
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে হঠাৎ পার্ল হারবারে আক্রমণ করে বসে জাপান। প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খর্ব ওই হামলার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। হামলার পরদিন জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ঐতিহাসিক ওই ঘটনার সঙ্গে রাশিয়া ও ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধের সাদৃশ্য পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। চল্লিশের দশকের ওই ঘটনা বিশ্লেষণের পাশাপাশি সাদৃশ্যের দিক নিয়ে লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
হঠাৎ আক্রমণ
‘পার্ল হারবারে বিমান হামলা হয়েছে। এটি কোনো সামরিক প্রশিক্ষণ নয়।’ ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর সকালে এই জরুরি বার্তা হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী হনলুলু থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হয়। বার্তা প্রেরণকারীরা জানতেন, যারা এটি পড়বেন, হামলার ঘটনা তারা বিশ্বাস করবেন না, সামরিক প্রশিক্ষণের অংশ ভেবে উড়িয়ে দেবেন। এ কারণে হামলা হয়েছে লিখে তারা ক্ষান্ত হননি; প্রশিক্ষণ যে নয়, তা দাঁড়ির পর যুক্ত করা দরকার বলে মনে করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অনেকে ধারণা করেছিলেন, জাপানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই বাঁধলেও বাঁধতে পারে। সেই তারা পর্যন্ত পার্ল হারবারে হামলার খবরে বিস্মিত হন। তারা ভাবেননি সত্যি সত্যিই টোকিও থেকে চার হাজার মাইল দূরে প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাঁটি পার্ল হারবারে বোমা মেরে বসবে জাপানিরা। মার্কিন নৌবাহিনীর তৎকালীন সেক্রেটারি ফ্র্যাঙ্ক নক্স তাই হামলার খবরে চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘হায় ঈশ্বর! এ সত্যি হতে পারে না!’ ৭ ডিসেম্বরের হামলায় দুই হাজার চারশোর বেশি মানুষ নিহত হন। আহত হন এক হাজার মার্কিনি। ধ্বংস হয় বহু সামরিক জাহাজ ও বিমান। যুক্তরাষ্ট্র পার্ল হারবারে হামলা আঁচ করতে না পারলেও জাপানের নেতারা কিন্তু কয়েক মাস ধরে আক্রমণের পরিকল্পনা করছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল, প্রশান্ত মহাসাগর যে আসলে জাপানই নিয়ন্ত্রণ করে, তা যুক্তরাষ্ট্রকে দেখিয়ে দেওয়া। পার্ল হারবারে হামলার পরদিন ৮ ডিসেম্বর জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এর তিন দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে জার্মানি।
সাম্রাজ্য বিস্তার
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে জাপান তার সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ করা শুরু করে। যেসব দেশে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, সেসব দেশ দখল করে সম্পদ লুণ্ঠন ছিল জাপানের সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রধান লক্ষ্য। কোরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে ১৮৯৪ সালে চীনকে পরাজিত করে জাপান। এরপর চীনের লিয়াওডং উপদ্বীপ ও মাঞ্চুরিয়ার কিছু অংশ জাপানের দখলে যেতে দেখে চিন্তিত হয়ে পড়ে রাশিয়া। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে জাপান চীনের আরও কয়েকটি অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। জাপানের সাম্রাজ্য বিস্তার দুর্বার গতিতে এগোতে থাকে। তাদের অগ্রগতি দুশ্চিন্তায় ফেলে যুক্তরাষ্ট্রকেও। দেশটি চায়নি, অঞ্চলের পর অঞ্চল দখলের মাধ্যমে সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়ে জাপান আরও শক্তিশালী হোক। জাপান সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত হওয়ার অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে যাওয়া, যা তারা হতে দিতে চায় না। তাই জাপানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেশটিকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র। ত্রিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র যে জাপানকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছে, তা পছন্দ হয়নি জাপানের নেতাদের। তাদের যুক্তি, আমেরিকানদের কথায় কেন তারা সাম্রাজ্য বিস্তারের পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে তাদের উপনিবেশ স্থাপন করেছে এবং এশিয়ার দেশ ফিলিপাইন দখল করেছে?
১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর জাপান যে শুধু পার্ল হারবারে হামলা করেছিল, তা নয়। একই দিনে দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমের গুয়াম অঞ্চল ও এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দেশ ফিলিপাইনেও হামলা চালায়। গুয়াম ও ফিলিপাইন উভয়ই সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে ছিল। এ ছাড়া সেদিন ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত হংকং, সিঙ্গাপুর ও মালয়-এও বিমান হামলা হয়। একই সঙ্গে থাইল্যান্ডে আক্রমণ চালায় জাপানিরা। অর্থাৎ ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরের ৭ তারিখে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন ও ব্রিটিশনিয়ন্ত্রিত এলাকায় বড় ধরনের সমন্বিত আক্রমণ করে জাপানি সাম্রাজ্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের এসব আক্রমণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হামলার পর গুয়াম, ফিলিপাইন, হংকং, সিঙ্গাপুর ও মালয় দখল করে জাপান আর থাইল্যান্ডকে অক্ষশক্তির (ইতালি, জার্মানি ও জাপান) হয়ে কাজ করতে বাধ্য করে। ফিলিপাইনে জাপানের দখলদারিত্ব টিকে ছিল তিন বছর। এই দেশটিকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধের কেন্দ্রস্থলে পরিণত করে জাপান। প্রাকৃতিক সম্পদ লুট ও সাম্রাজ্য বিস্তারের চিন্তা জাপানের পাশাপাশি জার্মানিরও ছিল। ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড আক্রমণ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন জার্মানির একনায়ক অ্যাডল্ফ হিটলারই। তিনি চেয়েছিলেন, ইহুদিবিদ্বেষ কাজে লাগিয়ে জার্মান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে। অন্যদিকে জাপান চেয়েছিল, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাপানি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স ইউনিভার্সিটি-নিউ ব্রান্সউইকের ইতিহাস বিভাগের ডক্টরাল ক্যান্ডিডেট এরি কিটাডা বলেন, ‘সে সময় প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষ করে তেলক্ষেত্র নিয়ে চিন্তিত ছিল শক্তিশালী দেশগুলো। এ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল তাদের মধ্যে। জাপানের সাম্রাজ্যবাদী আচরণ যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্বেগে ফেলে। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর জাপানের তেল সরবরাহ অনেক কমে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দিক থেকে আরও কোণঠাসা হওয়ার ভয়ে দেশ দুটির নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে হামলার সিদ্ধান্ত নেয় জাপান।’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান যে অঞ্চলগুলো দখল করেছিল, সেসব তাদের নিয়ন্ত্রণে যুদ্ধ পর্যন্তই ছিল। ১৯৪৫ সালের আগস্টে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা হামলা চালিয়ে জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে যুক্তরাষ্ট্র। দুই শহরে বোমা হামলায় লাখ লাখ বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
পরিবর্তিত বিশ্ব
পার্ল হারবারে হামলার পর আট দশক পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে বিশ্ব। পূর্ব ও পশ্চিম দুই গোলার্ধেই জাতীয়তাবাদী ও কট্টর ডানপন্থি চিন্তা ও দলের উত্থান ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নেতা প্রেসিডেন্ট হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের হয়ে যায় ব্রিটেন। হাঙ্গেরি, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, গ্রিসসহ ইউরোপের অন্য দেশগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি জাতীয়তাবাদী। দেশগুলোর মধ্যে সহিষ্ণুতা আগের চেয়ে লক্ষণীয়ভাবে কমেছে। জার্মানিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশন্সের পরিচালক মার্ক লিওনার্ড বলেন, ‘পার্ল হারবার ও হিরোশিমা-নাগাসাকির ঘটনা বিশ্বনেতাদের অপরাধী করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তারা যা করেন, সেসব ঠিক ছিল কি নানিজেদের সেই প্রশ্ন করেন। খুব অল্প সময়ের ভেতর তাদের অপরাধবোধ ও মূল্যায়নের জায়গা দখল করে নেয় জাতীয়তাবাদ।’ জার্মানিতে হিটলারের উত্থান ও জাপানের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতারা চুপচাপ ছিলেন কেন, দেশ দুটির বিরুদ্ধে কেন তারা কঠোর পদক্ষেপ নেননি, যার ফলে পার্ল হারবারের মতো ঘটনা ঘটলএসব প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মৌনতা অবলম্বনের একটি কারণ ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি। ওই যুদ্ধে অনেক মার্কিনি প্রাণ হারান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রেশ কাটতে না কাটতে আরেকটি যুদ্ধে জড়াতে চাননি মার্কিন নেতারা।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হামলার সপ্তাহখানেক পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মার্কিন কংগ্রেসের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর সকালে আপনাদের নৌঘাঁটি পার্ল হারবারে জাপান যেভাবে হামলা করেছিল, ঠিক একইভাবে ২৪ তারিখ ইউক্রেনীয়দের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে রুশরা। মার্কিনিদের ওপর এক দিন বোমা হামলা হয় আর আমাদের প্রতিদিন রুশ হামলার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। ৭ ডিসেম্বর সকালে আপনাদের আকাশ বিমান হামলায় কালো হয়ে যায়। সেদিনের ভয়াবহ ঘটনা স্মরণ করে আমাদের পাশে দাঁড়ান।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি ঐতিহাসিক ঘটনার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। এক ঘটনার সঙ্গে আরেক ঘটনার হুবহু মিল পাওয়া যায় না, তবে ধরনে মিল থাকে। চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধও এর ব্যতিক্রম নয়। এটির সঙ্গে ত্রিশের দশকের চীন-জাপান যুদ্ধের সাদৃশ্য রয়েছে। প্রথম সাদৃশ্য হলো, উভয় যুদ্ধে যুদ্ধের সূচনাকারীরা প্রতিপক্ষের শক্তি মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন হামলার পর দ্রুত ইউক্রেন দখল করতে পারবেন বলে ভেবেছিলেন। হামলার কয়েক দিনের মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের পতন ঘটানো যাবেএমনটা ধারণা করেছিলেন তিনি। প্রতিবেশী ছোট দেশ ইউক্রেন যে পশ্চিমাসহ অন্যান্য দেশের সামরিক সহায়তায় পাল্টা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, এটি তার হিসাবে ছিল না। একইভাবে ১৯৩৭ সালে জাপান যখন চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামল, টোকিও সে সময় বুঝতে পারেনি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হতে পারে। ১৯৪৬ সালে মার্কিন এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের সঙ্গে যুদ্ধ বড় আকার ধারণ করবে, তা জাপানের ধারণার বাইরে ছিল। টোকিওর সামরিক বিশেষজ্ঞরা সে সময় শতভাগ নিশ্চিত ছিলেন, জাপানের দাবির সামনে দ্রুত নতি স্বীকার করবে চীন এবং জাপানের পুতুল সরকারে পরিণত হবে তারা।
ত্রিশের দশকে জাপান চীনের শক্তি অবমূল্যায়ন করেছিল আগের অভিজ্ঞতার কারণে। ত্রিশের দশকের একেবারে শুরুতে চীনের মাঞ্চুরিয়া অঞ্চল দখল করে জাপান। মাঞ্চুরিয়াকে চীনের থেকে বিচ্ছিন্ন করে সেটিকে পুতুল রাষ্ট্রে পরিণত করে দেশটি। চীনের তৎকালীন নেতা চিয়াং কাই-শেক জাপানের ওই আগ্রাসন ঠেকাতে পারেননি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও সে সময় জাপানের আগ্রাসন নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। লিগ অব নেশন্সে জাপানের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা হলেও কোনো রকম সামরিক বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়তে হয়নি দেশটিকে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকেও জাপানিদের মতো পূর্ব অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে রণকৌশল ঠিক করতে দেখা যায়। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের উপদ্বীপ ক্রিমিয়া দখল করেন পুতিন। দেশের অভ্যন্তরে পশ্চিমাপন্থি ও রুশপন্থিদের রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে তৎকালীন ইউক্রেন সরকার রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়। এ ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
মাঞ্চুরিয়া দখলে নেওয়ার ঘটনা ও পরে চীনের উত্তরাঞ্চলে জাপান সরকারের আরও আগ্রাসী মনোভাব চীনাদের জাতীয়তাবাদী চেতনায় ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করে। চিয়াং কাই-শেকের নেতৃত্বে চীনের আপামর জনসাধারণ জাপানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তাদের সর্বাত্মক প্রতিরোধ বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষের সহানুভূতি অর্জনে সক্ষম হয়। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ জাপানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিতে বাধ্য হয়। পাশাপাশি তারা চীনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তাও দেয়। ঠিক একইভাবে ক্রিমিয়া দখল ও পরে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার অনধিকারচর্চা ক্ষিপ্ত করে ইউক্রেনীয়দের। তার ওপর ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হামলা চালালে তারা ক্ষোভে ফেটে পড়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়। পশ্চিমা দেশগুলোর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, জাপান-চীন যুদ্ধের ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল তা সবাই জানে। এশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যাতে মাথা না গলায় এজন্য পার্ল হারবারে হামলা চালিয়ে দেশটিকে সতর্ক করে জাপান। এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধের অচলাবস্থা কাটে। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা মেরে যুদ্ধের ইতি টানে। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরেও এক ধরনের অচলাবস্থা চলছে। এই যুদ্ধ কবে কীভাবে শেষ হবে, তা নিশ্চিতভাবে কেউই বলতে পারছে না।
আমলকী আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যে কতটা উপকার, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু স্বাস্থ্যই নয়, ত্বক ও চুল ভালো রাখতেও এর জুড়ি মেলা ভার। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে। আপনি যদি প্রতিদিন আমলকী খান, তবে সর্দি-কাশির মতো রোগ থেকে নিজেকে অনেক দূরে রাখতে পারবেন। আমলকী কীভাবে সংরক্ষণ করবেন জেনে নিন
আমলকী টুকরো করে ফ্রিজে রাখুন আমলকী কয়েক মাস রাখতে চাইলে প্রথমে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। ধোয়ার পর ছোট ছোট টুকরো করে কেটে পাত্রে রেখে দিন। এবার এটি একটি এয়ারটাইট প্যাকেটে রেখে বন্ধ করুন। তারপর প্যাকেটটি ফ্রিজে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা রেখে দিন। আপনি যেকোনো সময় আমলকীর টুকরো বের করে ব্যবহার করতে পারেন।
আমলা কিউব : প্রথমে আমলকীগুলো ছোট ছোট টুকরো করে কাটুন। এবার মিক্সিতে দিয়ে ভালো করে পিষে নিন। ছাঁকনি দিয়ে এর রস ছাঁকুন। এবার আমলকীর রস এবং বেঁচে যাওয়া আমলকী আইস ট্রেতে রেখে ডিপ ফ্রিজে রাখুন।
আমলকী হলুদ পানিতে রাখুন : প্রথমে কাচের এয়ারটাইট পাত্র নিন। তাতে পানি, লবণ, হলুদ এবং ভিনেগার ঢেলে ভালো করে মেশান। এর মধ্যে আমলকী কেটে দিয়ে দিন। সূর্যের আলোতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা রাখুন। তারপর ফ্রিজে এভাবে বেশ কয়েক মাস সংরক্ষণ করতে পারেন।
ব্যবহারকারী অংশ নিতে পারেন এমন কিছু বড় সার্ভারের লিংক শেয়ার বন্ধ করেছে টুইটার। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘সোশ্যাল’ নামক চ্যানেলটিও ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী সামাজিক প্ল্যাটফর্ম মাস্টোডনের কয়েকটি লিংক শেয়ারের সুবিধা বন্ধ করেছে টুইটার। মাস্টোডন বেশ কিছু বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করেছে। এগুলো ‘সার্ভার’ নামে পরিচিত। এর উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, ‘ইউকে’, ‘স্নুকার’, ‘সিকিউরিটি’ ইত্যাদি।
ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টের পরিচিতি অংশে মাস্টোডন অ্যাকাউন্টের লিস্ট যোগ করতেও বাধা দিচ্ছে টুইটার। টুইটারের দাবি, এগুলো ‘ম্যালওয়্যার’। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমন কোনো প্রমাণই মেলেনি যে মাস্টোডনে ম্যালওয়্যার আছেম্যালওয়্যার থাকা সফটওয়্যার ব্যবহারকারীর ডিভাইসের ক্ষতি করে।
মাস্টোডন বলেছে, নভেম্বরে লাখ লাখ ব্যবহারকারী পেয়েছে তারা। এর মধ্যে অনেক ব্যবহারকারীই টুইটারের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলেন। সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘মাস্টোডন ডটসোশাল’সহ ১০টির বেশি সার্ভারের লিংক পোস্ট করতে পারেনি বিবিসি। এগুলোর একটি হলো সাংবাদিকদের সার্ভার। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের জনগণের জন্য তৈরি সার্ভারের লিংকও পোস্ট করা সম্ভব হয়নি।
তবে, মাস্টোডনে নেওয়া সব লিংক বন্ধও হয়নি। আর এতে প্রবেশের ভিন্ন উপায়ও আছে। টুইটারে মাস্টোডনের কতগুলো সার্ভার ব্লক হয়েছে বা কেন হয়েছে, ওই বিষয়গুলো পরিষ্কার নয়। ‘আমরা আপনার অনুরোধ রাখতে পারছি না কারণ টুইটার বা আমাদের সহযোগীরা একে সম্ভাব্য ক্ষতিকারক লিংক হিসেবে চিহ্নিত করে।’ লিং পোস্ট করতে চাওয়া ব্যবহারকারীকে এই বার্তা দেখাচ্ছে টুইটার। কয়েকটি লিংক বন্ধের পাশাপাশি সামাজিক প্ল্যাটফর্মটিতে থাকা মাস্টোডনের মূল অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছে টুইটার। বৃহস্পতিবার বেশ কজন সাংবাদিকের অ্যাকাউন্ট বন্ধের পাশাপাশি হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় ‘@লড়রহসধংঃড়ফড়হ’ নামক টুইটার অ্যাকাউন্ট। এর আগে সাইটের বিভিন্ন ফিচার নিয়ে বিজ্ঞাপন দেখা যেত এখানে।
ডেঙ্গু ভাইরাস মশাবাহিত রোগ। এই মশাগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু আক্রমণে তেমন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের লক্ষণ দেখা দেয়। কারও দেখা দেয় মৃদু, কারও ভয়ানক লক্ষণ। মৃদু লক্ষণগুলো অন্য সাধারণ ভাইরাসজনিত রোগের মতোই।
লক্ষণ
জ্বর, শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখে বিশেষত চোখের পেছনের দিকে ব্যথা, মাংসপেশি, হাড় এবং অস্থিসন্ধিতে ব্যথা। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, ব্রেকবোন ফিভারহাড়ভাঙা জ্বর। চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ, ক্ষুধামান্দ্য, বমি, পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা, প্রচ- দুর্বলতা ইত্যাদি লক্ষণও প্রকাশ পায়। উপসর্গ সাধারণত দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এক সপ্তাহের মধ্যে বেশির ভাগ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।
ডেঙ্গুর ভয়ানক বিপদচিহ্ন
যে তীব্রমাত্রার ডেঙ্গু নির্দেশ করে সেগুলো হলো পেটে ব্যথা, দিনে তিনবারের বেশি বমি হওয়া, নাক কিংবা দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ, বমি কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট, প্রচ- দুর্বলতা, অস্থিরতা, খিটখিটে ভাব, হঠাৎ করে আচরণগত পরিবর্তন, তাপমাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন, অনেক তাপমাত্রা থেকে হঠাৎ এমনকি স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যাওয়া, বিগত চার থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, রক্তের হেমাটোক্রিট ২০% কমে যাওয়া, রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা অত্যন্ত নিচে নেমে যাওয়া, লিভার বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
চিকিৎসা
ডেঙ্গু হলে করণীয় হলো পূর্ণ বিশ্রাম। শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম গ্রহণ করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। শরবত, ফলের রস, ডাবের পানি, সুপ, স্যালাইন পানি ও পানীয় পান করতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণ। জ্বর বা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে হবে। এসপিরিন, আইবোপ্রোফেন কিংবা ব্যথা-বেদনানাশক বড়ি গ্রহণ করবেন না। এগুলো ডেঙ্গুর রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাস। ডেঙ্গু জ্বর চলে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর যদি শরীর আরও বেশি খারাপ হতে থাকে, তবে অবশ্যই সতর্ক হোন। রক্ত পরীক্ষা করে অণুচক্রিকা এবং হেমাটোক্রিটের পরিমাণ জেনে নিন। রক্তের অণুচক্রিকা কমতে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসুন।
তীব্র ডেঙ্গু হলে হাসপাতাল
তীব্র ধরনের ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ পেলে বাসায় চিকিৎসা করার সুযোগ নেই। মনে রাখবেন তীব্র ডেঙ্গু এক ধরনের মেডিকেল ইমার্জেন্সি। এসব রোগীকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাতে হবে। তীব্র ডেঙ্গুতে রক্তচাপ কমে রোগী শকে চলে যেতে পারে। এমনকি অসংখ্য অঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে ভয়ানক ডেঙ্গুর আক্রমণে। রোগীর অভ্যন্তরীণ অঙ্গ থেকে শুরু হতে পারে রক্তক্ষরণ। যাদের আগে একবার ডেঙ্গু হয়েছে তাদের দ্বিতীয় আক্রমণে তীব্র ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।