
ইন্সটাগ্রামে আরও একটি নতুন ফিচার আসছে। এতে ব্যবহারকারীরা অন্যের দেওয়া পোস্ট আবার নিজের ওয়ালে পোস্ট করতে পারবেন। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের ধারণা, খুব দ্রুতই ব্যবহারকারীরা এই সুবিধা পেতে যাচ্ছেন। মেটার এক মুখপাত্র টেকক্রাঞ্চকে জানিয়েছে, আমরা ইন্সটাগ্রাম ফিডের যেকোনো পোস্টকে রিপোস্ট করার কথা ভাবছি। ঠিক যেমনভাবে আপনারা স্টোরি শেয়ার করেন। যেসব পোস্ট আমাদের নানাভাবে প্রভাবিত করে সেসব পোস্ট রিপোস্ট করা যাবে। এতে পোস্টের মূল নির্মাতাকে তার কাজের জন্য কৃতিত্ব দেওয়ারও ব্যবস্থা থাকবে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘আমরা শিগগিরই অল্পসংখ্যক ব্যবহারকারীকে পরীক্ষামূলক ফিচারটি ব্যবহারের সুযোগ দেব। এদিকে নতুন ফিচারটি নিয়ে প্রথম আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া কনসালট্যান্ট ম্যাট নাভারারকে। তিনি একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করেছেন। যাতে রিপোস্ট ট্যাবের ব্যবহার দেখা গেছে। ওই স্ক্রিনশট অনুযায়ী, পোস্ট, রিল এবং ট্যাগ করা ফটো ট্যাবের পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের প্রোফাইলে রিপোস্ট ট্যাবটিও যুক্ত থাকবে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ছিল বিশ^ জলাতঙ্ক দিবস। আসলে জলাতঙ্ক একটি মারাত্মক রোগ, যা একবার হলে রোগীকে বাঁচানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তবে বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার কারণে কিছুটা হলেও কমেছে। র্যাবিস ভাইরাস দ্বারা কোনো মানুষ বা প্রাণী আক্রান্ত হলে যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় তাকে বলা হয় জলাতঙ্ক রোগ। কুকুর, বিড়াল, বানর, বাদুড়, বেজি ইত্যাদি প্রাণী র্যাবিস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে এবং এরা মানুষকে কামড়ালে এই রোগ হয়। এটি এক প্রাণী থেকে আরেক প্রাণীর দেহে স্থানান্তরিত হতে পারে তার লালা বা রক্তের দ্বারা। এদের মুখের লালায় র্যাবিস ভাইরাসের জীবাণু থাকে। কোনোভাবে তা সুস্থ প্রাণীর রক্তের সংস্পর্শে এলে, রক্তের মাধ্যমে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলাতঙ্ক রোগ সৃষ্টি হয়।
এই ভাইরাস প্রায় সব স্তন্যপায়ী প্রাণীকেই আক্রান্ত করতে পারে। মানুষ সাধারণত কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্কে বেশি আক্রান্ত হন। যে কুকুর র্যাবিস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত সেই কুকুর কাউকে কামড়ালেই জলাতঙ্ক রোগ হয়। দেশে বেশির ভাগ জলাতঙ্ক রোগই হয় কুকুর কামড়ালে। এই রোগ মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডকে প্রভাবিত করে।
লক্ষণ : জ্বর, খিদে না হওয়া,
ক্ষতস্থান ব্যথা বা চুলকানি,
কনফিউশন, অনিয়ন্ত্রিত উত্তেজনা, লালারসের ক্ষরণ বৃদ্ধি, উজ্জ্বল আলো বা কোলাহলে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠা, ঢোক গেলার সময় ডায়াফ্রাম, রেসপিরেটরি মাসল ও কণ্ঠনালির তীব্র ব্যথাযুক্ত সংকোচন হয়, বিশেষ করে পানি পান করার চেষ্টা করলে ডায়াফ্রাম ও অন্যান্য ইন্সপিরেটোরি মাসলের তীব্র সংকোচন ও ব্যথা হয়, ফলে রোগীর মধ্যে হাইড্রোফোবিয়া তৈরি হয়। এ অবস্থার জন্য বাংলায় এই রোগকে জলাতঙ্ক নামে অভিহিত করা হয়েছে, এ ছাড়া রোগীর ডিলিউশন, হ্যালুসিনেশন ও পাগলামি, শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়ানোর অক্ষমতা, চেতনাশূন্যতা ইত্যাদি।
চিকিৎসা : এই রোগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগী মারা যায়। কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে না। তবে উপশমমূলক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়। এই রোগের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। র্যাবিস প্রাণী কামড় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকা নিলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
প্রতিরোধ : এই রোগ প্রতিরোধের উপায় হলো টিকা নেওয়া। এই ভাইরাসের অনেক রকম টিকা আবিষ্কার হয়েছে। সবচেয়ে নিরাপদ টিকা হলো হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন (ঐউঈঠ)। অন্যান্য টিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পিউরিফাইড চিক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন, ডাক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন, নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন ইত্যাদি। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগে টিকা নেওয়াকে প্রি-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস ও আক্রান্ত হওয়ার পরে টিকা নেওয়াকে পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস বলে।
রিমঝিম বৃষ্টি কমবেশি সবার ভালো লাগলেও কাজ বাড়িয়ে দেয় গৃহিণীর। কেননা বৃষ্টির সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ঘরের পরিবেশ হয়ে ওঠে স্যাঁতসেঁতে। তাই বৃষ্টির দিনে ঘরের জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি যতে্নর।
বৃষ্টির দিনে অনেক সময় কাঠের আলমারিতে ফাঙ্গাস পড়ে। পেছনের বোর্ড ফুলে গিয়ে কাঠ বেঁকে যায়। যার ফলে ড্রয়ার খুলতে কষ্ট হয়। তাই বৃষ্টির দিনে আসবাবপত্র দেয়াল থেকে একটু দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। ঘর মোছা, কাপড় ধোয়া সব ক্ষেত্রে জীবাণুনাশক ব্যবহার করা ভালো।
বর্ষা শুরুর আগে অথবা একেবারে দরজা, জানালা বা গ্রিল তৈরির শুরুতেই টিনের দরজা বা জানালায় কোটিং রং ব্যবহার করা উচিত।
কোনো কারণে দেয়ালে ফাটল ধরলে দেয়াল ড্যাম হয়ে যেতে পারে। তাই এগুলো পরীক্ষা করে ফাটল ঠিক করতে হবে। ভালো হয় দেয়ালে ওয়েদার প্রুফ পেইন্ট ব্যবহার করলে।
বর্ষায় কার্পেট ব্যবহার না করাই ভালো বরং এগুলো প্লাস্টিকে মুড়িয়ে তুলে রাখুন শুষ্ক কোনো জায়গায়।
প্রতিদিন মুছে পরিষ্কার রাখতে হবে লেদারের সোফা। একইভাবে মাঝে মাঝে পরিষ্কার করতে হবে লেদারের অন্যসব আসবাবও।
স্পেনের প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে বহু আগে প্রতিকূল আবহাওয়া বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ ধরনের কুঁড়েঘর। শিশুদের রূপকথার বইয়ে যেসব কুঁড়েঘর দেখা যায়, স্পেনের ঘরগুলো দেখতে হুবহু সেরকম। পাইয়োসা নামে পরিচিত এসব ঘর ঘিরে একসময় গড়ে ওঠে একটি জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি। লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
প্রাচীন স্থাপত্য
স্পেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় আনকারেস পর্বতের গা ঘেঁষে কয়েক শতাব্দী পুরনো কুঁড়েঘর রয়েছে। দূর থেকে দেখলে এই ঘরগুলোকে ছোট বিন্দুর মতো দেখায়। শিশুদের কাছে এসব কুঁড়েঘর বেশ পরিচিত। তাদের রূপকথার গল্পের বই বা জনপ্রিয় কমিক বুক সিরিজ অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড ওবিলিক্সের পাতা ওল্টালে আনকারেস পর্বতের ওই কুঁড়েঘর দেখতে পাওয়া যায়। গোলাকার এই ঘরগুলো স্থানীয়দের কাছে পাইয়োসা নামে পরিচিত। পাইয়োসার দেয়াল পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয় এবং ঘরের চাল খড় দিয়ে ছাওয়া হয়। স্পেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের স্বশাসিত অঞ্চল গালিসিয়া ও কাস্তিল-লেওনের পিওরনেদো, বালুতা ও সেব্রেইরো, বালবোয়াসহ অন্য গ্রামগুলোতে দুইশর বেশি পাইয়োসা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এসব ঘরের বেশির ভাগই আড়াইশ বছর আগে তৈরি করা হয়। তবে পাইয়োসার স্থাপত্যশৈলীর বয়স হাজার বছর আগের বলে ধারণা করা হয়। ইতিহাসবিদদের একাংশ মনে করেন, রোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠারও আগে স্পেনে বিশেষ ধরনের এই ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল।
পরিবেশ উপযোগী
পাথর, কাঠ ও খড় এই তিন সামগ্রী দিয়ে পাইয়োসা নির্মাণ করা হয়। পাইয়োসা দেখতে বেশ সাধারণ ও নির্মাণে খুব বেশি সামগ্রী না লাগলেও পাহাড়ের শীতল আবহাওয়া ও ঝড়ো বাতাস ঠেকাতে এগুলো বেশ কার্যকর। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় পাইয়োসার আকার ও দরজা-জানলার কথা। আকৃতি গোল ও দরজা-জানলা কম থাকায় ঝড়ো বাতাস ঘরগুলোকে কাবু করতে পারে না। এ ছাড়া গ্রানাইটের পুরু দেয়ালের কারণে বাইরের ঠাণ্ডা বাতাস ভেতরে ঢুকতে পারে না এবং ঘরের ভেতরের তাপও বাইরে যেতে পারে না। পাইয়োসার দেয়াল যে সবসময় গ্রানাইট পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়, তা নয়। কখনো কখনো চুনাপাথর ও সেøট পাথরও পাইয়োসা নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। গ্রানাইট, চুনাপাথর ও সেøট এই তিন পাথরের যখন যেটা স্প্যানিশরা হাতের কাছে পায়, তখন তাই দিয়েই পাইয়োসা নির্মাণ করে তারা। ফায়ারপ্লেস ও গবাদি পশুর থাকার জায়গা পাইয়োসার ভেতরের তাপমাত্রা উষ্ণ ও স্থির রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শৈশবের স্মৃতি
জেইমি ফারনান্দেজ ইউরিয়া স্পেনের অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি কর্মকর্তা। থাকেন বার্সেলোনা শহরে। দেশটির লিওন প্রদেশের বালুতা গ্রামে শৈশব কাটে তার। সে সময় পরিবারের সঙ্গে পাইয়োসায় থাকতেন ফারনান্দেজ। বালুতা গ্রামে এখন সর্বসাকুল্যে চারটি পাইয়োসা খুঁজে পাওয়া যাবে। তার একটি ইউরিয়ার শৈশবের সেই পাইয়োসা। তিনি বা তার পরিবারের সদস্য কেউ এখন এটিতে থাকেন না। পারিবারিক কিছু জিনিসপত্র রাখা আছে কুঁড়েঘরটিতে। এটির অভ্যন্তরের ফায়ারপ্লেস ফারনান্দেজের পরিবারের চার প্রজন্মকে ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে রক্ষা করে। ফায়ারপ্লেসটি এখনো আগের জায়গাতেই আছে। মাঝেমধ্যে ছেলেবেলার বাড়িতে গিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন ফারনান্দেজ। তিনি বলেন, ‘বালুতা গ্রামের প্রতিটি পাইয়োসার ভেতর দু’ভাগে বিভক্ত। যে অংশে মানুষ থাকে, সেটিকে বলা হয় এসত্রাগো এবং গবাদি পশু থাকার জায়গার নাম এসত্রাভারিজা। ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত এই এসত্রাভারিজার ওপরে রাখা কাঠের তক্তায় ঘুমাতাম আমি। তক্তাটি নিচের গবাদি পশুর কারণে উষ্ণ থাকত। আমাদের বাড়ির এসত্রাভারিজা অংশে সাধারণত গরু, মুরগি, শূকর ও ঘোড়া থাকত।’ ফারনান্দেজ বলেন, ‘ফায়ারপ্লেসটিকে আমরা লেরেইরা বলি। ঐতিহ্যগতভাবে এটি এসত্রাগোর মাঝখানে থাকে। লেরেইরাকে ঘিরে আমরা গল্প করতাম, খাওয়া-দাওয়া করতাম। এ ছাড়া খাবার প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে উল বোনা, যন্ত্রপাতি মেরামতসহ অন্যান্য কাজ করার সময়ও লেরেইরার উষ্ণতা নেওয়া হতো। বাদাম, পনির, মাংসসহ অন্যান্য খাবার লেরেইরার কাছে রাখা হতো যাতে এটির ধোঁয়ায় ইঁদুর খাবারের কাছে ঘেঁষতে না পারে। গবাদি পশুর বাচ্চাদের বেশি উষ্ণতার প্রয়োজন পড়ে, এজন্য লেরেইরার পাশে কখনো কখনো উনুন ও ছোট্ট খোঁয়াড় রাখা হতো। এসত্রাগোর একটি অংশ ব্যক্তিগত শোবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক দম্পতি ওই ঘরটিতে থাকতেন। আমাদের পাইয়োসায় সবার শেষে ছিলেন আমার মা। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সেখানে থাকেন তিনি।’
মা-বাবা ও দাদা-দাদির সঙ্গে ছোটবেলায় পাইয়োসায় থাকার অনেক সুখস্মৃতি এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন ফারনান্দেজ। খুব বেশি গবাদি পশু ছিল না তাদের। জমিজমাও তেমন একটা ছিল না। তা সত্ত্বেও বালুতা গ্রামে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন ফারনান্দেজের পরিবার। এর কারণ তার মা-বাবা, দাদা-দাদি সবাই ছিলেন বেশ ভদ্র, বিনয়ী ও অতিথিপরায়ণ। ফারনান্দেজের এক পারিবারিক বন্ধু ম্যানুয়েল কাদেনাস বারেরো। ফারনান্দেজের বাড়ির প্রাণবন্ত পরিবেশের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘তাদের ফায়ারপ্লেসটি ঘিরে সবসময় লোকজন ভিড় করে থাকত। ফারনান্দেজের দাদা বেশ রসিক ছিলেন। তিনি ছিলেন অসাধারণ এক কমেডিয়ান। তার কৌতুক শুনে হাসতে হাসতে সবাই মাটিতে গড়াগড়ি দিত। তার মতো কৌতুক পুরো গ্রামে আর কেউ বলতে পারত না। এ ছাড়া তার ছিল গল্প বলার অসাধারণ ক্ষমতা। ফারনান্দেজদের পাইয়োসা সবার জন্য সবসময় উন্মুক্ত থাকত। গ্রামের সবাইকে সাদরে গ্রহণ করত তার পরিবার। আমার শৈশবের সেরা সব স্মৃতি তাদের বাড়ি ঘিরেই।’
আনকারেসের জলবায়ু প্রতিকূল ও মাটি খুব বেশি উর্বর না হওয়া সত্ত্বেও বাসিন্দারা ঐতিহ্যগতভাবে সেখানে গরু, ছাগল, শূকর লালন-পালন করত এবং আলু, পেঁয়াজ, বাঁধাকপিসহ অন্যান্য সবজি উৎপাদন করত। কয়েকটি এলাকায় বরবটি, শিমও ফলানো হতো। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শূকর জবাই করা ছিল রীতি। ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হতো চেস্টনাট ও আপেল। আনকারেসের পাহাড়ি এলাকায় গেলে এখনো প্রচুর পরিমাণে চেস্টনাটের বাগান চোখে পড়বে। তবে ওই অঞ্চলে যে খাদ্যশস্য বিপুল পরিমাণে ফলত, তা হলো রাই। এটি আনকারেসের বিস্তীর্ণ ভূমি ও জলবায়ুর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি খাপ খেত। দুই/তিন সপ্তাহে অন্তত একবার গ্রামবাসীরা জড়ো হয়ে বড় একটি পাথরের উনুনে তাদের রুটি সেঁকত। সেলিয়া বলেন, ‘প্রতি মাসে রাইয়ের রুটি সেঁকা এবং অতি অবশ্যই তা চেখে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত আনকারেসের বাসিন্দারা।’
প্রধান চ্যালেঞ্জ
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রাই ছিল আনকারেস অঞ্চলে বাস করা জনগোষ্ঠীর প্রধান খাদ্যশস্য। মাইলের পর মাইল এই খাদ্যশস্যের আবাদ হতো সেখানে। তবে গত কয়েক দশকে ওই অঞ্চলের জনসংখ্যা ও রাই উৎপাদন হ্রাস পাইয়োসা মালিকদের দুর্ভোগে ফেলে। পাইয়োসার চালে বরাবরই রাইয়ের খড় দেওয়া হয়। রাই উৎপাদন কমে যাওয়ায় কুঁড়েঘরগুলোর চাল ভালো অবস্থায় রাখতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। পাইয়োসার চাল তৈরি ও মেরামতের পেশাকে তেইতাদোর বলা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পেশাও হারিয়ে যাচ্ছে বলে উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা। পিওরনেদো গ্রামের ক্যাসা দো সেস্তো পাইয়োসা জাদুঘরের মালিক ইসোলিনা রদরিগেজ লোপেজ বলেন, ‘পাইয়োসার চালের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করতে প্রতি বছর দুই হাজার থেকে তিন হাজার ইউরো খরচ করি আমরা। আমরা নিজেরাই খড় উৎপাদন করি নয়তো মেরামত ব্যয় আরও বেড়ে যাবে।’ ফারনান্দেজের মতো ইসোলিনাও ছোটবেলায় পাইয়োসায় বড় হন। তার আগের পাঁচ প্রজন্মও পাইয়োসাতেই বেড়ে ওঠেন। ১৯৮৯ সালে ইসোলিনা তাদের বাড়ি অর্থাৎ পাইয়োসাকে জাদুঘরে পরিণত করেন। ইসোলিনার এই জাদুঘরের পাশেই রয়েছে সেলিয়া আলোনসো লোপেজ নামে আরেক স্প্যানিশের পাইয়োসা।
১৯৫৯ সালে জন্মগ্রহণ করা সেলিয়ার পাইয়োসার অবস্থা এখন খুব একটা ভালো নয়। এটির চাল পুরোপুরি মেরামতের প্রয়োজন। বৃষ্টিবাদলার এক দুপুরে চালের এক ফুটোর দিকে তাকিয়ে সেলিয়া বলেন, ‘বাইরের চেয়ে ঘরের ভেতরে বৃষ্টি পড়ে বেশি। পুরো চাল মেরামত করতে আমার ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ইউরো খরচ হবে। আঞ্চলিক সরকারের সহযোগিতা ছাড়া আমার একার পক্ষে এটি মেরামত করা সম্ভব নয়।’ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাইয়োসার কয়েকজন মালিক রাইয়ের খড়ের বদলে টিনের চাল বসিয়েছেন। এই সমাধান কারও মনঃপূত না হলেও সাশ্রয়ী বলে তারা এই বিকল্প মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
উন্নয়ন থেকে দূরে
স্পেনের প্রত্যন্ত আনকারেস অঞ্চলের মানুষ কয়েক শতাব্দী ধরে যতটা সম্ভব স্বনির্ভর থাকার চেষ্টা করে গেছে। খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তারা নিজেরাই উৎপাদন করত। বাইরের বিশ্বের ওপর তারা খুব কমই নির্ভরশীল ছিল। গত শতাব্দীর আশির দশকের আগ পর্যন্ত ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ, পানি বা ইট বাঁধানো রাস্তা ছিল না। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে ঘোড়ার গাড়িই ছিল একমাত্র ভরসা। ফারনান্দেজ বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই দরকারে আমার মা-বাবাকে পার্শ্ববর্তী নাভিয়া দে সুয়ারনা গ্রামে যেতে হতো। পাহাড়ি পথ ধরে তারা ঘোড়ার গাড়িতে করে গ্রামটিতে যেতেন।’ আশির দশকের পর আনকারেস অঞ্চলে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে। তবে সরু, খাড়া ও আঁকাবাঁকা পথের তেমন একটা উন্নতি ঘটেনি। প্রতিকূল আবহাওয়ায় এই পথে চলতে গ্রামবাসী থেকে শুরু করে পর্যটকদের বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। এ ছাড়া মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের অবস্থাও ভালো নয়। অবশ্য আনকারেস অঞ্চলকে ঘিরে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড না হওয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন ভরে উপভোগ করতে পারে লোকজন। উন্নয়নের হাত থেকে রেহাই পাওয়া প্রকৃতি এখানে সবাইকে আহ্বান জানায় পাহাড়ের কোলে সময় কাটাতে। নাগরিক জীবনের হই-হট্টগোল থেকে বহু যোজন দূরে থাকা জটিল জীববৈচিত্র্যের আধার আনকারেস অঞ্চলকে তাই ২০০৬ সালে ইউনেস্কো বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই অঞ্চলের উচ্চতা উপত্যকায় ৮০০ মিটার, আনকারেস পাসে ১ হাজার ৬৭০ মিটার। উচ্চতার পার্থক্যের কারণে আনকারেসে এমন এক জলবায়ুর সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, শীতকালে তুষার ও গ্রীষ্মকালে মাঝারি তাপমাত্রা বিরাজ করে। তবে সম্প্রতি বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো আনকারেসেও আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এই অঞ্চলের মোরেনো নামের ৮০ বছর বয়সী এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার ছোটবেলায় এখানে অনেক তুষার পড়ত। গরমও কম ছিল। এখন তুষারপাত কমে গেছে, গরম বেড়ে গেছে।’ আনকারেসে প্রকৃতি ধ্বংস করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়তো এখন পর্যন্ত হয়নি তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গোটা পৃথিবী যে সাম্প্রতিক সময়ে ভুগছে, সেখান থেকে মুক্ত না স্পেনের এই দূরবর্তী অঞ্চলও।
পর্যটন শিল্প
আনকারেসের বেশির ভাগ মানুষকে সময়ের দাবি মেনে আধুনিক হতে হয়েছে। তিন বা চার প্রজন্ম যে পাইয়োসায় বড় হয়, পরবর্তী প্রজন্মকে সেগুলো পুনর্নির্মাণ করতে হয়, ভেতরের নকশা বদলে ফেলতে হয়। কেউ কেউ তাদের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যবাহী পাইয়োসা জাদুঘর, হোটেল বা রেস্তোরাঁয় রূপান্তরিত করে। এতে ওই অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটে। গত সাত বছর ধরে বালবোয়া গ্রামে লা পাইয়োসা দে বালবোয়া রেস্তোরাঁটি পরিচালনা করছেন মিগুয়েল কাউরেল ও তার স্ত্রী প্যাত্রিসিয়া প্রিয়েতো মাউরিস। আনকারেস অঞ্চলের স্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী খাবার এই রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায়। ১৯৯৪ সালে রেস্তোরাঁটি পাইয়োসার আদলে নির্মাণ করে বালবোয়া কাউন্সিল। প্রথমে এটি গান-বাজনার অডিটোরিয়াম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পরে এটিকে রেস্তোরাঁ করা হয়। প্রাচীন বার্চ গাছের ছায়ায় বসে প্রিয়েতো বলেন, ‘আমরা দুজনই চারপাশের প্রকৃতির প্রেমে পড়ে গেছি। এর আগে আরও কয়েক জায়গায় কাজ করেছি কিন্তু এখানে প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের মধ্যে কাজ করে অদ্ভুত ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’
'স্যার নয় আপা ডাকলেই চলবে' রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনের এমন বক্তব্যের পর রাত ৯ টার দিকে আন্দোলন সমাপ্ত করে ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এর আগে চিত্রলেখা নাজনীনের বিরুদ্ধে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে বুধবার (২২ মার্চ) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একাই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন উমর ফারুক। এর পর তার সাথে একাত্মতা জানিয়ে আন্দোলনে যুক্ত হন বেরোবির বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।
তুহিন ওয়াদুদ তার ফেসবুক পোস্টে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেরোবির একটা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে উমর ফারুক আমার কাছে এসেছিলেন। এ সময় আমি বাইরে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম। তখন ওই শিক্ষক আমাকে দেখে আপা বলে ডাক দেন। আমি তাকে স্যার না বলে আপা কেন ডাকছেন জানতে চাই। আমার জায়গায় একজন পুরুষ দায়িত্বে থাকলেও কি তিনি স্যার না বলে ভাই ডাকতেন?
জেলা প্রশাসক জানান, রাতে তিনি ওই শিক্ষক ও আন্দোলনকারীদের স্যার ডাকতে হবে না, আপা ডাকলেই চলবে বলে জানান। এরপর তারা আন্দোলন বন্ধ করে দেন এবং ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে চলে যান।