
ব্যবহারকারী অংশ নিতে পারেন এমন কিছু বড় সার্ভারের লিংক শেয়ার বন্ধ করেছে টুইটার। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘সোশ্যাল’ নামক চ্যানেলটিও ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী সামাজিক প্ল্যাটফর্ম মাস্টোডনের কয়েকটি লিংক শেয়ারের সুবিধা বন্ধ করেছে টুইটার। মাস্টোডন বেশ কিছু বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করেছে। এগুলো ‘সার্ভার’ নামে পরিচিত। এর উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, ‘ইউকে’, ‘স্নুকার’, ‘সিকিউরিটি’ ইত্যাদি।
ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টের পরিচিতি অংশে মাস্টোডন অ্যাকাউন্টের লিস্ট যোগ করতেও বাধা দিচ্ছে টুইটার। টুইটারের দাবি, এগুলো ‘ম্যালওয়্যার’। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমন কোনো প্রমাণই মেলেনি যে মাস্টোডনে ম্যালওয়্যার আছেম্যালওয়্যার থাকা সফটওয়্যার ব্যবহারকারীর ডিভাইসের ক্ষতি করে।
মাস্টোডন বলেছে, নভেম্বরে লাখ লাখ ব্যবহারকারী পেয়েছে তারা। এর মধ্যে অনেক ব্যবহারকারীই টুইটারের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলেন। সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘মাস্টোডন ডটসোশাল’সহ ১০টির বেশি সার্ভারের লিংক পোস্ট করতে পারেনি বিবিসি। এগুলোর একটি হলো সাংবাদিকদের সার্ভার। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের জনগণের জন্য তৈরি সার্ভারের লিংকও পোস্ট করা সম্ভব হয়নি।
তবে, মাস্টোডনে নেওয়া সব লিংক বন্ধও হয়নি। আর এতে প্রবেশের ভিন্ন উপায়ও আছে। টুইটারে মাস্টোডনের কতগুলো সার্ভার ব্লক হয়েছে বা কেন হয়েছে, ওই বিষয়গুলো পরিষ্কার নয়। ‘আমরা আপনার অনুরোধ রাখতে পারছি না কারণ টুইটার বা আমাদের সহযোগীরা একে সম্ভাব্য ক্ষতিকারক লিংক হিসেবে চিহ্নিত করে।’ লিং পোস্ট করতে চাওয়া ব্যবহারকারীকে এই বার্তা দেখাচ্ছে টুইটার। কয়েকটি লিংক বন্ধের পাশাপাশি সামাজিক প্ল্যাটফর্মটিতে থাকা মাস্টোডনের মূল অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছে টুইটার। বৃহস্পতিবার বেশ কজন সাংবাদিকের অ্যাকাউন্ট বন্ধের পাশাপাশি হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় ‘@লড়রহসধংঃড়ফড়হ’ নামক টুইটার অ্যাকাউন্ট। এর আগে সাইটের বিভিন্ন ফিচার নিয়ে বিজ্ঞাপন দেখা যেত এখানে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে হঠাৎ পার্ল হারবারে আক্রমণ করে বসে জাপান। প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খর্ব ওই হামলার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। হামলার পরদিন জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ঐতিহাসিক ওই ঘটনার সঙ্গে রাশিয়া ও ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধের সাদৃশ্য পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। চল্লিশের দশকের ওই ঘটনা বিশ্লেষণের পাশাপাশি সাদৃশ্যের দিক নিয়ে লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
হঠাৎ আক্রমণ
‘পার্ল হারবারে বিমান হামলা হয়েছে। এটি কোনো সামরিক প্রশিক্ষণ নয়।’ ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর সকালে এই জরুরি বার্তা হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী হনলুলু থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হয়। বার্তা প্রেরণকারীরা জানতেন, যারা এটি পড়বেন, হামলার ঘটনা তারা বিশ্বাস করবেন না, সামরিক প্রশিক্ষণের অংশ ভেবে উড়িয়ে দেবেন। এ কারণে হামলা হয়েছে লিখে তারা ক্ষান্ত হননি; প্রশিক্ষণ যে নয়, তা দাঁড়ির পর যুক্ত করা দরকার বলে মনে করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অনেকে ধারণা করেছিলেন, জাপানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই বাঁধলেও বাঁধতে পারে। সেই তারা পর্যন্ত পার্ল হারবারে হামলার খবরে বিস্মিত হন। তারা ভাবেননি সত্যি সত্যিই টোকিও থেকে চার হাজার মাইল দূরে প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাঁটি পার্ল হারবারে বোমা মেরে বসবে জাপানিরা। মার্কিন নৌবাহিনীর তৎকালীন সেক্রেটারি ফ্র্যাঙ্ক নক্স তাই হামলার খবরে চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘হায় ঈশ্বর! এ সত্যি হতে পারে না!’ ৭ ডিসেম্বরের হামলায় দুই হাজার চারশোর বেশি মানুষ নিহত হন। আহত হন এক হাজার মার্কিনি। ধ্বংস হয় বহু সামরিক জাহাজ ও বিমান। যুক্তরাষ্ট্র পার্ল হারবারে হামলা আঁচ করতে না পারলেও জাপানের নেতারা কিন্তু কয়েক মাস ধরে আক্রমণের পরিকল্পনা করছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল, প্রশান্ত মহাসাগর যে আসলে জাপানই নিয়ন্ত্রণ করে, তা যুক্তরাষ্ট্রকে দেখিয়ে দেওয়া। পার্ল হারবারে হামলার পরদিন ৮ ডিসেম্বর জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এর তিন দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে জার্মানি।
সাম্রাজ্য বিস্তার
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে জাপান তার সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ করা শুরু করে। যেসব দেশে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, সেসব দেশ দখল করে সম্পদ লুণ্ঠন ছিল জাপানের সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রধান লক্ষ্য। কোরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে ১৮৯৪ সালে চীনকে পরাজিত করে জাপান। এরপর চীনের লিয়াওডং উপদ্বীপ ও মাঞ্চুরিয়ার কিছু অংশ জাপানের দখলে যেতে দেখে চিন্তিত হয়ে পড়ে রাশিয়া। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে জাপান চীনের আরও কয়েকটি অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। জাপানের সাম্রাজ্য বিস্তার দুর্বার গতিতে এগোতে থাকে। তাদের অগ্রগতি দুশ্চিন্তায় ফেলে যুক্তরাষ্ট্রকেও। দেশটি চায়নি, অঞ্চলের পর অঞ্চল দখলের মাধ্যমে সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়ে জাপান আরও শক্তিশালী হোক। জাপান সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত হওয়ার অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে যাওয়া, যা তারা হতে দিতে চায় না। তাই জাপানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেশটিকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র। ত্রিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র যে জাপানকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছে, তা পছন্দ হয়নি জাপানের নেতাদের। তাদের যুক্তি, আমেরিকানদের কথায় কেন তারা সাম্রাজ্য বিস্তারের পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে তাদের উপনিবেশ স্থাপন করেছে এবং এশিয়ার দেশ ফিলিপাইন দখল করেছে?
১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর জাপান যে শুধু পার্ল হারবারে হামলা করেছিল, তা নয়। একই দিনে দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমের গুয়াম অঞ্চল ও এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দেশ ফিলিপাইনেও হামলা চালায়। গুয়াম ও ফিলিপাইন উভয়ই সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে ছিল। এ ছাড়া সেদিন ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত হংকং, সিঙ্গাপুর ও মালয়-এও বিমান হামলা হয়। একই সঙ্গে থাইল্যান্ডে আক্রমণ চালায় জাপানিরা। অর্থাৎ ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরের ৭ তারিখে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন ও ব্রিটিশনিয়ন্ত্রিত এলাকায় বড় ধরনের সমন্বিত আক্রমণ করে জাপানি সাম্রাজ্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের এসব আক্রমণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হামলার পর গুয়াম, ফিলিপাইন, হংকং, সিঙ্গাপুর ও মালয় দখল করে জাপান আর থাইল্যান্ডকে অক্ষশক্তির (ইতালি, জার্মানি ও জাপান) হয়ে কাজ করতে বাধ্য করে। ফিলিপাইনে জাপানের দখলদারিত্ব টিকে ছিল তিন বছর। এই দেশটিকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধের কেন্দ্রস্থলে পরিণত করে জাপান। প্রাকৃতিক সম্পদ লুট ও সাম্রাজ্য বিস্তারের চিন্তা জাপানের পাশাপাশি জার্মানিরও ছিল। ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড আক্রমণ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন জার্মানির একনায়ক অ্যাডল্ফ হিটলারই। তিনি চেয়েছিলেন, ইহুদিবিদ্বেষ কাজে লাগিয়ে জার্মান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে। অন্যদিকে জাপান চেয়েছিল, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাপানি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স ইউনিভার্সিটি-নিউ ব্রান্সউইকের ইতিহাস বিভাগের ডক্টরাল ক্যান্ডিডেট এরি কিটাডা বলেন, ‘সে সময় প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষ করে তেলক্ষেত্র নিয়ে চিন্তিত ছিল শক্তিশালী দেশগুলো। এ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল তাদের মধ্যে। জাপানের সাম্রাজ্যবাদী আচরণ যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্বেগে ফেলে। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর জাপানের তেল সরবরাহ অনেক কমে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দিক থেকে আরও কোণঠাসা হওয়ার ভয়ে দেশ দুটির নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে হামলার সিদ্ধান্ত নেয় জাপান।’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান যে অঞ্চলগুলো দখল করেছিল, সেসব তাদের নিয়ন্ত্রণে যুদ্ধ পর্যন্তই ছিল। ১৯৪৫ সালের আগস্টে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা হামলা চালিয়ে জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে যুক্তরাষ্ট্র। দুই শহরে বোমা হামলায় লাখ লাখ বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
পরিবর্তিত বিশ্ব
পার্ল হারবারে হামলার পর আট দশক পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে বিশ্ব। পূর্ব ও পশ্চিম দুই গোলার্ধেই জাতীয়তাবাদী ও কট্টর ডানপন্থি চিন্তা ও দলের উত্থান ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নেতা প্রেসিডেন্ট হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের হয়ে যায় ব্রিটেন। হাঙ্গেরি, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, গ্রিসসহ ইউরোপের অন্য দেশগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি জাতীয়তাবাদী। দেশগুলোর মধ্যে সহিষ্ণুতা আগের চেয়ে লক্ষণীয়ভাবে কমেছে। জার্মানিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশন্সের পরিচালক মার্ক লিওনার্ড বলেন, ‘পার্ল হারবার ও হিরোশিমা-নাগাসাকির ঘটনা বিশ্বনেতাদের অপরাধী করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তারা যা করেন, সেসব ঠিক ছিল কি নানিজেদের সেই প্রশ্ন করেন। খুব অল্প সময়ের ভেতর তাদের অপরাধবোধ ও মূল্যায়নের জায়গা দখল করে নেয় জাতীয়তাবাদ।’ জার্মানিতে হিটলারের উত্থান ও জাপানের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতারা চুপচাপ ছিলেন কেন, দেশ দুটির বিরুদ্ধে কেন তারা কঠোর পদক্ষেপ নেননি, যার ফলে পার্ল হারবারের মতো ঘটনা ঘটলএসব প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মৌনতা অবলম্বনের একটি কারণ ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি। ওই যুদ্ধে অনেক মার্কিনি প্রাণ হারান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রেশ কাটতে না কাটতে আরেকটি যুদ্ধে জড়াতে চাননি মার্কিন নেতারা।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হামলার সপ্তাহখানেক পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মার্কিন কংগ্রেসের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর সকালে আপনাদের নৌঘাঁটি পার্ল হারবারে জাপান যেভাবে হামলা করেছিল, ঠিক একইভাবে ২৪ তারিখ ইউক্রেনীয়দের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে রুশরা। মার্কিনিদের ওপর এক দিন বোমা হামলা হয় আর আমাদের প্রতিদিন রুশ হামলার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। ৭ ডিসেম্বর সকালে আপনাদের আকাশ বিমান হামলায় কালো হয়ে যায়। সেদিনের ভয়াবহ ঘটনা স্মরণ করে আমাদের পাশে দাঁড়ান।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি ঐতিহাসিক ঘটনার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। এক ঘটনার সঙ্গে আরেক ঘটনার হুবহু মিল পাওয়া যায় না, তবে ধরনে মিল থাকে। চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধও এর ব্যতিক্রম নয়। এটির সঙ্গে ত্রিশের দশকের চীন-জাপান যুদ্ধের সাদৃশ্য রয়েছে। প্রথম সাদৃশ্য হলো, উভয় যুদ্ধে যুদ্ধের সূচনাকারীরা প্রতিপক্ষের শক্তি মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন হামলার পর দ্রুত ইউক্রেন দখল করতে পারবেন বলে ভেবেছিলেন। হামলার কয়েক দিনের মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের পতন ঘটানো যাবেএমনটা ধারণা করেছিলেন তিনি। প্রতিবেশী ছোট দেশ ইউক্রেন যে পশ্চিমাসহ অন্যান্য দেশের সামরিক সহায়তায় পাল্টা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, এটি তার হিসাবে ছিল না। একইভাবে ১৯৩৭ সালে জাপান যখন চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামল, টোকিও সে সময় বুঝতে পারেনি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হতে পারে। ১৯৪৬ সালে মার্কিন এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের সঙ্গে যুদ্ধ বড় আকার ধারণ করবে, তা জাপানের ধারণার বাইরে ছিল। টোকিওর সামরিক বিশেষজ্ঞরা সে সময় শতভাগ নিশ্চিত ছিলেন, জাপানের দাবির সামনে দ্রুত নতি স্বীকার করবে চীন এবং জাপানের পুতুল সরকারে পরিণত হবে তারা।
ত্রিশের দশকে জাপান চীনের শক্তি অবমূল্যায়ন করেছিল আগের অভিজ্ঞতার কারণে। ত্রিশের দশকের একেবারে শুরুতে চীনের মাঞ্চুরিয়া অঞ্চল দখল করে জাপান। মাঞ্চুরিয়াকে চীনের থেকে বিচ্ছিন্ন করে সেটিকে পুতুল রাষ্ট্রে পরিণত করে দেশটি। চীনের তৎকালীন নেতা চিয়াং কাই-শেক জাপানের ওই আগ্রাসন ঠেকাতে পারেননি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও সে সময় জাপানের আগ্রাসন নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। লিগ অব নেশন্সে জাপানের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা হলেও কোনো রকম সামরিক বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়তে হয়নি দেশটিকে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকেও জাপানিদের মতো পূর্ব অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে রণকৌশল ঠিক করতে দেখা যায়। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের উপদ্বীপ ক্রিমিয়া দখল করেন পুতিন। দেশের অভ্যন্তরে পশ্চিমাপন্থি ও রুশপন্থিদের রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে তৎকালীন ইউক্রেন সরকার রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়। এ ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
মাঞ্চুরিয়া দখলে নেওয়ার ঘটনা ও পরে চীনের উত্তরাঞ্চলে জাপান সরকারের আরও আগ্রাসী মনোভাব চীনাদের জাতীয়তাবাদী চেতনায় ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করে। চিয়াং কাই-শেকের নেতৃত্বে চীনের আপামর জনসাধারণ জাপানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তাদের সর্বাত্মক প্রতিরোধ বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষের সহানুভূতি অর্জনে সক্ষম হয়। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ জাপানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিতে বাধ্য হয়। পাশাপাশি তারা চীনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তাও দেয়। ঠিক একইভাবে ক্রিমিয়া দখল ও পরে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার অনধিকারচর্চা ক্ষিপ্ত করে ইউক্রেনীয়দের। তার ওপর ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হামলা চালালে তারা ক্ষোভে ফেটে পড়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়। পশ্চিমা দেশগুলোর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, জাপান-চীন যুদ্ধের ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল তা সবাই জানে। এশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যাতে মাথা না গলায় এজন্য পার্ল হারবারে হামলা চালিয়ে দেশটিকে সতর্ক করে জাপান। এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধের অচলাবস্থা কাটে। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা মেরে যুদ্ধের ইতি টানে। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরেও এক ধরনের অচলাবস্থা চলছে। এই যুদ্ধ কবে কীভাবে শেষ হবে, তা নিশ্চিতভাবে কেউই বলতে পারছে না।
আমলকী আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যে কতটা উপকার, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু স্বাস্থ্যই নয়, ত্বক ও চুল ভালো রাখতেও এর জুড়ি মেলা ভার। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে। আপনি যদি প্রতিদিন আমলকী খান, তবে সর্দি-কাশির মতো রোগ থেকে নিজেকে অনেক দূরে রাখতে পারবেন। আমলকী কীভাবে সংরক্ষণ করবেন জেনে নিন
আমলকী টুকরো করে ফ্রিজে রাখুন আমলকী কয়েক মাস রাখতে চাইলে প্রথমে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। ধোয়ার পর ছোট ছোট টুকরো করে কেটে পাত্রে রেখে দিন। এবার এটি একটি এয়ারটাইট প্যাকেটে রেখে বন্ধ করুন। তারপর প্যাকেটটি ফ্রিজে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা রেখে দিন। আপনি যেকোনো সময় আমলকীর টুকরো বের করে ব্যবহার করতে পারেন।
আমলা কিউব : প্রথমে আমলকীগুলো ছোট ছোট টুকরো করে কাটুন। এবার মিক্সিতে দিয়ে ভালো করে পিষে নিন। ছাঁকনি দিয়ে এর রস ছাঁকুন। এবার আমলকীর রস এবং বেঁচে যাওয়া আমলকী আইস ট্রেতে রেখে ডিপ ফ্রিজে রাখুন।
আমলকী হলুদ পানিতে রাখুন : প্রথমে কাচের এয়ারটাইট পাত্র নিন। তাতে পানি, লবণ, হলুদ এবং ভিনেগার ঢেলে ভালো করে মেশান। এর মধ্যে আমলকী কেটে দিয়ে দিন। সূর্যের আলোতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা রাখুন। তারপর ফ্রিজে এভাবে বেশ কয়েক মাস সংরক্ষণ করতে পারেন।
ডেঙ্গু ভাইরাস মশাবাহিত রোগ। এই মশাগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু আক্রমণে তেমন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের লক্ষণ দেখা দেয়। কারও দেখা দেয় মৃদু, কারও ভয়ানক লক্ষণ। মৃদু লক্ষণগুলো অন্য সাধারণ ভাইরাসজনিত রোগের মতোই।
লক্ষণ
জ্বর, শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখে বিশেষত চোখের পেছনের দিকে ব্যথা, মাংসপেশি, হাড় এবং অস্থিসন্ধিতে ব্যথা। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, ব্রেকবোন ফিভারহাড়ভাঙা জ্বর। চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ, ক্ষুধামান্দ্য, বমি, পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা, প্রচ- দুর্বলতা ইত্যাদি লক্ষণও প্রকাশ পায়। উপসর্গ সাধারণত দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এক সপ্তাহের মধ্যে বেশির ভাগ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।
ডেঙ্গুর ভয়ানক বিপদচিহ্ন
যে তীব্রমাত্রার ডেঙ্গু নির্দেশ করে সেগুলো হলো পেটে ব্যথা, দিনে তিনবারের বেশি বমি হওয়া, নাক কিংবা দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ, বমি কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট, প্রচ- দুর্বলতা, অস্থিরতা, খিটখিটে ভাব, হঠাৎ করে আচরণগত পরিবর্তন, তাপমাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন, অনেক তাপমাত্রা থেকে হঠাৎ এমনকি স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যাওয়া, বিগত চার থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, রক্তের হেমাটোক্রিট ২০% কমে যাওয়া, রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা অত্যন্ত নিচে নেমে যাওয়া, লিভার বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
চিকিৎসা
ডেঙ্গু হলে করণীয় হলো পূর্ণ বিশ্রাম। শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম গ্রহণ করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। শরবত, ফলের রস, ডাবের পানি, সুপ, স্যালাইন পানি ও পানীয় পান করতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণ। জ্বর বা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে হবে। এসপিরিন, আইবোপ্রোফেন কিংবা ব্যথা-বেদনানাশক বড়ি গ্রহণ করবেন না। এগুলো ডেঙ্গুর রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাস। ডেঙ্গু জ্বর চলে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর যদি শরীর আরও বেশি খারাপ হতে থাকে, তবে অবশ্যই সতর্ক হোন। রক্ত পরীক্ষা করে অণুচক্রিকা এবং হেমাটোক্রিটের পরিমাণ জেনে নিন। রক্তের অণুচক্রিকা কমতে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসুন।
তীব্র ডেঙ্গু হলে হাসপাতাল
তীব্র ধরনের ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ পেলে বাসায় চিকিৎসা করার সুযোগ নেই। মনে রাখবেন তীব্র ডেঙ্গু এক ধরনের মেডিকেল ইমার্জেন্সি। এসব রোগীকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাতে হবে। তীব্র ডেঙ্গুতে রক্তচাপ কমে রোগী শকে চলে যেতে পারে। এমনকি অসংখ্য অঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে ভয়ানক ডেঙ্গুর আক্রমণে। রোগীর অভ্যন্তরীণ অঙ্গ থেকে শুরু হতে পারে রক্তক্ষরণ। যাদের আগে একবার ডেঙ্গু হয়েছে তাদের দ্বিতীয় আক্রমণে তীব্র ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।