রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেইন। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সেই রিসেপ্টর বাইন্ডিং মিউটেশন ঘটিয়েছে ১০ বার। ওমিক্রনের আগে চলমান ভ্যারিয়েন্টের নাম ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে এ পরিবর্তন হয়েছিল মাত্র দুবার। তবে এখানেই শেষ হচ্ছে না সবকিছু। বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন এতবার মিউটেশনের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, খুব সম্ভবত এটি একজন রোগীর দেহের জীবাণু থেকে এসেছে যিনি ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করা বেঁচে থাকতে পারেননি। তবে ভাইরাসের মিউটেশনই উদ্বেগের একমাত্র কারণ নয়। মিউটেশনের ফলাফল খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের চোখে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, প্রাথমিকভাবে বি.১.১.৫২৯ নামে পরিচিত ছিল এই ভ্যারিয়েন্টটি। গত ৯ নভেম্বর সংগৃহীত একটি নমুনা থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন ভ্যারিয়েন্টটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বেশিরভাগ অংশে এই ভ্যারিয়েন্টটিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ভ্যারিয়েন্টটির বহুবার মিউটেশন হচ্ছে। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি উদ্বেগজনক। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব কতটা তীব্র সেটি বুঝতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। কারণ এর সংক্রমণ মাত্রা এখনো নিশ্চিত নয়।
চীনের উহানে করোনার প্রাথমিক জীবাণুর সঙ্গে বর্তমানে ভ্যারিয়েন্টের ফারাক অনেকখানি। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে কভিডের যে মূল স্ট্রেইনকে মাথায় রেখে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছিল সেটি এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কাজ নাও করতে পারে। অন্য সব ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশন লক্ষ্য করলে হয়তো ওমিক্রনের ভবিষ্যৎ রূপান্তর সম্পর্কেও একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলুনাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড লেসেলস বলেছেন, ‘এই ভাইরাসটির সংক্রমণের ক্ষমতা, এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা আমাদের শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেদ করার কিছু ক্ষমতাও ইতিমধ্যে এর রয়েছে।’
তবে এতে ভেঙে পড়ার কিছু দেখছেন না অনেকে। কারণ কভিডের অনেক ভ্যারিয়েন্ট গবেষণাগারে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরে বাস্তব ক্ষেত্রে তা ভুল প্রমাণিত হয়। এ বছরের শুরুর দিকে বেটা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সবাই দুর্ভাবনায় থাকলেও সেটা তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। যদিও মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেদ করতে এর জুড়ি ছিল না। শেষে দেখা গেল বেটাকে ছাপিয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দ্রুততম গতিতে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। একের পর এক নতুন ঢেউ ছড়িয়ে গেছে দেশে দেশে। তবে এ বিষয়টিও মাথায় রেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাভি গুপ্তা বলেছেন, ‘বেটা ভ্যারিয়েন্ট শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেদ করতে পারত। এর চেয়ে বেশিকিছুর সামর্থ্য ছিল না সেটির। আর ডেল্টার সংক্রমণ ক্ষমতা ছিল বেশি, এটি মোটামুটি মাত্রায় মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এড়িয়ে যেতে পারত। কিন্তু ওমিক্রন মানুষকে সংক্রমিত করার ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতাই বেশি।’ প্রাথমিক তথ্য প্রমাণে দেখা গেছে, একবার এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে সবমিলিয়ে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন সবাই।
গবেষণাগার ওমিক্রন সম্পর্কে তথ্য দেবে ঠিকই। তবে আসলেই ওমিক্রন সংক্রমণ হার বা মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে দেবে কিনা তা জানা যাবে বাস্তব পরিস্থিতি থেকে। ফলে ইতিমধ্যেই যারা ওমিক্রনে সংক্রমিত হয়েছেন তাদের দিকে বিজ্ঞানীরা সজাগ চোখ রাখছেন। এরই মধ্যে মডার্না ও বায়ো এন টেক কভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে ওমিক্রণের বিরুদ্ধেও কার্যকর করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বরাত থেকে জানা যায়, নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে প্রচলিত ভ্যাকসিনগুলো কম কার্যকর হবে। কিন্তু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাকচারাল বায়োলজিস্ট প্রফেসর জেমস নাইসমিস বলেছেন, এটা খারাপ খবর হতে পারে, তবে আমাদের মাথায় রাখতে হবে এটিই শেষ নয়। অ্যাঞ্জেলিক কুইটজি বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার যেসব এলাকা থেকে এই ভ্যারিয়েন্টের খবর পাওয়া গেছে সেখানের কভিড পরিস্থিতি এত গুরুতর ছিল না। তারপরও নতুন ভ্যারিয়েন্টের খবর এসেছে। ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে আমাদের গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শরীর ব্যথা, আর চরম ক্লান্তিতে ভোগার কথা বলেছেন। এ ভ্যারিয়েন্টে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে অল্প বয়সীরা। কোনো বয়স্ক মানুষকে এখনো পর্যন্ত আক্রান্ত হতে দেখা যায়নি।
দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থা
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার গটেং প্রদেশে। বতসোয়ানা, হংকং, ইসরায়েল ও বেলজিয়ামেও ইতিমধ্যে এটি শনাক্ত করা গেছে। এই ভ্যারিয়েন্ট সবদিক থেকেই বেশ বৈচিত্র্যময় ফল দেখাচ্ছে। ফলে অনেকেই ধারণা করছেন গটেং প্রদেশের ৯০ ভাগ মানুষের দেশে সম্ভবত এই ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যান্য অনেক প্রদেশে এটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা সবার।
প্রচলিত ভ্যাকসিন এ ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে কিনা এ নিয়ে বর্তমানে চিন্তিত সবাই। দক্ষিণ আফ্রিকার মোট জনগোষ্ঠীর ২৪% কভিড টিকার আওতায় এসেছে। যেসব দেশ এরচেয়ে বেশি টিকার আওতায় এসেছে সেসব দেশে এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে সে বিষয়েও তেমন কোনো ধারণা দিতে পারছেন না কেউ।
ভাইরাসটি আবিষ্কার করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার একজন ডাক্তার। তার পরপরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে উদ্বেগজনক হিসেবে চিহ্নিত করে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়। কিন্তু এ ঘটনা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ওমিক্রনের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের পরপরই বিভিন্ন দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণের ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘটনায় এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, ওমিক্রন নামে কভিড-১৯ এর উদ্বেগজনক নতুন ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কার করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাধুবাদ জানানোর পরিবর্তে তাদের আন্তর্জাতিকভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের কঠোর সমালোচনা করেছেন তারা। সেই বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, অন্যান্য দেশ যখন নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কার করছিল তখন অন্যান্য দেশের অবস্থান ছিল একেবারে ভিন্ন।
নতুন ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টির জন্য উন্নত দেশগুলোকে দায়ী করেছেন আফ্রিকান ইউনিয়নের কর্মকর্তা আয়োয়াদে আলাকিজা। তিনি বলেন, যা হওয়ার ছিল তাইই হচ্ছে। বিশ্ব ন্যায়সংগতভাবে, জরুরি ভিত্তিতে ও দ্রুততম সময়ের ভেতরে টিকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলাফল হিসেবে এমন পরিস্থিতি দেখতে হচ্ছে। উচ্চ আয়ের দেশগুলো টিকা মজুদ করেছে। সত্যি বলতে পৃথিবীর এমন দুর্দশার সময়ে বিষয়টি মেনে নেওয়া কষ্টকর। এই যে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা? এ বিষয়গুলো কিসের ভিত্তিতে করা হয়? রাজনীতির ভিত্তিতে, বিজ্ঞানের ভিত্তিতে নয়। ভাইরাসটি ইতিমধ্যে তিনটি মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে কেবল আফ্রিকার ওপর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এসেছে কেন?
সতর্কতামূলক অবস্থানে থাকা দেশ
ঝুঁকি যাচাই করে ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ও সুইজারল্যান্ড দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সাময়িকভাবে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে।
ইউরোপিয়ান কমিশন প্রধান আরসালা ফর ডার লেয়েন বলেছেন, পুরো ইউরোপের দ্রুততম সময়ে ও একত্রিতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই জরুরি।
ইউরোপিয়ান কমিশনের মুখপাত্র এরিক মেমার জানিয়েছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৭টি দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান জরুরি এক বৈঠক শেষে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। বেলজিয়ামে নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত এক রোগী শনাক্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
জাপান জানিয়েছে ২৭ নভেম্বর থেকে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা অধিকাংশ দেশের নাগরিকদের ১০ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। একই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে তাদের মোট চারবার করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা ও হংকং থেকে আসা ভ্রমণকারীদের আরও কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করবে ভারতএমন খবর প্রকাশ করেছে দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম।
এদিকে ইরানও দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের ছয়টি দেশ থেকে আসা ভ্রমণকারীদের তাদের দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবর অনুযায়ী, ওই অঞ্চল থেকে আসা ইরানি নাগরিকরা দুইবার পরীক্ষার পর নেগেটিভ ফল এলে দেশে প্রবেশ করতে পারবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জো ফাহলা সাংবাদিকদের বলেছেন ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞা জারি করা ‘অন্যায়’। তিনি বলেন, ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে কিছু দেশ যেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত বিধির সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে।’