
পারস্যে আঠারো শতকের শেষ দিকে কাজার রাজবংশের উত্থান যেমন আকস্মিক, তেমনি তার পতনও। এই শাসকদের স্বৈরাচারী মনোভাব ও বিদেশিদের সঙ্গে অতিমাত্রার সখ্য শেষ পর্যন্ত এই বংশের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। লিখেছেন নাসরিন শওকত
কাজার বংশ ও সাম্রাজ্য
পারস্যের রাজতন্ত্রের ইতিহাস আড়াই হাজার বছরের পুরনো। ইতিহাসে কাজার বংশের উত্থান একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই রাজবংশ ১৭৮৫ থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত পারস্য (বর্তমানের ইরান) শাসন করেছিল। কাজাররা ছিল ইরানীয় রাজপরিবার। যারা মূলত ওঘুজ তুর্কি বংশোদ্ভূত একটি যাযাবর উপজাতি। এই পরিবারের প্রথম শাসক ছিলেন কাজার গোত্রের নেতা মোহাম্মদ আগা খান। যিনি পারস্যে কাজার রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে ইরানকে আবার একতাবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন।
কাজাররা ছিল পারস্যের সাফাভিদ বংশের মিত্র কিজিল বংশের একটি গোত্র। ইরানে মুঘল শাসন চলাকালে কাজাররা ইরানে চলে আসেন। আর্মেনিয়া এলাকায় বসবাস করতে শুরু করেন । শাহ ইসমাইল সাফাভিদ ইরানে সাফাভি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তখন যে যাযাবর গোত্রগুলো তাকে সহায়তা করেছিল, কাজাররা ছিলেন তাদের অন্যতম। পরে কাজাররা কিজিল বাকাদের গোত্রে যোগ দেন। পাহলভী রাজবংশ শাসন করার আগে ইরান শাসন করেছে যথাক্রমে সাফাভিদ রাজবংশ ও কাজার রাজবংশ। ইরানের রাজনীতিতে এই দুই রাজবংশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাফাভিদ বংশের প্রথম রাজা ইসমাইল ইরানের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে শিয়া ইসলামের নাম ঘোষণা করেন। পরে কাজার রাজবংশ ক্ষমতায় এসে আলেম সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদান করে। বংশ পরম্পরায় কাজার রাজবংশের সাতজন শাহ ইরানের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে রাজত্ব করেন।
কাজার রাজবংশ দীর্ঘ প্রায় দেড়শ (১৪০) বছর পারস্য শাসন করেছিল। দীর্ঘ এ সময়ের মধ্যে তারা যেমন নতুন ভূখন্ড জয় করেছিল, তেমনি আবার অনেক ভূখন্ডের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণও হারিয়েছিল।১৯ শতকে এসে রাশিয়ার কাছে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারানো ভূখন্ডের মধ্যে ছিল ককেশাস ও মধ্য এশিয়ার বিশাল এলাকা। যে এলাকাজুড়ে রাশিয়ার সাম্রাজ্যের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। কাজার রাজত্বের সে সময়েই গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের সংঘাত চলছিল। নিজেদের বিশাল দুটি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারানো সত্ত্বেও কাজার রাজবংশ রাশিয়া ও ব্রিটেনের মধ্যকার উত্তেজনাকে নিজেদের সুবিধামতো কাজে লাগাতে সক্ষম হয়। যার মধ্য দিয়ে এই রাজবংশের শেষ দিকে এসে কাজার রাজত্বের ব্যাপক আধুনিকায়ন ঘটে। ফলে কাজার সাম্রাজ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার হয়। সেই সঙ্গে পাশ্চাত্যের সঙ্গে বাড়তে থাকে সুসম্পর্ক, যা কাজার ভূখন্ডের চিত্রকে চিরতরে পাল্টে দেয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯২৫ সালে কাজার রাজবংশের পতন ঘটে, যা গুপ্তহত্যা, যুদ্ধ এবং সবশেষ একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয়। কাজার রাজবংশের এই পতন মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রকে পুরোপুরি পাল্টে দেয়।
ইরানকে একত্র করা
ইরানের দক্ষিণাঞ্চল শাসন করত জান্দ রাজবংশ। এই রাজবংশের শেষ শাসক ছিলেন মোহাম্মদ করিম খান জান্দ। ১৭৭৯ সালে করিম খান জান্দের মৃত্যু হয়। এরপর তুর্কমেন কাজার গোত্রের নেতা আগা খান মোহাম্মদ সামনের দিকে অগ্রসর হন। তার লক্ষ্য ছিল শত্রুদের উৎখাত করা ও ইরানকে আবার একত্র করা। ১৭৮৫ সালে আগা খান জান্দ রাজবংশকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে ময়ূর সিংহাসন দখল করেন। এর তিন বছর পর ১৭৮৯ সালে আগা খান ইরানের রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসেন। এর মধ্য দিয়েই ইরানে কাজার রাজবংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু আগা খান সিংহাসনে আরোহণ করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে শাহ বা সম্রাট হিসেবে মুকুট পরানো হয়নি তখনো।
আগা খানের শাসনামল নির্মম ছিল। ১৭৯৪ সালে প্রায় ক্ষমতাচ্যুত জান্দ বংশের সাবেক শাসক লুৎফ আলি খানকে কারমান শহরে আশ্রয় দেওয়া হয়। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আগা খান কারমান শহর দখল করেন। এরপরই তার শত্রুকে শহরটিতে আশ্রয় দেওয়ার জন্য এর বাসিন্দাদের নির্মম শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। এই শাস্তির অংশ হিসেবে কারমান শহরের সব পুরুষের দুই চোখ ওপরে ফেলা হয়।
জানা যায়, সে সময় কারমান শহরের ২০ হাজার উপড়ে ফেলা চোখ আগা খানের সামনে এনে জড়ো করা হয়েছিল। এদিকে নারী ও শিশুদের দাস বানিয়ে কারমান শহরকে একেবারে ধ্বংস করে ফেলা হয়। ওই বছরই আগা খান তার সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলেন। সেই সঙ্গে ইরানের সাবেক অঞ্চল জর্জিয়া ও ককেশাসে নির্মম হাতে ইরানের সার্বভৌমত্বও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। এদিকে শহরের রাজধানী স্থাপন করেন তেহরানে। এর মধ্য দিয়েই পুরো ইরানের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয় কাজার রাজবংশ। দুই বছর পর ১৭৯৬ সালে মোহাম্মদ আগা খানকে আনুষ্ঠানিকভাবে পারস্য সাম্রাজ্যের সম্রাট হিসেবে শাহ উপাধিতে মুকুট পরানো হয়। কিন্তু এরপরের বছরই ঘটে যায় সেই নির্মম ঘটনা। ১৭৯৭ সালে কাজার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা শাসক আগা খান নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন।
রাশিয়ার আগ্রাসন
মোহাম্মদ আগা খানের যখন মাত্র ছয় বছর বয়স, তখন তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। তার কোনো পুত্রসন্তান ছিল না। তাই আগা খানের মৃত্যুর পর সিংহাসনে ‘শাহেনশাহ’ (রাজাদের রাজা) হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হন তার ভাগনে ফতেহ আলি শাহ। সিংহাসনে বসেই তিনি ইরানের সাম্রাজ্যকে বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন এবং নতুন অঞ্চলকে সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। ফতেহ আলিকে কাজার বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক বলা হয়ে থাকে। এ সময় ককেশাস অঞ্চলে রাশিয়ার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পরপর দুটি যুদ্ধ পরিচালনা করেন ফতেহ আলি। রুশ-পার্সিয়ান নামের প্রথম দফার ওই দুটি যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল যথাক্রমে ১৮০৪ ও ১৮১৩ সালে। তখন ঐতিহ্যগতভাবে ককেশাস অঞ্চলটি ইরানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু যুদ্ধ দুটি কাজারদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে। ১৮১৩ সালের যুদ্ধের ফলে রুশ বাহিনীর সঙ্গে কাজার বাহিনীর গুলিস্তান নামের এক চুক্তি সম্পাদিত হয়। যে চুক্তির শর্তানুযায়ী কাজার শাসকদের আজারবাইজান, দাগেস্তান ও জর্জিয়া রাশিয়ার রোমান জারের হাতে তুলে দিতে হয়েছিল। পরে দ্বিতীয় দফায় রুশ-পার্সিয়ান আরও একটি যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৮২৬ ও ১৮২৮ সালের ওই দুই যুদ্ধও ভয়াবহ পরাজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। যার পরিণতিতে দক্ষিণ ককেশাসের বাকি অংশও রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে হয় ইরানকে।
পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক
ফতেহ আলির শাসনামলের ঠিক ওই সময়েই ইরানের সঙ্গে পশ্চিমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের শুরু। যার ফলে ইরানের ভূখন্ড নিয়ে ইউরোপীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দেয়। এরই মধ্যে কেটে যায় পাঁচ বছর। ১৮৩৪ সালে ফতেহ আলির স্থলাভিষিক্ত হন তার নাতি মোহাম্মেদ শাহ। তিনি রুশ নিয়ন্ত্রণে থাকা হেরাত দখলের দুটি চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এর দেড় যুগ পর ১৮৪৮ সালে মোহাম্মেদ শাহের মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুর পর এবার কাজার সিংহাসনে বসেন শাহের ছেলে নাসের আল-দীন।
আধুনিকায়নের শুরু
কাজার শাহ নাসের আল-দীনের শাসনামল মূলত উল্লেখযোগ্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিক্ষা পদ্ধতি চালু করার জন্য সুপরিচিত হয়ে ওঠে। বিশাল এই উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন সম্ভবপর হয়েছিল নাসের দীনের অত্যন্ত দক্ষ উপদেষ্টা ও কনস্টেবল মির্জা তাঘী খান আমির কবিরের জন্য। ১৯ শতকের মধ্যবর্তী ওই সময় থেকেই ইরান আধুনিক যুগে প্রবেশ করে ও পরে যার ধারা অব্যাহত থাকে। কাজার রাজবংশের এই শাসনামলেই ইরানে টেলিগ্রাফ লাইন, একটি আধুনিক ডাক পরিষেবা, পশ্চিমা ধাঁচের স্কুল ও প্রথম সংবাদপত্র চালু হয়েছিল। নাসের দীন তার রাজত্বেই ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখতে মোটামুটি কঠোর হাতে শিয়া মুসলিম আলেমদের ক্ষমতা সীমিত করেন। বলা হয়, কাজার শাসকদের মধ্যে তিনিই প্রথম বিলাসিতায় গা ভাসান। ইউরোপে ব্যয়বহুল ব্যক্তিগত ভ্রমণে যাওয়ার জন্য বিশাল অঙ্কের বিদেশি ঋণ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনিই প্রথমবারের মতো ইরানে রেলপথ ও সেচ খাল নির্মাণ এবং তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিক্রির জন্য বিদেশি হিসেবে ব্রিটিশদের ছাড় দেন। তার এসব পদক্ষেপ ইরানজুড়ে এক নব জাতীয়তাবাদের জন্ম দেয়। শেষ পর্যন্ত ফতোয়ার মাধ্যমে নতুন নিয়ম জারি হলে দেশব্যাপী তামাকজাত দ্রব্য বয়কট হয়, যা নাসের দীনকে তার নীতি থেকে পিছু হটতে বাধ্য করে।
যদিও নাসের দীন ইরানের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ব্রিটেন ও রাশিয়ার মধ্যকার পারস্পরিক অবিশ্বাসকে পুঁজি করতে চান, কিন্তু তার এই কূটকৌশলই বাস্তবে হীতে বিপরীত ফল বয়ে আনে তার জন্য। কারণ তার শাসনামলেই ইরানে বিদেশি হস্তক্ষেপ ও আঞ্চলিক দখল উভয়ই বৃদ্ধি পায়। যার পরিণতিতে ১৮৮১ সালের মধ্যে রাশিয়া বর্তমানের তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এদিকে ব্রিটেনও একইভাবে আফগানিস্তান সৃষ্টির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে অনুপ্রবেশ করে এশিয়ায়। ১৯ শতকের শেষ দিকে এসে অনেক ইরানিই বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, তাদের দেশ ও শাসকদের একটি বড় অংশ বিদেশিদের স্বার্থে অন্ধ।
উল্লেøখযোগ্য সংস্কার
১৮৯৬ সালে নাসের আল-দীনকে হত্যা করা হয়। এবার উত্তরাধিকার সূত্রে কাজার শাসনক্ষমতায় বসেন তার ছেলে মোজাফ্ফর আদ-দীন। বাবার মতো তারও ভোগবিলাসের প্রতি দুর্বলতা ছিল। অযৌক্তিক খরচ ও বিলাসী জীবনযাপনের জন্য তিনি দ্রুতই অজনপ্রিয় ও অযোগ্য শাসক হয়ে ওঠেন। ইরানের রাজকীয় ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রণ ও আইনের প্রকৃত শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯০৬ সালে ইরানি জনগণ কাজার রাজবংশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লব শুরু করে। যার ফলে মোজাফ্ফর শাহ সংবিধান প্রণয়ন করে আইনসভা প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য হন। ফলে কার্যকরভাবে রাজা হিসেবে তার ক্ষমতা হ্রাস পায়। ইরানের রাজনীতিতে এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আসার পরের বছরই ইরানের সঙ্গে অ্যাংলো-রাশিয়ান চুক্তি সম্পাদিত হয়, যা ছিল ইরানের ওপর শেষ ধাক্কা। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে ইরানের ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও কাজারদের পতন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কাজার রাজবংশকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করে দিয়েছিল। তখন ইরানের শাসনক্ষমতায় ছিলেন নাসের দীনের আরেক ছেলে মোহাম্মদ আলি শাহ। যিনি রাশিয়ার সমর্থন নিয়ে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির সংবিধানকে বাতিল করার চেষ্টা করেন। এর ফলে তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত ১৯০৯ সালে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন আলি শাহ। এ সময় তার ১১ বছর বয়সী ছেলে আহমাদ শাহ তার স্থলাভিষিক্ত হন। কিন্তু বিলাসী ও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য বাবার মতো তিনিও অজনপ্রিয় শাসক হয়ে ওঠেন।
এদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের এ সময়েই ব্রিটেন, রাশিয়া ও অটোমান সাম্রাজ্য ইরান দখল করা শুরু করে, যা পারস্যের রাজতন্ত্রের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। এই দখলদারিত্ব থেকে ইরান আর কখনোই বেরিয়ে আসতে পারেনি। এই যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে তেল আবিষ্কৃত হয়। ফলে ইরানকে নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে নতুন করে প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। এবার তেলের বাজার দখল করতে মরিয়া হয়ে ওঠে ব্রিটিশরা। তারা প্রতিষ্ঠা করে ‘অ্যাংলো ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানি’। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, এই তেল কোম্পানিকে সুসংহত করতেই গোয়েন্দা বাহিনীর মাধ্যমে তারা ১৯২১ সালে ইরানে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল। এবার তাদের সহায়তায় পারস্যের সামরিক বাহিনী কোসাক ব্রিগেডের কমান্ডার রেজা খান পাহলভী ইরানের শাসনক্ষমতায় বসেন। পরে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠা এই রেজা শাহ পাহলভীই ইরানে পাহলভী রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। সাবেক এই সামরিক শাসক ক্ষমতায় বসেই রেজা খান থেকে রেজা শাহ নামে নিজেকে পরিচিত করে তোলেন।
তখনো পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের এই ভূখন্ডটি ‘পারস্য’ নামে পরিচিত ছিল। রেজা শাহ পাহলভী একে ইরান নামে নামকরণ করেন। এরপর পশ্চিমাদের অনুকরণে তিনি ইরানকে ধর্মনিরপেক্ষ ও আধুনিক এক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে মনোযোগ দেন। এরই মধ্যে আসে ১৯২৫ সাল। ইউরোপে আহমাদ শাহের অনুপস্থিতিতে ইরানের সংসদীয় পরিষদ কাজার রাজবংশের অবসানের ঘোষণা দেয়। এভাবেই ইরানের প্রায় দেড়শ বছরের প্রভাবশালী কাজার রাজবংশের পতন ঘটে। তবে আজও কাজার রাজ পরিবারের অস্তিত্ব থাকলেও নির্বাসিত জীবন কাটায় তারা।
হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ ফরওয়ার্ড করেন প্রায় সবাই। সকাল-বিকেল শুভেচ্ছা পাঠানো থেকে অন্য যেকোনো ছবি, ভিডিও অথবা টেক্সট, হোয়াটসঅ্যাপে প্রায় প্রতিদিনই মেসেজ ফরওয়ার্ড করেন সবাই। এক চ্যাটের মেসেজ অন্য কাউকে পাঠানোর জন্য এই ফিচারের জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। এবার মেসেজ ফরওয়ার্ড করার জন্য নতুন ফিচার যুক্ত হলো এই জনপ্রিয় অ্যাপে। ধরুন আপনাকে কেউ একটা ছবি অথবা ভিডিও পাঠিয়েছেন, যেখানে মিডিয়া ফাইলের সঙ্গে রয়েছে ক্যাপশন। কিন্তু আপনি ক্যাপশন ছাড়া শুধু ছবি অথবা ভিডিওটি ফরওয়ার্ড করতে চান। এত দিন হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ ফরওয়ার্ড করার সময় ক্যাপশন লেখা অথবা ডিলিট করার অপশন পাওয়া যেত না। তবে নতুন ফিচারে এ সমস্যার সমাধান রয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড গ্রাহকরা যেকোনো ছবি অথবা ভিডিও ফরওয়ার্ড করার সময় ক্যাপশন ডিলিট করার সুযোগ পাবেন। চাইলে ছবি অথবা ভিডিওর সঙ্গে যে ক্যাপশন লেখা রয়েছে তা ডিলিট করেও মেসেজ ফরওয়ার্ড করতে পারবেন। ছবি, ভিডিও ছাড়াও ডকুমেন্ট ও এওঋ ফরওয়ার্ড করার সময় নতুন এই ফিচার ব্যবহার করা যাবে। গত মাসে রচযড়হব গ্রাহকদের ফোনে মেসেজ ফরওয়ার্ড ক্যাপশন ফিচার এনেছিল হোয়াটসঅ্যাপ। এবার অ্যান্ড্রয়েড গ্রাহকদের ফোনে এই ফিচার পাঠাল মার্কিন সংস্থাটি। মেসেজ ফরওয়ার্ড করার সময় ক্যাপশন ডিলিট করার সুযোগ পেলে সুবিধা হবে ব্যবহারকারীদের।
কীভাবে ব্যবহার করবেন এই ফিচার
হোয়াটসঅ্যাপ ওপেন করুন।
এবার যেকোনো চ্যাট ওপেন করুন।
যে ছবি অথবা ভিডিও ফরওয়ার্ড করবেন সেটা সিলেক্ট করুন।
এবার ফরওয়ার্ড বাটনে ট্যাপ করুন।
এবার ছবির ক্যাপশন ডিলিট করার অপশন সিলেক্ট করুন।
অথবা ক্যাপশন ছাড়াও পাঠাতে পারবেন ছবি।
কর্মক্ষেত্রে বা ব্যক্তিগত জীবনে মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগের মুখোমুখি হয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সাধারণ কিছু লক্ষণ যা দেখে প্রাথমিকভাবে ক্লান্তি মনে হলেও পরে সেখান থেকে গভীর সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে।
মনোবিদদের মতে, ক্লান্তি বাহ্যিক বিষয় হলেও উদ্বেগ পুরোপুরি মনের জটিল সমস্যা। দুটি ক্ষেত্রেই লক্ষণগুলো অনেকটা এক রকম। তাই চটজলদি বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। বাহ্যিক কিছু সমস্যা ছাড়াও শরীরে পুষ্টির অভাব থাকলে উদ্বেগ বাড়তে পারে। শরীরে কোন কোন পুষ্টির অভাবে বাড়তে পারে উদ্বেগ?
ভিটামিন-ডি এবং কে : ভিটামিন-ডি এবং ভিটামিন-কে-এর অভাবে বাড়তে পারে মানসিক চাপ। প্রাকৃতিকভাবে এই দুই ভিটামিন তৈরির উৎস হলো সূর্যের আলো। পর্যাপ্ত রোদ গায়ে না লাগলে এই দুই ভিটামিন স্বাভাবিকভাবে শরীরে তৈরি হতে পারে না।
জিংক এবং তামা : জিংক এবং তামার মতো দুটি যৌগ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণভাবে প্রয়োজনীয়। উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে এই দুটি যৌগের ভূমিকাও কম নয়। শরীরে এই দুটি যৌগের মাত্রা ঠিক আছে কি না, তা জানার জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
ম্যাগনেশিয়াম : মানসিক অবসাদের আরও একটি কারণ হতে পারে শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি। কুমড়োর বীজ, সূর্যমুখী ফুলের বীজ, তিসির বীজ ছাড়াও প্রতিদিন বিভিন্ন রকমের বাদাম খেলেও পর্যাপ্ত ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
মনোবিদদের মতে, শরীরে এই যৌগের অভাব থাকলে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বাড়তে পারে। তাই প্রতিদিন খাবারের তালিকায় সামুদ্রিক মাছ, বিভিন্ন রকমের বাদাম রাখতেই হবে।
শীতকালে এমনিতেই বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। ফলে বায়ুমন্ডল ত্বক থেকে পানি শুষে নেয়। এই শুষে নেওয়ার কারণে ত্বক, ঠোঁট ও পায়ের তালু ফাটতে থাকে। আমাদের ত্বকে থাকে ঘর্মগ্রন্থি, থাকে তেলগ্রন্থি, যেখান থেকে অনবরত তেল আর ঘাম বের হয়। এ ঘাম আর তেল মিলে দেহের ওপর তেল ও পানির মিশ্রণ বা আবরণী তৈরি করে, যা দেহ শীতল করে রাখে এবং ত্বক শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে, ত্বকের ফাটা ভাব প্রতিরোধ করে।
ইকথায়োসিস : শীতকালে এই রোগটি দেখা যায়। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এই রোগটি দেখা যায়। এ রোগে আক্রান্তদের হাত ও পায়ের ত্বক ফাটা ফাটা এবং ছোট ছোট গুঁড়ি গুঁড়ি মরা চামড়া বা আঁশ পায়ের সামনের অংশে বা হাতের চামড়ায় ফুটে ওঠে। অথচ হাত ও পায়ের ভাঁজযুক্ত স্থানে থাকবে স্বাভাবিক। শীত এলেই প্রতি বছর এর ব্যাপকতা বাড়ে। আক্রান্তদের হাতের রেখাগুলো খুব স্পষ্ট ও মোটা হয়, যা সাধারণ লোকের দেখা যায় না। একই সঙ্গে অ্যালাজিও দেখা দেয়। এ ধরনের রোগীর কারও কারও নাক দিয়ে পানিঝরা অর্থাৎ সর্দি-সর্দি ভাব থাকে। পরিবারে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের বেশি হয়। এ রোগ কখনো ভালো হয় না। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শীত এলে বেশি বেশি তৈলাক্ত পদার্থ মাখলে ত্বক ভালো থাকে এবং ফাটা ভাব থাকে না। তবে যাদের ফাটা অবস্থা বেশি, তাদের ক্ষেত্রে আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড মাখলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। এটি পেতে অসুবিধা হলে গ্লিসারিনের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ত্বকে মাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
অ্যালার্জি : হাঁপানির সঙ্গে অ্যালার্জির গভীর সংযোগ রয়েছে। ফুলের পরাগ, দূষিত বাতাস, ধোঁয়া, কাঁচা রঙের গন্ধ, চুনকাম, ঘরের ধুলা, পুরনো ফাইলের ধুলা দেহে অ্যালার্জিক বিক্রিয়া করে হাঁপানি রোগের সৃষ্টি করে। যারা হাঁপানিতে ভুগছেন, তাদের এগুলোর সংস্পর্শ ত্যাগ করতে হবে। ছত্রাক দেহে অ্যালার্জি তথা হাঁপানি সৃষ্টি করে। পনির ছত্রাক মিশিয়ে তৈরি হয়। কোনো কোনো পাউরুটি এবং কেক তৈরি করতেও ইস্টজাতীয় ছত্রাক ব্যবহার করা হয়। আলু, পেঁয়াজও ছত্রাক দ্বারা দূষিত হয়। এ ছত্রাকও অ্যালার্জি তথা হাঁপানি সৃষ্টির অন্যতম কারণ। ঘরের ধুলা হাঁপানিজনিত অ্যালার্জির অন্যতম কারণ। ঘরের ধুলায় একটি ক্ষুদ্র জীবাণু থাকে, যা ‘মাইট’ নামে পরিচিত। প্রায় ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য এ ‘মাইট’ দায়ী। এজন্য ঘরের আসবাবপত্র, কম্বল, পর্দা, তোশক, বালিশে যে ধুলা জমে থাকে, তা পরিষ্কার করার সময় দূরে সরে থাকতে হবে। খাদ্যে অ্যালার্জির আশঙ্কা থাকে। যেমন : দুধে অ্যালার্জি থাকে। গম, ডিম ও মাছে অ্যালার্জি হতে দেখা যায়। আরও অনেক খাবার, পশুপ্রাণী ও কামড় থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। ওষুধও হতে পারে অ্যালার্জির কারণ। যেসব অ্যালার্জির কারণ হবে, তা থেকে দূরে থাকলে আক্রান্ত হওয়ার আর আশঙ্কা থাকে না। প্রচুর পরিমাণ পানিজাতীয় খাবার খেতে হবে। প্রয়োজনে ত্বকের যত্ন নিতে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছেন গ্যারেথ বেল। তাই এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে ওয়েলসের সাবেক অধিনায়কের। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মুখোমুখি হবে ম্যানচেস্টার সিটি ও ইন্তার মিলান। বেলের বাজি সিটির পক্ষে।
ইংলিশ ক্লাব সাউদাম্পটন ও টটেনহামে খেলার সময় ম্যানসিটির বিপক্ষে খেলেছেন বেল। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ফলাফলের সঙ্গে ম্যাচসেরা কে হবেন সেই মতামতও দিয়েছেন বেল। ইন্সটাগ্রামে বেল বলেন, 'ম্যানসিটি ৫-০ তে হারাবে ইন্তার মিলানকে।’
বেলের মতে, ম্যাচসেরা হবেন সিটি মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৩ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেন বেল। তার আগে কাতার বিশ্বকাপে খেলে বিশ্ব ফুটবল মঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে গেছেন।
মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ শিরোপা জিতেছে পেপ গার্দিওলার দল। আজ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে ট্রেবল হবে তাদের। ২০২১ এ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে চেলসির কাছে হেরেছিল ম্যানসিটি।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা প্রত্যাশামতো পায়নি অস্ট্রেলিয়া। তবে মিডল অর্ডাররা দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। তাতে ভারতকে ৪৪৪ রানের লক্ষ্য দেয় অসিরা। এই রান তাড়া করলেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন শিরোপাজয়ী হবে ভারত। রান টপকালে শুধু জয়ই হবে না, হবে রেকর্ডও। তাই শেষ দিনে বিরাট কোহলি ও অজিঙ্কা রাহানের পানে তাকিয়ে থাকবে ভারত।
টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হতে হলে বিশ্বরেকর্ডটাই করতে হবে ভারতকে। করতে হবে টেস্টের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। আর না হলে ড্রয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওভালে পঞ্চম দিনের পিচে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে কোহলি-রাহানেদের। এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই ভারতের সামনে।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে নেমে লন্ডনের ওভালে আজ চতুর্থ দিন শেষে ভারত তুলেছে ৩ উইকেটে ১৬৪ রান। দুই বছরের জন্য টেস্ট শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেতে রবিবার পঞ্চম তথা শেষ দিনে ভারতের দরকার ২৮০ রান, অস্ট্রেলিয়ার চাই ৭ উইকেট। শেষ দিনের শুরুটা করবেন অজিঙ্কা রাহানে (২০*), সঙ্গে বিরাট কোহলি (৪৪*)।
টেস্টের শেষ ইনিংসে ব্যাট করা সবসময়ই কঠিন। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে উইন্ডিজের ওই জয় এখনো সাদা পোশাকে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। সে হিসেবে ওভালে ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথটা অনেক কঠিন।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে ভারতের শুরুটা হয়েছিল ওয়ানডে মেজাজে। প্রথম ৭ ওভারে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল করেন ৪১ রান। গ্রিনের বিতর্কিত এক ক্যাচে বোল্যান্ডের বলে গিল আউট হলেও খেলার ধরন পাল্টাননি রোহিতরা।
১৯ ওভারে ৯১ রান তোলা ভারত ২০তম ওভারে হারায় রোহিতকে। এই ইনিংস খেলার পথে ওপেনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন রোহিত।
রোহিতের আউটের পর যখন সবাই ভাবছিলেন, উইকেটে থাকা চেতেশ্বর পূজারা তাঁর চিরাচরিত ধরন মেনে রয়েসয়ে ব্যাটিং করবেন। তবে পূজারা আউট হন নিজের চরিত্রের বাইরে গিয়ে কামিন্সের বলে আপার কাট খেলতে গিয়ে।
এর আগে ৪ উইকেটে ১২৩ রান তুলে গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে অস্ট্রেলিয়া। আজ চতুর্থ দিন সকালটা দুর্দান্ত শুরু করেন ভারতের পেসাররা। কাল ৪১ রানে অপরাজিত থাকা লাবুশেন চতুর্থ দিনে কোনো রান যোগ না করেই আউট হন উমেশ যাদবের দলে। স্লিপে চেতেশ্বর পূজারার হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১২৬ বলে ৪ চারে ৪১ রান করেছেন লাবুশেন। অ্যালেক্স ক্যারি (৬৬*) ও বোলার মিচেল স্টার্কের (৪১) ৯৩ রানের জুটিতে দারুণ পুঁজি গড়ে ফেলে অজিরা। সুবাদে ৮ উইকেটে ২৭০ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করা সহজ হয় দলটির। হয়তো জয়ের পথটাও তৈরি হলো ওই জুটিতে।
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেন বলেই লাতিন দেশটিকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যত উৎসাহ–উদ্দীপনা। এর আগেও বাংলাদেশের মানুষ ম্যারাডোনা–প্রীতি থেকে আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছেন। কিন্তু এবার কাতার বিশ্বকাপে অতীতের সেই ভালোবাসা বা উদ্দীপনাকে চরমভাবে হার মানিয়েছে। আর এর কারণ ওই একটাই, মেসি।
মেসি যে ইউরোপের ফুটবলের পাট চুকিয়ে মেজর লিগ সকারের দল ইন্টার মায়ামিতে যাচ্ছেন, সেই ঘোষণা আসে গত বুধবার। এখনও নাম লেখাননি, কবে থেকে মায়ামির হয়ে মাঠে নামবেন, সেটাও নিশ্চিত নয়। শুধু মেসি ইন্টার মায়ামিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইন্টার মায়ামির অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে।
গুগলে ফ্লোরিডাভিত্তিক এই ক্লাবটিকে খোঁজা শুরু করে সারা বিশ্বের মেসি–সমর্থকেরা। গুগলে গত ৭ দিনে সবচেয়ে বেশি মায়ামিকে খোঁজা হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই। গুগলে এই খোঁজার দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে মেসির নিজের দেশ আর্জেন্টিনার চেয়েও। কেউ কেউ বলতে পারেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা আর্জেন্টিনার চেয়ে বেশি ১৪ কোটি। সেই বিবেচনায় এটাই তো হওয়ার কথা।
মূলত গুগল ট্রেন্ডে কোনো ওয়েব সার্চের সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তার মানদণ্ড হচ্ছে ১০০। বাংলাদেশ এখানে পেয়েছে এক শই। শনিবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনা পেয়েছে ৮৪।
গুগল ট্রেন্ডের এই তালিকায় বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার পরের নামটা নেপালের। তারা পেয়েছে ৮২। চার নম্বরে আছে হাইতি (৮১), আর পাঁচে আইভরি কোস্ট (৭৩)। এই তালিকায় সেরা দশে আছে ইরাক, ইয়েমেন, কঙ্গো, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া। মেসিকে নিজেদের লিগে নিতে চাওয়া সৌদি আরব আছে এই তালিকার ১৪ নম্বরে।
যুক্তরাষ্ট্র আছে ৫১ নম্বরে। এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ নিজেদের দেশের ক্লাব সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ভালোই জানাশোনা থাকার কথা। তা ইন্টার মায়ামি ক্লাব হিসেবে যতই নতুন হোক না কেন।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ১২ বছরে ৭ বারই চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। পেপ গার্দিওলার অধীনেই ৫ বার। কিন্তু ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছে তারা। দুবছর আগে ফাইনালে উঠলেও পারেনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে। অবশেষে গেঁরো খুলতে পারল তারা। ইন্তার মিলানকে হারিয়ে ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসরের শিরোপা জিতেছে তারা।
ইস্তানবুলের ফাইনালে ইতালীয় ক্লাবকে ১-০ গোলে হারিয়ে এই আসরের নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। একমাত্র গোলটি করেছেন ৬৮ মিনিটে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি।
প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতে এবারের মৌসুমে ট্রেবলও পূরণ করে নিল সিটি। এর আগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের শিরোপা জিতেছিল তারা। তাদের আগে একমাত্র ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জিতেছিল তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর কোচ হিসেবে দুবার ট্রেবল জয়ের নতুন রেকর্ডও গড়লেন গার্দিওলা। এর আগে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে প্রথমবার ট্রেবল জিতেছিলেন তিনি।
২০২১-র ফাইনালে রদ্রিকে না খেলানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল গার্দিওলার। দুই বছর পর আরেকটি ফাইনালে সিটির জয়ের মূলনায়ক সেই রদ্রি। ডিফেন্সিভ এই মিডফিল্ডার গোল নিয়ে অতো ভাবেন না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১১ ম্যাচ খেলে একটা গোল ছিল তারা। সেটি ছিল এবারের আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে ঘরের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখকে ৩-০ গোলে হারানো ম্যাচের প্রথমটি। সেই গোলের পেছনে অবদান ছিল যার সেই বার্নার্দ সিলভা ইস্তানবুলে গোলশূণ্য প্রথমার্ধের পর ৬৮ মিনিটে ইন্তার গোললাইনের কাছ থেকে বল ফিরিয়ে দেন বক্সের মাথায়। অরক্ষতি রদ্রির কথা কেউ ভাবেইনি। ডান পায়ের চতুর শটে দুই ডিফেন্ডারের পা এড়িয়ে ডান দিকে জালে জড়ায় বল (১-০)।
এর পরপরই সমতা ফেরানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছিল ইন্তার। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, দিমারকোর হেড বাধা পায় পোস্টে। ২০২১'র ফাইনালে মতো এবারো চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন সিটির মধ্যমাঠের প্রাণ ডি ব্রুইনে। ৩৬ মিনিটেই মাঠে নামা ফিল ফোডেন ইন্তারের আক্রমণ ভাগে বার বার হানা দিয়েছেন। তবে সিটির আর গোল পায়নি। বরং গোল খেতে পারতো তারা। কিন্তু গোলরক্ষক এডারসনের দক্ষতায় দুবার নিশ্চিত বেচে যায়। রবিন গোসেনের ক্রস থেকে একেবারে ফাঁকায় থেকে হেড নেওয়ার সুযোগ পান লুকাকু। কিন্তু নেন গোলরক্ষক বরাবর। কোনো মতে পা দিয়ে ঠেকিয়ে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন এডারসন।
ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে এডারসনের আরও একটি দুর্দান্ত সেভ। কর্নার থেকে গোসেনের নেওয়া হেড ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি। এরপর রেফারি শেষ বাঁশি বাজালে উল্লাসে মাতে সিটিজেনরা।
সাধারণত প্রাথমিক স্তরে একটি দেশে এক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাই চালু থাকে। তবে কোনো কোনো দেশে এক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেও পাঠক্রমে (কারিকুলামে) ভিন্নতা থাকে সেটা সর্বোচ্চ দুই বা তিন ধরনের হয়ে থাকে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ঠিক করে দেয় শিক্ষার্থীরা কী ধরনের শিক্ষাগ্রহণ করবে।
বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণি থেকেই হরেক রকমের শিক্ষাব্যবস্থা এবং হরেক পরীক্ষা চালু আছে। এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা ১২ রকমে দেওয়া যায়। ফলে এক সনদের জন্য ১২ রকমের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আর শিক্ষা-প্রশাসনের পক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
প্রচলিত বা সাধারণ স্কুলগুলোতে যারা পড়ালেখা করে তারা ‘সাধারণ’ এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে থাকে। আর মাদ্রাসায় যারা পড়ে তারা দেয় দাখিল পরীক্ষা। দাখিল ভোকেশনাল নামেও একটি পরীক্ষা দেওয়া যায়। কারিগরিতে যারা পড়ে তারা দেয় এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায়। প্রাইভেট এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। মাধ্যমিকে যেসব বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভার্সন রয়েছে, সেখানে ইংরেজি ভাষায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায়।
ইংলিশ মিডিয়ামে (ইংরেজি ভার্সন নয়) যারা পড়ে, তাদের এসএসসি সমমানের পরীক্ষার নাম ‘ও’ লেভেল। সে ব্যবস্থাতেও এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামের স্কুলে পৃথক পড়ালেখা। আর সারা দেশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কওমি মাদ্রাসা; এ শিক্ষাকেও সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। কওমি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করা শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হয়েছে। কওমিতে হাফেজি ও মাওলানা (টাইটেল) ধারায় পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এম তারিক আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় বিভিন্ন ধারা থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ ধারাগুলো যদি একটা ফ্রেমওয়ার্ক ও মনিটরিংয়ে না থাকে, তাহলে বিশৃঙ্খলা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় বিভিন্ন ধারাকে একটা ফ্রেমওয়ার্কে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে; অর্থাৎ সবার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিষয় রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান ও মূল্যায়ন করা হচ্ছে কি না তা শিক্ষার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে মনিটরিং করতে হবে।’
তারিক আহসান বলেন, ‘কওমিতে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে, এটা ঠিক। তবে সরকার তাদের কিছু ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার সমমান দিচ্ছে। এই শিক্ষাকেও একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ এসএসসি ও ইংরেজি ভার্সনের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আছে ৯টি শিক্ষা বোর্ড। মাদ্রাসায় দুই ধরনের দাখিলের জন্য রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। কারিগরি শিক্ষার জন্য আছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায় এসএসসি পরীক্ষা। শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনেই প্রাইভেট এসএসসি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইদানীং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বিভাগীয় এবং জেলা শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এসবের বেশিরভাগের নিবন্ধন নেই। তারা এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামে পরীক্ষা দিলেও তাদের কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ নেই। শিক্ষা বোর্ডগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ করে না।
অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা চালু রয়েছে। করোনার পর দেশে সাধারণ স্কুলের সংখ্যা কমলেও কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। তাদের পরীক্ষার জন্য তারা নিজেরাই একাধিক বোর্ড বানিয়েছে। এগুলোতে সরকারের তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসিক বিষয়গুলো সবাই অনুসরণ করে। কারিগরি ও মাদ্রাসায় আলাদা কিছু বিষয় যুক্ত রয়েছে। আমি বলব, বিভিন্ন ধারা বলে কিছু নেই। তবে ব্যতিক্রম ইংলিশ মিডিয়াম। আমাদের দেশের ইংলিশ মিডিয়ামে সাধারণত ব্রিটিশ কারিকুলামে পড়ানো হয়। সেখানেও আমরা বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে একটি বিষয় যুক্ত করেছি। ওই কারিকুলামের শিক্ষার্থীরা যেন দেশপ্রেম ভুলে না যায় এবং নিজের ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি বিরূপ মনোভাবের না হয়। আরেকটি বড় ব্যতিক্রম কওমি মাদ্রাসা। সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।’
যারা খুব দরিদ্র তারা সাধারণত কওমি শিক্ষায় যায়। সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা থাকে। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত তারা সাধারণ স্কুলে লেখাপড়া করে। উচ্চবিত্তরা সাধারণত তাদের সন্তানদের ইংলিংশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ালেখা করান। ইদানীং মধ্যবিত্তরাও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও ইংরেজি ভার্সনের স্কুলে ঝুকছে। যারা পড়ালেখায় পিছিয়ে তারা সাধারণত কারিগরি শিক্ষায় যায়। আর যেসব অভিভাবক ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষার মিশ্রণ চান, তারা সাধারণত তাদের সন্তানদের আলিয়া মাদ্রাসায় পাঠান।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, দেশে একাধিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আবার শিক্ষাকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকছে না। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তার পছন্দের বাইরের শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ালেখা করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ফলে মাধ্যমিকে ঝরেপড়া কমছে না। আবার উচ্চশিক্ষায় গিয়েও অনেকে তাল মেলাতে পারছে না। অনেকে তার উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা তেমন কাজে লাগাতে পারছে না।
ব্রিটেনে সাধারণত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবার একই রকমের শিক্ষা। এরপর শিক্ষার্থীদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একদল যায় কারিগরি শিক্ষায়। অন্যদল যায় সাধারণ শিক্ষায়। যদিও দুই ভাগেই কিছু ট্রেড কোর্স থাকে। কে কোন ধরনের শিক্ষায় যাবে তাতে অভিভাবকদের কিছু বলার নেই। শিক্ষকরাই বিবেচনা করে শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাব্যবস্থা নির্ধারণ করেন।
কোনো দেশের উন্নয়নের মূল হচ্ছে কারিগরি শিক্ষার প্রসার। এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। কারিগরিতে এখনো মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না। সরকার ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরিতে নিতে পেরেছে বললেও তাতে নানা ফাঁকি রয়েছে। কওমি মাদ্রাসা ও ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষার্থী বাড়লেও কারিগরিতে সেভাবে শিক্ষার্থী বাড়ছে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশে^র বেশিরভাগ দেশেই শিক্ষাব্যবস্থা চলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায়। অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর পড়ালেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলেই সময় কাটায়। আমাদের দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ালেখা করা যায়। তবে টিউশন ফি ও বই ছাড়াও শিক্ষার্থীদের নানা খরচ থাকে, যা পরিবারকে বহন করতে হয়। মাধ্যমিক থেকে পুরোপুরিই পড়তে হয় অভিভাবকদের খরচে। ফলে অভিভাবকদের পছন্দে ও বাণিজ্যিক কারণে নানা ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এর থেকে সরকার কোনোভাবেই বের হতে পারছে না। বের হওয়ার পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে দেশি-বিদেশি শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছিল; অর্থাৎ সবাইকে কিছু কোর সাবজেক্ট পড়তে হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। সবাই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে আচ্ছন্ন। মতভেদও রয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা যায়, কারণ সেখানে পড়তে পয়সা লাগে না। আমাদের হাজার হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারীকরণ করেছি। কিন্তু রাষ্ট্র শিক্ষার্থীদের পুরো দায়িত্ব নিচ্ছে না। যত দিন রাষ্ট্র দায়িত্ব নেবে না, তত দিন সব ধরনের শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফরমে আনা কঠিন।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’