
নেদারল্যান্ডস তার উপনিবেশগুলোতে আড়াইশ বছর দাসপ্রথা চালু রাখে। এর জন্য সম্প্রতি দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট ক্ষমা চেয়েছেন। কেবল প্রধানমন্ত্রী নয়, নেদারল্যান্ডস সরকারের প্রতিনিধিরা সাবেক উপনিবেশগুলোতে গিয়ে একই কাজ করছেন। দাসপ্রথা থেকে লাভবান হওয়া দেশটির বিভিন্ন শহরের কর্র্তৃপক্ষও ক্ষমা চাচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের রূপান্তর নিয়ে লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
যুগান্তকারী পদক্ষেপ
‘আমরা যারা এই সময়ে বাস করছি, তাদের অবশ্যই দাসপ্রথাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। এই প্রথাকে নিন্দা জানাতে হবে। শোষণমূলক ব্যবস্থাটি অগণিত মানুষের অবর্ণনীয় যন্ত্রণার কারণ। সেই যন্ত্রণা আজও তাদের বংশধররা বয়ে বেড়াচ্ছেন। আমাদের ইতিহাসের ওই কালো অধ্যায়ের মুখোমুখি হওয়া দরকার।’ কথাগুলো নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের। ১৯ ডিসেম্বর দেশটির দ্য হেগ শহরে জাতীয় আর্কাইভে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে রুট আরও বলেন, ‘ক্রীতদাসদের তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। তাদের সঙ্গে গবাদি পশুর মতো আচরণ করা হয়। যে ডাচ শাসকরা এ কাজ করেন, তারা কেউ আজ বেঁচে নেই। তবে রাষ্ট্র হিসেবে নেদারল্যান্ডস এর দায় এড়াতে পারে না। নেদারল্যান্ডস ক্রীতদাস ও তাদের বংশধরদের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন করে, তার জন্য দেশটিই দায়ী, অন্য কেউ নয়।’ রুটের এই বক্তব্য ইউরোপের অন্য দেশের নেতাদের অস্বস্তিতে ফেলার সমূহ সম্ভাবনা আছে কারণ তারা দাসপ্রথার মধ্যে সমস্যার কিছু দেখেন না। নিষ্ঠুর ও অমানবিক যে প্রথা একটি দেশে আড়াইশো বছর ধরে ছিল, তার জন্য দেরিতে হলেও সেই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী। দাসপ্রথা ও দাস ব্যবসায় নেদারল্যান্ডসের ঐতিহাসিক ভূমিকার জন্য রুট ক্ষমা চাওয়ায় অনেকে বেশ খুশি হয়েছেন, অনেকে আবার সমালোচনা জারি রেখেছেন। দাসপ্রথার শিকার পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, প্রধানমন্ত্রী রুটের এই পদক্ষেপ বেশ গুরুত্বপূর্ণ, তবে পর্যাপ্ত নয়। তিনি তাদের সঙ্গে এ নিয়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী আলোচনা করেননি। তাছাড়া ক্ষতিপূরণ ছাড়া ক্ষমা প্রার্থনার কোনো মানে হয় না। এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের একসময়ের কলোনি সুরিনামের জাতীয় ক্ষতিপূরণ কমিশনের চেয়ারম্যান আরমান্ড জান্ডার বলেন, ‘নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের বক্তব্যে যেটি নেই, তা হলো দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহি। আপনি যদি স্বীকার করেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, তাহলে আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ হবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।’ নেদারল্যান্ডসের অধিকারকর্মীদের একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল, ২০২৩ সালের জুলাইয়ের ১ তারিখে দেশটির রাজা উইলেম-আলেকজান্ডার যেন সুরিনামে গিয়ে দাসপ্রথার জন্য ক্ষমা চান। ক্ষমা চাওয়ার প্রক্রিয়া যেন আরও বেশি অংশগ্রহণমূলক হয়, সে দাবিও জানানো হয়। রাজা উইলেম-আলেকজান্ডার ক্ষমা না চাওয়ায় এবং অংশগ্রহণমূলক আলোচনা না হওয়ায় স্বভাবতই তারা মনঃক্ষুণœ হন।
নেদারল্যান্ডসে দাসপ্রথা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হয় ১৬০ বছর আগে, ১৮৬৩ সালে। সেই হিসাবে ১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৩ সালে দাসপ্রথা বিলুপ্তির ১৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করার কথা ছিল নেদারল্যান্ডস সরকারের। কিন্তু তারা তা না করে ২০২৩ সালের ১ জুলাই দাসপ্রথা বিলুপ্তির ১৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছে। সমালোচকদের ভাষ্য, দাসপ্রথার ইতিহাস ও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ১৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করতে নেদারল্যান্ডস সরকারের ১০ বছর লেগে গেছে। দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত যে তাদের টনক নড়েছে, এটাই অনেক। এ বিষয়ে অবশ্য ভিন্ন মতও রয়েছে। নেদারল্যান্ডসের লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপের যে দেশগুলো দাসপ্রথা বাতিল করতে বেশ সময় নিয়েছিল, তার একটি নেদারল্যান্ডস। ১৮৬৩ সালে দেশটি দাসপ্রথা বিলুপ্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেও সুরিনামসহ তাদের বেশ কয়েকটি কলোনিতে দাসপ্রথা বাতিল হতে আরও ১০ বছর লেগে যায়। সেই হিসাবে ১৮৭৩ সালকে দাসপ্রথা বিলুপ্তির বছর ধরলে ২০২৩ সালে ১৫০ বছর হয়।
দাসপ্রথায় ভূমিকা
ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে নেদারল্যান্ডসে দাস ব্যবসা শুরু হয়। প্রায় একই সময়ে পর্তুগাল ও স্পেনও এই ব্যবসার দিকে ঝোঁকে। সে সময় ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির (ডব্লিউআইসি) মাধ্যমে ডাচ সাম্রাজ্য ক্যারিবীয় ও লাতিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করে। আফ্রিকা থেকে দাস কিনে এনে তাদের দিয়ে ওইসব অঞ্চলে আখ, কফি ও তুলা উৎপাদন করানো হতো। ১৫৯৬ থেকে ১৮২৯ সালের ভেতর প্রায় পাঁচ লাখ আফ্রিকানকে আটলান্টিক মহাসাগরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিয়ে যান ডাচ শাসকরা। ক্যারিবীয় অঞ্চলের কিউরাসাও ও সিন্ট উসটাটিয়াস দ্বীপে ওই ক্রীতদাসদের বড় অংশই যায়। এছাড়া আফ্রিকা থেকে সুরিনামে নেওয়া হয় আরও পাঁচ লাখ আফ্রিকানকে। সেখানে ক্রীতদাসরা শুরুতে আখের ক্ষেতে কাজ করতেন। পরে তাদের দিয়ে বিপুল পরিমাণে কফি ও তামাক চাষ করানো হতো। পৃথিবীর যেখানে যেখানে সে সময় ডাচদের উপনিবেশ ছিল, সেসব জায়গায় ক্ষেতে কাজ করানোর পাশাপাশি ক্রীতদাসদের দিয়ে গৃহস্থালি কাজ করাত ডাচরা। ১৫৮৫ থেকে ১৬৭০ সাল পর্যন্ত সময়কাল নেদারল্যান্ডসের স্বর্ণযুগ হিসেবে পরিচিত। ওই সময় শিল্প, বিজ্ঞান ও সামরিক ক্ষেত্রে দেশটি প্রভূত উন্নতি করে। তাদের ওই সাফল্যের পেছনে ক্রীতদাসদের অবদান কম নয়। ডিসেম্বরে দ্য হেগ শহরে প্রধানমন্ত্রী রুট তার বক্তব্যের একপর্যায়ে বলেছিলেন, ‘১৮১৪ সালের মধ্যে ছয় লাখের বেশি আফ্রিকান নারী, পুরুষ ও শিশুকে জাহাজে করে অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে লাতিন আমেরিকায় নেওয়া হয়। এশিয়ায় ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় সাড়ে ছয় লাখের বেশি আফ্রিকান কেনাবেচা হয়।’ বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, ১৮৬৩ সালে নেদারল্যান্ডস যখন দাসপ্রথা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করে, সে সময় দাসদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি; উল্টো দাস মালিকরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে ব্যাপক ক্ষতিপূরণ পায়।
পরিবর্তনের পথে নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসের উপনিবেশগুলোতে ২৫০ বছর ধরে দাসপ্রথা চালু থাকার জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের ক্ষমা চাওয়ার মধ্য দিয়ে বিষয়টি শেষ হতে পারত, কিন্তু তা হয়নি। রুটের ওই বক্তব্যের পর তার সরকারের প্রতিনিধিরা নেদারল্যান্ডসের সাবেক উপনিবেশ যেমন কিউরাসাও, আরুবা, সুরিনাম, সিন্ট উসটাটিয়াস, সিন্ট মার্টিন, সাবা ও বোনেয়ারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মতো একইভাবে ক্ষমা চাচ্ছেন। ডাচ-মরোক্কন রাজনীতিক ও নেদারল্যান্ডসের এমপি সালিমা বেলহাজ জানান, ক্যারিবীয় ও লাতিন আমেরিকার কলোনিগুলোতে দাসপ্রথার মতো নির্মম প্রথা চালু করার জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে ক্ষমা চাওয়ার চিন্তাভাবনা করছিল নেদারল্যান্ডস সরকার। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে দাসপ্রথার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা কয়েক ধাপ এগিয়ে যায়। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের সময় ডাচ সরকারসহ নেদারল্যান্ডসের প্রতিটি মানুষ বুঝতে পারে, দেশটি তার ঔপনিবেশিক আমলের অন্ধকার পর্ব নিয়ে কখনো মুখ খোলেনি; তাদের মৌনতার কারণে অন্যান্য দেশের মতো নেদারল্যান্ডসেও বর্ণবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বর্ণবাদী চিন্তাকে নিরুৎসাহিত করা ও দাসপ্রথায় নেদারল্যান্ডসের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হওয়া গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন দেশটির রাজনীতিকরা। তিনি বলেন, ‘সুরিনামসহ আমাদের অন্যান্য সাবেক কলোনি থেকে আফ্রিকানদের আমরা আলোচনায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানাই। তারা তাদের অতীত ও বর্তমানের নানা ধরনের অভিজ্ঞতা আমাদের জানান। আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের অনেকেরই উপলব্ধি হয়, এই প্রথমবার ডাচ পার্লামেন্ট তাদের অভিজ্ঞতা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। আলোচনায় তারা তাদের মা-বাবা, পিতামহ ঔপনিবেশিক আমলে যেসব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যান, সেসব আমাদের জানানোর পাশাপাশি নেদারল্যান্ডসের অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাদের মতামত তুলে ধরেন।’ প্রধানমন্ত্রী রুট ক্ষমা চাওয়ার আগে কয়েকজন ডাচ রাজনীতিকের সঙ্গে সুরিনাম, কিউরাসাও ও বোনেয়ারে গিয়ে আফ্রিকানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বেলহাজ। ডাচ ঔপনিবেশিক শাসনামলে তারা কেমন ছিলেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনা তাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝার চেষ্টা করেন তারা। বেলহাজসহ পার্লামেন্টের অন্য এমপিদের পর্যালোচনার ভিত্তিতে ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট অমানবিক দাসপ্রথার জন্য নেদারল্যান্ডস সরকারের পক্ষে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চান।
নেদারল্যান্ডস সরকারের সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দাসপ্রথা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুইশো মিলিয়ন পাউন্ডের একটি তহবিল গঠন করা হবে। পাশাপাশি আজকের যুগে দাসপ্রথার প্রভাব নিয়ে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা হবে। একটি স্মৃতিরক্ষা কমিটি প্রস্তাব করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করবে। দাসযুগের পুরো ইতিহাস ওই কমিটি ২০২৩ সালের ১ জুলাই তুলে ধরবে।’ নেদারল্যান্ডসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের ঔপনিবেশিক শাসন ও দাসপ্রথা সম্পর্কে পর্যাপ্ত শিক্ষা দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশটির ২৭ বছর বয়সী নাগরিক কলিন ডি বি বলেন, ‘ঔপনিবেশিক ইতিহাস ও দাসপ্রথা নিয়ে ডাচদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলা হয় না। আমাদের বইগুলোর মাত্র কয়েকটি পাতায় ইন্দোনেশিয়ায় ডাচ উপনিবেশবাদ ও সুরিনাম, আরুবা, কিউরাসাওসহ অন্যান্য দ্বীপের দাস ব্যবসা নিয়ে কয়েক লাইন আছে। এর বেশি কিছু নেই। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অনেক বেশি ইউরোকেন্দ্রিক। উপনিবেশবাদের গভীরে যাওয়া হয় না।’ গ্লোবাল ক্রিমিনোলজি নিয়ে অধ্যয়নরত ডাচ শিক্ষার্থী এসমে স্টেক বলেন, ‘নেদারল্যান্ডসের শিক্ষাব্যবস্থায় তিনটি ধাপ আছে। প্রতিটি ধাপে শিক্ষার্থীরা বিষয় ও কোর্স বাছাই করতে পারে। যারা ইতিহাস বাছাই করে না, তাদের পক্ষে দেশের ঔপনিবেশিক ইতিহাস জানা সম্ভব হয় না। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট ক্ষমা চাওয়ার পর তাদের অনেকেই বেশ বিভ্রান্ত। ক্ষমা কেন চাওয়া হয়েছে, এটি তারা বুঝে উঠতে পারছে না। ইতিহাস সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব তাদের বিভ্রান্তির জন্য দায়ী। অনেকে মনে করছেন, দাসপ্রথা যেহেতু অতীতের বিষয়, এর জন্য বর্তমান সময়ে ক্ষমা চাওয়ার মানে হয় না কারণ বর্তমান যুগের শাসকরা দাসপ্রথা প্রবর্তন করেননি, তাদের হাতে রক্ত লেগে নেই। ক্ষমাপ্রার্থনা তাই তাদের দায়িত্ব নয়। এমনটা মনে করা ব্যক্তিরা বুঝতে চাইছেন না, অতীত কর্মকাণ্ড জানলে বর্তমান সময়ের বর্ণবাদ মোকাবিলা সহজ হয়।’ এ বিষয়ে অবশ্য সম্প্রতি নেদারল্যান্ডস সরকারকে নড়েচড়ে বসতে দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী রুট ক্ষমা চাওয়ার পর দেশটির সরকার জানিয়েছে, দাস ব্যবসায় নেদারল্যান্ডসের ভূমিকা পাঠ্যপুস্তক থেকে যাতে শিক্ষার্থীরা বিস্তারিত জানতে পারে, সে পদক্ষেপ শিগগিরই নেওয়া হবে। এ বিষয়ে এমপি বেলহাজ বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের কাজ শুরু করেছে সরকার। আমাদের ইতিহাস শিশুদের আরও জানানো হবে। একই সঙ্গে টেলিভিশনে দাসপ্রথা থেকে শুরু করে আমাদের ঔপনিবেশিক শাসন নিয়ে যাতে আরও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, সেদিকে আমরা জোর দিচ্ছি। এর মধ্য দিয়ে তরুণদের ডাচ ও ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ সম্পর্কে ধারণা আরও বাড়বে। প্রকৃত ইতিহাস মানুষের সামনে তুলে ধরার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সমাজে এর প্রভাব পড়তে কিছুটা সময় তো লাগবেই।’
এদিকে দাসপ্রথা থেকে একসময়ে লাভবান হওয়ায় নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন শহর যেমন আমস্টারডাম, রটারডাম, দ্য হেগ এরই মধ্যে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে। নেদারল্যান্ডসের রাজনীতিক সালিমা বেলহাজ বলেন, ‘আমি মনে করি এটি বেশ ভালো উদ্যোগ। পার্লামেন্ট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর পর যারা ক্ষমা প্রার্থনার পক্ষে তাদের সঙ্গে যেমন কথা হয়েছে, তেমনি যারা পক্ষে না, তাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়। এই আলাপ-আলোচনার চর্চা সুস্থ রাজনীতি ও সমাজের প্রতিফলন। আগামী দিনগুলো আমাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ নেদারল্যান্ডস সরকারের প্রতিনিধিদের এখন থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপনিবেশবাদ নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’
শীতে অনেকরই হাতের আঙুলে ব্যথা হয়। এর ফলে কোনো কাজ করা যায় না। হাতের আঙুলে ব্যথা হলেই অনেকে কেবল পেইনকিলার খান। কিন্তু এমনটা করলে তো চলবে না। সেক্ষেত্রে শরীরে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সতর্ক থাকার চেষ্টা করুন। কারণ পেইনকিলার খেলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এবার সেই সমস্যা থেকে আপনাকে রক্ষা পেতেই হবে। এরকম হলে কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চললে ব্যথা কমাতে পারবেন। কী করবেন জেনে নিন।
আঙুলে ব্যথা হলে শুরুতেই পেইনকিলার খাবেন না। বরং ঠান্ডা গরম সেক দেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনি সেক দিতে পারলেই অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান হবে। দিনে অন্তত ১৫ মিনিট সেক দিন। সেক দেওয়ার ফলে আস্তে আস্তে ব্যথা কমে যাবে।
একটি পাত্রে পানি নিয়ে গরম করুন। এরপর তাতে মেশান লবণ ও ফিটকারি। তারপর সেই পানিতে হাত চুবিয়ে বসে থাকুন। এভাবে ১০ মিনিট করে দিনে অন্তত তিনবার সেক দিন। ব্যথা কমে যাবে।
হলুদে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুণ। তাই ব্যথা কমাতে কাচা হলুদ খেতে পারেন বা সেই জায়গায় বেটে লাগিয়ে কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখতে পারেন। দেখবেন অতি দ্রুত ব্যথা করবে।
আঙুল সচল রাখতে আঙুলের ব্যায়াম করতে পারেন। কোনো ফিজিওথেরাপিস্টের কাছ থেকে আঙুলের ব্যায়াম শিখে নিতে পারেন। এছাড়া ইউটিউব টিউটোরিয়াল থেকে দেখে শিখে নিতে পারেন। তবে দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
মাইক্রোসফট এক্সেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফর্মুলা পূরণ হওয়াকে আরও স্মার্ট করার ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্তত মাইক্রোসফট ৩৬৫-এর সঙ্গে আসা ওয়েব সংস্করণে এই সুবিধা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি যুক্ত করা হচ্ছে আরও বেশ কিছু সুবিধা। দ্য ভার্জের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সহজে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশের জন্য এক্সেলের বেশ কিছু ফর্মুলা রয়েছে। তবে অনেক সময় দেখা যায়, সঠিক ফর্মুলা না জানা বা মনে না থাকার কারণে কাজে দেরি হয়। সমস্যা সমাধানে এক্সেলে ‘ফর্মুলা সাজেশন’ নামে নতুন ফিচার যুক্ত করেছে মাইক্রোসফট। এ ফিচার চালু হওয়ায় কাজের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে সহায়ক ফর্মুলাগুলো দেখতে পাবেন ব্যবহারকারী। এর ফলে দ্রুত সঠিক ফর্মুলা ব্যবহারও করতে পারবেন তিনি।
তবে এটি নতুন কোনো ফিচার নয়। এমন ফিচার গুগল শিটে কিছু সময়ের জন্য ছিল। এ ছাড়া, এক্সেলের ‘অটোসাম’ ফিচার ব্যবহার করে অনেক দিন আগে থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফর্মুলা প্রয়োগ করা যেত। তবে কিছু নির্দিষ্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন ফিচারটি বেশ কাজে আসবে।
মাইক্রোসফটের একটি ব্লগ পোস্ট অনুযায়ী, বৈশিষ্ট্যটি বর্তমানে শুধু ইংরেজি ভাষায় কাজ করছে। ফিচারটি যোগফল, গড়, গণনা, সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ মান নির্ণয় সূত্রের পরামর্শ দেবে। বিভিন্ন সেলে সরাসরি ছবি যুক্ত করার সুবিধাও যুক্ত হয়েছে এক্সেলে। পাওয়া যাবে সার্চ বার ব্যবহারের সুযোগও। এ ছাড়া, ‘সাজেস্টেড লিংক’ নামের একটি সুবিধা যুক্ত হয়েছে এক্সেলে। ফলে এক্সেলে ইনপুট দেওয়া কোনো লিংক ‘ভেঙে গেলে’ তা সহজেই সমাধান করা যাবে। নতুন এসব সুবিধা উইন্ডোজ ও ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমসহ ওয়েব সংস্করণে পর্যায়ক্রমে পাওয়া যাবে।
অনেকেরই চোখের নিচে কালো দাগ দেখা যায়। অনেকেরই ধারণা, ক্লান্তির কারণে চোখের নিচে কালো দাগ হয়। এছাড়াও অনেকগুলো কারণে চোখের নিচে কালো দাগ হতে পারে। বিশেষ করে আপনি যখন ক্লান্ত, তখন আপনার মুখের ওপর, বিশেষ করে আপনার চোখের নিচ কালো দেখায়। চোখের নিচে কালো হওয়ার অনেকগুলো কারন হলো
দীর্ঘ সময় ধরে জেগে থাকা, চরম ক্লান্তি, অবসাদ এবং অত্যধিক ঘুম এমন অনেকগুলো জিনিস ডার্ক সার্কেল সৃষ্টি করে। ঘুমের অভাব চোখের নিচে তরল তৈরি করে যা চোখের ফোলাভাব এনে দেয়। আর এই ফোলাভাব চোখের পাতার নিচ কালচে করে।
চোখের শুষ্কতা বা অ্যালার্জির কারণে ডার্ক সার্কেল হতে পারে। অ্যালার্জির কারণে আপনি লাল ভাব, চুলকানি এবং ফোলা চোখ দেখতে পারেন।
বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে ডার্ক সার্কেল হওয়া স্বাভাবিক। বয়সবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে একজন ব্যক্তির ত্বক পাতলা হয়ে যায়। সঙ্গে কোলাজেন এবং চর্বি হারায়। রক্তনালিগুলো দেখা যায় এবং চোখের নিচের অংশ কালো করে।
ডিহাইড্রেশন হলে শরীরে সঠিক পরিমাণে পানি থাকে না। এটি অন্তর্নিহিত হাড়ের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে চোখের নিচের অংশটিকে আরও গাঢ় দেখায়।
বেশি স্ক্রিন টাইমের ফলে আরও ডার্ক সার্কেল দেখা দেয়। চোখের স্ট্রেন রক্তনালিগুলোকে বড় করে এবং তাদের চারপাশের ত্বককে কালো করে। এছাড়া ত্বকের পিগমেন্টের অনিয়মও চোখের নিচে কালো দাগের কারণ হতে পারে।
বংশগত কারণেও অনেকের ডার্ক সার্কেল হয়। শৈশবে অনেকের ডার্ক সার্কেল থাকলেও বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে যায়।
কখন ডাক্তার দেখাবেন : চোখের নিচের কালো দাগ কোনো জরুরি ডাক্তারি সেবার মধ্যে পড়ে না। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো। যদি আপনি মনে করেন চোখের নিচে ফোলাভাব এবং চোখের নিচে কালো দাগ সারাতে চান তবে ডাক্তার সাপ্লিমেন্ট, ক্রিম ও চিকিৎসার পরামর্র্শ নিতে পারেন। ডার্ক সার্কেল প্রতিরোধ করতে চাইলে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ওয়ার্কআউট ও দৈনিক ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। এছাড়া ত্বকের যতœ নিতে হবে এবং স্ক্রিন টাইম সীমিত রাখতে হবে। ডার্ক সার্কেলের প্রতিকারে ঘরোয়া যত্ন নিতে হবে। এর জন্য কোল্ড থেরাপি একটি উপকারী পদ্ধতি। ঠান্ডা থেরাপি চোখের নিচের ফোলাভাব কমায়, প্রসারিত রক্তনালিকে সঙ্কুচিত করে। এছাড়াও ঠা-া টি-ব্যাগ, ঠা-া চা চামচ, হিমায়িত মটর বা বরফ এক টুকরো সুতির কাপড়ে পেঁচিয়ে সেক দিতে পারেন। পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারলেও ডার্ক সার্কেল দূর হবে। অতিরিক্ত বালিশ ব্যবহার করে মাথা উঁচু করে ঘুমালে চোখের নিচে ফোলাভাব প্রতিকার হয়। এটি চোখের নিচের কালো দাগ কমাতেও সাহায্য করে।ভিটামিন ই ডার্ক সার্কেলের জন্য উপকারী। ভিটামিন ই ক্যাপসুল, তেল এবং ক্রিম আকারে পাওয়া যেতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
রেফারির বাঁশি বাজার তিন মিনিটের মধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের জালে জড়ায় বল। রাফা মিরের দুর্দান্ত এক গোলে লিড পায় সেভিয়া। তবে শেষ অবধি তারা ধরে রাখতে পারেনি সে হাসি। রদ্রিগোর জোড়া গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল।
রাতে লা-লিগার ম্যাচে সেভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। খেলার তৃতীয় মিনিটেই লিড পেয়েছিল সেভিয়া। তবে ২৯ মিনিটে রদ্রিগো সমতায় ফেরান রিয়ালকে। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর ফের বাড়ে আক্রমণের ধার। যার ফলে ৬৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় রিয়াল। এবারও নায়ক রদ্রিগোই। এবারেরটি অবশ্য টনি ক্রুসের সহায়তায়। পরে আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাদ্রিদের ক্লাবটি।
তবে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে লাল কার্ড দেখে আকুনা। হারের আগে সেভিয়ার আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডারের ভুলে ১০ জনের দল নিয়ে খেলতে হয় রিয়ালকে।
শুরুতে গোল হজম করলেও ৬৭ শতাংশ সময় নিজেদের দখলে বল রেখেছিল রিয়াল। ছয়বার আক্রমণে গিয়েছিল তারা, যার মধ্যে তিনটি শট ছিল গোলবার লক্ষ্য করে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।