নাৎসিদের লুট করা শিল্পকর্ম পুনরুদ্ধারের গল্প
মুমিতুল মিম্মা | ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের লুট করা অনেক শিল্পকর্মই হারিয়ে গেছে। আবার শিল্পকর্মের মালিকানা হারিয়ে অনেক সংগ্রাহকই বছরের পর বছর মামলা লড়ে গেছেন। উত্তরাধিকারীদের করা এসব মামলা কোনো ক্ষেত্রে পক্ষে গেছে, কোনো ক্ষেত্রে বিপক্ষে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিউ ইয়র্কের জিউইশ মিউজিয়ামে উদ্ধার করা শিল্পকর্ম নিয়ে হয়েছে বিশেষ প্রদর্শনী। লিখেছেন মুমিতুল মিম্মা
শুল্ক ফাঁকি
২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাস। ৭৭ বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে ধরার জন্য জুরিখ থেকে মিউনিখের উদ্দেশে যাত্রা করা ট্রেন থামানো হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছে ৯ হাজার ইউরোর একটি চেক পাওয়া যায়। এই অর্থের উৎস কী জানতে চাইলে বৃদ্ধ জানালেন, পারিবারিকভাবে তার কাছে কিছু শিল্পকর্ম আছে। ১৯৭৮ থেকে তার কাছে থাকা তেমনই এক প্রাচীন শিল্পকর্ম বিক্রি করে এ অর্থ এসেছে। যদিও আইন অনুযায়ী তিনি বেশি অর্থ নিয়ে ভ্রমণ করছিলেন না। তার পরেও গোয়েন্দাদের সন্দেহ ছিল যে, চুরি করা শিল্পকর্ম কালোবাজারে বিক্রি করে তিনি এই অর্থ পেতে পারেন। আবার কোনো ধরনের শিল্প জালিয়াতির সঙ্গেও জড়িত থাকতে পারেন। কারণ শিল্পকর্মের ওপরে তিনি কোনো কর দিতেন না। কারণ তিনি কোনো কাজ করতেন না। পারিবারিকভাবে পাওয়া সম্পত্তির ওপর ভিত্তি করে তিনি জীবনযাপন করতেন। শুল্ক গোয়েন্দারা তার ওপর থেকে চোখ সরালেন না।
জার্মান শুল্ক কর্মকর্তারা তার মিউনিখ অ্যাপার্টমেন্ট অনুসন্ধানের জন্য একটি ওয়ারেন্ট নিয়ে হাজির হন। তিনি বাস করতেন তার বোনের অ্যাপার্টমেন্টে। শুল্ক কর্মকর্তারা সেখানে পৃথিবী বিখ্যাত শিল্পীদের ১৪০৬টি দামি দামি শিল্পকর্ম খুঁজে পেয়েছিলেন, যেগুলোর তৎকালীন মূল্য দাঁড়িয়েছিল ১ বিলিয়ন ইউরো। পাবলো পিকাসো, রেনোয়া, মাতিস, উইলিয়াম হেনরিক অটো ডিক্সসহ নামকরা শিল্পীদের হারিয়ে যাওয়া চিত্রকর্ম খুঁজে পাওয়া যায় তার ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায়। সংগ্রহশালাটি শুল্ক কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে বাজেয়াপ্ত করেন।
বৃদ্ধের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই এসব নিয়ে। যেহেতু তিনি জানেন তিনি কোনো অপরাধ করেননি। আর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া শিল্পকর্ম তো আর অপরাধের কাতারে পড়তে পারে না। নিজের জন্য তিনি কোনো আইনজীবীও নেননি। খুবই ধীরগতিতে চলা এ মামলাটি শুরুতে আদালতের মানুষদের চমকে দিলেও জনসম্মুখে এ বিষয়টি প্রকাশ পায়নি। তদন্তের ধীরগতির কারণ হিসেবে বলা যায়, শিল্পসংশ্লিষ্ট মানুষদের পেছনের গল্প খুঁজতে গেলে প্রজন্মের পর প্রজন্মের গল্প খুঁজতে হয়। কাজেই এ উত্তরাধিকার সূত্রের ভাঁজে ভাঁজে এ সংগ্রহশালার গল্প লুকিয়ে আছে।
সংগ্রাহকের মৃত্যু
২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর এ গল্পে এলো নতুন বাঁক। জার্মান ম্যাগাজিন ফোকাস একটি চাঞ্চল্যকর এ সংবাদটি প্রকাশ করে। একদিকে তদন্তাধীন মামলা, আরেকদিকে গণমাধ্যমের চাপ দুয়ে মিলে বৃদ্ধ বয়সে তিনি অপ্রস্তুত হয়ে যান। এসব সামাল দিতে তিনি একজন জার্মান আইনজীবী নিয়োগ দেন। তদন্তাধীন মামলা কীভাবে পত্রিকায় এলো সে কারণে অজ্ঞাত পরিচয় শুল্ক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তিনি মামলা দায়ের করেন। এরপর তার বাজেয়াপ্ত শিল্পকর্ম ফেরত দেওয়ার জন্য তিনি আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও চুরি করা বা অন্য কোনো আইনত বৈধ মালিক তার শিল্পকর্মের দাবি করলে তিনি সেগুলো ফেরত দেওয়ার ইচ্ছে ব্যক্ত করেন।
এই জার্মান বৃদ্ধ রল্ফ নিকোলাস কর্নেলিয়াস গুরলিট একজন পেশাদার শিল্প সংগ্রাহক। তার বাবা ছিলেন হিলডেব্র্যান্ড গুরলিট। নাৎসিদের লুট করা শিল্পের ডিলার তৃতীয় রাইখ ছিলেন তার অভিভাবক। নাৎসি রাজত্বের আগে ও হিটলারের শাসনামলে সন্দেহজনকভাবে শিল্পের বৃহৎ সংগ্রহ গড়ে তোলেন তারা। সে সংগ্রহ পরে উত্তরাধিকার সূত্রে কর্নেলিয়াসের হাতে গিয়ে পড়ে। আর এ শিল্পকর্ম পত্রিকা মারফত জনগণের নজরে আসার পরেই শুরু হয় আসল ঝামেলা।
২০১৪ সালে কর্নেলিয়াস গুরলিট মারা যান। মারা যাওয়ার আগে জার্মান সরকারের প্রতি বিরক্ত হয়ে তিনি উইল করে যান যে, তার সব শিল্পকর্মের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন সুইজারল্যান্ডের মিউজিয়াম অব ফাইন আর্টস বার্নকে।
সুইস জাদুঘর এই উইলটি পরিচালনার জন্য জার্মান ও সুইস কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি যৌথ চুক্তি পরিচালনা করে। কর্নেলিয়াস গুরলিটের সংগ্রহশালার মধ্যে পাওয়া হেনরি ম্যাটিসের একটি শিল্পকর্ম ছিল ইহুদি সংগ্রাহক পল রোজেনবার্গের। প্যারিস থেকে পালানোর আগে রোজেনবার্গকে তার শিল্পসংগ্রহ ছাড়াই চলে যেতে হয়। তার নাতনি অ্যান সিনক্লেয়ার নাৎসিদের চুরি করা চিত্রকর্ম ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে কয়েক দশক ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই চিত্রকর্মটি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় পরিচালনা পর্ষদ।
বিশ্বযুদ্ধে লুট হওয়া চিত্রকর্ম
শিল্পের দীর্ঘ ইতিহাসের সঙ্গে চুরি বা লুণ্ঠন প্রায় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। দূর থেকে টেনে আনা শিল্পকর্ম যখন জাদুঘর বা কোনো প্রদর্শনীতে ঠাঁই পায়, সেটা দেখার জন্য ভিড় জমায় উৎসুক মানুষ। আমরা খুঁজতে যাই না শিল্পকর্মের উৎসের ঠিকানা। শিল্পীর কর্মে মোহাবিষ্ট হয়েই শিল্পপ্রেমী মানুষের দিন কাটে। অথচ গ্যালারিতে আসা শিল্পকর্ম ঠিক কোন স্থান থেকে এসেছে সেই উৎসের খোঁজ নিতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের চোখ কপালে উঠবে। শিল্পকর্ম অধিগ্রহণের বেশ কটি উপায় রয়েছে। যুদ্ধ, ঔপনিবেশিক বিজয় বা স্বৈরাচারী সরকারের নির্দেশে সেগুলো মূল জন্মভূমি ও শিল্পী বা শিল্পকর্মের মালিকের থেকে নির্মমভাবে উৎখাত করা হয়।
সুইস জাদুঘর কর্নেলিয়াস গুরলিটের ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা থেকে আইনত বৈধ মালিকদের হাতে হস্তান্তর করার পরপরই দাবি আসে জর্জিনা অ্যাডাম তৃতীয় রাইখের লুট করা কাজ কেউ ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করলে কী করা যাবে? এতদিন পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান করা গেল কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের আগেও যে লুটতরাজ হয়েছে সেগুলোই বা কীভাবে মীমাংসা হবে?
এ কথা সত্য যে হাজার হাজার লুণ্ঠিত শিল্পকর্ম এখনো জাদুঘরের দেয়ালে ঝুলছে বা ব্যক্তিগত সংগ্রহে লুকানো রয়েছে। কেউ যদি কোনোভাবে লুট করা শিল্পকর্ম পেয়ে যায় তবে সেখানে কাকে দায়ী করা হবে? সংগ্রাহকের কাজ সংগ্রহ করা, মৃত ও বৈধ কাগজপত্র দেখে সেগুলো ব্যক্তিগত সংগ্রহে নিয়ে আসা। উত্তর প্রজন্মের দাবিদার কীভাবে প্রমাণ করবেন তিনিই আসল উত্তরাধিকারী?
শিল্পবাজারে শিল্পকর্ম লুট করার বিষয়টি যুদ্ধের একটি অন্যতম প্রভাব। ১৮৯০ সালে আঁকা ভ্যান গগের পোর্ট্রটে অব ডক্টর গ্যাশে নব্বই দশকে ৮২.৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়। তারপরে আর কখনো বাজারে প্রকাশ্যে আসেনি। কারণ এর মূল মালিক ফ্রাঞ্জের নাতনি ক্রিস্টিন কোয়েনিগস এই কাজ পুনরুদ্ধারের জন্য চাপ দিচ্ছে। ফলে এই কাজ আর কখনো প্রকাশ্যে আসবে কি না সেটিও একটি প্রশ্ন।
আবার শিল্পকর্মকে একবার দীর্ঘসময় বাজার থেকে দূরে রাখা গেলে শিল্পকর্ম বিষয়ক প্রশ্নগুলো নিয়ে নতুন করে আর আলাপ ওঠে না। ফলে দীর্ঘ সময় পরে এটি অত্যন্ত বিপণনযোগ্য হয়ে ওঠে। কারণ তা হলে সেটির অতীত নিয়ে কোনো কথা উঠবে না।
শিল্প গোয়েন্দা
বেশ কয়েকজন তদন্তকারী ও আইনজীবী লুট হওয়া শিল্পকর্মগুলো খুঁজে বের করেছেন। এদের মধ্যে বিখ্যাত হিসেবে আছে জার্মান ক্লেমেন্স টসসেন্ট। ২০০৩ সালে সাংবাদিক মার্ক স্পিগলাম তার সম্বন্ধে লেখেন, ‘কেউ কেউ তাকে ডেভিড হিসেবে দেখে। কারণ তারা বহু লড়াইয়ের পর তাদের শিল্পকর্মগুলো ফেরত পেয়েছে। আবার অন্যদের মতে তিনি একজন কুচুটে। কারণ নিজের লাভের জন্য, তার নিরীহ ক্রেতা ও পাবলিক মিউজিয়াম থেকে শিল্প সরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি যেকোনো কিছু করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রেই তার আকস্মিক ফি আদায়ের আদায়ের চর্চা শিল্পকর্মের অর্ধেক মূল্যমানের হয়।’
১৯৪০ সালে আমস্টারড্যাম থেকে পালিয়ে আসা ডাচ আর্ট ডিলার জ্যাক হাউডস্টিকারের ক্ষেত্রে টসসেন্টের একটি আলোচিত ঘটনা ছিল। হাউডস্টিকারের গ্যালারি স্টকে ১৪০০ চিত্রের অনেকগুলোর সর্বশেষ অবস্থান ছিল ডাচ জাদুঘর। হাউডস্টিকারের উত্তরাধিকারীরা তাদের পুনরুদ্ধার করার ব্যয়বহুল মিশনে নামে। আইনজীবী টসসেন্টকে এত বেশি অর্থ দিতে হয়েছিল যে, উদ্ধারকৃত চিত্রকর্ম নিলামে বিক্রি করে তার অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এ গল্প এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু হয়নি। জ্যাক হাউডস্টিকারের উত্তরাধিকারীরা ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনার নর্টন সাইমন জাদুঘরে রাখা ১৫৩০ সালের লুকাস ক্রানাচের অ্যাডাম ও ইভের পেছনে ছুটছেন। ৫ বছরের লড়াইয়ের পর সে চিত্রকর্মের বৈধ মালিক হয়ে দাঁড়ায় জাদুঘরটিই। যদিও মামলাটির আপিল মুলতুবি রয়েছে।
লন্ডনভিত্তিক আর্ট রিকভারি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিস মারিনেলোকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যখন কেউ আবিষ্কার করে যে তাদের (কেনা বা উত্তরাধিকার সূত্রে) সংগ্রহে লুট করা শিল্পকর্ম রয়েছে তারা হতভম্ব হয়ে যায় আসলে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, গুরলিটের সংগ্রহে থাকা রোসেনবার্গের নাতনির আইনজীবী ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনাই স্বতন্ত্র। যদি এটি একটি সাম্প্রতিক লেনদেন হয় তাহলে বিক্রেতার যথাযথ পরিশ্রম করা উচিত ছিল কারণ শিল্পকর্মের দাবিদার উঠে আসতে পারে। তবে পুরনো লেনদেনে কোনো ডেটাবেজ ছিল না। ফলে শিল্পকর্মের বদলে যাওয়ার মালিকানার খোঁজ পাওয়া মুশকিল। কেউ এসে দাবি করলে সর্বোত্তম সমাধান হলো দুপক্ষ বসে কথা বলার চেষ্টা করা। কখনো কখনো লোকেরা লুট করা শিল্পের দাবিদার না হয়ে কেবল অর্থ দাবি করে। আমার লক্ষ্য হলো আলোচনার মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা। তবে সবসময় কাজটি সহজ নয়।’
প্রদর্শনী
নিউ ইয়র্কের জুয়িস মিউজিয়াম আফটারলাইভস : রিকভারিং দ্য লস্ট স্টোরিজ অব লুটেড আর্ট শিরোনামে একটি শক্তিশালী প্রদর্শনী হচ্ছে। গত বছরের আগস্ট মাস থেকে এ বছর জানুয়ারির ৯ তারিখ পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলেছে। চুরি ও উদ্ধারের ইতিহাস নিয়ে জাদুঘরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একের পর এক বাস্তব ইতিহাস। শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক উভয় বিচারেই এ প্রদর্শনী খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উদ্বোধনী গ্যালারিতে পিয়েরে বোনেড, মার্ক শাগাল, পল সেজান, হেনরি মাতিসের মতো ইউরোপীয় আধুনিকতাবাদী চিত্রশিল্পীদের একের পর এক অসাধারণ ক্যানভাস দেখা যায়। নাৎসিদের সময়ে শাসকদের নিপীড়নের গল্প ভিন্নভাবে স্থান পেয়েছে এখানে। অনেক সংগ্রাহক ও শিল্পীর কাছ থেকে চিত্রকর্ম ও শিল্পকর্ম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। ফলে প্রদর্শনীর একেকটি শিল্প হয়ে উঠেছে ইউরোপের ইহুদি সম্প্রদায়ের স্বতন্ত্র গল্প।
প্রদর্শনীজুড়ে কয়েক প্রজন্মের কাজ আর আত্মিক বন্ধন ভেসে বেড়াচ্ছে। ইতিহাসের অন্যান্য সংস্কৃতির মানুষের অনুভূতিগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে কেউ এই গ্যালারির মধ্য দিয়ে হাঁটতে পারবে না। এখানের প্রতিটি ছবির নিজস্ব গল্প রয়েছে। কতগুলো হাত ঘুরে, কত বছর ধরে লুকিয়ে রাখার পরে তাদের পুনরুদ্ধার করা গেছে সে গল্পের একমাত্র সাক্ষী এই শিল্পকর্মগুলো নিজেরা।
যুদ্ধের নির্মমতায় অনেক বিখ্যাত ছবি টিকে থাকতে পারেনি। অনেক সংগ্রাহক এক কাপড়ে পালিয়ে গেছেন যুদ্ধের সময়। কালোবাজারিতে হাতবদল হয়েছে ছবি। প্রদর্শনীর এ ছবিগুলো তাই সময়ের প্রতিচ্ছবি। সময়ের ছাপ প্রদর্শনীকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে। উদ্ধারের আনন্দ মিশে গেছে আইনত বর্তমান মালিকের কৃতজ্ঞতায়। এক সময় ইউরোপে ইহুদি সম্প্রদায় যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে তাদের প্রতি সামান্য হলেও সান্ত্বনা জ্ঞাপন করা হয়েছে। মানুষের সামনে জ্বেলেছে আশার আলো। পুনরুদ্ধারের গল্পকে সহজে বলার চেষ্টাটিও তো সহজ নয়!
শেয়ার করুন
মুমিতুল মিম্মা | ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের লুট করা অনেক শিল্পকর্মই হারিয়ে গেছে। আবার শিল্পকর্মের মালিকানা হারিয়ে অনেক সংগ্রাহকই বছরের পর বছর মামলা লড়ে গেছেন। উত্তরাধিকারীদের করা এসব মামলা কোনো ক্ষেত্রে পক্ষে গেছে, কোনো ক্ষেত্রে বিপক্ষে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিউ ইয়র্কের জিউইশ মিউজিয়ামে উদ্ধার করা শিল্পকর্ম নিয়ে হয়েছে বিশেষ প্রদর্শনী। লিখেছেন মুমিতুল মিম্মা
শুল্ক ফাঁকি
২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাস। ৭৭ বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে ধরার জন্য জুরিখ থেকে মিউনিখের উদ্দেশে যাত্রা করা ট্রেন থামানো হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছে ৯ হাজার ইউরোর একটি চেক পাওয়া যায়। এই অর্থের উৎস কী জানতে চাইলে বৃদ্ধ জানালেন, পারিবারিকভাবে তার কাছে কিছু শিল্পকর্ম আছে। ১৯৭৮ থেকে তার কাছে থাকা তেমনই এক প্রাচীন শিল্পকর্ম বিক্রি করে এ অর্থ এসেছে। যদিও আইন অনুযায়ী তিনি বেশি অর্থ নিয়ে ভ্রমণ করছিলেন না। তার পরেও গোয়েন্দাদের সন্দেহ ছিল যে, চুরি করা শিল্পকর্ম কালোবাজারে বিক্রি করে তিনি এই অর্থ পেতে পারেন। আবার কোনো ধরনের শিল্প জালিয়াতির সঙ্গেও জড়িত থাকতে পারেন। কারণ শিল্পকর্মের ওপরে তিনি কোনো কর দিতেন না। কারণ তিনি কোনো কাজ করতেন না। পারিবারিকভাবে পাওয়া সম্পত্তির ওপর ভিত্তি করে তিনি জীবনযাপন করতেন। শুল্ক গোয়েন্দারা তার ওপর থেকে চোখ সরালেন না।
জার্মান শুল্ক কর্মকর্তারা তার মিউনিখ অ্যাপার্টমেন্ট অনুসন্ধানের জন্য একটি ওয়ারেন্ট নিয়ে হাজির হন। তিনি বাস করতেন তার বোনের অ্যাপার্টমেন্টে। শুল্ক কর্মকর্তারা সেখানে পৃথিবী বিখ্যাত শিল্পীদের ১৪০৬টি দামি দামি শিল্পকর্ম খুঁজে পেয়েছিলেন, যেগুলোর তৎকালীন মূল্য দাঁড়িয়েছিল ১ বিলিয়ন ইউরো। পাবলো পিকাসো, রেনোয়া, মাতিস, উইলিয়াম হেনরিক অটো ডিক্সসহ নামকরা শিল্পীদের হারিয়ে যাওয়া চিত্রকর্ম খুঁজে পাওয়া যায় তার ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায়। সংগ্রহশালাটি শুল্ক কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে বাজেয়াপ্ত করেন।
বৃদ্ধের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই এসব নিয়ে। যেহেতু তিনি জানেন তিনি কোনো অপরাধ করেননি। আর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া শিল্পকর্ম তো আর অপরাধের কাতারে পড়তে পারে না। নিজের জন্য তিনি কোনো আইনজীবীও নেননি। খুবই ধীরগতিতে চলা এ মামলাটি শুরুতে আদালতের মানুষদের চমকে দিলেও জনসম্মুখে এ বিষয়টি প্রকাশ পায়নি। তদন্তের ধীরগতির কারণ হিসেবে বলা যায়, শিল্পসংশ্লিষ্ট মানুষদের পেছনের গল্প খুঁজতে গেলে প্রজন্মের পর প্রজন্মের গল্প খুঁজতে হয়। কাজেই এ উত্তরাধিকার সূত্রের ভাঁজে ভাঁজে এ সংগ্রহশালার গল্প লুকিয়ে আছে।
সংগ্রাহকের মৃত্যু
২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর এ গল্পে এলো নতুন বাঁক। জার্মান ম্যাগাজিন ফোকাস একটি চাঞ্চল্যকর এ সংবাদটি প্রকাশ করে। একদিকে তদন্তাধীন মামলা, আরেকদিকে গণমাধ্যমের চাপ দুয়ে মিলে বৃদ্ধ বয়সে তিনি অপ্রস্তুত হয়ে যান। এসব সামাল দিতে তিনি একজন জার্মান আইনজীবী নিয়োগ দেন। তদন্তাধীন মামলা কীভাবে পত্রিকায় এলো সে কারণে অজ্ঞাত পরিচয় শুল্ক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তিনি মামলা দায়ের করেন। এরপর তার বাজেয়াপ্ত শিল্পকর্ম ফেরত দেওয়ার জন্য তিনি আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও চুরি করা বা অন্য কোনো আইনত বৈধ মালিক তার শিল্পকর্মের দাবি করলে তিনি সেগুলো ফেরত দেওয়ার ইচ্ছে ব্যক্ত করেন।
এই জার্মান বৃদ্ধ রল্ফ নিকোলাস কর্নেলিয়াস গুরলিট একজন পেশাদার শিল্প সংগ্রাহক। তার বাবা ছিলেন হিলডেব্র্যান্ড গুরলিট। নাৎসিদের লুট করা শিল্পের ডিলার তৃতীয় রাইখ ছিলেন তার অভিভাবক। নাৎসি রাজত্বের আগে ও হিটলারের শাসনামলে সন্দেহজনকভাবে শিল্পের বৃহৎ সংগ্রহ গড়ে তোলেন তারা। সে সংগ্রহ পরে উত্তরাধিকার সূত্রে কর্নেলিয়াসের হাতে গিয়ে পড়ে। আর এ শিল্পকর্ম পত্রিকা মারফত জনগণের নজরে আসার পরেই শুরু হয় আসল ঝামেলা।
২০১৪ সালে কর্নেলিয়াস গুরলিট মারা যান। মারা যাওয়ার আগে জার্মান সরকারের প্রতি বিরক্ত হয়ে তিনি উইল করে যান যে, তার সব শিল্পকর্মের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন সুইজারল্যান্ডের মিউজিয়াম অব ফাইন আর্টস বার্নকে।
সুইস জাদুঘর এই উইলটি পরিচালনার জন্য জার্মান ও সুইস কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি যৌথ চুক্তি পরিচালনা করে। কর্নেলিয়াস গুরলিটের সংগ্রহশালার মধ্যে পাওয়া হেনরি ম্যাটিসের একটি শিল্পকর্ম ছিল ইহুদি সংগ্রাহক পল রোজেনবার্গের। প্যারিস থেকে পালানোর আগে রোজেনবার্গকে তার শিল্পসংগ্রহ ছাড়াই চলে যেতে হয়। তার নাতনি অ্যান সিনক্লেয়ার নাৎসিদের চুরি করা চিত্রকর্ম ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে কয়েক দশক ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই চিত্রকর্মটি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় পরিচালনা পর্ষদ।
বিশ্বযুদ্ধে লুট হওয়া চিত্রকর্ম
শিল্পের দীর্ঘ ইতিহাসের সঙ্গে চুরি বা লুণ্ঠন প্রায় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। দূর থেকে টেনে আনা শিল্পকর্ম যখন জাদুঘর বা কোনো প্রদর্শনীতে ঠাঁই পায়, সেটা দেখার জন্য ভিড় জমায় উৎসুক মানুষ। আমরা খুঁজতে যাই না শিল্পকর্মের উৎসের ঠিকানা। শিল্পীর কর্মে মোহাবিষ্ট হয়েই শিল্পপ্রেমী মানুষের দিন কাটে। অথচ গ্যালারিতে আসা শিল্পকর্ম ঠিক কোন স্থান থেকে এসেছে সেই উৎসের খোঁজ নিতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের চোখ কপালে উঠবে। শিল্পকর্ম অধিগ্রহণের বেশ কটি উপায় রয়েছে। যুদ্ধ, ঔপনিবেশিক বিজয় বা স্বৈরাচারী সরকারের নির্দেশে সেগুলো মূল জন্মভূমি ও শিল্পী বা শিল্পকর্মের মালিকের থেকে নির্মমভাবে উৎখাত করা হয়।
সুইস জাদুঘর কর্নেলিয়াস গুরলিটের ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা থেকে আইনত বৈধ মালিকদের হাতে হস্তান্তর করার পরপরই দাবি আসে জর্জিনা অ্যাডাম তৃতীয় রাইখের লুট করা কাজ কেউ ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করলে কী করা যাবে? এতদিন পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান করা গেল কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের আগেও যে লুটতরাজ হয়েছে সেগুলোই বা কীভাবে মীমাংসা হবে?
এ কথা সত্য যে হাজার হাজার লুণ্ঠিত শিল্পকর্ম এখনো জাদুঘরের দেয়ালে ঝুলছে বা ব্যক্তিগত সংগ্রহে লুকানো রয়েছে। কেউ যদি কোনোভাবে লুট করা শিল্পকর্ম পেয়ে যায় তবে সেখানে কাকে দায়ী করা হবে? সংগ্রাহকের কাজ সংগ্রহ করা, মৃত ও বৈধ কাগজপত্র দেখে সেগুলো ব্যক্তিগত সংগ্রহে নিয়ে আসা। উত্তর প্রজন্মের দাবিদার কীভাবে প্রমাণ করবেন তিনিই আসল উত্তরাধিকারী?
শিল্পবাজারে শিল্পকর্ম লুট করার বিষয়টি যুদ্ধের একটি অন্যতম প্রভাব। ১৮৯০ সালে আঁকা ভ্যান গগের পোর্ট্রটে অব ডক্টর গ্যাশে নব্বই দশকে ৮২.৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়। তারপরে আর কখনো বাজারে প্রকাশ্যে আসেনি। কারণ এর মূল মালিক ফ্রাঞ্জের নাতনি ক্রিস্টিন কোয়েনিগস এই কাজ পুনরুদ্ধারের জন্য চাপ দিচ্ছে। ফলে এই কাজ আর কখনো প্রকাশ্যে আসবে কি না সেটিও একটি প্রশ্ন।
আবার শিল্পকর্মকে একবার দীর্ঘসময় বাজার থেকে দূরে রাখা গেলে শিল্পকর্ম বিষয়ক প্রশ্নগুলো নিয়ে নতুন করে আর আলাপ ওঠে না। ফলে দীর্ঘ সময় পরে এটি অত্যন্ত বিপণনযোগ্য হয়ে ওঠে। কারণ তা হলে সেটির অতীত নিয়ে কোনো কথা উঠবে না।
শিল্প গোয়েন্দা
বেশ কয়েকজন তদন্তকারী ও আইনজীবী লুট হওয়া শিল্পকর্মগুলো খুঁজে বের করেছেন। এদের মধ্যে বিখ্যাত হিসেবে আছে জার্মান ক্লেমেন্স টসসেন্ট। ২০০৩ সালে সাংবাদিক মার্ক স্পিগলাম তার সম্বন্ধে লেখেন, ‘কেউ কেউ তাকে ডেভিড হিসেবে দেখে। কারণ তারা বহু লড়াইয়ের পর তাদের শিল্পকর্মগুলো ফেরত পেয়েছে। আবার অন্যদের মতে তিনি একজন কুচুটে। কারণ নিজের লাভের জন্য, তার নিরীহ ক্রেতা ও পাবলিক মিউজিয়াম থেকে শিল্প সরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি যেকোনো কিছু করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রেই তার আকস্মিক ফি আদায়ের আদায়ের চর্চা শিল্পকর্মের অর্ধেক মূল্যমানের হয়।’
১৯৪০ সালে আমস্টারড্যাম থেকে পালিয়ে আসা ডাচ আর্ট ডিলার জ্যাক হাউডস্টিকারের ক্ষেত্রে টসসেন্টের একটি আলোচিত ঘটনা ছিল। হাউডস্টিকারের গ্যালারি স্টকে ১৪০০ চিত্রের অনেকগুলোর সর্বশেষ অবস্থান ছিল ডাচ জাদুঘর। হাউডস্টিকারের উত্তরাধিকারীরা তাদের পুনরুদ্ধার করার ব্যয়বহুল মিশনে নামে। আইনজীবী টসসেন্টকে এত বেশি অর্থ দিতে হয়েছিল যে, উদ্ধারকৃত চিত্রকর্ম নিলামে বিক্রি করে তার অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এ গল্প এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু হয়নি। জ্যাক হাউডস্টিকারের উত্তরাধিকারীরা ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনার নর্টন সাইমন জাদুঘরে রাখা ১৫৩০ সালের লুকাস ক্রানাচের অ্যাডাম ও ইভের পেছনে ছুটছেন। ৫ বছরের লড়াইয়ের পর সে চিত্রকর্মের বৈধ মালিক হয়ে দাঁড়ায় জাদুঘরটিই। যদিও মামলাটির আপিল মুলতুবি রয়েছে।
লন্ডনভিত্তিক আর্ট রিকভারি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিস মারিনেলোকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যখন কেউ আবিষ্কার করে যে তাদের (কেনা বা উত্তরাধিকার সূত্রে) সংগ্রহে লুট করা শিল্পকর্ম রয়েছে তারা হতভম্ব হয়ে যায় আসলে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, গুরলিটের সংগ্রহে থাকা রোসেনবার্গের নাতনির আইনজীবী ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনাই স্বতন্ত্র। যদি এটি একটি সাম্প্রতিক লেনদেন হয় তাহলে বিক্রেতার যথাযথ পরিশ্রম করা উচিত ছিল কারণ শিল্পকর্মের দাবিদার উঠে আসতে পারে। তবে পুরনো লেনদেনে কোনো ডেটাবেজ ছিল না। ফলে শিল্পকর্মের বদলে যাওয়ার মালিকানার খোঁজ পাওয়া মুশকিল। কেউ এসে দাবি করলে সর্বোত্তম সমাধান হলো দুপক্ষ বসে কথা বলার চেষ্টা করা। কখনো কখনো লোকেরা লুট করা শিল্পের দাবিদার না হয়ে কেবল অর্থ দাবি করে। আমার লক্ষ্য হলো আলোচনার মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা। তবে সবসময় কাজটি সহজ নয়।’
প্রদর্শনী
নিউ ইয়র্কের জুয়িস মিউজিয়াম আফটারলাইভস : রিকভারিং দ্য লস্ট স্টোরিজ অব লুটেড আর্ট শিরোনামে একটি শক্তিশালী প্রদর্শনী হচ্ছে। গত বছরের আগস্ট মাস থেকে এ বছর জানুয়ারির ৯ তারিখ পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলেছে। চুরি ও উদ্ধারের ইতিহাস নিয়ে জাদুঘরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একের পর এক বাস্তব ইতিহাস। শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক উভয় বিচারেই এ প্রদর্শনী খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উদ্বোধনী গ্যালারিতে পিয়েরে বোনেড, মার্ক শাগাল, পল সেজান, হেনরি মাতিসের মতো ইউরোপীয় আধুনিকতাবাদী চিত্রশিল্পীদের একের পর এক অসাধারণ ক্যানভাস দেখা যায়। নাৎসিদের সময়ে শাসকদের নিপীড়নের গল্প ভিন্নভাবে স্থান পেয়েছে এখানে। অনেক সংগ্রাহক ও শিল্পীর কাছ থেকে চিত্রকর্ম ও শিল্পকর্ম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। ফলে প্রদর্শনীর একেকটি শিল্প হয়ে উঠেছে ইউরোপের ইহুদি সম্প্রদায়ের স্বতন্ত্র গল্প।
প্রদর্শনীজুড়ে কয়েক প্রজন্মের কাজ আর আত্মিক বন্ধন ভেসে বেড়াচ্ছে। ইতিহাসের অন্যান্য সংস্কৃতির মানুষের অনুভূতিগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে কেউ এই গ্যালারির মধ্য দিয়ে হাঁটতে পারবে না। এখানের প্রতিটি ছবির নিজস্ব গল্প রয়েছে। কতগুলো হাত ঘুরে, কত বছর ধরে লুকিয়ে রাখার পরে তাদের পুনরুদ্ধার করা গেছে সে গল্পের একমাত্র সাক্ষী এই শিল্পকর্মগুলো নিজেরা।
যুদ্ধের নির্মমতায় অনেক বিখ্যাত ছবি টিকে থাকতে পারেনি। অনেক সংগ্রাহক এক কাপড়ে পালিয়ে গেছেন যুদ্ধের সময়। কালোবাজারিতে হাতবদল হয়েছে ছবি। প্রদর্শনীর এ ছবিগুলো তাই সময়ের প্রতিচ্ছবি। সময়ের ছাপ প্রদর্শনীকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে। উদ্ধারের আনন্দ মিশে গেছে আইনত বর্তমান মালিকের কৃতজ্ঞতায়। এক সময় ইউরোপে ইহুদি সম্প্রদায় যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে তাদের প্রতি সামান্য হলেও সান্ত্বনা জ্ঞাপন করা হয়েছে। মানুষের সামনে জ্বেলেছে আশার আলো। পুনরুদ্ধারের গল্পকে সহজে বলার চেষ্টাটিও তো সহজ নয়!