
ডেঙ্গু ভাইরাস মশাবাহিত রোগ। এই মশাগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু আক্রমণে তেমন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের লক্ষণ দেখা দেয়। কারও দেখা দেয় মৃদু, কারও ভয়ানক লক্ষণ। মৃদু লক্ষণগুলো অন্য সাধারণ ভাইরাসজনিত রোগের মতোই।
লক্ষণ
জ্বর, শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখে বিশেষত চোখের পেছনের দিকে ব্যথা, মাংসপেশি, হাড় এবং অস্থিসন্ধিতে ব্যথা। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, ব্রেকবোন ফিভারহাড়ভাঙা জ্বর। চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ, ক্ষুধামান্দ্য, বমি, পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা, প্রচ- দুর্বলতা ইত্যাদি লক্ষণও প্রকাশ পায়। উপসর্গ সাধারণত দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এক সপ্তাহের মধ্যে বেশির ভাগ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।
ডেঙ্গুর ভয়ানক বিপদচিহ্ন
যে তীব্রমাত্রার ডেঙ্গু নির্দেশ করে সেগুলো হলো পেটে ব্যথা, দিনে তিনবারের বেশি বমি হওয়া, নাক কিংবা দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ, বমি কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট, প্রচ- দুর্বলতা, অস্থিরতা, খিটখিটে ভাব, হঠাৎ করে আচরণগত পরিবর্তন, তাপমাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন, অনেক তাপমাত্রা থেকে হঠাৎ এমনকি স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যাওয়া, বিগত চার থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, রক্তের হেমাটোক্রিট ২০% কমে যাওয়া, রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা অত্যন্ত নিচে নেমে যাওয়া, লিভার বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
চিকিৎসা
ডেঙ্গু হলে করণীয় হলো পূর্ণ বিশ্রাম। শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম গ্রহণ করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। শরবত, ফলের রস, ডাবের পানি, সুপ, স্যালাইন পানি ও পানীয় পান করতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণ। জ্বর বা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে হবে। এসপিরিন, আইবোপ্রোফেন কিংবা ব্যথা-বেদনানাশক বড়ি গ্রহণ করবেন না। এগুলো ডেঙ্গুর রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাস। ডেঙ্গু জ্বর চলে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর যদি শরীর আরও বেশি খারাপ হতে থাকে, তবে অবশ্যই সতর্ক হোন। রক্ত পরীক্ষা করে অণুচক্রিকা এবং হেমাটোক্রিটের পরিমাণ জেনে নিন। রক্তের অণুচক্রিকা কমতে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসুন।
তীব্র ডেঙ্গু হলে হাসপাতাল
তীব্র ধরনের ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ পেলে বাসায় চিকিৎসা করার সুযোগ নেই। মনে রাখবেন তীব্র ডেঙ্গু এক ধরনের মেডিকেল ইমার্জেন্সি। এসব রোগীকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাতে হবে। তীব্র ডেঙ্গুতে রক্তচাপ কমে রোগী শকে চলে যেতে পারে। এমনকি অসংখ্য অঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে ভয়ানক ডেঙ্গুর আক্রমণে। রোগীর অভ্যন্তরীণ অঙ্গ থেকে শুরু হতে পারে রক্তক্ষরণ। যাদের আগে একবার ডেঙ্গু হয়েছে তাদের দ্বিতীয় আক্রমণে তীব্র ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে হঠাৎ পার্ল হারবারে আক্রমণ করে বসে জাপান। প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খর্ব ওই হামলার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। হামলার পরদিন জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ঐতিহাসিক ওই ঘটনার সঙ্গে রাশিয়া ও ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধের সাদৃশ্য পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। চল্লিশের দশকের ওই ঘটনা বিশ্লেষণের পাশাপাশি সাদৃশ্যের দিক নিয়ে লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
হঠাৎ আক্রমণ
‘পার্ল হারবারে বিমান হামলা হয়েছে। এটি কোনো সামরিক প্রশিক্ষণ নয়।’ ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর সকালে এই জরুরি বার্তা হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী হনলুলু থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হয়। বার্তা প্রেরণকারীরা জানতেন, যারা এটি পড়বেন, হামলার ঘটনা তারা বিশ্বাস করবেন না, সামরিক প্রশিক্ষণের অংশ ভেবে উড়িয়ে দেবেন। এ কারণে হামলা হয়েছে লিখে তারা ক্ষান্ত হননি; প্রশিক্ষণ যে নয়, তা দাঁড়ির পর যুক্ত করা দরকার বলে মনে করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অনেকে ধারণা করেছিলেন, জাপানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই বাঁধলেও বাঁধতে পারে। সেই তারা পর্যন্ত পার্ল হারবারে হামলার খবরে বিস্মিত হন। তারা ভাবেননি সত্যি সত্যিই টোকিও থেকে চার হাজার মাইল দূরে প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাঁটি পার্ল হারবারে বোমা মেরে বসবে জাপানিরা। মার্কিন নৌবাহিনীর তৎকালীন সেক্রেটারি ফ্র্যাঙ্ক নক্স তাই হামলার খবরে চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘হায় ঈশ্বর! এ সত্যি হতে পারে না!’ ৭ ডিসেম্বরের হামলায় দুই হাজার চারশোর বেশি মানুষ নিহত হন। আহত হন এক হাজার মার্কিনি। ধ্বংস হয় বহু সামরিক জাহাজ ও বিমান। যুক্তরাষ্ট্র পার্ল হারবারে হামলা আঁচ করতে না পারলেও জাপানের নেতারা কিন্তু কয়েক মাস ধরে আক্রমণের পরিকল্পনা করছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল, প্রশান্ত মহাসাগর যে আসলে জাপানই নিয়ন্ত্রণ করে, তা যুক্তরাষ্ট্রকে দেখিয়ে দেওয়া। পার্ল হারবারে হামলার পরদিন ৮ ডিসেম্বর জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এর তিন দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে জার্মানি।
সাম্রাজ্য বিস্তার
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে জাপান তার সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ করা শুরু করে। যেসব দেশে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, সেসব দেশ দখল করে সম্পদ লুণ্ঠন ছিল জাপানের সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রধান লক্ষ্য। কোরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে ১৮৯৪ সালে চীনকে পরাজিত করে জাপান। এরপর চীনের লিয়াওডং উপদ্বীপ ও মাঞ্চুরিয়ার কিছু অংশ জাপানের দখলে যেতে দেখে চিন্তিত হয়ে পড়ে রাশিয়া। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে জাপান চীনের আরও কয়েকটি অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। জাপানের সাম্রাজ্য বিস্তার দুর্বার গতিতে এগোতে থাকে। তাদের অগ্রগতি দুশ্চিন্তায় ফেলে যুক্তরাষ্ট্রকেও। দেশটি চায়নি, অঞ্চলের পর অঞ্চল দখলের মাধ্যমে সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়ে জাপান আরও শক্তিশালী হোক। জাপান সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত হওয়ার অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে যাওয়া, যা তারা হতে দিতে চায় না। তাই জাপানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেশটিকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র। ত্রিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র যে জাপানকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছে, তা পছন্দ হয়নি জাপানের নেতাদের। তাদের যুক্তি, আমেরিকানদের কথায় কেন তারা সাম্রাজ্য বিস্তারের পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে তাদের উপনিবেশ স্থাপন করেছে এবং এশিয়ার দেশ ফিলিপাইন দখল করেছে?
১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর জাপান যে শুধু পার্ল হারবারে হামলা করেছিল, তা নয়। একই দিনে দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমের গুয়াম অঞ্চল ও এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দেশ ফিলিপাইনেও হামলা চালায়। গুয়াম ও ফিলিপাইন উভয়ই সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে ছিল। এ ছাড়া সেদিন ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত হংকং, সিঙ্গাপুর ও মালয়-এও বিমান হামলা হয়। একই সঙ্গে থাইল্যান্ডে আক্রমণ চালায় জাপানিরা। অর্থাৎ ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরের ৭ তারিখে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন ও ব্রিটিশনিয়ন্ত্রিত এলাকায় বড় ধরনের সমন্বিত আক্রমণ করে জাপানি সাম্রাজ্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের এসব আক্রমণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হামলার পর গুয়াম, ফিলিপাইন, হংকং, সিঙ্গাপুর ও মালয় দখল করে জাপান আর থাইল্যান্ডকে অক্ষশক্তির (ইতালি, জার্মানি ও জাপান) হয়ে কাজ করতে বাধ্য করে। ফিলিপাইনে জাপানের দখলদারিত্ব টিকে ছিল তিন বছর। এই দেশটিকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধের কেন্দ্রস্থলে পরিণত করে জাপান। প্রাকৃতিক সম্পদ লুট ও সাম্রাজ্য বিস্তারের চিন্তা জাপানের পাশাপাশি জার্মানিরও ছিল। ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড আক্রমণ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন জার্মানির একনায়ক অ্যাডল্ফ হিটলারই। তিনি চেয়েছিলেন, ইহুদিবিদ্বেষ কাজে লাগিয়ে জার্মান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে। অন্যদিকে জাপান চেয়েছিল, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাপানি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স ইউনিভার্সিটি-নিউ ব্রান্সউইকের ইতিহাস বিভাগের ডক্টরাল ক্যান্ডিডেট এরি কিটাডা বলেন, ‘সে সময় প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষ করে তেলক্ষেত্র নিয়ে চিন্তিত ছিল শক্তিশালী দেশগুলো। এ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল তাদের মধ্যে। জাপানের সাম্রাজ্যবাদী আচরণ যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্বেগে ফেলে। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর জাপানের তেল সরবরাহ অনেক কমে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দিক থেকে আরও কোণঠাসা হওয়ার ভয়ে দেশ দুটির নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে হামলার সিদ্ধান্ত নেয় জাপান।’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান যে অঞ্চলগুলো দখল করেছিল, সেসব তাদের নিয়ন্ত্রণে যুদ্ধ পর্যন্তই ছিল। ১৯৪৫ সালের আগস্টে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা হামলা চালিয়ে জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে যুক্তরাষ্ট্র। দুই শহরে বোমা হামলায় লাখ লাখ বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
পরিবর্তিত বিশ্ব
পার্ল হারবারে হামলার পর আট দশক পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে বিশ্ব। পূর্ব ও পশ্চিম দুই গোলার্ধেই জাতীয়তাবাদী ও কট্টর ডানপন্থি চিন্তা ও দলের উত্থান ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নেতা প্রেসিডেন্ট হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের হয়ে যায় ব্রিটেন। হাঙ্গেরি, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, গ্রিসসহ ইউরোপের অন্য দেশগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি জাতীয়তাবাদী। দেশগুলোর মধ্যে সহিষ্ণুতা আগের চেয়ে লক্ষণীয়ভাবে কমেছে। জার্মানিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশন্সের পরিচালক মার্ক লিওনার্ড বলেন, ‘পার্ল হারবার ও হিরোশিমা-নাগাসাকির ঘটনা বিশ্বনেতাদের অপরাধী করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তারা যা করেন, সেসব ঠিক ছিল কি নানিজেদের সেই প্রশ্ন করেন। খুব অল্প সময়ের ভেতর তাদের অপরাধবোধ ও মূল্যায়নের জায়গা দখল করে নেয় জাতীয়তাবাদ।’ জার্মানিতে হিটলারের উত্থান ও জাপানের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতারা চুপচাপ ছিলেন কেন, দেশ দুটির বিরুদ্ধে কেন তারা কঠোর পদক্ষেপ নেননি, যার ফলে পার্ল হারবারের মতো ঘটনা ঘটলএসব প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মৌনতা অবলম্বনের একটি কারণ ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি। ওই যুদ্ধে অনেক মার্কিনি প্রাণ হারান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রেশ কাটতে না কাটতে আরেকটি যুদ্ধে জড়াতে চাননি মার্কিন নেতারা।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হামলার সপ্তাহখানেক পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মার্কিন কংগ্রেসের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর সকালে আপনাদের নৌঘাঁটি পার্ল হারবারে জাপান যেভাবে হামলা করেছিল, ঠিক একইভাবে ২৪ তারিখ ইউক্রেনীয়দের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে রুশরা। মার্কিনিদের ওপর এক দিন বোমা হামলা হয় আর আমাদের প্রতিদিন রুশ হামলার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। ৭ ডিসেম্বর সকালে আপনাদের আকাশ বিমান হামলায় কালো হয়ে যায়। সেদিনের ভয়াবহ ঘটনা স্মরণ করে আমাদের পাশে দাঁড়ান।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি ঐতিহাসিক ঘটনার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। এক ঘটনার সঙ্গে আরেক ঘটনার হুবহু মিল পাওয়া যায় না, তবে ধরনে মিল থাকে। চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধও এর ব্যতিক্রম নয়। এটির সঙ্গে ত্রিশের দশকের চীন-জাপান যুদ্ধের সাদৃশ্য রয়েছে। প্রথম সাদৃশ্য হলো, উভয় যুদ্ধে যুদ্ধের সূচনাকারীরা প্রতিপক্ষের শক্তি মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন হামলার পর দ্রুত ইউক্রেন দখল করতে পারবেন বলে ভেবেছিলেন। হামলার কয়েক দিনের মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের পতন ঘটানো যাবেএমনটা ধারণা করেছিলেন তিনি। প্রতিবেশী ছোট দেশ ইউক্রেন যে পশ্চিমাসহ অন্যান্য দেশের সামরিক সহায়তায় পাল্টা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, এটি তার হিসাবে ছিল না। একইভাবে ১৯৩৭ সালে জাপান যখন চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামল, টোকিও সে সময় বুঝতে পারেনি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হতে পারে। ১৯৪৬ সালে মার্কিন এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের সঙ্গে যুদ্ধ বড় আকার ধারণ করবে, তা জাপানের ধারণার বাইরে ছিল। টোকিওর সামরিক বিশেষজ্ঞরা সে সময় শতভাগ নিশ্চিত ছিলেন, জাপানের দাবির সামনে দ্রুত নতি স্বীকার করবে চীন এবং জাপানের পুতুল সরকারে পরিণত হবে তারা।
ত্রিশের দশকে জাপান চীনের শক্তি অবমূল্যায়ন করেছিল আগের অভিজ্ঞতার কারণে। ত্রিশের দশকের একেবারে শুরুতে চীনের মাঞ্চুরিয়া অঞ্চল দখল করে জাপান। মাঞ্চুরিয়াকে চীনের থেকে বিচ্ছিন্ন করে সেটিকে পুতুল রাষ্ট্রে পরিণত করে দেশটি। চীনের তৎকালীন নেতা চিয়াং কাই-শেক জাপানের ওই আগ্রাসন ঠেকাতে পারেননি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও সে সময় জাপানের আগ্রাসন নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। লিগ অব নেশন্সে জাপানের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা হলেও কোনো রকম সামরিক বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়তে হয়নি দেশটিকে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকেও জাপানিদের মতো পূর্ব অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে রণকৌশল ঠিক করতে দেখা যায়। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের উপদ্বীপ ক্রিমিয়া দখল করেন পুতিন। দেশের অভ্যন্তরে পশ্চিমাপন্থি ও রুশপন্থিদের রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে তৎকালীন ইউক্রেন সরকার রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়। এ ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
মাঞ্চুরিয়া দখলে নেওয়ার ঘটনা ও পরে চীনের উত্তরাঞ্চলে জাপান সরকারের আরও আগ্রাসী মনোভাব চীনাদের জাতীয়তাবাদী চেতনায় ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করে। চিয়াং কাই-শেকের নেতৃত্বে চীনের আপামর জনসাধারণ জাপানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তাদের সর্বাত্মক প্রতিরোধ বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষের সহানুভূতি অর্জনে সক্ষম হয়। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ জাপানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিতে বাধ্য হয়। পাশাপাশি তারা চীনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তাও দেয়। ঠিক একইভাবে ক্রিমিয়া দখল ও পরে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার অনধিকারচর্চা ক্ষিপ্ত করে ইউক্রেনীয়দের। তার ওপর ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হামলা চালালে তারা ক্ষোভে ফেটে পড়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়। পশ্চিমা দেশগুলোর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, জাপান-চীন যুদ্ধের ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল তা সবাই জানে। এশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যাতে মাথা না গলায় এজন্য পার্ল হারবারে হামলা চালিয়ে দেশটিকে সতর্ক করে জাপান। এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধের অচলাবস্থা কাটে। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা মেরে যুদ্ধের ইতি টানে। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরেও এক ধরনের অচলাবস্থা চলছে। এই যুদ্ধ কবে কীভাবে শেষ হবে, তা নিশ্চিতভাবে কেউই বলতে পারছে না।
আমলকী আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যে কতটা উপকার, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু স্বাস্থ্যই নয়, ত্বক ও চুল ভালো রাখতেও এর জুড়ি মেলা ভার। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে। আপনি যদি প্রতিদিন আমলকী খান, তবে সর্দি-কাশির মতো রোগ থেকে নিজেকে অনেক দূরে রাখতে পারবেন। আমলকী কীভাবে সংরক্ষণ করবেন জেনে নিন
আমলকী টুকরো করে ফ্রিজে রাখুন আমলকী কয়েক মাস রাখতে চাইলে প্রথমে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। ধোয়ার পর ছোট ছোট টুকরো করে কেটে পাত্রে রেখে দিন। এবার এটি একটি এয়ারটাইট প্যাকেটে রেখে বন্ধ করুন। তারপর প্যাকেটটি ফ্রিজে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা রেখে দিন। আপনি যেকোনো সময় আমলকীর টুকরো বের করে ব্যবহার করতে পারেন।
আমলা কিউব : প্রথমে আমলকীগুলো ছোট ছোট টুকরো করে কাটুন। এবার মিক্সিতে দিয়ে ভালো করে পিষে নিন। ছাঁকনি দিয়ে এর রস ছাঁকুন। এবার আমলকীর রস এবং বেঁচে যাওয়া আমলকী আইস ট্রেতে রেখে ডিপ ফ্রিজে রাখুন।
আমলকী হলুদ পানিতে রাখুন : প্রথমে কাচের এয়ারটাইট পাত্র নিন। তাতে পানি, লবণ, হলুদ এবং ভিনেগার ঢেলে ভালো করে মেশান। এর মধ্যে আমলকী কেটে দিয়ে দিন। সূর্যের আলোতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা রাখুন। তারপর ফ্রিজে এভাবে বেশ কয়েক মাস সংরক্ষণ করতে পারেন।
ব্যবহারকারী অংশ নিতে পারেন এমন কিছু বড় সার্ভারের লিংক শেয়ার বন্ধ করেছে টুইটার। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘সোশ্যাল’ নামক চ্যানেলটিও ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী সামাজিক প্ল্যাটফর্ম মাস্টোডনের কয়েকটি লিংক শেয়ারের সুবিধা বন্ধ করেছে টুইটার। মাস্টোডন বেশ কিছু বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করেছে। এগুলো ‘সার্ভার’ নামে পরিচিত। এর উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, ‘ইউকে’, ‘স্নুকার’, ‘সিকিউরিটি’ ইত্যাদি।
ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টের পরিচিতি অংশে মাস্টোডন অ্যাকাউন্টের লিস্ট যোগ করতেও বাধা দিচ্ছে টুইটার। টুইটারের দাবি, এগুলো ‘ম্যালওয়্যার’। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমন কোনো প্রমাণই মেলেনি যে মাস্টোডনে ম্যালওয়্যার আছেম্যালওয়্যার থাকা সফটওয়্যার ব্যবহারকারীর ডিভাইসের ক্ষতি করে।
মাস্টোডন বলেছে, নভেম্বরে লাখ লাখ ব্যবহারকারী পেয়েছে তারা। এর মধ্যে অনেক ব্যবহারকারীই টুইটারের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলেন। সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘মাস্টোডন ডটসোশাল’সহ ১০টির বেশি সার্ভারের লিংক পোস্ট করতে পারেনি বিবিসি। এগুলোর একটি হলো সাংবাদিকদের সার্ভার। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের জনগণের জন্য তৈরি সার্ভারের লিংকও পোস্ট করা সম্ভব হয়নি।
তবে, মাস্টোডনে নেওয়া সব লিংক বন্ধও হয়নি। আর এতে প্রবেশের ভিন্ন উপায়ও আছে। টুইটারে মাস্টোডনের কতগুলো সার্ভার ব্লক হয়েছে বা কেন হয়েছে, ওই বিষয়গুলো পরিষ্কার নয়। ‘আমরা আপনার অনুরোধ রাখতে পারছি না কারণ টুইটার বা আমাদের সহযোগীরা একে সম্ভাব্য ক্ষতিকারক লিংক হিসেবে চিহ্নিত করে।’ লিং পোস্ট করতে চাওয়া ব্যবহারকারীকে এই বার্তা দেখাচ্ছে টুইটার। কয়েকটি লিংক বন্ধের পাশাপাশি সামাজিক প্ল্যাটফর্মটিতে থাকা মাস্টোডনের মূল অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছে টুইটার। বৃহস্পতিবার বেশ কজন সাংবাদিকের অ্যাকাউন্ট বন্ধের পাশাপাশি হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় ‘@লড়রহসধংঃড়ফড়হ’ নামক টুইটার অ্যাকাউন্ট। এর আগে সাইটের বিভিন্ন ফিচার নিয়ে বিজ্ঞাপন দেখা যেত এখানে।
মৌলভীবাজারে 'চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিক বান্ধব চা শিল্প' প্রতিপাদ্য নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে তৃতীয়বারের মতো 'জাতীয় চা দিবস' উদযাপন করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার (০৪ জুন) শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে আয়োজিত 'জাতীয় চা দিবস' উদযাপন এবং 'জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩' প্রদান অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
দেশে প্রথমবারের মতো চালুকৃত 'জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩' প্রদান করা হয়। আটটি ক্যাটাগরিতে আট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় পুরস্কার। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
৮ ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন (০১) একর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী চা বাগান- ভাড়াউড়া চা বাগান (০২) সর্বোচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদনকারী বাগান- মধুপুর চা বাগান (০৩) শ্রেষ্ঠ চা রপ্তানিকারক- আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লি. (০৪) শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্রায়তন চা উৎপাদনকারী- মো. আনোয়ার সাদাত সম্রাট (পঞ্চগড়) (০৫) শ্রমিক কল্যাণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা বাগান- জেরিন চা বাগান (০৬) বৈচিত্র্যময় চা পণ্য বাজারজাতকরণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি- কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লি. (০৭) দৃষ্টিনন্দন ও মানসম্পন্ন চা মোড়কের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি- গ্রিন ফিল্ড টি ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (০৮) শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারী (চা শ্রমিক)- উপলক্ষী ত্রিপুরা, নেপচুন চা বাগান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম। এ ছাড়াও চা বোর্ডের কর্মকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন বাগানের মালিক ও চা শ্রমিকরা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ও আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন।
মসজিদ ও মাদ্রাসায় ইমামদের সচেতনতা বার্তা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর মিরপুরে পিএসসি (পুলিশ স্টাফ কলেজ) কনভেনশন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদের ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসি এলাকার এক হাজার ইমাম ও খতিব অংশগ্রহণ করেন।
উপস্থিত ইমামদের উদ্দেশে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা মসজিদে গিয়ে ওয়াক্ত নামাজের সময়, জুমার নামাজের সময় মনোযোগ দিয়ে আপনাদের বয়ান শুনি। আপনারাই পারেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে। আপনারাই পারেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আপনারা মানুষকে জানাবেন বর্ষাকালে এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যায়। এডিস মশার কামড়ে জ্বর হয়, মৃত্যু হয়। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। অতএব কোনোভাবে যেন পানি জমে না থাকে’।
মেয়র আরো বলেন, ‘এডিস মশা যখম কামড় দেবে, মশা কিন্তু চিনবে না কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কে ইমাম আর কে খতিব। এডিস মশা সবার জন্যই হুমকি। অতএব এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একমাত্র সচেতনতা পারে ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সিটি করপোরেশন থেকে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যকরী লার্ভিসাইডিং করছি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। কিন্তু সবার সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’।
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে উপস্থিত ইমামদের সচেতন করেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে লাখো লাখো মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার খতিব রয়েছেন। ইমাম ও খতিবরা মসজিদে মুসুল্লিদের ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সচেতন করলে এই ভয়াবহ মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির ও অন্যান্য সাধারণ মানুষের বক্তৃতা থেকে ইমামদের বক্তৃতা বেশি কার্যকর হবে। মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় বয়ানে, খুতবায় মুসুল্লিরা ইমামগণের কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনাদের বার্তা মানুষের মনে গেথে থাকে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে বিয়ের প্রলোভনে ডেকে নিয়ে মেয়ে (১৭) ও তার মাকে (৪০) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মেয়ের প্রেমিকসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার (০৫ জুন) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুকোমল চন্দ্র দেবনাথ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গতকাল রবিবার (০৪ জুন) ভোরে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করা হয়। পরে সন্ধ্যায় তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। আর গত শনিবার (০৩ মে) রাত ৮টার পর শিবগঞ্জের পৌর এলাকার মাগুরার মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় অভিযুক্ত ও আটককৃতরা হলেন প্রেমিক শিবগঞ্জ পৌর পিঠালিতলা মহল্লার বাসিন্দা সেলিম রেজা (২৫)। তার বন্ধু ও একই গ্রামের বাসিন্দা মো. হাসান (২৪) এবং ভ্যানচালক পিঠালিতলা মহল্লার মো. মেহেরুল (৩০)।
পুলিশ জানায়, শনিবার (০৩ মে) রাত ৮টার পর ওই এলাকার (পৌর মর্দনা গ্রামের পাশে) একটি মাঠের পাশের পাটক্ষেতে মা ও মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর ফেলে যায় অভিযুক্ত মেয়ের প্রেমিক সেলিম এবং তার বন্ধু হাসান। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশের তল্লাশিতে রবিবার (৪ জুন) ভোরে ওই মাঠ থেকে উদ্ধার হয় মা ও মেয়ে। এরপর তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার ভোরে পুলিশের অভিযানে আটক হয় সেলিম ও হাসান।
এদিকে মা ও মেয়েকে রিকশাভ্যানে করে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে আটক হয় মেহেরুল। এ ঘটনায় মেয়ের মা গত রবিবার সকালে আটক তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় আসামিদের গত রবিবার আদালতে হাজির করা হলে ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রেমিক সেলিম ও তার সহযোগী হাসান দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে একই দিন সন্ধ্যায় আদালত সকল আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরিদর্শক সুকোমল চন্দ্র দেবনাথ জানান, রং নাম্বার থেকে মোবাইল ফোনে প্রথম পরিচয় হয় ভুক্তভোগী তরুণী ও সেলিম রেজার। পরে তাদের মধ্যে প্রেম হয়। একপর্যায়ে গত শনিবার রাতে মেয়েকে দেখা ও বিয়ের কথা বলে মা-মেয়েকে শিবগঞ্জে ডেকে নিয়ে আসে সে। পরে ভ্যানচালকের মাধ্যমে মা ও মেয়েকে ওই মাঠের পাশের পাটক্ষেতে নিয়ে যায় সেলিম। সেখানে মা ও মেয়েকে সেলিম ও হাসান ধর্ষণের পর ফেলে রেখে যায়।
তিনি আরও জানান, স্ত্রী ও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে মেয়ের বাবা একই দিন রাতেই ঘটনাটি শিবগঞ্জ থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ রাতেই উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান শুরু করে। পরে ভুক্তভোগী মেয়ের মায়ের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। রবিবার ভোরে ওই মাঠ থেকে মা ও মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। পরে একই দিন ভোরেই অভিযান চালিয়ে সেলিম, হাসান ও মেহেরুলকে আটক করা হয়। রবিবার সকালে মেয়ের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ আসামিদের আদালতে পাঠায়। মা ও মেয়ের ডাক্তারি পরীক্ষা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে সম্পন্ন হয়।
মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার একসঙ্গে তিন মৌসুম খেলেছেন বার্সেলোনায়। ২০১৪ সালে লিভারপুল থেকে সুয়ারেজ বার্সায় আসার পর এবং ২০১৭-তে নেইমার পিএসজিতে পাড়ি জমানো পর্যন্ত ‘এমএসএন’ এর রাজত্ব ছিল বার্সেলোনায়। সে সময়ে এই তিনজন মিলে ৩৬৪ গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ১৭৩টি। এই ত্রয়ী বার্সাকে দুটি লা লিগা খেতাব, তিনটি কোপা দেল রে এবং একটি করে সুপারকোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন।
সুয়ারেজ-নেইমার বার্সা ছেড়ে চলে গেলে মাঠের জুটি ভাঙলেও বন্ধুত্ব অটুট এমএসএনের। সেদিন মেসিকে মাঠে দর্শকরা দুয়ো ধনি দলে তার প্রতিবাদ করেছেন সুয়ারেজ নেইমার। মেসির পিএসজি ছাড়ার পর নেইমার বন্ধুর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন, সুয়ারেজও জানিয়েছেন সাধুবাদ।
নেইমার ইনস্টাগ্রামে একটি বিদায় নোট পোস্ট করেছেন মেসিকে উদ্দেশ্য করে, 'ভাই.. আমরা যেমন ভেবেছিলাম তেমনটা হয়নি কিন্তু আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েছিলাম। তোমার সাথে আরও ২ বছর ভাগ করে নিতে পারাটা আনন্দের ছিল। তোমার পরবর্তী। তোমার নতুন অধ্যায়ের জন্য শুভকামনা এবং সুখী হও। তোমাকে ভালোবাসি।'
উত্তরে মেসি বলেছেন, 'ধন্যবাদ নে! সব কিছুর পরও আমরা একসাথে খেলা উপভোগ করেছি এবং প্রতিদিন ভাগ করে নিয়েছি। তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি কিছু পাগলাটে, কিন্তু মানুষ তুমি দারুন।আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নেইমার।'
আর এই বার্তা পড়ে সুয়ারেজ লিখেছেন,' কি সুন্দর বার্তা মেসি। নেইমারের সাথে আপনাকে আবার একসাথে দেখে খুব ভালো লাগলো। একে অপরের প্রতি এই ভালবাসা, সর্বদা সবকিছুতে একে অপরকে সমর্থন করা আরও সুন্দর! আমি তোমাদের ভালোবাসি বন্ধুরা।'
তিনজনের এই বার্তা পড়ে একটা কথাই বলতে হয়, বন্ধুত্বের জয় হোক।
পিছিয়ে পড়া রিয়াল মাদ্রিদকে বহুবার ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন করিম বেনজেমা। ক্লাবের হয়ে শেষ ম্যাচেও তাই করলেন। তার গোলে ড্র করে মৌসুম শেষ করেছে রিয়াল।
ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে নামে অ্যাথলেটিক ক্লাবের সঙ্গে। ম্যাচের প্রথমার্ধটা গোল শূন্য থেকে যায়। এই সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
তবে বিরতি থেকে ফিরে চার মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যায় অ্যাথলেটিক। ৪৯ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় একাধিক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে লক্ষ্য বরাবর শট নেন ওয়েন সানচেত। তবে তিবু কুর্তোয়া দারুণভাবে সেটা প্রতিহত করেন। কিন্তু তিনি উল্লাসটা খুব দ্রুত করে ফেলেন, বলের দিকে তার নজর ছিল না। আর সেই সুযোগটা নেন সানচেত। আদায় করে নেন গোল।
সেই গোল হজম করে হার দিয়ে মৌসুম শেষের শঙ্কায় পড়েছিল রিয়াল। তবে প্রতিবার যেমন শেষবেলায় ত্রাতা হতেন বেনজেমা, এবারও তাই হলেন। গোল শোধ করতে মরিয়া মাদ্রিদিয়ানরা সেটা আদায় করে ৭২ মিনিটে। তবে সেটা নিজেদের পায়ের জাদুর নৈপুণ্যে নয়। ডি বক্সের ভেতরে মিলিতাওকে ফাউল করেন জুরি বারচিকে। হলুদ কার্ডের সঙ্গে জরিমানা হিসেবে গুনেন পেনালটি। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন বেনজেমা।
গোলের পরে তাকে নিয়ে সতীর্থরা মেতে উঠেন উল্লাসে। কারণ এটাই যে ছিল তার শেষ ম্যাচ। বিদায়ী ম্যাচটা গোল করে রাঙালেন বেনজেমা।
রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ১৪ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছেন ২০২২'র ব্যালন ডি'অর জয়ী করিম বেনজেমা। ক্লাবের তরফ থেকে আজ এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'রিয়াল মাদ্রিদ এবং আমাদের অধিনায়ক করিম বেনজেমা এই ক্লাবের হয়ে তার অসাধারণ ও অবিস্মরণীয় ক্যারিয়ারের ইতি টানার জন্য রাজি হয়েছে।'
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।