ওমিক্রন নিয়ে সতর্কতা
লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ | ২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
করোনার নতুন এক ভয়ানক ধরন আবির্ভূত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার গুটেং প্রদেশে। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা নয় বতসোয়ানা, হংকং, ইসরায়েল, বেলজিয়ামসহ বিশ্বের ১৩টি দেশে পাওয়া গেছে এই ধরনটি। নতুন ধরনটি নিয়ে বিশাল এক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বে।
ভাইরাস রূপ বদলায়
আরএনএ ভাইরাসের এক বৈশিষ্ট্য হলো এটি খুব দ্রুত বদলে ফেলে নিজেকে আর নতুনভাবে আক্রমণ রচনার জন্য নতুন কৌশল নিয়ে হাজির হয়। করোনা যেহেতু আরএনএ ভাইরাস, সেজন্য এরা প্রতিনিয়ত বদলে ফেলছে নিজেকে। নতুন রূপে আবির্ভূত ধরনটি কখনো কখনো হতে পারে ভয়ানক আগ্রাসী। এবারের নতুন ধরনটির নাম ওমিক্রন। নতুন যেই ধরনটি এখন পাওয়া যাচ্ছে তার ভয়াবহতা কেমন হবে তা এখন বৈজ্ঞানিক মহলে বিরাট এক আলোচ্য বিষয়। ভাইরাস যত ছড়াবে ততই বদলে ফেলবে তার চেহারা-চরিত্র। আমরা বলি মিউটেশন। এই মিউটেশন যত বেশি হবে ততই সম্ভাবনা তৈরি হবে নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন তৈরির। চীনের উহানে প্রাপ্ত বন্য ভ্যারিয়েন্ট নিজেকে বদলে ফেলেছে। সেখান থেকে আমরা দেখেছি আলফা, বিটা ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এর মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তীব্র মাত্রায় ঝাঁকুনি দিয়ে গেছে বিশ্বকে।
নতুন চেহারার করোনা
ওমিক্রন নামক নতুন ধরনটি অন্তত ৫০টি জায়গায় নিজের রাসায়নিক গঠন বদলে ফেলেছে। ভাইরাসের বাইরের দিকে কদম ফুলের কেশরের মতো যে স্পাইক প্রোটিন রয়েছে, সেখানে অন্তত ১০টি পরিবর্তন করে ফেলেছে ভাইরাসটি। মানবকোষের সঙ্গে ভাইরাসের সংযুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজন পড়ে বিশেষ ধরনের প্রোটিনের। নতুন ধরনটির এই বিশেষ প্রোটিনেও পরিবর্তন ধরা পড়েছে। সেজন্য আশঙ্কা করা হচ্ছে এই ধরনটি দ্রুত মানবদেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আরেকটি ভয়ের জায়গা হলো এই ধরনটি রোগ প্রতিরোধ পাঁচিল টপকে যেতে পারে। সেজন্য ভ্যাকসিন দেওয়ার পরও এ ধরনটি মানবদেহে বসত গড়তে পারে। বিখ্যাত তিন টিকা ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসন নেওয়া ব্যক্তিদের এই ভাইরাস আক্রমণ করেছে। এই ধরনটি দক্ষিণ আফ্রিকার স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আক্রমণ করেছে। সুতরাং নতুন ধরনটি কাউকে ছাড় দেবে বলে মনে হচ্ছে না।
করণীয়
এখনো নতুন ধরনটির পূর্ণাঙ্গ পাঠ নেওয়া সম্ভব হয়নি। আর গবেষণাগারে প্রাপ্ত তথ্য আর বাস্তব জগতের আক্রমণ এক নাও হতে পারে। সেজন্য আমাদের ভয় পেলে চলবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বাইরে বেরোলে মেডিকেল মাস্ক পরিধান করতে হবে। নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধৌত করতে হবে। জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। ভ্যাকসিন নিতে হবে। এটি ক্ষেত্রবিশেষে আক্রমণ ঠেকাতে না পারলেও করোনার তীব্র আক্রমণের হাত থেকে দেহকে রক্ষা করবে। বিশেষ প্রয়োজন না হলে বিদেশে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে। আক্রান্ত দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ রাখতে হবে। অবশ্যই লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পরখ করে নিতে হবে করোনার। মনে রাখতে হবে বিশ্ব এখনো করোনামুক্ত হয়নি পুরোপুরি।
শেয়ার করুন
লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ | ২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

করোনার নতুন এক ভয়ানক ধরন আবির্ভূত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার গুটেং প্রদেশে। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা নয় বতসোয়ানা, হংকং, ইসরায়েল, বেলজিয়ামসহ বিশ্বের ১৩টি দেশে পাওয়া গেছে এই ধরনটি। নতুন ধরনটি নিয়ে বিশাল এক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বে।
ভাইরাস রূপ বদলায়
আরএনএ ভাইরাসের এক বৈশিষ্ট্য হলো এটি খুব দ্রুত বদলে ফেলে নিজেকে আর নতুনভাবে আক্রমণ রচনার জন্য নতুন কৌশল নিয়ে হাজির হয়। করোনা যেহেতু আরএনএ ভাইরাস, সেজন্য এরা প্রতিনিয়ত বদলে ফেলছে নিজেকে। নতুন রূপে আবির্ভূত ধরনটি কখনো কখনো হতে পারে ভয়ানক আগ্রাসী। এবারের নতুন ধরনটির নাম ওমিক্রন। নতুন যেই ধরনটি এখন পাওয়া যাচ্ছে তার ভয়াবহতা কেমন হবে তা এখন বৈজ্ঞানিক মহলে বিরাট এক আলোচ্য বিষয়। ভাইরাস যত ছড়াবে ততই বদলে ফেলবে তার চেহারা-চরিত্র। আমরা বলি মিউটেশন। এই মিউটেশন যত বেশি হবে ততই সম্ভাবনা তৈরি হবে নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন তৈরির। চীনের উহানে প্রাপ্ত বন্য ভ্যারিয়েন্ট নিজেকে বদলে ফেলেছে। সেখান থেকে আমরা দেখেছি আলফা, বিটা ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এর মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তীব্র মাত্রায় ঝাঁকুনি দিয়ে গেছে বিশ্বকে।
নতুন চেহারার করোনা
ওমিক্রন নামক নতুন ধরনটি অন্তত ৫০টি জায়গায় নিজের রাসায়নিক গঠন বদলে ফেলেছে। ভাইরাসের বাইরের দিকে কদম ফুলের কেশরের মতো যে স্পাইক প্রোটিন রয়েছে, সেখানে অন্তত ১০টি পরিবর্তন করে ফেলেছে ভাইরাসটি। মানবকোষের সঙ্গে ভাইরাসের সংযুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজন পড়ে বিশেষ ধরনের প্রোটিনের। নতুন ধরনটির এই বিশেষ প্রোটিনেও পরিবর্তন ধরা পড়েছে। সেজন্য আশঙ্কা করা হচ্ছে এই ধরনটি দ্রুত মানবদেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আরেকটি ভয়ের জায়গা হলো এই ধরনটি রোগ প্রতিরোধ পাঁচিল টপকে যেতে পারে। সেজন্য ভ্যাকসিন দেওয়ার পরও এ ধরনটি মানবদেহে বসত গড়তে পারে। বিখ্যাত তিন টিকা ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসন নেওয়া ব্যক্তিদের এই ভাইরাস আক্রমণ করেছে। এই ধরনটি দক্ষিণ আফ্রিকার স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আক্রমণ করেছে। সুতরাং নতুন ধরনটি কাউকে ছাড় দেবে বলে মনে হচ্ছে না।
করণীয়
এখনো নতুন ধরনটির পূর্ণাঙ্গ পাঠ নেওয়া সম্ভব হয়নি। আর গবেষণাগারে প্রাপ্ত তথ্য আর বাস্তব জগতের আক্রমণ এক নাও হতে পারে। সেজন্য আমাদের ভয় পেলে চলবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বাইরে বেরোলে মেডিকেল মাস্ক পরিধান করতে হবে। নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধৌত করতে হবে। জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। ভ্যাকসিন নিতে হবে। এটি ক্ষেত্রবিশেষে আক্রমণ ঠেকাতে না পারলেও করোনার তীব্র আক্রমণের হাত থেকে দেহকে রক্ষা করবে। বিশেষ প্রয়োজন না হলে বিদেশে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে। আক্রান্ত দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ রাখতে হবে। অবশ্যই লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পরখ করে নিতে হবে করোনার। মনে রাখতে হবে বিশ্ব এখনো করোনামুক্ত হয়নি পুরোপুরি।